User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Entrepreneur এর সঠিক উচ্চারণ এন্ট্রাপ্রেনার নাকি অন্ট্রাপ্রেনা(র) তা প্রথম জানতে পারি সেঁজুতির সুবাদে (বাঙালির চোখে দেখা ইংরেজি বানান এবং বলতে গিয়ে জিভের জড়তা, এ দুটো অতিক্রম করে বহু ইংরেজি শব্দের সঠিক উচ্চারণ সেঁজুতিই আমাকে শিখিয়েছে!)। তবুও খাঁটি বাঙালি উচ্চারণে লেখা বইয়ের নাম "অ্যাক্সিডেন্টাল এন্ট্রাপ্রেনার" দেখে আরাম পাই, ওসব বিদেশি উচ্চারণে আমার পোষায় না। তবে আমি এখানে এই বইয়ের আলোচনার চেয়ে অন্য আলাপই বেশি করবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বইটা সময় মতো সঙ্গ দেবে। ইংরেজি Entrepreneur শব্দটার বাংলা করলে দাঁড়ায় 'উদ্যোক্তা', যে উদ্যোগ নেয় কোন একটা সমস্যা সমাধানে, যার মাধ্যমে হয়তো দেশে বা পৃথিবীতে নতুন ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হয়, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। কিন্তু নর্থসাউথের MBAর ক্লাসগুলো সেঁজুতির পাশে বসে শুনতে শুনতে উদ্যোক্তা সম্পর্কে যে ধারণাটা মাথায় ঢুকেছিল, তা হলো উদ্যোক্তার কাজ পৃথিবীতে নতুন অভাব তৈরি করা! যেমন, স্মার্ট ফোন। ২০১১তে যখন আমি প্রথম দেখি, তখন সেটা হয়তো নিছকই একটা পণ্য। কিন্তু ২০২৫ এ এসে এটা এখন আমার জীবনের অংশ, পরনের জামাটার মতো গুরুত্বপূর্ণ, কিংবা এর চেয়েও বেশি! তার মানে নতুন 'অভাব' তৈরি করা হয়েছে আমার জীবনে। এই বিষয়টা নিয়ে সেই শিক্ষক বেশ একটা দার্শনিক দ্বন্দ্বের ভেতর ফেলে দিয়েছিল তার ক্লাসের ছাত্রদের- উদ্যোক্তার কাজ কি সমস্যার সমাধান করা নাকি মানুষের মাঝে নতুন অভাববোধ তৈরি করা? স্মার্টফোন ছাড়া পৃথিবীর মানুষ যদি কয়েক হাজার বা কয়েক লক্ষ বছর চলতে পারে, তাহলে স্মার্ট ফোনের আবিষ্কারকে সমস্যার সমাধান করা বলবে, নাকি নতুন অভাববোধ তৈরির প্রক্রিয়া বলবে? অবশ্য এভাবে চিন্তা করতে গেলে পুরো মানবসভ্যতা বিষয়ক আলোচনাই খেলো হয়ে যায়! উদ্যোক্তাদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা এসব প্যারাডক্সিকাল দর্শন নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামায় না। তাদের মাথায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আইডিয়া আসতে থাকে, তারা ছুটতে থাকে সেটা বাস্তবায়ন করতে। তাদের পরিকল্পনা ধরেই নতুন গবেষণা হয়, নতুন টেকনোলজি তৈরি হয়, নতুন পণ্য তৈরি হয়, আর হাজার-লক্ষ-কোটি মানুষের নতুন পেশা তৈরি হয়। শুধু নতুন আইডিয়া মাথায় আসা মানেই কি সে উদ্যোক্তা? তা কিন্তু না! সেই আইডিয়া বাস্তবায়নে তার প্রয়োজন হবে টাকা এবং লোকবলের জোগান দেবার মতো লিডারশীপ স্কিল, সমাজে নতুন আইডিয়া বা পণ্য ছড়ানোর মতো পর্যাপ্ত Manipulation স্কিল, এবং সফলতা পাবার আগ পর্যন্ত যুদ্ধে লেগে থাকার মতো সহনশীলতা। এই তিনের একটার ঘাটতিও যার ভেতর থাকবে, সে উদ্যোক্তা হতে পারবে না। সে বড়জোর একজন 'ব্যবসায়ী' হতে পারবে। নর্থসাউথের সেই শিক্ষক 'ব্যবসায়ী' এবং 'উদ্যোক্তা'র মাঝে বেশকিছু পার্থক্যসূচক উদাহরণ দিয়েছিল। একটা উদাহরণ এমন, পাইকারি মার্কেট থেকে