User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বই: রা ইফে ল, রোটি, আওরাত লেখক: আনোয়ার পাশা এক. মুক্তিযু দ্ধের নাম শুনলেই মাথায় প্রথমে কি আসে? আমার মাথায় কি আসে জানেন? রাইফেল, রুটি আর নারী। কোথাও মিল খুঁজে পাচ্ছেন? এদিক ওদিক না খুঁজে বইয়ের নামের দিকে তাকালেই পাবেন। নারীর কথা কেন বললাম? পুরুষেরা কি ফেলনা? পশ্চিম পাকিস্তানীদের কাছে খেলনা ছিল নারী। তারা নিজেদের মতো তাদের নিয়ে বিনোদন নিতে। তাদের হাতে শোভা পেত ম দের গেলাস কিংবা রুটি। কাঁধে থাকত রা ইফে ল। এই রাই ফে ল ই আবার ব্যবহৃত হতো নারীদের যৌ না ঙ্গে র উপর অত্যাচার চালাতে। কি হলো? শুনতে বিচ্ছিরি লাগছে? এগুলো কোনো রূপকথার গল্প না। এখানে কোনো রা ক্ষস নেই। নেই কোনো প্রাসাদ। এখানে একদা ছিল পশ্চিম পাকিস্তান আর এক ছিল পূর্ব পাকিস্তান। দুই পাকিস্তান ভাগ হয়েছিল ঠিকই কিন্তু শোষণটুকু ভাগ করা হয়নি। সেই শোষণের ইতিহাসে কালো দাগ ছিল ২৫ শে মার্চ। এই রাত হার মানাবে রূপকথাকেও। ইতিহাস কোনো রূপকথার গল্প না। ইতিহাস জীবন্ত মানুষ। যার মাঝে সমাধি পেতে থাকে খন্ড খন্ড স্মৃতি। দুই. 'রাই ফে ল, রোটি, আওরাত' সবচেয়ে বেশি পরিচিত মূক্তিযু দ্ধের প্রথম উপন্যাস হিসেবে। আমি যখন এর নাম শুনি তখষ হয়ত স্কুলে ছিলাম। বাংলা ব্ইয়ের কোনো এক কুইজে এসেছিল প্রথম মুক্তিযো দ্ধা ভিত্তিক উপন্যাস কোনটি? সেই থেকে নামটা মাথায় ছিল। ইচ্ছে ছিল একসময় পড়ার। কিন্তু পড়ার পর মনে হয়েছে এটা কি আদৌ উপন্যাস? নাকি উপন্যাসের আড়ালে পঁচিশে মার্চের উপর লেখা একটা জীবন্ত দলিল? তবে এই মাঝারি সাইজের বইটি শেষ করতে আমার সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছিল। কেন? প্রথমত লেখনীর কারণে। এতে বর্ণিত ঘটনাগুলো এতোটাই নির্মম যে পড়তে গিয়ে কয়েকবার গা গুলিয়ে এসেছে। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই। ধরুন আপনি যে বাসায় থাকেন সে বাসায় একটিমাত্র জানালা। আর আপনি যখন জানালা দিয়ে তাকাবেন তখন দেখবেন লাশের স্তূপ। সেই স্তূপের মানুষগুলো একদিন আগেও আপনার মতোই শ্বাস নিচ্ছিল। অথচ আজ তাদের শরীরের গন্ধে আপনি বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছেন না। আজকের এই চিরচেনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,টিএসসি, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট,শাহাবাগ যেখানে আপনি প্রিয়জনের হাত ধরে হাঁটছেন সেই একই স্থানে ছিল শুধু লা শ আর লা শ। রাস্তার কুকুরেরাও সেখানে ছিল না। চারদিকে র ক্তের মাখামাখি। আর আজ তার দাগ মুগে গেছে। সময় পাল্টেছে, অতীত ইতিহাস হয়েছে কিন্তু ঘটনার নির্মমতা সেভাবেই রয়ে গেছে। ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত্তি করতে পছন্দ করে। তিন. পুরো গল্পের শুরু আর শেষের ঘটনা মাত্র পাঁচদিনকে ঘিরে।২৫ শে মার্চ টু ২৯ শে মার্চ। পাঁচদিনের ঘটনায় এতো এতো কিছু বর্ণনা করা হয়েছে যে তা পাচদিন নয়, বরং পাঁচ বছরের মতো লাগছিল। শুরুতেই গল্পকথক আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন সুদীপ্ত শাহিনের সাথে। পেশায় একজন অধ্যাপক। ২৫শে মার্চের আগে পর্যন্ত তার বাসভবন ছিল নীলক্ষেত এলাকায়। এরপর? এরপর নিয়ে প্রাণ আরপরিবার নিয়ে ছুটে বেরিয়েছেন এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি। মাথার উপর ছাদ নেই এমন একটা জীবন ভাবা যায়? প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছে কমিউনিস্টদের নিকট। তৎকালীন ঢাকার অবস্থা তুলে ধরেছেন। ইয়াহিয়া আর টিক্কার নির্দেশে চালানো গণহ ত্যা র সেই রাত; লাখ লাখ নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষ। তারা কি জানত এই ঘুম থেকে তারা আর কখনো জাগতে পারবে না? বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ সে রাতে মা রা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খালেক, গোবিন্দচন্দ্র, গুহঠাকুর, মনিরুজ্জামান এর কি দোষ ছিল বলুন তো? একেকজন শিক্ষককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় শুধু মেধাশূন্য করতে? এরপরেও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীদের ধারণা ছিল এটি কোনো অন্যায় নয়; এটি হলো জিহাদ। নির্দোষ মানুষদের প্রাণহরণ জিহাদের অংশ হিসেবে মনে করার মতো লোকগুলো শুধুই ধর্মকে ব্যবহার করেছিল অপর অংশের লোকগুলোকে দমিয়ে ফেলতে। চার. অতীত নিয়ে জানতে গিয়ে একটা প্রশ্ন সবসময় আমার মাথায় ঘুরঘুর করত। সেটা ছিল একটি দেশের দুটো ভাগ অথচ এক ভাগ অন্য ভাগের উপর শাসন চালায়, হ ত্যাযজ্ঞ চালায় কিন্তু কিভাবে? এই ব্ইতে উঠে এসেছে তার ছোট্ট একটি কারণ। ১৯৪৭ এ দেশ ভাগের পর থেকেই মুসলীম লীগ পশ্চিম পাকিস্তানকে অর্থনীতির দিক দিয়ে ফুলিয়ে তুলতে শুরু করে। এর কারণ হিসেবে লেখক বুঝাতে চেয়েছেন মুসলিমদের নামাযের কেবলা পশ্চিমকে। পাকিস্তানের মুসলীমলীগ বিশ্বাস করত পশ্চিম দিক হলো শুভ। এটিকে বানানো হয় অর্থনীতির পৃরাণকেন্দ্র। বেশিরভাগ সময়ই পূর্ব পাকিস্তান তাই পশ্চিম পাকিস্তানের কাছে ছিল খেলনার মতো। তাদের দাম নেই বললেই চলে। পশ্চিম ছিল সবদিকে এগিয়ে। তাদের মাথাব্যথা ও ছিল না পূর্বকে নিয়ে। কিন্তু কে জানত এই শান্ত দেখা নদী একদিন বিষাদের রূপ নিতে চলেছিল? সেই বিষাদের রূপ আঁকা হয়েছিল র ক্ত দিয়ে। বুকের তাজা র ক্ত। পাক সেনাদের হারাতে উঠেপরে লেগেছিল সব শ্রেনী পেশার মানুষ। গল্পে দেখানো হয়েছে নারীদের কিভাবে ভোগের পন্যের মতো চিরে চিরে শেষ করেছিল সেইসব সেনারা। আরেকদিকে দেখিয়েছেন পলিকে। নাজিম সাহেবের কাছ থেকে মাইন নিয়ে আপন বুকে বেঁধে সেনা ট্রাকের নিচে গিয়ে আত্মহুতি দিয়েছিল সেই সাহসী নারী। সেই নারী যাদের তারা অবলা ভাবত। পাঁচ. শুধুই কি গণহ ত্যা আর আত্মত্যাগের গল্প? শুধু কি অবরুদ্ধ শহরে ছুটতে থাকা মানুষগুলোর গল্প? নাকি লাশের স্তূপের...! এখানে শুধু এসব নেই। এসবের বাইরেও অনেক কিছুই ছিল। একাত্তর চলাকালীন সময়ে বাঙালির মধ্যেও ভাগ হয়ে যাওয়া দুই শ্রেনীর গল্প আছে। একদল যারা গিরগিটির মতো রঙ পাল্টে ফেলত। তাদের কাজ ছিল পশ্চিমাদের জয়গান গাওয়া। তাদের ই একজন দালাল মালেক। তেল দিয়ে ঘুরে বেড়ানো লোকটির শেষ পরিণতি অবশ্য অতি শোভ ছিল না। যাদের তিনি আপন ভাবতেন তারাই তার পরিবারকে শোষণ করেছে। প্রমাণ করেছে বাঙালি তাদের কেউ না। বাঙালি হলো আরেক জাত। কিন্তু বাঙালির সেই স্বভাব। লাথি খেলেও গোলামির দাস। মালেকের জীবন ধ্বংস হলেও তার ভাই তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার বদলে দাসত্বকেই প্রাধান্য দিয়ে চলেছিল। পুরো গল্পটা সুদীপ্তের চোখেই লেখক বলে যাননি বরং দেখিয়ে গেছেন। মনে হয়েছে টাইম মেশিনে করে ফিরে গেছি সেদিনের সময়ে। আমার সামনেই সুদীপ্ত। সে