User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ভালো।
Was this review helpful to you?
or
ওঙ্কার!!!
Was this review helpful to you?
or
ভালো ছিল
Was this review helpful to you?
or
ভালই চলে
Was this review helpful to you?
or
এক কথায় দারুন বই।
Was this review helpful to you?
or
বই রিভিউ: ওঙ্কার(১৯৭৪) অাহমদ ছফা এই বইয়ের রিভিউ কিছুতেই শুরু থেকে শুরু করা যাবেনা৷ যেভাবে বইটা শেষ হয়েছে তাতে কিছুতেই শুরুর কথা বলা যায়না৷ এত সুন্দর শেষ অামি বহুদিন পড়িনি বলেই হয় তো অজান্তেই গা কাঁটা দিয়েছে৷ ".....কোন রক্ত বেশি লাল৷ শহীদ অাসাদের —না অামার বোবা বউয়ের?" কত চমৎকার উপমা৷ উপন্যাসটি মূলত শুরু হয় নায়কের বাবা-মা মারা যাবার পর৷ নায়ক যখন অাবু নসর মোক্তারের বোবা কন্যাটিকে বিবাহ করেন৷ নির্জঞ্ঝাট মানুষ তিনি৷ বাড়তি কোনো ফুটফরমাশ বা বদ অভ্যেস একেবারেই নেই৷ এমন একটা মানুষের মনেও কীভাবে অশান্তির অাগুন জ্বলে ওঠে সেটি যেমন দেখানো হয়েছে অাবার সেই একই মানুষ যখন তার মনুষত্ব দিয়ে অবস্থাটি বিবেচনা করে তখন পরিস্থিতি কতটা সুন্দর হয়ে উঠতে পারে সেটিও দেখানো হয়েছে৷ লেখক যে সময়টির কথা উল্লেখ করেছেন সেটি ছিলো আয়ুব খানের শাসন- অামল৷ দেশে তখন প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছে৷ লেখক অাসলে পশ্চিমা অত্যাচারে অতিষ্ট স্তব্ধ বাংলাদেশকে একজম মুখপাত্র বা প্রতিবাদী সত্তা দিতে চাইছেন৷ তারই প্রকাশ হিসেবে নায়ক ভাবছে: স্পষ্টত লক্ষ করলাম গোঁ গোঁ আওয়াজের ধাঁচটা খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে৷ গোল গোল ধ্বনিগুলো এঁকেবেঁকে তীর্যক আকার নিচ্ছে৷ উচ্চারণ প্রক্রিয়ার মধ্যে মাত্রার পর মাত্রা সংযোজিত হচ্ছে৷ আওয়াজটা গোঁ গোঁ এর স্থলে বা....বার মতো শোনাচ্ছে৷ ........, আচানক বোবা বউ জানালা সমান লাফিয়ে "বাঙলা" অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে উচ্চারণ করলো৷
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
Best book Written By Mr.Sofa
Was this review helpful to you?
or
" ওঙ্কার - আহমদ ছফা " সময়কে ছাপিয়ে উপন্যাসের গতানুগতিক ধারাকে ভেঙে ইতিহাসের পাতায় নাম করে নিয়েছে আহমদ ছফার "ওঙ্কার"। উপন্যাসের ধারা কোন নিদিষ্ট গণ্ডির মধ্য সীমাবদ্ধ নয়। কোন ধরনের সঙ্গা কিংবা ব্যাখ্যায় আবদ্ধ করা যায় না সাহিত্য ধারাকে। ঠিক তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ "ওঙ্কার"। সময়ের প্রয়োজনে নিদিষ্ট ধারাকে ভেঙে জন্ম নেবে নতুন ধারার সাহিত্য। আলোচনা সমালোচনাকে ছাপিয়ে যায়গা করে নেবে ইতিহাসের পাতায়। মাত্র কয়েক পাতার এই বইখানা নিয়ে যে সাহিত্য সমালোচনা তার সংকলন করলে বড় সড় কয়েকখানা উঁচু দরের বই হয়ে যাবে। সব কিছুকে ছাঁপিয়ে ইতিহাসের বুকে মাথা উঁচু করে জ্বলজ্বল করছে বইখানি। "ওঙ্কার" আসলে কোন ধারার সাহিত্য? গল্প, উপন্যাস নাকি ছোটগল্প? বইয়ের আকার আকৃতি কিংবা চরিত্র বিশ্লেষণ করলে ইহাকে কখনো কেও উপন্যাস বলে বিবেচিত অবস্যই করবেন না। কিন্তু কাহিনীর গভীরতা এবং তার বিশ্লেষণ ব্যাখ্যা করলে বড় মানের একখানা উপন্যাস থেকে কম কিছু হবে না। ছোটগল্প বললে আসলে সাহিত্যকে কিছুটা অপমান করা হয়। মোদ্দা কথা বইখানা বই থেকেও বেশি কিছু। উত্তম পুরুষের জবানিতে বর্ণিত একটি পরিবারের উত্থান পতনের মধ্য শুরু হলেও গল্প মূলত ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানকে ঘিরে। স্বাধীনচেতা এই বাঙালির অাকাঙ্খা প্রকাশ করতে উপন্যাসের একটি বাক্যই যথেষ্ট। "কোন রক্ত বেশি লাল। শহীদ আসাদের নাকি আমার বোবা বউয়ের?" উপন্যাসটি মোট আটটি অঙ্কে সাজিয়েছেন উপন্যাসিক। উত্তম পুরুষে তার আখ্যান রচনা করেছেন লেখক নিজে। কি আছে বইটিতে? একটা জীবনের গল্প নাকি বেঁচে থাকার অথবা বাঁচতে চাওয়ার আত্ম চিৎকার? নাকি স্বকীয় স্বাধীনতা? ঝটপট পড়ে ফেলুন আর চটপট স্বাদ নিয়ে ফেলুন অন্য এক সাহিত্য ধারার! বইঃ ওঙ্কার লেখকঃ আহমদ ছফা রিভিউঃ সাগর মল্লিক প্রকাশনীঃ স্টুডেন্ট ওয়েজ মূল্যঃ একশত পঞ্চাশ
Was this review helpful to you?
or
If you look at the context, you may have gotten away with it In the story, the protagonist assumes that Boba marries the girl He wants to talk, wants to hear what the dumb wife can't give him He disappeared at one point in time Of course, overcoming loneliness, he learns to love the dumb wife, and in the meantime, all sorts of feelings of happiness and sadness come into play. He took her Do we also sell our mortal selves in the urge of the world and sink into dumb sentiments? At first I may not admit silence Freud's grief does not follow the steps of mourning Keep going, let's learn to address dumb saints! It is not natural to say that - everything else is impossible But the human being cannot be dumb forever A society that forgets to speak openly, to whom it seems natural to be dumb, will also come in the middle of a procession. On that day, a bloody malaise comes out of the throat of a bobber, something very unlikely that happens in absolute normalcy.
Was this review helpful to you?
or
এক কথায় বইটি অসাধারণ । আমার অনেক ভালো লেগেছে ।আপনার এখনো যারা পরেন নাই । বইটি পড়ে দেখেন । আপনার ও ভালো লাগবে ।
Was this review helpful to you?
or
আহমদ ছফার 'ওঙ্কার' সম্বন্ধে পাঠক মহলে খুব বেশি আলোচনা হতে দেখা যায় না, অন্তত আমার চোখে পড়েনি। তবে বইটি প্রশংসা বা তার চেয়েও বেশি কিছুর দাবিদার। উপন্যাস হিসেবে 'ওঙ্কার' অন্যরকম। শুধু লেখনী বা কাহিনীর দিক দিয়ে নয়, বাহ্যিক দিক দিয়েও এ উপন্যাস অন্যরকম। উপন্যাসটির পৃষ্ঠার সংখ্যা আঠাশ। অন্যসব উপন্যাসের তুলনায় যা নগন্য। কিন্তু আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও 'ওঙ্কার'কে গল্প বা উপন্যাসিকা বলা যাবে না। তাকে উপন্যাসই বলতে হবে। আরেকটি অদ্ভুত বিষয় হল এ উপন্যাসের নায়ক-নায়িকার কোন নাম উল্লেখ করা হয়নি। এ উপন্যাসে চরিত্রগুলোর মধ্যে কোনো সংলাপও নেই। আমার মতে, লেখনীর দিক দিয়ে 'ওঙ্কার' বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা একটি উপন্যাস। আঠাশ পৃষ্ঠার উপন্যাসে শৈল্পিকতা যে এত পরিমাণে থাকতে পারে তা আমার জানা ছিল না। আহমদ ছফার লেখনীতে আমি অভিভূত। স্বাধীনতার আগে সংগ্রামের সময়ের একটি ছেলের পারিবারিক জীবন, তৎকালীণ রাজনৈতিক অবস্থা, গণজাগরণ ফুঁটে উঠেছে উপন্যাসটিতে। কাহিনী বেশি বলব না, আপনারা পড়ে জানবেন। তবে এক শব্দের একটি মন্তব্য করতে পারি-'অসাধারণ'।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃওঙ্কার লেখকঃআহমদ ছফা প্রকাশনীঃস্টুডেন্ট ওয়েজ মূল্যঃ১৩২টাকা ওঙ্কার উপন্যাসটির পটভূমি হিসেবে আহমদ ছফা বেছে নিয়েছেন ১৯৬৯ এর গনঅভ্যূত্থান এর পূর্ব্বর্তী এবং মধ্যবর্তি সময় টা। আইয়ুব খান এর শাসন কালে এই দেশ এর রাজনৈতিক অবস্থার যেমন সময় এর সাথে পরিবর্তন হচ্ছিল তেমনি পরিবর্তন আসছিল একটা খুব সাধারন সনাতন বাঙ্গালির জীবনেও। এই উপন্যাস এ তার চোখ দিয়েই আমরা দেখতে পাই তার বাবার উত্থান এবং পতন, তার বড় হয়ে ওঠা, বিয়ে করা, শশুরের অনুগ্রহে বেচে থাকা যেখানে সাচ্ছল্য হয়তো ছিল কিন্তু সস্তি ছিল না। পড়তে পড়তে এই কেন্দ্রিয় চরিত্র যার কোন নাম লেখক দেন নি, তার সাথে নিজের একটা মিল খুজে পাই। মনে হয়, আমিও তো এমন কাপুরুষ ই। ঝামেলা দেখলে মনে মনে দৌড়ে পালাই। একটা সফল উপন্যাস এর এইটাও একটা বৈশিষ্ট্য বলে মনে করি। নিজের সাথে একটা চরিত্র এর মিল খুজে পাওয়া। আর সেটা যদি হয় কেন্দ্রীয় চরিত্র, তাহলে সেই উপন্যাস হয় কালজয়ী।আহমেদ ছফার উপন্যাস এ সবচেয়ে যে জিনিষ টা ভাল লাগে তা হলো সংলাপ এর প্রতি জোর না দিয়ে শুধু শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে যা ঘটছে তার সাথে পাঠক কে একাত্ব করে ফেলার ক্ষমতা। এই উপন্যাস এর অনেক জায়গা আছে যেখানে রসিকতা আছে কিন্তু সেটা সংলাপের বাহুল্যে জর্জরিত নয়। এই যুগের সাহিত্য হলে যা প্রায় অসম্ভব ছিল। পুরো উপন্যাস এর কোথাও নায়ক এবং নায়িকার কোন নাম নেই। তবু তাদের মধ্যে যে কেমিস্ট্রি তা অনুভব করতে এক্টুও কষ্ট হয়নি।অনেক ছোট কলেবর এর একটা উপন্যাস। মাত্র ৫৯ পৃষ্ঠা। যারা আহমেদ ছফা পড়া শুরু করবেন ভাবছেন তাদের জন্য খুবি ভাল একটা স্টারটিং পয়েন্ট হতে পারে এই উপন্যাস।আমরা খুব ভালো লেগেছে তার এ উপন্যাসটি।
Was this review helpful to you?