তোমার দোকানে পণ্য এনে বিক্রি করাটা ছিল ব্যবসা, যেটা গত হাজার বছরের মডেল। আর ফেসবুকে লাইভ দেখিয়ে তার হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করাটা ছিল ১২-১৪ বছর আগে চালু করা নতুন উদ্যোগ। অবশ্য উদ্যোক্তা যেহেতু নতুন আইডিয়া এনে নতুন চাহিদা বা বাজার তৈরি করে, সেই বাজারে অনেক অনেক ব্যবসায়ী এসে হাজির হয়, যাদের নতুন বাজার তৈরির সক্ষমতা নেই। এজন্য সোশ্যাল মিডিয়া বিজ্ঞাপন এবং হোম ডেলিভারিটাও এখন তুমি শুরু করলে সেটাকে ব্যবসা বলা হবে, উদ্যোগ না। আমি এখান থেকে মূল যে পার্থক্যটা টের পেয়েছিলাম, ব্যবসায়ী হতে লাগে যে কোন উপায়ে টাকা কামানোর পথটা জানা থাকা, এর বাইরে তার কিছু না জানলেও চলবে। উদ্যোক্তা সেখানে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে ছুটবে। অবশ্য দিনশেষে তার সফলতাও টাকা কামানোর সক্ষমতা দিয়েই মাপা হবে। অনলাইন ক্লাসে একদিন একটা Brainstorming Session হয়েছিল। বিষয়বস্তু ছিল- ঢাকা শহরে এত যানজটের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে সময়মতো পৌঁছানোর উপায় কী? ছাত্ররা বিভিন্ন উত্তর দিয়েছিল- এম্বুল্যান্স সার্ভিস থেকে হেলিকপ্টার সার্ভিস পর্যন্ত। সেঁজুতির পাশে বসে আমি ফিসফিস করে ওর কানে কানে বললাম, সারাশহরের ইমার্জেন্সি সার্ভিস দিতে পারা হাসপাতালগুলোর একটা ম্যাপিং, আর রোগীর লোকেশন ট্র্যাক করে তার অবস্থান থেকে সবচেয়ে কাছের হাসপাতালটার নাম তো সাজেশন দেয়া যায় সফটওয়্যার দিয়ে। এতে অন্তত দূরের হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অযথা পথে পথে ঘুরে বেড়ানোর ঝক্কি নিতে হবে না রোগীকে, আবার ইমার্জেন্সি সার্ভিস নাই এমন হাসপাতালে গিয়ে ফিরেও আসতে হবে না। উত্তরটা সেই শিক্ষকের পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু এতেই কি আমি উদ্যোক্তা হয়ে গেলাম? আমি কি আইডিয়া বাস্তবায়নে টাকা এবং লোকবল জোগাড়ের চেষ্টা করেছি? আমি কি উপরমহলের মানুষদেরকে, বা হাসপাতালের মালিকদেরকে, কিংবা সমাজের অন্যদের এই আইডিয়া বাস্তবায়নে Manipulation করতে চেয়েছি? আবার আইডিয়া বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত লেগে থাকার ধৈর্য কি আমার আছে? সবগুলো প্রশ্নের উত্তরই তো 'না'। আমি খুব বেশি হলে Paradoxical চিন্তায় আচ্ছন্ন একজন ভাবুক, উদ্যোক্তা হবার ইচ্ছা মনের কোন কোণায় থাকলেও বাইরে খুব বেশি বেরোতে পারেনি এখনো। এজন্যই উদ্যোক্তাদের আমার কাছে প্রবল পরাক্রমশালী মানুষ বলে মনে হয়। রাজনীতিবিদদের বাইরে পৃথিবীর বড়সড় বদল ঘটাতে যদি কেউ পারে তারা হলো Entrepreneurs. উদ্যোক্তাদের মনোজগৎ নিয়ে জানার মতো বই যে খুব বেশি পড়েছি তা না। Zero to One নামে একটা ইংরেজি বই পড়া হয়েছিল সেঁজুতিরই টার্মপেপার লিখতে সাহায্য করতে। পিটার টিল নামের যুক্তরাষ্ট্রের এক উদ্যোক্তার বই। যদিও এ জাতীয় যত বই বাজারে পাওয়া যায় তার কোনটাই উদ্যোক্তা নিজে লেখে না, লেখে কোন এক ভাড়াটে লেখক। দর্শন, লেখালেখি, শিল্প এসবের মানেই হলো Paradoxical আলোচনা, Melancholia, Nostalgia ইত্যাদি। একজন