User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#বই রিভিউ #যাও পাখি বলো তারে। লেখিকা: আফিফা পারভীন। রাজশাহীর উপশহরের ধূলিমাখা পথে, যেখানে পারিবারিক বন্ধন, ভালোবাসার উত্থান-পতন এবং সমাজের কঠিন বাস্তবতা একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে যায়, সেখানে বোনা এই উপন্যাস একটি আবেগময় ও মানবিক যাত্রার অপূর্ব চিত্র তুলে ধরে। তুতুল, তানিম, মেহেরুন, তকী ও আহনাফের জীবনের গল্পে ভালোবাসা, ত্যাগ, কষ্ট এবং পুনরুদ্ধার এক গভীর সুর বাজে, যা পাঠকের হৃদয়ে গভীরভাবে দাগ কাটে।এই উপন্যাসটি কেবল চরিত্রদের জীবনের সংগ্রামেরই প্রতিচ্ছবি নয়, বরং আমাদের নিজেদের জীবনের আয়না—যেখানে সমাজের নিষ্ঠুরতার মাঝেও আশা ও মানবিকতার আলো জ্বলে। উপন্যাসটি সমাজের কিছু কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরে, যা পাঠকের মনে তীব্র প্রভাব ফেলে। সমাজের বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি, নারীর প্রতি কটুক্তি এবং লোভের মতো নেতিবাচক দিকগুলো স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। তুতুলের জীবনে ঘটে যাওয়া ট্র্যাজেডি এবং সমাজের কিছু মানুষের নিষ্ঠুর মনোভাব সমাজের অন্ধকার দিককে মুখোমুখি করে।সমাজের কিছু মানুষের বিষাক্ত মন্তব্য ও কুসংস্কার নারীর কষ্টকে আরও বাড়িয়ে দেয়, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেকের জন্য পরিচিত বাস্তবতা। উপন্যাসের প্রতিটি দৃশ্য আমার হৃদয়ে গভীর আবেগ জাগায়। তুতুলের লজ্জা ও কষ্ট, তানিমের জেদ ও ত্যাগ, মেহেরুনের সততা এবং আহনাফের নিঃস্বার্থ প্রস্থান—প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে চরিত্রদের সঙ্গে একাত্ম করে। গল্পের ভাষা ও বর্ণনা এতটাই সজীব যে, পাঠক তুতুলের নীরব কান্না, তানিমের হৃদয়ের ঝড় এবং মেহেরুনের সাহসিকতা যেন নিজের মধ্যে অনুভব করে।উপন্যাসটি পাঠককে মনে করিয়ে দেয় যে, কষ্ট যত গভীরই হোক, ভালোবাসা ও সমর্থনের মাধ্যমে জীবন নতুন করে শুরু করা সম্ভব। তানিমঃ তানিম গল্পে একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র। যার জেদ, রাগ এবং ভালোবাসা তুতুলের জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তুতুলের প্রতি তার সমর্থন, বিশেষ করে তার জীবনের কঠিন মুহূর্তে, তার গভীর দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসার প্রমাণ। তানিমের রাগী স্বভাব তাকে এলাকায় ‘তানিম গুন্ডা’ হিসেবে পরিচিত করলেও, তার এই রাগ প্রায়ই তুতুলের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষার জন্য প্রকাশ পায়। তুতুলঃ তুতুল গল্পের আবেগময় কেন্দ্র। তার জীবনের সংগ্রাম, বিশেষ করে একটি গভীর ট্র্যাজেডির পর তার মানসিক পুনরুদ্ধার, পাঠকের হৃদয়ে গভীর সহানুভূতি জাগায়। তুতুলের লজ্জা ও সরলতা তার প্রাথমিক আকর্ষণ হলেও, তার স্থিতিস্থাপকতা ও নিজেকে ফিরে পাওয়ার যাত্রা তাকে একটি শক্তিশালী চরিত্রে পরিণত করে।মেহেরুনের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব তাকে মানসিক শক্তি দেয়, এবং তার পরিবারের সমর্থন তাকে জীবনের অন্ধকার মুহূর্তে আলোর পথ দেখায়। আজমল উদ্দিন খানঃ আজমল উদ্দিনের চরিত্র তুতুলের জীবনে একটি নির্ভরযোগ্য স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে। তার স্নেহ তুতুলকে মানসিক শক্তি দেয়, বিশেষ করে তার জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোতে। তার বন্ধু তাফসীর আলমের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব তুতুল ও তানিমের পরিবারের মধ্যে একটি সেতু তৈরি করে, যা গল্পের পারিবারিক গতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তার ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং পারিবারিক দায়িত্বের ভারসাম্য তাকে একজন শক্তিশালী, তবু কোমল হৃদয়ের পিতা হিসেবে চিত্রিত করে। তাসলিমা সুলতানাঃ তাসলিমা সুলতানার চরিত্র সমাজের সেই মায়েদের প্রতিনিধিত্ব করে, যারা শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের পারিবারিক ভূমিকা পালনে সীমিত থাকেন। তার নীরব উপস্থিতি সমাজের সেই নারীদের কথা মনে করিয়ে দেয়, যারা নিজেদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও পরিবারের জন্য একটি মানসিক আশ্রয় হিসেবে কাজ করেন। তাফসীর আলমঃ তাফসির আলম উপন্যাসে একটি স্থির ও নির্ভরযোগ্য চরিত্র হিসেবে উপস্থিত। তার বন্ধুত্ব ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক তুতুল ও তানিমের পরিবারের মধ্যে একটি সেতু হিসেবে কাজ করে। তানিমের জীবনের সিদ্ধান্তে তার সরাসরি হস্তক্ষেপ না থাকলেও, তার উপস্থিতি তানিমকে একটি পারিবারিক ভিত্তি প্রদান করে। আফিয়া বেগমঃ আফিয়া বেগম সমাজের সেই মায়েদের প্রতিনিধিত্ব করেন, যারা পরিবারের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন এবং সমাজের প্রতি সচেতন থাকেন। তার কঠোরতা ও স্নেহের সমন্বয় সমাজের ঐতিহ্যবাহী মায়ের ভূমিকার পাশাপাশি একটি আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। তার উদারতা ও মানবিকতা সমাজের সেই দিকটিকে তুলে ধরে, যেখানে নারীরা নিজেদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অন্যদের জন্য আশ্রয় হয়ে ওঠেন। মতির মাঃ মতির মা চরিত্র সমাজের অবহেলিত নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে, যারা নিজেদের জীবনের ট্র্যাজেডি সত্ত্বেও অন্যদের জন্য সমর্থন ও ভালোবাসার উৎস হয়ে ওঠে। মতির মায়ের জীবনের অভিজ্ঞতা, তানিমের পরিবারে তার ভূমিকা এবং তুতুলের প্রতি তার সহানুভূতি তাকে গল্পে একটি অসাধারণ ও স্মরণীয় চরিত্রে পরিণত করে। আহনাফঃ আহনাফ ধনী পরিবারের সন্তান।যার শান্ত ও লাজুক স্বভাব তাকে তুতুলের জীবনে একটি বিশেষ স্থান দেয়। তার চরিত্রে একটি নম্রতা ও নৈতিক দৃঢ়তা রয়েছে, যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। তিনি সমাজের উচ্চ শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করলেও, তার আচরণে কোনো অহংকার বা আত্মকেন্দ্রিকতা নেই। তার শান্ত মনোভাব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংযম তাকে একটি পরিপক্ক ও চিন্তাশীল ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। আহনাফের চরিত্রে একটি গভীর সহানুভূতি এবং অন্যের কষ্ট বোঝার ক্ষমতা রয়েছে, যা তার কর্ম ও সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রকাশ পায়। মেহেরুনঃ মেহেরুন একজন মেধাবী ও সততার প্রতীক। গল্পে একটি শক্তিশালী ও প্রেরণাদায়ক চরিত্র।তার ব্যক্তিত্ব এবং নৈতিক দৃঢ়তা তাকে অসাধারণ করে তোলে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হিসেবে তার জীবনে সীমাবদ্ধতা থাকলেও, তার মেধা ও সাহস তাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।তার সততা ও নীতির প্রতি অটলতা তার চরিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য, যা তাকে তুতুলের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু ও পথপ্রদর্শক করে। তকীঃ তকী সমাজের সেই পুরুষদের প্রতিনিধিত্ব করে, যারা শান্ত, দায়িত্বশীল এবং পারিবারিক মূল্যবোধের প্রতি নিবেদিত। তার নির্লোভ মনোভাব এবং ব্যবসায়িক দক্ষতা সমাজের সেই তরুণদের প্রতিফলন, যারা ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। তার সততা ও মেহেরুনের প্রতি তার সমর্থন সমাজের সেই দিকটিকে তুলে ধরে, যেখানে পুরুষরা নারীর সাহস ও নীতির প্রতি সম্মান দেখায়। তকীর চরিত্র সমাজের কাছে একটি বার্তা দেয়—সরলতা ও দায়িত্ববোধ জীবনে স্থিতিশীলতা ও সুখ আনতে পারে। এই উপন্যাস সমাজের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, নারীর প্রতি সমাজের বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি তাদের কষ্টকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তবু, তুতুল ও মেহেরুনের মতো চরিত্ররা দেখায় যে, সাহস ও সততার মাধ্যমে এই বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। তানিম ও আহনাফের মতো চরিত্ররা প্রমাণ করে যে, সত্যিকারের ভালোবাসা ত্যাগ ও সমর্থনের মধ্যে লুকিয়ে থাকে।
Was this review helpful to you?
