User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
এ যুগে রাজতন্ত্রের প্রতিভূ বা রাজা বাদশাদের জীবন নিয়ে মানুষের কৌতুহল বৃটেনের দুই রাজপুত্র ছাড়িয়ে খুব বেশি দূর না গেলেও একসময় পৃথিবী জুড়ে রাজ-রাজড়াদের ব্যাপার স্যাপারই ছিল আলাদা। এবং তাদেরকে নিয়ে মানুষের কৌতুহলও। তাঁরা কী করলেন-না করলেন, কী ভাবলেন-না ভাবলেন তা নিয়ে মানুষের আগ্রহের সীমা ছিল না। তাঁদের জীবনাচরণ নিয়ে যা-কিছু শোনা যায় সবই মানুষের মুখে। তাঁরা নিজেরা নিজেদের সম্পর্কে খুব বেশি কিছু লিখেছেন বলে জানা নেই, বা লিখলেও আমার পড়া নেই। এ-রকমই একটি বই পড়ার সৌভাগ্য ঘটলো আজ, রীতিমত অন্দরমহলের কাহিনী জানা হলো, বইটির নাম- ‘যখন আমি রাণী ছিলাম’। লিখেছেন ইরানের প্রাক্তন শাহানশাহ রেজা পাহলবীর (১৯১৯-৮০) দ্বিতীয় স্ত্রী সুরাইয়া (১৯৩২-২০০১)। শাহ রেজা ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে ইরানের সিংহাসনে আসীন ছিলেন। দ্বিতীয় স্ত্রী সুরাইয়ার সাথে তাঁর দাম্পত্য জীবন ছিল সাত বছরের। এই বইটি অবশ্য সুরাইয়ার পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনী নয়, তাঁর রানী জীবনের অংশ নিয়েই বইটি লেখা হয়েছে। রেজা শাহ পাহলবী সম্পর্কে অনেক কিছু জানা হয়েছিল ওরিয়ানা ফালাচির বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইন্টারভিউ উইথ হিস্টরীতে।’ সত্তরের দশকে বরেণ্য ও বিতর্কিত রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়কদের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে ফালাচি অন্য সকলের মতো শাহ রেজা পাহলবীকেও প্রশ্নবানে জর্জরিত করেছিলেন। যদিও সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ, তবে আমার এ-লেখার কোনো অংশে সুরাইয়া সম্পর্কিত আলোচনায় এই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ আসবে। বংশসূত্রে সুরাইয়ার পিতা ছিলেন ইরানী, আর মা জার্মান। দৈবক্রমেই দুজনার বিয়ে হয় (ফেব্রুয়ারী ১২, ১৯৫১)। বিবাহিত জীবনে সুরাইয়া এবং শাহানশাহ অত্যন্ত সুখী ছিলেন। সুরাইয়া সুইজারল্যান্ডে লেখাপড়া করা আধুনিক মানসিকতার আধুনিক তরুনী, অন্যদিকে শাহানশাহও পাশ্চত্যের শিক্ষায় শিক্ষিত একজন। এটি ছিল শাহর দ্বিতীয় বিয়ে। তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন মিশরের রাজার বোন ফওজিয়া; বনিবনায় সমস্যা হবার কারণে তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। যাহোক, সুরাইয়ার অপরূপ মুখশ্রী আর সৌন্দর্য রেজা শাহর পরিবারকে সুরাইয়াকে পাত্রী হিসেবে পছন্দ করতে সাহায্য করেছিল। সুরাইয়ার বিয়ের পোশাক প্রস্তুত করা হয় প্যারিসের ক্রিশ্চিয়ান ডায়ার থেকে। পোশাকটির ওজন ছিল ২০ কেজির মতো। বিয়ের ক'দিন আগে হঠাৎ করে জ্বরে আক্রান্ত হবার কারণে সুরাইয়া কিছুটা দূর্বল ছিলেন, তাই তাঁর বিবাহ অনুষ্ঠান ছিল সংক্ষেপিত। বিয়েতে সুরাইয়া স্বর্ণ ও হীরার নেকলেস পরেছিলেন। সেই গহনাগুলো ছিল রাজকোষের জিনিস, ধারের জিনিস বলে ওগুলো বিয়ের পরই রাজকোষে ফিরিয়ে দেয়া হয়। বিয়ে হলো। রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করলেন সুরাইয়া। রানী হবার পর কেমন জীবন পেলেন তিনি? অথবা বলা ভালো, রাণীদের জীবন আসলে কেমন? এটি সম্ভবত প্রতিষ্ঠিত এবং প্রমানিত যে, পৃথিবীর সমস্ত নারীর জীবন তার চারপাশের মানুষ আর ঘটনা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সুরাইয়া রাণীর জীবন পেলো, দেশশাসন সহ শাহ রেজা পাহলবীর সমস্ত কাজের শীর্ষবিন্দুরূপে চিত্রিত হল। রাষ্ট্রীয় সফরে স্বামীর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, গ্রেটবৃটেন সহ নানা দেশে ঘোরার অভিজ্ঞতা হলো, পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রনায়কদের সাথে