User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
সত্যজিৎ রায়ে পুরো সংকলনটা আমার সংগ্রহে থাকলেও হারিয়ে গেছে । সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার একটা একটা করে বই সংগ্রহ করবো । সংগ্রহ করতে গিয়ে সেই আবার পড়া হচ্ছে। ফেলুদার সাথে যেন সেই পুরনো দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছি ।
Was this review helpful to you?
or
#বুক_রিভিউ প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর। সহজ বাংলায় বলতে গেলে, গোয়েন্দা! আদী ভারতবর্ষে যখন সায়েবদের অর্থাৎ বৃটিশদের রাজত্ব ছিল, তখন এই পেশার কাটতি ছিল অনেক। মূলত তাদেরই আমদানী এই গোয়েন্দাপেশা! বড় বড় অপরাধী ধরা, পুলিশদের সাহায্য করা, গোপনে খোজখবর নেওয়াসহ হাজারো এডভেঞ্চারমূলক কীর্তিকলাপ ছিল তাদের! আধুনিক যুগে অবশ্য এই পেশার অস্তিত্ব অনেকটাই নেই! কিন্তু সাহিত্যে গোয়েন্দারা আজও জীবিত। যে দেশ, যে ভাষারই হোক, রহস্য-রোমাঞ্চ বই বলতে এখনও বিশ্বপাঠকের সিংহভাগ ওই গোয়েন্দা কাহিনীকেই বোঝে! আমাদের সাহিত্য অর্থাৎ বাংলা সাহিত্যেও গোয়েন্দা কাহিনীর বাক্সটা নিতান্ত ছোট নয়! আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটি বড় অংশ ধরে আছে গোয়েন্দা কাহিনী! বাঙালির গোয়েন্দা প্রীতির এই স্রোতে যে ক'জন গোয়েন্দা জোয়ার এনেছিলেন, তার মধ্যে সত্যজিৎ রায়ের 'ফেলুদা'কে ক্যাপ্টেন বলা চলে! 'ফেলুদা'... ভালো নাম 'প্রদোষচন্দ্র মিত্র'! যেমন সুন্দর, স্মার্ট, তেমনি ক্ষুরধার তার 'মগজাস্ত্র'! ছোটবেলা থেকেই গোয়েন্দাগিরির প্রচন্ড শখ! পড়াশোনা শেষ করে প্রথম দিকে ব্যাংকে চাকরি করতে ঢুকলেও পরবর্তীতে শখটাই হয়ে ওঠে মূল পেশা! খুড়তুতো ভাই তপেশ আর বয়োজ্যেষ্ঠ বন্ধুপ্রতীম লালমোহন গাঙ্গুলি ওরফে জটায়ুকে নিয়ে ফেলুদা পাড়ি দেন একের পর এক অভিযান! সমাধান করেন জটিল থেকে জটিলতম রহস্যের! গোয়েন্দা জগতে তারা 'থ্রি মাস্কেটিয়ার্স'! ফেলুদা পড়েনি এমন বাঙালী পাঠক এযুগে পাওয়া মুশকিল! বাঙালির অত্যন্ত কাছের মানুষ সে! কি শিশু, কি কিশোর, কি বুড়ো... সকলের কাছে যুগ যুগ ধরে পাঠক প্রিয়তা পেয়ে আসছে ফেলুদা! আর এই কৃতিত্বের পুরোটাই যায় এই চরিত্রের স্রষ্টা 'মহারাজা' সত্যজিৎ রায়কে! ২০০৫ সাল। আমি জীবনে প্রথম ফেলুদা পড়ি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরী থেকে এনেছিলাম বই, "ডাবল ফেলুদা"! প্রথম গল্প, "অপ্সরা থিয়েটারের মামলা"। ওটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম পড়া গোয়েন্দা গল্প! এর পর আরো পড়েছি। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আব্বা এনে দিয়েছিলেন বইমেলা থেকে ফেলুদা সমগ্র! ৬ মাসে শেষ করেছিলাম দুই খন্ডের ফেলুদা সমগ্র! কিন্তু না। আজ আমি গোটা সমগ্র নিয়ে কোন কথা বলবো না। কথা বলবো এই সমগ্রের একটি মাত্র গল্প নিয়ে। নাম 'নয়ন রহস্য'! তবে রিভিউ লেখার আগে, এত দিন পরে কেন এই গল্পটিকে নিয়ে রিভিউ লিখছি সেটা বলে নিই। কারণটা কিছুই না, রিভিশন। কিছুদিন আগে ঘোষনা হয়েছে আমাদের দেশের বিখ্যাত চিত্রপরিচালক তৌকির আহমেদ এই গল্প অবলম্বনে ওয়েব সিরিজ বানিয়েছেন। সেটা দেখার আগে গল্পটা একবার রিভিশন দিয়ে নিতে চাচ্ছিলাম আর কি! যা হোক, এবার মূল গল্পে আসি। বেশ কিছুদিন যাবত ফেলুদার মন ভালো নেই। তাকে নিয়ে তোপসের লেখা গল্পগুলো কেমন যেন আগের মত পাঠকের ভালো লাগছে না। সবাই বলছে, ফেলুদা নাকি মিইয়ে গেছেন! আগের মত এক্টিভ নন! ফেলুদা যদিও এটার সাথে একমত নন। তার পসার ঠিকই আছে। রেগুলার কেস পান তিনি। কিন্তু তোপসের গল্পের মূল পাঠক কিশোর-কিশোরী! সব ধরণের কেস তাদের সামনে তুলে ধরা যায় না! ঠিক সেই মুহুর্তে ফেলুদা পান একটা নতুন কেস। আর তোপসে পায় নতুন গল্প! সুনীল তরফদার। একজন ম্যাজেশিয়ান। গল্পের প্রথমেই দেখা যায়, তিনি এসেছেন প্রখ্যাত গোয়েন্দা ফেলু মিত্তির এর কাছে তার ম্যাজিক শো এর ইনভিটেশন নিয়ে। গ্রহণ করা হয় নিমন্ত্রণ। যথাসময়ে থ্রি মাস্কেটিয়ার্স পৌছে যান সেই শো-দেখতে! ম্যাজিক শো যেমন হয় আর কি! বিভিন্ন হাত সাফের ট্রিকসের মাধ্যমে দর্শকের ভেলকি দেখালেন ম্যাজেশিয়ান তরফদার! তারপর সবশেষে উপস্থিত করলেন এক ছোট্ট বালককে। বালকের নাম নয়ন ওরফে জ্যোতিষ্ক! আশ্বর্য ক্ষমতা সেই বালকের। এমন কোন প্রশ্ন যার উত্তর সংখ্যায় হবে, বালকটি তা ফটাফট বলে দিতে পারে! না জেনেই দিতে পারে! ম্যাজিক শো এর দর্শকসহ ফেলুদা, তোপসে, জটায়ু... সবাই তাজ্জব বনে গেল এই ছেলের ক্ষমতা দেখে! সাংবাদিকরা পিছু নিল। জন্মে গেল শত্রুও। সবাই চায় ছেলেটিকে। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য ব্যবহার করবে তাকে। রক্ষা করতে এগিয়ে এলেন ফেলুদা। কিন্তু তারপর? রক্ষা হলো কি? নাকি কেউ....? থাক! আর বলবো না! বাকিটা পড়লেই বুঝবেন! নয়ন রহস্য ফেলুদা সিরিজের একটি ভিন্নধর্মী গল্প। একটা সিরিজ লেখার সময় সব গল্প ভালো হয় না এটা আমরা সবাই জানি। ফেলুদা সিরিজেও তাই হয়েছিল। টিনটোরেটোর যীশু'র পরে আস্তে আস্তে গল্পের কোয়ালিটির গ্রাফটা