or
▪️বই পরিচিতি ▪️ ▪️নাম-যাও পাখি বলো তারে ▪️লেখিকা-আফিফা পারভীন ▪️কাহিনী সংক্ষেপ▪️ তুতুল নামের পুতুলের মতো মেয়েটা সবার ভীষণ আদরের। তুতুলের ভরসার জায়গা তানিম ভাই। গ' রম মেজাজের গু' ন্ডা তানিম তুতুলের কাছে আইসক্রিমের মতো ঠান্ডা আর মিষ্টি। তাদের সম্পর্কটা স্নেহ আর ভরসার। তুতুলের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আহনাফ নামক এক ভদ্রলোকের সাথে যে সত্যিকার অর্থেই ভদ্রলোক। এই পর্যন্ত মনে হবে সহজ সরল একটা রোমান্টিক গল্প। তবে গল্পের টার্নিং পয়েন্ট পাঠককে বাকরু' দ্ধ করে দিয়েছে। সহজ সরল গল্পটাকে নিয়ে গেছে এক জটিল মনস্তাত্ত্বিক টা' নাপোড়েনের স্রোতে। একটা এ' ক্সিডেন্ট যা ভ' য়ংকর দা' নবের মতো সবার আনন্দকে গ্রা' স করে নিয়েছিলো। পাল্টে দিয়েছিল গল্পের গতি, আবার গতিশীল চরিত্রদের জীবনে এনে দিয়েছিল স্থিরতা। এরপর? ▪️পাঠ প্রতিক্রিয়া▪️ আমার প্রিয় গল্পের তালিকায় প্রথমেই যে নামটা আসবে সেটা হলো 'যাও পাখি বলো তারে'। এই একটা গল্প আমি বিরক্তিহীন বেশ কয়েকবার পড়তে পারবো। আশ্চর্যজনক ভাবে যতবার পড়ি ততবারই নতুন নতুন লাগে। আমার প্রিয় তানিম ভাই, তানিম ভাইয়ের প্রিয় পুতুল আর তাদের গল্পটা ভীষণ ভীষণ ভীষণ সুন্দর। ভালোবাসা ব্যাপারটা সব সময় বলে কয়ে আসে না কখনো চুপটি করে এসে হৃদয়ের কোন এক গোপন আস্তানায় ঘাপ' টি মেরে থাকে। কখন যে সে ভালোবাসার শিকড় আরো গভীরে চলে চায়, ডালপালা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিশাল এক জায়গা দখল করে নেয় বোঝা দায়। তবে দূরত্ব নাকি ভালোবাসা বাড়ায়? হারানোর ভ' য় মনে জেকে বসলে খরকুটোর মতো আগলে ধরতে মন চায়! তানিম তুতুলের গল্পটাও এরকম যেখানে ভালোবাসার গভীরতা অনেক কিন্তু নিরব, সরবে তানিম শুধু তুতুলের তানিম ভাই আর তুতুল শুধুই তানিমের পুতুল। ভালোবাসা তখনই সুন্দর যখন সেখানে আবেগের সাথে সাথে সম্মান আর সম্মতির প্রশ্রয় থাকে। এক পাক্ষিক নিরবেও গভীরভাবে ভালোবাসা যায়। এই ভালোবাসা টা সব চাওয়া পাওয়ার উর্ধ্বে শুধু এবং শুধুমাত্র নিজের প্রশান্তির জন্য। গল্পে আহনাফের এই ভালোবাসাটা আমায় ভীষণ মুগ্ধ করেছে। গল্পের মিঠাই আর মেহরুন তাদের মমতা আর ভালোবাসা দিয়ে র' ক্তের সম্পর্ককেও পিছনে ফেলে দিয়েছে। আত্মিক সম্পর্ক গুলো এতো মনোমুগ্ধকর হয় বুঝি? মিঠাই জন্ম না দিয়েও তুতুলের আরেক মা হয়ে উঠেছে, মেহেরুন বোন না হয়েও যেন বোনের থেকে বেশি। এগুলো পড়তে কার না ভালো লাগবে? আমাদের সমাজটা কেমন যেন! গড়তে সাহায্য না করতে পারলেও নি' ষ্ঠুর ভাবে ভা' ঙতে সাহায্য ঠিকই করে। অ' ন্যায়কারী তাদের কাছে প্রশ্রয় পেয়ে যায় কিন্তু যার প্রতি অ' ন্যায় করা হয় তাকে ধি' ক্কার জানানোই যেন সমাজের মূল লক্ষ্য। অথচ সমাজের এই চিরচেনা চিত্র যদি একটু পাল্টে যেত, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হতো তাহলে অ' ন্যায়কারী যেমন যথাযোগ্য শা' স্তি পেত ভু' ক্তভোগী একটু শান্তিতে বাঁচতে পারতো অন্তত এই মনোবল টুকু পেতো আমি একা নই। কোথায় যেন পড়েছিলাম 'সমাজ বদলালেও সমাজের মানুষ বদলালেও দৃষ্টি ভঙ্গি একই থেকে যাবে।'-কথাটা অক্ষরে অক্ষরে সত্য। জীবনের প্রতিটা দিন একরকম নয়। কিছু কিছু দিন থাকে অপ্রত্যাশিত, হয়তো ভালো নয়তো মন্দ। বইটা পড়তে গিয়ে আমি ভালো সময় যেরকম উপভোগ করেছি মন্দ সময়ের সাক্ষীও হয়েছি। সব গল্প বিনোদনের জন্য হয় না কিছু কিছু গল্প নি' ষ্ঠুর বাস্তবতা আর জীবনবোধের শিক্ষা দিয়ে যায়। যাও পাখি বলো তারে তুতুল তানিমের অবর্ণনীয় অনুভূতির গল্প, দুটো পরিবারের গল্প, মতির মায়ের ঝ' গড়া আর ক' ষ্টের গল্প, একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গির গল্প, একজন মিঠাইয়ের গল্প, আহনাফের একপাক্ষিক ভালোবাসার গল্প, মেহেরুনের বন্ধুত্বের গল্প, তকীর দায়িত্ব নেওয়ার গল্প, আমাদের সমাজের গল্প আর একটা বোকা, ভী' তু, পরিবারের সকলের আদুরে তুতুলের একটু চালাক, সাহসী, আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার গল্প। রাতের অন্ধকারের ভ' য়বহতা কাটিয়ে স্নিগ্ধ ভোরে শুদ্ধ ও নিষ্পা' প তুতুলের পাখির মতো ডানা মেলে উড়তে শেখার গল্প। যেই গল্পটা আমার ভালোলাগার, ভালোবাসার আর অনুপ্রেরণার। ▪️চরিত্র বিশ্লেষণ▪️ ▪️তানিম- কখনো মনে হয় আমি তানিম ভাইকে নিয়ে লিখে ফেলতো পারবো গোটা এক উপন্যাস আবার কখনো মনে হয় আমার সেই লিখতে যাওয়া উপন্যাসের পাতায় আমি শুধু 'তানিম ভাই' লিখেই থেমে যাবো আর কিছু লেখা হবে না। কাল্পনিক জগতে আমার প্রিয়র চেয়েও প্রিয় তানিম চরিত্রটা। তানিম ভাই কোন জেন্টলম্যান নয়, আবার বর্তমানে ঝ' ড় তুলে দেওয়া ঠোঁট কা' টা কিংবা পা' পিষ্ট পুরুষ ও নয় বরং সে এসব কিছুর উর্ধ্বে ভিন্ন এক কিছু। তানিম ভাইয়ের তুলনা একমাত্র গু' ন্ডা তানিম ভাই নিজেই। যখন যেভাবে প্রয়োজন সেভাবেই চরিত্রটাকে রূপায়িত করা হয়েছে। কখনো ছ' ন্নছাড়া রূপে তো কখনো গোছালো এক সাংসারিক পুরুষ, কখনো গু' ন্ডা তো কখনো স্নেহময়ী, কখনো বি'ধ্বং'সী তো কখনো যত্নবান। তানিম ভাইয়ের সবগুলো রূপের মাঝে "কথা কম কাজ বেশি" কথাটায় বিশ্বাসী গু' ন্ডা তানিম ভাই আমার সবচেয়ে প্রিয়। "ভ' য় পাস না তুতুল আমি আছি তো"- তানিম ভাই ভাগ্যিস আপনি ছিলেন। নয়তো আপনার পুতুল মূ' র্ছা যেত। ▪️তুতুল- তুতুল আমার কাছে পুতুলের মতোই ভীষণ মিষ্টি আর আদুরে চরিত্র। আমি সরল বুদ্ধির অধিকারী তুতুলের মোহনীয় রূপে হারিয়ে যেতে ভালোবাসি ভীষণ। তুতুল এমন একটা চরিত্র যাকে ভালোবাসলে বিনিময়ে প্রচুর ভালোবাসা পাওয়া যায়। যার বোকামি গুলোতে মিষ্টি মিষ্টি হাসা যায় আর ভেবে নেওয়া যায় "হোক তুতুল প্রচুর বোকা সে তো তানিম ভাইয়ের পুতুল। তুতুলের বোকামি সামলে নেওয়ার জন্য তানিম ভাই তো আছেই।" পড়ালেখার অনাগ্রহী থাকলেও সাংসারিক কাজে তুতুল ছিলো ভীষণ পটু। বোকা তুতুলের বোকামি গুলো ভালো লাগলেও শেষ বোকামি টা আমার একটুও ভালো লাগে নি। এখানে গিয়ে তুতুলের উপর ভীষণ রা' গ আর খানিক বি' রক্তি এসেছিল। পুতুলের মতো তুতুলের সকল আনন্দ, চঞ্চলতা হুট করে হারিয়ে গিয়েছিল অ' ন্ধকারের ভ' য়াল থা' বায়। এই সময়ে তুতুলের জন্য আমার ঠিক যতটা কষ্ট হয়েছিল তারচেয়েও অনেক গুণ বেশি ভালোলেগেছিল তুতুলের নিজেকে গড়ে তোলার জার্নিটা। পাশে অনেকেই ছিলো তবুও লড়াই তো তাকে একাই করতে হয়েছে। তুতুল আমার কাছে কাল্পনিক চরিত্র কম বাস্তবতা উপলব্ধি করে বেঁচে থাকার প্রেরণা অধিক। ▪️মেহেরুন- আমার কাছে বন্ধুত্ব সৃষ্টিকর্তার দেওয়া এক আশির্বাদ। ভীষণ যত্নে লালিত আত্মার বন্ধনে সৃষ্ট এই সম্পর্কটা কখনো র' ক্তের বন্ধন কেউ হার মানিয়ে দেয়। মেহেরুন আর তুতুলের বন্ধুত্বটাও ছিলো এরকম। মেহেরুনের মতো একটা বন্ধু পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। এই চরিত্রটার দৃঢ়তা, আত্মনির্ভরশীলতা, বুদ্ধিমত্তা ছিলো অবাক করে দেওয়ার মতো। তুতুলের সম্পূর্ণ বিপরীত একটা চরিত্র। তুতুলকে বোনের মতো সব সময় আগলে রাখতো। ▪️তকী- আপাদমস্তক