User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
শুরুটা অমিত রায়ের নামের রায় পদবীর 'রয়' ও 'রে' তে রূপান্তর দিয়ে। তারপর গল্পের নদী বয়ে গেছে ভালবাসার স্নিগ্ধ পরশ ছুয়ে তার অজানা গন্তব্যে। যে নদীর উচ্ছ্বসিত স্রোতে জীবনের সমস্ত প্রেম, আবেগ, ভালবাসা ছাপিয়ে গেছে পার্থিব জীবনের অন্য সবকিছুকে; যেন এই অতল শীতল নদীতে ডুবে গেছে পৃথিবীর সব গল্পকথা। মনে হয় ভালবাসার চেয়ে স্নিগ্ধ, শক্ত, স্বচ্ছ, মনোরম, বিষাদ, ত্যাগ, স্মৃতি, বিস্মৃতি আর কিছুই নেই! অমিত রায় গল্পের চালক, আগাগোড়া প্রেমময় মানুষ, প্রেমিক কবি। রবীন্দ্রনাথ নবীন লেখকের জবানিতে তার সম্পর্কে লিখেছেন- বিশাল পৈত্রিক সম্পত্তির সাংঘাতিক সংঘর্ষেও সে টিকে যায়, বুদ্ধি দিয়ে বিদ্যেকে ঢেকে রাখার পাত্র সে অথচ লোকে কথা বলা মাত্র মুগ্ধ না হয়ে পারে না। তার চলার নিজস্ব ধরণ আছে, বলনে বুদ্ধিমত্তার চিহ্ন আছে, আছে তুচ্ছকে তাম্র তাচ্ছিল্যকে নম্র বলার অসাধারণ অসংঙ্গায়িত ক্ষমতা। সে গল্পের নায়ক, সে সকলের থেকে আলাদা। সকলের মত যেখানে স্থির তার অভিপ্রায় অন্যদের করে তোলে অস্থির। প্রচলিতকে অস্বীকার করার ক্ষমতাও অমিতের প্রচুর, তার মতে 'ফ্যাশানটা হলো মুখোশ, স্টাইলটা হল মুখশ্রী' আর তার নেশাই স্টাইলে। তাই সে অন্যদের মতের প্রতি তাচ্ছিল্য করেই বলতে পারে 'বিধাতার রাজ্যে ভালো জিনিস অল্প হয় বলেই তা ভালো, নইলে সে নিজেরই ভিড়ের ঠেলায় হয়ে যেত মাঝারি' কিংবা নিবারণ চক্রবর্তীর নাম করে সে বলতে পারে-- "আনিলাম অপরিচিতের নাম ধরণীতে, পরিচিত জনতার সরণীতে। আমি আগন্তুক, আমি জনগনেশের প্রচন্ড কৌতুক।" কিংবা, "পুষ্পমাল্য নাহি মোর, রিক্ত বক্ষতল, নাহি বর্ম অঙ্গদ কুন্ডল। শূন্য এ ললাটপট্টে লিখা গূঢ় জয়টিকা। ছিন্নকন্থা দরিদ্রের বেশ। করিব নিঃশেষ তোমার ভান্ডার। খোলো খোলো দ্বার।" তো, এই হচ্ছে আমাদের নায়ক অমিত রায়। নায়কের কথা হলো, এইবার নায়িকার পরিচয় দেওয়া চাই। এই গল্পের নায়িকা লাবণ্য; লেখাপড়া জানা, বিদ্যের প্রতি প্রচন্ড আগ্রহী, বই প্রেমী, পাহাড়ী রাস্তা বেয়ে চলা পাহাড়ের মতো দৃঢ় ব্যক্তিত্বের মেয়ে। সৌন্দর্যের কথা বললে শ্যাম সুন্দরী এই মেয়ে যেন নব প্রভাতের আলোকরেখার মতোই স্বপ্রভিত, দিনের উজ্জ্বল আলোর সাথে যার তুলনা নাই। লাবণ্যের চলায় বলায় কৃত্রিমতা নাই কিন্তু যা আছে তা বিশ্বলোকে বিরল, ফলাফল তাহাকে বুঝবে এমন সাধ্যও সর্ব সাধারণের