User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
আচ্ছা একটা ২০০ পেজের বই পড়তে আপনার কতদিন লাগে? আমার এই দেড়দিন লাগবে, আরো কম সময়ও লাগতে পারে যদি টানা পড়তে পারি। আর ৫০০ পৃষ্ঠার বই পড়তে চারএকটা বই পড়তে আমার সর্বোচ্চ দেড়দিন লাগে। তবে মজার কথা হচ্ছে এই ড্রাকুলা পড়তে লাগিয়ে ফেলেছি পুরো একমাস। এই এক মাস হবার অবশ্য কিছু কারণ আছে, তার একটি হলো, ভৌতিক বা গথিক জনরার বই আমার পড়া হয়নি একদমই। ড্রাকুলা-ই আমার পড়া প্রথম গথিক জনরার বই। এজন্যই প্রথম থেকে চাচ্ছিলাম খুব ভালো মতো প্রতিটা জিনিস বুঝে, সময় নিয়ে পড়তে। অবশ্য সর্বোচ্চ দশদিন সময় নেয়ার ইচ্ছে থাকলেও কলেজ প্রশাসন আমার সেই ইচ্ছায় রীতিমতো জল ঢেলে দিয়েছিল পরীক্ষা ফেলে। তাই পরীক্ষার প্রস্তুতির মাঝেও প্রতিদিন কিছু না কিছু পৃষ্ঠায় চোখ বুলোনোর চেষ্টা করতাম। আর যে রাতে বইটা শেষ হলো, ভালো লেগেছে নাকি খারাপ বলছি, কিন্তু কেমন এক অদ্ভুত শূন্যতা আমাকে ঘিরে রেখেছিল। কেন এমন অনুভূতি তা ক্রমশ প্রকাশ্য। ভিনসেন্ট ভ্যান গগ-- নামটি শুনেছেন নিশ্চয়ই ? চোখের সামনে ভেসে উঠেছে রঙের বিস্ফোরণ, আবেগের তীব্র স্রোত? অথচ এই মহান শিল্পীর জীবদ্দশায় তাঁর প্রতিভা প্রায় কারও চোখেই পড়েনি। মৃত্যুর পরেই তাঁর সৃষ্টি বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়। আশ্চর্যজনকভাবে, সাহিত্যের জগতে ঠিক এমনই ঘটনা ঘটেছিল ব্রাম স্টোকারের সঙ্গে। তাঁর লেখা ড্রাকুলা, যা আজ গথিক সাহিত্যের অমর সৃষ্টি, লেখকের জীবদ্দশায় সেভাবে স্বীকৃতি পায়নি। স্টোকারের মৃত্যুর পরই এই অনন্য উপন্যাস পাঠক-সমাজে আলোড়ন তোলে। ভ্যান গগের তুলির আঁচড় আর স্টোকারের কলমের স্পর্শ--দুই ক্ষেত্রেই সাফল্য এসেছিল দেরিতে, কিন্তু তাতে তাঁদের সৃষ্টির মহিমা একটুও কমেনি। এই গথিক সাহিত্যের প্রতি ব্রাম স্টোকারের আকর্ষণের পেছনে ছিল লেখক লে ফানুর লেখা কার্মিল্লা। সেই মুগ্ধতার ধারাবাহিকতায় ১৮৯৭ সালে ব্রাম স্টোকার সৃষ্টি করেন ড্রাকুলা যা ছিল গথিক সাহিত্যের এক কালজয়ী উপন্যাস। তাঁর মৃত্যুর পরেই বইটি সত্যিকার অর্থে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা লাভ করে, আর সেই সঙ্গে অমর হয়ে ওঠে স্টোকারের নাম। এবার ফিরে আসা যাক আমাদের দেশীয় অনুবাদক লুৎফুল কায়সারের দিকে। তাঁর অনুবাদে ড্রাকুলা নতুনভাবে পরিচিতি পায় বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের কাছে। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০২২ সালে, আর সে বছরই এর জনপ্রিয়তার ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে-- একই বছরে বইটি তিনবার মুদ্রিত হয়, যার তৃতীয় মুদ্রণ ছিল ভারতের পাঠকদের জন্য। বেশ অনেক্ষণ বকবক করলাম, এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক, বইটির ভেতরে রয়েছে কতটা রসদ, কতটা উপকরণ যা পাঠককে সত্যিই মুগ্ধ করতে পারে। বইটার কাহিনী হচ্ছে ট্রানসিলভানিয়ার এক বুড়ো ভ্যাম্পায়ারকে নিয়ে। সেখানে তার এক বিশার রাজপ্রাসাদ থাকার পরেও নিজের ক্ষমতা বিস্তারের জন্য লন্ডনে বাড়ি কিনে স্থায়ী আবাস গড়তে চান সেখানে। আর একাজে তাকে সাহায্য করার জন্য লন্ডন থেকে পাঠানো হয় তরুণ উকিল জোনাথন হারকারকে। কিন্তু পথিমধ্যে তাকে এলাকাবাসী হাজারবার হাজার রকমের ইঙ্গিত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করলেও নিতান্ত দায়িত্বের জালে আটকে পড়ার জন্য তাকে যেতে হয় সেই অভিশপ্ত প্রাসাদে। কিছুদিন সব স্বাভাবিক থাকলেও এরপর থেকে শুরু হয় আসল খেলা। বলা যায় কাউন্ট ড্রাকুলার তৈরি করা কঠিন ফাঁদে আটকা পড়েন তিনি। অন্যদিকে, তার প্রেমিকা মিনা ম্যুরে, তার বান্ধবী লুসি ওয়েস্টনরা, ডাক্তার সেওয়ার্ড, আর্থার হোমউড, আমেরিকান পর্যটক কুইন্স পি. মরিস, ডাক্তার ভ্যান হেলসিং... সবাই আটকা পড়েন এক অদৃশ্য জালে। মূলত এই বিপদ থেকে তারা সবাই বের হতে পারবে কিনা, কার কী পরিণতি হলো, কীভাবে হলো এগুলো নিয়েই ঘটনা প্রবাহ এগিয়েছে। লেখক ব্রাম স্টোকার যে কার্মিল্লা দিয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন তা দেখে বোঝা যায় তার লেখার কৌশল দেখে। কার্মিল্লা বইটির কাহিনীও epistolary novel বা ডায়েরি উপন্যাস হিসেবে লেখা হয়েছে, এমনকি এই ড্রাকুলা উপন্যাসও। তবে কার্মিল্লার সাথে মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে, কার্মিল্লাতে শুধু একজনের লেখা ডায়েরি নিয়ে পুরো গল্প এগিয়েছে, আর এ বইয়ে কাহিনী সংক্ষেপে উল্লেখিত প্রত্যেকটি চরিত্রের নিজেদের ডায়েরি বা নথি এবং চিরকুটের মাধ্যমে পুরো "ড্রাকুলা"-কে বর্ণনা করেছেন। প্রত্যেক চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়েছে, প্রত্যেকটা চরিত্র নিজ নিজ জায়গা থেকে পরিপূর্ণতা পেয়েছে; কোনোটি কম গুরুত্ব পেয়েছে, কোনোটি বেশি এমন কিছু সত্যিই লক্ষ্য করা যায়নি। তবে এর চেয়েও বেশি আমার কাছে ভালো লাগার বিষয়টি হচ্ছে এ উপন্যাসের প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের সেই ভালোবাসা, যত্ন; যে দুটি জুটি এখানে দেখা গেছে শুধু তাদের মধ্যেই যে লেখক প্রাণভরে মধু ঢেলেছেন তা না। পুরো গল্পটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, প্রত্যেকে পরস্পরের প্রতি সেই সম্মান , ভালোবাসা, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, বিপদের মধ্যেও একে অপরকে ছেড়ে না গিয়ে নিজের জান বাজি রাখতে কুণ্ঠাবোধ না করা, সবাই সাহসী ইত্যাদি সব ধরনের ইতিবাচক দিকগুলো ধারণ করে। এহব পড়ে সত্যিই এক অদ্ভুত শান্তি পেয়েছি। তবে যে বিষয় আমার কাছে নেতিবাচক লেগেছে তা হচ্ছে, উপন্যাসের শুরুতে জোনাথন হারকারের দিনলিপিগুলোতে ভৌতিক আবহ বিরাজ করলেও এরপর থেকে সেই আবহ একটু হলেও ভাঁটা পড়েছে। আরেকটি দিক হচ্ছে উপন্যাসের শেষটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে। পুরো উপন্যাস জুড়ে লেখক যতটা ধীরে সুস্থে এগিয়েছিলেন, শেষটা ঠিক ততটাই তাড়াতাড়ি করে ফেলেছেন। আর এজন্যই বইটি পড়ার পরে সেই শূণ্যতা ঘিরে রেখেছিল আমাকে। আরেকটু লিখলে হৃদয় হয়তো তৃপ্ত হতো কিছুটা। এবার আসা যাক অনুবাদ নিয়ে। লুৎফর কায়সার আমার কাছে একদম নতুন একজন লেখক। আগে তার কোনো লেখাই পড়া হয়নি। তবে তাতে ক্ষতি হয়নি। ড্রাকুলার মতো উপন্যাস অনুবাদে দক্ষতার সাথে সাথে তার সাহসের তারিফ করতেই হয়। কোনো কঠিন বাংলা ব্যবহার না করে যে সাবলীল ভাবে তিনি লিখেছেন, সত্যি বলছি, একবারও মনে হয়নি অনুবাদ পড়ছি। সাথে উপরি পাওনা হিসেবে আলাদা করে টিকা-ও যোগ করেছেন প্রয়োজন মতো। এটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এজন্যই বোধহয় প্রথম বছরেই তিনবার মুদ্রিত হয়েছে এ বই। লেখক অনুবাদকের পালা শেষে আসে প্রোডাকশন। তবে বেনজিন প্রকাশনি নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই, বরাবরের মতোই তাদের প্রোডাকশন টপ নচ। সব মিলিয়ে বলতে চাই, অনুবাদকের হাতে এক জাদুর কাঠি রয়েছে। তাঁর কল্পনা এবং দক্ষতায় ভাষার সুর বুনে দিয়েছেন এমনভাবে, যে পড়তে পড়তে একে একে চরিত্রগুলো জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তবে, যদি ব্রাম স্টোকার আরও কিছুটা কষ্ট করতেন, তার কল্পনাকে আরো বিশাল আয়তনে ছড়িয়ে দিতেন, তবে বইটির প্রতি ভালো লাগার অনুভূতির পরিধি হয়তো অনেক বেশি বিস্তৃত হত। ব্যক্তিগত রেটিং: ৭.৫/১০ বই : ড্রাকুলা লেখক : ব্রাম স্টোকার অনুবাদক: লুৎফুল কায়সার প্রচ্ছদ : সজল চৌধুরী পৃষ্ঠা : ৫৬০ প্রকাশনী : বেনজিন প্রকাশন
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
দারুণ অনুবাদ লুৎফুল কায়সার ভাইয়ের। ২০২২ সালে বইটি পড়ে ড্রাকুলার যেন ভক্ত হয়ে যায়। তখন থেকেই নিজের মাতৃভাষায় বইটি পড়ার প্রচন্ড ইচ্ছা জাগে। আজ পরলাম, দারুন অনুবাদ। সত্যিই ব্রাম স্টোকারের লেখা সবচেয়ে সেরা বই এটি। আর লুৎফুল ভাইয়ার অনুবাদটাও বেশ ছিল। Loved It
Was this review helpful to you?
or
One of my favourite book.
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ ছিল বইটা।অনেক ভালো অনুবাদ।
Was this review helpful to you?
or
এটা অনেক বেশি ডার্ক, তবে খুবই ভালো নিঃসন্দেহে
Was this review helpful to you?
or
very nice story, You fall in love with it.