ভদ্রলোক। শুদ্ধ পুরুষের তালিকায় তাকে সহজেই আনা যায়। স্বামী, ছেলে ও ভাই হিসেবে অনেক দায়িত্বশীল একটা চরিত্র। দায়িত্বের বেড়া' জালে আবদ্ধ থাকতে গিয়ে তার আর জীবনটা সেরকম ভাবে উপভোগই করা হলো না। ▪️আফিয়া বেগম- মিঠাই। তুতুলের আরেক মা। মমতাময়ী একটা চরিত্র। এই চরিত্রটা এতো সুন্দর ছিলো মন চায় কল্পলোকে গিয়ে তাকে একটু জড়িয়ে ধরি। তার কোলে মাথা রাখলেই বোধ করি সব মনখারাপ ভালো হয়ে যাবে। মিঠাই মিঠাই মিঠাই, তুমি এতো ভালো কেন? আমি অতো লো' ভী নই তবে তোমার মমতা পাওয়ার লো' ভ হয় আমার, ভীষণ! ▪️আহনাফ- আহনাফ কে নিয়ে যতো বলবো ততই কম হবে। তানিম ভাইয়ের পরে আমার সবচেয়ে প্রিয় আহনাফ। প্রিয় হওয়ার জন্য তার সুন্দর ব্যক্তিত্বটাই যথেষ্ট ছিলো। আহনাফের চিন্তা চেতনা ছিলো মুগ্ধ করার মতো। গল্পে তার উপস্থিতি যতক্ষণ ছিলো পুরোটা সময়ই তার দিকে প্রবলভাবে আকৃ' ষ্ট করেছে শুধু। আহনাফের মতো করে ভালোবাসতে খুব কম লোকেই পারে। ভালোবাসাকে পাওয়ার চেয়ে ভালোবাসার মানুষটার কম্ফোর্ট জোন হওয়াটাই অত্যাধিক শ্রেয় মনে করেছে। ▪️মালিহা- এই চরিত্রটা আমার ভালোলাগার একটা চরিত্র ছিলো। তাকে যে ঘৃ' ণার চোখে দেখতে হবে তা আমার কল্পনার বাইরে ছিলো। আমার মনে হয়েছে তাকে তার মতো ছেড়ে দিলেই ভালো হতো, সবাই প্রতি' শোধ পরায়ণ হবে এমন ও তো না। মালিহা যেরকম নিজের মাঝে ব্যস্ত ছিলো সেরকম ই থাকতো। তার অনাকাঙ্ক্ষিত আগমণ আমার একটুও ভালো লাগে নি। ▪️মতির মা- আমার মনে হয় গল্পটা মতির মা বিহীন পানসে থাকতো। বাড়ির কাজের লোককেও যে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ, উপভোগ্য, প্রয়োজনীয় চরিত্র বানানো যায় সেটা আমি মতির মাকে পড়ে বুঝেছি। ভাবতে অবাক লাগে এই মজাদার মানুষটার হাসির আড়ালে বি' ষাদের পাহাড় জমে আছে। তানিম ভাই আর মতির মা জুটি গল্পটার সেরা জুটি। সাহসী মতির মা তানিম গু' ন্ডার হু' মকি ভ' য় তো পেতোই না উল্টে তানিমকেই হু' মকি দিয়ে দা' বিয়ে রাখতো। আবার প্রয়োজনের সময় তানিমের মনে সাহস এই চরিত্রটাই জুগিয়েছে। তাদের ঝ' গড়া হতো প্রচুর, কেউ কাউকে দেখতেই পারতো না, দেখলেই খু' ন করার ইচ্ছে জাগতো তবুও তাদের সম্পর্ক টা ভীষণ সুন্দর ছিলো। ঝ' গড়ার মাঝেই তাদের সম্পর্কের মিষ্টতা নিহিত। ▪️লেখনশৈলী▪️ কালো কালির ওই লেখাগুলোকে আমি শব্দ না বলে অনুভূতিই বলবো। ভীষণ দক্ষ হাত না থাকলে এরকম সং'বেদনশীল একটা বিষয় নিয়ে এতো সুন্দর ভাবে লেখা অসম্ভব। মনস্তাত্ত্বিক জ'টিলতায় ভরপুর গল্পটা লেখিকা এতোটাই সহজভাবে লিখেছেন যে পাঠকের বুঝতে একটুও অসুবিধে হবে না। এই গল্পটা পড়েই তো আমি লেখিকার লেখনীতে ডুবে গেছি। এরপর আমার আর কূলে উঠা হলো না। ▪️বইটি আপনি কেন পড়বেন▪️ আপনি যদি বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষনীয় গল্প পড়তে ভালোবাসেন তাহলে বইটা আপনার জন্য। গল্পটা আপনাকে আনন্দ দিবে, দুঃ'খ দিবে শেষে অনেক গুলো সুন্দর সুন্দর শিক্ষা দিবে। আপনার মনের সংকীর্ণতা দূর করতে, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে সাহায্য করতে পারে বইটা। সুখপাঠ্য বইটা পড়লে টাকা ন' ষ্ট হলো এই কথাটা ভাবতে হবে না। ▪️পরিশেষে▪️ নীল সাদায় মোড়ানো চোখ জুড়ানো প্রচ্ছদটা যেন বইটার প্রতিচ্ছবি। 'যাও পাখি বলো তারে' শুধু নাম নয় পুরো গল্পটার সারাংশ। নাম, প্রচ্ছদ, গল্প সবই আমার ভালো লেগেছে। ছাপাখানা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটার বাইন্ডিং চমৎকার। লেখাগুলোও স্পষ্ট। পড়তে অসুবিধে হবে না।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটা বই
Was this review helpful to you?
or
বই: শ্বেত পাথরের মালা লেখক: আফিফা পারভীন প্রকাশনী: ছাপাখানা প্রকাশনী প্রচ্ছদ শিল্পী: ফাইজা ইসলাম মলাট মূল্য: ৪২৫ টাকা প্রচ্ছদ: বইয়ের প্রচ্ছদটি শুধু ভীষণ ভীষণ সুন্দর ও কালারফুল ই নয় বরং বইয়ের ভেতরের একজনের হৃদয়ে বছরের পর বছর ধরে অতি গোপনে লুকিয়ে রাখা শত সহস্র অনুভূতির বাক্স যা প্রচ্ছদ শিল্পী একদম সূক্ষ্ম ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রচ্ছদটিতে। বইটি পড়লে অবশ্য এই অনুভূতিটি খুব সহজেই উপলব্ধি করা যাবে। সারসংক্ষেপ: উচ্চপদস্থ দম্পতির ছোট কণ্যা শবনম এবং মধ্যবিত্ত,ছোট ব্যবসায়ীর বড় ছেলে তিতাসকে নিয়ে শুরু হয়েছে গল্পটি। বারো বছর বয়সের ছোট তিতাস ও শবনমের বাড়ি পাশাপাশি এবং একই কোচিং সেন্টারে পড়তে যাওয়ার জন্য বন্ধুত্ব হয়। দুজনই ক্যাডেট কলেজে ভর্তির জন্য কোচিং করে, তিতাস বুয়েটে ও শবনম মেডিকেলে পড়বে বলে। সমবয়সী শবনম ও তিতাসের স্বপ্ন এক হলেও তাদের মাঝে স্বভাব ও সম্পদের পার্থক্য টা ছিল বিশাল। তবুও বিপরীতমুখী দুজনের মাঝে সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ, হয়তো কোন একজনের ক্ষেত্রে তারচেয়েও শতগুণে বেশি কিছু। এই সম্পর্কের মাঝে শবনম খুঁজে পেয়েছিল বিশ্বাস, ভরসা ও আদর। আর ছোট তিতাস সেও যেন অলিখিত ভাবেই শবনমকে ভালো থাকার দায়িত্ব নিয়েছিল। কেন যে এই দায়িত্ব সে নিয়েছিলো? তা জানতো না তিতাস,আর নাই বা বুঝতো এতো কিছু। তিতাস কিন্তু পড়াশোনা,খেলাধূলায় অলরাউন্ডার ছিল। আর এই এতো এতো গুণের অধিকারী হয়েও কি তিতাস তার স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছিল? শবনম কি সারাজীবন বাবা-মায়ের বাধ্যগত ছিল? সেই বাধ্য বাদকতার ফল কি হয়েছিল? পাঠ প্রতিক্রিয়া: "জীবন কখনো গল্পের মত হয় না কিন্তু গল্পগুলো সব জীবন থেকেই নেয়া হয়" বইটি পড়তে গিয়ে আমার শুধু বার বার এই কথাটিই মনে হয়েছে। আবার এটাও মনে হয়েছে বারবার ,"যে মানুষ যেমন তার কর্মফল এই জীবনেই ভোগ করে তেমন পরিবারের একজনের ভুল পদক্ষেপের খেসারত দিতে হয় অন্যদের।" কখনো কখনো একজনের ভুল সিদ্ধান্ত অন্যদের জীবনটা একদম নষ্ট করে ফেলে,নষ্ট করে ফেলে পরিবারের দীর্ঘদিনের সন্মান। ছোট তিতাস ও শবনম কে নিয়ে লেখা গল্পটি পড়তে গিয়ে মনে হবে যে চরিত্র গুলো একদম জীবন্ত। গল্পের ঘটনা গুলো আশেপাশের,মানুষ গুলো পরিচিত। কোন না কোনভাবে চরিত্রগুলোর সাথে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে বা কারো মাধ্যমে তাদের জীবনের গল্পগুলো শোনা হয়েছে। বইটিতে নিষ্পাপ সমবয়সী দুটি ছেলে মেয়ের বন্ধুত্বের সাথে সাথে আরো আছে সোনাই,দুখাই এর গল্প। আছে মায়াবনের গল্প,আছে মায়াবনের সৌন্দর্যের বর্ণনা। আছে ক্যাডেট কলেজে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য যা আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সাহায্য করবে। আছে শবনমের বোন শাহানার গল্প,তার জীবনের গল্পটা আপনাকে বহুসময়ের জন্য মোহগ্ৰস্থ করে তুলবে। আছে লম্বা ও সুদর্শন ছাত্রনেতা নাজমুলের গল্প,যে কিনা শাহানার প্রেমে উন্মাদ হয়ে নাওয়া-খাওয়া-ঘুম ছেড়ে শাহানার হলের সামনে সারারাত জেগে বসেছিল। কি হয়েছিল সেই সুদর্শন ছাত্রনেতার? শাহানা কি নাজমুলের প্রেমে শেষ পর্যন্ত সারা দিয়েছিল? কি পরিনাম হয়েছিল শেষ পর্যন্ত তাদের প্রেমের? আছে শাহানার রুমমেট চৈতীর গল্প, একরাতের ব্যবধানে কি এমন হলো যে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেল চৈতী? আছে চৈতির প্রতিবেশী রুবার গল্প,এই চরিত্র সম্পর্কে আমি বেশি কিছু বলবোনা। শুধু বলবো এই একটি চরিত্র পুরো উপন্যাসের চিত্র প্লটটাই বদলে দিয়েছে নিপুণভাবে। বইটিতে যেমন আছে অহংকারী মানুষের গল্প, ঠিক তেমন আছে ভালো মানুষের গল্প। তেমন আছে ছোট্ট তিতাসের মনের গহীনে দিনের পর দিন লুকায়িত একটি অধ্যায়, যা সম্পর্কে তার ধারণা না থাকলেও সেই অধ্যায়কে কিন্তু আগলে রেখেছে প্রতিনিয়ত।