নাই! সে ভালো বলতে পারে কিন্তু তার চেয়ে ভালো বলাতে পারে, কিছুটা জেদী আবার মনটাও কোমল, সৃষ্টি জগতে যা কদাচিৎ দেখা যায়। তারপর একদিন দুজনার দেখা শিলঙের এক পাহাড়ি রাস্তায়, সরাসরি সংঘর্ষে! পৃথিবীতে এর চেয়ে সঠিক ক্ষণে, সঠিক ভাবে যেন আর এদের দেখা হতে পারতো না। অমিত প্রেমিক মানুষ, মানুষের প্রেমে পড়তে আর মানুষকে প্রেমে ফেলতে তার সময় লাগে অল্প, তবু কিছু স্তব্ধতা মুগ্ধতা যেন বশ করে বসে তাকে। সে খাতা খুলে লিখে চলে, "পথ আজ হঠাৎ একি পাগলামি করলে! দুজনকে দুই জায়গা থেকে ছিঁড়ে এনে আজ থেকে হয়তো এক রাস্তায় চালান করে দিলে। অ্যাস্ট্যানমার ভুল বলছে। আজ আকাশ থেকে চাঁদ এসে পড়েছিল পৃথিবীর কক্ষপথে—লাগল তাদের মোটরে মোটরে ধাক্কা, সেই মরণের তাড়নার পর থেকে যুগে যুগে দুজনে এক সঙ্গেই চলছে..." তারপর দুজনার পরিচয়েই অমিত ছুটেছে লাবণ্যের পানে। একদিন লাবণ্যের কানে কানে বলল জন ডনের কবিতার দুটো লাইন, "For God's sake, hold your tongue and let me love!" পরিচয় থেকে প্রেম, সংঘর্ষ থেকে সাহিত্য, গদ্য থেকে পদ্য, শিলঙ থেকে কলকাতা ছড়িয়ে গেছে তাদের প্রেমকথা। দুজন দুজনকে নাম দেয় 'বন্যা' আর 'মিতা'। ঘন বনের মধ্যে থাকা স্বচ্ছ জলাধারে এক টুকরো পাথরের টুপ করে পড়ে যাওয়ার মতো শব্দ করে বাজতে থাকে দুটো হৃদয়ের প্রেম সংগীত, আর বেচারা নিবারণ চক্রবর্তীর নামে চলে প্রেম কাব্য স্তুতি! অমিত আওরে চলে তার কাব্যমালা, "হে মোর বন্যা, তুমি অনন্যা, আপন স্বরূপে আপনি ধন্যা।" " আমার ছায়াতে তোমার ছবিতে মিলিত ছবি, তাই নিয়ে আজি পরাণে আমার মেতেছে কবি। পদে পদে তব আলোর ঝলকে ভাষা আনে প্রাণে পলকে পলকে, মোর বাণীরূপ দেখিলাম আজি, নির্ঝরিণী— তোমার প্রবাহে মনেরে জাগায়, নিজেরে চিনি।" এই গল্পে আবার বিচ্ছেদও আছে, আছে মিলনতত্ত্ব, আছে ভালবাসার আকুতি ভরা দুটি হৃদয়ের নিরব কান্না। সবশেষে দু’পক্ষের সম্মতিতে অঘ্রান মাসে বিয়ের ঠিক হয়, আর অমিতের কলকাতার গমনকালে নিজের কথা পাঠ করে শুনালেও লাবণ্য আবৃত্তি করে শোভনলাল কাছ থেকে পাওয়া চিরকুট থেকে এক কবিতা। এখানে পাঠক লাবণ্যের প্রেম প্রত্যাশী শোভনলাল, আর অমিতের সাথে বিলেতে দেখা হওয়া কেটি বা কেতকীর মধ্যের ঘঠনাগুলোও জানতে পারবে। যদিও শেষ পর্যন্ত অমিত ফিরে যায় কেতকীর কাছেই, আর শোভনলালের সাথে লাবণ্যের বিয়ের খবর দিয়ে শেষ হয় গল্প! যদিও অমিত বলে যে, "যে ভালোবাসা ব্যাপ্তভাবে আকাশে মুক্ত থাকে