উদ্যোক্তার সময় কই এসব নিয়ে ভাবার! কিন্তু বাজারে যেহেতু তাদের চিন্তা প্রক্রিয়া নিয়ে চাহিদা আছে, লেখক-প্রকাশক-চলচ্চিত্র নির্মাতারা সেটাকে কাজে লাগিয়ে কিছু বেচাবিক্রি করে। তারাও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমন্ডলে নিজের নামটা দেখে পরিতৃপ্তি পায় সম্ভবত, তাই এসব করার অনুমতি দেয় শিল্প-সাহিত্য নিয়ে থাকা মানুষদের। তবে বুদ্ধিমান মাত্রই জানে, যা পড়ছি বা পড়ানো হচ্ছে বা দেখানো হচ্ছে তা আসলে লেখকের কথা, সম্পাদকের কথা, নির্মাতার কথা। উদ্যোক্তার চিন্তা প্রক্রিয়া যদি কেউ পুরোপুরি বুঝতেই পারতো, তবে সেই উদ্যোক্তার আর কখনোই হয়তো সফল উদ্যোক্তা হওয়া হতো না! Zero to One পড়ে যে খুব আনন্দ পেয়েছিলাম তা না। বরং মনে হয়েছে, কেউ একজন বারবার বলতে চাচ্ছে, Monopolist হও। এটাই Start-up কোম্পানি শুরু করার একমাত্র ফর্মুলা। ক্যাপিটালিজমের ধারণাকে খুব বেশি ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোটা সম্ভবত মেনে নিতে পারেনি আমার মধ্য-বাম মন। সে যাকগে। হিমালয় ভাইয়ের সাথে একটা প্রজেক্টে যোগ হতে যাওয়ার পূর্বপাঠ হিসেবে 'অ্যাক্সিডেন্টাল এন্ট্রাপ্রেনার' বইটা পড়তে বসা। রাইসুল কবির নামের একজন বাংলাদেশি উদ্যোক্তার মনোজগৎ উন্মোচনের চেষ্টা এই বই, উদ্যোক্তার বিভিন্ন Structured সাক্ষাৎকার ঘেঁটে এই কাজটা হিমালয় ভাইয়েরই করা। সফটওয়্যার জগতে Brainstation 23 নামটা সম্ভবত অনেক বড়, আমি নিজে ওই জগতের লোক না হওয়ায় সেভাবে জানি না। তবে বইটা পড়তে থাকি নিজের মতো। বইয়ের শুরুতেই, দেশ বিদেশের মধ্যে বিদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে অতি উচ্ছ্বাসের যেমন কিছু নেই, তেমনি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে অতি বিষাদেরও কিছু নেই, দুটোই স্টেরিওটাইপ, রাইসুল কবিরের এজাতীয় চিন্তার খোঁজ পেলাম। এরপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েও তার চিন্তাভাবনার দেখা পাই। সেখানেও ইউরোপ আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের খুব বেশি পার্থক্যের জায়গা নেই বলেই মন্তব্য আসে, বিশেষ করে এই উন্মুক্ত তথ্য প্রযুক্তির যুগে। বরং আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের চ্যালেঞ্জ উৎড়াতে পারলে শিশুদের আরও শক্তিশালী মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠার রসদ পাওয়া যায়, যেটা আরাম আয়েশের দেশগুলোতে কম। ওসব দেশে অর্থনৈতিক স্থবিরতা আসন্ন বলে ভবিষ্যদ্বাণীও তার এই চিন্তাকে সমর্থন করে। রাইসুল কবিরের সাথে কথোপকথন এবং তার ভিত্তিতে লেখকের Interpretation এর ভিত্তিতে বই এগোতে থাকে। রাইসুল কবিরের প্রচুর বই পড়ার অভ্যাস, ছোটবেলার গল্প-উপন্যাস পড়ার নেশা বড়বেলায় বিভিন্ন বিজনেস বা ফিলোসোফিকাল স্টাডি দ্বারা রিপ্লেস হয়েছে। কোন একটা বিষয়ে সফলতা মানে সেই বিষয়ে বেশি সময় জুড়ে বা বেশি মনোযোগের সাথে লেগে থাকা- মেধাবীদের সম্পর্কে সরল দর্শন তার। কিন্তু একটা জিনিস ভালো লাগে, তাই তার পেছনে বেশি সময় দেয়া হয়, এতেই কি সফলতা আসবে? এখানেই