আছে বাবা-মার বাধ্যমেয়ে শবনমের গল্প যে কিনা তার বাবা-মার চোখের জলের কারণ কখনো হতে চাইনি। এই এতো এতো গল্পের মাঝে যাদের নিয়ে এই গল্প শুরু হয়েছিল সেই শবনম তিতাসের শেষ পরিণতি কি হয়েছিল? সেটাও কিন্তু এখনো জানার বাকি আছে। আর এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হলে পড়তে হবে "শ্বেত পাথরের মালা" বইটি। যা আপনার ভাবনাকেও ভাবতে বাধ্য করবে, গল্পটি পড়ে ভাললাগায় ছেয়ে যাবে মন। বইটিকে সবচেয়ে ভালো লাগার কারণ, পুরো গল্পটা পড়তে কখনো বিরক্তি আসে না। একের পর এক ঘটনা ঘটে গেছে, সেই সাথে পাঠক কখন শেষ পাতায় চলে যাবে পড়তে পড়তে টেরই পাবে না। লেখক এখানে খুব সুন্দর আর মার্জিত ভাবে লিখেছেন যা একফোটাও ন্যাকামো বা পাকনামো মনে হবে না।আর বরাবরের মতই শিক্ষনীয় দিকগুলো অবশ্যই আছে,যা থেকে পাঠক শিক্ষা গ্ৰহণ করতে পারবে অনায়াসে। কালেকশনে রাখার মতো একটি বই এবং প্রতিবারের মতোই আপনাকে ভিন্ন স্বাদ দেবে লেখকের এই সদ্য প্রকাশিত পঞ্চম বইটি। প্রিয় চরিত্র: তিতাস: ভীষণ শান্ত, শিষ্ট, মেধাবী, বুদ্ধিমান, বিবেকবান,এক কথায় অলরাউন্ডার তিতাস ভালোবাসারই আরেক নাম। বাবা মায়ের আদর্শ বড় ছেলের সমস্ত গুণে ভরপুর তিতাস।ভালো সবাই বাসতে পারলেও ভালোবেসে আগলে সবাই রাখতে পারে না, ভালো রাখতে সবাই পারেনা।আর নিজস্ব অনুভূতিকে অন্তরের ভেতরে গচ্ছিত করে বছরের পর বছর লালন পালন করার অপর নাম তিতাস। শবনম: সহজ,সরল, স্নিগ্ধ, নিষ্পাপ, প্রজাতির মতো চঞ্চল,মাতা-পিতা ভক্ত শবনম যার জীবনের লক্ষ্যই বাবা মার চোখে পৃথিবীর দেখা। বাবা-মায়ের স্বপ্নকে পূর্ণ করা যার একমাত্র উদ্দেশ্য। কখনো তাদের অবাধ্য হওয়া বা তাদের দুঃখ কষ্ট দেয়ার কথা সে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে না। শাহানা: ধীর-স্থির,শান্ত-শিষ্ট,চাপা স্বভাবের শাহানা।শবনমের মতো সেও বাবা-মায়ের একান্ত বাধ্যগত সন্তান তবে সময়ের ফেরে তার মনের ভাবগতি আসলে বোঝা মুশকিল। অতিরিক্ত শাসনে পরিবারের বাইরে কারো সংস্পর্শ না পেয়ে পেয়ে সে আসলে নিজের ভালবাসার কাছে দুর্বল হয়ে পরে ভুল করে ফেলে। চৈতী: বিশ্বস্ততা ও সুখে দুঃখে সব সময় পাশে থেকে মাথার ওপর বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে এমন একটি মানুষ সবার জীবনে থাকলে জীবন আসলে অনেক সুন্দর হয়ে যায়। যদিও সেই বটবৃক্ষের ছায়াঘেরা ভালোবাসা সবাই উপলব্ধি করতে পারে না। তবে যে পারবে সে নিজেকে ভাগ্যবান/ভাগ্যবতীই ভাববে নিশ্চিত। নাজমুল: প্রতাপশালী উঁচা,লম্বা,সুদর্শন,ছাত্রনেতা নাজমুলের নেশালো চোখের নেশা কাটানো তো মুশকিল। সে ম্যাটেরিয়ালটাই এমন যে সবাইকে মাতাল ও মোহগ্ৰস্থ করে রাখে, তাকে ফেরানো যায় না। এমন একজন কিন্তু বাস্তব জীবনে আমরা দেখেই থাকি কোন না কোন ভাবে। মনোয়ারা বেগম ও রকিবুল ইসলাম: স্বল্প সময়ের জন্য তাদের পদার্পণ বইটিতে থাকলেও হৃদয়ে গেঁথে থাকবে আজীবন। আমার ভীষণ ভীষণ প্রিয় চরিত্র এই দম্পতি। এছাড়াও রয়েছে রাত্রি, রাশেদ,রফিক,আসাদউল্লাহ খান, সুলতানা রাজিয়া, রেহেনা বেগম, আবদুল লতিফ মজুমদার,আহমেদা বেগম,নিলুফা ইয়াসমিন, ইমতিয়াজ ভূঁইয়া,রুবা । বইটিতে কিছু মানুষের উপস্থিতি আপনাকে কখনো ভালোবাসায় বেঁধে রাখবে তো, কখনো কখনো কারো উপস্থিতি আপনাকে রাগিয়ে দেবে। আমার কাছে সব সময় একটি কথায় মনে হয় বারংবার যে, "প্রিয় চরিত্র গুলো কিন্তু অপ্রিয় চরিত্রের কারণেই আরো বেশি বেশি প্রিয় হয়ে ওঠে।" প্রিয় উক্তি: ১. নামে কী আসে যায়? ভালো করে পড়াশোনা করো। তোমার নাম যদি 'কলা গাছ'ও হয়,লোকে তোমাকে "কলা গাছ স্যার' বলেই সন্মান করবে। ২. প্রকৃত সত্য হলো, ভুল সবাই করে,আর ভুল ভুলই । ভুল কখনো ছোট বড় দেখে শুদ্ধ-অশুদ্ধ হয়ে যায় না। ৩. সবসময় স্বাধীন হওয়া খুব সুখের কিছু নয়। ৪. স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়। ৫. সব সম্পর্কেই দম ফেলার মতো একটু স্বস্তিকর ও স্বাস্থ্যজনক দুরত্ব থাকা ভালো। ৬. সামান্য কিছু মুহূর্তের ভালোলাগা যদি এমন দীর্ঘস্থায়ী খারাপ লাগা বয়ে আনে, তাহলে তার নাম কি ভালোবাসা হয়? ৭. যা পাপ,তা পাপই। তাকে কোনো যুক্তি দিয়ে শুদ্ধ করার চেষ্টা আরও বড় পাপ। ৮. "যা জানিস ঠিক না,তা করাটাও ঠিক না। ভালো হতে হতে দেখিস,বোকা হয়ে যাস না যেন।এসব ছোট ছোট হার যেন সর্বস্ব হারানোর কারণ না যহয়,সেটা অন্তত মনে রাখিস।" ৯. "সব সময় সবার কথা কিংবা কাজের জবাব দিতে হয় না।আর নোংরা কথা ও কাজের তো অবশ্যই নয়।" ১০. সুন্দর সময় জীবনে এমন অল্পই আসে। তবে যেটুকু আসে সেটুকু অঞ্জলিপুটে মনপ্রাণ দিয়ে আঁকড়ে রাখতে হয়। জানিনা ঠিক কতটা আমি লেখকের লেখাকে আমার কাঁচা হাতে তুলে ধরতে পারলাম তবে আমার রিভিউ এর চেয়েও শত সহস্র কোটি গুণে লেখক ভালো লেখেন,তা হয়তো আপনারা তার লেখা পড়েই বুঝতে পারবেন যে আমি বাড়িয়ে কিছুই বলছিনা।এই লেখকের লেখাণীতে কখনো কোন কিছুই অতিরঞ্জিত,ন্যাকা ন্যাকা, অনর্থক বা অযৌক্তিক কিছু লেখেন না। আর এই ধারণা বা বিশ্বাস তার বাকি লেখাগুলো থেকেই জন্ম নিয়েছে।সময় সুযোগ করে পড়বেন আশাকরি ভালো লাগবে, হতাশ হবেন না কখনো। আপুকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর ভিন্ন স্বাদের একটি বই উপহার দেবার জন্য। এত্তো গুলা ভালবাসা। আপনার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা দিন দিন বেড়েই চলেছে, এতো এতো সুন্দর লেখার স্বাদ দেবার কারনে। বি:দ্র: ভুল-ত্রুটি গুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।
Was this review helpful to you?
or
"যাও পাখি বলো তারে" লেখকের অনবদ্য একটা সৃষ্টি। বইটি আমাকে যেমন ভাবিয়েছে, কাঁদিয়েছে তেমন তৃপ্তিও দিয়েছে। আর লেখকের লেখনির যাদু ছিল মুগ্ধ হওয়ার মতোই সুন্দর অনেক বেশি সুন্দর।
Was this review helpful to you?
or
যাও পাখি বলো তারে উপন্যাসটি এক কথায় মনোমুগ্ধকর। বইটি যত পড়েছি তত মুগ্ধ হয়েছি। তুতুলের মতো পরিস্তিতির শিকার অনেক মেয়েই হয় কিন্তু তারা সময়ের কালে হারিয়ে যায়। উপন্যাসে লেখিকা যেভাবে তুতুলের অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরে আসা দেখিয়েছে তা সব সময় প্রশংসার দাবীদার। শুভকামনা সবসময়।
Was this review helpful to you?
or
ইউনিক একটা প্লট নিয়ে লেখা এই উপন্যাসের ভাষা মার্জিত ও সুন্দর। ইনশাআল্লাহ খুব চমৎকার একটি বই হবে 'যাও পাখি বল তারে'।
Was this review helpful to you?
