User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
====== কাহিনী/বইয়ের সার-সংক্ষেপ ======= “রাজা শত্রু রাজ্যের সাথে যুদ্ধে জিততে পারেন, তবে মনে রাখবেন নিজ প্রজার সাথে লড়াইয়ে পূর্ণ বিজয় কখনোই আসে না। অসম্ভব।” সাতবাহন, শক, চেরা, চোলা আর পাণ্ড্য সবাই এই সুবিশাল ভারতীয় উপমহাদেশের প্রতিবেশী রাজ্য। নিজেদের মধ্যে কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ নেই। তবে অর্থ, ধন-সম্পদ তথা বাণিজ্যকেই বলা হয় রাজার লক্ষ্মী। সেই লক্ষ্মীই যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকে তাহলে না থাকে সেই রাজ্যের মান, না থাকে সেই রাজার সম্মান। সেই মান-সম্মান নিয়েই যখন টানাটানি অবস্থা শুরু হয় তখন প্রতিবেশীই হয়ে উঠে আসল প্রতিযোগী! যে প্রতিযোগীতাই তাদের নিয়ে যায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। যেখানে ক্রমঃশ মহারাজ সাতকর্ণী, নাহাপনা, উথিয়ান ও কারিকালা সবাই হয়ে উঠলো একে অপরের পক্ষ-বিপক্ষ খেলোয়াড়। সবাই সবার স্বার্থ রক্ষার জন্য উদগ্রীব। আর সেই যুদ্ধ ও যড়যন্ত্রের খেলায় পেছন থকে কলকাঠি নাড়তে থাকে প্রত্যেক রাজ্যের চতুর মন্ত্রীগণ। সেই খেলায় অতি সাধারণ ও এসবের সাথে সম্পর্কহীন কিছু মানুষও একসময় হয়ে উঠে যুদ্ধের মূল নিয়ামক। গড়ে উঠেছে স্বার্থ, সন্দেহ, লোভ, ষড়যন্ত্র, বীরত্ব, যুদ্ধ ও ইতিহাসের রহস্যময় মিথোলজিক্যাল বিষয়ের এক অপূর্ব আখ্যান। ========= পাঠ প্রতিক্রিয়া ========== ঢাউস সাইজের ৬০০ পৃষ্ঠার এই বই শেষ করে বলতেই হবে অসাধারণ এক দারুণ উপাখ্যান উপহার দিয়েছেন লেখক। অস্ত্র-শস্ত্র, যুদ্ধ, কূটকৌশল, রাজনীতি, ষড়যন্ত্র, মিথোলজিক্যাল ব্যাপার কি নেই এতে! এই সবকিছু এক মলাটে এবং তার সুন্দর একটি সমাপ্তি। চরিত্রের কথা যদি বলতে হয় তাহলে আপাত কম গুরুত্বপূর্ণ যেসব চরিত্রগুলোও এখানে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো সেই সময় কাহিনীর প্রয়োজনেও ছিলো দারুণ মানানসই। কোন অপ্রয়োজনীয় আলাপ বা বর্ণনা আমার চোখে তেমন পড়েনি। রাজকীয় রাজনীতির বিভিন্ন ব্যাপার, কূটকৌশল ও যুদ্ধের কলা-কৌশলের নানান দিক যেকোন পাঠককে মুগ্ধ করবে নিঃসন্দেহে। তবে যে সময়কালের ভিত্তিতে বইয়ের কাহিনী রচিত সেই সময়ের প্রকৃতি, সমাজ-রীতি ও সংস্কৃতির বর্ণনা আরোও কিছু দেয়ার প্রয়োজন ছিলো বলে হয়েছে। আরোও যে জিনিসটির অভাববোধ হয়েছে সেটা হচ্ছে তংকালীন সময়ের ভারতীয় উপমহাদেশের একটি মানচিত্র। যেখানে বইয়ে উল্লেখিত প্রত্যেক রাজার রাজ্যের সীমানাসহ উল্লেখ থাকলে বইয়ের কাহিনী ও রাজনৈতিক কূটকৌশলগুলো বুঝতে আরো সুবিধা হতো এবং