ছুটছে আমি তার পিছু পিছু ছুটছি। চারিদিকের বাতাস যেন ভারি হয়ে আসছিল। সুদীপ্ত নাম নিয়ে হয়ত অনেকের মনে হয়ত দ্বিধা কাজ করতে পারে। তৎকালীন পাকিস্তানেও নামের জন্য কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি তাকে। পাকিস্তানের অধিকাংশ মুসলিমরা তখন নাম নিয়ে ব্যস্ত। কারণ চারিদিকে বা রু দে র গন্ধ। আ গু ন লাগানোর কাজটা করতে তাদের ভালোই লাগত। মানুষের একটা বাজে স্বভাব যাকে বলে। ছয়. সুদীপ্তের সাথে এই দীর্ঘ যাত্রা শেষে আমার কি মনে হয়েছে জানেন? আনোয়ার পাশাই এই গল্পে সুদীপ্ত শাহিন। আরেক কথায় বললে দুজন একই আত্মা অথচ ভিন্ন অস্তিত্ব। তিনি শুধু রূপ বদলে উপন্যাসে নিজেকে কাল্পনিক চরিত্রের আড়ালে রেখে গেছেন। তার কলমে লিপিবদ্ধ করে গেছেন সেসময়ের বিধ্বস্ত পরিবেশকে। লেখক লেখার মাঝে আশার আলোও জাগিয়ে গিয়েছিলেন। যেখানে বার্তা হিসেবে লুকানো ছিল আওয়ামী লীগ আর কমিউনিস্ট পার্টি মিলে মুক্তিবাহিনী গঠনের। হয়ত এভাবেই কেটে যাবে আরেকটি অন্ধকার রাত। এরপর আসবে নতুন দিন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো ৭১' সালের এপ্রিল থেকে জুনমাসে লেখা একটি উপন্যাসে লেখক স্বাধীন দেশের ভবিষ্যৎ লিখে রেখেছিলেন। তবে আফসোস! লেখক সেই নতুন দিনের সাক্ষী হয়ে যেতে পারেননি। দেশ স্বাধীনের মাত্র দু'দিন আগে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরে লেখক নিজেই হয়ে যান ইতিহাসের অংশ। সুদীপ্ত এর মতো পালিয়ে বেড়াতে তিনি আর পারেননি। নতুন দিন এসেছে কিন্তু লেখকের চোখ তা দেখতে পারেনি। তবে হয়ত তিনি ভবিষ্যত দেখেছিলেন। দেখেছিলেন বলেই তো লিখে রেখে গেছেন এক অমর আশার আলো। সেই আলোতেই বেঁচে আছে হাজারো সুদীপ্ত। পার্সোনাল রেটিং: ৪/৫
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যত উপন্যাস পড়া হয়েছে তন্মধ্যে নিঃসন্দেহে এটি অন্যতম সেরা উপন্যাস। লেখক মুক্তিযুদ্ধের একেবারে চরমমুহুর্তেই বসে ওই সময় নিয়েই ঘটনা সাজিয়েছেন। উপন্যাসের নায়ক সুদীপ্ত শাহীনই যেন বাংলাদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার গণহত্যার বিবরণ, ভুতুড়ে ঢাকায় প্রিয়জনদের তালাশ, গ্রামান্তরে পালিয়ে থাকা, মুক্তিযুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে তর্ক শুধু সাহিত্য নয়, ইতিহাসেরও অমূল্য উপাদান। এই কাহিনি শত্রুকবলিত বাংলাদেশের অবরুদ্ধ জীবনের। যে বাংলাদেশ বিপন্ন ও ভীত কিন্তু আশাহীন নয়, সেই বাংলাদেশ কথা বলেছে তাঁর কলমে। কখন বলেছে? যখন সেই বাংলাদেশ গণহত্যার শিকার, যখন সেই বাংলাদেশ ধর্ষিত, যখন সেই বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামী। তাই রাইফেল রোটি আওরাত লেখাটাও একটা যুদ্ধ। মৃত্যুর গ্রাসের মধ্যে বসে মৃত্যুকে রোখার বিবরণ। তুলনা যদি করতেই হয়, তাহলে ইলিয়া এরেনবুর্গের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের কাহিনি নিয়ে ফল অব প্যারিস কিংবা স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ নিয়ে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের লেখা ফর হোম দ্য বেল টোলস-এর কথা বলতে হয়। মূল কাহিনিতে আসা যাক। যখন আমার জহু হল (তৎকালীন ইকবাল হল), নীলক্ষেত , কলা ভবন, টিএসসি, শাহবাগ, এদিকে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ইলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেটের ফুটপাত সব পরিচিত জায়গাগুলোর কথা একের পর এক উঠে আসছিলো তখন মনে হয়েছিলো যেনো নিজ চোখের সামনে সব দেখছি। সুদীপ্ত শাহীন যখন কোয়ার্টার থেকে জানলা দিয়ে ইকবাল হলে লাশের দিকে তাকাচ্ছিলো তখন মনে হচ্ছিল যেন লাশের আশেপাশে কোথাও দাড়িয়ে আছি হয় তো। তৎকালীন প্রথিতযশা ব্যাক্তিবর্গ যেমন প্রফেসর জি.সি. দেব, ডঃ গুহঠাকুরতা, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরি, মধু দা দের আলোচনা পাঠককে ওই সময়ে নিয়ে যায়। এখানে দেশ মাতৃকার দামাল সন্তান ফিরোজের প্রসঙ্গ যেমন এসেছে তেমন এসেছে খালেক, মালেকের মতো সুবিধাবাদীদের প্রসঙ্গও। একে একে অন্যান্য চরিত্রগুলোর বর্ণনা করতে গেলে লিখা আর ফুরাবে না। এই বুঝি জান টা গেলো, এই ভয়ে কাতরাতে থাকা কয়েকটা পরিবারের তুমুল আতঙ্কের কয়েক দিন যেনো কয়েক বছর হয়ে গেঁথে গিয়েছে পাঠকের মনে। সেই সাথে সাক্ষাৎ হবে অসীম মনোবল ও সাহসের। বুকে মাইন বেঁধে পাক বাহিনীর ট্রাকের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়া সেই পলি ভাবীর আত্মত্যাগ হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। আবার পরিবার হারা আমনের সাথে পাক বাহিনীর দ্বান্দ্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াও পাঠকের বিবেককে নাড়া দিয়ে যায়।
Was this review helpful to you?
or
বইটা অনেকদিন আগে পড়েছিলাম, আবার পড়ে ভাল লাগছে। উপন্যাসটি আমার কাছে ভাল লেগেছে।
Was this review helpful to you?
or
রকমারি বইপোকা রিভিউ প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ রাইফেল রোটি আওরাত লেখকঃ আনোয়ার পাশা প্রকাশনীঃ স্টুডেন্ট ওয়েজ মুদ্রিত মূল্যঃ ২৫০ টাকা " হাত যেখানে সেখানে দেওয়া যায় নাকি! হাত দেওয়া যায় রোটি ও রাইফেলে৷ আর আওরাতের (মেয়ে) গায়ে৷ দুনিয়ার সেরা চিজ আওরাত, আওর রাইফেল। রোটি খেয়ে গায়ের তাকাত বাড়াও, আর রাইফেল ধরে প্রতিপক্ষকে খতম কর, তারপর আওরাত নিয়ে ফূর্তি কর৷ ব্যাহ, এ্যাহি জিন্দেগী হ্যায়৷ " এই কয়েকটি লাইন দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে পাকিস্তানীদের বর্বরতার চিত্র। সুদীপ্ত শাহীন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক৷ ২৫ শে মার্চ নারকীয় হত্যাকান্ডের পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক কোয়ার্টারে থাকার সাহস পাননি আর৷ চলে আসেন বন্ধু ফিরোজের বাড়ীতে৷ ফিরোজ আওয়ামীলীগের কর্মী ও বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ঠ। তাই তার বাসায় থাকাটা ও নিরাপদ ছিল না৷ ফিরোজ ও সুদীপ্ত গাড়ীতে করে ঘুরে বেড়ান পুরো পরিবারের নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে৷ এরই মধ্যে ধীরে ধীরে উঠে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল, ইকবাল হল সহ বিভিন্ন হলে নারকীয় হত্যাকান্ডের কাহিনী, পাকিস্তানি বাহিনীর লুটপাটের কাহিনী৷ হত্যাকান্ড, লুটপাটে শুধুই কি সীমাবদ্ধ ছিল তারা? আওরাতের(নারী) সাথে কি ব্যবহার করেছিল তারা? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রথম উপন্যাস "রাইফেল রোটি আওরাত "৷ এই উপন্যাসের লিখক আনোয়ার পাশাকে পরবর্তীতে ১৪ ডিসেম্বর হত্যা করা হয়৷ রাজনৈতিক প্রভাব উর্ধ্বে রেখে ইতিহাস লেখনীতে এই বইটি একটি অসামন্য দলিল বলা যায় হ্যাপি রিডিং.....