Was this review helpful to you?
or
ট্রান্সিলভানিয়ার বিশাল এক রাজপ্রাসাদের মালিক নিজের দেশ ছেড়ে লন্ডনে আসতে চান। তারই সূত্র ধরে লন্ডনের এক উকিল, জোনাথন হারকার, তাকে লন্ডনে বাড়ি কেনার ব্যাপারে সাহায্য করতে সেই প্রাসাদে আসে। আসার পথেই তার আশেপাশের মানুষ তার গন্তব্যের কথা শুনে অনেক ভয় পায়, আর প্রার্থনা করতে থাকে তার জন্য, যাতে তার কোন ক্ষতি না হয়। কিন্তু এসবের কিছুই বোঝে না জোনাথন। ধীরে ধীরে তার সামনে সব পরিষ্কার হতে থাকে যখন সে ধীরে ধীরে প্রাসাদে প্রবেশ করে। জানতে পারে, প্রাসাদের মালিক, কাউন্ট ড্রাকুলা, আশে পাশের গ্রাম থেকে প্রতি রাতে কোন এক মায়ের কোল খালি করে তার বাচ্চা চুরি করে আনে, আর শুষে নেয় তার রক্ত। এভাবেই সে বেচে আছে বহু বছর ধরে। পাগল হতে থাকে সে ধীরে ধীরে। এদিকে লন্ডনে রেখে আসা তার প্রেমিকা, মিনার বান্ধবি লুসি হঠাৎ করেই রাতের বেলা ঘুমের মধ্যে হাটতে শুরু করেছে। মাঝে মাঝেই চলে যায় পাশের কবরস্থানে। কেউ বুঝতে পারে না কি হচ্ছে! কিভাবে ঠেকাবে ওই শয়তানকে! কিভাবে রক্ষা করবে লন্ডনকে ড্রাকুলার হাত থেকে!!! #ড্রাকুলা #ব্রাম_স্টোকার
Was this review helpful to you?
or
আমার পড়া সেরা হরর উপন্যাস। উপন্যাস পড়ার সময় মনে ভয় চলে আসে। মনে হয়, সত্যিই ড্রাকুলা আমাদের চারপাশে আছে।
Was this review helpful to you?
or
#আড্ডাখানায়_রকমারি #রিভিউ_২০২৩ গাথিক ড্রাকুলা উপখ্যান আমার দৃষ্টিতে : ▪️ চলুন হারিয়ে যাই পাহাড়ে ঘেরা ট্রান্সিলভানিয়া অঞ্চলে যেখানে রয়েছে এক অজানা রহস্যময় জগতের হাতছানি। যে জগতের কিছুটা জানা তো অনেকটাই অজনা। প্রতি পদে পদে যেখানে ট্রান্সিলভানিয়ার লোকগাথা, মৃতদের রাজত্ব, প্রেম, ইতিহাস, রক্ত চোষা ভ্যাম্পায়ার, নেকড়ে, বিশাল আকার বাদুর, আচমকা প্লটে টুইস্ট সব মিলিয়ে এক চরম ভিক্টোরিয়ান কাহিনির স্বাদ। লেখক এবার যেন এক অভিনব পন্থা বেছে নিলেন উপন্যাসের আঙ্গিক সাজাতে। কথক ছাড়া পুরো গল্পটি এপিস্টোলারি বিন্যাসে এমন ভাবে এগিয়েছে ঠিক যেন কোন সংগ্রহকারীর সংগ্রহিত বিভিন্ন নথির সংকলন। যেখানে খুব চতুরতার সাথে এমনটি প্রতিয়মান করা হয়েছে, একই সাথে ঘটে যাওয়া একটি বাস্তব ঘটনার প্রেক্ষিতে কতগুলো মানুষের মধ্যে হওয়া প্রতিক্রিয়ায় স্বরূপ বিভিন্ন সময়ে তাদের নিজ নিজ দৃষ্টি কোনের বর্ণনা যা তারা লিখিত ভাবে নিজেদের মধ্যে আদান প্রদান করেছে কখনো চিঠিপত্র, কখনো ডায়েরির এন্ট্রি আবার কখনো সংবাদপত্রের নিবন্ধনের রূপে। আর এগুলো একটি সিরিজ হিসেবে গঠনকারী সংগ্রহক আর কেউ নন লেখক আব্রাহাম ব্রাম স্টোকার। যেন তিনি পরম যত্নে গ্রন্হন করেছেন এসব কিছু। তার এমন অভিনব পন্থাই পরবর্তীতে জন্ম দিয়েছে বিখ্যাত "ড্রাকুলা এ্যনিগমা" বা "ড্রাকুলা ধাঁ ধাঁ" র। যে পড়েছে তারই মনে প্রশ্ন জেগেছে, ' সত্যিই কি ড্রাকুলা ছিলো ' ? ▪️ ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন ফ্ল্যাপ তো এখানে, শুরুটা হয়েছিলো ট্রান্সিলভানিয়ার অভিজাত এক ব্যক্তির লন্ডনে থিতু হতে চাওয়ার ইচ্ছা পোষণের মধ্যদিয়ে। ইংল্যান্ডে থাকার জন্য লন্ডনে একটি বাড়ি কিনতে চান তিনি। সেই সংক্রান্ত কাজে তাকে সাহায্য করতে উকিলের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানো হয় তরুণ জোনাথন হারকারকে। কিন্তু যাত্রা পথে হারকার বুঝতে পারলো কিছু একটা ঠিক নেই৷ কাউন্ট ড্রাকুলার নাম শুনে কেন ভয় পাচ্ছে ওই অঞ্চলের মানুষজন? সবই কি ইউরোপের পিছিয়ে থাকা অঞ্চলের মানুষের কুসংস্কার?নাকি আসলেই অদ্ভুত কিছু রয়েছে? পুরো অঞ্চলকে গ্রাস করে আছে একটা অতিপ্রাকৃত ছায়া! কিছু বোঝার আগেই ফাঁদে জড়িয়ে পড়লো জোনাথন। ইংল্যান্ডে কি আর ফেরা হবে তার? এদিকে জোনাথনের প্রেমিকা মিনা ম্যুরে, তার বান্ধবী লুসি ওয়েস্টেনরা, ডাক্তার সেওয়ার্ড, আর্থার হোমউড, আমেরিকান পর্যটক কুইন্সি পি. মরিস, ভ্যান হেলসিং.....সবাই নিজের অজান্তে জড়িয়ে পড়লো এক ভয়ানক জালে। সেই অতিপ্রাকৃত ছায়া উঠে এসেছে ইংল্যান্ডের বুকে। রক্তপিশাচদেরকে কি থামাতে পারবে ওরা? জানতে পড়ুন ব্রাম স্টোকারের কালজয়ী উপন্যাস “ড্রাকুলা”। ▫️ সুদূর ইংল্যান্ডে থেকে এবার চলুন ময়মনসিংহে মহারাজা রোড এলাকায় ল্যান্ড করি ২০০৯ সালে। লাল ইটের বাসার চার তলার জানালার পাশে পড়ার টেবিলে বসে রিভিউ লেখিকা যেখানে চোরের মতো ইতি-উতি করছে। বাসায় তার জন্য ১৪৪ ধারার কারফিউ জারি করা হয়েছে। আসামীর অপরাধ ব্যাক বেঞ্চার, মাঝারি মানের ছাত্র-ছাত্রী দের জীবনের ক্রুশিয়াল মুহূর্তে এসে পরেছে সে। এইচ এস সি টেস্ট পরীক্ষার পরবর্তী তিন মাসের সময়টা ছিলো তখন, পড়া যে ছাড়া গতি নাই। কিন্তু তার তো নজর পরেছে নিচ তলার প্রতিবেশী প্লাস বান্ধবীর আনা ড্রাকুলা বইটাতে। আর কি ধার করে এনে বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে পড়ার পায়তারা চলছিলো। এ এক টানটান উত্তেজনাকর মুহূর্ত ধরা পড়লেই শেষ। অপেক্ষা শুধু বাসায় সবার ঘুমানোর। অবশেষে এলো সে মাহেন্দ্রক্ষণ, ঘর জুড়ে তখন সুনশান নিস্তব্ধতা। ডিসেম্বরের শেষের দিকে ছিলো তাই শীতের তীব্রতাও ছিলো অনেক। চাঁদনী রাত থাকায় সেদিন তাই জানালাটা খোলা রাখার লোভ সামলাতে পারিনি। রাত যতো গভীর হচ্ছিল দূরে একটা দুটো করে শেয়ালের হাঁকের পরিমান বাড়ছিল। আর এদিকে আমার সামনে তখন ক্রমেই অন্য এক রহস্যময় জগতের দ্বার উন্মোচিত হচ্ছিল। জোনাথন হারকারের সাথে আমিও যেন কাউন্টের শহরে পা রেখেছিলাম অনুভূতি গুলো এতোই জীবন্ত ছিলো সবকিছু যেন চোখের সামনে ঘটতে দেখতে পারছিলাম। এক অজনা রক্তহিম করা ভয় জেঁকে ধরেছিলো আমাকে ফযরের আজান কানে যাওয়ায় টের পেলাম একটা রাত কেটে গেছে। আর আমার সমাপ্তি পৃষ্ঠাও আর দুপাতা পরে অপেক্ষা করছে বই শেষ হওয়ার বিদায় ঘন্টা বাজানোর। কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্রী হলেও আমি সাচ্চা সাইন্সপ্রেমী তাই তো ক্রিয়ার বীপরিত প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়ে বুঝতে পেরেছিলাম ড্রাকুলার প্রভাব কতোটা তীব্রভাবে আমার মনে ঢুকে গিয়েছিল। সে রাতের পর থেকে এক সপ্তাহ আমি আর জানালার কপাট খুলতে পারিনি। মনে হতো বাদুড়ের রূপ নিয়ে আমার খোলা জানালা দিয়ে কাউন্ট চলে আসবে। রাতে বালিশের পাশে জায়গা হলো নিয়ামুল কোরআন বই আর তসবীর। একটা লাভ হয়েছে এই ধাক্কায় আয়াতুল কুরসি মুখস্থ হয়ে গিয়েছিলো আমার। ▫️এরপর অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে উঠে পুরনো ভূত আবার মাথা চারা দিয়ে উঠলো ব্রাম স্টোকারের ভাষায় আদি, অকৃত্রিম ' ড্রাকুলা ' কিনে আনলাম আবারও পড়বো বলে। প্রথম যেটা পড়েছিলাম সেটা ছিলো রাকিব হাসানের অনুবদাকৃত সেবার বিখ্যাত ' ড্রাকুলা '। মূল ভার্সন পড়ে আমি তো অবাক! এতো পুরো অন্য ইতিহাস দেখি। অনুবাদ সংক্ষেপিত হওয়া এক কথা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ দেওয়া বা মনের মাধুরী মিশিয়ে কাহিনি বানানোটা মানা যায় না। হারকারের দূর্গ থেকে পালানোর কাহিনী পর্যন্ত ঠিক ছিলো তারপরের কিছুতে মিল পাইনি মূল বইয়ের সাথে সেবার অনুবাদের। তবে স্টোকারের ভাষায় ড্রাকুলা পড়ে আমি উজ্জীবিত, অভিভূত ভালো লাগার সব কিছু যা দিয়ে প্রকাশ করা যায় তার সব একসাথে মিলে আমার অনুভূতি হয়েছিলো তখন। ও জানালা বন্ধ হওয়ার সময়কাল এবার বেড়ে হলো একমাস। ▫️ফিরে আসি এবার ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারীতে কারন বাংলাদেশে তখন ড্রাকুলা আবারও পূর্ণ রূপে ফিরে আসার নীল নকশা সাজিয়েছে বাহন হিসেবে এবার কোন জাহাজ কিংবা কফিন কে আশ্রয় হিসেবে বেছে নেয় নি বরং বেনজিন প্রকাশন আর লেখক লুৎফুল কায়সারের কলম তার ভরসা। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ভালোভাবেই সফল হয়েছে পিশাচটা। ফলাফল স্বরূপ এখন সব থ্রিলার প্রেমীর আবেগের একটা অংশ জুড়ে নিজের রাজত্ব কায়েম করে বসে আছে সে স্বমহিমায়। তার ত্রানকর্তা এমন ভাবেই তার পদার্পন ঘটিয়েছে বাংলার মাটিতে। লুৎফুল ভাইয়ার অনুবাদটা পড়ে মনে হচ্ছিলো যেন অসুস্থ স্টোকার বয়সের ভারে নিজের লেখনী শক্তি হারিয়ে বর্তমান অনুবাদক কে দিয়ে লেখিয়েছেন। মানে ভাষা তার কিন্তু মাধ্যম হলেন বর্তমান অনুবাদক এতোটাই সাবলীল ছিলো সব কিছু। ধন্যবাদ দিবো না লেখককে কারন আমার মনের কফিন বন্দী ড্রাকুলা আবার ফিরে এসেছে। ফলাফল এবার দুমাস ধরে আমার বেডরুমের জানালাটা বন্ধ সাথে এনার্জি লাইট প্রমোশন পেয়ে ড্রিম লাইটের জায়গা দখল করে নিয়ে সারারাত জ্বলে আলো দেয়। ▪️ চলুন আপনাদের একটু পেছনে নিয়ে যাই একদম শুরুর দিককার টুকরো কিছু স্মৃতিচারন করি যেখানে স্টোকার সাহেব এতো উন্মুখ হয়ে কি শুনছেন দেখে আসি, সময়টা ছিলো ১৮৯০ এর গোড়ার দিকের লেখক হওয়ার সুপ্ত বাসনা মনে লালন করা লন্ডনের লাইসেথিয়াম থিয়েটারের বিজনেস ম্যানেজার ব্রাম স্টোকার সেবার হুইটবি শহরে বেড়াতে গিয়ে লোকমুখে প্রচলিত রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার, ভ্লাদ ইম্পেলার নামক রক্ত খেকো রোমানিয়ান শাসক যার আর এক নাম ছিলো 'ড্রাকুলা' ও হাঙ্গেরির কাউন্টেস 'এলিজাবেথ বাথ্রয়ে'র শিশু হত্যা করে রক্ত পান করার হিম করা গল্পে বিভোর হয়ে গেলেন। আর কি ভ্লাদ দ্য ইম্পলার এর ড্রাকুলা নামটিই মনে গেঁথে গিয়েছিলো ব্রামের। মনে মনে ছকও কষে ফেললেন এই চরিত্রকে ভিলেন করেই লিখে ফেলবেন এক রোমান্টিক উপন্যাস। হলো কি? উঁহু ভাবনাটা মোটেই সরলরৈখিক হলো না, চেনা ছকের সেই রোমান্টিক উপন্যাসের ভাবনায় মিশে গেলো ভ্যাম্পায়ার আর রক্তচোষা মানুষ, পিশাচদের মিথ আর সেই সাথে গাথিক ভয়ের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা এক কালজয়ী 'ভয়ের আখ্যান '। ▫️তারপরের ঘটনা ১৮৯৭ সালের, যখন স্টোকার ৷ এক বিশাল টাইপ করা কাগজের বান্ডিল পৌঁছে দিয়েছিলেন প্রকাশকের কাছে। জায়গায় জায়গায় পেন দিয়ে সংশোধন করা অপরিচ্ছন্ন পান্ডুলিপি পড়ে বইয়ের ব্যাপারে একটুকু আশাবাদী হতে পারলোনা প্রকাশক। ফলাফল স্বরূপ তারা স্টোকারের সাথে এই চুক্তির শর্তে রাজি হলেন কোন অগ্রিম না দিয়ে প্রথম সংস্করণের ছাপা তিন হাজার কপি হতে বিক্রি হওয়া প্রতি কপি থেকে মাত্র এক শিলং করে পাবেন লেখক। ১৮৯৭ সালের ২৬ মার্চ প্রুফ আকারে স্টোকার পেলেন তার অভিনব উপখ্যান, "The Un- Dead" অর্থাৎ "যার মৃত্যু নেই"। প্রুফ দেখার সময় আপন খেয়ালেই হয়তো বদলে নতুন নাম দিলেন। তারপর এলো ইতিহাস বদলানোর সময়, আস্তে আস্তে করে এক নতুন জনরার স্বাদে গল্প প্রেমিকদের ভোলানোর সময়, এক নতুন ধারায় নতুন শ্রেনীর পাঠক মহল গড়ে তোলার সময়, এক সফল গাথিক আখ্যান প্রকাশের সময়। সময়টা ছিলো ১৮৯৭ সালের মে মাস, 'Archibald Constable And Company' থেকে প্রকাশিত হলো ব্রাম স্টোকারের ইংরেজী সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস। বইয়ের প্রচ্ছদে হলদে মলাটের উপর রক্তলাল হরফে ফুটে উঠলো স্টোকারের মনে গেঁথে থাকা নামটি, "ড্রাকুলা"। প্রকাশের কদিনের মধ্যেই সম সাময়িক ডেইলি মেইল পত্রিকা স্বইচ্ছায় মেরি শেলি, এডগার অ্যালন পো ও এমিলি ব্রন্টির থেকেও উচ্চস্থান দিলেন স্টোকারকে। তবে প্রকাশ পাওয়া বইটি সকলের আলোচনায় চলে আসে ১৯৩১ সালে এর উপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র নির্মাণের পর। আস্তে আস্তে ড্রাকুলা হয়ে গেলো ভয়ের আইকনিক নাম, বাচ্চারাও কেমন করে যেন জেনে যায় রক্তহিম করা ভয়ের আরেক নাম মানেই ড্রাকুলা। প্রকাশের সময় থেকে আজ অবধি কখনো আউট অফ প্রিন্ট হয়নি ইতিহাস রচনাকারী এই বইটি। ▪️ এবার একটু কুট-কাচালী করি শুনুন, ৫৫৮ পৃষ্ঠার বিশাল বইয়ে বানান ভুল এবং টাইপিং মিসটেক হাতে গোনা কয়েকটা থাকলেও পড়ার সময় বিরক্ত লাগে নি। আর গল্পের মাঝামাঝি হারকারের দুর্গ থেকে প্রস্হান ও গল্পের সহজ সমাপ্তিটুকু নিয়ে আমার আজীবনের আক্ষেপ ঘুচবেনা যা স্টোকার সাহেব বেঁচে থাকলে হয়তো বলতে পারতাম। ▪️সবশেষে বলবো, ড্রাকুলা হলো গথিক হররের একটি ক্লাসিক, আধুনিক পৌরাণিক কাহিনির একটি অবিনশ্বর স্রোত এবং একটি অপ্রতিরোধ্য বিনোদন। একে সাহিত্যের ভ্যাম্পায়ার ধারা প্রতিষ্ঠাতার স্বীকৃতিও দেয়া হয়। ড্রাকুলা বইটি যেন তার নামের চরিত্রের মতোই প্রকাশনার পর থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম পাঠকদের একই স্পেলবাইন্ডিং ক্ষমতা দিয়ে মুগ্ধ করছে যেমনটি কাউন্ট তার শিকারকে করতো। হাইলি রেকোমেন্ডেড এই বইটি না পড়ে থাকলে আজই সংগ্রহ করুন মহামান্য কাউন্ট যে আপনারই অপেক্ষায়..... ▫️এক নজরে : ▪️বইয়ের নাম : ড্রাকুলা ▪️লেখক : ব্রাম স্টোকার ▪️অনুবাদক : লুৎফুল কায়সার ▪️প্রকাশনী : বেনজিন প্রকাশনী ▪️প্রচ্ছদ : সজল চৌধুরী ▪️ক্যাটাগরি : গাথিক হরর ▪️পেজ : 560 ▪️প্রচ্ছদ মূল্য : 700 ▪️ব্যাক্তিগত রেটিং : ৪.৫ / ৫
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ বই।????
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নাম: ড্রাকুলা লেখক: ব্রাম স্টোকার অনুবাদক : লুৎফুল কায়সার পৃষ্ঠা : ৫৬০ মূল্য: ৮০০ প্রকাশনী: বেনজিন রিভিউদাতা: রচনা দাস রিংকু ভূমিকা: ড্রাকুলা বা ভ্যাম্পায়ার সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যতগুলো চলচ্চিত্র বা বই লেখা হয়েছে সবগুলোর শুরু হয়েছে " ড্রাকুলা" নামক পত্র উপন্যাসের মাধ্যমে৷ তবে ড্রাকুলা উপন্যাসের মূল ভিত্তি হচ্ছে ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের লোককথায় জুড়ে থাকা চরিত্র 'রক্তচোষা বা ভ্যাম্পায়ার।' " ভ্যাম্পায়ার " শব্দটি আলোচনায় আসে অষ্টাদশ শতকের শেষে। তখন পশ্চিম ইউরোপের পশ্চাৎপদ অঞ্চলে মৃত মানুষদের গলা কেটে, মুখে রসুন গুঁজে দিয়ে কবর দেওয়া হতো। এটা হচ্ছে ভ্যাম্পায়ার সম্পর্কিত লোককথা। তবে বইয়ে থাকা প্রধান চরিত্রটি " ভ্লাদ ড্রাকুলা " যিনি ওয়ালাচিয়া( রোমানিয়ার) শাসক ছিলেন তাকে কেন্দ্র করে তৈরি। ভ্লাদ ড্রাকুলা(ড্রাকুলা মানে ড্রাগনের সন্তান) বন্দিদের নির্যাতনের জন্য এতটাই বিখ্যাত ছিলেন তাকে সারা বিশ্বে নিন্দার চোখে দেখা হয় কিন্তু "ড্রাকুলা" বইয়ের প্রধান চরিত্র তাকে বিশেষ চরিত্র করে তুলেছে। লেখক পরিচিতি: ব্রাম স্টোকার ছিলেন জাতিতে আইরিশ। ভ্লাদ ড্রাকুলাকে নিয়ে আগ্রহ থেকেই লিখে ফেলেন " ড্রাকুলা" বইটি। ড্রাকুলা ছাড়াও তার লেখা আরও কয়েকটি বই হচ্ছে - দ্য প্রিমরোজ প্যাথ ( প্রথম উপন্যাস), দ্য স্নেকস পাস, দ্য জুয়েল অফ সেভেন স্টারস ইত্যাদি৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে যে উপন্যাসটির জন্য তিনি মরেও অমর হয়ে আছেন সেই " ড্রাকুলা" উপন্যাসটির জনপ্রিয়তা তাঁর জীবদ্দশায় দেখা সম্ভব হয়নি। মূল কাহিনির উৎস: জোসেফ শেরিড্যান লে ফানু ১৮৭১-১৮৭২ সালে ' কারমিল্লা' নামক ভ্যাম্পায়ার ফিকশন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ' ভ্লাদ দ্য ইম্পেলারের' অনুকরণে লেখা ফেলেন 'ড্রাকুলা' উপন্যাসটি। মূল কাহিনি: 'ড্রাকুলা' বইটা মূলত পত্র উপন্যাস। এখানে বক্তা অনেকজন এবং প্রত্যেকের দিনলিপি ও চিঠিতে উল্লেখ করা বর্ণনা থরে থরে সাজিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই উপন্যাস। শুরুতেই জোনাথান হারকার নামক এক তরুণ আইনজীবী ট্রানসলভেনিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রার কথা বর্ণনা করেছেন। তার গন্তব্যের কথা শুনে স্থানীয় মানুষ ভয়ে শিউরে উঠে বার বার ঈশ্বরকে স্মরণ করে।গন্তব্যে গিয়ে অতিপ্রাকৃত কিছুর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটে। কিছুদিনের মধ্যেই জোনাথান নিজের বন্দী দশা বুঝতে পারে। নিজের পর্যবেক্ষন ক্ষমতা এবং বুদ্ধির জোরে পালাতে সক্ষম হয়। অপরদিকে ইংল্যান্ডের মানসিক চিকিৎসালয়ে অদ্ভুত আচরণের এক লোকের দেখা মেলে যার নাম রেনফিল্ড। হুইটবির বন্দরে আসা বিধ্বস্ত জাহাজে অতিপ্রাকৃত কিছুর আভাস পাওয়া যায়। যার প্রথম শিকার হয় জোনাথান হারকারের স্ত্রীর বান্ধবী "লুসি"। ধীরে ধীরে ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে যায় অদ্ভুত আতঙ্ক। অপূর্ব সুন্দরীর কবলে মারা যেতে থাকে ছোট ছোট বালকেরা। সকল ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার মূলে একজন। শুরু হয় অতিপ্রকৃতের বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই। ভালোর প্রভাবে খারাপ শক্তি পিছু হটে যায়। জয়ী হয় আলোর পথে হাঁটতে থাকা মানুষ। নিজস্ব মতামত : বইয়ের শুরুর দিকটা খুবই চমৎকার লেগেছিলো বিশেষ করে স্থান ও পারিপার্শ্বিক বর্ণনাগুলো। লুসির পরিবর্তনের অংশ এতটাই সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে মনে হয়েছিল সব যেন চোখের সামনে ঘটছে। বইয়ের শেষের দিকের কিছু অংশ ধীরে এগিয়েছে বলে মনে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত টান টান উত্তেজনায় ভরপুর ছিলো। অনুবাদকের ধৈর্যের এবং শব্দচয়নের দিকটা প্রশংসারযোগ্য। শেষ বক্তব্য : বইটি পড়তে বসলে সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে পড়তে হবে। যারা রহস্য ও ভৌতিক জনরার বই পছন্দ করেন না তারাও পড়ার চেষ্টা করতে পারেন।
Was this review helpful to you?
or
finally boita pete jachi ?