or
বুক রিভিউ উপন্যাস: যাও পাখি বলো তারে লেখনীতে: আফিফা পারভীন ক্যাটাগরি: সামাজিক প্রকাশনী: ছাপাখানা প্রকাশনী প্রচ্ছদ: খালেদ সাইফুদ্দিন প্রকাশকাল: বইমেলা ২০২২ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩২০ মুদ্রিত মূল্য: ৬২৫ টাকা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ গল্পের নেশা প্রখর। অবসর কাটানো কিংবা মন খারাপের সঙ্গী হিসেবে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। আর ভালো বই মানুষের মাঝে প্রচার ও প্রসার করার জন্য বুক রিভিউয়ের কোনো বিকল্প নেই। রিভিউ কিংবা পাঠ পর্যালোচনা একটি বইয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একটি বইকে সুন্দরভাবে অন্যের নিকট উপস্থাপন করতে হলে একটি সুন্দর পাঠ পর্যালোচনা দরকার। এর অংশ হিসেবে প্রচ্ছদ, ফ্ল্যাপের লেখা, উৎসর্গ, বইয়ের মান সবই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। প্রচ্ছদ: বইয়ের দিকে নজর পড়তেই যে বিষয়টি হৃদয় হরণ করে তা হচ্ছে বইয়ের প্রচ্ছদ। আকাশি রঙের মধ্যে গোটা গোটা অক্ষরে সাদা রঙের লেখা "যাও পাখি বলো তারে" লেখাটি যেকোনো বই প্রেমিকে আবেগ্লাপুত করে তোলে। উপন্যাসের নামটিও যেকোনো প্রেমিক মনকে দোলা দিয়ে যায়। মনে করিয়ে দেয় ভালোবাসায় কাতর হওয়া দুই প্রেমিক প্রেমিকার হৃদয় নিংড়ানো আহবান। বইয়ের ফ্ল্যাপ: বইয়ের ফ্ল্যাপ এবং উৎসর্গের মাধ্যমে একজন লেখকের সৃজনশীলতার আভাস পাওয়া যায়। সম্পুর্ণ উপন্যাসটিকে মাত্র কয়েকটি শব্দে আবদ্ধ করতে হলে দরকার প্রখর বিবেচনা ও বুদ্ধিমত্তা। এদিক দিয়ে লেখিকা সার্থক। মাত্র গোটা কয়েক শব্দে এত সুন্দর ফ্ল্যাপ সত্যিই প্রসংসার দাবীদার। উৎসর্গ: উৎসর্গ একটি উপন্যাসের অন্যতম মৌলিক দিক। একটি উৎসর্গের মাধ্যমে লেখিকার আন্তরিকতার প্রকাশ পায়। প্রকাশ পায় তার চিন্তা চেতনা, ভাব ও ভালোবাসা। এই বইয়ের উৎসর্গ এতটাই সুন্দর ও অনন্য যে এই উৎসর্গ পড়েই নিজের জীবনের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে। এত সুন্দর একটা উৎসর্গের জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা। পাঠ পর্যালোচনা: "যাও পাখি বলো তারে" আফিফা আপুর লেখা চতুর্থ দীর্ঘ উপন্যাস ও তৃতীয় বই। লেখিকার শব্দচয়ন-ভাষা অলংকার, সাবলীলতা, শালীনতা বজায় রেখে লেখা চমৎকার এই উপন্যাসটি পড়ার সময় বারবার ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি, চোখের জল নাকের জল এক করেছি, কিছু পবিত্র মানুষের সুন্দর চিন্তাভাবনায়র সাক্ষী যেমন হয়েছি তেমন সমাজের কিছু নোংরা দিক ও মানুষের প্রতি ঘৃণাও জন্ম নিয়েছে। বুঝতে পেরেছি আমরা মানুষই মানুষের শত্রু। যে সমাজ আমাদের স্থান দেয় সেই সমাজই আবার আমাদের সমাজচ্যুত করে। উপন্যাসে দু'টি সুন্দর পরিবারের সাথে একটা কুৎসিত পরিবারও রয়েছে। এসবই আমাদের সমাজের প্রতিচ্ছবি যেন। এক পরিবার সর্বাবস্থায় তার পরিবারের মানুষের পাশে থাকে, অন্য পরিবার অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্য বাড়িছাড়া করে আবার একটা সন্তানের অপেক্ষায় মানুষ সারাজীবন অপেক্ষা করে। কেউ ভালোবাসার মানুষটিকে সর্বাবস্থায় আগলে রাখে, কেউ ভালোবাসার মানুষটিকে সুখী রাখতে অনেক দূরে থেকে বহুদূরে চলে যায়, বুকের মাঝে ভালোবাসাকে রাখে সুপ্ত আবার কেউ কেউ হঠাৎ করে আসা ভালোবাসায় ভেসে বেড়ায় সুখ নামক সমুদ্রে। সব মিলিয়ে এত সুন্দর এত সুন্দর এই উপন্যাসটি। জীবন যেমন সুন্দর এই উপন্যাসটিও তেমনি সুন্দর। কাহিনি সারসংক্ষেপ: উপন্যাসটি শুরু হয়েছে গল্পের প্রধান নারী চরিত্র "তাসফিয়াহ তাফাননুন তুতুল" এর উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে। বাবা- মায়ের আদরের মেয়ে ও একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র আদরের বোন, বাইরের জগৎ সম্পর্কে যার জ্ঞান ক্ষীণ থেকেও ক্ষীণ। পড়াশোনায় একেবারেই সাদামাটা হলেও চারদিকে সাড়া পড়ে যাওয়া সৌন্দর্যের অধিকারী 'তুতুল' গল্পের প্রধান পুরুষ চরিত্র 'তানিম'র অতি আদরের 'পুতুল'। বিয়ে ঠিক হয় শহরের স্বনামধন্য এক পরিবারে। কিন্তু কথায় বলে না, "মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক" ঠিক তেমনই ছোট বেলা থেকে আগলে রাখা সবার চোখের মনি তুতুলের জীবন এক রাতের অন্ধকারে এলোমেলো হয়ে যায়। আমাদের সমাজ ভালোর কদর করতে কম জানে, আর খারাপের প্রচার করতে বেশি জানে। খারাপটা কেন হলো, এর পেছনের কারণ কী, কিছুই বিবেচনা করে না। জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে, বেঁচে থাকার লড়াইতে তুতুলের পাশে কেউ কেউ নিঃস্বার্থভাবে এসে দাঁড়িয়েছিল, আবার কেউ কেউ ক্রমাগত তার বাঁচার লড়াইকে আরও কঠিন করে দিচ্ছিল। জীবনের এই নানা টানাপোড়েনে, দৈহিক ও মানসিক ভাবে অসুস্থ তুতুলের এবং কিছু মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, মানসিকতার বদল... সবকিছু খুব অভিজ্ঞ হাতে দক্ষভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পুরো উপন্যাসই দারুণ দারুণ বাক্যচয়নে পরিপূর্ণ। গল্পের মাধ্যমে পাঠককে দেওয়া মেসেজগুলো অদ্ভুত সুন্দর। খুব ছোট কয়েকটা ভালোলাগার লাইন তুলে ধরলাম। "যা সত্য তা চিরদিনই সত্য। সত্য হচ্ছে আগুনের মতো, যতই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হোক, ঠিক নিজের তেজে জ্বলে উঠবে। আজ হোক কিংবা কাল।" "মিথ্যেকে যত সহজে মানুষ গ্রহণ করে, সত্যকে ঠিক তত সহজে বর্জন করে।" "ভালোবাসা মানুষকে বদলে দেয়, জীবনকে স্বপ্নের চাইতেও বেশি সুন্দর করে দেয়।" শেষ কথা: নিঃসন্দেহে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। বইটি পড়ে মনে হতে পারে অনেকদিন এমন সুন্দর গল্প পড়িনি। গল্পটি যেন শুধু গল্পের পাতায়ই সীমাবদ্ধ থাকে, কোনো মানুষের জীবনে এমন বিভীষিকাময় গল্প না আসুক তবে ভয়ংকরভাবে ভালোবাসার জন্য তানিম, তকী, আফনাফ আসুক। ভালোবাসার রঙ রাঙিয়ে দিক কিংবা অসময়ী ভালোবাসার বৃষ্টি সিক্ত ও পূর্ণ করে দিক সবার জীবন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
Was this review helpful to you?
or
মাত্রাতিরিক্ত উপমার ব্যবহারে আমার কাছে বইটি তেমন ভাল লাগে নি। প্রত্যেকটা লাইনে লাইনে তুলনা আর উপমার ব্যবহারে বইটির পেজের সংখ্যা বেড়েছে। ৮০পৃ পড়ার পর কাহিনী শুরু হয়। চরিত্রের Development এ এত উপমা ব্যবহার পছন্দ হয় নি।
Was this review helpful to you?
or
দারুন একটি উপন্যাস। তুতুল আর তানিমের টক ঝাল মিষ্টি মুহূর্তগুলো ছিল অসাধারণ। প্রধান সব চরিত্রগুলো ছিল অনবদ্য, কিন্তু আহনাফের কথা না বললেই নয় - এমন মানুষদের আমাদের এই সমাজে অনেক বেশী প্রয়োজন। গল্পে রূপক অংশ একটু বেশীই ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু সর্বোপরি চমৎকার একটি লেখা।
Was this review helpful to you?