or
আদমদ ছফার “ওঙ্কার” ৬৯ এ আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস। স্বাধীনতার দাবি যখন আঘাত করেছিল পূর্ব বাঙলার আনাচে কানাচে, ঠিক তখন সে ধাক্কা লাগে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। বাঙ্গালি একটু স্বাধীন জমির জন্য কীভাবে বুঁদ হয়ে গিয়েছিল, মিছিলে মিছিলে কীভাবে বাংলার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল তারই দলিল ওঙ্কার। আহমদ ছফা এই বইতে কেন্দ্রীয় চরিত্রের কোনো নাম দেননি। উপন্যাসে দেখা যায় নিরুপায় হয়ে কথক এক বোবা মেয়েকে বিয়ে করেন। বোবা বউকে নিয়ে গল্পকথক তেমন সুখ অনুভব করত না। যতদিন যেতে থাকে, ততই তাকে ঘিরে ধরে অদ্ভুত এক ক্ষুধা। অন্যদিকে দেশজুড়ে স্বাধীনতার আন্দোলন তীব্র হয়। শেখ মুজিব গ্রেফতার হয় আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলায়। গল্পকথকের শশুড় ছিল পাকিস্তান সরকারের আমলা। গল্পকথকের এসব নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নাই। শ্বশুর যা দিয়েছেন তা দিয়েই তিনি খুশি। বিপ্লব, মিছিল, শ্লোগান এসব তাঁকে কাঁপায় না তেমন করে। সে বলে, “আগেইতো বলেছি, ইচ্ছেশক্তি বলতে কোনোকিছুই নেই। তাই বলে আমি যে কিছু চাইনে একথা সত্যি নয়। নানা জায়গায় আমার যেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু চরন সামনে চলতে রাজি হয় না… এমন নিষ্ক্রিয় পুরুষ আমি।” একপর্যায়ে মিছিলের উত্তাল আঘাত করে তার বউকে। সারাজীবন যে বউ তাকে দিয়ে গিয়েছে শুধুই না পাওয়ার যন্ত্রনা, তার মাঝেই সে নতুন করে খুঁজে পেতে থাকে অন্য এক মানবিকে!
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ূন আহমেদ, আনিস সাবেত আর আহমদ ছফা মিলে একবার গেছেন আনিস সাবেতের গ্রামের বাড়িতে। সেখানে কি একটা বিষয় নিয়ে আনিস সাবেত আর আহমদ ছফার মধ্যে তুমুল কথা কাটাকাটি। ছফা বলছেন, আনিস সাহেব, আপনি আপনার মত উইথড্র করুন। আনিস সাবেত বললেন, আমি মরে গেলেও আমার কথা উইথড্র করব না। ছফা বললেন, তবে আমি চললাম। বলে হনহন করে হাঁটা শুরু করলেন। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, আনিস ভাই, ছফা ভাইকে আটকান। উনি চলে যাচ্ছেন যে! আনিস সাবেত আয়েশি ভঙ্গিতে বললেন, ছাড়ো তো। এই রাত বিরাতে উনি যাবেন কোথায়? গাড়ি-ঘোড়া কিছুই তো পাবেন না যে ঢাকা চলে যাবেন। একটু পরে এমনিই ফিরে আসবেন। ছফা কিন্তু ফিরে আসেননি। সারারাত হেঁটেই তিনি ঢাকা চলে গেলেন। পরে যখন আনিস সাবেত এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তখন ছফা সাহেব বলেছিলেন, সারা রাত হেঁটে ভালই হয়েছে। মাথায় নতুন একটা উপন্যাস এসেছে। প্রাজ্ঞজন আবুল ফজল উপন্যাসটার সম্বন্ধে লিখেছেন,এ গ্রন্থটি পাঠ করলে যেকোন সুহৃদয় পাঠকই মোহিত হবেন।স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রচণ্ড আবেগ এবং অনুভূতি নিয়ে এর চাইতে উৎকৃষ্ট কিছু কোথাও লিখিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। ডক্টর সলিমুল্লাহ খান যেটিকে চিহ্নিত করেছেন আহমদ ছফার "আহমদ ছফা" হয়ে ওঠার জীয়নকাঠি হিসেবে। জানেন উপন্যাসটার নাম? ওঙ্কার। ওঙ্কার উপন্যাসটির রচনাকাল ১৯৭২।রচনার তিন বছর পর এটি প্রকাশিত হয়। আহমদ ছফা এই উপন্যাসটি উৎসর্গ করেছেন তার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, প্রাজ্ঞ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে। উপন্যাসটি পরাধীন বাংলাদেশের পটভূমিকায় উনসত্তেরর গণ অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে রচিত।মোট আটটি ভাগে উপন্যাসটিকে ভাগ করা হয়েছে।উপন্যাসের নায়ক, গ্রামের এক ক্ষয়িষ্ণু তালুকদার পরিবারের সন্তান।জমি-জিরাত তার পিতার নেই তেমন, কিন্তু উত্তরাধিকারসূত্রে অহমিকা রয়ে যায়।সাধারণ মানুষ আগের মত তাকে সম্মান দিতে চায় না,বা দেয় না, কিন্তু তিনি তার অতীত অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন না। তার আভিজাত্য, কর্তৃত্ব করার মানসিকতা এগুলো এলাকার মানুষের পীড়ার কারণ হয়। তাদের কাছ থেকে আগের মত মর্যাদা না পাওয়ার শোধ তিনি তুলতে থাকেন উন্মাদের মতো তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার মাধ্যমে,ক্রমাগত তিনি হারতে থাকেন, কিন্তু পিছপা হন না।ছফার ভাষায় বললে, “ পুরনো মডেলের গাড়ি যেমন শহরের নতুন রাস্তায় ঠিকমত চলতে পারে না, ঝঞ্ঝাট লাগায়, দুর্ঘটনা বাঁধায়, ধোঁয়া ছড়ায় তেমনি আমার বাবা আমার কালের পৃথিবীতে বসবাসের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি কেবল দুর্ঘটনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছিলেন।" এইসব মোকদ্দমায় তার একান্ত বিশ্বস্ত লোক ছিলেন আবুনসর মোক্তার।কিন্ত মোক্তারের চোখ আবার তার সম্পত্তির দিকে।একসময়ে মোক্তারের কৌশলের কাছে তিনি পরাজিত হন, ধরাশয়ী হন।জমিজমা মোক্তার সাহেবের হস্তগত হয়। নায়কের পরিবারের এই দুঃসময়ে অকূলের কূল হয়ে আসেন মোক্তার সাহেবই।তিনি প্রস্তাব দেন, তিনি তালুকদারের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন, বাড়ি ভিটে ফিরিয়ে দেবেন, পুরাতন বাড়িটা সংস্কার করে দেবেন। শহরে থাকার ব্যবস্থা হিসেবে একটা বাসা করে দেবেন, ছেলের একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। এর বিনিময়ে ছেলেকে তার বোবা মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। নায়কের পরিবার যদিও প্রথমে এই প্রস্তাব মেনে নিতে চায় না তবু নায়ক বাধ্য হয়ে বিয়ে করে আবুনসর মোক্তারের বোবা মেয়েকে। নায়ক শ্বশুরের প্রভাব-প্রতিপত্তির জোরে তার মেয়েকে বিয়ে করে শহরে ওঠে, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক স্থানে চলে যায়।তাদের সাথে শহরে থাকে নায়কের বোন। একসময় নায়ক তার বোনকে গান শেখানোর ব্যবস্থা করে। কিছুদিনের মধ্যেই তার ভালো উন্নতি হয়। এতে মন ভালো হয়ে যায় নায়কের।সে আরো বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করে তার বোবা স্ত্রীর গানের প্রতি, গানের যন্ত্রটির প্রতি প্রবল আগ্রহ। ননদটি যখন গলায় সুর তোলে সাথে সাথে সেও চেষ্টা করে সুর তুলতে। তার গলা থেকে বের হয় অন্যরকম আওয়াজ। তবু সে লুকিয়ে লুকিয়ে চেষ্টা করে সুরদেবতাকে ধরতে, ধ্যান করে তার। স্ত্রীর এই চেষ্টা নায়কের ভালো লাগে। তার প্রতি ভালোবাসা খুঁজে পায় সে, যা পায় নি বিয়ের পর থেকে একদিনের জন্যও।এরপর থেকে, দিনরাত কখোনো সে চোখের আড়াল করে না স্ত্রীকে। কাছে কাছে থেকে ভাগ করে নেয় যত "বকেয়া" ভালোবাসা। এদিকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত পটপরিবর্তন ঘটতে থাকে। গণ আন্দোলনের জোয়ারে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসন কেঁপে ওঠে।আমাদের নায়ক মিছিল, শ্লোগান- বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করতো। মাঝে মাঝে বিরক্তিবোধও করত। কিন্তু মিছিলের ব্যাপারে প্রচণ্ড আগ্রহ তার বোবা স্ত্রীর। মিছিল দেখলেই, শ্লোগান শুনলেই তার স্ত্রী অন্যরকম হয়ে যায়। “শ্লোগানের আওয়াজ শুনলে আমার বউটি বিক্ষুব্ধা বাংলাদেশ হয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হতে চায়। আর আমার বোবা স্ত্রী কথা বলতে চায়। উভয়ই তর সইতে চায় না। উভয়েরই দাবীই একরোখা।” আসাদের মৃত্যুতে চারিদিকে তুলকালাম বেঁধে যায়। চারিদিকে ঘেরাও, জ্বালাও-পোড়াও, অভিযান। একদিন মানুষের মিছিলটাকে খুব ভালোভাবে দেখে নায়ক। মিছিলের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে দেয় তাকে। “সেদিন তাকিয়ে দেখলাম মিছিলেরও দেখবার মতো একটি নয়ন ভুলানো সৌন্দর্য আছে। আছে তাতে গতির দোলা, ছন্দের দ্যোতনা। প্রতিটি মানুষ সমগ্র মিছিলের সঙ্গে সন্নিবিষ্ট হলেও তারা সকলে আলাদা আলাদা মানুষ। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সচেতন সবাক চলিষ্ণু ঝরনা একটি আরেকটির সাথে মিশে রচনা করেছে এই গতিমান স্রোতধারা। লক্ষ প্রাণ ঐক্যের মন্ত্রে একসঙ্গে বাঁধা পড়েছে। এমন লক্ষ লক্ষ ঝরনা প্রবল প্রাণতরঙ্গে একসঙ্গে নেচে নেচে উঠছে। মনে হলো মিছিল ভয়ঙ্কর, আবার মিছিল সুন্দর, মিছিলে ধ্বনিত হয় ভাঙনের ধ্বংস নাদ, মিছিলে জাগে নব সৃষ্টির মহীয়ান সঙ্গীত। ভাষণে কোমলে কেমন আপোষ করেছে। দৃষ্টির কুয়াশা ক্রমশঃ কেটে যাচ্ছিলো। সমস্ত বিষয় যথার্থ পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে পাচ্ছিলাম। চোখের উপর থেকে আরেকটা আলগা পর্দা যেন খসে পড়লো। সেদিনের মিছিল দেখে, ঠিক মনে হলো, মিছিলে এলে ভীরুতা, কাপুরুষতা ঠিকই ভুলে থাকা যায়। একেবারে হতোদ্যম ক্ষণজীবী মানূষকেও এই মিছিল সামান্য সময়ের জন্য হলেও মহাজীবনের আস্বাদ পান করাতে পারে।" একদিন এরকম একটি মিছিল তার বাসার দিকে আসছে। শ্লোগানের শব্দ শুনতেই তার বোবা স্ত্রীর অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। সে দেখতে পায় তার স্ত্রী নিজ কণ্ঠ থেকে আওয়াজ বের করতে চাচ্ছে প্রাণপনে।। একসময় নায়কের মনে হয় তার স্ত্রী “বাংলা” শব্দটি উচ্চারণ করল, তখন তার কণ্ঠ থেকে রক্ত ঝরছে। নায়কের মন ফুরে একটাই প্রশ্ন জাগে- কোন রক্ত বেশি লাল? শহীদ আসাদের না তার বোবা বৌয়ের ? "ওঙ্কার" এর কোনো চরিত্রই যেনো শুধু একটি ব্যক্তি নয়, বহু কালের বহু মানুষের ভার বহন করার শক্তি দিয়েই ছফা তাদের সৃষ্টি করেছেন। জনগোষ্ঠীর বহুকালের স্বপ্নকে তিনি সংকল্পে ও অঙ্গীকারে উন্নীত করেন একটি বোবা মেয়েকে দিয়ে, কথা বলার অসম্ভব কাজটি রক্তাক্ত উপায়ে সম্পন্ন করিয়ে,যা মূলত জনশক্তির জাগরণেরই প্রতীক।আমার আরেকজন অতি পছন্দের লেখক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, এই উপন্যাসটি সম্বন্ধে ওনার মন্তব্য দিয়েই আজকের লেখাটা শেষ করবো।তিনি বলছেন, ওঙ্কারে আহমদ ছফা গল্প ফাঁদতে বসেননি, কাহিনীর সূত্র ধরে পাঠককে তিনি টেনে নেন এমন একটি জায়গায়, যেখানে পৌঁছে গল্পটা ভুলে গেলেও কিছু এসে যায় না, কাহিনী গৌণ হয়ে সেখানে প্রবল হয়ে ওঠে অনেক দিনের অনেক মানুষের গ্লানি, জড়তা ও শোষণ এবং গ্লানি থেকে মুক্তির রক্তাক্ত সংকল্প" ।।এরকম উক্তির পর বোধ করি এই ক্ষুদ্রকায় "মহা উপন্যাস"টি নিয়ে বলার কিছু বাদ থাকে না। পাঠককে আশ্বস্ত করতে পারি, সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদ পাবেন এ উপন্যাসটিতে।
Was this review helpful to you?
or
Book for life
Was this review helpful to you?
or
"তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর মনে সেই আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে, সবখানে!" #কাহিনী_সংক্ষেপ গল্পের কথকের বাবার বিত্ত যা ছিল তা তার বাবার করা নয় উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া। তার গরজেই তার মাটিতে পা পড়ে না। কথক তার বাবাকে পবিত্র পশু বলে পরিচয় করিয়ে দেন শুরুতে। "চিড়িয়াখানার খাঁচায় আবদ্ধ সিংহ যেমন সম্পূর্ণঅনাত্মীয় দৃস্টিতে লোহার খাঁচা নিরিখ করে,তেমনি দৃস্টি দিয়ে আমার বাবা আমার কালের পৃথিবীর দিকে তাকাতেন"। এই এক কথাতেই আমরা তার বাবার পরিচয় পাই। যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর কথকের বাবার জমিদারি ওঠে যায়। তার পূর্বে ঠাঁট বজিয়ে রাখার জন্য অযথা মামলা করে নিজের সম্পদের বারো আনা তিনি শেষ করে দেন। কিন্তু এবার নিলামে তার বাকি সহায় সম্পত্তি নিলামে তুলে নেয় আবু নসর মোক্তার। এবং সে ই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। তবে নেহাত অল্প দামে। দামটা হলো স্বয়ং কথক। যাহোক তিনি তার বোবা রাজকন্যাই শুধু গছান নি সাথে অন্ধকার গ্রাম থেকে এনেছেন শহরের আলোয়। চাকরিও দিলেন। কিন্তু ওই যে, বোবাবৌ! সহকর্মী নৃপেনের কাছে নতুন বউ এর নানা লহমায় বলা কখা কথকের মনে স্ফুলিঙ্গ জাগায়। কথক তার বোনের জন্য গানের শিক্ষক রেখে দেন এবং তারপরেই গল্পে আসল স্রোত আসে। সেই অল্প কিছু পরিসরে টেনে নিয়ে আসে তৎকালীন বাংলা আর তার অবস্থা । অবচ্ছন্ন এক চেষ্টা। হিন্দু পুরাণ মতে ওঙ্কার হলো আদি ধ্বনি, সকল ধ্বনির মূল। সেই ওঙ্কার জেগে ওঠে বোবাস্ত্রীর মানসে। শেষ দুটি লাইন যেন এক অপার আবেগ, পদক্ষেপ আর আশার সংকেত। #প্রতিক্রিয়া ওঙ্কার নিয়ে মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ অভিমক, "উপন্যাস আকৃতিতে না হলেও প্রকৃতিতে!" আমিও সেই একই মত পোষণ করি। অল্প আয়তনে এতু সুক্ষ্ম অনুভুতি সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তোলাটাকে উপন্যাস ছাড়া আর কিইবা বলা যায় ? যেখানে লেখক স্বয়ং একে ক্লাসিক উপন্যাস হিসেবে বলেছেন। যেহেতু অল্প পরিসর কাহিনীর বিস্তার বেশি না। কিন্তু এই পরিসরে এতোটা সাবলীল কোনো লেখা খুব কমই আছে। লেখকের অতিবচনপ্রিয়তা আর একটু আটসাট ভাষা শুরুর দিকে পাঠককে কিছুটা দ্বিধান্বিত করতে পারে। কিন্তু গল্পের আসল জায়গাটা ছিল শেষ অর্ধাংশ। আইয়ুব শাসনের সময়কার গণঅভ্যুথান এই গল্পের একটা টার্নিং পয়েন্ট। প্রতীক হিসেবে বোবাবৌ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। দেশটা তখন বোবা ছিল। কিন্তু করেছে কে? আইয়ুব খা! সেই বাকহীনতার বিরুদ্ধের ওঙ্কার লেখক বোবাবৌ প্রতীকে তোলে ধরেছেন। গল্পের পটভুমিতে লেখক সরাসরি বোবাবৌ এর সাথে বাংলাদেশের তুলনা করেছেন, সেটাকেও বিশেষজ্ঞ সাহিত্যিক কটু চোখে দেখেছেন। মজার হলেও সত্য যে লেখার পরিসর নিয়ে কোনো কথা ওঠেনি। সাহিত্য নিয়ে আমার বিরচন খুব বেশি না, বলতে গেলে আমার প্রতিক্রিয়া একদম হঠকারীর মতো। কিন্তু রবীন্দ্র শরতের পরে যদি সাহিত্যের মাণ নিয়ে কথা ওঠে, তবে নির্দ্বিধায় #ওঙ্কার কে একটা উপন্যাসের মাণদন্ড বলে ধরা যায়। #অনুবাদ_প্রসঙ্গে বইটার ইংরেজিতে একটা চমৎকার অনুবাদ করেছেন রওশন জাহান "The Om " নামে। সহজ ইংরেজিতে বোধগম্য ভাষায় করা অনুবাদ। কিন্তু আপনারাই বলুন "whose blood is redder? That of Asad, the martyr or that of my dumb wife?" দিয়ে "কোন রক্ত বেশি লাল। শহীদ আসাদের - না আমার বোবা বউয়ের? " এই অনুভুতির কতটা বোঝানো যায়? #সম্পাদনা_নিয়ে_কিছু_কথা নুরুল আনোয়ার বেশ দক্ষতার সাথে সম্পাদনা কাজটি করেছেন। বিশেষ করে বাংলা, ইংরেজি দুটি একসাথে রেখে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে আমার আকর্ষন মুলত কেড়েছে ♦ওঙ্কার : অঙ্গ ও ব্যঙ্গ ( সলিমুল্লাহ খান) ♦পাঠ করে প্রীত হলাম ( রশীদ করীম) ♦আহমদ ছফার উপন্যাস ওঙ্কার : ব্যাঞ্জনাময় প্রতীকে সেদিনের বাংলাদেশ (মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ) শীর্ষক তিনটি আলোচনা সংযোজন। বস্তুত এই তিনজনের মত চুলচেরা বিশ্লষণ করতে আমি খুব কমই দেখেছি।
Was this review helpful to you?