Was this review helpful to you?
or
অনুবাদ সত্যিই অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
বইঃ ড্রাকুলা (পূর্নাঙ্গ অনুবাদ) মূলঃ ব্রাম স্টোকার অনুবাদঃ লুৎফুল কায়সার প্রকাশনায়ঃ বেনজিন প্রকাশন ধরণঃ গথিক হরর সম্পাদনাঃ মহিউল ইসলাম মিঠু প্রচ্ছদঃ সজল চৌধুরী অলংকরণঃ জন কোল্ট হার্ট বানান সংশোধনঃ বীক্ষণ সম্পাদনা সংস্থা পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৫৬০ মূল্যঃ ৭০০/- ফ্ল্যাপ হতেঃ ট্রান্সিলভানিয়ার অভিজাত এক ব্যক্তি বাড়ি কিনতে চান লন্ডনে। সেই সংক্রান্ত কাজে সেখানে পাঠানো হলো তরুণ জোনাথন হারকারকে। কিন্তু যাত্রাপথেই সে বুঝতে পারলো কিছু একটা ঠিক নেই। কাউন্ট ড্রাকুলার নাম শুনে কেন ভয় পাচ্ছে ওই অঞ্চলের মানুষজন? সবই কি ইউরোপের পিছিয়ে থাকা একটা অঞ্চলের মানুষের কুসংস্কার? নাকি আসলেই অদ্ভুত কিছু রয়েছে? পুরো অঞ্চলকে গ্রাস করে আছে একটি অতিপ্রাকৃত ছায়া! কিছু বোঝার আগেই ফাঁদে জড়িয়ে পড়লো জোনাথন। ইংল্যান্ডে কি আর ফেরা হবে তার? ওদিকে জোনাথনের প্রেমিকা মিনা ম্যুরে, তার বান্ধবী লুসি ওয়েস্টেনরা, ডাক্তার সেওয়ার্ড, আর্থার হোমউড, আমেরিকান পর্যটক কুইন্সি পি. মরিস, ভ্যান হেলসিং... সবাই নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়লো এক ভয়ানক জালে। সেই অতিপ্রাকৃত ছায়া উঠে এসেছে ইংল্যান্ডের বুকে। রক্তপিশাচদেরকে কি থামাতে পারবে ওরা? জানতে পড়ুন ব্রাম স্টোকারের কালজয়ী উপন্যাস 'ড্রাকুলা'। পৃথিবীর সবচেয়ে সফলতম পিশাচ কাহিনিটির প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলাদেশি অনুবাদ। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ ড্রাকুলা উপন্যাসটি সারাবিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। ১৮৯৭ সালে প্রকাশ পাওয়া এই বইটি তখন ওইসময়ে তেমন সাড়া ফেলতে না পারলেও পরবর্তীতে ১৯৩১ যখন এর ওপরে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয় তখন শুরু হয় আলোচনা এবং সেই যে আলোচনা শুরু হলো, আর থামল না। ধীরে ধীরে ড্রাকুলা পরিণত হলো বহুল পঠিত বইয়ে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে অনেক আগেই পড়েছিলাম সেবা প্রকাশনীর শ্রদ্ধেয় রকিব হাসান স্যারের ড্রাকুলার অনুবাদটা। বই টা কিন্তু দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। যখন জানলাম এটা সংক্ষিপ্ত অনুবাদ তখন থেকেই একটা অতৃপ্তি কাজ করতে শুরু করে। গল্পের পুরো স্বাদ কিভাবে পাবো? বেনজিন প্রকাশন ও Lutful Kaiser ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ বইয়ের পূর্নাঙ্গ অনুবাদ আমাদের পাঠকসমাজের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। প্রথমত বইটি হাতে পাওয়ার পরে যে-ধরনের এক্সপেকটেশন রেখেছিলাম, বইটা সম্পর্কে। বইটি পড়ার পরে আমার এখন মনে হচ্ছে, আমার ফার্স্ট এক্সপেকটেশন এর তুলনায় বইটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনেক অনেক বেশি রোমাঞ্চকর। বইয়ের গল্পটি কিন্ত সত্যিই খুব আকর্ষণীয়। দারুণসব হরর এলিমেন্ট এবং রহস্য রয়েছে বইটিতে। বইটিতে লেখক তার সংলাপ ও চরিত্রগুলোকে বেশ দুর্দান্ত ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন। বইটি বেশ বড়সড় হলেও অনেক দ্রুত গতিতেই এগিয়েছে। গল্পে ঢুকে পড়বেন তো দ্রুত পৃষ্ঠা উল্টাবেন। সুন্দর এবং গোছানো ছিল। প্লট, কাহিনির বুনন বেশ পরিপক্ব লেগেছে। লেখকের বাচনভঙ্গি ও লেখার ধরণ ছিল সাবলীল। বইয়ের গল্পটি অনেক ভালো ছিল, বেশ বিস্তৃত ও দাপুটে একটা প্লট। বইটিতে একইসাথে রয়েছে রহস্য, রোমাঞ্চ ও ভয়ের দারুণ কম্বিনেশন। বইটির যে পার্টটা আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো, জোনাথন হারকারের ট্রানসিলভানিয়া যাত্রার শুরু থেকে একদম পালিয়ে আসার শেষ মুহূর্তটা পর্যন্ত। কি অসম্ভব থ্রিল, সাসপেন্স আর কি দারুণ ভীতিকর বর্ণনাগুলো ছিল! যেনো নিজ চোখের সামনে সবকিছু ভিজুয়ালাইজ হচ্ছিল। অনুবাদকের জায়গায় যদি লুৎফুল কায়সার ভাইয়ের নাম থাকে তাহলে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই অনুবাদ কেমন হবে। উনার অনুবাদ সমসময়ই প্রশংসনীয়। একদম জোস ও পরিপক্ব অনুবাদ ছিলো। বেশ সাবলীল এবং ঝরঝরে। শেষের দিকে মনে হলো একটু তাড়াহুড়ো করেই যেন শেষ করা হয়েছে। এত বড় ও দারুণ একটা উপন্যাসের শেষটুকু মনে হলো চোখের পলকেই শেষ হয়ে গেছে। আরেকটু বিস্তারিত বর্ণনা যদি করা হত হয়ত আমার শেষ আক্ষেপটুকুও আর থাকত না। সবশেষ, বেনজিনের বইয়ের প্রডাকশন নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই, ওরা আমাকে মুগ্ধ করে বারবারই। এবারও বইয়ের পৃষ্টার মান, সজল চৌধুরী ভাইয়ের অসাধারণ মনকাড়া প্রচ্ছদ, ডাস্ট কভার, কালার কম্বিনেশন, ফন্ট সবকিছুই টপনচ, এককথায় অসাধারণ। প্রকাশনীর এমন কাজ সত্যিই প্রসংশার দাবীদার।
Was this review helpful to you?
or
জোনাথন হারকার পেশায় আইনজীবি, জমি-বাড়ি কিনতে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দরদাম ইত্যাদি সহযোগিতা করাই তার কাজ। কাউন্ট ড্রাকুলার অতিথি হয়ে তার প্রসাদে যান তাকে লন্ডনে বাড়ি কিনতে সহযোগিতা করার জন্য কিন্তু দুর্গম সেই প্রসাদে গিয়ে বুঝতে পারেন কাউন্ট ড্রাকুলা আসলে মানুষ নন তিনি একজন পিশাচ। ড্রাকুলার সেই দুর্গে আরও তিন জন সুন্দরী পিশাচিনী ও থাকতো। কাউন্ট ড্রাকুলা ও তিন সুন্দরী পিশাচিনী ছিল জীবনামৃত অবস্থায়, তারা জীবিতদের রক্তপান করে নিজেদের টিকিয়ে রাখতো। যাদের রক্তপান করতো তারাও রক্তশূণ্য হয়ে তাদের মত জীবনামৃত পিশাচ হয়ে যেত। জোনাথন অনেক কষ্টে সেই দুর্গম প্রসাদ থেকে পালাতে পারে এবং দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে তারপর সুস্থ হয় কিন্তু ততদিনে ড্রাকুলা আক্রমন করে জোনাথনের হবু স্ত্রী মিনার বান্ধবী লুসিকে, যেদিন প্রথম লুসির রক্ত পান করে ড্রাকুলা, তখন থেকে গলায় একটি দুই দাতের ক্ষত সৃষ্টি হয়। তিন তিন বার লুসির রক্ত পান করে ড্রাকুলা। লুসিকে প্রথমবার রক্ত দিয়ে বাচায় পাগলের ডাক্তার জন, দ্বিতীয় বার ড. হেলসিং এবং তৃতীয় বার লুসির বাগদত্তা আর্থার। কিন্তু তবুও লুসিকে বাচানো যায়নি শেষ পর্যন্ত ড্রাকুলার মত রক্তচোষা পিশাচে পরিণত হয় লুসি। শহরে প্রতিদিন রাতে বাচ্চা হারাতে শুরু করে, সকালে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় গলায় দাগ থাকে প্রতিটি মৃতদেহের। পাগল খানায় রেনফিল্ড নামের পাগল থাকে যে শয়তানের পূজা করে অর্থ্যাৎ ড্রাকুলার সানিধ্য পেতে চায় পায়ও কিন্তু কথা না শোনায় তাকের নির্মম ভাবে মেরে ফেলে ড্রাকুলা। লুসির মৃত্যুর পরে ড্রাকুলার বিরুদ্ধে শুরু হয় ড. হেলসিং, জন, আর্থার, মরিস, মিনা ও জোনাথন। লড়াই এক পর্যায়ে মিনাকেও আক্রমন করে ড্রাকুলা। শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াই ড. হেলসিং কি পারবে পিশাচ ড্রাকুলার হাত থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করতে। নাকি পিশাচ ড্রাকুলা সকলকে সবাইকে জীবনামৃত বানিয়ে তার দলে নিয়ে যাবে। কি আছে শেষে……… জানতে হলে পড়ে ফেলুন পিশাচ কাহিনী ড্রাকুলা।
Was this review helpful to you?
or
600tk diye order korsilam? arektu to valo quality pabo tai na? review dekhsilam akta okhane pagewhite silo amar tay yellow | okhane shundor vabe sorano jacchilo amar tay fold kora lage
Was this review helpful to you?
or
সামনে পড়তে পারি এই অনুবাদটি, যদিও পাঞ্জেরির অনুবাদটা পড়েছিলাম। ভালোই ছিল সেটি, সাথে ইলাস্ট্রেশন ছিল বলে আরো দারুণ লেগেছিল।
Was this review helpful to you?
or
আসলে এমন অনুবাদ বইও হতে পারে? অনুবাদটি পড়ে মনেই হচ্ছে না যে এটি একটি অনুবাদ বই মনে হচ্ছে ব্রাম স্ট্রোকার নিজেই বঙ্গানুবাদ করেছেন। সত্যিই আমার জীবনে পারা একটি অসাধারণ বই। অনুবাদক একদম মার্জিত এবং প্রয়োজনীয় সকল শব্দ ব্যবহার করে আবেগ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে অবশ্যই কিনার মত একটি বই আর কেউ যদি বিনোদনের জন্য একটি বই কিনতে চায় তার জন্য এই বইটি বেস্ট। বইটিতে ধীরে ধীরে ভয়কে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রথমদিকে আমি একরকম শেষের দিকে আস্তে আস্তে কিছু অপ্রত্যাশিত কাহিনীর মাধ্যমে সুন্দর একটি সমাপ্তির মাধ্যমে গল্পটি শেষ হয়।৷৷৷৷ ৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ ।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।। ।।।।।।।।।।।।।।।।।।।আর বইয়ের বাইন্ডিং টাও অসাধারন কিন্তু পড়ার সময় আপনার একটু বইটি কম খুলে পড়বেন না হলে বইয়ের বাইন্ডিং এর সমস্যা হতে পারে। আমার জীবনে পড়ায় একটি শ্রেষ্ঠ অনুবাদ বই
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন ছিলো বইটি। অনুবাদ অনেক ভালো।
Was this review helpful to you?