Was this review helpful to you?
or
সেরা। লেখকের সেরা বই। খুব ভালো লেগেছে।
Was this review helpful to you?
or
রাত জেগে বই পড়ে শেষ করার মধ্যে যে শান্তি থাকে, আনোয়ার পাশার 'রাইফেল, রোটি, আওরাত' পড়ে ঠিক সেরকম কোন অনুভূতি হচ্ছেনা। বরং মনে হচ্ছে এতো তাড়াতাড়ি শেষ না হলেও বোধয় পারতো। সমস্ত রকম নিষ্ঠুরতা, বর্বরতার প্রতি মানুষের একরকম কুৎসিত আগ্রহ থাকে জানার।অসহ্যরকমের ভয়াবহতা কেও মানুষ প্রবল আগ্রহ নিয়ে মোহগ্রস্ত হয়ে দেখতে চায়। বইয়ের প্রতিতা পৃষ্ঠা জুড়ে পাকিস্তানি সৈনিকদের কাফের নিধনের নামে বাঙালি হত্যার বর্ণনা সেই অপ্রীতিকর মোহ নিয়ে পড়েছি। আশ্চর্য হতে হয় এই ভেবে মৃত্যুপুরীতে বসে কতটা ধীরচিত্তের হলে চোখে দেখা বর্বরতা শব্দের নৈপুন্যে এভাবে তুলে ধরা যায়। সমস্ত বই জুড়ে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে জুন মাসের কাহিনি আবর্তিত হলেও বাড়বাড় ২৬শে মার্চের প্রথম আঘাতের কথাই উঠে এসেছে প্রতিটা ঘটনা বর্ণনার ফ্ল্যাশব্যাকে।ঘুমন্ত নিষ্পাপ শিশু থেকে কোরআন পাঠরত বৃদ্ধা - কেউই যখন অতর্কিত বেয়োনেট চার্জের এর সামনে থেকে রেহাই পায় না তখন তার প্রভাব মনকে কতটা বিহ্বল করে তা প্রতিটা পৃষ্ঠায় ধরা পড়ে। এক একদিন করে বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তা নিয়ে লেখক কিভাবে একটি গুছানো কাহিনির অন্তরালে পরবর্তীতে অবিশ্বাস্য বর্তমানকে বেঁধে ফেলার যে দুঃসাহস দেখিয়েছেন এবং তাতে সফল হয়েছেন তা ভেবে আপনি সম্মানে মাথা নুইয়ে আসে। এই বই মুক্তিযুদ্ধের দলিল হিসাবে সংরক্ষিত হবার যোগ্য দাবিদার।
Was this review helpful to you?
or
রাইফেল রোটি আওরাত একাত্তরের আনা ফ্রাংকের দিনলিপি। লেখক ২৫ মার্চের কালরাত পেরোতে পারলেও ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাযজ্ঞ পেরোতে পারেননি। ইতিহাস বা নিয়তি যা-ই বলি, তা তাঁকে আরও কিছুকাল বাঁচিয়ে রেখেছিল হয়তো তাঁকে দিয়ে একাত্তরের অমর উপাখ্যান লিখিয়ে নেবে বলেই। এ উপন্যাসের শক্তি কেবল শিল্পমানে নয়, এর সত্যদর্শনেও। হাজার বছর পরও কেউ একাত্তরের বাংলাকে ঠিকই এই উপন্যাসের আলোয় চিনে নিতে পারবে। স্বাদ পাবে বাংলাদেশের জন্মমুহূর্তের যন্ত্রণা মেশানো উদ্বেল আশার। রাইফেল রোটি আওরাত-এর শেষ কথাগুলো আজও স্বপ্ন আমাদের, ‘নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভা। সে আর কত দূর। বেশি দূর হতে পারে না। মাত্র এই রাতটুকু তো। মা ভৈঃ। কেটে যাবে।’
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বলতম অধ্যায় হচ্ছে ৭১’ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম। সমগ্র বাঙালি জাতির একতাবদ্ধ সংগ্রাম আমাদের গৌরব ও প্রেরণার উৎস। সে সময়কে কেন্দ্র করে সেই উত্তাল সময়ের মধ্যে বসে লেখা একমাত্র উপন্যাস আনোয়ার পাশার "রাইফেল রোটি আওরাত।" এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে লেখক মৃত্যুর মাঝখানে দাড়িয়ে এই উপন্যাস রচনা করেছেন। লিখেছেন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এক ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে। একজন বাঙালি পাঠক হিসেবে এই বই অবশ্য পাঠ্য একটি বই। আর এই বইয়ের ভাষাশৈলী, সাহিত্যিক গুণ যেকোন পাঠককে ধরে রাখবে বইটি শেষ পর্যন্ত পড়ে যাওয়ার জন্য। কি নির্লিপ্তভাবে লেখক সেই উত্তাল সংগ্রামমুখর দিনগুলোতে বসে রচনা গেছেন এই অনন্য ঐতিহাসিক দলিল।
Was this review helpful to you?
or
কটি জাতির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের রক্তাক্ত অধ্যায়ের মধ্যে বসে চিত্ত স্থির রেখে ভবিষ্যতের জন্য লিখে যাওয়া এক অতিমানুষিক চেষ্টা। আনোয়ার পাশা সেটাই করেছেন। আজ যদি আমরা জানতে চাই, ওই ভয়াবহ দুর্যোগে কীভাবে বেঁচে ছিল জাতির আত্মা, কীভাবে অজস্র মৃত্যু পেরিয়ে বিজয়ের পাড়ে পৌঁছানোর জেদ দানা বেঁধেছিল, তাহলে রাইফেল রোটি আওরাত-এর থেকে বেশি আর কে তা জানাবে? এ কেবল লাঞ্ছিত বাংলার হাহাকার নয়, তার রুখে দাঁড়ানোরও দলিল। এপ্রিলেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন স্বাধীনতা আসন্ন। চিরকালই নায়কেরা ধ্বংসের মুখে আশার বার্তা দিয়ে যান। এ উপন্যাসের শক্তি কেবল শিল্পমানে নয়, এর সত্যদর্শনেও। হাজার বছর পরও কেউ একাত্তরের বাংলাকে ঠিকই এই উপন্যাসের আলোয় চিনে নিতে পারবে। স্বাদ পাবে বাংলাদেশের জন্মমুহূর্তের যন্ত্রণা মেশানো উদ্বেল আশার। রাইফেল রোটি আওরাত-এর শেষ কথাগুলো আজও স্বপ্ন আমাদের, ‘নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভা। সে আর কত দূর। বেশি দূর হতে পারে না। মাত্র এই রাতটুকু তো। মা ভৈঃ। কেটে যাবে।’
Was this review helpful to you?
or
আমার মতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা শ্রেষ্ঠ উপন্যাস এইটা. কিন্তু হতাশার কথা হল, লেখক নিজেই স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে পারেননি. ৭১ এর এপ্রিল থেকে জুন এর মধ্যে নিজের নোট বুক এ লিখেছিলেন তিনি এই উপন্যাস, শেষ করেছিলেন একটি স্বাধীন দেশের গল্প বলে কিন্তু উনি কিভাবে জানতেন যে দেশ স্বাধীন হবে একদিন?
Was this review helpful to you?
or
I didn’t like the plot , looks repititive
Was this review helpful to you?
or
A must read novel.
Was this review helpful to you?
or
ভালো
Was this review helpful to you?
or
কাহিনীর চেয়ে অনুভূতিগুলি খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।
Was this review helpful to you?
or
Good !
Was this review helpful to you?
or
চমৎকার বই। মুক্তিযুদ্ধের উপর অনেক লেখা আছে কিন্তু ২৫ মার্চ পরবর্তী এক সপ্তাহে ঢাকায় কি ঘটেছিল সেটা নিয়ে এই বইয়ের মত আর কিছু পড়িনি। অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছেন ২৫ মার্চে কত মানুষ মারা গিয়েছুল? কতোটা অত্যাচার করেছিল পাকিস্তানিরা-তাদের জন্য প্রকৃত উত্তর আছে এই বইয়ে। একেবারে ব্যতিক্রমী এক বই, না, গতানুগতিক ধারার ব্যতিক্রম ন্য-আসলেই অঅন্যরকম এক বই।
Was this review helpful to you?
or
Joss
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটি বই। মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতা খুব নান্দনিক অর্থে ফুটে উঠেছে। আনোয়ার পাশার এ যেন এক দলিল আমানত হিসেবে রেখে গেছেন আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে। ধন্যবাদ রকমারি।
Was this review helpful to you?
or
আবেগ তাড়িত হয়ে পড়লাম।বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের বই।
Was this review helpful to you?
or
আনোয়ার পাশা রচিত 'রাইফেল রোটি আওরাত' মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে লেখা বাংলা সাহিত্যের একমাত্র উপন্যাস। আনোয়ার পাশা একজন শহীদ বুদ্ধিজীবী । উপন্যাসটি ২৫ শে মার্চের অন্ধকার রাত্রে একটি চরিত্র সুদীপ্তো শাহিনের বর্ণনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল এবং সেখানে পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে একটি জাতির জ্বলন্ত চেহারা দেখে উপন্যাসটি স্বাধীনতার আশা প্রকাশ করে শেষ হয়েছিল কারণ লেখক এটি বুঝতে পেরেছিলেন ।
Was this review helpful to you?