নামতে শুরু করে। লেখক সত্যজিৎ রায় ব্যাপারটি অনুধাবন করতে পারেন। আর তাই নিভে যাওয়ার আগে আরো একবার জ্বলে ওঠে ফেলুদা! সেজন্য একদিক থেকে বলতে গেলে এটি ফেলুদার কামব্যাক স্টোরি! ৫৮ পৃষ্ঠার এই গল্পটিকে মোটামুটি ছোটখাটো নভেলাই বলা যেতে পারে! তাছাড়া অন্য সব গল্প থেকে এই গল্পের কন্সেপ্ট একেবারেই আলাদা। ফেলুদার বুদ্ধি, এডভেঞ্চার, টানটান উত্তেজনার পুরোটাই এই গল্পে বেশ ভালোভাবে আছে! কোথাও কোন খুত পেলাম না। শুধু দুঃখ একটাই, এই গল্প ফেলুদা সিরিজের সেকেন্ড লাস্ট গল্প। এর পরে আর একটা গল্প লিখে সত্যজিৎ রায় মারা যান! আমি গল্পটি সমগ্র থেকে সরাসরি পড়েছি। যদিও এই নামে সিংগেল বই আছে। পাঠক চাইলে সেটা সংগ্রহ করতে পারেন। বাংলাদেশের 'নওরোজ কিতাবিস্তান' বইটি বের করেছে। এছাড়া সমগ্র চাইলেও কিনতে পারেন। অরিজিনাল দুই খন্ড ফেলুদা সমগ্রের দাম ২২৮০ টাকা। নীলক্ষেতের পাইরেটেড কপির দাম দুটো মিলিয়ে ৪০০ টাকা সর্বোচ্চ! ধন্যবাদ! হ্যাপি রিডিং! গল্পের নামঃ নয়ন রহস্য সিরিজের নামঃ ফেলুদা সিরিজ বইয়ের নামঃ নয়ন রহস্য বইয়ের ধরণঃ গোয়েন্দা কাহিনী লেখকঃ সত্যজিৎ রায় পৃষ্টাঃ ৮৮ প্রকাশকঃ নওরোজ কিতাবিস্তান (বাংলাদেশ) মূল্যঃ ১৩০ টাকা
Was this review helpful to you?
or
'নয়ন রহস্য' ফেলুদা সিরিজের একেবারে শেষদিকের উপন্যাস। এই সিরিজে এর পর আর একটাই উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিল - 'রবার্টসনের রুবি'। তাই সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনার্থে, 'নয়ন রহস্য' উপন্যাসের একটা আলাদা গুরুত্ব যে রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। এই উপন্যাসের আরও একটা বিশেষ দিক বিদ্যমান। এই উপন্যাসের শুরুতেই লেখক বর্ণনা করেছেন যে সাম্প্রতিক সময়ে ফেলুদা সিরিজের গল্প/উপন্যাস সমূহের ব্যাপারে তিনি কি ধরণের নেতিবাচক ওপিনিয়ন পাচ্ছিলেন পাঠকদের কাছ থেকে। এই ব্যাপারটা কিন্তু খুব একটা অবিশ্বাস্য নয়। কারণ ফেলুদা সিরিজের প্রথম দিককার গল্প উপন্যাসগুলোতে যেই ধরণের 'থ্রিল' ছিল, শেষ দিকে এসে কোলকাতার পটভূমিতে রচিত কাহিনীতে তা বেশ কিছুদিন যাবতই মিসিং ছিল। যাইহোক, এবার আসা যাক এই উপন্যাসের কাহিনীর ব্যাপারে। এই উপন্যাসের শুরুতেই দেখা যাবে, ফেলুদারা গিয়েছে সুনীল তরফদার নামক এক তরুণ জাদুকরের শো'তে। সেই জাদুকর তার সম্মোহনী শক্তি দিয়ে সবাইকে অবাক করে দিল। কিন্তু এর চেয়েও একটা বড় চমক অপেক্ষা করছিল। দর্শকের সামনে সে হাজির করল জ্যোতিষ্ক নামক এক