User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_পাঠক_সমাগম_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_৬ বইয়ের নাম : অপরাজিত লেখকের নাম : বিভূতিভূষণ বন্ধ্যোপাধ্যায় ক্যাটাগরি : উপন্যাস প্রকাশনী : অবধূত বইঘর ব্যক্তিগত রেটিং : ৪.৭/৫ ভূমিকা ও নামকরণ : অপরাজিত বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত দ্বিতীয় উপন্যাস। ‘প্রবাসী’ মাসিকপত্রে ১৩৩৬ সালের পৌষ সংখ্যা থেকে ১৩৩৮- এর আশ্বিন সংখ্যা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। উপন্যাসের স্ফীতির কারনে দু খণ্ডে বিভক্ত হয়ে প্রথম বের হয়ঃ প্রথম ভাগের প্রকাশকাল মাঘ ১৩৩৮ [এপ্রিল ১৯৩২], দ্বিতীয় ভাগের প্রকাশকাল ফাল্গুন ১৩৩৮ [মে ১৯৩২]। এবারেও প্রকাশক ছিলেন সজনীকান্ত দাস। পরে ‘অপরাজিত’ দু খণ্ডের জায়গায় এক খণ্ডে মুদ্রিত হয়, এখনও তাই হচ্ছে। বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় এ উপন্যাসটি উৎসর্গ করেছিলেন ‘মাতৃদেবীকে’। ‘অপরাজিত’ সাময়িকপত্রে মুদ্রণের আগে লেখকের পরিকল্পিত নাম ছিল ‘আলোর সারথি’, কিন্তু ‘প্রবাসী’ তে ছাপানোর সময়েই শিরোনাম পরিবর্তন করে ‘অপরাজিত’ রেখেছিলেন। লেখক পরিচিতি : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪ - ১৯৫০) ছিলেন একজন জনপ্রিয় ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আরণ্যক , আদর্শ হিন্দু হোটেল , ইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, কয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও কয়েকটি ভ্রমণকাহিনী এবং দিনলিপিও রচনা করেন। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ১৯৫১ সালে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন। কাহিনী সংক্ষেপ : গল্পের প্রধান চরিত্র অপূর্ব। অপু দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি মেধাবী। প্রাইমারীতে বৃত্তি পেয়ে মাধ্যমিকে পড়ার সুযোগ হয় তার। সহজ সরল মেধাবী সুদর্শন এ বালকটি খুব সহজে জয় করে নেয় সকল সহপাঠী আর শিক্ষকদের মন। কিশোর অপু স্কুল লাইব্রেরীর একজন নিয়মিত পাঠক। লাইব্রেরীর নানা ধরনের বই জ্ঞানপিপাসু অপুর মনের পরিধি কে আরও বিস্তৃত করে। ইচ্ছে জাগে কলেজে পড়ার। স্কুলের পড়া শেষ হয়ে যায় দেখতে দেখতে। নিঃস্ব অসহায় সহায়সম্বলহীন মায়ের একমাত্র সম্বল অপু শহরের কলেজে পড়বে। মা কি তাকে আঁচলে বেধে রাখতে পারে? অপরিসীম প্রাণশক্ত আধার, স্বপ্নদর্শী কিশোর অপু জ্ঞানের নব দিগন্তের খোঁজে গ্রাম থেকে শহরে পাড়ি জমায়, ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয় কলকাতার নাম করা এক কলেজে। কিন্তু সে তো শূন্য হাতে এসেছে, শূন্য হাতে কেবল দেবতার পূজা করা ছাড়া আর কিছু করা যায় না। ইটের পাজরে লোহার খাচার শহরের কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। কখনো