or
কি আশ্চর্য! কালের সাক্ষী এই বইটা সম্পর্কে কয়েক মাস আগ পর্যন্ত কোন ধারণাই ছিল না। "রাইফেল, রোটি, আওরাত"- নামটা কতবার মুখস্ত করেছি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম উপন্যাস হিসেবে, আবার ভুলেও গেছি। আফসোস, এর সাহিত্যগত ও ঐতিহাসিক মূল্য বুঝতে এত দেরি হয়ে গেল। হুমায়ুন আহমেদ কি 'জোছনা ও জননীর গল্প' তে বলেছিলেন?, যে-'মুক্তিযুদ্ধের সময়টা ছিল সুররিয়েল একটা সময়'। সেই সুররিয়েল সময়টাতে বসেই কত সাবলীলভাবে লিখে গেছেন আনোয়ার পাশা। শব্দের গাঁথুনিতে বেঁধে ফেলেছেন সময়টার কিছু মুহূর্তকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন আনোয়ার পাশা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে রচনা করেন এই বইটি। পঁচিশে মার্চ আর তার পরবর্তী কিছুদিন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কাপুরুষোচিত রণনীতির উপাখ্যান তিনি বর্ণনা করেছেন আপাত কেন্দ্রীয় চরিত্র, ইংরেজী অধ্যাপক সুদীপ্ত শাহিনের অভিজ্ঞতা আর ভাবনার মধ্য দিয়ে। সাথে এসেছে যুদ্ধ পূর্ববর্তী পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের স্বরূপ, পঁচিশে মার্চের কালরাতের ভয়াবহতা, নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙ্গালীর উপর পাকবাহিনীর রাইফেল নিয়ে কাপুরুষের মত ঝাঁপিয়ে পড়া, তীব্র অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার কথা। এটা কি শুধুই উপন্যাস? এতটা নৃশংসতার কথাও কি কল্পনায় পাওয়া যায়? উপন্যাস শেষ করেছেন লেখক আশার বাক্য শুনিয়ে। "নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভাত। সে আর কতো দূরে। বেশি দূরে হতে পারে না। মাত্র এই রাতটুকু তো! মা ভৈঃ! কেটে যাবে।” (মা ভৈঃ অর্থও 'ভয় কোরোনা')। অথচ লেখক নিজেই দেখে যেতে পারেননি, তাঁর স্বপ্ন সত্যি হয়েছিল। প্রিয় দেশমাতা তাঁর শহীদ হবার (১৪ ডিসেম্বর) দুদিন পরই মুক্তি পেয়েছিল বর্বরদের কালো থাবা থেকে। ধন্যবাদ লেখককে বইটার জন্য। সৃষ্টিকর্তার কাছে ওপারে তিনি ও তাঁরা (নিরপরাধ আরো যে মানুষগুলো প্রাণ হারিয়েছিলেন) অবশ্যই ভালো আছেন। মুক্তিযুদ্ধ এর সময়টা, তার পটভূমি ও তৎকালীন রাজনীতি নিয়ে আগে থেকে জেনে থাকলে বইটা পড়ে ধারণা আরো স্পষ্ট হবে। অবশ্য অবশ্য পাঠ্য এটি। প্রত্যেক বাঙালির জন্য, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য।
Was this review helpful to you?
or
বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বলতম অধ্যায় হচ্ছে দেশের জন্য ৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম। সমগ্র বাঙালি জাতির একতাবদ্ধ সংগ্রাম আমাদের গৌরব ও প্রেরণার উৎস। সে সময়কে কেন্দ্র করে সেই উত্তাল সময়ের মধ্যে বসে লেখা একমাত্র উপন্যাস আনোয়ার পাশার "রাইফেল রোটি আওরাত।" এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে লেখক মৃত্যুর মাঝখানে দাড়িয়ে এই উপন্যাস রচনা করেছেন। লিখেছেন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এক ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে।একজন বাঙালি পাঠক হিসেবে এই বই অবশ্য পাঠ্য একটি বই। আর এই বইয়ের ভাষাশৈলী, সাহিত্যিক গুণ যেকোন পাঠককে ধরে রাখবে বইটি শেষ পর্যন্ত পড়ে যাওয়ার জন্য। কি নির্লিপ্তভাবে লেখক সেই উত্তাল সংগ্রামমুখর দিনগুলোতে বসে রচনা গেছেন এই অনন্য ঐতিহাসিক দলিল।
Was this review helpful to you?
or
#book_review বইয়ের নাম: রাইফেল, রোটি, আওরাত লেখক:আনোয়ার পাশা আনোয়ার পাশার 'রাইফেল, রোটি, আওরাত" বইটি ৪ বছর ধরে আমার টেবিলে পড়ে ছিল।বইটি না পড়ার জন্য এখন আফসোস করতেই হচ্ছে।সে কথা আপাতত থাক। বইটি পড়ে আমার ভাবতেই হচ্ছে আনোয়ার পাশা একজন পাষাণ হৃদয়ের মানুষ ছিলেন।নতুবা তিনি এত হৃদয়বিদারক কাহিনী লিখতে পারতেন না। কারণ তখন চোখ দিয়ে জল বের হওয়ার কথা, কলম দিয়ে কালি নয়। উনি তো লেখক ছিলেন হয়তো চোখের জল কলমের কালি হয়ে বের হয়েছিল।তাইতো সেই কলমের কালি আমার চোখের জল হয়ে ঝরেছে। চোখের জলে লেখা না থাকলে এমনটা হওয়ার কথা না। এই কাজটাই আবার সবার ক্ষেত্রে সম্ভব হয়নি যেমনটা উনার উপন্যাসের শিল্পী আবদুল্লাহ মনসুর পারেন নি।২৫মার্চ কালোরাত্রির আগে তিনি ছবি এঁকে পাকিস্তানের শাসন-শোষণের অনেক প্রতিবাদ করেছিলেন।কিন্তু তার ছেলেমেয়ের লাশ দেখে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন।পরে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর তিনি পাকিস্তানি মিলিটারিকে ইট দিয়ে মারতে গিয়ে জীবন হারিয়েছিলেন। পাকিস্তানি মিলিটারিরা যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল তার হয়তো ছবি আঁকা যায় না।বর্ণ দিয়ে লিখলে ধ্বংসযজ্ঞ একটু হলেও আড়াল হয়, অন্তঃত চিত্রলিপির মত সরাসরি চোখে এসে আঘাত হানে না।তাই হয়তো আনোয়ার পাশা পেরেছিলেন কিন্তু শিল্পী আবদুল্লাহ মনসুর পারেন নি। আনোয়ার পাশা নিম্নোক্ত লাইনগুলো দিয়ে উপন্যাস শেষ করেছেন, "নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভাত।সে আর কতদূরে।বেশি দূরে হ'তে পারে না। মাত্র এই রাতটুকুতো! মা ভৈঃ।কেটে যাবে।" স্বাধীনতার জন্য কত আকুতি ও স্বাধীনতার প্রতি কত বিশ্বাস নিয়ে তিনি উপন্যাস শেষ করেছেন তা এই লাইনগুলো দেখলেই বুঝা হয়।কিন্তু হায়!উনার জন্য রাতটুকু কাটে নি।স্বাধীনতার শুভলগ্নের মাত্র দুই দিন আগে উনার নামের সাথে শহীদ শব্দ যুক্ত করতে হয়েছিল।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়েই লিখেছিলেন সেই সময়কার কথা। কথাসাহিত্যের ছলে তাতে সত্যের সবটাই আছে৷ আছে পাকিস্তানি বাহিনির অত্যাচার, সাথে ঢাকার ছবি, পাবেন শত্রুর সাথে হাত মেলানো এদেশীয় ঘৃণ্য পশু। আর এই বইয়ে পাকবাহিনির বলদামি বিষয়ক বিখ্যাত একটি চুটকি তো এখনো লোকের মুখে মুখে ফেরে। ১৪ ডিসেম্বর হারিয়ে গেছেন জাতির সূর্যসন্তান আনোয়ার পাশা। কিন্তু এই উপন্যাসের মাধ্যমে হয়েছেন চিরস্মরণীয়।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মানুষের আবেগ অনুভূতি ভয়াবহতা নিয়ে যদি কখনাে কারও মনে সন্দেহ জাগে যে এ সবই। যুদ্ধের পরে বানিয়ে বাড়িয়ে লেখা, তবে যেন ফিরে এসে এ বইখানা আবার পড়ে। স্বাধীন দেশ এর স্বাধীনতা এই লেখকের চিন্তাভাবনা প্রভাবিত করার ফুরসত পায়নি। দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি, ১৯৭১ এ যেসব উপসর্গ গুলােকে লেখক চিহ্নিত করেছেন বিবেকহীনভাবে ২৫শে মার্চের গণহত্যাকে সমর্থন করে, তার অনেকগুলােই এই। ৪৪ বছর বাদেও প্রায় একই রকম।সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান বা পুনরুজ্জীবিত। সামনে কি দিন আসছে ভেবে তাই শংকিত হই। তবে এও সত্য যে এই কাহিনী পড়ে কর্তব্য পরিষ্কার হয়ে যায়, যদি নিজেকে সভ্য মানুষ ভাবতে চাও তবে শত্রু কে চিনতে শিখতে হবে, তার থেকে ভালােমানুষি বা স্রেফ মনুষ্যত্বও আশা কোর না। যুক্তি, নীতিবােধ কোন কিছুইরই ধার ধারে না এরা। ভদ্র ব্যবহার করতে গেলে স্রেফ মারা পড়তে হবে। তবে এই ইংগিত গুলাের সূক্ষ্ম কৌতুক গুলাে, ভালাে লেগেছে।
Was this review helpful to you?