সে দেয় সঙ্গ; যে ভালোবাসা বিশেষভাবে প্রতিদিনের সব কিছুতে যুক্ত হয়ে থাকে সংসারে সে দেয় আসঙ্গ। দুটোই আমি চাই।" "একদিন আমার সমস্ত ডানা মেলে পেয়েছিলুম আমার উড়ার আকাশ; আজ আমি পেয়েছি আমার ছোট্ট বাসা, ডানা গুটিয়ে বসেছি। কিন্তু আমার আকাশও রইল।" অন্যান্য চরিত্রগুলোর মধ্যে মাসিমা যোগমায়া, যতিশংকর, অমিতের বোন লিসি - সিসি অন্যতম এবং এদের কর্মকান্ডও নিতান্তই কম নয়। যা জানতে হলে বইটা পড়া বাঞ্ছনীয়! পা ঠ প্র তি ক্রি য়া 'শেষের কবিতা' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কাব্যধর্মী উপন্যাস। প্রথমেই বলে নেই রবীন্দ্রনাথ আমার প্রিয় লেখক, উনার সকল লেখাই আমার পছন্দের। তার মধ্যে শেষের কবিতা সবচে প্রিয়। আমার কাছে অসম্ভব রোমান্টিক মনে হওয়া এই বইটিই আমি পড়েছি ত্রিশ বারের উপরে। তো, বলা বাহুল্য যে আমি কেবল এর প্রসংসাই করব! অসাধারণ এই বইটি আমার কাছে আছে ২০০৫ সালের পর থেকে (বইটির প্রকাশকাল ১৯৯৫) এই দীর্ঘ সময়ে আমি আমার বিভিন্ন বয়সে পড়ে প্রতিবারই আমি একে নতুন করে আবিষ্কার করি। এখানেই হয়তো এই বইয়ের সবচে বড় সার্থকতা। আমি জানি না এই বইয়ের মধ্যে কি আছে, তবে এটা যেন টনিকের মতো কাজ করে। আমার যখনই মন খারাপ হয় আমি দরজা বন্ধ করে এই বইটা পড়ি। আর এমন বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়া লেখাটা সত্যিই অনেক কঠিন ব্যাপার। তারপরেও বলি রবীন্দ্রনাথের এই বইটা অনেক বেশি অসাধারণ। প্রেমের এই উপন্যাসে কবিগুরু যেন তার হৃদয়ের সমস্ত প্রেম ঢেলে দিয়েছিলেন কাগজে। ফলস্বরূপ আমি আজো লাবণ্য দেবীর প্রেমে পড়ি, আমি আজো অমিত রায়ের কবিতায় ডুবে থাকি। আমি অমিত রায়কে অনুভব করি, লাবণ্যকে ভালবাসি। লাবণ্যের প্রেমের জন্য উন্মুখ শোভনলালের জন্য মায়া হয় আবার অমিত লাবণ্যের মিলন না হওয়াতে কষ্টও হয়। আর এসব অনুভূতি সত্যিই বলে বুঝানোর মতো নয়, যারা এখনো পড়েননি তাদের এই বইটা পড়ে ফেলা উচিত। এছাড়া এখানকার সবগুলো কবিতাই অসাধারণ, চিত্তকে দোলা দিয়ে যায়। এই কবিতাগুলো পড়ার পরের অনুভূতিটা এমন যেন গ্রীষ্মের দুপুরে কয়েক ক্রোশ হেঁটে এসে এক গ্লাস শীতল জল গলায় ঢাললাম। এখানে তাই কয়েকটা উদ্ধৃতি করার লোভ সামলাতে পারছি না! প্রথম দিন সংঘর্ষের পর নিবারণ চক্রবর্তী (অমিত) লিখে গেল... "পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী। রঙিন নিমেষ ধুলার দুলাল পরানে ছড়ায় আবীর