or
দু'দিনের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম ট্রান্সিলভানিয়া, লন্ডন আর বিসট্রিজে। সে এক মোহাবিষ্টতা; বাঁদুড়, ভ্যাম্পায়ার আর নসফেরাতুর দুনিয়ায়। প্রথমেই স্যালুট প্রাপ্য লেখক ব্রাম স্টোকার। যেভাবে গল্পটাকে ফুটিয়ে তুলেছেন, চরিত্রগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন তা সত্যিই মনকাড়া। সেই উনিশ শতকে প্রকাশিত বইটি যে এককালে সারা বিশ্বে নাম কামাবে, কে জানতো তা। সিনেমায় সিনেমায়, নানা জনের গল্পে গল্পে আজ ভ্যাম্পায়ার আর ড্রাকুলার নাম। দ্বিতীয়ত, প্রশংসার দাবিদার অনুবাদক লুৎফুর রহমান। অনুবাদের শব্দচয়ন, ভাষা ব্যবহার নজর কেড়েছে। সব মিলিয়ে, এ এক দারুণ অভিজ্ঞতা। অনুবাদকের প্রতি শুভকামনা, ভবিষ্যতে আরও কিছু ভালো অনুবাদগ্রন্থ পাব এই আশা রাখি।
Was this review helpful to you?
or
দারুণ
Was this review helpful to you?
or
সত্যিই অসাধারণ লেগেছে এই বইটি।
Was this review helpful to you?
or
অর্ডার করেছি, হাতে পাইনি এখোনো
Was this review helpful to you?
or
A very good book
Was this review helpful to you?
or
দারুন একটা বই। বেস্ট থ্রিলার ♥
Was this review helpful to you?
or
ব্রাম স্টোকার আর উনার কালজয়ী সৃষ্টি ড্রাকুলাকে নিয়ে রিভিউ লিখার মতন নতুন কোনো শব্দ আদৌ আমার ভান্ডারে আছে কি না সন্দেহ । একজন কাল্পনিক চরিত্রকে "লিজেন্ডারি" বানানোর পেছনে শত বছরের যে ইতিহাস, সেটা তুলে ধরতে হলে এমন হাজারো রিভিউ এবং পাঠ প্রতিক্রিয়ার দরকার পড়বে। সেই সাথে বাংলা ভাষায় প্রথম বারের মত সম্পূর্ণ ড্রাকুলাকে জানার সুযোগ! ভাগ্য বিধাতা যেনো এক রাশ সুখ বইটা ছোঁয়া মাত্রই পাঠক মনে পৌঁছে দেওয়ার পণ করেছেন। ?কাহিনী সংক্ষেপ আর আমার অনুভূতি: ড্রাকুলাকে মূলত গথিক হরর ফ্যান্টাসি জনরাতে ফেলা হয়। যেখানে এই বইয়ের চরিত্রকে কেন্দ্র করে কালের বিবর্তনে তৈরি হয়ে এসেছে লাখো লাখো উপকথা এবং ইতিহাস । পুরো বই জুড়ে হাড় কাঁপানো ভয়ের পরিবেশ না থাকলেও যে কয়টা দম বন্ধকর সাসপেন্স ছিলো এতে প্রেম ভ্রমর হয়তো এক দুবার খাবি খেয়ে উঠবে । সারসংক্ষেপ বললে, গল্পের শুরুতেই দেখানো হয় জোনাথন হারকারকে , যিনি কর্ম সংক্রান্ত প্রয়োজন নিষ্পত্তির জন্য যাত্রা শুরু করেন ট্রানসিলভানিয়া অঞ্চলে । আর অবশ্যই সেটা, মহান কাউন্ট ড্রাকুলার সাথে দেখা করতে । কিন্তু ড্রাকুলার সাথে দেখা করার আগে তিনি লক্ষ্য করেন সেই অঞ্চলের মানুষের অদ্ভুত ব্যাবহার, উদ্ভট কিছু ভয়ের কারণ । উদ্ভট বললাম কারণ, তাদের অভিব্যাক্তি দেখে মনে হয় ড্রাকুলার নাম শুনলে যেনো ভয়ে সিটিয়ে পরেছে ! আর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই জোনাথন এটার পেছনের কারণ অনুধাবন করতে পারে । সে বুঝতে পারে যে, তার বর্তমান বাস এক ভাম্পেয়ারের সাথে । রক্ত চোষা ভ্যাম্পায়ারের। পড়ার পূর্বে ভেবেছিলাম, এসব ভ্যাম্পায়ারের কাহিনী আবার বিশেষ কিছু হলো নাকি! কিন্তু রিভিউ লিখছি সময়ও বারবার সেই বর্ণনামত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষটির কথা কল্পনায় আসছে । যার শীতল দৃষ্টিতে হয়তো মুহূর্তের মাঝে জমে যাবে কোনো উষ্ণ স্রোতের মানুষের হৃদয় । বইটা মূলত পত্রোপন্যাস , কাহিনীর চরিত্র গুলোর ডায়েরি , চিরকুট আর চিঠি লিখার মাধ্যমে পুরো গল্পটাই বাস্তবে টেনে নিয়ে আসা হয়েছে । মনে হচ্ছিল আমি ঊনবিংশ শতাব্দীর সবকিছু ভালো মত চিনি ! এমনকি সব কিছুই আমার চোখের সামনে দৃশ্যমান । সেই সময়ের ইংল্যান্ড , সেখানকার পারিপার্শ্বিকতা , শিক্ষা - চিকিৎসা ব্যাবস্থা , মানুষের ধারণা সব নিপুণ ভাবে বোঝা যাচ্ছিল । আর গল্পের ঠিক অন্যপাশে কাহিনী প্রেক্ষাপটে স্বয়ং জোনাথন ই কিনা ড্রাকুল বংশের শেষ বংশধর ড্রাকুলার দুর্গে থাকছে! কথা বলছে এক সত্যিকারের মৃত্যুঞ্জয় এর সাথে। যদি নিজের পাঠক সত্ত্বা থেকেও বলি, এরকম একটা চরিত্র, এবং তাকে ঘিরে আশেপাশে সৃষ্টি হওয়া সব রহস্য, আমাকে ঘোরের মাঝে রেখেছে প্রতিটা সময়। কি নেই গল্পটায়?! ভয়, সন্দেহ, ভালোবাসা, রূপ কথা, করুন ইতিহাস, বিভৎস স্মৃতিগুলো। এবং এমন একজন বিচরণকারী প্রতীয়মান, যার আবির্ভাব বইয়ের মাঝে আমাকে পুরোটা সময় ডুবে থাকতে বাধ্য করেছিল। কাহিনী যতো এগিয়েছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়েছে প্রশ্ন, দ্বিধা । কি করে ড্রাকুলার বেচেঁ থাকা সম্ভব?! তার তো অস্তিত্বের প্রমাণ ই বিলুপ্ত প্রায়!কেননা তারা গত হয়েছে শতাব্দী বছর আগে , তবে ড্রাকুলা কিভাবে আসে এই ঊনবিংশ শতাব্দীতে? উনি কিন্তু ফিলোসফারস স্টোনও পাননি । তবে মৃত্যুর পরও বেচেঁ থাকার জন্য পেয়েছিলেন আরেক উপায় ! সেই উপায় মানলে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে অনির্বাণ অভিশাপ । যা বের করে আনবে প্রতিটা সৃষ্টির অন্ধকারের আত্মাকে । ?বই সম্পর্কে আমার মতামত: আমি আমার জীবনে অনুবাদ বই খুবই কম পড়েছি । মানে এক কথায় পড়তেই পারি না। তাই মনের সুপ্ত এক কোণে সবসময় ইচ্ছা করে "অনুবাদ এড়িয়ে চলার।" তবে এখন ড্রাকুলা বইটি পড়ার পর মনে হচ্ছে আমার ভাবনা চিন্তা পাল্টানোর সময় চলে এসেছে। ?অনুবাদের মান: আমার অনুবাদ না পড়ার পেছনের কারণ গুলোর মাঝে একটা হলো অনুবাদের যথার্থতা। কিন্তু লুৎফুল কায়সার ভাই এদিকটায় পুরো মাস্টার ক্লাস কাজ দেখিয়েছেন এর আগে উনার যে কয়েকটা অনুবাদ পড়েছি , সব গুলো ভালো লাগলেও ড্রাকুলার অনুবাদটা একেবারে শীর্ষে অবস্থান করবে । যদি এক কথায় বলি, "স্মুথ"। সেই সাথে খুব সহজ ভাষায় লিখা । এত আগের বই, এত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে উনাকে মন থেকেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি । ? সম্পাদনা প্রুফ ইত্যাদি: অনুবাদের পাশাপাশি সম্পাদকও বেশ ভালো কাজ দেখিয়েছে । আর তাই একইভাবে ড্রাকুলার অনুবাদ পড়তে কোনরকম অসুবিধাই হয়নি । বরং বইটা যে অনুবাদ, এটাই বুঝায় যাচ্ছিলো না । । কিছুটা স্লো পেসড হলেও প্রচুর সাসপেন্স আর থ্রিলিং বজায় রেখে এমন ভাবে পুরোটা বইয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখা আসলেই প্রশংসা যোগ্য । এছাড়া প্রুফও একই সাথে ভালো কাজ দেখিয়েছে। হয়তো এক দুটো বানান ভুল ছিলো, কিন্তু এগুলো দেখেই বুঝা যায় হিউম্যান এরোরস । আর ভুল তো হয়তো স্বয়ং ব্রামও করে থাকতে পারবেন। এধরনের দুই একটা চোখে না পরার মত বানান ভুল কখনোই আপনার পাঠের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করবে না । এই বিষয়ে চোখ বন্ধ করে নিশ্চয়তা। ?মন খারাপের কিছু কথা: পুরোটা বই অসাধারণত্ব বজায় রেখে চললেও আমার কাছে একটা দিকে সমস্যা হচ্ছিল । গল্পে মধুর সাসপেন্স আনতে গিয়ে কাহিনীটা মাঝখানে একজন থেকে যখন অন্যজনে শিফট হয় , তখন কিছুটা অপ্রাপ্তি রয়ে যায় । হয়তো লেখক তার চিন্তা ধারায় সফল । কিন্তু আমার পাপী মন সব একেবারেই জানতে চাচ্ছিল । তাছাড়া একবার জোনাথন এর কথা শেষ হলে তাকে নিয়ে লিখা আবার গল্পের মাঝে কাহিনী পাওয়া যেত অনেক পরে(যেহেতু বইটাও বড়!) । এট মাঝে মাঝে আমি ভুলেই যেতাম লাস্ট জোনাথন কি করছিলো! তবে এসব পাঠক পর্যায়ে ভিন্ন হয়। আমার যা খারাপ লাগবে, অন্যর সেটাই ভালো লাগবে । আর এখানেই পাঠকদের সাথে লেখকদের স্বার্থকতা নিবিড় ভাবে সম্পর্কিত । ?♂️ আমার পছন্দের চরিত্ররা: কি বলবো আর চরিত্রয়ন নিয়ে ! এক কথায় অসাধারণ এবং মাখন । প্রতিটা মানুষের স্বকিয়তা আমাকেও গল্পের এক এক চরিত্রের মাঝে ঢুকতে সাহায্য করছিলো। বেশ কিছু চরিত্র একই সাথে অনেক ইন্টারেস্টিং ছিলো । আর তার সাথে রহস্যময় । তবে মজার ব্যাপার বইটাতে ড্রাকুলা আমি খুব মিস করেছি অনেকবার! অন্যদের দৃশ্যপট চলার সময় বারবার ভাবতাম, ড্রাকুলা যদি এই মুহূর্তে হঠাৎ ভেসে চলে আসতো । কিন্তু কষ্ট.... উনি দিনেও নেই , রাতেও নেই .. তাছাড়া তার কাজ বা ভয়াবহতার বর্ণনা খুব কম মনে হয়েছে। তবে মিনা , ভ্যান হেলসিং , রোনলান্ড, লুসি এই চরিত্র গুলোর বর্ণনা বেশ ভালোমত ছিলো । পরিশেষে, চরিত্রগুলো মনে ধরে থাকার মতই। ?প্রডাকশন, প্রচ্ছদ এবং বেনজিন নিয়ে কিছু কথা: বই এর প্রোডাকশন অনেক ভাল । গত দুই বছরে যতো বই হতে ধরেছি, এর মাঝে বেস্ট অফ বেস্ট প্রডাকশন লেগেছে । আমি এত দিন ধরে এই বই নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, তাও তেমন ক্ষতিই হয়নি। অবিশ্বাস্য একেবারে । আর পৃষ্টার মান, ডাস্ট কাভার, ক্যারেকটার কার্ড এবং বুক মার্ক, সব গুলোই দশে দশ । আরেকটা ভলো লাগার ব্যাপার হলো চিঠি বা ডায়রী লেখার ক্ষেত্রে আলাদা ফন্টে বেশ বড়ো করে সব কিছুই উল্লেখ করা ছিলো খুব সুন্দর করে। মানে এই মোটা বইটা পড়ার সময় মাথায় কোনো চাপ পরে না ! একটা আত্মিক প্রশান্তির ছোঁয়া এই বই সহজেই দিতে পারবে। আর বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ বাড়তি টিকাগুলোকে !! পৃষ্টার শেষে টিকা থাকায় গল্প বুঝতে আরো সুবিধা সেই সাথে প্রত্যেক অধ্যায় এর সাথে মিলিয়ে ইলাস্ট্রেশন । এত চমৎকার সব ইলাস্ট্রেশন, একেকটা মন ছুঁয়ে গিয়েছে। বেনজিন যেনো সদ্য ভূমিষ্ঠ হয়েই পুরো চেকমেট করে দিয়েছে। এমন স্পিরিটেড কাজ আরো হউক । পাঠক হিসেবে এই মোর প্রত্যাশা । বইয়ের প্রচ্ছদটা নিয়ে বিশেষভাবে লিখা উচিৎ। বই পড়ার আগেও প্রথম দর্শনে প্রচ্ছদটা দেখে ভালো লাগতো । কিন্তু পড়ার পর যখন প্রচ্ছদের দিকে তাকাই, একদম ড্রাকুলার দুর্গে প্রথম জোনাথন এর যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে! যা ছিলো একটা অসাধারণ পাঠ্য অনুভূতি.. আর তাই প্রচ্ছদটা এক্ষণ আরো বেশি পছন্দের । ? যাত্রার শেষ: বইয়ের শেষটা একদম চোখের পলকে কেমন হয়ে যায় । এতটা সময় যখন আপনি একটা বইয়ের চরিত্র, কাহিনী প্রবাহ, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাববেন, তখন আপনার মন এমনিতেই ডুবে যাবে কাহিনীর অতল গভীরতায় । আর এদিকেই ড্রাকুলার আরেকটু ভালোলাগা ফিকে হয়ে আসছিলো । মানে এত কাঠ পুড়িয়ে শেষে এসে তাড়াহুড়ো হয়ে গিয়েছিল, কিংবা যে শেষ পরিণতির জন্য আমার মন অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলো , তা যেন খুব সহজেই হয়ে গিয়েছিলো । কিন্তু বইয়ের রেশ এখনো রয়ে গিয়েছে। পরিশেষে এই বইয়ের সাথে সংযুক্ত সকলকে ধন্যবাদ। বইটা আমার জন্য দীর্ঘ এক সুখের মুহূর্ত ছিলো । ভালো থাকুক পৃথিবীর সব বইয়ের চরিত্ররা। রেটিং:৫/৫ ধন্যবাদ সকলকে ? বইয়ের নাম : ড্রাকুলা লেখক : ব্রাম স্ট্রোকার অনুবাদ: লুৎফুল কায়সার সম্পাদনা: মহিউল ইসলাম মিঠু পৃষ্ঠা:৫৬০ দাম: ৭০০(মুদ্রিত মূল্য) প্রচ্ছদ: সজল আহমেদ
Was this review helpful to you?