or
#যাও_পাখি_বলো_তারে সোনার পালঙ্কের ঘরে লিখে রেখে ছিলেম নারে যাও পাখি বলো তারে সে যেন ভোলে না মোরে।।। এমনই কিছু মানুষের মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি এবং উত্থান-পতনের গল্প নিয়ে রচিত একটি চমৎকার উপন্যাস শেষ করলাম আজ। জনপ্রিয় পাঠক নন্দিত লেখক আফিফা পারভীনের তৃতীয় উপন্যাস "যাও পাখি বলো তারে"। কিছু মানুষের মনের সুপ্ত পাখির ভাষাকে সবাই বুঝতে পারে না, তাদের মনের সুপ্ত আর্জি সবার মন পর্যন্ত পৌঁছায় না। মনের ভালোবাসার ছোট্ট পাখিটির এই ভাষাকে উপন্যাসের পাতায় তুলে ধরেছেন লেখক। ★পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ মানবজীবন পাওয়া না পাওয়ার কাঠগড়ায় দোদুল্যমান। আমরা প্রতিটা মানুষই স্বভাব-চরিত্রে ভিন্ন। তাই আমাদের সকলের আশা-আকাঙ্ক্ষাও ভিন্ন। এই গল্প ঠিক এমনই কিছু মানুষের ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র ফুটে উঠেছ। গল্পের মূল চরিত্র তানিম ও তার ভালোবাসা পুতুল রূপি তুতুল। অন্য সব গল্পের মতো এই গল্পের নায়িকা মেধাবী, চঞ্চল বা সব কাজে পারদর্শী নয় আবার তানিম ও তথাকথিত নায়কদের মতো হ্যান্ডসাম শান্ত, ভদ্র, বা ধনীর দুলাল নয়। চরিত্রগত দিক থেকে তানিম আর তুতুল সম্পূর্ণ বিপরীত। তবুও কি করে যেনো তাদের এই ভিন্ন স্বত্তা এক হয়ে যায়। প্রচন্ড খ্যাপাটে গুন্ডা তানিম একসময় তুতুলের ভালোবাসায় বাউণ্ডুলে থেকে সংসারী হয়ে যায়। কিন্তু সব সুখ সবার কপালে সয় না। তানিম আর তুতুলের এই পবিত্র ভালোবাসাও সমাজের কিছু মানুষ রূপি হায়নার কালো থাবায় জর্জরিত হয়ে মুখ থুবরে পরে। তানিম কি পারবে তার পুতুলকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে? পাখির মতো কমোল তুতুল কি পারবে নিষ্ঠুর এই সমাজে মাথা উচু করে বাচঁতে? যে পাখির ডানা উড়ার প্রাক্কালে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, সে পাখি কি আবার কখনো মুক্ত আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখতে পারবে? নাকি খাচাঁর ভিতরই ডানা ঝাপটে ছটফট করে মরে যাবে। ★★চরিত্র বিশ্লেষণঃ লেখক গল্পের প্রতিটা চরিত্র খুব সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। অনেকগুলো চরিত্রের ভিড়েও কোন চরিত্র স্বল্প সময়ের জন্যও নিজের সক্রিয়তা হারায়নি। তানিম,তুতুল,মেহেরুন,তকি, আফিয়া বেগম, আহনাফ, মালিহা,মতির মা,রমেশ খুরো,মীরা দেবি,তুতুলের বাবা-মা, সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে চমৎকারভাবে উপন্যাসটি রচনায় অবদান রেখেছে। ★ তানিমঃ গল্পের কেন্দ্রীয় পুরুষ চরিত্র তানিম। পাড়ার সকলে তাকে গুন্ডা তানিম নামেই চেনে।স্বভাবে উড়নচণ্ডী,রগচটা ও বাউন্ডুলে তানিম নিজের পরিবারের প্রতিও সমানভাবে দায়িত্ববান। বিপদে ভেঙে না পড়ে শক্ত হাতে তুতুল ও নিজ পরিবারের হাল ধরে এটাই প্রমান করেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও নিজের মন পাখির ভাষা বুঝতেই অনেক দেরি করে ফেলে। ★তুতুলঃ আমাদের গল্পের নায়িকা তুতুল তথা তানিমের পুতুল দেখতে এবং স্বভাবেও ঠিক পুতুলের মতোই নরম তুলতুলে। তাইতো রমেশ খুরো তাকে তুলতুলি ডাকত। পড়াশুনায় তার যেমন অনিহা সংসারের কাজ,সাজগোজ, আর রান্নায় তার জুরি মেলা ভার। মিঠাইয়ের তুতুল দুই পরিবারের সকলের ভিষণ আদুরে ছোট্ট প্রাণ পাখি। তানিমের ভাষায় স্পেশাল ক্যাটাগরির লজ্জাবতী। কিন্তু এত যত্নে রাখা পাখিটি হঠাৎ শিকারীর নজরে পড়ে যায়। দুমরে মুচরে যায় তার ডানা। তুতুল কি পারবে আবার উড়তে? ★মেহরুন ও তকিঃ গল্পের এই দুটি সহযোগী চরিত্র তুতুলে ভাই আর, প্রান প্রিয় বান্ধবী। নিজের বান্ধবীর জন্য নিজ পরিবারের বিপক্ষে যেতে এক মুহূর্ত ও চিন্তা না করা প্রচন্ড মেধাবী আর কম্পিউটার খেতাবে ভূষিত মেহেরুন পুরো গল্প জুড়েই ছিল প্রানবন্ত। ওপর দিকে তকি ছিল প্রচন্ড হিসেবি, পরিবারের সকলের প্রতি দায়িত্ববান, বাড়ির বড় ছেলে,আর ক্যালকুলেটর খেতাবে ভূষিত চমৎকার একজন ব্যক্তিত্ব। এই কম্পিউটার ও ক্যালকুলেটর যখন পাশাপাশি তাদের পথচলা নির্ধারণ করে তখন তা পাঠক হৃদয়ে অপার শান্তি বয়ে আনে। ★মিঠাইঃ আফিয়া বেগম সম্পর্কে তানিমের মা ও তুতুলের মিঠাই। নামের মতোই মিষ্টি একজন মানুষ। যে কিনা নিজের ভালোবাসা ও যত্ন দিয়ে দুটো পরিবার এক করে রেখেছিলো। পু্ত্র স্নেহে ভরপুর এই মা নিজের ছেলের মনের খবর বুঝতে সবসময়ের মত তৎপর। তাইতো তানিম বলার আগেই তিনি বুঝে যান তার পাগলা ছেলের মন পাখিটা কেন এত ছটফট করছে। ★আহনাফঃ পুরো উপন্যাসে আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র এটা। জানি না কেন উপন্যাসে আহনাফ চরিত্রটি খুবই ছোট পরিসরে থাকলেও আমার মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে গেছে। হয়তো তার চমৎকার ব্যক্তিত্বর জন্যই। প্রচ্ছদ ও নামকরণঃ যে কোন উপন্যাসের ক্ষেত্রে এর প্রচ্ছদ ও নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন কর। সে ক্ষেত্রে আমি বলব বইটির প্রচ্ছদ চমৎকার। এর চোখ ধাঁধানো প্রচ্ছদটি যেকোনো পাঠককে আকর্ষিত করার জন্য যথেষ্ট। আর পুরো উপন্যাস পড়ে বোঝা যায় এর নামকরণ যথার্থ হয়েছে। ★প্রিয় উক্তিঃ ১. জলজ্যান্ত নরম-আদুরে, মোমের পুতুলের মত তুতুল যেন রাতের আঁধারে একদম হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। ২. তামিম-তুতুলের মাঝে একটা আলাদা নিষ্কলুষ জগত ছিল, যেখানে পার্থিব সমস্ত জটিলতা ও নিয়ম নিষিদ্ধ ছিল। ৩. তুতুল আপনার এতটাই কাছে ছিল যে, আপনি তাকে কখনোই দেখেননি। যদি দেখতেন তাহলে বুঝতেন, তার ভালো থাকার জন্য আপনি যথেষ্ট। ৪. তোর জীবনের সব রং শেষ হয়েছে তো কী হয়েছে? আমার জীবনের সব রং দিয়ে আমি তোর জীবন আবার রাঙাব। ৫. একে অপরের প্রতি অপার মায়া হৃদয়ে নিয়ে দুইজন নিরব, নিঝুম মানব-মানবীর নৈঃশব্দের মাঝে উপলব্ধি করছিল তাদের হৃদয়ের না বলা কথাগুলোকে, অব্যক্ত ভালোবাসাকে। ৬. পৃথিবীর সবার জন্য যা নরমাল, আমার জন্য সেটাই সবচেয়ে বেশি এ্যাবনরমাল। ৭. কিছু কিছু ঐন্দ্রজালিক মুহূর্ত মানুষকে সব ভুলিয়ে দেয়, সব এলোমেলো করে দেয়। ৮. ভালোবাসা শুধুমাত্র বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখার জিনিস না। তাকে বুকের গভীরে লালন করতে হয়, তবে যাকে ভালবাসিস তাকে সেটা কথায়-কাজে বুঝতেও দিতে হয়। ৯. যে পাখি সদ্যই উড়তে শিখেছে সে পাখি জানে ওড়ার আনন্দ কতটা। সেই আনন্দের আতিশয্যে যখন-তখন কারণে-অকারণে তার উড়ে বেড়াতে মন চায়। ১০. প্রিয়জনের হৃদয়ের উষ্ণতার থেকে আরাম ও সুখের আর কিছুই নেই। একদম মাপা ঠিক যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই উষ্ণতা থাকে। কমও নয় বেশিও নয়। ★★★উপন্যাসটি এমন চমৎকার সব সংলাপে ভরপুর। বইটি শেষ করার বহু দিন পরেও এর রেশ মনে রয়ে যাবে। বারবার পড়তে ইচ্ছে হয় এমন একটা বই হচ্ছে "যাও পাখি বলো তারে "। এজন্য লেখক অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। বইঃ যাও পাখি বলো তারে লেখকঃ আফিফা পারভীন প্রচ্ছদঃ খালেদ সাইফুদ্দিন প্রকাশনীঃ ছাপাখানা মুদ্রিত মূল্যঃ ৬২৫ টাকা
Was this review helpful to you?