একবেলা খেয়ে কখনো না খেয়ে চলতে থাকে তার দিন। দিনের বেশিরভাগ সময় তার কাটে লাইব্রেরিতে কারণ এটিই একমাত্র জায়গা যেখানে থাকলে তার ক্ষুধার কথা মনে থাকেনা। লাইব্রেরির বেশিরভাগ বই সে পড়ে শেষ করেছে, এদিক মায়ের অবস্থা দিন দিন খারাপ হাতে থাকে। অসহায় অপুর মায়ের জন্য কিছুই করার থাকে না। হঠাৎ একদিন মায়ের মৃত্যুর খবর আসে, এ খবর বাঁধন ছেড়ার উল্লাস হয়ে আসে তার কাছে, ক্ষুধার রাজ্যে মৃত্যু যেন মুক্তি হয়ে আসে। মায়ের মৃত্যুর পর শুরু হয় ছন্নছাড়া জীবন, কখনো চাকরি, টিউশন বা ব্যবসা কোন কিছুতেই তার মন বসে না। একদিন বন্ধুর সাথে নিমন্ত্রণে গিয়ে ঘটনাক্রমে বন্ধুর বোনকে বিয়ে করতে হয় তাকে। শুরু হয় নতুন বন্ধনে আবদ্ধ জীবন এর পর নানা ঘটনারপরিক্রমায় এগোয় অপরাজিত উপন্যাসের কাহিনী। একটা সময় বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হয় অপুর স্ত্রীর। আবার শুরু হয় ছন্নছাড়া জীবন। পাঁচ বছর পর নিজের ছেলেকে দেখতে যায় সে। ছেলেকে নিয়ে শহরে এসে সব কিছু নতুন ভাব শুরু করে। এদিকে অপুর লেখা পত্রিকাতে প্রকাশিত হাতে থাকে এবং সেগুলো জনপ্রিয়তা পেতে থাকে, আস্তে আস্তে অপুর সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। একটা সময় বিদেশে গিয়ে গবেষণা করার সুযোগ আসে তার। ছেলেকে এক প্রতিবেশী বোনের কাছে রেখে অপু নিজের দীর্ঘ দিনের ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় বিদেশে, অপুর বোন রানু বিস্ময়ের সাথে কাজলে দেখতে থাকে কাজলও অপুর মতোই দুরন্ত, বনবাদাড় প্রিয় এ যেন সেই ছোট্ট বেলার অপু! না এ ছোট বেলার অপু নয় এ অপুর ছেলে কাজল! এভাবেই চলতে থাকে অপরাজিত জীবন। পাঠ প্রতিক্রিয়া : তৃণাঙ্কুর’ দিনলিপিতে লেখক লিখেছেনঃ “অপুকে জন্ম থেকে ৩৪ বৎসর বয়স পর্যন্ত আমি কলমের ডগায় সৃষ্টি করেচি। তাকে ছাড়তে সত্যিকার বেদনা অনুভব করচি-তবে সে ছিল অনেকখানিই আমার নিজের সঙ্গে জড়ানো, সেইজন্যে বেশি কষ্ট হচ্ছে বিদায় দিতে কাজলকে, লীলাকে, দুর্গাকে, রাণূদি’কে-এরা সত্য সত্যই কল্পনাসৃষ্ট প্রাণী। কোনোদিকে এদের কোনো ভিত্তি নেই এক আমার কল্পনা ছাড়া।“ অপরাজিত উপন্যাসটি নিয়ে কিছু বলতে গেলে ঘুরেফিরে একটা কথাই মনে আসে, অপু যেনো প্রতিটি মানুষেরই ভেতরের প্রতিবিম্বটি। শত সহস্র প্রতিবন্ধকতা, প্রতিকূলতা আর শোকে দুঃখে কিভাবে স্থির থাকা যায়, কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে নিজের গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে হয় এ উপন্যাস হতে এমন শিক্ষাই পাওয়া যায়। প্রকৃতির প্রতি প্রেম, কষাঘাতের জীবনের উত্তরণ, প্রিয় মা প্রিয় স্ত্রী প্রিয় সন্তানকে নিয়ে যে অন্যরকম জীবন এক জীবন হয় তা জানতে হলে বইটি অবশ্যই পড়তে হবে। সবমিলিয়ে বলা যায়, 'অপরাজিত' একটি স্বার্থক উপন্যাস। - মাহমুদা তাহিরা