অসাধারণ ছেলেকে যাকে সংখ্যার সাথে সংস্লিষ্ট যেকোন প্রশ্ন করা হলেই সে তার উত্তর দিয়ে দিতে পারে যা দেখে ফেলুদা পর্যন্ত থ বনে গেল। ফেলুদা সুনীল তরফদারকে কথা দিল যে জ্যোতিষ্কের ব্যাপারে কোন সময়া হলে তাকে যেন জানানো হয়। এছাড়াও সে সুনীলের কাছ থেকে জেনে নিল জ্যোতিষ্কের আসল নাম-পরিচয়। জানা গেল, ছেলেটির আসল নাম নয়, বাড়ি কালীঘাট। পরদিনই ফোন এল সুনীলের কাছ থেকে। নয়নের ব্যাপারে আগ্রহী চারজন লোকের সাথে এপয়েন্টমেন্ট হয়েছে তার। সে চায় যাতে ফেলুদা, তোপসে আর জটায়ুও সেখানে উপস্থিত থাকে। ফেলুদারা গেল সেখানে। চারজন চার রকম স্বভাবের মানুষ এল নয়নের সাথে দেখা করতে, তাদের প্রত্যেকেই নিয়ে এসেছে ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব। কিন্তু একদিক থেকে তাদের মধ্যে মিল আছে। তারা চারজনই খুব লোভী। সুনীল তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। ফলে তারা চারজনই শাসিয়ে গেল সুনীলকে, হুমকি দিল নয়নের ক্ষতি করারও। এই দেখে সুনীল ফেলুদাকে অনুরোধ করল তাদের সাথে মাদ্রাজ যেতে কারণ নয়নকে নিয়ে সে মাদ্রাজে যাচ্ছে শো করতে। ফেলুদা এরই মধ্যে আরও একটা কেস হাতে পেল। হিঙ্গোয়ানি নাম করে এক লোক দাবি করছে তার পার্টনার তাকে মিছিমিছি ফাসানোর চেষ্টা করছে এবং তার প্রাণের ভয়ও আছে। এই লোকও যাবে মাদ্রাজে। তাই ফেলুদা তার নিরাপত্তার দায়িত্বও নিল। মাদ্রাজে গিয়েই বোঝা গেল, কোলকাতায় থাকতে যারা নয়নের পিছে লেগেছিল, তারা মাদ্রাজ পর্যন্তও হানা দিয়েছে। এদের থেকে নয়নকে বাঁচাতে সচেষ্ট হল ফেলুদা। অন্যদিকে জানা গেল, হিঙ্গোয়ানি নামে যে লোকের কেস হাতে নিয়েছে ফেলুদা, সে আসলে সুনীলেরই স্পন্সর। যাইহোক, রহস্য ঘনীভূত হল যখন নয়ন উধাও হল আর হোটেলে নিজের রুম থেকে খুন হল হিঙ্গোয়ানি। এই দ্বৈত রহস্যে প্রথমে ফেলুদাও চমকে গিয়েছিল। কিন্তু সে তার মগজ খাটিয়ে বের করল, অপরাধী আসলে এমন একজন ব্যক্তি যে শুরু থেকেই তার চোখে ধুলো দিয়ে যাচ্ছিল এবং যাকে অপরাধী বলে মনেই হয় না। কিন্তু শেষমেষ ধরা পড়ল সে। কিন্তু কে সেই অপরাধী? কিভাবে ফেলুদার কাছে ধরা পড়ল সে? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে 'নয়ন রহস্য'তে। এই উপন্যাসের কনসেপ্টটাই একদম আলাদা। পাশাপাশি ক্ষণে ক্ষণে যেভাবে নতুন নতুন স্বাদের মসলা সংযোজন করেছেন লেখক কাহিনীতে, তার জোরে উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে এমনই অসাধারণ যা পড়ে আর কোন পাঠকেরই মনে অভিযোগ থাকার সুযোগ নেই।