User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
আমেরিকান কথাসাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে প্যারি রিভিউর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'একজন লেখক পর্যবেক্ষণ বন্ধ করে দিলে ফুরিয়ে যাবেন। কিন্তু তিনি শুধু এর ব্যবহার কীভাবে করা যাবে তা ভেবেই পর্যবেক্ষণ করবেন না। একজন লেখক যদি কোনো কিছু সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা না রেখে লেখেন, তবে তাতে গলদ থেকে যাবে।' (মাইনুল ইসলাম মানিক অনূদিত) আর্নেস্ট হেমিংওয়ের কথাগুলো নিঃসন্দেহে চমৎকার এবং সত্য। এই পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা লেখক ভেদে ভিন্ন হয় বলে প্রত্যেক লেখকের লেখার স্টাইল বা ধরন আলাদা হয়। আর এ কারণেই হয়তো নিজেকে অনন্য করতে হলে লেখককে হতে হয় পরিশ্রমী ও পর্যবেক্ষক। সমসাময়িক অনেক লেখকের লেখা পড়েছি আমি, পড়ছিও। আমার মনে হয়েছে গল্পকার ইসরাত জাহান যেমন পরিশ্রম করতে জানেন তেমনি জানেন পর্যবেক্ষণ করতে। ২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ হয়েছে ইসরাত জাহানের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ 'নিমপাতার পাকোড়ার নিষিদ্ধ আলিঙ্গন।' এই বইয়ে তেরোটি গল্প সংকলিত হয়েছে। মনোযোগ দিয়ে গল্পগুলো পড়ার চেষ্টা করেছি। বন্ধু হিসেবে অনিবার্যভাবে কিছুটা পক্ষপাতিত্ব এসে গেলেও আজ অকপটে বলার চেষ্টা করেছি কয়েকটি গল্প নিয়ে। জানি, গল্পকার আমার এই পাঠ অনুভূতিকে সাদরে গ্রহণ করবেন। বইয়ের নামটি কিন্তু অভিনব। নিষিদ্ধ শব্দটি শুনলেই তো আমরা বেশ কৌতূহলী হয়ে উঠি। তার ওপরে আবার নিমপাতার পাকোড়া! নিমপাতার পাকোড়া আর নিষিদ্ধ আলিঙ্গন দুইয়ের ফাঁদে যেই গল্প ফেঁদেছেন গল্পকার তা কিন্তু প্রিয়জনের আলিঙ্গনের মতো স্বস্তিকর নয়। মা ও মেয়ের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে এই গল্পের আখ্যান সাজানো হয়েছে যা সুলিখিত ও সুপাঠ্য। গল্পের শুরুটা এই গল্পের একপ্রকার সমাপ্তি আবার সমাপ্তিটাও একপ্রকার শুরু। গল্পের একটা পর্যায়ে একজন চিত্রকর ও একটি নিম গাছকে লেখক মা ও তার আত্মজার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেন যা শেষ পর্যন্ত গল্পের মোড় ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দেয়। আমাদের টান টান সাজানো গোছানো জীবনে 'রুষ্ট উপহাস'র মতো কিছু ভ্রুকুটি, কিছু স্পর্শহীন বেগুনি ফুল বুঝি বা থেকেই যায়। আর এই ফুলগুলো কোনো এক ভুলের মতো আজীবন পেছনে লেগেই থাকে। আর আমাদের আটপৌরে রোজনামচায় অস্বস্তি টেনে আনে। 