or
" রাইফেল রোটি আওরাত - আনোয়ার পাশা " সময়টা ১৯৭১ সাল! যখন মৃত্যু একটি স্বাভাবিক ঘটনা, বেঁচে থাকাটা বিশাল একটা খবর। সেই মৃত্যুর মিছিলের সময় লাশের উপর দাঁড়িয়ে যে সাহিত্য কর্মের সৃষ্টি হয় তার নাম রাইফেল রোটি আওরাত। ইতিহাস এবং উপন্যাসের বিভাজনকে ভেঙে দুইয়ের সমান্তরালে আদর্শ এক শিল্প কথা সাহিত্যিক আনোয়ার পাশার এই রচনাটি। উপন্যাস এবং ইতিহাসের গাণিতিক প্রভেদকে ভেঙে ইতিহাসের বর্ণনা সাহিত্য ঢং এ লেখা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় লেখা প্রথম উপন্যাস এটি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পাঠ করতে হলে রাইফেল রোটি আওরাতকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার জন্য, মুক্তিযুদ্ধকে অন্তরে ধারণ করার জন্য অবস্যই পাঠ্য রাইফেল রোটি আওরাত। কারণ বইটি মুক্তিযু্দ্ধের সময় লেখকের নিজের চোখে দেখা ঘটনার বর্ণনায় লেখা বই এটি। যে বইয়ে ইতিহাসকে লিখতে গিয়ে নিজের নামকে সেই ইতিহাসের পাতায় লেখান লেখক। হ্যা ইনি শহীদ বুদ্ধিজীবী আনোয়ার পাশা। লেখক নিজেই গল্পের নায়ক যিনি কথক সুদীপ্ত শাহিন নামে উপন্যাসে আবির্ভূত হন। যিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সাধারণ ভাবেই বইয়ে উঠে এসেছে মার্চ-এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘটে যাওয়া পাক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের নিখুঁত বর্ণনা। মধুদাকে কেন মরতে হয়েছিলো, অমুক শিক্ষককে কিভাবে হত্যা করা হয়, তমুক শিক্ষক পাক বাহিনীর হাত থেকে কিভাবে বেঁচে যায়, শিক্ষকদের গ্রুপিং, গাঁধা ছাত্রের সংগ্রাম গাঁথা সহ আরো কত শত সত্য ইতিহাস বইয়ের বর্ণনায় আছে। এই সব সত্য ইতিহাস জানতে হলে অবস্যই বইটি পড়তে হবে। লেখক ইতিহাসের একঘেয়েমি দূর করেছেন উপন্যাসের লেখন শৈলি দিয়ে। ইতিহাসকে ধারণ করেছেন ঔপন্যাসিকের দৃষ্টি দিয়ে, ইতিহাসের লেখনী দিয়ে নয়। তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা তুলে ধরেছেন কাহিনী বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে। মানুষের প্রাণ বাঁচার প্রচেষ্টা আর আকুতি পাঠকের দৃষ্টিকে ঝাপসা করে দেয়। কারণ উপন্যাসের বর্ণনায় পাঠক মনে উপলদ্ধী হয় এই সব ঘটনা, যেন চোখে দেখতে পাওয়া যায়। এখানে এমন কিছু বর্ণনা আছে যা মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগের আবেদনকে পাঠকের কাছে আরও মানবীয় করে তোলে। অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া এক অবোধ শিশুর কথা আছে যে কিনা রাস্তায় গাছের গুঁড়ির আড়ালে পড়ে থাকা তার মৃত মায়ের স্তন চুষে চলেছে। দালানের ছাঁদ থেকে চুল ধরে টেনে হিঁচড়ে আনা রমণীর কথা আছে, শেষ পর্যন্ত যাঁর মাথা থেকে একগোছা চুল খুলিসহ উঠে আসে। নিথর পড়ে থাকা রিকশাওয়ালার কথা আছে। উপন্যাস হয়েও এগুলো সত্য ইতিহাস। উপন্যাস হিসাবে বইটি যতটা গুরুত্বপূর্ণ তার থেকেও ইতিহাস হিসাবে এই বইয়ের মূল্য অারো অধিক। ইতিহাসকে উপন্যাসের ঢং এ লেখা এই বইটি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঘটনা জানতে চাওয়া পাঠকদের মনের ক্ষুদা অবশ্যই নিবারণ করবে। অার যার রেশ থেকে যাবে বহুক্ষণ। বই: রাইফেল রোটি আওরাত লেখক: আনোয়ার পাশা প্রকাশনী: স্টুডেন্ট ওয়েজ মূল্য: দুইশত পঞ্চাশ টাকা।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_পাঠক_সমাগম_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা মাসঃ জুলাই সপ্তাহঃ তৃতীয় সপ্তাহ (২১-২৬ জুলাই) পর্বঃ১ বইঃ- রাইফেল রোটি আওরাত লেখকঃ- আনোয়ার পাশা প্রচ্ছদ ও অলংকরণঃ-কাইয়ুম চৌধুরী পৃষ্ঠাঃ-১৮০ মুদ্রিত মূল্যঃ- ২৫০ প্রকাশনীঃ- স্টুডেন্ট ওয়েজ প্রথম মুদ্রণঃ- ১৯৭৩ ------------ লেখক এবং বইটি সম্পর্কে কিছু কথা:- শহীদ আনোয়ার পাশা ১৩৩৫ সালে ২রা বৈশাখ (১৫ এপ্রিল ১৯২৮) মুর্শিদাবাদ জেলার কাজী শাহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২ মার্চ তিনি পাবনা জেলার এডওয়ার্ড কলেজে বাংলার অধ্যাপক নিযুক্ত হন। পরে ১৯৬৬ সালের ১ নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন এবং শহীদ হওয়ার আগ পর্যন্ত ঐ বিভাগেই অধ্যাপনা করে গেছেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তিনি আল-বদর বাহিনী কর্তৃক অপহৃত ও নিহত হন। এই উপন্যাসটি লেখক আনোয়ার পাশা'র(১৯২৮-৭১) শেষ লেখা গ্রন্থ। উপন্যাসটি মূলত ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই তিন মাসের মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যার পটভূমিতে লেখা। উপন্যাসটির রচনাকাল ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাস। উপন্যাসের পুরোটা জুড়ে তিনি উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলোকে সম্মানসূচক সম্বোধনে লিখে গেছেন। রাইফেল রোটি আওরাত এর প্রথম লাইন হচ্ছে, "বাংলাদেশে নামলো ভোর।" তিনি ভোর দিয়ে উপন্যাস শুরু করেছেন এবং রাত দিয়ে উপন্যাসের সমাপ্তি করেছেন। #কাহিনী_সংক্ষেপ:- উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম সুদীপ্ত শাহিন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের একজন অধ্যাপক। ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের পর পূর্ববাংলায় চলে আসেন সুদীপ্ত শাহিন। কিন্তু এখানে এসে "সুদীপ্ত" নামের জন্য তাকে অনেক ভোগান্তিতে পরতে হয়। একপর্যায়ে এফিডেভিট করে পছন্দের নামটি পরিবর্তন করে চাকরী নিতে হয়। স্ত্রী, এক পুত্র এবং দুই কন্যা নিয়ে তাঁর সংসার। পঁচিশে মার্চ রাতে যখন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীরা ঘুমন্ত বাঙালিদের উপরে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় তখন সুদীপ্ত শাহিনের বাড়িতেও আক্রমণ হয়েছিল কিন্তু আশ্চর্যভাবে সুদীপ্ত শাহিন এবং তার পরিবারের সবাই বেঁচে যায়। এই বাঁচাকে বাঁচা বলে না। সারাক্ষণ একটা আতঙ্কের মধ্যে থেকে বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাওয়া। দুটো দিন এবং দুটো রাত খাটের তলাতেই কোনমতে লুকিয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে না খেয়ে কাটিয়ে দেন তিনি তারপর বন্ধুর বাসায় চলে যান কোন এক ফাঁকে। কিন্তু বন্ধুর বাসায় গিয়েও খুব একটা সৌভাগ্য হয় না, কোন এক অনুচর খবর পাঠায় যে এখনই এই বাড়িতে আক্রমণ হবে। তাই বন্ধুর বাড়ি থেকে আবার তাদের ছুটতে হয় নতুন আশ্রয়ের আশায়। তারপরে সুদীপ্ত শাহিন এবং তার বন্ধু ফিরোজ তাদের দুই পরিবার নিয়ে ফিরোজের দূরসম্পর্কের এক চাচার বাড়িতে আশ্রয়ের জন্য যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন তার চাচা স্বয়ং রাজাকার। তারা প্রাণ হাতে নিয়ে কোনোমতে ওখান থেকে কৌশলে চলে আসে। তারপর আবার শুরু হয় নতুন আশ্রয়ের খোঁজ। এরকমভাবে উপন্যাসের কাহিনী বর্ণনা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর এবং গ্রামের বর্ণনা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সর্বশেষে এক অনিশ্চয়তার মাঝে সমাপ্তি হয়েছে উপন্যাসটির। #নামকরণঃ বইটার পুরোটা জুড়ে তিনি পাক-বাহীনির নৃশংসতা দেখিয়েছেন, এমনকি উপন্যাসের নামকরণের পিছনেও এই ব্যাপারটা কাজ করেছে। তিনি রাইফেল রোটি আওরাত বইয়ের নামে প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীদের চরিত্র- “রোটি খেয়ে গায়ের তাকত বাড়াও, রাইফেল ধ’রে প্রতিপক্ষকে খতম কর, তারপর আওরাত নিয়ে ফুর্তি কর।” #পাঠ_প্রতিক্রিয়া:- বইটা পড়ার সময় এই আমি খুবই উৎকন্ঠিত ছিলাম। অবচেতন মনে সারাক্ষণ একটা উৎকণ্ঠা, একটা উত্তেজনা, একটা ভয়ের মধ্যে কেটেছে। মনে হয়েছে যে, আমি যেন চরিত্রগুলোর পাশাপাশি অতীতে ফিরে গেছি! যুদ্ধবিধ্বস্ত রাস্তা, দোকান-পাট, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। গুলি করে মারছে হাজার হাজার মানুষ, নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে, বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যে মেরে রাস্তায় ফেলে রাখা হচ্ছে। আমি যেন সেই অতীতে ফিরে গিয়ে উপন্যাসের চরিত্রগুলোর সাথে রাস্তায় রাস্তায় হাটছি আর ধ্বংসযজ্ঞ দেখছি। মনে হচ্ছে আমি নিজে ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে দিয়ে হাঁটছি আর চারদিকে সন্ত্রস্ত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছি, এই বুঝি হানাদারবাহিনী কুকুরের মত ঝাপিয়ে পড়ে আমাদের উপর। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে লেখা অসাধারণ একটা বই। এটা যেন উপন্যাস নয় এটা আসলে মৃত্যুর মধ্যে বসে মৃত্যুকে আঁকা। একটি কথা আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে রাইফেল রোটি আওরাত হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা প্রথম উপন্যাস। উপন্যাসটি লেখকের জীবনের শেষ লেখা। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে যখন পাকিস্তান সৈন্যরা বুঝতে পারলো যে আর বেশিদিন এদেশে টেকা সম্ভব হবে না, যুদ্ধের সময় শেষ হয়ে আসছে, তখন তারা সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক অর্থাৎ জাতির মাথা গুলোকে ছেটে দিতে শুরু করলো। সে উদ্দেশ্যে ১৪-ই ডিসেম্বর কিছু সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে এবং নির্বিচারে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে আমাদের উপন্যাসের রচয়িতা আনোয়ার পাশা ও একজন ছিলেন। পরে তার ক্ষতবিক্ষত দেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাই আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে যারা উপন্যাসটি পড়েননি তারা অতি শীঘ্রই উপন্যাসটি পড়ে ফেলুন। আমার ধারণা কারো খারাপ লাগবেনা, আশা করছি উপন্যাসটি পড়ে কিছুটা হলেও মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাস জানতে পারবেন। আহমেদ সবুজ
Was this review helpful to you?
or
২৫ মার্চ, ১৯৭১ এ নরপিশাচদের চালানো বীভৎস-বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড অার নারীর পেটের সন্তানকেও রেহাই না দেয়া জানোয়ারদের নৃশংস ভণ্ডামির অাদ্যোপান্ত নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী আনোয়ার পাশা এমন একটা অসাধারণ ক্ল্যাসিক উপন্যাস, ইতিহাসের নির্মম দলিল লিখে রেখে গিয়েছিলেন-ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের মাঝেও নিজের শিল্পীসত্তা,যুক্তিবাদ অার দার্শনিকতা বজায় রেখে; এবং নিজেরও রক্ত- প্রাণের বিনিময়ে !.. এই স্বাধীন বাংলাদেশ সেই লক্ষ শহীদের চির অধরা স্বপ্ন ছিল- পদস্থ দুর্নীতিবাজ আর লোভী সুবিধাবাদীরা এই উপাখ্যান যেন একটিবার পাঠ করেন এবং সে কথা স্মরণে রাখেন!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা ★ রাইফেল রোটি আওরাত ★আনোয়ার পাশা ★উপন্যাস ★২৫০ টাকা কথাশিল্পী ও অধ্যাপক আনোয়ার পাশার 'রাইফেল রোটি আওরাত' উপন্যাসটি মুক্তিযু্দ্ধ ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ও প্রথম উপন্যাস। উপন্যাসটির রচনাকাল ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত। এই তিন মাসে রচিত হলেও পুরো উপন্যাসে একটি বৃহৎ পরিসর নিয়ে আটকানো হয়েছে। উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে , বাঙালি অস্তিত্বের কথা, ইতিহাসের কথা, বাঙালি সংস্কৃতির কথা, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ, জীবনাচার, পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী দ্বারা ২৫ মার্চের হত্যাকান্ড, লুটপাট, পৈশাচিকতা, আগুনে পুড়ানো দেশ, নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণ, মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, স্বাধীনতার পক্ষে বিপক্ষে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা , বাঙালির অস্রধারন, স্বাধীনতার স্বপ্ন, এদেশীয় দালাল ও জামায়েত ইসলামীর ভূমিকা সব কিছু। একই মলাটে আবদ্ধ হয়েছে, অনেক গুলো ঘটনার। তবে ঘটনার পর্বে পর্বে চিত্রিত চিত্র এবং চরিত্র গুলো একাকার হয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় গুলোকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সুদীপ্ত শাহিন থেকে শুরু করে মি.মালেক, ডা.খালেক, হাসিম শেখ, বীরঙ্গনা পলি, বীরঙ্গনা রোশেনা, রাজনৈতিক নেতা ফিরোজ, জামাল সাহেব, চিত্রশিল্পী আব্দুল্লাহ মনসুর আমন, সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন হোসেন, কমিউনিস্ট কর্মী বুলা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, কবি শামসুর রহমান, বিজন বিহারী, মোনায়েম খান, আইয়ুব খান, টিক্কা খান, দেশীয় বাঙালী আবাঙালী দালাল, দেশপ্রেমিক, বুদ্ধিজীবী, পাকিস্থান সৈনিক সকলেই উপন্যাসের ঘটনার পর্বে বিকশিত চরিত্র। উপন্যাসটিকে লেখক ওই সময়ের দলিল হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এটি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম উপন্যাস হিসেবে পরিচিত। এটা একাত্তোরের যৌবন বহন করে চলছে। উপন্যাসের নায়ক সুদীপ্ত শাহিন বাংলাদেশের আর বাঙালীর স্বপ্ন বাস্তবায়নেরই প্রতীক। একাত্তোরের মার্চ মাসের যে ভয়াবহ দিন গুলোর বর্ণনা, লেখক একেবারে তরতাজা কাহিনীগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন শুধু। এপ্রিলের প্রথম দিকের অন্ধকার সময়টাকে লেখক যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু মাত্র মার্চের শেষ দিক আর এপ্রিলের প্রথম ভাগই এই উপন্যাসের পটভূমি। কিন্তু এই কয়েকদিনের পটভূমিই বৃহৎ এবং ভয়ংকর ভাবেই চোখে পড়ে। রাইফেল, রোটি, আওরাত এই তিন শব্দে লেখক দেখিয়েছেন অনেক কিছু। এই তিনটাই ছিলো পাকিস্তানি সৈন্যের মূল লক্ষ। রুটি খেয়ে গায়ের জোর বাড়াও, রাইফেল দিয়ে বাঙালী উৎখাত করো, এর আওরত(নারী) নিয়ে ফুর্তি করো। আর এই তিন লক্ষ পুরণের মধ্য দিয়ে হয়েনারা এগিয়ে যাচ্ছিলো। দেশের উপর যে অমানুষিক নির্যাতন আর বর্বরতাময় ধ্বংসযজ্ঞ চলছিলো, তার একটা নিপাট চিত্র, আনোয়ার পাশার বাস্তব চিন্তাভাবনার দ্বারায় প্রতিফলিত করেছিলেন উপন্যাসে। উপন্যাসের জমিন পরিপূর্ণ করে দিয়েছিলো সেই কালো সময়ের বর্ণনায়। আনোয়ার পাশা বাঙালির দুঃখ-বেদনা, আশার যে শিল্পরূপ নির্মাণ করেছেন রাইফেল রোটি আওরত উপন্যাসে, তা কালের সীমা পেরিয়েও বাংলা সাহিত্যে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। সেসময়ের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের মধ্যে বসে লেখা আমাদের সমগ্র ইতিহাসে একটি মাত্র উপন্যাসই পাওয়া যায়-এ উপন্যাসই হচ্ছে “রাইফেল রোটি আওরাত"। ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাস রচনাকাল । লেখক শহীদ আনোয়ার পাশা নিহত হলেন ১৯৭১ সালেরই ১৪ই ডিসেম্বর। স্বাধীনতা লাভের মাত্র দু'দিন আগে তিনি যে অমর কাহিনী উপন্যাসে বিধৃত করেছেন নিজেই হয়ে গেলেন তারই অঙ্গ চিরকালের জন্য। আনোয়ার পাশার উপন্যাসটি একদিক দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে বসে একজনের প্রতিটি মুহুর্তের কাহিনী। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যে সৃষ্ট এ শিল্পকর্ম কতটা সত্যনিষ্ঠা লেখকের জীবনের পরিণতিই তার মহান সাক্ষ্য হয়ে থাকবে। আনোয়ার পাশার উপন্যাস, তাঁর শেষ উচ্চারণঃ “নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভা। সে আর কতো দূরে। বেশি দূর হতে পারে না। মাত্র এই রাতটুকু তো। মা ভৈঃ। কেটে যাবে।” তাঁর এবং আমাদের সকলের কামনা ও প্রত্যাশারই অভিব্যক্তি। শিল্পী তাঁর জীবনকে আমাদের জীবনের মধ্যে পরিব্যাপ্ত।
Was this review helpful to you?