or
চমৎকার একটি বই নিস্বন্দেহে।
Was this review helpful to you?
or
Opelkhai thaklam
Was this review helpful to you?
or
ড্রাকুলা পড়ে তো, ড্রাকুলার প্রেমেই পড়ে গিয়েছি।।
Was this review helpful to you?
or
আমরা ভয় পাই। ভয় পেতে ভালোবাসি। তারপরও আমাদের ভৌতিক, অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। ভয় পেলেও ভৌতিক বই পড়া, কিংবা ভৌতিক সিনেমা দেখা থেমে যায় না। রাতের অন্ধকারে কম্বলের নিচে ঘাপটি মেরে বসে থেকেও আমরা দেখি। ভয়-আতংকের জগতে প্রবেশ করি। যার কোনো কিছুর ভিত্তি নেই। আসলেই কি তাই? সত্যিই কি এসবের কোনো ভিত্তি নেই। রাতের নিঃস্তব্ধ, নিশ্চুপ পরিবেশ মনের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করে। সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তিটিও তখন ভয়ে কুকড়ে যায়। তীব্র আতংকে দিশেহারা হয়ে পড়ে। তখন গাছের পাতায় বাতাসের ঝাপটাকেও মনে হয় কেউ যেন ফিসফিস করে কথা বলছে। মনে হয়, অদৃশ্য কোনো কিছু নজর রাখছে। ঘোর অমঙ্গল ঘনিয়ে আসছে চারিপাশে। সবই কি মনের ভুল? না-কি এমন কিছু সত্যিই ঘটে? হয়ত সত্যিই ভূত-প্রেত কিংবা অশরীরী কোনো কিছুর অস্তিত্ব আছে। আছে একদল পিশাচের, যারা কেবল গভীর রাতেই বের। খুঁজে বের করে শিকার। শিকারকে দলভুক্ত করে কিংবা তাদের নিয়ন্ত্রণ করে কার্য হাসিল করে? ওরা কারা? কেনই বা নিরীহ নিষ্পাপ মানুষদের নিজেদের দিকে টেনে নেয়? শুধুই কি দল ভারী করার জন্য? না-কি বেঁচে থাকার তাগিদে? যুগ যুগ ধরে, শতাব্দীর পর শতাব্দী তাদের নিয়ে কিংবদন্তি প্রচলিত। সবই কি মিথ? না-কি যা রটে, তা কিছুটা হলেও ঘটে? • কাহিনি সংক্ষেপ : ট্রান্সিলভানিয়ার এক অভিজাত ব্যক্তির খুব শখ ইংল্যান্ডে থিতু হবেন। সেই হিসেবে পড়াশোনা করছেন। বিদেশ বিভুঁইয়ের আইন, সংস্কৃতি, ইতিহাস নিয়ে জানাশোনা না থাকলে অসুবিধে হতে পারে। ইংল্যান্ডে থাকার জন্য তাই লন্ডনে একটি বাড়ি খুঁজছেন তিনি। তাকে সাহায্য করতে তার উকিলের প্রতিনিধি হিসেবে ট্রান্সিলভানিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন জোনাথন হারকার। কিন্তু যাত্রা পথে দেখা গেল বিপত্তি। তার গন্তব্য জানার পর সে অঞ্চলের মানুষজন কেমন যেন অদ্ভুত আচরণ করছে। কাউন্ট ড্রাকুলা নাম শুনেই ভয় পাচ্ছে যেন! কিন্তু কেন? কী আছে সেখানে? এসব আমলে নিলেন না জোনাথন হারকার। তার ধারণা, ইউরোপের পিছিয়ে পড়া একটি অঞ্চলের কুসংস্কার ছাড়া কিছুই নয়। তবুও মন যে কেমন করছে না, তা নয়। গন্তব্যে পৌঁছে অনেক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল জোনাথন হারকারের। তীব্র আতংক বোধ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল বিশাল নির্জন প্রাসাদে বন্দি জীবনযাপন করছে সে। একা! কোথাও কেউ নেই। এখান থেকে ফিরতে পারবে তো? আবার দেখা মিলবে মুক্ত আকাশের? শ্বাস নিতে পারবে খোলা বাতাসে? কী হবে এরপর? জোনাথন হারকারের প্রেমিকা মিনা ম্যুরে অপেক্ষায় দিন গুনছেন। প্রেমিক এলেই বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন। বান্ধবী লুসি ওয়েস্টেনেরার বাড়িতে দিনযাপন করছেন। সময় বেশ ভালোই কাটছে। লুসিরও বিয়ে কিছুদিন পর। নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর লুসিকে নিয়ে ঘটল বিপত্তি। ঘুমের ঘোরে হাঁটার অভ্যাস আছে লুসির। তাই হয়ে উঠল বিপদের কারণ। ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাটি নিয়ে গেল এমন জায়গায়, যেখানে যাওয়া উচিত হয়নি। কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে লুসি। ফ্যাকাসে, দিন দিন অসুস্থ হয়ে উঠছে। যেন কোনো এক অদৃশ্য শক্তির টানে প্রাণশক্তি একটু একটু করে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। রেনফিল্ড লোকটা অদ্ভুত। মানসিক হাসপাতালে থাকলেও ঠিক তাকে পাগল বলা যাচ্ছে না। আবার তার কর্মকাণ্ডে পাগল না বলেও উপায় নেই। এই লোকটার মধ্যে অদ্ভুত কিছু আছে। আছে এমন কিছু আছে, যা জানলে অনেক কিছুই বদলে যেতে পারে। কী সেই তথ্য? মাঝেমাঝেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন রেনফিল্ড। কাকে যেন প্রভু বলে ডাকে! প্রভুর কাছে ছুটে যেতে চায়। আবার প্রভুর ভয়ে সবসময় তটস্থ থাকে। প্রভু আসছে রেনফিল্ডকে আপন করে নিতে। প্রভুর ডাকে সাড়া দিবে সে? লুসি ওয়েস্টেনরাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ডাক্তার সেওয়ার্ড ও ভ্যান হেলসিং চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখছেন না। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সব চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে। কোনোদিন লুসির শরীর ভালো হলেও পরেরদিনই আবার আগের চেয়েও খারাপ অবস্থা। যেন এক অদৃশ্য শক্তি ভালো থাকতে দিচ্ছে না লুসিকে। কী সেই শক্তি? দৃশ্যমান শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা চলে। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে? সেখানে যে বিজ্ঞানও অসহায় হয়ে পড়ে। প্রচন্ড ঝড় উঠেছে সাগরে। উত্তাল সাগরে ভেসে আসছে একটি স্কুনার। তাতে কোনো জীবনের চিহ্ন নেই। অপার্থিব এক আবহ তৈরি করে তীরে ভিড়েছে সেটি। যেন পুরো স্কুনার জুড়ে রহস্য। কোথা থেকে এসেছিল এটি? শহরের মাঝে দেখা যাচ্ছে এক সুন্দরীকে। যার ডাকে হারিয়ে যাচ্ছে ছোটো ছোটো বাচ্চা। আবার ফিরেও আসছে। কোথায় যায় ওরা? কেনই বা যায়? সেই সুন্দরী মেয়েটি কে? ইংল্যান্ড জুড়ে অতিপাকৃত ছায়ার যে ঘন কালো মেঘ জমেছে, তা রুখতে হবে। ডাক্তার সেওয়ার্ড, ভ্যান হেলসিং, আর্থার হোমউড, পি. মরিস; সবাই এক হয়েছে। এক হয়েছে আরও দুইজন। সবার একটাই লক্ষ্য, এবার রক্তপিশাচদের থামাতে হবে। অপার্থিব অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে পার্থিব শুভ শক্তির লড়াই। যে করেই হোক থামাতে হবে ওদের। নিজেদের জন্য, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। পারবে তো ওরা? • পাঠ প্রতিক্রিয়া : ব্রাম স্টোকার-এর ড্রাকুলা একটি কালজয়ী উপন্যাস। প্রায় ১২৫ বছর আগে লেখা উপন্যাসটি সারা বিশ্বে প্রচুর পাঠক তৈরি করেছে। জনপ্রিয় হয়েছে বিশ্বজুড়ে। এমন এক বই আমার কেমন লাগল তা বলার ধৃষ্টতা দেখানো আমার সাজে এই। এই বই অনন্য সাধারণ। এর বেশি কিছু বলা সম্ভবও নয়। ছোটো থাকতে সেবা প্রকাশনীর ড্রাকুলা পড়েছিলাম। তার কিছুই এখন আর মনে নেই। তাই যখন বেনজিন প্রকাশনী ঘোষণা দিল, বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো বইটির পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ আসছে। লুফে নিতে দ্বিধা করিনি। বইটি শেষ করে এক মুগ্ধতার রেশ ছিল অনেকক্ষণ ধরে। বিশেষ করে ভালো লেগেছে দিনলিপি আকারের বর্ণনা। আমরা প্রত্যেকেই ভিন্ন মানুষ। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। একই পরিস্থিতি একেকজন ভিন্নভাবে দেখে। তাই একাধিক চরিত্র বিভিন্নভাবে পরিস্থিতি বর্ণনা করেছিল, ব্যাপারটা ভালো লেগেছে। বইটির বিশেষ দিক রয়েছে বর্ণনা। নিখুঁত বর্ণনাগুলো পড়ে মনে হয়েছে, যেন চোখের সামনেই সবকিছু দেখতে পারছি। ভয়ের গল্পগুলোতে এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। এখানেই লেখকের স্বার্থকতা। এই কারণেই ড্রাকুলা একটি কালজয়ী উপন্যাস। • অনুবাদ : লুৎফুল কায়সার ভাইয়ের অনুবাদ এর আগে পড়া হয়নি। অনুবাদ কেন, অনুবাদকের মৌলিক কোনো লেখাই এর আগে পড়িনি। তার অনুবাদ পড়ার প্রথম অভিজ্ঞতায় তাকে লেটার মার্ক দিতেই হয়। এমন সাবলীল অনুবাদ অনেকদিন পড়া হয়নি। ঠিক অনুবাদ নয়, মনে হয়েছে যেন মৌলিক কোনো বই পড়ছি। আমি মৌলিক বইয়ের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত গতির পাঠক। অনুবাদ এলেই পড়ার গতি কেন যেন ধীর হয়ে যায়। এই বইতেও এমন যে হয়নি তা নয়। তবে অন্য যেকোনো অনুবাদের চেয়ে এই বইটি দ্রুত শেষ করতে পেরেছি। হতে পারে বইটির গতিশীল বর্ণনার জন্য। কিংবা সাবলীল অনুবাদের জন্যও হতে পারে। • বানান, প্রচ্ছদ ও প্রোডাকশন : বইটির প্রোডাকশন কোয়ালিটি একদম অনন্য। এই ব্যাপারে বেনজিন প্রকাশনীর প্রশংসা করতেই হয়। দেশের প্রকাশনা জগতে নিতান্তই শিশু বেনজিন প্রকাশনী। তাদের সবচেয়ে বড়ো প্রজেক্ট ড্রাকুলা প্রকাশের আগে কথা দিয়েছিল, সেরা প্রোডাকশনই পাঠকের হাতে তুলে দিবে। তারা তাদের কথা রেখেছে। বইটির ক্ষেত্রে সবচেয়ে যেটা ভালো লেগেছে, তা হলো সম্পাদনা করা। আমাদের দেশে বই সম্পাদনা করা হলে অনেকেই মনে করে, লেখক লিখতে পারে না। তাই সম্পাদনা করিয়ে নিচ্ছে। তাই বেশিরভাগ বই সম্পাদনা ছাড়াই বের হয়। কেউ কেউ আবার করালেও প্রকাশ করতে চায় না। ফলে মানহীন, ভুলে ভরা বই প্রকাশ হয়। এক্ষেত্রে বেনজিন প্রকাশনী সম্পাদনার যে চেষ্টা করেছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এরফলে যেমন বানান ভুল প্রায় নেই হয়ে গিয়েছে, তেমনই বাক্য গঠনে অসঙ্গতি চোখে পড়েনি। তবে সামান্য কিছু টাইপিং মিসটেক লক্ষ্য করেছি। এত বড়ো বইয়ের ক্ষেত্রে তা নিতান্তই অল্প। প্রচ্ছদটি বইয়ের সাথে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা বেশ ভালো লেগেছে। বইয়ের ডাস্ট কভার ছিল অনন্য। যা ধরলেই এক প্রকার শান্তি অনুভূত হয়। বইয়ের বাঁধাই যথেষ্ট ভালো ছিল। কিছু কিছু বইয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বইয়ের বাঁধাই শক্ত হলে খুলে পড়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এই বইয়ে তেমন সমস্যা হয়নি। আরামে পড়া গেছে। পরিশেষে, এত সুন্দর বই, এর সুন্দর প্রোডাকশনে আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বইটি আরও বেশি পাঠক প্রিয় হয়ে উঠুক। বেনজিন প্রকাশনীও তাদের কথা রেখে, এমন বই আমাদের হাতে তুলে দিক। শেষে আবারও ধন্যবাদ। বই : ড্রাকুলা লেখক : ব্রাম স্টোকার অনুবাদক : Lutful Kaiser প্রচ্ছদ : সজল চৌধুরী সম্পাদনা : মহিদুল ইসলাম মিঠু বানান সংশোধন : বীক্ষণ সম্পাদনা সংস্থা প্রকাশনী : বেনজিন প্রকাশন প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি, ২০২২ পৃষ্ঠা : ৫৬০ মুদ্রিত মূল্য : ৭০০৳ ব্যক্তিগত রেটিং : ৫/৫
Was this review helpful to you?
or
বুক রিভিউ বইয়ের নাম - ড্রাকুলা (পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ এবং ইলাস্ট্রেশন সহ) জনরা - গথিক, হরর থ্রিলার, ফ্যান্টাসি লেখক - ব্রাম স্টোকার অনুবাদ - Lutful Kaiser সম্পাদনা - মহিউল ইসলাম মিঠু প্রুফরিড - বীক্ষণ সম্পাদনা সংস্থা প্রচ্ছদ - সজল চৌধুরী প্রকাশনী - বেনজিন প্রকাশন প্রথম প্রকাশ - ফেব্রুয়ারি ২০২২ পৃষ্ঠা সংখ্যা - ৫৬০ মুদ্রিত মূল্য - ৭০০ টাকা ফ্ল্যাপ :- ট্রান্সিলভানিয়ার অভিজাত এক ব্যক্তি বাড়ি কিনতে চান লন্ডনে। সেই সংক্রান্ত কাজে সেখানে পাঠানো হলো তরুণ জোনাথন হারকারকে। কিন্তু যাত্রাপথেই সে বুঝতে পারলো কিছু একটা ঠিক নেই। কাউন্ট ড্রাকুলার নাম শুনে কেন ভয় পাচ্ছে ওই অঞ্চলের মানুষজন? সবই কি ইউরোপের পিছিয়ে থাকা একটা অঞ্চলের মানুষের কুসংস্কার? নাকি আসলেই অদ্ভুত কিছু রয়েছে? পুরো অঞ্চলকে গ্রাস করে আছে একটি অতিপ্রাকৃত ছায়া! কিছু বোঝার আগেই ফাঁদে জড়িয়ে পড়লো জোনাথন। ইংল্যান্ডে কি আর ফেরা হবে তার? ওদিকে জোনাথনের প্রেমিকা মিনা ম্যুরে, তার বান্ধবী লুসি ওয়েস্টেনরা, ডাক্তার সেওয়ার্ড, আর্থার হোমউড, আমেরিকান পর্যটক কুইন্সি পি. মরিস, ভ্যান হেলসিং... সবাই নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়লো এক ভয়ানক জালে। সেই অতিপ্রাকৃত ছায়া উঠে এসেছে ইংল্যান্ডের বুকে। রক্তপিশাচদেরকে কি থামাতে পারবে ওরা? জানতে পড়ুন ব্রাম স্টোকারের কালজয়ী উপন্যাস 'ড্রাকুলা'। পৃথিবীর সবচেয়ে সফলতম পিশাচ কাহিনিটির প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলাদেশি অনুবাদ। অনুভূতিকথন :- ড্রাকুলা উপন্যাসটি সারাবিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। ২০২০ এ পড়েছিলাম সেবা প্রকাশনীর বইটা। বই টা পড়ে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিলো। তবুও একটা অতৃপ্তি কাজ করতো মনের ভিতরে। কাহিনীর পুরো স্বাদ কিভাবে পাবো..? এই কথা সবসময় মাথায় বাজতো। হটাৎ একদিন ফেসবুক টাইমলাইন এ দেখলাম বেনজিন প্রকাশনী থেকে বই আসছে। তাই সময় না নিয়ে বইটি অর্ডার করেছিলাম। বইটি তে পুরো বইয়ে যে আতংক ছড়িয়ে আছে আপনি যদি বইটা পড়েন তা আরো বুঝতে পারবেন। চরিত্রকথন :- পুরো বইটি জেনাথন হরকার, মিনা ম্যুরে, লুসি ওয়েস্টেনরার, আর্থার হোমউড, ডা. সেওয়ার্ড, কুইন্সি পি মরিস, রেনফিল্ড, অধ্যাপক ভ্যান হেলসিং, কাউন্ট ড্রাকুলা প্রত্যেকটা চরিত্র বেশ সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। প্রত্যেকটা চরিত্রের দিনলিপি, চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যমেই কাউন্ট ড্রাকুলার চরিত্র প্রকাশ পেয়েছে। কাউন্ট ড্রাকুলার আতংক পুরো বই জুড়ে। প্রত্যেকটা চরিত্র ই মনে ধরার মত। মিনা, জেনাথন, অধ্যাপক ভ্যানসিং, কুইন্সি মরিস পছন্দের চরিত্র। পছন্দের লাইন :- ১. আমাদের সবার জীবনেই খারাপ সময় আসে, অশান্তি আর মানসিক চাপ ঘিরে ধরে, কিন্তু বুক চিতিয়ে লড়াই করে যারা তারাই টিকে থাকে আর যারা ভেঙে পড়ে তারা হেরে যায়। ২. আত্মত্যাগ আর সাহস ছাড়া কিছুই সম্ভভ হয় না। লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে যেতে হবে, সেই কর্তব্য যত কঠিনই হোক না কেন। তারপর হয়তো একদিন আসবে সেই সোনালি ভোর। প্রচ্ছদ ও প্রডাকশন :- প্রচ্ছদ এককথায় অসাধারণ। সজল ভাই অসাধারণ প্রচ্ছদ করেছেন। বইয়ের জ্যাকেট জেল কভারে করা, যা সত্যিই দেখতে খুব আকর্ষণীয়। বইয়ের বাইন্ডিং বেশ ভাল। ঢাউস সাইজের বই হওয়া সত্তেও সুন্দর ভাবে নাড়াচাড়া করা যাচ্ছে বইটা। বই পড়ায় বেশ আরামদায়ক মনে হয়েছে আমার কাছে। প্রকাশনী কে এই জন্য ধন্যবাদ। লেখক নিয়ে কিছু কথা :- ব্রাম স্টোকার একজন আইরিশ উপন্যাসিক এবং গল্পকার, যাকে সারা বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমী মানুষ চেনে ড্রাকুলা স্রষ্টা হিসেবে। ১৮৯৭ সালে বইটা ১ম প্রকাশিত হয় যা এখনো বিশ্বের হরর কাহিনীর ইতিহাসে প্রথম সারিতে আছে এবং থাকবে আশা করা যায়। অনুবাদ ও বানান :- লুৎফুল কায়সার ভাই বেশ সুন্দর অনুবাদ করেছেন বইটা। পুরো বইটা খুব সুন্দর ভাবেই বুঝতে পেরেছি। বানান অনেক নির্ভুল ছিলো। রেটিং :- ৫/৫
Was this review helpful to you?