or
আমাদের মাঝে কিছু নির্বিরোধী ছা-পোষা মানুষ থাকে। খুঁজলে হয়ত দেখা যাবে তাঁরই কোন পূর্বপুরুষ ছিলেন অত্যন্ত তেজী। কেউ কেউ পূর্বপুরুষের প্রতিপত্তির ধুয়া নিয়ে বাঁচে, কেউ সে বিলীয়মান কিংবা বিলীন প্রতাপ থেকে বহুদুরে। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ছাপোষা মানুষ। তাঁর বাবা বংশগৌরবে গর্বিত। কিছুই নেই কিন্তু ফাঁপা গর্বের বেলুনে বাস। সময়ের পরিবর্তনে সেই মানুষটির সম্পত্তি গ্রাস করে নিলেন মোক্তার মশাই। জালে জড়িয়ে নির্বিরোধী মানুষটির সাথে বিয়ে দিলেন বোবা মেয়ের। আমাদের ছাপোষা কেরানীটি শ্বশুরের দয়ায় বেঁচে থেকেও বউকে ভালোবাসে না, কেননা মেয়েটি বোবা। কিন্তু নাটকীয়ভাবেই একদিন সে তাঁর বোবা স্ত্রীর মাঝে সৌন্দর্য খুঁজে পায়। তাকে ভালবাসতে শুরু করে। উপন্যাসের পটভূমি যুক্তফ্রন্ট থেকে আইয়ুব খানের শাসনামল হয়ে গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত। লেখক এক অতি সাধারণ মানুষের, আপাতদৃষ্টিতে এক ফালতু জীবনের গল্পের মাঝে তুলে এনেছেন সেই সময়ের রাজনৈতিক অবস্থার কথা। বোবা মেয়েটির গলায় 'বাঙলা' শব্দটি বসিয়ে নাটকীয়তা সৃষ্টি করলেও, দেশপ্রেম কিংবা সময়ের তীব্র কষাঘাতকে দেখিয়েছেন চমৎকার ভাবে। নোটঃ ২০০৬ সালে মাহফুজ এবং শাবনুর অভিনীত একটি সিনেমা মুক্তি পায়, নাম 'বাঙলা'।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_পাঠক_সমাগম_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_৪ পর্ব - ৪ বইয়ের নামঃ ওঙ্কার লেখকঃ আহমদ ছফা প্রকাশনীঃ স্টুডেন্ট ওয়েজ পৃষ্ঠাঃ ১০০ মূল্যঃ ১৫০ টাকা রিভিউ : প্রায় অপরিচিত লেখক আহমদ ছফাকে চেনা হয়ে ওঠে এই উপন্যাসের মাধ্যমে। অপরিচিত লেখকের বই পড়ে সময় নষ্ট হবে ভয়ে লেখকের ওঙ্কারের মতো ছোট উপন্যাস দিয়ে শুরু করা। বইটার রেশ কখনো হয়তো কাটবেনা। কিছু কিছু জিনিষের রেশ সারাজীবন থেকে যাওয়ার মতো ওঙ্কার ও যেন মাঝে মাঝেই টুং টাং করে কানে বাজে। ১৯৬৯ এর জেনারেল আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত এই উপন্যাস ওঙ্কার। স্বাধীনতার নেশা যখন তাড়া করে ফিরছিলো পূর্ব বাংলার প্রতিটি অনুভূতিতে, আনাচে কানাচে, বাঙালি কি করে একটা স্বাধীন আকাশ আর সবুজ মাটির জন্য অকুতোভয় হয়ে উঠেছিলো তারই দলিল এই ওঙ্কার। আহমদ ছফার এই বইয়ের যে জিনিষটা চোখে পড়ে তা হলো তিনি কেন্দ্রীয় চরিত্রের কোনো নাম দেননি। তারপরেও গল্প পড়তে কিংবা বুঝতে এতটুকুও সমস্যা হয়নি বরং আরো তা টেনে নিয়ে গেছে শেষ অবধি। এই উপন্যাসে গল্পকার তার বাবাকে বিশেষায়িত করেছেন উত্তম পশু হিসেবে, কারণ মামলা-মোকদ্দমা আর দুর্ঘটনা ঘটিয়ে এক প্রকার সুখ পেতেন তিনি। এরই এক ফলস্বরুপ গল্পকথককে বাধ্য হয়ে বিয়ে করতে হয় এক বোবা মেয়েকে। কথকের শ্বশুর ছিলেন পাকিস্তান সরকারের আমলা। শ্বশুরের দেয়া জিনিষেই খুশি ছিলেন কথক। মূলত এই বিয়েকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যায় উপন্যাসটি। আহমদ ছফার লেখার একটা নিজস্ব গতি আছে। সংলাপে জোর না দিয়ে শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে এগিয়ে যাওয়া উপন্যাসটির যেন এক সম্মোহন ক্ষমতা আছে। প্রতিটি শব্দের যেন একটা অনুভূতি আছে। অবহেলিত বোবা মেয়েটি কখনো কখনো লেখকের ভাষায় " সারারাত একতাল কাদার মতো আমার শরীরের সাথে লেগে রইলো "। এই দৃশ্যটা কেমন একটা চিকচিকে বিষণ্ণতা এনে দেয় যার আবেশ থাকে সারাটা সময় জুড়ে। উপন্যাসের সারাটা সময় জুড়ে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলন, শেখ মুজিবের গ্রেফতার, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। অথচ এসব বিপ্লব, মিছিল, স্লোগান কথককে স্পর্শ করেনা। তার ভাষায়, " আগেই তো বলেছি ইচ্ছাশক্তি বলতে কোনকিছুই নেই, তাই বলে আমি যে কিছু চাইনা তা সত্যি নয়। নানা জায়গায় আমার যেতে ইচ্ছা করে, কিন্তু চরণ আমার সামনে চলতে রাজি হয়না... এমন এক নিষ্ক্রিয় পুরুষ আমি। " কিন্তু মিছিল এর উত্তাল যেন আঘাত করে বোবা মেয়েটিকে। সারাজীবন ধরে অবহেলিত মেয়েটি যেন রহস্যমানবি হয়ে ওঠে। কথকের ভাষায়, " আমি না ভেবে পারিনে গোঁ গোঁ শব্দের এইযে গুণগত পরিবর্তন, এর কারণ কি? হঠাত উদ্ভাবনের পুলকে চমকে উঠি। সেও মিছিলের মুখে উচ্চারিত ' বাংলাদেশ ' শব্দটি উগ্রে দিতে চাইছে। বহুদিন পর একটানা গোঁ গোঁ শব্দের বুদ্ধিগ্রাহ্য অর্থ পেয়ে গেলাম। " শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে যেন একটা অনুভূতি তৈরি করেছেন আহমদ ছফা। " বাংলাদেশের আকাশ কাঁপছে, বাতাস কাঁপছে, নদী, সমুদ্র, পর্বত কাঁপছে। নরনারীর হৃদয় কাঁপছে। একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। আচানক বোবা বউ জানলা সমান লাফিয়ে ' বাঙলা ' অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে উচ্চারণ করলো। তার মুখ দিয়ে গলগল রক্ত বেরিয়ে আসে। তারপর মেঝেয় সংজ্ঞা হারিয়ে পড়ে থাকে। ভেতরে কি একটা বোধহয় ছিঁড়ে গেছে। আমি মেঝের ছোপ ছোপ টাটকা লাল রক্তের দিকে তাকাই, অচেতন বউটির দিকে তাকাই। মন ফুঁড়েই একটা প্রশ্ন জাগে- কোন রক্ত বেশি লাল। শহীদ আসাদের - না আমার বোবা বউয়ের? " ওঙ্কারের আঘাত এখনো অক্ষত, রয়ে যাবে অক্ষত। লিখেছেনঃ তাকবির আহসান
Was this review helpful to you?
or
আহমদ ছফার অনন্য সৃষ্টি ওংকার। প্রতিটা মানুষের স্নায়ুতে সংগ্রাম বিপ্লব মিশে আছে। ওংকার বইয়ে একাত্তরের প্রতিরুপ স্পষ্টবে ফুটে উঠেছে।
Was this review helpful to you?
or
"আকাশে থালার মতো একখানা চাঁদ জেগে। কুয়েতে গাছের বাঁকা ছায়াগুলো আরো বাঁকা হয়ে জল খেতে নেমেছে। অল্প অল্প বাতাসে নারকেল গাছের চিরল পাতাগুলো কাঁপছে। রাতের শিশিরে সিক্ত পাতাগুলো চাঁদের আলোর স্পর্শেে চিক চিক জ্বলছে। একঝাঁক নক্ষত্র ফুলের মতো ফুটে আছে। প্রস্ফুটিত নক্ষত্রের ভারে প্রণত হয়ে পড়েছে আকাশ। শহর নীরব। মাঝে মাঝে মৃদু অতি মৃদু শব্দ শোনা যায়। মনে হয় গভীর ঘুমে চন্দ্রালোকিত নিশিরাতে পাশ ফিরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।" ওঙ্কার আহমেদ ছফা এতোদিন কেন পড়িনি! এর আগে স্যারের শুধু "যদ্যপি আমার গুরু" পড়েছিলাম। এখন "ওঙ্কার" শেষ করেই "উত্তর খন্ড" পড়ছি। দেশের গুনীজনদের চিনতে আমাদের এতো দেরী হচ্ছে কেন! কতো হতভাগ্য আমি। রবীন্দ্রনাথ,নজরুল,শরৎচন্দ্র,হুমায়ুন আহমেদ,মানিক,তারাশঙ্কর,বিমল মিত্র,সুনীল,সমরেশ মজুমদার,বিভূতিভূষণ এদের সবাইকে পড়ে তারপর পড়লাম আহমেদ ছফা।
Was this review helpful to you?
