User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
৭০ পৃষ্ঠার ছোট একটি বই। দৈর্ঘ্যের পরিসরে ক্ষুদ্র হলেও ভাবার্থের গভীরতায় বইটি অস্পর্শীয়। যার গভীরতা এতোই বিশাল যে স্পর্শ করা যায় না। শুধুমাত্র অনুভব করা যায়,উপলব্ধি করা যায়। "শিউলি" গল্পটি যাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে সে চরিত্রের নামটিও শিউলি। ছত্রিশ বছর বয়সী,কলেজের শিক্ষিকা শিউলি। এক বোন আর ভাইকে সাথে নিয়ে কর্মস্থলের পাশে শহর নয়,শহরতলিও নয় ঠিক এমন এক জায়গায় তার বসবাস। কিন্তু তার কি পরিবার নেই? বাবা-মা নেই? আছে, অন্য সবার মত শিউলিরও একটি পরিবার ছিল,এখনো আছে। কিন্তু সেই পরিবার আর আগের মত পরিপাটি, সুখের চাদরে ঘেরা আর স্বাচ্ছন্দ্যে মাখা, স্বচ্ছ পরিবার নেই। শিউলির বাবা, মা অন্য ভাই-বোন নিয়ে থাকেন দিনাজপুর এর এক গ্রামে। দেশছাড়া,ছন্নছাড়া পরিবারটির কর্তী এখন শিউলি। হ্যাঁ,শিউলিরা দেশছাড়া। যাদের বলা হয় রিফিউজি। ভারত আর পাকিস্থান স্বাধীন হবার পর র্যাডক্লিফ লাইন টেনে উপমহাদেশের মানচিত্রে যে পরিবর্তন আনা হয়েছিলো তাতে একদিকে যেমন কোটি কোটি মানুষ নিজের দেশ পেয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল তেমনি কয়েক লক্ষ মানুষকে হারাতে হয়েছিল নিজের দেশ , নিজের ভিটেমাটি। সেই কয়েক লক্ষ মানুষের সাথে শিউলির পরিবারও ছিলো। মাতৃভূমি বর্ধমান ছেড়ে শিউলিদের স্থান হয়েছিল নতুন দেশে দিনাজপুরে। ওদের নতুন পরিচয় হয়েছিল রিফিউজি। শিউলির কেরানী বাবা তমিজ উদ্দীন , প্রথম সন্তান শিউলির জন্মের পর আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলেন। বিয়ের দীর্ঘ ছয় বছর পড় সন্তান তাও আবার মেয়ে। পুত্র সন্তান না হওয়াতে পরিচিত সবাই হা হুতাশ করেছিলেন তমিজ সাহেবের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ভেবে। বৃদ্ধকালের ভরসা তো একমাত্র ছেলেরাই। বেচারা কেরানী তমিজের ভাগ্যে আর তা জুটলোনা। কিন্তু সবার মুখে ঝামটা দিয়ে কন্যা সন্তানকে নিয়ে খুশির সাগরে ভেসেছিলেন শিউলির বাবা। মেয়েকে এক থোকা শিউলি ফুলের মত শুভ্র লাগার কারণে নাম রেখেছিলেন শিউলি। স্বামীর এমন কন্যাপ্রীতি ও আহ্লাদপনা দেখে শিউলির মাও ভ্রু কোঁচকাতেন। আর সমাজের অন্যরা তো আছেই। আর এতকিছুর পরেও সবার চোখের বাঁকা চাহনি ও তিরস্কার এর মাঝেও মেয়েকে সাত রাজার ধনের মত আগলে রেখেছিলেন শিউলির বাবা। আর সেই শিউলিই এখন পরিবারের হাল ধরেছে। কিন্তু এই দায়িত্ববোধ, এই একঘেয়ে জীবনে মাঝেমাঝেই আনমনা হয়ে যায় শিউলি নামের মেয়েটি। স্মৃতিকাতরতা তাকে কুড়েকুড়ে খায়। মনে পড়ে ছেলেবেলার কথা,নিজেদের সেই একতলা বাড়িটার কথা। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে,ফিরে পেতে ইচ্ছে করে হারানো সে নিশ্চিন্ত জীবন। আর তাইতো মাঝেমাঝে সন্ধ্যার আবছায়া আকাশের দিয়ে চেয়ে থাকা শিউলির মনে হুটোপুটি করে সব মধুর,তিক্ত স্মৃতিরা। বাবার স্মৃতি, মায়ের স্মৃতি, ভাইয়ের স্মৃতি, শৈশবের স্মৃতি, নিজেদের বাড়ি আর দেশের স্মৃতি। কীভাবে ধীরে ধীরে চোখের সামনে সব বদলে গেল সেসব স্মৃতি। শিউলির চোখ ভিজে যায় সেসব স্মৃতির দাপটে। বইটি পড়তে গিয়ে কেমন এক ঘোরে আচ্ছন্ন হয়েছিলাম। হাসান আজিজুল হক বাংলা সাহিত্যের এক ধ্রুবতারা। তাঁর অদ্ভুত ক্ষমতাশালী লেখনীর প্রতি আমার আসক্তি জন্মেছিলো " আগুনপাখি " বইটি পড়ে। "শিউলি" নামের ছোট এই বইটিতেও লেখকের মোহনীয় লেখনীর মোহে মুগ্ধ হয়েছি। বিশ্বযুদ্ধ এবার ভারত-পাকিস্থান ভাগের প্রেক্ষাপটে মূলত একটি পরিবারের গল্প এটি। যেখানে দেখানো হয়েছে বন্দুক ঘাড়ে যুদ্ধে অংশ না নিয়েও যুদ্ধকালে কী এক নীরব যুদ্ধে লড়তে হয় প্রত্যেক পরিবারকে। যুদ্ধ কোন মানুষকে, কোন পরিবারকেই ছেড়ে দেয় না। শিউলি মূলত সেই মানুষ এবং তার পরিবার সেইসব পরিবারের প্রতিচ্ছবি। দেশ ছাড়া রিফিউজি মানুষ এর প্রতি অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হয় তার সূক্ষ্ম এক ধারণাও পাওয়া যায়। ধারণা পাওয়া যায় সমাজে প্রচলিত পুত্র ও কন্যা সন্তান এর ভেদাভেদ ও চিন্তাধারার। সর্বোপরি সম্পর্কের মায়াজাল ও জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে ভোল পাল্টানো নতুন জীবনের সাথে মানিয়ে নেয়ার লড়াই এর পরিচয় পাওয়া যায় এই বইয়ে। জানা যায় যুদ্ধের ধ্বংসলীলার অন্তর্মুখী ও আড়ালের আঘাতের দিক সম্পর্কে। যে ধ্বংস সরাসরি রক্ত ঝরায় না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে বইয়ে দেয় রক্তের বান। শিউলি এবং শিউলির পরিবার ঠিক এমনি এক ধ্বংসলীলার সাক্ষী। আর বইটি পড়ে পাঠক মুখোমুখি হয় সেই সত্যের।