or
উপন্যাসটি পড়ে আমি ব্যথিত, গর্বিত ও বিস্মিত। আনোয়ার পাশা তার এই উপন্যাসে একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচার, অবিচার ও নৃশংসতার বিবরণ এত জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে তা পড়ে প্রত্যেক পাঠকের মন তীব্র বেদনায় আদ্র হবে, প্রতিশোধের নেশায় তীব্র ক্রোধে উন্মত্ত হবে। আবার যখন আবিষ্কার করি পাকিস্তানি নরপিশাচদের পরাজিত করে সেই নারকীয় তাণ্ডব পেছনে ফেলে এসে আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক তখন গর্বে বুক ভরে উঠে। বিস্মিত হয়েছি উপন্যাসের রচনার সময়কাল দেখে। একাত্তরের এপ্রিলে শুরু করে জুন মাসের মধ্যে লেখা শেষ হয়েছে এই উপন্যাস। মূলত ২৫ মার্চ কালরাত্রি থেকে পরবর্তী তিনদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশেপাশের এলাকার ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে রচিত হয়েছে এই উপন্যাস। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সুদীপ্ত শাহিনের মধ্য দিয়ে মূলত লেখকের নিজের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। কারণ আনোয়ার পাশা নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন। লেখক অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শুরুর দিকেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন আমাদের বিজয় আসন্ন। তার ভাষায়, ‘নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভা। সে আর কত দূর। বেশি দূর হতে পারে না। মাত্র এই রাতটুকু তো। মা ভৈঃ। কেটে যাবে।’ কিন্তু অত্যন্ত কষ্টের ব্যাপার হলো, আনোয়ার পাশা নিজ চোখে সেই 'নতুন প্রভা' দেখে যেতে পারেননি। চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর কুখ্যাত ঘাতক আলবদর বাহিনীর হাতে শহীদ হন আনোয়ার পাশা। বইঃ রাইফেল, রোটি, আওরাত লেখকঃ আনোয়ার পাশা ধরণঃ উপন্যাস প্রকাশনীঃ স্টুডেন্ট ওয়েজ
Was this review helpful to you?
or
একটি জাতির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের রক্তাক্ত অধ্যায়ের মধ্যে বসে চিত্ত স্থির রেখে ভবিষ্যতের জন্য লিখে যাওয়া এক অতিমানুষিক চেষ্টা। আনোয়ার পাশা সেটাই করেছেন। আজ যদি আমরা জানতে চাই, ওই ভয়াবহ দুর্যোগে কীভাবে বেঁচে ছিল জাতির আত্মা, কীভাবে অজস্র মৃত্যু পেরিয়ে বিজয়ের পাড়ে পৌঁছানোর জেদ দানা বেঁধেছিল, তাহলে রাইফেল রোটি আওরাত-এর থেকে বেশি আর কে তা জানাবে?
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম: “রাইফেল রোটি আওরাত” লেখক: আনোয়ার পাশা “অধ্যাপক আনোয়ার পাশার” রচিত 'রাইফেল রোটি আওরাত' মুক্তিযু্দ্ধভিত্তিক প্রথম উপন্যাস। কালজয়ী এই উপন্যাসটি রচিত হয়েছে ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত। এই উপন্যাসে তৎকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী দ্বারা ২৫-মার্চের গণহত্যা, নির্বিচারে লুটপাট, অমানবিক পৈশাচিকতা, নারী নির্যাতনের ভয়াবহতা, সাহসী গণমানুষের যোদ্ধা-রূপ, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ, স্বাধীনতার পক্ষে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা সবই উঠে এসেছে! পাকিস্তানি সৈন্যের বর্বর রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এই উপন্যাসের নামের মাঝেই। ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ এই তিনটি শব্দের মাঝেই লুকিয়ে আছে এক রূঢ়-সত্য! রাইফেল রোটি আওরাত এর মমার্থ করলে দাড়ায়...রুটি খেয়ে গায়ের জোর বাড়াও! রাইফেল দিয়ে বাঙালী উৎখাত করো! আর আওরাত নিয়ে ফুর্তি করো! আর এই শব্দের এতই ভয়াবহতা যা প্রতিদিন তৈরি করেছিল বাঙ্গালী নিধনের এক মহা-উপন্যাস! ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাক-বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা রক্তাক্ত করে বাংলার ভূমি! অমানুষের দল নির্বিচারে চালায় নির্মম গণহত্যা! ওদের হাত থেকে রেহাই পায়নি নিস্পাপ শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-যুবা কেউই!আর নারীরা তো ছিলো ভোগ্যপণ্য! আর তাইতো সম্মান বাঁচাতে হলের ছাদ থেকে একসাথে লাফিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্রী! উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সুদীপ্ত শাহীন, যার দু’ চোখ যেন সাক্ষী হয়ে আছে অজস্র বাঙ্গালীর আত্মত্যাগের কাহিনীতে। তিনিও অন্য সবার মতোই তার পরিবারকে নিয়ে নিরাপত্তার আশায় ছুটে বেড়িয়েছেন ঢাকা শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। তার ও অনান্য কতিপয় চরিত্রের নানা ঘটনা-প্রবাহের মাঝেই এগিয়ে গেছে এই উপন্যাসটি! আর এদেশের কুলাঙ্গার রাজাকাররা পাকিস্তানীদের সাহায্য করে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তোলে। শেষ পর্যন্ত যাদের সহায়তায় পাক-বাহিনীর হাতে প্রাণ হারায় এ দেশের সূর্য-সন্তানরা! আর আনোয়ার পাশা তাদেরই একজন! যে কিনা কলমের কালিতে রচনা করেছিলেন, দেশ স্বাধীনের নতুন এক স্বপ্ন! আর তাইতো রক্তের কালিতে লেখা হয়েছে তাঁর দীপ্ত উচ্চারণঃ “নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভা। সে আর কতো দূরে। বেশি দূর হতে পারে না। মাত্র এই রাতটুকু তো। মা ভৈঃ। কেটে যাবে!”
Was this review helpful to you?
or
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা এবং তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে বইটা। মানুষ কখনো কি আরেকজন মানুষকে এত্ত নির্মম ভাবে হত্যা করতে পারে! নারী ছিল তাদের ভোগ্যপণ্য, শিশুদের অবলীলাক্রমে হত্যা করে। সামনে যাকে পেয়েছে, তাকেই হত্যা করেছে। এছাড়া এদেশীয় দোসররা তো ছিলোই..রাজাকাররা বিহারী, পাকিস্তানীদের সাহায্য করে পরিস্থিতি করে তোলে আরো ঘোলাটে। বইটার প্রধান চরিত্র বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক শাহীন ততকালীন অবস্থায় নিজের নামটা পর্যন্ত বদলে ফেলতে বাধ্য হয়, চাকরি পাওয়ার আশায়, জীবন বাঁচাতে। নিজের পরিবার নিয়ে এক চরম দুর্যোগপূর্ণ দিনাতিপাত করতে হচ্ছিলো। ঢাকার এক সীমানা থেকে আরেক সীমানায় গিয়েও স্বস্তি হচ্ছিলো না তাদের.. এই ভয়ানক রাত্রির শেষ কোথায়? আদৌ কি শেষ হবে? এক বুক আশা নিয়ে শেষ হয় এই উপন্যাসটি..
Was this review helpful to you?
or
রাত জেগে বই পড়ে শেষ করার মধ্যে যে শান্তি থাকে, আনোয়ার পাশার 'রাইফেল, রোটি, আওরাত' পড়ে ঠিক সেরকম কোন অনুভূতি হচ্ছেনা। বরং মনে হচ্ছে এতো তাড়াতাড়ি শেষ না হলেও বোধয় পারতো। সমস্ত রকম নিষ্ঠুরতা, বর্বরতার প্রতি মানুষের একরকম কুৎসিত আগ্রহ থাকে জানার।অসহ্যরকমের ভয়াবহতা কেও মানুষ প্রবল আগ্রহ নিয়ে মোহগ্রস্ত হয়ে দেখতে চায়। বইয়ের প্রতিতা পৃষ্ঠা জুড়ে পাকিস্তানি সৈনিকদের কাফের নিধনের নামে বাঙালি হত্যার বর্ণনা সেই অপ্রীতিকর মোহ নিয়ে পড়েছি। আশ্চর্য হতে হয় এই ভেবে মৃত্যুপুরীতে বসে কতটা ধীরচিত্তের হলে চোখে দেখা বর্বরতা শব্দের নৈপুন্যে এভাবে তুলে ধরা যায়। সমস্ত বই জুড়ে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে জুন মাসের কাহিনি আবর্তিত হলেও বাড়বাড় ২৬শে মার্চের প্রথম আঘাতের কথাই উঠে এসেছে প্রতিটা ঘটনা বর্ণনার ফ্ল্যাশব্যাকে।ঘুমন্ত নিষ্পাপ শিশু থেকে কোরআন পাঠরত বৃদ্ধা - কেউই যখন অতর্কিত বেয়োনেট চার্জের এর সামনে থেকে রেহাই পায় না তখন তার প্রভাব মনকে কতটা বিহ্বল করে তা প্রতিটা পৃষ্ঠায় ধরা পড়ে। এক একদিন করে বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তা নিয়ে লেখক কিভাবে একটি গুছানো কাহিনির অন্তরালে পরবর্তীতে অবিশ্বাস্য বর্তমানকে বেঁধে ফেলার যে দুঃসাহস দেখিয়েছেন এবং তাতে সফল হয়েছেন তা ভেবে আপনি সম্মানে মাথা নুইয়ে আসে। এই বই মুক্তিযুদ্ধের দলিল হিসাবে সংরক্ষিত হবার যোগ্য দাবিদার। বইটাকে দুইভাবে দেখা যায় মনে হয়েছে আমার কাছে। এক সাহিত্য মূলক,দুই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনার খুবই ছোট একটা গল্প।
Was this review helpful to you?