or
ভালোবাসা, প্রতিবাদ, তীব্র ঘৃণা, প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ভাষার প্রয়োজন পড়ে না। যে কেউ যখন ইচ্ছে তা করতে পারে। আর এই প্রতিবাদের শব্দ যদি হয় সকল শব্দের আদী শব্দ "ওঙ্কার" দিয়ে! তাহলে তার মাহাত্ম্য আর কিছুতে প্রকাশ সম্ভব না। যে শব্দের উৎস একদম অন্তরের গভীর থেকে! তখন সত্যি-ই সে এক কঠিন মূহুর্ত, কঠিন পরিস্থিতি। যে পরিস্থিতির প্রতিবাদ করতে পিছুপা হয় না প্রকৃতি প্রদত্ত একজন বিকলাঙ্গও। আজকের আলোচনাতে হয়তো কাহিনির রহস্য উন্মোচিত হয়ে যেতে পারে। আমার কিছুই করার নেই। কারন এ এমন এক গল্প যা বলে দিলে তার রহস্য ভেদ করা এতো সহজ হবেনা বইটি না পড়ে। … জমিদারি উঠে গেছে সেই কবেই। কিন্তু এখানো সেই তেজ ধরে রেখেছেন গল্প কথকের বাবা। ভীরুদের তো আছে ঐ এক সম্বল। কথকের বাবা লোক দেখানো ধর্মপরায়ন মানুষ। যার প্রধান কাজ প্রতিবেশীদের উপর মিথ্যা মামলা মোকদ্দমা করে হয়রানি করা। তিনি নিজেকে তালুকদার ভাবেন। সে হিসেবে তার আশপাশের সবাইকে তার প্রজা ভাবেন। প্রজারাও তাই সহজে তাকে খাজনা বুঝিয়ে না দিয়ে তার বিপরীতে মামলা করে জবাব দেয়। এভাবেই চলতে থাকে। একসময় সরকার আইন করে জমিদারি তুলে দিলেন। তারপরেই তার বাবা প্রায় বিছানা নিলেন। বাবার বাম/ডান হাত মুক্তার সাহেবও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কৌশলে তার জমি-জিরাত সহ ঘর বাড়ি নিজের করে নেন। তবে তা ফিরিয়ে দেন এক শর্তে। মুক্তার সাহেবের বোবা মেয়েকে কথক বিয়ে করতে হবে৷ আমাদের ভীরু, মুখচোরা কথকও নিরুপায় হয়ে বিয়ে করেন। আইয়ুব খানের ছত্রছায়ায় থেকে কথকের শ্বশুর সাহেব বেশ উন্নতি করেছেন। তার জোরেই মেয়ে আর মেয়ে জামাইকে একটা বাড়ির হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদ করে দিয়ে তাদের থাকার ব্যাবস্থা করে দেন। কথক প্রথম দিকে শ্বশুরকে অপছন্দ করলেও পরে কিছুটা মানিয়ে নেন। সেটা করা ছাড়া উপায়ও নেই। এদিকে বোবা বউ নিয়ে সুখে নেই কথক। থাকবে কি করে, যার সাথে মন খুলে দুটো কথা বলতে পারেনা, মনের আবেগ বুঝাতে পারেনা, তাকে নিয়ে কী করে সংসার হয়? ছোট বোন আর বোবা বউ নিয়ে বর্তমানে কথকের সংসার। কিন্তু ঐ সংসার নাম পর্যন্তই। নাই কোনো উচ্ছ্বাস, নাই আবেগ। শব্দহীন এক রাজ্য যেন। ছোট বোনকে গান শেখানোর জন্য হারমনিয়াম কিনে দেয় কথক। ছোট বোন গানের রেওয়াজ করতে থাকেন। হঠাৎ একদিন কথকের চোখে এক আশ্চর্য ঘটনা চোখে পড়ে। তিনি দেখেন তার বোবা বৌ প্রবল প্রচেষ্টায় হারমনিয়ামের সুরের সাথে গলা মেলাচ্ছেন। সুরতো বের হচ্ছেই না, বরং সেখান থেকে গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দের মতো করে গোঙানির শব্দ আসছে। ঐ দিনিই কথক বুজতে পারেন তিনি একা শুধু ব্যাথিতো না। আরো একজনও মেনে নিতে পারছেনা এই অপারগতা। তার মনেও লুকিয়ে আছে বলতে না পারা কতো কথা। দেশের পরিস্থিতি ভালো না। "আসাদ নূর" পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। এ নিয়ে সারা রাজধানী তোলপাড়। মিলিটারি নেমেছে, গোলাগুলি হচ্ছে। রক্তে রাজপথ রাঙা হয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে মিছিলের স্লোগান শুনলেই বোবা বৌ কেমন যেন উতলা হয়ে পড়ে। ঘরের জানালা খুলে দিয়ে স্লোগানের সাথে সাথে যেন তাল মেলাতে চায়। কি অসহ্য সে দৃশ্য। একসময় গলা দিয়ে টপ টপ করে রক্ত ঝড়তে থাকে সেই বোবা বৌয়ের। তখন একটা শব্দই স্পষ্ট করে কথকের কানে পৌঁছে… "বাঙলা" … "আহমেদ ছফা" এত শক্তিশালী এক লেখক তা এই বইটা পড়ে আমি বুঝতে পারলাম। স্বাভাবিক এক ছন্দপতন পরিবারের গল্প দিয়ে শুরু করে তিনি তুলে এনেছেন ততকালীন রাজনীতির অস্থির অবস্থার দৃশ্য। গল্পের প্রতিটা চরিত্র এত শক্তিশালী যে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কথকের বাবাকে তিনি এক সময় "পবিত্র পশু" বলেছেন। এই ছোট শব্দের মাধ্যমে তিনি তার গভীর ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। যা তিনি স্বাভাবিক ভাবে করতে পারতেন না। মোক্তার সাহেব একজন জোচ্চর ব্যাক্তি, কিন্তু তবু তিনি মানুষ। তারও আছে আবেগ, ভালোবাসা। বাবা তার বোবা মেয়েকে ভিষণ রকম ভালোবাসতেন। কোনো প্রকার কষ্ট দিতেন না। কথকের এই বাপ মেয়ের ভালোবাসা, হাত নাড়িয়ে অঙ্গভঙ্গি করে একজন অন্য জনের সাথে কথা বলার দৃশ্যটা ভিষণ পছন্দ হয়। এবং এ কারনেই শ্বশুরের প্রতি কিছুটা সহনশীল তিনি। কথক নিজে ভীরু মানুষ। তবু তিনিও অনেক কিছু বুঝতেন। কিন্তু বলতে পারতেন না। তবে বোবা বৌয়ের প্রতি তার যে ভালোবাসার প্রকাশ, তা এক কথায় অসাধারণ। আর বোবা বৌয়ের কথা আর কি বলবো। ওফ কি এক চরিত্র সৃষ্টি। শেষের "বাঙলা" শব্দটা দিয়ে প্রকাশ করে দিলেন তার দেশপ্রেম এবং সেই সাথে তীব্র ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ। … আমি ছোট মানুষ, এই লেখকের সাহিত্য মান নিয়ে কথা বলটা হবে আমার জন্য ধৃষ্টতা। এতো সুন্দর লেখনী। এবং কি তার লেখনী শক্তি। বইয়ের প্রথম শব্দ থেকে শেষ শব্দ পর্যন্ত পাঠক ধরে রাখেন। তিনি বাক্য নয়, শব্দের পর শব্দ মিলিয়ে, কথার ছন্দ তৈরি করে সৃষ্টি করেছেন বই "ওঙ্কার" বইয়ের নামটাও যেন একদম সামাঞ্জস্য। ষাটের দশকের অস্থির রাজনীতির খন্ড প্রতিচ্ছবি যেন তুলে ধরেছেন লেখক। একটা বোবা মেয়ের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন সাধারণ মানুষের মনের অবস্থা। একি এতো সহ কর্ম? আমার তা মনে হয় না। জানালার সামনে দাঁড়িয়ে মিছিলের স্লোগানের সাথে তাল মেলানোর দৃশ্য আমি কখনো ভুলবো না।
Was this review helpful to you?