বইয়ের কাহিনীকে আরোও আকর্ষণীয় করে তুলতো। ইতিহাসকে কেন্দ্র করে বা কাহিনী অবলম্বনে যারা উপন্যাস পড়তে পছন্দ করেন তাদের কাছে মহাকাল বইটি অবশ্যই পছন্দের একটা জায়গা জুড়ে থাকবে। সেই হিসেবে লেখককে স্বার্থক বলতেই হবে। এর পরের খণ্ডটাও অর্থ্যাৎ মহাযাত্রা সংগ্রহ করেছি। আশাকরি সেটাও অনবদ্য হবে এবং মহাকাল কেও ছাড়িয়ে যাবে। প্রোডাকশনঃ বইটির কভার ডিজাইন সুন্দর লেগেছে; বাইন্ডিং ও পৃষ্ঠার কোয়ালিটিও ভালো ছিলো। চিরকুটের বইয়ের প্রোডাকশন বরাবরই ভালো। তবে বানান ভুল নিয়ে কিছু বলা দরকার। পুরো বই জুড়েই ‘অতিথি’ বানান লেখা হয়েছে ‘অথিতি’। বুঝলাম না পুরো বইয়ের এই একই বারংবার ভুল কি কারোও চোখে পড়েনি! পরের সংস্করণের বইয়ে ঠিক করা হয়েছে কিনা জানি না। না ঠিক করা হয়ে থাকলে বিষয়টি প্রকাশকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৮/১০।
Was this review helpful to you?
or
বিশাল পেক্ষাপটে লেখা প্রাচীন ভারতের রাজনীতি,জটিল ষড়যন্ত্র,যুদ্ধ নিয়ে এই আখ্যানটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।বইটির প্রোডাকশনও চমৎকার।বলতে গেলে পয়সা উসুল একটা বই।থ্রিলার আর মিথোলজি বই পছন্দ হলে এই বইটি মিস করবেন না।
Was this review helpful to you?
or
মহাকাল বইটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। রহস্যে ঘেরা বইটি খুবই সুন্দর। লেখক দিবাকর দাস বইটি খুবই সুন্দর ভাবে প্রদর্শন করেছেন।
Was this review helpful to you?
or
#আড্ডাখানায়_রকমারি #রিভিউ_২০২৩ বই: মহাকাল লেখক: দিবাকর দাস জনরা: হিস্টোরিক্যাল আর মিথোলজিক্যাল ফ্যান্টাসি প্রকাশনা: চিরকুট প্রচ্ছদ: সজল চৌধুরী পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৬০৮ মলাট মূল্য: ৮০০ টাকা। (বইটা বিশাল কলেবরের, তাই আলোচনাটাও একটু দীর্ঘ। তবে আলোচনায় সামান্য পরিমান স্পয়লার নেই। অতএব, "স্পয়লার" এর ভয় পাবারও কোন কারন নেই।) ১. বিন্দুমাত্র সম্পর্কহীন বিন্দুগুলো এক সময় এসে মিলে গেলো এক বিন্দুতে। তবে শুরুটা তো বিন্দু থেকেই। সেখান থেকেই তার পরিধি ঘুরে আবার সেই বিন্দুর মুখোমুখি মানেই স্বার্থক একটা চক্র। তাই বিন্দু থেকে শুরু করা শ্রেয় হলেও এই কাহিনির কেন্দ্র থেকে শুরু করি। মহাকাল এর মূল কেন্দ্র তো লেখক দিবাকর দাসই। তিনিই অজস্র বিন্দুর বিন্যস্ত রূপে এঁকেছেন এই বৃত্ত। দিবাকর দাসের লেখার ভঙ্গিটা ক্যালেইডোস্কোপ ঘোরের মতো। আপনি খুব সহজে এই ঘোরে নে/শাগ্রস্থ হতে পারেন অথবা এই নিপুণ মাকড়সার জালে আটকা পড়তে পারেন। তিনি যেমন একটা দৃশ্যের খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো লিখে আপনাকে হিপনোটাইজড করে ফেলার ক্ষমতা না হোক সম্ভাবনা তৈরী করে, তেমিন খুব অল্প কিছু শব্দেও একটা দৃশ্যের সফল পরিসমাপ্তিও ঘটাতে দক্ষ। তার স্টাইলে গল্প বলার বা শোনার ফলে ধীরে ধীরে একটা আক্ষেপও তৈরী হয়। এর নাম জেলাসি। মনে হয় - আহা! চরিত্রের নামগুলো অচেনা হলেও গল্পগুলো কিছু কিছু তো চেনা। হয়তো চেষ্ট করলে আমি বা আপনি বলতে পারতাম? নাহ বোধহয়! কয়েক বছর আগেকার ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে রচিত এক মহাকাব্য যেন এই "মহাকাল"। আপনি যদি চরিত্রগুলো বা কাহিনিগুলো কালেক্টভলি জাজ করেন সেটাও চলে। তবে কালেক্টভলি জাজ করা থেকে একটু ভিন্নভাবে কাহিনিগুলো এবং চরিত্রগুলো জাজের একটা ভালো স্পেস হয়ে ওঠে। দীর্ঘয়িত না করার ইচ্ছের কারনে আমি হয়তো একটি বা দুটি নিয়েই আলাপ করবো। বইয়ের শুরুতেই এই লাইনটা চোখ দেয়া যাক:- "ইন্দ্রপুর গ্রামটা তেমন বড়ো না। এপাশ থেকে ওপাশে দুলকি চালে ঘোড়ায় যেতে বড়জোড় পাঁচ কলা সময় লাগে।" (কলা এখানে চাঁদের ১৬ টি অংশ বা রূপের ৫ অংশ) একটু খেয়াল করে দেখুন এই বর্ননাটা হয়তো দীর্ঘ হতে পারতো বা যেটুকু বলা হয়েছে তার পুরো ভারটা শুধু দুটো শব্দে এসে স্থির হয়েছে। "দুলকি চালে" এবং "পাঁচ কলা"। এর মধ্যে "দুলকি চালে" যেন আপনার এই পরিভ্রমন আরো ছন্দময় করে তোলে। একই উদাহরন দেয়া যায়, রাধা এবং অসিতের প্রথম দেখায়। দেখা যাক - “রাধা বাড়ি চলে এসেছে। বাড়ির পথ ধরবে রাধা এমন সময় অসিত ডাকলো, 'শুনে যা।' রাধা থেমে মুখ ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়। শরীর ঘুরে না। চোখে তার বাঁকা দৃষ্টির স্বতঃস্ফূর্ত চাহনি। এ যেন এক অব্যর্থ অ/স্ত্র.." এই যে "তাকানো" এবং "শীরর ঘুরে না" এর এঙ্গেল - আমাদের আলাদা একটা পরিপূর্ন এঙ্গেলের ভিউ দেয় না? একটা টিপিক্যিল প্রেমের গল্পের বা সম্পর্কের ক্যামিষ্ট্রি যেন খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠে ওই "বাঁকা দৃষ্টির" মধ্যে দিয়েই। দিবাকর দাসের গল্প বুননের মেকানিজম আরো কিছু আলোচনা সময়ের সাথে করবো। ২. মহাকালের প্রথম বিন্দু অসিতের কথা দিয়ে শুরু করা যাক। এই কাহিনির শুরুও অসিত আর তার পোষা বানর নিয়ে খুব সাদামাটা ভাবে। তার সহজ জীবন যাপন আর খুব সাধারন একটা স্বপ্নের অবর্তে ভর করে বেড়ে ওঠে এই চরিত্রটি। লেখক দিবাকর দাস এখানে খুব চেনা মেকানিজমের আশ্রয় নিয়েই এঁকেছেন এই চরিত্রটি। তবে সেখানেও তিনি দারুনভাবে তার মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। চেনা মেকানিজমের আশ্রয় বলতে যেটা, আমরা প্রায়শই দেখি একটা মুখ্য চরিত্রকে অনেকটা "প্রয়োজনের