ভোজনে অংশ নেবার, আতিথ্য গ্রহন করার সৌভাগ্য হলো কিন্তু সেই যে... নারীর চিরায়ত সমস্যা, সেসব থেকে সুরাইয়ার জীবন ব্যতিক্রম হলো না। ননদদের সাথে সন্দেহ আর অসম্প্রীতির কারণে বিষণ্ন থাকতেন সুরাইয়া। তেল সমৃদ্ধ ইরানের আর কোনো সম্পদ ছিল না, দেশটির অর্থনৈতিক সমস্যা তাঁকে পীড়িত করতো। সিংহাসনের জটিলতা তাঁকে আতঙ্কিত করে রাখতো। তবে স্বামীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটি ছিল মধুর। তাঁরা সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের সাথে তাস খেলতেন। নিজেরা স্বরচিত ভাষায় গল্প করতেন। এ-ভাষাটি ছিল অনেকটা সাঙ্কেতিক ভাষার মতো। বাইরের মানুষদের নিজেদের কথাবার্তা বুঝতে না দেবার জন্য তারা এভাবে কথা বলতেন। প্রথম প্রথম এসব কথার মানে বুঝতে পারতেন না বলে সুরাইয়া অস্বস্তিবোধ করতেন কিন্তু পরে তিনি ভাষাটি শিখে নেন। তাঁরা গ্রীস্মকালে দেশের অন্যপ্রান্তে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জায়গায় চলে যেতেন। স্বামীর ছিল বিমান চালানোর নেশা, খেলার নেশা। তিনি সবসময় স্বামীর পাশে থাকতেন। কিন্তু সুখ বুঝি ক্ষণস্থায়ী ! একদিন মধুর দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে কালিগোলা অন্ধকার। শাহ রেজা পাহলবীর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী রূপে কোনও শিশুকে গর্ভধারন করতে পারেন নি বলে সুরাইয়াকে প্রিয়তম স্বামীর বিবাহবিচ্ছেদ মেনে নেবার যন্ত্রণা সইতে হয়। সাত বছরের দাম্পত্য জীবনে একজন উত্তরাধিকারী উপহার দিতে পারেন নি এই অপরাধে মজলিশে শুরার সিদ্ধান্তে সুরাইয়াকে বিবাহ বিচ্ছেদ মেনে নিতে হয়। শাহ রেজা অবশ্য সুরাইয়াকে বিচ্ছেদ না করে আরেকজন স্ত্রী গ্রহন করার সিদ্ধান্তের দিকে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুরাইয়া কারো সাথে সংসারের ভাগ বসাতে রাজি ছিলেন না বলে বিচ্ছেদের রাস্তা বেছে নিলেন। বিবাহ বার্ষিকীর দিন, বিবাহের ঠিক সাত বছর পর সুরাইয়া প্রিয় মুখটি, প্রিয় দেশটি ছেড়ে চিরতরে বিদেশে পাড়ী জমান। বলেছিলাম ওরিয়ানা ফালাচির সঙ্গে রেজা শাহ পাহলবীর সাক্ষাৎকারের কথা। এটি নেয়া হয় ১৯৭৩ সালে। সেই সাক্ষাৎকারে ওরিয়ানা ফালাচি তাঁকে সুরাইয়া সংক্রান্ত যে প্রশ্নটি সরাসরি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, সেটি হলঃ প্রিন্সেস সুরাইয়ার কথা বলুন। আপনি তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেছিলেন, তাকে অস্বীকার করতে কি আপনার আঘাত লাগেনি? রেজা শাহ পাহলবীর উত্তরঃ কিছু সময়ের জন্য আঘাতটা ছিল। আমি বলতে পারি একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ ছিল। কারণ যুক্তি দুঃখের উপর জয়ী হলো অচিরেই। নিজেকে প্রশ্ন করলাম, দেশের জন্য আমার কী করা উচিত? উত্তর ছিল, আর একজন স্ত্রীর সাথে নিজের ভাগ্য জড়িয়ে নাও, যার কাছে সিংহাসনের জন্য একজন উত্তরাধিকারী চাইতে পারো। অন্য কথায় বলা যায়, আমার চিন্তা কখনো ব্যক্তিগত বিষয়ে কেন্দ্রীভূত হয়নি, হয়েছে রাজ কর্তব্য পালনে। আমার গোটা জীবনের প্রশিক্ষণ হচ্ছে নিজের বিষয়ে ভাবার বদলে আমার দেশ ও সিংহাসনের জন্য চিন্তা করা। এখন ডিভোর্স বা সেই ধরনের বিষয়ে আর কথা নয়। আমি এসবের অনেক অনেক উর্ধ্বে। হ্যাঁ, তিনি শাহ রেজা পাহলবীর জীবন তখন হয়তো এসবের উর্ধ্বেই চলে গিয়েছিল, কিন্তু প্রেমময়ী সুরাইয়ার যায়নি। আত্মজীবনীতে সুরাইয়া লিখেন, স্বামীর বিচ্ছেদের কথা মনে করে আমি একা একা ডুকরে কেঁদে চলি... ফালাচি যে রাজাকে, রেজা শাহ পাহলবীকে, তাঁর সাক্ষাৎকারের বইতে লেখক পল আর্ডম্যান কর্তৃক চিত্রিত 'রাজনৈতিক ফ্যান্টাসীতে উন্মত্ত পাগল' বলে উল্লেখ করেন, তাঁকেই 'যখন আমি রাণী ছিলাম' বই-এর কোথাও নেতিবাচক কোনও অভিধায় কলঙ্কিত করেননি সুরাইয়া।