উদ্যোক্তা রাইসুল কবিরের ভাগ্য বিষয়ক চিন্তাভাবনাগুলো ভাবনার জন্ম দেয়। ডেসটিনি বা ইভ্যালি জাতীয় বিজনেস সম্পর্কে খুব মজার একটা চিন্তা হলো, এই মডেলের ব্যবসায় মার্কেটিংয়ের কাজটা কাস্টমার দিয়েই করানো হয়, আলাদা কোন খরচ না। সেই হিসেবে মডেলটা ভালো ভাবে কনট্রোল করা গেলে সাধারণ বিজনেসের কনসেপ্ট এই মডেলের সাথে খুব বেশি আলাদা কিছু না। নিজে ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের হলেও এটা নিয়ে খুব বেশি সমস্যা নেই উদ্যোক্তা হতে, এমনটাও এসেছে তার কথায়। কারণ, সব মানুষই একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে কাজ চালানোর মতো একটা যোগাযোগ দক্ষতা এমনিতেই অর্জন করে, ওতেই হয়ে যায়। যে কোন উদ্যোক্তার নিজের শক্তিমত্তার জায়গাটা চিনতে পারাটাও জরুরি। Product (পণ্য) নিয়ে বাজারে নামবে নাকি Service (সেবা), সেটা বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ। পণ্যের উদ্যোক্তারা খুব দ্রুত বিলিয়নিয়ার হয়, কিন্তু পণ্যের চাহিদা বা প্রযুক্তি দুটোই পরিবর্তনশীল। আবার সেবাদাতারা খুব আস্তে আস্তে বড় হয়, কিন্তু কাস্টমারের সাথে টেকসই সম্পর্ক গড়ে উঠায় বাজারে টিকে থাকাটা সহজ হয়। তাই কোন পণ্যবিক্রেতার পণ্য বয়কটের কবলে পড়ে একরাতেই হাজার হাজার কাস্টমার হারাতে পারে, কিন্তু সেবা বিক্রেতাকে এত অল্প সময় বদলে ফেলা যায় না। আবার উদ্যোক্তার ইনোভেশন মানেই যে সবকিছু নতুন করে আবিষ্কার করা, এটাও রাইসুল কবির মনে করছে না। তার মতে, প্রচলিত কাঠামোতেই কাজ করতে করতে যখন দক্ষতা অর্জন হয়, তখন নতুন আইডিয়া কিংবা স্টাইল এমনিতেই চলে আসে। Empathy বা সহানুভূতিশীল হওয়া যে কোন প্রতিষ্ঠানের বেড়ে উঠার জন্য খুব দরকারি। লিডারশিপের জায়গা থেকেই হোক বা দলগত জায়গা থেকেই হোক, প্রত্যেকের সহানুভূতিশীল হওয়াটাই শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান তৈরির মূল কথা। কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা মানুষের অসন্তোষের পেছনের কারণটা নিয়েও রাইসুল কবিরের চিন্তা আছে; কারও যোগ্যতা যদি ১০০ হয়, তাকে ১০২ করতে বললে সে বরং খুশি হবে। কিন্তু তাকে ৮০ পারফরম্যান্স করতে বলাটাই তাকে অসন্তুষ্ট করবে, সবাই ভাববে তার বেতন কম, তাই অসন্তোষ। অথচ ব্যাপারটা তা না। তবে কাজের মূল্যায়ন হওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ, সেটা মৌখিক ধন্যবাদ থেকে শুরু করে বেতন বৃদ্ধি পর্যন্ত যে কোন কিছু দিয়েই হতে পারে। কিন্তু সহানুভূতিশীল মানুষেরা কী Conflict Management এ দুর্বল হয়? লেখক হিমালয় পাই এখানে নিজেই একটা কথা নিয়ে আসে। Selective Empathy. রাইসুল কবির ব্যাপারটাকে ব্যখ্যা করে রবীন্দ্রনাথের কবিতা দিয়ে, দন্ডিতের প্রতি দন্ডদাতারও কষ্টের অনুভূতি থাকবে, কিন্তু তাই বলে দন্ড দেয়া তো বাদ রাখা যাবে না। কোন ব্যক্তির দক্ষতার অভাবে সম্পূর্ণ প্রজেক্ট ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়াটা উচিৎ না, সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিকে ছাটাই করার বিকল্প তো