থেকে বেশি" কষ্ট-দুঃখ দিয়ে” শুরুতেই পাঠকদের সিমপ্যাথি নিয়ে নেবার ট্রিক। যেমন "পথের পাঁচালী" এর অপু অথবা "অপরাজিত" এর অপর্ণার দুঃখ-বেদনা বা এমন আরো অনেক বইয়ের মুখ্য চরিত্রের দুর্দশা যেমন বাঙালির বিচ্ছেদযুক্ত মনের উপর আলাদা প্রভাব ফেলে - "মহাকাল" এর এই প্রোটাগনিস্টও সময়ের সাথে সাথে এবং শুরু থেকেই নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে উঠায় খুব সহজে আমাদের সিমপ্যাথি আদায় করে নেয়। তবে এখানে লেখকের কৃতিত্ব তার ম্যাজিক ট্রিকে। গল্পের শুরুতেই তিনি দেখান কোন এক ঘটনবহুল কারনে অসিত এবং তার পোষা বানরের একটা বিপর্যয়। যার ফলে পোষা বানরের পুরো শরীর পুড়ে যায়। গ্রামের একমাত্র বৈদ্য পবন পাতার রস দিয়ে তার সারা শরীর ব্যান্ডেজ করে দেয়। তিন দিন পর যখন তার ব্যান্ডেজ খোলা হয়, দেখা যায় অঙ্গনের (পোষা বানর) ধূসর বাদামী লোমের চামড়া আর আগের মতো নাই। সুকুমার বৈদ্যও অসিতের মতো ছানাবড়া চোখে তাকিয়ে আছেন অঙ্গনের দিকে। ঠিক এই জায়গায় পাঠকও কৌতূহল হয় অসিতের মতো। সুকুমার বৈদ্যের মতো। আস্তে আস্তে খোলা ব্যান্ডেজের দিকে পাঠকের যেন সজাগ দৃষ্টি। ব্যাপারটা অনেকটা যেন ম্যাজিশিয়ান ধীরে ধীরে বের করে আনছেন কিছু একটা তার হাতে পর্দার ভেতর হতে। পিনপতন নিস্তব্ধতা এবং দর্শক তাকিয়ে আছেন একটা অলীক উন্মোচনের দিকে। একটা অলৌকিক প্রত্যাশার দিকে। আপনি - পাঠক হয়তো খেয়ালও করেননি কখন আপনি অসিত আর সুকুমার বৈদ্যের সাথে ভীড়ে জমায়েত হয়ে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন অঙ্গনের দিকে। আপনি নিজেই মহাকালের একটা অংশ। লেখক দিবাকর দাসের ম্যাজিকে আপনি নিজেও একটা অবসেসনের মধ্যে পতিত হয়ে গেছেন। ৩. সাম, দান, দন্ড, ভেদ। রাজনীতি, কূটনীতি আর স/মরনীতি! "মহাকাল" এর গল্প মহারাজ সাতকর্ণীর। এই গল্প সাতকর্ণীর মন্ত্রী গিরিধারীরও। শক রাজ্যের রাজা নাহাপনারও গল্প হয়ে ওঠে মহাকালের আর এক কাল। রাজা কারিকালার কথাও কোনভাবে বাদ দেয়া যাবে না মহাকালের পাতা হতে। পুরাণের যে মূল বিষয় পাঁচটি: সর্গ, প্রতিসর্গ, বংশ, মন্বন্তর এবং বংশানুচরিতম্ - তার মানচিত্র ধরে এই মহাকালের পুরো ঘটনা অনকটা যেন সেই বংশানুচরিতম্ এর কথা মনে করিয়ে দেয়। বংশানুচরিতম্ মানে রাজবংশের ইতিহাস। চেরা, চোলা আর পাণ্ড্য - এই তিন রাজ্যের একে অপরের প্রতি বিদ্ধেষ ও ষড়যন্ত্রের গল্প যেন মহাকাল। উপন্যাসটা এই আঙ্গিকে মোটা দাগে মূলত "ফিট" আর "আনফিট" না হয়ে বরং "ফিট" ও "অধিকতর ফিট" এর সূক্ষ্ণতম তারতম্যের পার্সপেক্টিভই সামনে চলে আসে। এই আকর্ষনের কারনেই দিবাকর দাসের "মহাকাল" শুধু বিনোদননির্ভর হয়ে