or
বই এরশুরুতেই একটা কথা লিখা আছে যে, শিল্পী কে হয়ত মারা যায়, কিন্তু তার শিল্প কে নয়। তার একদম আদর্শ উদাহরণ। ৭১ এর ২৫শে মার্চ কি হয়েছিল?? কিসের প্রেক্ষিতে হয়েছিল? কেন হয়েছিল? কিভাবে হয়েছিল?? তার ই উত্তর মিলবে বইটা তে। ক্ষমতার লোভে মানুষ যে মানুষ কে কিভাবে নির্বিচারে হত্যা করতে পারে, তার প্রত্যক্ষদর্শী হচ্ছেন বই এর লেখক। গল্পের বক্তা সুদীপ্ত এর মাধ্যমে আসলে তিনি নিজের ই একটি সেলফ পোর্ট্রেট আকতে চেয়েছেন। কারো যদি ২৫শে মার্চের ঐ ঘটনার প্রতি বিন্দুমাত্র ও কিছু প্রশ্ন থেকে থাকে তার এই বইটি অবশ্যপাঠ্য। বইটির আরেকটি বিশেষ দিক হচ্ছে বইটির রচনাকাল। ৭১ এর এপ্রিল থেকে জুন মাস। ফলে তখনকার ঢাকাবাসীর রাজনৈতিক চিন্তাভাবিনা ও জীবনযাত্রার একটার চিত্র ও ফুটে উঠেছে বইটিতে। কালরাত্রির বর্ণনাটাও শিউরে ওঠার মত এবং অতিশয় বাস্তব। বইটা পড়বেন আর পাকবাহিনীর উপর ঘৃণায় আপনার শরীর মোচড় দিয়ে উঠবেনা তা হতেই পারেনা। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর যে পাক বাহিনীর আলাদা ক্ষোভ ছিল তাও ফুটে ওঠে বইটিতে। কাল রাত্রিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চলেছিল তার চিত্র ফুটিয়ে তুলতে লেখক শতভাগ সফল। লেখনীর ধরণটাও অসাধারণ। কিন্তু যেই স্বাধীনতার স্বপ্ন লেখক বইটিতে দেখেছিলেন, তা তিনি প্রত্যক্ষ করে যেতে পারেন নি। স্বাধীনতার মাত্র দুদিন আগে বর্বরদের হাতে মৃত্যু হয় তার
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা নাম: রাইফেল,রোটি,আওরাত লেখক: আনোয়ার পাশা প্রকাশনা: স্টুডেন্ট ওয়েজ মূল্য: ২৫০৳ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার পাশার উপন্যাস "রাইফেল,রোটি,আওরাত" এর প্রথম পরিচয় হচ্ছে এটি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা প্রথম উপন্যাস।উপন্যাসিক এটি লেখা শুরু করেন ১৯৭১ সালের এপ্রিলে এবং শেষ করেন জুন মাসে,রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের মধ্যে লেখার কারণে উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে একটি জীবন্ত ইতিহাস। উপন্যাসের ভূমিকায় কাজী আবদুল মান্নান লিখেছেন, "মানুষ এবং পশুর মধ্যে বড় একটা পার্থক্য হচ্ছে,পশু একমাত্র বর্তমানকেই দেখে,মানুষ দেখে অতীত,বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে এক সঙ্গে বিবেচনা করে।যখন কোন ব্যক্তি এবং সমাজ একমাত্র বর্তমানের মধ্যেই আবর্তিত হতে থাকে তখন সর্বনাশের ইশারা প্রকট হতে থাকে।" লেখক আনোয়ার পাশা যুদ্ধক্ষেত্রে বসেই তৎকালীন সময়ের প্রতিটা মুহুর্তের কাহিনী চিত্রিত করেছেন এই উপন্যাসে এবং উপন্যাসটি শেষ করেছেন, "নতুন মানুষ,নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভা।সে আর কতো দূরে।বেশি দূর হতে পারে না।মাত্র এই রাতটুকু তো।মা ভৈঃ।কেটে যাবে।" যুদ্ধের মাত্র ৪মাসের মাথায় লেখক নতুন একটি দেশের ভবিষ্যৎ দেখেছেন,আশা জাগিয়েছেন সকলের মাঝে।শুধুমাত্র মানুষ নন,একজন দুরদর্শী সম্পন্ন মানুষ হওয়াতেই তিনি শুনেছেন নতুন একটি দেশের জন্মের কড়া নাড়া।অথচ এই আশাবাদী মানুষটিই শেষ পর্যন্ত ১৪ই ডিসেম্বর হারিয়ে যান চিরতরে,পারেন নি তাঁর স্বপ্ন পূরণ হওয়া দেখতে। উপন্যাসের আড়ালে এই ইতিহাসের রিভিউঃ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সুদীপ্ত শাহীন।এই সুদীপ্ত শাহীনই যেন আনোয়ার পাশা,তিনিই যেন বিপন্ন,বিধ্বস্ত,আশা জাগানিয়া বাংলাদেশ।আত্মজৈবনিক এই উপন্যাসের অন্যান্য চরিত্র-সুদীপ্ত শাহীনের স্ত্রী মীনাক্ষি,মহিউদ্দিন ফিরোজ ও তাঁর স্ত্রী,রাজাকার মালেক।এছাড়াও জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা,অধ্যাপক মুনিরুজ্জামানের মতো বুদ্ধিজীবীরা। মূলত মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ঢাকাবাসীর রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা ও জীবনযাত্রার নির্ভেজাল চিত্র ফুটে উঠেছে উপন্যাসে।যেমন- সুদীপ্ত শাহীন পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য হত্যাকান্ডের সাক্ষী হলেও তাঁর উন্নত মানবিকতার পরিচয় পাওয়া যায় যখন ওয়াজেদ বলেন- ওয়াজেদ যখন বলে 'সময় এলে এবার দেখবেন স্যার, দেশকে বিহারিশূন্য করে ছাড়ব।' তখন সুদীপ্ত উত্তর দেন ''কাজটা সেই পাঞ্জাবিদের মতো হবে, আমরা এখন যাদেরকে প্রবলভাবে ঘৃণা করছি। আমরা চাইছি নির্ভেজাল গণতন্ত্র! তার অন্যতম মূল কথাটি হচ্ছে বিনা বিচারে অন্যায়ভাবে কাউকে শাস্তি দেওয়া হবে না। এবং মতামতের স্বাধীনতার সঙ্গে তার দায়-দায়িত্বটাও হবে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত।'' আবার, ২৫শে মার্চ রাতে স্বামী মনিরুজ্জামানের লাশের পাশে আহত জ্যোতির্ময়গুহ ঠাকুর্দাকে পেয়ে যখন মনিরুজ্জামানের স্ত্রী বাসন্তী গুহঠাকুর্দার দরজায় আঘাত করে বলেন 'দিদি, বের হন। আপনার সাহেবকে ঘরে নিন। আমার সাহেব মারা গেছেন। আপনার সাহেব এখনও বেঁচে আছেন।' এই একটা মুহুর্তই আসলে মুক্তিযুদ্ধের অনেক কিছু বলে দেয়। মাত্র তিনদিনের ঘটনাবলীর সমন্বয়ে লিখিত এই উপন্যাসে এরকম আরো অসংখ্য মুহুর্ত আনোয়ার পাশা তৈরি করে গেছেন। এছাড়াও,১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে কি হয়েছিল? কিসের প্রেক্ষিতে হয়েছিল?কেন হয়েছিল?সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে এই বইতে। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ সাহিত্যিক আবুল ফজল লিখেছেন-"বাংলাদেশের মাটিতে আগামীতে যারা জন্মগ্রহণ করবে,তারা এ দেশের ইতিহাসের এক দুঃসহ ও নৃশংস অধ্যায়ের এ নির্ভেজাল দলিল পাঠ করে নিঃসন্দেহে শিউরে উঠবে।" সত্যিই এতো নিঁখুত করে একাত্তরের চিত্র ফুটিয়ে তোলার কারণেই উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে অনন্য ও স্বতন্ত্র।ইতিহাসের কোনো রেটিং হয় না,তাই এই বইয়ের কোনো রেটিং নেই।
Was this review helpful to you?
or
বহু প্রতীক্ষিৎ একটি বই। বহুদিন যাবৎ খুঁজছি বইটি। কিন্তু ছোট শহরে এগুলো খুব একটা পাওয়া যায় না। রকমারিকে অসংখ্য ধন্যবাদ বইটিকে সহজলভ্য করার জন্যে... :) :)