User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
চলুন একটা গল্প শোনাই, একটি গ্রামের গল্প। গ্রামের নাম কেদারপুর। গাছপালা, ঝোপঝাড় জঙ্গলে ঘেরা এই কেদারপুর যেখানে দুপুরে সন্ধ্যায় বাঁশঝাড়ের শনশন শব্দ শোনা যায়, গ্রাম ভরে নদীর গন্ধ, ঢেউয়ের গন্ধ। গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনায় বন্দে আলী মিয়ার কবিতার লাইনগুলো মনে পড়বে- ‘আম গাছ, জাম গাছ, বাঁশঝাড় যেন, মিলেমিশে আছে এরা আত্মীয় হেন।’ এই গ্রামের প্রাণোচ্ছ্বল কিশোরী ময়নাকে নিয়েই উপন্যাসের পথচলা। ফুলের মতো নিষ্পাপ ময়না ইছামতির ঢেউ, পাটখেতের নিবিড়তা, সুবিশাল আকাশের অসীমতায় মুগ্ধ হয়ে বড় হওয়ার রঙিন স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠছিল ঐ গ্রামে। কিন্তু এমনই এক সময়ে নবম শ্রেণীতে পড়–য়া এই কিশোরীর জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ দুর্যোগ। সে গণধর্ষণের শিকার হয়। কী যেন ভেবে নরপশুরা ওকে হত্যা না করেই পালিয়ে যায়। ময়না বেঁচে যায়। কিন্তু এই বেঁচে থাকা কী আদৌ বেঁচে থাকা? শুরু হয় ধর্ষিতার অভিশপ্ত জীবন। স্বপ্নগুলো পুড়তে থাকে, ছাঁই হতে থাকে। ওর চিরচেনা গ্রাম, কাছের মানুষগুলো কেমন যেন অচেনা হয়ে যায়। কিছুদিন পর জানা যায় সে গর্ভবর্তী। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। কিন্তু ময়না বাঁচতে চায়। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে বেঁচে থাকতে চায়, পড়াশোনা করতে চায়, স্বপ্ন পূরণ করতে চায়। সে লড়াই ময়নার একান্ত নিজের। কিন্তু কী হলো শেষমেষ? উৎসর্গ ১০,০০০, এবং আরো ১টি ও অজস্র ধর্ষিতাকে- বাঙলাদেশকে বইয়ের ফ্লপে কাহিনী সংক্ষেপ পড়তে গিয়ে স্পয়লার খেয়েছি। গল্পের টুইস্টটা যদি ফ্লপেই পাঠককে জানিয়ে দেওয়া হয় তবে আর পড়ার ইন্টারেস্ট থাকে না। প্রকাশকের এ বিষয়ে নজর রাখা উচিত ছিল। এ ধরণের সিরিয়াস রসিকতার মর্মার্থ কী তা আমার ছোট মাথায় ধরলো না! ‘হুমায়ুন আজাদের বই অর্থাৎ পড়া যাবে না’ এই ক্যাটাগরির পাঠকের জন্য বইটা না। আজাদ বিদ্বেষীরা দূরে থাকুন। দুর্বল চিত্তের পাঠকরা এই বই পড়ার সিদ্ধান্ত ভুলেও নেবেন না। বীভৎস ঘটনার জীবন্ত বর্ণনা সহ্য করার ক্ষমতা থাকলেই বইটি পড়ার সাহস করবেন। ১৩২ পৃষ্ঠার বইয়ের প্রতিটা পাতা উপহার দিয়েছে নিদারুণ যন্ত্রণা। এ যন্ত্রণা উদিত হবে প্রতিটি পাঠকের হৃদয়ে। দারুণভাবে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজব্যবস্থা, নারীর প্রতি অবহেলা, ধর্মীয় কুসংস্কার এবং বিচারের নামে প্রহসনের নিখুঁত চিত্র। এর আগে কোনো বই পড়ে এতটা কাঁদিনি। বইয়ের পাতা বারবার ভিজে উঠছিল অশ্র“তে। ‘ময়না’ আসলে বাংলাদেশের নারীদের প্রতীকী চিত্র। তাই বুঝি ময়নার ব্যথাগুলো, আতঙ্কগুলো আমাকেও ঘিরে ধরছিল। ময়নার মাঝে নিজেকে খুঁজে পেতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় নি। নির্মমতার শিকার হয়েও ময়নার আত্মবিশ্বাস, আত্মমর্যাদা, বেঁচে থাকার তীব্র আকাঙ্খা আমাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। পুরো বইয়ের ঘটনা আঞ্চলিক ভাষায় লেখা। আঞ্চলিক ভাষায় লেখা উপন্যাসের ক্ষেত্রে আমি মনোনিবেশ করতে বেশ অসুবিধেই পড়ি। হরিশঙ্কর জলদাসের বইগুলো বেশিরভাগই ভাষার দুর্বোধ্যতার কারণে অর্ধেক পড়ে রেখে দিয়েছি। এই বইয়ে প্রথম দিকে ভয় পাচ্ছিলাম রিলেট করতে পারবো কি না। কিন্তু একদমই সমস্যায় পড়তে হয় নি। উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। হুমায়ুন আজাদের বইয়ের অন্যতম বিরক্তিকর ব্যাপার যেটা আমার মনে হয়- অত্যাধিক গালাগালির ব্যবহার। অন্যান্য বইয়ের তুলনায় এই বইয়ে গালাগালির মাত্রা খানিকটা কম। এক বসায় পড়ার মতোন বই নয়। ধীরে ধীরে এগিয়েছি। দুই রাত ঘুমুতে পারিনি ভয়ে, আতঙ্কে। প্রত্যেক পাঠিকার কাছে আমার অনুরোধ একবার হলেও পড়বেন। উপন্যাসের পরিণতি ভালো লাগে নি। কিন্তু এর চেয়ে যথার্থ পরিণতি হয়তো হতে পারতো না। অন্য বই পড়ার পর শেষ পাতায় এসে খানিকটা চোখের জল গড়ায়। কিন্তু এই বইয়ের প্রতিটা লাইন পড়ে গায়ে কাটা দিয়েছে। শিউরে উঠেছি। তিন দিন ধরে মন খারাপ। রেশ অনেকদিন থাকবে। এক কথায় যদি বলতে বলেন বইটা সম্পর্কে বলবো, ‘এটি প্রতিদিনের ঘটে চলা বাস্তব ঘটনারই কোনো একটি, গল্প নয় খুব বেশি করে সত্যি।’
Was this review helpful to you?