or
*বুক রিভিউ* বইয়ের নাম : অস্কার লেখকের নাম : আহমদ ছফা (১৯৪৩-২০০১) ধরন : সমকালীন উপন্যাস প্রচ্ছদ : শাহরিয়ার রাসেল প্রকাশনীর নাম : স্টুডেন্ট ওয়েজ রচনা কাল : ১৯৭২ প্রকাশ কাল : ১৯৭৫ কাহিনী সংক্ষেপ : উপন্যাসটির নায়ক গ্রামের তালুকদারের ছেলে। তার বাবা তালুকদার সাহেব তার প্রভাব বিস্তার ও মর্যাদা টিকিযে রাখার লক্ষে তুচ্ছ কারনে প্রতিবেশীদের নামে মামলা করে বসতেন। তাকে এ কাজে সাহায্য করে আবু নসর মোক্তার। মিথ্যা মামলা জিতার জন্য মোক্তার সাহেব সামান্য অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা সাক্ষী্ও জোগার করে দিতেন। একটি মামলায় তালুকদার সাহেব গো হারা হয়ে হেরে যান। এই সুযোগে মোক্তার সাহেব তালুকদারের সকল সম্পত্তি নিজের নামে নিলাম করে নেন। ফলে মোক্তার সাহেব তার বোবা মেয়েকে তালুকদারের ছেলের উপর গছিয়ে দেন। শশুর মোক্তার সাহেব তার জামাইকে চাকুরী ও বাড়ি করে দেন। বোনের গান গাওয়ার সাথে তার বউয়ের গান গাওয়ার যে আকুল চেষ্টা তা দেখে তার বউয়ের প্রতি তার মায়া বেড়ে যায়। ৬৯ এর আন্দোলনে যখন পুরো দেশ মিছিলে মিছিলে উত্তাল তখন তার বোবা বউটি বাসার সব জানালা গুলো খুলে দিয়ে মিছিলের দিকে তাকিয়ে থাকতো, তখন তার মুখ দিয়ে বো বো শব্দ বের হত। সে মিছিলের বাংলাদেশ শব্দটি ভেতর থেকে উগড়ে দিতে চাইছে। একদিন তার বউ জানালা সমান লাফিয়ে উঠে স্পষ্টভাবে ‘বাঙলা’ বলে উচ্চারন করে। তালুকদার পুত্র অবাক হয়ে এগিয়ে দেখেন তার বউয়ের মুখ দিয়ে গলগল করে লাল রক্ত বেরিয়ে আসছে। তিনি তখন ভাবতে থাকেন কোন রক্ত বেশী লাল, নাকি তার বোবা বউয়ের ?? পাঠ প্রতিক্রিয়া : মাতৃগর্ভে শিশু যেমন পূর্ণতা পেলে তার মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসতে চায় নতুন এক পৃথিবীতে,তেমনি একটি জনগোষ্ঠি পরাধীনতা থেকে বেরিয়ে পরিপূর্ণ জাতিতে পরিনত হওয়ার যে তীব্র আকাক্ষা ছিল তাই তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। আহমদ ছফার লেখা বইয়ের রিভিউ এই প্রথম লিখলাম। তার মত মানুষের লেখা বইয়ের রিভিউ লিখবেন বিজ্ঞজনেরা, যেমসটা লিখেছেন, আবুল ফজল ও নূরুল আনোয়ার। তবুও আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে চেষ্টা করেছি কিচুটা লিখার। ভূল হলে ক্ষমা প্রার্থী। ব্যাক্তিগত রেটিং ৫/৫
Was this review helpful to you?
or
? বই নিয়ে আলোচনা ভালোবাসা, প্রতিবাদ, তীব্র ঘৃণা, প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ভাষার প্রয়োজন পড়ে না। যে কেউ যখন ইচ্ছে তা করতে পারে। আর এই প্রতিবাদের শব্দ যদি হয় সকল শব্দের আদী শব্দ "ওঙ্কার" দিয়ে! তাহলে তার মাহাত্ম্য আর কিছুতে প্রকাশ সম্ভব না। যে শব্দের উৎস একদম অন্তরের গভীর থেকে! তখন সত্যি-ই সে এক কঠিন মূহুর্ত, কঠিন পরিস্থিতি। যে পরিস্থিতির প্রতিবাদ করতে পিছুপা হয় না প্রকৃতি প্রদত্ত একজন বিকলাঙ্গও। আজকের আলোচনাতে হয়তো কাহিনির রহস্য উন্মোচিত হয়ে যেতে পারে। আমার কিছুই করার নেই। কারন এ এমন এক গল্প যা বলে দিলে তার রহস্য ভেদ করা এতো সহজ হবেনা বইটি না পড়ে। … জমিদারি উঠে গেছে সেই কবেই। কিন্তু এখানো সেই তেজ ধরে রেখেছেন গল্প কথকের বাবা। ভীরুদের তো আছে ঐ এক সম্বল। কথকের বাবা লোক দেখানো ধর্মপরায়ন মানুষ। যার প্রধান কাজ প্রতিবেশীদের উপর মিথ্যা মামলা মোকদ্দমা করে হয়রানি করা। তিনি নিজেকে তালুকদার ভাবেন। সে হিসেবে তার আশপাশের সবাইকে তার প্রজা ভাবেন। প্রজারাও তাই সহজে তাকে খাজনা বুঝিয়ে না দিয়ে তার বিপরীতে মামলা করে জবাব দেয়। এভাবেই চলতে থাকে। একসময় সরকার আইন করে জমিদারি তুলে দিলেন। তারপরেই তার বাবা প্রায় বিছানা নিলেন। বাবার বাম/ডান হাত মুক্তার সাহেবও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কৌশলে তার জমি-জিরাত সহ ঘর বাড়ি নিজের করে নেন। তবে তা ফিরিয়ে দেন এক শর্তে। মুক্তার সাহেবের বোবা মেয়েকে কথক বিয়ে করতে হবে৷ আমাদের ভীরু, মুখচোরা কথকও নিরুপায় হয়ে বিয়ে করেন। আইয়ুব খানের ছত্রছায়ায় থেকে কথকের শ্বশুর সাহেব বেশ উন্নতি করেছেন। তার জোরেই মেয়ে আর মেয়ে জামাইকে একটা বাড়ির হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদ করে দিয়ে তাদের থাকার ব্যাবস্থা করে দেন। কথক প্রথম দিকে শ্বশুরকে অপছন্দ করলেও পরে কিছুটা মানিয়ে নেন। সেটা করা ছাড়া উপায়ও নেই। এদিকে বোবা বউ নিয়ে সুখে নেই কথক। থাকবে কি করে, যার সাথে মন খুলে দুটো কথা বলতে পারেনা, মনের আবেগ বুঝাতে পারেনা, তাকে নিয়ে কী করে সংসার হয়? ছোট বোন আর বোবা বউ নিয়ে বর্তমানে কথকের সংসার। কিন্তু ঐ সংসার নাম পর্যন্তই। নাই কোনো উচ্ছ্বাস, নাই আবেগ। শব্দহীন এক রাজ্য যেন। ছোট বোনকে গান শেখানোর জন্য হারমনিয়াম কিনে দেয় কথক। ছোট বোন গানের রেওয়াজ করতে থাকেন। হঠাৎ একদিন কথকের চোখে এক আশ্চর্য ঘটনা চোখে পড়ে। তিনি দেখেন তার বোবা বৌ প্রবল প্রচেষ্টায় হারমনিয়ামের সুরের সাথে গলা মেলাচ্ছেন। সুরতো বের হচ্ছেই না, বরং সেখান থেকে গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দের মতো করে গোঙানির শব্দ আসছে। ঐ দিনিই কথক বুজতে পারেন তিনি একা শুধু ব্যাথিতো না। আরো একজনও মেনে নিতে পারছেনা এই অপারগতা। তার মনেও লুকিয়ে আছে বলতে না পারা কতো কথা। দেশের পরিস্থিতি ভালো না। "আসাদ নূর" পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। এ নিয়ে সারা রাজধানী তোলপাড়। মিলিটারি নেমেছে, গোলাগুলি হচ্ছে। রক্তে রাজপথ রাঙা হয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে মিছিলের স্লোগান শুনলেই বোবা বৌ কেমন যেন উতলা হয়ে পড়ে। ঘরের জানালা খুলে দিয়ে স্লোগানের সাথে সাথে যেন তাল মেলাতে চায়। কি অসহ্য সে দৃশ্য। একসময় গলা দিয়ে টপ টপ করে রক্ত ঝড়তে থাকে সেই বোবা বৌয়ের। তখন একটা শব্দই স্পষ্ট করে কথকের কানে পৌঁছে… "বাঙলা" … "আহমেদ ছফা" এত শক্তিশালী এক লেখক তা এই বইটা পড়ে আমি বুঝতে পারলাম। স্বাভাবিক এক ছন্দপতন পরিবারের গল্প দিয়ে শুরু করে তিনি তুলে এনেছেন ততকালীন রাজনীতির অস্থির অবস্থার দৃশ্য। গল্পের প্রতিটা চরিত্র এত শক্তিশালী যে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কথকের বাবাকে তিনি এক সময় "পবিত্র পশু" বলেছেন। এই ছোট শব্দের মাধ্যমে তিনি তার গভীর ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। যা তিনি স্বাভাবিক ভাবে করতে পারতেন না। মোক্তার সাহেব একজন জোচ্চর ব্যাক্তি, কিন্তু তবু তিনি মানুষ। তারও আছে আবেগ, ভালোবাসা। বাবা তার বোবা মেয়েকে ভিষণ রকম ভালোবাসতেন। কোনো প্রকার কষ্ট দিতেন না। কথকের এই বাপ মেয়ের ভালোবাসা, হাত নাড়িয়ে অঙ্গভঙ্গি করে একজন অন্য জনের সাথে কথা বলার দৃশ্যটা ভিষণ পছন্দ হয়। এবং এ কারনেই শ্বশুরের প্রতি কিছুটা সহনশীল তিনি। কথক নিজে ভীরু মানুষ। তবু তিনিও অনেক কিছু বুঝতেন। কিন্তু বলতে পারতেন না। তবে বোবা বৌয়ের প্রতি তার যে ভালোবাসার প্রকাশ, তা এক কথায় অসাধারণ। আর বোবা বৌয়ের কথা আর কি বলবো। ওফ কি এক চরিত্র সৃষ্টি। শেষের "বাঙলা" শব্দটা দিয়ে প্রকাশ করে দিলেন তার দেশপ্রেম এবং সেই সাথে তীব্র ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ। … আমি ছোট মানুষ, এই লেখকের সাহিত্য মান নিয়ে কথা বলটা হবে আমার জন্য ধৃষ্টতা। এতো সুন্দর লেখনী। এবং কি তার লেখনী শক্তি। বইয়ের প্রথম শব্দ থেকে শেষ শব্দ পর্যন্ত পাঠক ধরে রাখেন। তিনি বাক্য নয়, শব্দের পর শব্দ মিলিয়ে, কথার ছন্দ তৈরি করে সৃষ্টি করেছেন বই "ওঙ্কার" বইয়ের নামটাও যেন একদম সামাঞ্জস্য। ষাটের দশকের অস্থির রাজনীতির খন্ড প্রতিচ্ছবি যেন তুলে ধরেছেন লেখক। একটা বোবা মেয়ের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন সাধারণ মানুষের মনের অবস্থা। একি এতো সহ কর্ম? আমার তা মনে হয় না। জানালার সামনে দাঁড়িয়ে মিছিলের স্লোগানের সাথে তাল মেলানোর দৃশ্য আমি কখনো ভুলবো না। ধন্যবাদ। © মোঃ কামরুল হাসান সময় - দুপুর ১ঃ৫০। ১৫/০৯/২০১৯ ইং ? বই হোক আপনার, আপনি বইয়ের ?