থাকে না বরং সাতকর্ণীর মন্ত্রী গিরিধারীর চোখ (আদতে মন হবে) ধাঁধানো কূটনীতির চাল আর বৃদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ আলাদা একটা ডিসকোর্সের সুযোগও তৈরী করে। কিছুটা ধোঁয়াশা আপনাকে যেমন বিনোদননির্ভর মননের দিকে উৎসাহী করবে, পাশাপাশি সেগুলো বিশ্লেষণে পাঠক সমানভাবে আগ্রহী হয়ে উঠবেন সমান্তরালভাবে। প্রতিটি রাজ্য, তাদের রাজা, প্রজা, সেনাপতি এবং মন্ত্রীদের রাজনীতির স্লো-বার্ন আপনাকে ধীরে ধীরে নিয়ে যাবে উপন্যাসের অন্তিম চিতার দিকে। যে চিতার কাঠ এবং ঘী দুটোই যেন কূটনীতির নাগপাশে বাঁধা। কে জিতলো, কে হারলো, কোন মূহুর্তে উল্টে গেল পাশার দান আর কেউবা সবচেয়ে "আনপ্রেডিকটেবল" চাল দিয়ে বদলে দিচ্ছে কাঙ্খিত ফলাফলের চিত্র - এই সবকিছুর উত্তর পাবেন দিবাকর দাসের "মহাকালে"। টোটাল ৯৩টা অধ্যায়ের প্রতিটায় এমনভাবে শেষ হয়েছে যে পাঠক আক্ষরিক অর্থেই মুখ ফসকে বলে ফেলবেন -"হ্যাঁ - একেই বলে পেজ টার্নার।" ৪. রুদ্রদেব ও অসিতের কথা বলা যাক। মহাকাল মূলত যে হিস্টোরিক্যাল আর মিথোলজিক্যাল ফ্যান্টাসির সুষম মিশ্রন তাতে রুদ্রদেব চরিত্রটি যেন মোক্ষম শস্ত্রের মতো। শাস্ত্র সম্পর্কেও যার জ্ঞান অতুলনীয়। খুব রহস্যময় এবং একি সাথে আনএক্সপেক্টেড একটা চরিত্রের আদলে শুরু এই চরিত্র। পাশাপাশি ঠিক যেন বিপ্রতীপ কোনের মতো একদম সরল এবং এক্সপেক্টেড। বলতে পারেন অসিতের গল্পটা সাদামাটা গল্পের সাদামাটা শুরুর মতো, এবং ধীরে ধীরে এতে রঙ চড়ায় লেখক। অঙ্গনের মতো করেই। যখন এই আনএক্সপেক্টেড এবং এক্সপেক্টেড দুটো চরিত্র তাদের সংযোগ বিন্দুতে এসে দাঁড়ায় পাঠক তখন একটু নড়েচড়ে বসেন। একটা স্বপ্নিল আশা এবং ঘনায়মান উত্তেজনা নিয়ে পাঠক পর্যবেক্ষন করতে থাকেন পরবর্তী পদক্ষেপ। ব্যাপারটা অনেকটা যেন "লুসিড ড্রিমের" মতো। আপনি জানেন যে আপনি একটা স্বপ্ন দেখতেছেন এবং আপনার এক্সপেকটেড ফলাফলের প্রতিই আপনার যত লোভ। একি সাথে আপনি মানে পাঠক ভালো ভাবেই সজাগ থাকে আনপেডিকটেবিলিটির দিকেও। মিথ হোক বা ফ্যান্টাসি, ফিকশন বা নন-ফিকশন - পাঠক মাত্রই যে কোন গল্পের মধ্য দিয়ে তার চাওয়া, পাওয়া বা স্বপ্নের কাছাকাছি কিছু একটা আঁকড়ে ধরার প্রয়োজন অনুভব করে নিজের অজান্তেই। কোন একটা সাইডে যে চলে যায়, অথবা কোন একটা চরিত্রের প্রতি তার নির্দোষ পক্ষপাতিত্ব থাকে। মহাকালের "অসিত" সেই সাইড অথবা "রুদ্রদেব"। অথবা দুজনই। পাঠকভেদে সেটা নির্ণয় হবে। ৫. রাজনীতি এবং কুটনীতি মহাকালের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় দৃশ্যমান। অনেকের কাছে কুটনীতির এই অধীক ব্যপ্তি কিছুটা অপ্রয়োজনীয় বা