or
গ্রামের অতি সাধারণ মেয়ে ময়না। যে সৌন্দর্য্যকে উপভোগ করতে শিখেছে দারুনভাবে। নদী, গাছ, ফুল-পাতা, ছাগলের মোলায়েম শরীর সবই তার কাছে খুব বেশী সুন্দর,সুখের। সে নিজে সুন্দর তাই পৃথিবীটাও তার কাছে সব সময়ই সুন্দরভাবে ধরা দেয়। কিন্তু তার কোমলতায় নিদারূণ পৈশাচিকভাবে কলঙ্কের বীজ বুনে দেয় একদল বুনো শুয়্যর। এরপর, নোংরা গর্তে পড়ে যাওয়া নিষ্পাপ কিশোরী নিষ্পেষিত হতে থাকে ধর্মের গেড়াকলে। অন্ধকারে ডুবে যাওয়া মেয়েটি আলোর পথ খুঁজে পেতে চায়....কিন্তু কোথায় সে পথ? ধর্ষণ...বিভৎস একটি শব্দ। কিছুদিন আগে শুনেছিলাম আমাদের গ্রামের দশ বছরের শিশুকে ষাট বছরের এক বুড়ো শুয়্যর ধর্ষণ করেছে। শিশুটির জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। কিন্তু এখনও সুস্থ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই শয়তান। আমার আট বছরের মেয়েকে নিয়ে বড় ভয় হয়। আমার পরিবার তাকে চোখের আড়াল হতে দেয়না। ছোট্ট মেয়ে খেলতে পারেনা, মাঠে দৌড়াতে পারেনা,পুকুরে ডুব দিতে পারেনা। ঘরে বন্দী, কার্টুন আর সিরিয়াল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। জানিনা ওর মানসিক বিকাশ কতখানি হবে। প্রকৃতির সাথে সম্পর্কহীন থেকে কতখানি নিতে পারবে বা দিতে পারবে এই পৃথিবীকে?!? সাহিত্যে সত্যতার প্রসারতা নিয়ে প্রশ্ন আসতেই পারে, সন্দিহান কোন পটভুমি হলেও হতে পারে। তবে আত্মবিশ্বাসের দারস্ততার চাইতে সহজ উপায় হল সামগ্রিকতার সাথে বাস্তবতার সমন্নয় বিবেচনা। সত্যতার বিচারে নিজেকে আদর্শ না মেনেও, চোখ কান খোলা রেখে পৃথিবীর চলন ভূমির অবস্থান হিসেব করে অাকন্ঠ চিত্তে আমি-লেখকের লেখার প্রতি জানাই আমার সহস্র জনমের সম্মান। শুরু থেকেই আশায় ছিলাম লেখক কোন না কোন সময় অবশ্যই একঘেয়ে ভাবে সমাজের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করবেন। আমাকে আশাহত করেছেন নির্দয়ের মত। ভালোলাগা দিয়েছেন সত্যিকার একজন লেখকের মত। খুব সুন্দর করে সত্য বলার অঙ্গীকার নিয়ে, সত্য কেই দাড় করিয়েছেন শুধু। সত্য একটা লেখা, কতো পরিচিত আর আলোচিত। তবুও সবাইকে মনে করিয়ে দেয় নতুন করে। যা দেখা যায় না তা অনুভুতিতে আনা খুব কষ্টকর। লেখক সেই কষ্ট দূর করতে পেরেছেন খুব সহজে। যা এই গল্পে আপনি/ আপনারা সহসাই পেয়ে যাবেন । সরল কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম শেষটা মনে হয় একটু কঠিন করলাম। অস্তিত্বের ডাক পাই। আমি আমরা সবাই...রুখবো-অলস পাপ। ছিঁড়বো এবার শিকল, পথ হারাবে গেঁড়াকলের দল।