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ূন আহমেদ, আনিস সাবেত আর আহমদ ছফা মিলে একবার গেছেন আনিস সাবেতের গ্রামের বাড়িতে। সেখানে কি একটা বিষয় নিয়ে আনিস সাবেত আর আহমদ ছফার মধ্যে তুমুল কথা কাটাকাটি। ছফা বলছেন, আনিস সাহেব, আপনি আপনার মত উইথড্র করুন। আনিস সাবেত বললেন, আমি মরে গেলেও আমার কথা উইথড্র করব না। ছফা বললেন, তবে আমি চললাম। বলে হনহন করে হাঁটা শুরু করলেন। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, আনিস ভাই, ছফা ভাইকে আটকান। উনি চলে যাচ্ছেন যে! আনিস সাবেত আয়েশি ভঙ্গিতে বললেন, ছাড়ো তো। এই রাত বিরাতে উনি যাবেন কোথায়? গাড়ি-ঘোড়া কিছুই তো পাবেন না যে ঢাকা চলে যাবেন। একটু পরে এমনিই ফিরে আসবেন। ছফা কিন্তু ফিরে আসেননি। সারারাত হেঁটেই তিনি ঢাকা চলে গেলেন। পরে যখন আনিস সাবেত এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তখন ছফা সাহেব বলেছিলেন, সারা রাত হেঁটে ভালই হয়েছে। মাথায় নতুন একটা উপন্যাস এসেছে। প্রাজ্ঞজন আবুল ফজল উপন্যাসটার সম্বন্ধে লিখেছেন,এ গ্রন্থটি পাঠ করলে যেকোন সুহৃদয় পাঠকই মোহিত হবেন।স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রচণ্ড আবেগ এবং অনুভূতি নিয়ে এর চাইতে উৎকৃষ্ট কিছু কোথাও লিখিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। ডক্টর সলিমুল্লাহ খান যেটিকে চিহ্নিত করেছেন আহমদ ছফার "আহমদ ছফা" হয়ে ওঠার জীয়নকাঠি হিসেবে। জানেন উপন্যাসটার নাম? ওঙ্কার। ওঙ্কার উপন্যাসটির রচনাকাল ১৯৭২।রচনার তিন বছর পর এটি প্রকাশিত হয়। আহমদ ছফা এই উপন্যাসটি উৎসর্গ করেছেন তার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, প্রাজ্ঞ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে। উপন্যাসটি পরাধীন বাংলাদেশের পটভূমিকায় উনসত্তেরর গণ অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে রচিত।মোট আটটি ভাগে উপন্যাসটিকে ভাগ করা হয়েছে।উপন্যাসের নায়ক, গ্রামের এক ক্ষয়িষ্ণু তালুকদার পরিবারের সন্তান।জমি-জিরাত তার পিতার নেই তেমন, কিন্তু উত্তরাধিকারসূত্রে অহমিকা রয়ে যায়।সাধারণ মানুষ আগের মত তাকে সম্মান দিতে চায় না,বা দেয় না, কিন্তু তিনি তার অতীত অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন না। তার আভিজাত্য, কর্তৃত্ব করার মানসিকতা এগুলো এলাকার মানুষের পীড়ার কারণ হয়। তাদের কাছ থেকে আগের মত মর্যাদা না পাওয়ার শোধ তিনি তুলতে থাকেন উন্মাদের মতো তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার মাধ্যমে,ক্রমাগত তিনি হারতে থাকেন, কিন্তু পিছপা হন না।ছফার ভাষায় বললে, “ পুরনো মডেলের গাড়ি যেমন শহরের নতুন রাস্তায় ঠিকমত চলতে পারে না, ঝঞ্ঝাট লাগায়, দুর্ঘটনা বাঁধায়, ধোঁয়া ছড়ায় তেমনি আমার বাবা আমার কালের পৃথিবীতে বসবাসের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি কেবল দুর্ঘটনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছিলেন।" এইসব মোকদ্দমায় তার একান্ত বিশ্বস্ত লোক ছিলেন আবুনসর মোক্তার।কিন্ত মোক্তারের চোখ আবার তার সম্পত্তির দিকে।একসময়ে মোক্তারের কৌশলের কাছে তিনি পরাজিত হন, ধরাশয়ী হন।জমিজমা মোক্তার সাহেবের হস্তগত হয়। নায়কের পরিবারের এই দুঃসময়ে অকূলের কূল হয়ে আসেন মোক্তার সাহেবই।তিনি প্রস্তাব দেন, তিনি তালুকদারের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন, বাড়ি ভিটে ফিরিয়ে দেবেন, পুরাতন বাড়িটা সংস্কার করে দেবেন। শহরে থাকার ব্যবস্থা হিসেবে একটা বাসা করে দেবেন, ছেলের একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। এর বিনিময়ে ছেলেকে তার বোবা মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। নায়কের পরিবার যদিও প্রথমে এই প্রস্তাব মেনে নিতে চায় না তবু নায়ক বাধ্য হয়ে বিয়ে করে আবুনসর মোক্তারের বোবা মেয়েকে। নায়ক শ্বশুরের প্রভাব-প্রতিপত্তির জোরে তার মেয়েকে বিয়ে করে শহরে ওঠে, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক স্থানে চলে যায়।তাদের সাথে শহরে থাকে নায়কের বোন। একসময় নায়ক তার বোনকে গান শেখানোর ব্যবস্থা করে। কিছুদিনের মধ্যেই তার ভালো উন্নতি হয়। এতে মন ভালো হয়ে যায় নায়কের।সে আরো বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করে তার বোবা স্ত্রীর গানের প্রতি, গানের যন্ত্রটির প্রতি প্রবল আগ্রহ। ননদটি যখন গলায় সুর তোলে সাথে সাথে সেও চেষ্টা করে সুর তুলতে। তার গলা থেকে বের হয় অন্যরকম আওয়াজ। তবু সে লুকিয়ে লুকিয়ে চেষ্টা করে সুরদেবতাকে ধরতে, ধ্যান করে তার। স্ত্রীর এই চেষ্টা নায়কের ভালো লাগে। তার প্রতি ভালোবাসা খুঁজে পায় সে, যা পায় নি বিয়ের পর থেকে একদিনের জন্যও।এরপর থেকে, দিনরাত কখোনো সে চোখের আড়াল করে না স্ত্রীকে। কাছে কাছে থেকে ভাগ করে নেয় যত "বকেয়া" ভালোবাসা। এদিকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত পটপরিবর্তন ঘটতে থাকে। গণ আন্দোলনের জোয়ারে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসন কেঁপে ওঠে।আমাদের নায়ক মিছিল, শ্লোগান- বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করতো। মাঝে মাঝে বিরক্তিবোধও করত। কিন্তু মিছিলের ব্যাপারে প্রচণ্ড আগ্রহ তার বোবা স্ত্রীর। মিছিল দেখলেই, শ্লোগান শুনলেই তার স্ত্রী অন্যরকম হয়ে যায়। “শ্লোগানের আওয়াজ শুনলে আমার বউটি বিক্ষুব্ধা বাংলাদেশ হয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হতে চায়। আর আমার বোবা স্ত্রী কথা বলতে চায়। উভয়ই তর সইতে চায় না। উভয়েরই দাবীই একরোখা।” আসাদের মৃত্যুতে চারিদিকে তুলকালাম বেঁধে যায়। চারিদিকে ঘেরাও, জ্বালাও-পোড়াও, অভিযান। একদিন মানুষের মিছিলটাকে খুব ভালোভাবে দেখে নায়ক। মিছিলের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে দেয় তাকে। “সেদিন তাকিয়ে দেখলাম মিছিলেরও দেখবার মতো একটি নয়ন ভুলানো সৌন্দর্য আছে। আছে তাতে গতির দোলা, ছন্দের দ্যোতনা। প্রতিটি মানুষ সমগ্র মিছিলের সঙ্গে সন্নিবিষ্ট হলেও তারা সকলে আলাদা আলাদা মানুষ। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সচেতন সবাক চলিষ্ণু ঝরনা একটি আরেকটির সাথে মিশে রচনা করেছে এই গতিমান স্রোতধারা। লক্ষ প্রাণ ঐক্যের মন্ত্রে একসঙ্গে বাঁধা পড়েছে। এমন লক্ষ লক্ষ ঝরনা প্রবল প্রাণতরঙ্গে একসঙ্গে নেচে নেচে উঠছে। মনে হলো মিছিল ভয়ঙ্কর, আবার মিছিল সুন্দর, মিছিলে ধ্বনিত হয় ভাঙনের ধ্বংস নাদ, মিছিলে জাগে নব সৃষ্টির মহীয়ান সঙ্গীত। ভাষণে কোমলে কেমন আপোষ করেছে। দৃষ্টির কুয়াশা ক্রমশঃ কেটে যাচ্ছিলো। সমস্ত বিষয় যথার্থ পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে পাচ্ছিলাম। চোখের উপর থেকে আরেকটা আলগা পর্দা যেন খসে পড়লো। সেদিনের মিছিল দেখে, ঠিক মনে হলো, মিছিলে এলে ভীরুতা, কাপুরুষতা ঠিকই ভুলে থাকা যায়। একেবারে হতোদ্যম ক্ষণজীবী মানূষকেও এই মিছিল সামান্য সময়ের জন্য হলেও মহাজীবনের আস্বাদ পান করাতে পারে।" একদিন এরকম একটি মিছিল তার বাসার দিকে আসছে। শ্লোগানের শব্দ শুনতেই তার বোবা স্ত্রীর অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। সে দেখতে পায় তার স্ত্রী নিজ কণ্ঠ থেকে আওয়াজ বের করতে চাচ্ছে প্রাণপনে।। একসময় নায়কের মনে হয় তার স্ত্রী “বাংলা” শব্দটি উচ্চারণ করল, তখন তার কণ্ঠ থেকে রক্ত ঝরছে। নায়কের মন ফুরে একটাই প্রশ্ন জাগে- কোন রক্ত বেশি লাল? শহীদ আসাদের না তার বোবা বৌয়ের ? "ওঙ্কার" এর কোনো চরিত্রই যেনো শুধু একটি ব্যক্তি নয়, বহু কালের বহু মানুষের ভার বহন করার শক্তি দিয়েই ছফা তাদের সৃষ্টি করেছেন। জনগোষ্ঠীর বহুকালের স্বপ্নকে তিনি সংকল্পে ও অঙ্গীকারে উন্নীত করেন একটি বোবা মেয়েকে দিয়ে, কথা বলার অসম্ভব কাজটি রক্তাক্ত উপায়ে সম্পন্ন করিয়ে,যা মূলত জনশক্তির জাগরণেরই প্রতীক।