দীর্ঘায়িত মনে হলেও আমার মতে একদম যথাপোযুক্ত ছিল। কুটনীতি এতো বিস্তৃতভাবে না থাকলেই বরং এতো বিশাল একটা উপন্যাস এবং অজস্র চরিত্রের ভাঁজে পাঠক একটা ইলিউশানের মধ্যে থাকতো। কুটনীতির এতো বিশদ বর্ণনাই বরং আলাদাভাবে একটা অবসেশন তৈরী করে পাঠকদের মনে। একইভবে মরনীতি মানে যু/দ্ধের হরেক কৌশল, নানা প্রকারের বুহ্য এবং সেসবের পুংখানুপুংখ বর্ণনা পাঠকের চোখের সামনে খুলে দিবে ভিজ্যুয়াল ন্যারেটিভের দিগন্ত। কমিকবুকের চরিত্র বা ফাইটিং-সীনের মতো খুব স্পষ্টভাবেই আপনি বইয়ের পাতায় না বরং সেলুলয়েড পর্দায় দেখছেন এই যু/দ্ধ। একি সাথে আপনি এতো সব ডিটেইলিং এ স্পষ্টতই দেখতে পাবেন আর একটা জিনিষ, তা হচ্ছে লেখক "দিবাকর দাসের" দুর্দান্ত প্রস্তুতি”। তবে এটা খুব বেশি জায়গায় দৃশ্যমান না হলেও কিছু জায়গায় অনুভব করা যায যে, সম/রনীতির কিছু পর্যায়ে মহাভারতের ইন্দ্র আর কর্ন, দ্রোণাচার্য এবং একলব্য এবং এরূপ আরো কিছু মহাভারতের তত্বজ্ঞানের আড়ালে হালকা ইনফরমেশন ডাম্পিং হয়েছে। তবে এতো বড় কলেবরের একটা বইয়ে সেটা বড়সড় কোন বিরুক্তির উদ্রেক করবে না। দিবাকর দাসের "মহাকাল" উপন্যাসে আমি যে দুটো ব্যাপারে বেশ ভালোভাবে ঘাটতি অনুভব করেছি সেগুলোর কথায় আসি। প্রথমতই বলবো চরিত্রায়নের কথা। অনেক গুরুত্বপূর্ন চরিত্রের সমাবেশ থাকলেও গুটিকয়েক চরিত্র ছাড়া অন্য চরিত্র নির্মানে লেখক হয়তো আরো একটু ইফোর্ট দিতে পারতেন। অসিত চরিত্র প্রিয় হতে হতেও কিছুটা যেন কুয়াশায় মিলিয়ে গেল। রুদ্রদেব অথবা গিরিধারী ছাড়া আরো বেশ কিছু প্রিয় চরিত্র থাকলেও ঠিক যেন ভিজ্যুয়ালাইজ করা যায় না। যু/দ্ধের দৃশ্যপট যেমন ক্রিষ্টাল ক্লিয়ার, তেমনি গুটিকয়েক চরিত্র ছাড়া বাকি সব চরিত্রের চিত্রায়ন অনেকটাই "কোহরার" মতো। লেখা শুরু করেছিলাম "রাধা" চরিত্রের শরীর না বাঁকিয়ে মুখ ফিরিয়ে চাহুনি দিয়ে। তবে দিবাকর দাস হয়তো কোন নারী চরিত্রের দিকে মুখ ফিরেও তাকানোর অবকাশ পাননি। নাকি মানুষ যেমন তার চারপাশ দ্বারা প্রভাবিত হয় ঠিক তেমনি কূটনীতির এবং সমরনীতির সাথে কলমযু/দ্ধে অবতীর্ন লেখক হয়তো অনায়াসে "একজন উল্ল্যেখযোগ্য নারী চরিত্রের" দরকারের ব্যাপারটা ইচ্ছেকৃতভাবেই এড়িয়ে গেছেন? যেটাই হোক না কেন, "মহাকালে একটা শক্তিশালী নারী চরিত্র চাই" এর দাবী খুব অযৌক্তিক হতো না। "মহাকাল" এর পরবর্তী পর্বে সেটা হয়তো লেখক আনতে পারেন। সেক্ষেত্রে নতুন কোন চরিত্রই আনা লাগবে হয়তো। কেননা এতো দূর এসে মহাকালের একমাত্র (এবং খুব গৌন) নারী চরিত্র "রাধা" কে হয়তো একজন "শক্তিশালী নারী চরিত্র" দেখানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। "রাধা" কে