or
#যাও_পাখি_বলো_তারে #পাঠ_অনূভূতি ♦এক নজরেঃ •উপন্যাসের নামঃ যাও পাখি বলো তারে লেখকঃ আফিফা পারভীন •ধরনঃ সামাজিক, রোমান্টিক •প্রকাশনীঃ ছাপাখানা প্রকাশনী •প্রচ্ছদঃ খালেদ সাইফুদ্দিন •মুদ্রিত মূল্যঃ ৬২৫ •পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৩২০ •প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ২০২২ লেখনীতেঃ রিফায়াত হাসান সাকিব ♦ভূমিকাঃ আমার কিছু এলোমেলো অভ্যাস আছে । যেগুলো নিয়ে ভাবতে বসলেই আমি উদাসীন হয়ে উঠি । তার মধ্যে একটি হলো অদ্ভুত সুরে আস্তে বয়ে চলা কোনো রবীন্দ্র সঙ্গীত এর সুরে ভাসতে ভাসতে কোনো উপন্যাস পড়তে থাকা । আরেকটি হলো, কোনো গভীর, লোকারণ্য জায়গায় আমি মানুষকে দেখতে পছন্দ করি, খেয়াল করে মনোযোগ দিয়ে তাকাতে পছন্দ করি । এরপর হুটহাট কোনো এক রাতে মনে পড়ে, আমি যেমন কোনো গাড়িতে চলমান অবস্থায় আমার মনের শহরে একগাদা গল্প নিয়ে ঘুরি, হেঁটে হেঁটে হাসিতে ফেটে পড়ি, মুচকি হেসে তাকিয়ে থাকি, কোনো কোনো অদ্ভুত অজানা মানুষ আমার জীবনে আসলে কি প্রভাব পড়বে ভাবতে পছন্দ করি । অন্য মানুষরাও কি তাই ভাবে । প্রতিটি মানুষের মনের মাঝেই কি একটা ভাবনার নদী বিচরণ করে । যার কোনো আকার নেই, সীমানা নেই । এই এসব ভাবতে ভাবতেই আমি আমার পাঠ অনুভূতি শুরু করলাম । ♦পারিপার্শ্বিক দিকঃ আজ ঠিক যখন বেলা বারোটা, আমি তখন হঠাৎ করে ঠিক করেছিলাম আজকে একটা উপন্যাস পড়তে হবে । আর ঢাকায় থাকা আমি, একাকী রুমে বসে থাকা আমি, প্রথমেই যে বইটির উপরে নজর পড়েছে তা হলো, ‘যাও পাখি বলো তারে ।’ আমি ভেবেছিলাম আমার সবসময়ের পড়া হিসেবে যে, ৩২০ পৃষ্ঠা থাকা বইটি অবশ্যই পড়তে পড়তে সন্ধ্যা হয়ে যাবে । আমি সন্ধ্যার মুহূর্তটা হারিয়ে ফেলবো । কিন্তু সেটা যে রাতেও ছড়িয়ে যাবে ভাবতে পারিনি । একনাগাড়ে পড়তে থাকা উপন্যাসটি ঠিক দুপুর ১টায় পড়া শুরু করেছিলাম । আর শেষ করতে করতে সময়টা ঠিক রাত ১০টা । ♦নামকরণঃ পৃথিবীতে মানুষের মাঝের যে মনটা, সেটা যখন অদ্ভুত চুপিসারে নিজেকে কত কত বার্তা পাঠায়, অথচ তার টুংটাং শব্দ পাশে বসে থাকা মানুষটাও শোনে না । আমার অদ্ভুত লাগে । মনে হয়, এই যে মানুষ মনে এত ঝড় তুলে । কত কিছু ভাবে এগুলো তো একরকমের অচিন পাখিই । এই পাখিকে আমরা কেউ চিনি না, কেউ দেখি না । কিন্তু কী মারাত্মক অবলীলায় ভেসে ভেসে উড়ে উড়ে কত কথা মনের মাঝেই বলতে থাকে । কম্পন তুলে । এই পাখিই যেন মনের দরজা খুলে বের হয়ে পাশের মানুষটিকে সব বুঝিয়ে দিয়ে যাক অদৃশ্যে থেকে ভাসতে ভাসতে । কানে কানে হাওয়ায় ঢেউ তুলে দিয়ে যাক । জীবনের এই বোঝানো বা না বোঝানো দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা পাখির ডানা ঝাপটে মনের কথা বুঝানো সবকিছু পাখিই বলে দিক, আর পাখিকে কেউ আহ্বান করুক, “যাও পাখি, বলো তারে । উপন্যাসের নামটি যথার্থ লেগেছে আমার । ♦ফ্ল্যাপে লেখাঃ প্রতিটি মানুষই বাহ্যিক ও অন্তর্গত দিক থেকে ভিন্ন । তাই মানুষের বুকের খাঁচায় পুষে রাখা হৃদয় পাখিটির ভাষাও হয় বিভিন্ন রকম । জীবনের পথে কখনো কখনো দুইটি মানুষ একসাথে অনেকটা পথ হেঁটেও সেই পাখির ভাষা বোঝে না । আবার সম্পূর্ণ ভিন্নরকম দুইটি হৃদয় পাখি একে অন্যের ভাষা অবলীলায় বোঝে । কেন এমন হয়? কী সেই ভাষা যা বোঝা না বোঝার দোলাচালে মানুষের জীবন হয় উথাল-পাতাল । কিছু মানুষের হৃদয় পাখির ভাষাকে জীবনের গল্প আকারে তুলে ধরার প্রয়াসই “যাও পাখি বলো তারে ।” ♦প্রচ্ছদঃ আমার প্রিয় রং নীল । সেই নীলে ভাসতে থাকা প্রতিটি প্রচ্ছদকে আমার মায়ায় ভাসতে থাকা একেকটি নগরী মনে হয় । মনে হয় প্রতিটি প্রচ্ছদ যদি নীলে সুন্দর করে সেজে চোখের সামনে সুন্দরভাবে দাঁড়ায় আমি দুর্বল হয়ে যাবো । এই প্রচ্ছদটি প্রথম যেদিন দেখেছিলাম আমার এত ভালো লেগেছিল, কিন্তু আমি তাকাতে পারিনি । হাঁসফাঁস করছিলাম । মনে হচ্ছিল এত সুন্দর প্রচ্ছদটি আমি বারবার দেখেও শেষ করতে পারবো না । প্রচ্ছদটি এত সুন্দর করে উপন্যাসের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছে যে প্রচ্ছদটি এখন আরো ভালো লাগছে । বিশেষ করে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেয়া পাখিটা । প্রচ্ছদশিল্পী অবশ্যই অসাধারণ কাজ করেছেন এক্ষেত্রে । ♦উৎসর্গঃ গোটা পৃথিবী জুড়ে একজন মানুষ যদি নিজেকে কিছুতে স্থাপন করে সৎভাবে বলতে চায় তাহলে যেটা দেখা যায় মনের আয়নায় । এই উপন্যাসে সেরকম একজনকেই উৎসর্গ করার বিষয়টা আমার ভালো লেগেছে খুব । আমি উৎসর্গ করার তিনটি লাইন, প্রতিটি শব্দ বেশ কয়েকবার পড়েছি । ♦চরিত্র বিশ্লেষণঃ বড় উপন্যাসের সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয় হলো চরিত্র নিয়ে খেলা । যা এই উপন্যাসেও আছে । তাই অনেক অনেক চরিত্র থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু চরিত্র নিয়ে আমি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবো । •তুতুলঃ নিজের দুনিয়ায় হাসি খুশিতে ভাসতে থাকা মেয়েটি গোটা দুনিয়ার ব্যাপারে উদাসীন । যে জানে না দুনিয়ার বাস্তব রূপটি কেমন । অতি হাস্যোজ্জ্বল মেয়েটি স্বভাবে কারো সাথে মিশুক, কারো কাছে অতি সহজেই ভেঙ্গে পড়ে । অদ্ভুত রহস্যময় আত্মসম্মানবোধ নিয়ে থাকা মেয়েটির মাঝে প্রবল এক মায়া বোধ আছে যা সহসা ভেঙ্গে পড়ে না । •তানিমঃ ডাকাবুকো স্বভাবের দুরন্ত ছেলেটি কাউকে নিজের অনুভূতি দেখাতে চায় না । নিজের স্বভাব, প্রকৃতি প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার একটা ভয় কাজ করে তার মাঝে । প্রতিটি মানুষকে অসাধারণ ভাবে সম্মান করতে জানে সে । অভিমানে ভাসতে থাকা ছেলেটি কাউকে গভীরভাবে ভালোবাসতে জানে । •মেহেরুনঃ অসাধারণ একজন বন্ধু সে । যে জানে জীবনে বন্ধুর প্রতিটি মুহূর্তে কিভাবে পাশে দাঁড়াতে হয় । প্রতিটি মুহূর্তে ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করতে পারে সে । •আফিয়া বেগমঃ এই মানুষটি নিয়ে যা বলবো তাই কম বলা হবে মনে হচ্ছে । বন্ধুভাবাপন্ন মানুষটি সবাইকে খুব বুঝতে জানে । কারো কথায় প্রভাবিত না হয়ে নিজের চোখে চোখ রেখে আলতো ভাবে তাকিয়ে সবাইকে বুঝাতে পারে । প্রতিটি মুহূর্তে একজন পাশে থাকার মতো চরিত্র তিনি । •তকীঃ পৃথিবীতে বোনের ভাই কেমন হয় তা জানার জ্ঞান আমার খুবই কম । তবে আমি এই সম্পর্কগুলো খুব বোঝার চেষ্টা করি । দেখার চেষ্টা করি । তকী অসাধারণ একজন ভাই । যে জানে নিজের পরিবারের প্রতি দায়িত্ব কিরকম হতে পারে । পাশে থাকা প্রতিটি প্রিয় মানুষের প্রতি দায়িত্ব দারুণভাবে করতে থাকে । •মালিহাঃ মালিহা এর চরিত্রের বিভিন্ন ধাপ আছে । তাকে কখনও মনে হয়েছে নিজের পায়ে দাঁড়ানো প্রবল আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন একজন নারী । যে সহসা ভেঙ্গে পড়ে না । আবার কখনও মনে হয়েছে হঠাৎ করেই ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাওয়া একজন । •মতির মাঃ মনের মাঝে প্রচণ্ড মমতা নিয়ে থাকা একজন মানুষ । যা সহসা প্রকাশ পায় না । •রমেশ বাবুঃ এই মানুষটার প্রতিটি উপস্থিতিতে আমি ভেবেছি এই মানুষটি এত ভালো কেনো । এত সুন্দর ভাবে সব বুঝে যায় কেনো । •আহনাফঃ পরিশেষে আহনাফ! আমি এতক্ষণ অপেক্ষা করেছি কখন আহনাফ চরিত্রটি আসবে । আহনাফের প্রতিটি সংলাপ আমার প্রিয় । আহনাফ অসম্ভব ভালো মনের একজন মানুষ । যে জানে জীবনে ভালোবাসার অনুভূতি কিরকম হয় । পাশের মানুষদেরকে সমর্থন করার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যায় সে । ♦ টুকিটাকিঃ এই উপন্যাসে কিছু প্রিয় টুকিটাকি বিষয় আছে । যেগুলো আমি সাজিয়ে রেখেছি মনের মাঝে । কম্পিউটার এবং ক্যালকুলেটর কখন মিলে মিশে এক হয়ে যায় আমি জানি না । কিন্তু দুজন মানুষ রূপী কম্পিউটার ক্যালকুলেটর অদ্ভুত ভাবে এক হয়ে যায় । তাদের মুহূর্তগুলো ভালো লাগে । সেই যে রমেশ বাবু