গুলাল, ওড়না ওড়ায় বর্ষার মেঘে দিগঙ্গনার নৃত্য, হঠাৎ-আলোর ঝলকানি লেগে ঝলমল করে চিত্ত।" অমিতের কোলকাতায় যাওয়ার আগে লাবণ্যের আবৃত্তি করা কবিতা... "তোমারে দিই নি সুখ, মুক্তির নৈবেদ্য গেনু রাখি রজনীর শুভ্র অবসানে। কিছু আর নাই বাকি, নাইকো প্রার্থনা, নাই প্রতি মুহুর্তের দৈন্যরাশি, নাই অভিমান, নাই দীন কান্না, নাই গর্বহাসি, নাই পিছু-ফিরে দেখা। শুধু সে মুক্তির ডালাখানি ভরিয়া দিলাম আজি আমার মহৎ মৃত্যু আনি।" কিংবা লাবণ্যের উদ্দেশ্যে শোভনলালের চিরকুট থেকে পাওয়া কবিতাটা... "সুন্দর তুমি চক্ষু ভরিয়া এনেছ অশ্রুজল। এনেছ তোমার বক্ষে ধরিয়া দুঃসহ হোমানল । দুঃখ যে তায় উজ্জ্বল হয়ে উঠে, মুগ্ধ প্রাণের আবেশবন্ধ টুটে, এ তাপে শ্বসিয়া ওঠে বিকশিয়া বিচ্ছেদশতদল।" সবচে প্রিয় লাবণ্যের বিয়ের খবর দিয়ে লেখা চিঠির সেই কবিতাটা... " কালের যাত্রার ধ্বণি কি শুনিতে পাও? তারি রথ নিত্যই উধাও জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন― চক্রে পিষ্ট আঁধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন। ওগো বন্ধু, সেই ধবমান কাল জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল তুলে নিল দ্রুতরথে দুঃসাহসী ভ্রমণের পথে তোমা হতে বহু দূরে। মনে হয় অজস্র মৃত্যুরে পার হয়ে আসিলাম আজি নব প্রভাতের শিখরচূড়ায়; রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায় আমার পুরানো নাম। ফিরিবার পথ নাহি; দূর হতে যদি দেখ চাহি পারিবে না চিনিতে আমায়। হে বন্ধু, বিদায়।" আসলে আমরা রবীন্দ্র প্রেমীরা বিশ্বাস করি রবীন্দ্রনাথ একটা আশ্রয়ের নাম। যদি আপনার প্রেমিকা স্বত্তা থেকে থাকে তাহলে আপনি এই বইটি পড়ুন, রবীন্দ্রনাথ আপনাকে তার প্রেমের ছায়ায় আশ্রয় দেবে!
Was this review helpful to you?
or
Shesher Kobita ekti oshadharon upannash.protita coritra bislaysan onuvab poribesh khub valo hoyese.eta porar por amar shilong jete isse hoyase. Rabindranath Thakur ekhane khub sunder vabe fasion and style er bakkha diyesen.Somporker tanaporen, valobasar bicitrata oshadharon. Rabindranath Thakur er vashar proyog ebong dialog oshadharon.ami muluto rabindranath pori dialog er jonno.ekta coto kotha ek shathe onek kisu bole dei. Protita para te shei parar bakkha diyesen,kobitar baboher valo legese.