নাই। খারাপ খেলতে থাকা প্লেয়ার দলের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি খারাপ প্লেয়ারটাকে বারবার সুযোগ দেয়া সেই প্লেয়ারের জন্যও কিন্তু কম মানসিক অত্যাচার না। যে কোন টিমের জন্য দুই ধরণের মানুষ দরকারি। স্বপ্নচারী, এবং বাস্তবতাসম্পন্ন। স্বপ্নচারীরা নতুন আইডিয়া নিয়ে আসবে, বাস্তবতার লোকেরা তা যাচাই-বাছাই করে গ্রহণ বা বাতিল করবে। এই ফরম্যাটে এগোলে প্রতিষ্ঠানের বৃদ্ধিও হয়, ভুল পদক্ষেপ এড়ানোও সহজ হয়। আর স্বপ্নচারী বা ভিশনারীর অবস্থান রাখতে হবে উপরে, একমাত্র তখনই দুর্দান্ত ফলাফল আসে। Entrepreneurship জাতীয় বইতে অবধারিতভাবেই লিডারশীপের কথাটা আসবে। এই বইতে রাইসুল কবিরের সাথে এ বিষয়ে কথোপকথনগুলো খুবই মজার। অনেকটা এমন, মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে, প্রয়োজনে Benefit of Doubt দিতে হবে। শক্ত নিয়মের বা টার্গেটের বেড়াজালে আটকে মানুষের কাছে কখনো ভালো ফল পাওয়া যায় না। এখানে কথা প্রসঙ্গে আবার বাংলাদেশের সাথে ইউরোপ-আমেরিকার তুলনা চলে আসে। উদাহরণটা একটা নেগেটিভ বিষয় দিয়েই আসে। বাংলাদেশে যেমন গণমানুষের একটা বড় অংশ ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করে, আমেরিকাতেও তেমন। এখান থেকে গণমানুষের চিন্তার প্যাটার্নে মিল পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের Flexibility দিলে বাংলাদেশে কাজ হবে না, কিন্তু আমেরিকাতে হবে, ব্যাপারটার সাথে তাই রাইসুল কবির একমত না। হোম অফিস নাকি অফিসে এসে কাজ করা, ছুটি নেয়া বা না নেয়া, এগুলো কিছুতেই কিছু যায় আসে না যদি কাজটা ঠিকঠাক Execution হয়। আর এখানে লিডারের দায়িত্ব হলো কাজের সিস্টেমটা তৈরি করে দেয়া, তখন পুরো জিনিসটা Autonomous হয়ে যাবে, এমনিতেই চলবে। অনেক শক্ত নিয়মের বেড়াজালে কাওকে আটকে রাখা লাগবে না। পুরো প্রতিষ্ঠান কাজ করবে একটা Body হিসেবে, ব্যক্তি সেখানে গুরুত্বপূর্ণ না, এবং প্রতিটা ব্যক্তিই সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক। তবে মানুষ নিয়ে ভীতিও যে তার একেবারে নাই সেটা না, বুঝা যায় এই কথায়- মানুষ খুব Unpredictable প্রাণী। অনেক অনেক মানুষকে ম্যানেজ করতে হলে সেখানে Intuition সবসময় ঠিকঠাক কাজ করে না। পড়তে পড়তে পড়া শেষ হয়ে যায়। একেবারে শেষে গিয়ে মনে হয়, আরে, বইটা তো বেশ সুখপাঠ্য ছিল। এর কারণ কী? চিন্তা করে দেখলাম, উদ্যোক্তাকে করা লেখকের প্রশ্নগুলো। যে প্রশ্নের উত্তরে তথ্যের চেয়ে তত্ত্বের প্রাধান্য পেয়েছে। মানুষের দর্শন, কর্মপদ্ধতি, কিংবা চিন্তার বৈপরীত্য বা শূন্যতা, বেরিয়ে আসে আসলে প্রশ্নের দক্ষতার উপরে। তবুও হিমালয় ভাইয়ের সাথে শেষ দিনের আড্ডায় আসা কথাটাই মনের মাঝে জ্বলজ্বল করতে থাকে, "বল তো, মানুষ বই পড়ে উদ্যোক্তা হয়, নাকি উদ্যোক্তা হবার পরে বই পড়ে?" রাইসুল কবির কিন্তু নিজেকে বলে, অ্যাক্সিডেন্টাল এন্ট্রাপ্রেনার; একটু ভিন্ন ভাবে ভাবলে প্রকৃতির প্রতিটা ঘটনাই কি এমন না? "দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল এন্ট্রাপ্রেনার' ২৮.০৩.২০২৫