এবং মীরা দেবী দ্বিতীয় বার সামনে আসলো তখন আমি হাসলাম । ডাঃ রওশন আরা এর কিছু টুকিটাকি বিষয়ও আমার ভালো লেগেছে । ♦প্রিয় চরিত্রঃ এই উপন্যাসের প্রিয় চরিত্র অনেকগুলো । কখনও আমার মনে হয়েছে এই উপন্যাসের প্রিয় চরিত্র তুতুল । কখনও আবার মনে হয়েছে তানিম । কখনও আবার এই দুজনই সরে গিয়ে মনে হয়েছে, আসলে তো প্রিয় হওয়া উচিত আফিয়া বেগম এর । কখনও আবার মনে হয়েছে আহনাফও বেশ অসাধারণ একটি চরিত্র । এই এত কিছুর মিশেলে থাকা, আমার পাঠক আমিকে দ্বিধায় রাখা ভালো লাগায় ভাসতে ভাসতে এই উপন্যাসের যতগুলো চরিত্র আমাকে হাসিয়েছে, আমাকে ভাবিয়েছে তারা হয়ে থাকুক আমার প্রিয় চরিত্র । কিছু কিছু জিনিস না হয় আমার অজানাতেই থাকুক । ♦একক উক্তিঃ “পৃথিবীতে ভালোবাসার থেকে বড় টান নেই ।” ♦পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ √যাও পাখি বলো তারে । এই উপন্যাসটি নিয়ে বলতে গেলে, প্রথমেই যেটি বলতে ইচ্ছে করে তা হলো উপন্যাসের বর্ণনামূলক ভাবভঙ্গি । উপন্যাসের পটভূমিতে এটা মারাত্মক ভাবে প্রভাব পড়েছে । যে কারণে এই বর্ণনামূলক ভাবভঙ্গি আমি বেশ খেয়াল করে পড়েছি । কারণ এই বর্ণনামূলক ভাবটাই উপন্যাসের পটভূমিকে আস্তরণ করে জীবনধারায় ছেয়ে গেছে । তবে উপন্যাসের এক্ষেত্রেও বেশ কয়েকটা ধাপ আছে বলে আমার মনে হয়েছে । কেননা প্রথমে উপন্যাসের বর্ণনায় কিছুটা ক্ল্যাসিকাল ভাব জুড়ে বসেছিল । তারপরে জীবনধারায় গতিপথে পরিবর্তন এসেছে, উপন্যাস নিজের ধারায় বয়ে চলেছে । যে কারণে তার মাঝে সামাজিক ভাবে ফুটে উঠেছে । সবথেকে বড় কথা, এই পরিবর্তনে উপন্যাসের গতিকে একটুও কম লাগেনি আমার কাছে । মনে হয়েছে নিজস্ব ধারা বজায় রেখে খুব যত্ন করে বয়ে চলেছে উপন্যাসটি । যে কারণে কিছু কিছু বর্ণনায় মোড়ানো উপন্যাসটির সংলাপগুলোও হঠাৎ হঠাৎ করে পছন্দ হতে শুরু করেছে । √উপন্যাসের জীবনধারায় কিংবা পটভূমিতে যারা একটা কল্পনায় তোলা অস্তিত্বকে চোখের সামনে অদৃশ্যে এনে দেয় সেই চরিত্রগুলো উপন্যাসের প্রাণকেন্দ্র । যা গঠন এবং তাদের উপস্থিতি সাজানো আমার কাছে খুবই কঠিন লাগে । মনে হতে থাকে এটা সাজানো খুবই কঠিন । এই উপন্যাসে প্রতিটি চরিত্র গঠন এবং তার উপস্থিতি যথাযথ সময়ে এসেছে বলেই আমার মনে হয়েছে । তবে একটা সময়ে সামাজিক ভাবে বয়ে চলা উপন্যাসে অনেকগুলো চরিত্র নিয়ে বয়ে চলা উপন্যাসে হঠাৎ করে শুধু তুতুল এবং তানিমকে নিয়েই জীবনধারা বয়ে চলা বিষয়টা একটু অন্যরকম ছাপ দিয়েছিল । তবে প্রতিটি চরিত্র সাজানো, বিশেষ করে আহনাফ, রমেশ বাবু, মেহেরুন, মালিহা এই চরিত্রগুলোকে বেশ যত্ন করে সাজানো হয়েছে । যে কারণে আরো ভালো লেগেছে আমার । ♦প্রিয় অংশঃ এই উপন্যাসের প্রথম যে প্রিয় অংশটি আমার চোখে পড়েছিল তা হলো ৫০তম পৃষ্ঠাটি । কারণ এই অংশটুকুতেই উপন্যাসটির মাঝে একটা মোড় এসেছিল জীবনধারায় । তার পরের যে প্রিয় অংশটি তা হলো ১৫৪ পৃষ্ঠায় । এই মুহূর্তে আমি তখন এত হেসেছিলাম যে শুধু ভেবেছি, যে হঠাৎ করে একটু হাস্যকর পরিস্থিতি আসলেও বোধহয় দরকার ছিল খুব । পুরো উপন্যাস জুড়ে যদি কারো মনের অচিন শহরের অচিন পাখি সব না বলেও বুঝাতে চায়, বেরিয়ে আসতে চায় ঠিক সেরকম পরিস্থিতিতে পড়ে আমার এই উপন্যাসের সবথেকে প্রিয় অংশ এবং প্রিয় মুহূর্ত ছিল ২৫০-২৫১ পৃষ্ঠা দুইটি । এই পৃষ্ঠা দুইটি পড়েই আমি বেশি অনুভূতিতে ভেসেছি । তাছাড়াও উপন্যাসের শেষের জলছাপের অনুভূতিতে, কিংবা চরিত্রের উপস্থিতিতে আমার ভালো লাগা মিশে আছে । ♦অন্যান্য বিষয়ঃ এবার উপন্যাসের অন্যান্য দিকে আসি । √প্রকাশনীঃ প্রকাশনী হিসেবে ছাপাখানা এই বইটিকে বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছে । উপন্যাসের প্রচ্ছদটা সুন্দর এসেছে । আর আমি খুব খেয়াল এবং মনোযোগ দিয়ে পড়ায় আরো যত্ন করে খেয়াল করেছি টাইপিং মিস্টেক এর । তাই টাইপিং মিস্টেক তেমন চোখে পড়েনি বলে খুবই অভিভূত হয়েছি । পৃষ্ঠার বাইন্ডিং অসাধারণ ছিল । সাথে পৃষ্ঠায় ঘনঘন করে শব্দের আকৃতি কমিয়ে শব্দকে সুন্দর আকার দিয়ে সুন্দর পাঠযোগ্য করার বিষয়টিও ভালো লেগেছে । যা আমার কাছে বেশ ক্ল্যাসিকাল ভাব দিচ্ছিল । প্রকাশনীর উচিত এরকম ভালো ভালো সুন্দর গল্প এবং পটভূমি নিয়ে অবশ্যই কাজ করা । তাদের জন্য শুভকামনা রইলো । ♦লেখক প্রসঙ্গেঃ লেখক আফিফা পারভীন এর এটি তৃতীয় উপন্যাস । আমি তার আগে কোনো লেখা পড়িনি । তবে তার প্রতিটি বই আমার তালিকায় রোজ ঘুরে বেড়ায় । রোজ মোবাইলের নোটসে নিজেকে মেলে ধরতে দেখে । আমি উপন্যাসটি পড়ার শেষ করেই তাড়াতাড়ি বলেছি অতিসত্বর তার বাকি দুইটি বই আমার নিয়ে ফেলতে হবে । তার লেখার সবথেকে ভালো দিক হলো, বর্ণনা । উপন্যাসের পটভূমি এবং তার আবহকে তিনি মারাত্মক সুন্দর করে বর্ণনা করেন । যে কারণে উপন্যাসের গতিকে ভীষণভাবে পছন্দ হয়ে যায় । সাথে সাথে কিছু সুন্দর সময়োপযোগী সংলাপ আরো অসাধারণ ভাবে উপন্যাসে বিরাজ করতে থাকে । লেখকের জন্য শুভকামনা রইলো । ♦রেটিংঃ এই উপন্যাস পড়ার বেশ খানিকক্ষণ পরে আমি পাঠ অনুভূতি লিখতে বসেছি । তারপরেই মনে হয়েছে, এই উপন্যাসের রেটিং এর সময়ে আমি কত দিবো তা এখন থেকেই সাজিয়ে ফেলি । সেই সাজানো পরিস্থিতি এখনও ঠিক হয়নি আমার জন্য । সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি । কিন্তু আমি ভেবে নিয়েছি নিজেকে এবং উপন্যাসকে । আমার রেটিং হলো, ৪.৮/৫ । ♦প্রিয় উক্তিঃ •“ভালোবাসা এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর, শুদ্ধ ও পবিত্র অনুভূতি । কাউকে ভালোবাসলে তার সুখ-দুঃখকেই নিজের মনে হয় । তার ভালোলাগা, ভালো থাকার কথা সর্বাগ্রে মনে হয় । তার পছন্দ-অপছন্দে নিজেকে সাজাতে মন চায় । তার রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তারই ভালোবাসায় ডুবে মরে যেতে ইচ্ছে হয় । যাকে ভালোবাসবি সে সামনে থাকলেও জ্বালা, দূরে গেলেও জ্বালা । সে তোকে দেখলেও পুড়বি, না দেখলেও পুড়বি । ভালোবাসা এক সুখময় অসুখের নাম । অন্য কোনো অসুখ না হলেও এই অসুখ সবার জীবনে আসুক, সারাজীবন এই অসুখ তীব্র থেকে তীব্রতর হোক ।” •“তোর এখন থেকে আর আয়না লাগবে না । আমার চোখের তারাই তোর আয়না । এবার আমার চোখে দেখে বল, আমার বউকে কেমন লাগছে?” •“শোনো, এই পৃথিবীটা যেমন সূর্যকে ভালোবাসে আমিও তোমাকে তেমনই ভালোবাসি । দেখো, এক রাতের জন্য সূর্য চলে যাচ্ছে তাতেই পৃথিবীর কত কষ্ট, তার বুক জুড়ে কেমন আঁধার নেমে আসছে ! ঠিক আমার জন্যও তেমনই, তুমি পাশে থাকলেই সব আলো হয়ে যায়, তুমি না থাকলে সবকিছুতে আঁধার ঘনায় ।” ♦উপসংহারঃ কিছু কিছু মুহূর্তে আমার এত দ্বিধায় পড়া মুহূর্ত আসতে থাকে চোখের সামনে । তখন আমি ভাবতে থাকি, অনেক কিছু হয়ে গেল । অনেক কিছু প্রকাশ না পেয়েই রইলো । অনেক অনুভূতি বোঝানোর ছিল । কিন্তু বুঝাতে পারলাম না । কারণ আমি বিশ্বাস করি, কিছু অনুভূতি মনে আটকে দিতে হয়, তাহলে হঠাৎ কোনো একটা সময়ে আমি আবারও প্রিয় কিছুকে মেলে ধরবো কোনো একটা অদ্ভুত উদাসীন ভাবনার রাতে । আমার প্রতিটি পাঠ প্রতিক্রিয়া কিংবা রিভিউ লেখার উপসংহারে এরকম মনে হতে থাকে । এই উপসংহারেও আমার মনে হচ্ছে বেশ অনেককিছুই বোঝানোর ছিল । তারপরে আবার আমারই মনে হচ্ছে, এটাই আমি । নিজের অনুভূতিকে কিছুটা আটকে রাখতে জানি । যা ভাবলেই হাসবো, অদ্ভুত ভাবে তাকাবো । প্রিয় উপন্যাস গুলোকে আরো প্রিয় বলতে পারবো । সব বুঝিয়ে দিলেই তো শেষ । আমার এই মন পাখি সবটা বুঝিয়ে বলুক বা না বলুক, মানুষের মনে থাকা একান্ত যে পাখিটা তা মনের মাঝে অদ্ভুত কলতানে কথা বলতে থাকুক কিংবা কিছু না ভেবেই কাটাক সবার মনের গভীরে থাকা প্রতিটি পাখি প্রিয় প্রতিটি মানুষকেই তার আবাসস্থল নিয়ে গড়া মানুষটিকে সবার সামনে বুঝাতে থাকুক । দিনশেষে সেই যে উক্তি, ভালোবাসার থেকে বড় টান আসলেও কোথাও নেই । এই টান সব কিছুতেই থাকুক ।