আমার আরেকজন অতি পছন্দের লেখক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, এই উপন্যাসটি সম্বন্ধে ওনার মন্তব্য দিয়েই আজকের লেখাটা শেষ করবো।তিনি বলছেন, ওঙ্কারে আহমদ ছফা গল্প ফাঁদতে বসেননি, কাহিনীর সূত্র ধরে পাঠককে তিনি টেনে নেন এমন একটি জায়গায়, যেখানে পৌঁছে গল্পটা ভুলে গেলেও কিছু এসে যায় না, কাহিনী গৌণ হয়ে সেখানে প্রবল হয়ে ওঠে অনেক দিনের অনেক মানুষের গ্লানি, জড়তা ও শোষণ এবং গ্লানি থেকে মুক্তির রক্তাক্ত সংকল্প" ।।এরকম উক্তির পর বোধ করি এই ক্ষুদ্রকায় "মহা উপন্যাস"টি নিয়ে বলার কিছু বাদ থাকে না। পাঠককে আশ্বস্ত করতে পারি, সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদ পাবেন এ উপন্যাসটিতে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মে ওঙ্কার আহমদ ছফা জমিদারি হারিয়ে তালুকদার পিতা নিঃস্ব,রিক্ত,শূণ্য।প্রকারন্তে বাধ্য হয়ে গল্পকথক,মোক্তার আবুনসরের বোবা মেয়েকে বিয়ে করে।শহুরে চাকচিক্য আর স্বচ্ছলতার ভীড়েও প্রবল Sharothi Rahat: জমিদারি হারিয়ে তালুকদার পিতা নিঃস্ব,রিক্ত,শূণ্য।প্রকারন্তে বাধ্য হয়ে গল্পকথক,মোক্তার আবুনসরের বোবা মেয়েকে বিয়ে করে।শহুরে চাকচিক্য আর স্বচ্ছলতার ভীড়েও প্রবল হতাশাবোধ আচ্ছন্ন করে তুলে।বাক্যের ক্ষিধে আর অতৃপ্তির আড়ালে হারমোনিয়ামে অস্পষ্ট সুরে যান্ত্রিক গোঁ গোঁ শব্দে ভাষার প্রকাশে তীব্র জিদ আলোড়িত হয় লেখকের মনে।নির্বাক চোখের ভাষায় অস্ফুট প্রেম খুঁজে পায়।'৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে স্লোগান-মিছিলে প্রকম্পিত শহিদ আসাদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথ।বোবা বউয়ের গোঁ গোঁ শব্দের গুনগত পরিবর্তন "বাংলাদেশ" উচ্চারণের প্রচেষ্টা হয়ে প্রতিধ্বনিত হয় সুতীব্রভাবে। কণ্ঠনালি ছিড়ে উপচে পড়ে রক্ত,"স্পষ্ট উচ্চারণ 'বাঙলা'," সৃষ্টির আদি স্পন্দনের ন্যায় অণুরণিত হয়ে বাংলাদেশের প্রতীকী স্বাধীনতার অঘোষিত বার্তা ছড়িয়ে দেয় দিগ্বিদিক । আচ্ছন্ন করে তুলে।বাক্যের ক্ষিধে আর অতৃপ্তির আড়ালে হারমোনিয়ামে অস্পষ্ট সুরে যান্ত্রিক গোঁ গোঁ শব্দে ভাষার প্রকাশে তীব্র জিদ আলোড়িত হয় লেখকের মনে।নির্বাক চোখের ভাষায় অস্ফুট প্রেম খুঁজে পায়।'৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে স্লোগান-মিছিলে প্রকম্পিত শহিদ আসাদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথ।বোবা বউয়ের গোঁ গোঁ শব্দের গুনগত পরিবর্তন "বাংলাদেশ" উচ্চারণের প্রচেষ্টা হয়ে প্রতিধ্বনিত হয় সুতীব্রভাবে। কণ্ঠনালি ছিড়ে উপচে পড়ে রক্ত,"স্পষ্ট উচ্চারণ 'বাঙলা'," সৃষ্টির আদি স্পন্দনের ন্যায় অণুরণিত হয়ে বাংলাদেশের প্রতীকী স্বাধীনতার অঘোষিত বার্তা ছড়িয়ে দেয় দিগ্বিদিক ।
Was this review helpful to you?
or
এতো চমৎকার বই কম হয়
Was this review helpful to you?
or
আহমদ ছফাকে এক সাক্ষাতকারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, বাংলা- সাহিত্যে কোন উপন্যাসটিকে তিনি ক্ল্যাসিক উপন্যাস হিসাবে মনে করেন।কোন রকম ভুমিকা না করে জবাব দিয়েছিলেন, আহমদ ছফার 'ওঙ্কার'। আমিও লেখকের সাথে একমত।
Was this review helpful to you?
or
বই-ওঙ্কার লেখক-আহমদ ছফা(১৯৪৩-২০০১) প্রকার-নভেলা মূল্য-১৫০৳ প্রকাশনা-স্টুডেন্ট ওয়েজ রেটিং-৫/৫ সাহিত্যিকদের রিভিউঃ বইটি সম্পর্কে আবুল ফজল বলেছেন- " এগ্রন্থটি পাঠ করলে যে-কোন সহৃদয় পাঠকই মোহিত হবেন।স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রচন্ড আবেগ এবং অনুভূতি নিয়ে এরচাইতে উৎকৃষ্ট কিছু কোথাও লিখিত হয়েছে এমন আমার জানা নেই।" পুস্তক সম্পাদক নুরুল আনোয়ার বলেছেন- "আহমেদ ছফাকে এক সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,বাংলা-সাহিত্যে কোন উপন্যাসটিকে ক্লাসিক উপন্যাস হিসেবে মনে করেন।তিনি কোন রকম ভূমিকা না করে জবাব দিয়েছিলেন,আহমদ ছফার 'ওঙ্কার'। প্রেক্ষাপটঃ ১৯৭৫ সালে বাংলা উপন্যাসে এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন ঘটে,সেই সংযোজনই আহমেদ ছফার উপন্যাস "ওঙ্কার"।উপন্যাসের প্রেক্ষাপট গড়ে উঠেছে একটা সহজ-সরল পরিবারের পারিবারিক ঘটনার মধ্য দিয়ে,কিন্তু লেখক '৬৯ এর অভ্যুত্থানের ঘটনাবলী বিস্তৃত করে পাঠকের মনে সেই সময়ের অগ্নিবীজ ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। সারসংক্ষেপঃ উপন্যাসটি বর্ণিত হয়েছে উত্তম পুরুষের ভঙ্গিতে।নায়ক মধ্যবিত্ত-তালুকদার পরিবারের ছেলে যার বাবার সামাজিক মর্যাদা কমে গেলেও পারিবারিক জৌলুস অক্ষুন্ন রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে মামলা করার মাধ্যমে। এই পর্যায়ে মোক্তার নামের প্রতিবেশীর সাথে মামলায় জড়ালে সব হারিয়ে তালুকদার সাহেব নিঃস্ব হয়ে পড়েন এবং এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে মোক্তার নিজেই দফারফা করে তার বোবা মেয়ের বিয়ে নায়কের সাথে দিয়ে।শ্বশুড়ের ক্ষমতাবলে নায়ক বাড়ি এবং চাকুরী লাভ করে।বোনকে গান শিখানোর চেষ্টায় সে একদিন দেখে তার মুক পত্নীর গান গাওয়ার আকুতি,তাতে ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়।এতো কিছুর মধ্যে '৬৯ এর আন্দোলন বৌটিকে নাড়া দেয়।সেও যেন মিছিলে শামিল হতে চায়। উপন্যাসিকার শেষে এসে পাঠক দেখতে পায় যে,নায়ক বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া এক মিছিলে মানুষের বুক ফাটা চিৎকারকে নবজন্মের আকুতি হিসেবে তুলনা করেছে।নায়কের মনে হয় বাংলাদেশের আকাশ,বাতাস,নদী,সমুদ্র,নর-নারীর হৃদয় কাঁপছে।হঠাৎ সে শুনতে পায় তার বোবা বউ জানলা সমান লাফিয়ে 'বাঙলা' অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে উচ্চারণ করল।তার মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসা রক্ত দেখে নায়ক ভাবতে বাধ্য হয়-"কোন রক্ত বেশি লাল।শহীদ আসাদের-না আমার বোবা বউয়ের?" পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ বইটি সম্পর্কে আমার বলার কিছুই নেই,যা বলার আমার রেটিং ই বলে দিয়েছে।অল্প কথায় অনেক কিছু বলে দেওয়া কিভাবে সম্ভব তা এই উপন্যাসটি না পড়লে বুঝতাম না। তবে আমি বইয়ের কিছু বর্ণনা দিচ্ছি যা পাঠকদের আগ্রহী করে তুলবে। উপন্যাসটির উৎসর্গিত স্থানে লেখক লিখেছেন- "আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাককে অনাকাঙ্ক্ষাই যাঁর একমাত্র আকাঙ্ক্ষা।" এছাড়াও বইটিতে রোওশান জাহানের ইংরেজী অনুবাদ আছে যাতে একজন পাঠক এক মলাটে দুইটি বই পাচ্ছেন।এছাড়াও বইয়ে কয়েকজন সমালোচকের রিভিউ আছে,একটি পরিশিষ্ট আছে।যেখানে রশীদ করিম,মোহাম্মদ মাহ্ফুজউল্লাহ এবং সলিমুল্লাহ খান এর বই সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া আছে যা উপন্যাসটি সম্পর্কে পাঠককে পরিপূর্ণভাবে জানতে সাহায্য করবে। তাই পাঠকবৃন্দ আর দেরী কেন?পড়ে ফেলুন বাংলা সাহিত্যের অনবদ্য সৃষ্টি "ওঙ্কার"।