শক্তিশালী না দেখালেও তাহার কাঁধে লেখক (ঁ)-চন্দ্রবিন্দুর যে "বাড়তি ভার" বহন করাচ্ছেন - আশা রাখি পরবর্তী এডিশনে তিনি সে অযাচিত ভারটুকু লাঘব করবেন। এতো দুর্দান্ত একটা বই যেখানে ভুলের মার্জিন এতোটাই নগন্য যে উল্ল্যেখ না করলেও চলে, সেখানে এই "চন্দ্রবিন্দু" চাঁদের কলঙ্কের মতোন। ৬. ঐতিহাসিক পটভূমিতে লেখা এবং হিস্টোরিক্যাল আর মিথোলজিক্যাল ফ্যান্টাসির মিশ্রনে বেড়ে ওঠা "মহাকাল" লেখক দিবাকর দাসের এক অনবদ্য সৃষ্টি। সাথে আছে চিরকুটের দুর্দান্ত প্রোডাকশন। রাউন্ড বাইন্ডিং বই পড়ার যে কম্ফোর্ট তার পুরোটাই পাবেন এখানে। তবে বইটা হাতে নিলেই সাথে সাথে পড়া শুরু করতে পারবেন না কারণ সজল চৌধুরীর প্রচ্ছদ আপনাকে কিছুটা সময় আটকে রাখবে। অনেকগুলো এলিমেন্টস এবং কালার কম্বিনেশন আপনাকে যেন মহাকালের ছোটখাটো একটা জানালা খুলে দিবে। আমি খুব সাধারন পাঠক। বিজ্ঞ বা বিদদ্ধ কেউ না। মহাকাল কোন কালে স্থান পাবে, বা ভবিষ্যতে কি হবে সেই ভারডিক্ট দেবার ক্ষমতা আমার নাই। আমার এখতিয়ার ভাল্লাগেনাই আর ভাল্লাগছে এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। খুব এক্সসাইটেড হলে হয়তো তার পূর্বে খুব/দারুন/দুর্দান্ত শব্দগুলো বসাই। লেখক দিবাকর দাসের গল্প বলার ভঙ্গিটা খুব আমুদে। মানে যে কেউ তাতে মানিয়ে নিতে পারবেন। গল্প বুনতে, গল্প বলতে এবং গল্প ভুলাতে একজন যোদ্ধার মতোই শাস্ত্র এবং শস্ত্র সবদিকেই পারদর্শী। আমি শুধু এটুকু বলবো যে, মহাকালের পর দিবাকর দাসের যে কোন বই আমি চোখ বন্ধ করেই কিনবো। আমার দারুন ভাল্লাগছে।
Was this review helpful to you?
or
মহাকাল - বইটি যেন নামের মতোই বিশাল। শুধু পৃষ্ঠা সংখ্যার কথা বলছি না, বইটির কাহিনী, চরিত্র, ঘটনার ধারাবাহিকতা, চমক - সবকিছুই মনে গেঁথে যাওয়ার মতো। পড়ার সময় যেন আলাদা এক জগতে প্রবেশ করেছিলাম। সবকিছু যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। বেশ কিছুদিন এই মহাকালের অংশ হয়েই ছিলাম। বইটি পড়ে শেষ করছি কয়েকদিন আগেই কিন্তু এখনো কিছু বিষয় নিয়ে না ভেবে পারছি না। জানিনা এই লেখা বইয়ের লেখক পর্যন্ত পৌঁছাবে কি না তবুও একটি প্রশ্ন করছি, অনুরোধও বলা যায়। রূদ্রদেব কীভাবে অভিশপ্ত হলেন, রাজ্য হারালেন আর অসিত শেষ পর্যন্ত অঙ্গদকে উদ্ধার করতে পারল কি না, তারপর গ্রামে ফিরে গিয়ে সেখানেই স্থায়ী হল কি না - এই বিষয়গুলো নিয়ে কি নভেলা বের করা যায় না? আমি নিশ্চিত আমার মতো পাঠক যারা মহাকালকে মনে গেঁথে নিয়েছে তারা এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইবে।
Was this review helpful to you?