'রুষ্ট উপহাস' গল্পের সুজন গল্পকথকের অতীত জীবনের তেমনই এক ভুল কিংবা অস্বস্তির নাম। এই গল্পের সমাপ্তি পাঠকের মনে প্রশ্ন রেখে দেয়। তবে শুরুতে গল্পের কিশলয়ের বিস্তৃতি যতোটা পরিপাটি ছিল শেষের দিকে তা যেন আর ততোটা পরিপাটি থাকেনি বলে মনে হয়েছে। মনে হয়েছে গল্পটা শুরু থেকে যেভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে এনেছিলেন গল্পকার শেষে তার সামান্য ঘাটতি থেকে গেছে। এই একই কথা বলতে হয় বইয়ের উল্লেখযোগ্য গল্প 'মাংসের কাবাব' নিয়ে। রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে নিয়ে লেখা গল্পটির কাহিনি বিন্যাস অসম্ভব পরিপাটি ও গোছানো হলেও শেষটা পাঠক মনকে তৃপ্তি দেয়নি। তবু এই বই থেকে যে কোনো একটি গল্প বেছে নিতে বললে আমি 'মাংসের কাবাব' গল্পটিই বেছে নিবো। ‘অন্তরালের বিসর্গ চন্দ্রবিন্দু’ গল্পটি শুরু হয় গল্পকথকের এক বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যার স্মৃতিচারণ দিয়ে। ধীরে ধীরে সেই সন্ধ্যার ‘বৃষ্টি ও ভাঁজ’র সঙ্গে পাঠক কথকের মনজগতে ঢুকে পড়তে থাকে। পাঠককে ছোট ছোট তথ্য দিতে দিতে গল্প এগিয়ে যায়। গল্পের মুখ্য চরিত্র একজন নারী ও আরেকজন পুরুষ। রংপুরের সরকারি একটি প্রকল্পের প্রজেক্টের একজন কো-অডিনেটর এবং মিঠাপুকুরের শঠিবাড়ির সাঁওতালপল্লীর এক নারী মালতির মধ্যে গড়ে ওঠা অসম সম্পর্কের গল্প নিয়ে গল্প। আসলে সম্পর্কটি যে অসম তা গল্পকথকের মানসিক টানাপোড়েন থেকেই জানা যায়। গল্পটি শেষের দিকে পাঠক আমার মনে যেমন অস্বস্তি তৈরি করেছে তেমনি মানুষের মনোজগতের বৈচিত্র্যেরও সন্ধান দিয়েছে। গল্পের গল্প নিয়ে তেমন কিছু বলার না থাকলেও মনে হয়েছে সাঁওতালদের নিয়ে গল্পের ফাঁকে ফাঁকে যেসব তথ্য গল্পকার গুঁজে দিয়েছেন তা গল্পে একটু অন্যভাবেও আনা যেতো। আর এ কারণে গল্পের কাঠামোতে খানিকটা ফাঁক থেকে গেছে বলে মনে হয়েছে। ‘কুকুরটি তখনও সঙ্গী ছিলো’ গল্পে শুরুতে দেখতে পাই সকালের রোদের কণাগুলো অতনুর ঘরে টুক করে ঢুকে পড়ে ওর চোখ, গাল, চিবুক বেয়ে গলার কিছুটা নিচে অনুন্নত অংশে চুমু খেয়ে পায়ের গোড়ালি এসে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে। এই যে ধীর স্থিরভাবে রোদের কণার বিস্তার হচ্ছে ‘কুকুরটি তখনও সঙ্গী ছিলো’ গল্পের বিস্তারও ঘটেছে এমন ধীর লয়ে। পড়তে পড়তে অতনুর মতো ওর হৃদকম্পনের সাথে হিসাব কষতে বসেছি, কতটা সময় আছে ওর হাতে, কয়েক ঘন্টা?না কয়েক মিনিট? এই হিসেবের সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে উন্মোচিত হয়েছে অতনুর সঙ্গী থাকা কুকুর লালু আর ওর নিজের জীবনের গভীর গোপন এক অধ্যায়ের।গল্পের সমাপ্তিতে পৌঁছে মন ভীষণরকম আর্দ্র হয়ে উঠেছে। যদিও কোনো কোনো বাক্যে বিশেষণের অহেতুক ব্যবহার গল্পের স্বতঃস্ফূর্ততা সামান্য ক্ষুন্ন করেছে বলে মনে হয়েছে। 'ঢালু বাঁকে আটকে থাকা জীবন' করোনাকালীন সময়ে ঢালুর বাঁকে আটকে থাকা কিছু মানুষের জীবনের গল্প। গল্পের রমিলা হোঁচট খেতে খেতে পথ চলে। বিছানায় পড়া স্বামী, সন্তান নিয়ে তার 'আধাখ্যাঁচড়া সংসার।' রমিলা আর গনি মিয়ার সংসার জীবনের সমান্তরালে পোশাক কারখানার শ্রমিক মর্জিনা আর জয়নালের জীবনও বর্ণনা করেছেন লেখক। গল্পের শেষটায় সম্ভাবনার ইঙ্গিত থাকলেও গল্পটি বস্তিতে দিনযাপন করা মানুষের দুর্ভোগের ইতিবৃত্তই চোখের সামনে তুলে ধরেছে।