or
এই বছরের বইমেলার সবচেয়ে সেরা বইটার পাঠ প্রতিক্রিয়া হয়তো লিখছি এখন। এই গল্প প্রাচীন ভারতের। রাজাদের সম্রাট হয়ে ওঠার যাত্রার দিকের গল্প। ভূমি দখলের রাজনীতির বদলে বাণিজ্য দখলের যে আধুনিক রাজনীতি, তার গল্প। জটিল ষড়যন্ত্র, কূটনীতি আর যুদ্ধের গল্প। বীরত্ব, জয় অথবা পরাজয়ের গল্প। প্রাচীন ভারতে এক রাজা অন্য রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন৷ যুদ্ধের ময়দানে নামছেন। পেছন থেকে তাদের মন্ত্রীরা দেখাচ্ছেন বুদ্ধির নানা কলাকৌশল। সেই থিম নিয়ে লেখক লিখে ফেলেছেন মহাকাল। সেইসাথে অসিত আর তার পোষা বানর অঙ্গদের যে যাত্রার শুরু সেটাও হয়ে উঠেছে এই বইয়ের অন্যতম মূল থিম৷ আমি রিভিউতে কাহিনি সংক্ষেপ বলার এর পক্ষে না। এতে স্পয়লার হয়ে যায়৷ তারচেয়ে বরং পাঠ প্রতিক্রিয়ায় মনোযোগ দেয়া যাক। ইদানীং বই পড়তে গিয়ে যে ব্যাপারটা আমাকে ব্যথিত করে তা হলো, লেখক লেখা শুরুর সময়ই চিন্তা করেন 'এইবার আমার একখান বই বাইর করতেই হইবে।' এরপর তিনি যে বই লিখেন সেখানে প্রচুর তাড়াহুড়োর ছাপ দেখা যায়। মহাকাল পড়তে গিয়ে এই ব্যাপারটার অনুপস্থিতি দেখে ভালো লেগেছে৷ লেখক যত্নের সাথে বইটা লিখেছেন৷ বিস্তৃত প্লটে খেই না হারিয়ে যত্নের সাথে লেখক গল্পের সুতো ছড়িয়েছেন, জাল বুনেছেন দক্ষতায়, তারপর সেই সুতো গুটিয়ে এনেছেনও বেশ ভালোভাবেই৷ তবে এই বই নিয়ে সমালোচনা করতে গেলে আমি যেটা বলবো ফিনিশিং আরও বেশি কিছু এক্সপেক্ট করছিলাম। মহাকালের দ্বিতীয় পার্টে সেই ফিনিশিং হয়তো কমপ্লিট হবে৷ প্রোডাকশন অতি চমৎকার, বইয়ের ওপরের জ্যাকেটটা তো দারুণ। বই হিসেবে মূল্যও বেশি নয়, পড়ার পর সময় আর টাকা দুইটাই উসুল মনে হয়েছে৷ একজন লেখক সারাজীবনে এরকম একটা ভালো বই লিখলে তার আর বাকি জীবন কিছু না লিখলেও চলে। বাংলা সাহিত্যে দারুণ এক সংযোজন হয়ে গেলো মহাকাল। মহাকাল মহাকালের পাতায় ক্লাসিক হবে একদিন নিশ্চয়! বই পড়ে বেশি ভালো লাগলে এরকম উচ্ছ্বসিত রিভিউ দিয়ে ফেলি। পাঠকদের আমন্ত্রণ, ঠকবেন না৷ এই বই মিস দেয়ারও মানে হয় না। আপাতত মহাকালের দ্বিতীয় পার্ট ছাড়া লেখকের কাছে আর কোনো দাবী নাই৷ অতি সত্বর দ্বিতীয় পার্ট চাই৷ বই - মহাকাল লেখক - দিবাকর দাস প্রকাশনী - চিরকুট মুদ্রিত মূল্য - ১০০০ হ্যাপি রিডিং...