or
⚫ পাঠ প্রতিক্রিয়া - ছোটবেলা থেকে ড্রাকুলার নামের সাথে পরিচিত থাকলেও ড্রাকুলা বইটি কখনো পড়া হয়ে উঠেনি। তখন কোনো পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদও ছিল না। যখন দেখলাম বেনজিন প্রকাশন থেকে লুৎফুল কায়সার ভাইয়ের অনুবাদে ড্রাকুলা বের হয়েছে তখন পড়ার লোভ আর সামলাতে পারলাম না। তবে বইটি নিয়েও অনেকদিন পড়ার সুযোগ পাইনি। কিছুদিন আগেই বইটি পড়া শেষ করলাম। “ড্রাকুলা। পৃথিবীর সবচেয়ে সফলতম পিশাচ কাহিনী।” কেবল বইটি পড়েই ট্যাগটির মর্মার্থ বুঝা সম্ভব। লেখক শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বেচেঁ থাকা রক্তপিশাচ কে নিয়ে যে গল্প তৈরি করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। বইটিকে সাধারণ মাপকাঠিতে মাপা সম্ভব নয়। একটি স্লো পেসড বইও যে এত উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে তা এই বই না পড়লে কখনোই বুঝতে পারতাম না। বইটির প্রায় প্রতিটি চাপটারেই সাসপেন্সসের স্বাদ পেয়েছি। বিশেষ করে, একাদশ অধ্যায়ে যখন ড্রাকুলা সরাসরি লুসির ঘরে প্রবেশ করে সেই অংশটি সত্যিই অসাধারণ। পুরো লোম দাড়িয়ে গিয়েছিল এই অংশটি পড়ে। ? কিছু ব্যাক্তিগত মতামত ( স্লাইট স্পয়লার অ্যালার্ট ) - বইটিতে যে অংশটির জন্য সবচেয়ে বেশি অপেক্ষা করেছি, ড্রাকুলার সাথে সরাসরি লড়াইয়ের পার্টটা তা যেন তাড়াহুড়োয় শেষ করা হয়েছে। এই পার্ট টির জন্য অনেক অপেক্ষায় ছিলাম তবে পড়ে আশাহত হলাম। এই অংশটুকু আরো একটু দীর্ঘ করলে বইটি পূর্ণতা পেত। আবার, পিকাডেলিতে দিনের বেলায় ড্রাকুলা যে শক্তি দেখিয়েছে সে সন্ধাবেলায় তার প্রাসাদের কাছে তাকে হত্যা করার সময় তা ব্যবহার করতে পারলো না কেন? সেই শক্তি দিয়ে তো সে অনায়াসে জোনাথন ও মরিসকে কুপোকাত করতে পারতো। আবার, সেই সময় জোনাথন এর শরীরে এত শক্তি আসলো কিভাবে? নাকি সে কেবল ক্রোধের বশেই এত ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পেরেছে। ⚫ বর্ণনাভঙ্গি - বইটি পড়ে পাঠক চমক খেতে বাধ্য। বইটিতে গল্পটি সরাসরি বর্ণনা না করে বরং চরিত্রগুলোর দিনলিপি, চিঠি, চিরকুট ও বিভিন্ন প্রতিবেদনের মাধ্যমে লেখা হয়েছে। এক্ষেত্রে লেখক যে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ? চরিত্রায়ন - বইটির চরিত্রগুলো বেশ পরিপক্ব। গঠনগত দিক থেকে প্রতিটি চরিত্রকেই বইটিতে লেখক সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে কুইন্সি পি. মরিস চরিত্রকে বইটিতে বেশ কিছুসময় আঁধারেই ফেলে রাখা হয় এবং বইটির শেষ দিকে তাকে আবার স্পট-লাইটে আনা হয়। বইটিতে আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র ভ্যান হেলসিং। তিনি একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। তার বুদ্ধিমত্তা, সাহস, বিচক্ষণতা অতুলনীয়। পুরো বইতে প্রচন্ড মানসিক চাপে থেকেও এই চরিত্রটিকে কখনো ভাঙতে দেখিনি। প্রতিটি সমস্যা তিনি নিখুঁত সমাধান করেছেন। ⚫ পরিবেশ সৃষ্টি - বইটিতে পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে আশে-পাশের পরিবেশ সাজানো হয়েছে। লেখক বইটিতে যে পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন তা বেশ আকর্ষণীয় এবং একটি হরর থ্রিলারে পাঠক যেমন আশা করে ঠিক তেমনি। ? অনুবাদ - বইটিতে অনুবাদকের সাফল্য একদমই হেলাফেলার নয়। তার জন্যই পুরো বইটি পাঠকের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য ও উপভোগ্যকর হয়েছে। তার ভাষা ও প্রতিটি শব্দ একেবারে নিখুঁত। অনেক অনেক ধন্যবাদ লুৎফুল ভাইকে এই বইটি এত সহজ ভাবে অনুবাদ করার জন্য। ⚫ বানান ও সম্পাদনা - বইটিতে সম্পাদনা তুলনমূলক ভালো তবে অনেকগুলো বানান ভুল রয়েছে। যেমন - ১৬৯ পৃষ্ঠায় স্পষ্ট বানানটি স্পস্ট হয়ে গেছে। আবার ৫৫৫ পৃষ্ঠার একটি বাক্য “এবার উইনচেস্টার রাইডেন বের দুপাশের দুটো দল।" লেখা হয়েছে যা কিনা “ এবার উইনচেস্টার রাইডেন বের করলো দুপাশের দুটো দল ” হওয়ার কথা। এরকম বেশ কিছু গড়-মিল রয়েছে পুরো বই জুড়ে। ? প্রচ্ছদ - বইটির প্রচ্ছদকে এক কথায় অসাধারণ বলবো। ড্রাকুলার প্রাসাদ, নেকড়ে, বাদুড় ও ড্রাকুলার ছায়া ব্যবহার করে একটি ভৌতিক সম্মোহনী প্রচ্ছদ তৈরি করা হয়েছে। ⚫ প্রোডাকশন - বইটির প্রোডাকশন নিয়ে কোনো প্রশ্ন হয় না। বেনজিন বইটিতে তাদের সর্বস্ব দিয়েছে। পুরু কাভার, উন্নত মানের ফ্ল্যাপ ও কাগজে বইটিকে একেবারে রাজকীয় ভাব এনে দিয়েছে। সাধারণত মোটা বই পড়ার সময় পাঠক বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয় যেমন- পড়ার সময় বই শক্ত করে ধরে রাখতে হয় আবার বইয়ের পুরুত্বের কারণে বাম ও ডান পৃষ্ঠার মাঝের লেখাগুলো পড়তে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। তবে ড্রাকুলা একটি ৫৫০ পৃষ্ঠার বই হওয়া সত্ত্বেও এই বইটি পড়তে কোনো অসুবিধা হয়নি। বইটির মাঝের দিকের উন্নত মানের স্মুদ বাইন্ডিং-এর জন্য বইটি সানন্দে পড়া যায়। ? পার্সোনাল রেটিং - ৯/১০ ⚫ শেষকথা - বইটিতে হররের সাথে সাসপেন্স ও থ্রিলার মিশিয়ে যে ভয়ংকর প্লট দাড় করানো হয়েছে তা এককথায় অসাধারণ। বইটি পড়ে যে উত্তেজনা, ভয়, চমক পেয়েছি তার রেশ এখনো কাটেনি। বইটি হাইলি রেকমেন্ডেড।
Was this review helpful to you?
or
বই পরিচিতি বইয়ের নাম : ড্রাকুলা লেখক : ব্রাম স্টোকার অনুবাদক : লুৎফল কায়সার(Lutful Kaiser) প্রকাশনি : বেনজিন প্রকাশনি পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৫৬০ গুডরিডস রেটিং : ৪.০১/৫ ভূমিকা কিছু কিছু বই আছে যা শেষ করার পর মনে দাগ কেটে যায়,ড্রাকুলা হচ্ছে সেই ধাঁচেরই একটি বই।পুরো বইটি শেষ করার পর কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলাম!ভাবলাম কি পড়লাম এটা!আরো কেন বড় হল না গল্পটা?১৮৯৭ সালে লিখা একটা উপন্যাস যা পড়ে শেষ করার পর আমার হৃদয়টিকে ছুঁয়ে গেছে,অদ্ভুত এক অনাবিল প্রশান্তি এনে দিয়েছে চোখে মুখে।তৃপ্তির ঢেকু্র তুলে মনে মনে বলতে পেরেছি হ্যাঁ অবশেষে কালজয়ী এই উপন্যাসটি আমি সম্পূর্ণটা পড়ে শেষ করেছি। কাহিনী-সংক্ষেপ ৩মে,বিসট্রিজ।হ্যাঁ সেদিন থেকেই শুরু কাহিনীর সূত্রপাত।গল্পের মূল চরিত্র "জোনাথন হারকার" এর ট্রানসিলভানিয়ার দিকে যাত্রা শুরু বিশেষ সেই দিনটিতে।পূর্ব ইউরোপের মলডানিয়া এবং বুকোভিনার সীমান্তে,কার্পেথিয়ানের একদম মধ্যভাগে অবস্থিত পাহাড় ঘেরা এক জায়গা হচ্ছে ট্রানসিলভানিয়া।আর সেই জায়গার পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এক বিশাল প্রাসাদে বাস করেন ট্রানসিলভানিয়ার এক অভিজাত লোক "কাউন্ট ড্রাকুলা"। যাত্রা শুরুর পথে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে লাগল জোনাথন হারকার।তিনি বুঝতে পারলেন হঠাৎ করেই ঐ অঞ্চলের মানুষজন বেশ উদ্ভুত ধরণের আচরণ শুরু করেছে।কাউন্টের নাম শুনেই চোখ মুখ ভয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে তাদের।একাধিকবার বুকে ক্রুশ আকছে তাঁরা ভয়ে।বদ্ধপরিকর জোনাথন এত বাধা মেনেও যেতে চাইলে হোটেলের মালিকের স্ত্রী হাঁটু গেড়ে মানা করল না যাওয়ার জন্য!কিন্তু কেন?হোটেলের মালিক,মালিকের স্ত্রী থেকে শুরু করে সবার মনে ঐ প্রাসাদ ঘিরে কিসের এত ভয়?কি আছে ওখানে?কাউন্ট কি তবে ভাল লোক নয়? অপরদিকে মিনা ম্যুরে হচ্ছে জোনাথন হারকার এর প্রেমিকা।লুসি ওয়েস্টেনরা হচ্ছে তাঁর বাল্যকালের বান্ধবী।লুসির আমন্ত্রনে হুইটবি তে লুসির কাছে বেড়াতে আসল মিনা ম্যুরে।দীর্ঘদিন জোনাথন এর খোঁজ না পাওয়া মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মিনা হঠাৎ করেই লুসির মধ্যে খেয়াল করল অদ্ভুত পরিবর্তন।ঘুমের ঘোরে হাঁটা,গলার নীচে অদ্ভুত ধরণের দুটি দাগের অস্তিত্ব,রক্তশূন্যতায় ভোগে মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া সব কিছুই লুসিকে ঠেলে দিচ্ছিল কোন বিপদের মধ্যে?? পিশাচরূপি সেই নরকের শয়তানটা কি তবে ইংল্যান্ডের বুকে এসে পড়ল?? দৃশ্যপটে এরপর ই আবির্ভাব ঘটে লুসিকে বাঁচাতে আসা লুসির প্রেমিক আর্থার হোমউড,লুসির দুই বন্ধু ডা.জন সেওর্য়াড এবং কুইন্সি পি.মরিস এবং গল্পের অন্যতম মূল চরিত্র প্রফেসর ভ্যান হেলসিং। জোনাথন হারকার,মিনা ম্যুরে,লুসি ওয়েস্টেনরা,আর্থার হোমউড,ডা.জন সেওয়ার্ড,কুইন্সি পি.মরিস,প্রফেসর ভ্যান হেলসিং এই সাতজন কি পারবে শতাব্দি প্রাচীন বেঁচে থাকা নরকের এক পিশাচের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে?নাকি পরাজয় মেনে নিয়ে বরণ করে নিতে হবে করুণ মৃত্যু?? চরিত্রায়ন জোনাথান হারকার,মিনা ম্যুরে,লুসি ওয়েস্টেনরা,আর্থার হোমউড,কুইন্সি মরিস,ডা.জন সেওয়ার্ড,প্রফেসর ভ্যান হেলসিং এই সাতটি চরিত্র চিরকাল আমার মনের কোণে জায়গা নিয়ে থাকবে।এই চরিত্রগুলো যেন একেকটা ভালবাসা।যত কাহিনীর গভীরে গিয়েছি,ততই যেন আমিও তাদের সাথে সাথে শতাব্দি প্রাচীন পিশাচটার বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের সাথী হিসেবে একটা অংশ মনে করেছি নিজেকে। গল্পের মাঝামাঝি তে এসে সবচেয়ে খারাপ লাগা অনুভব করেছি "লুসি ওয়েস্টেনরা" চরিত্র টির জন্য।ভীষণ এক মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম যেন চরিত্রটির সাথে।শান্ত,মিষ্টি হাসির মেয়েটার প্রতি লেখক এতটা নির্দয় না হলেও পারত!! বুদ্ধিদীপ্ত তুখোড় ব্রেনের অধিকারি নিষ্ঠাবান বুড়ো প্রফেসরকে আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে গল্পের মধ্যে।খুব খুব প্রিয় একটা ক্যারেক্টার।কি অসাধারণ একটা চরিত্র সৃষ্টি করেছেন লেখক ব্রাম স্টোকার।গল্পে পিশাচটার বিরুদ্ধে তাঁর হার না মানসিকতা,মিনা ম্যুরে,ড সেওয়ার্ড,জোনাথন সবার তাঁর প্রতি সম্মান আমাকে যারপরনাই মুগ্ধ করেছে। এই সাতটি প্রধান চরিত্রের মধ্যে সবচেয়ে দূর্বল চরিত্র আমার মনে হয়েছে কুইন্স পি.মরিসের চরিত্রটিকে।কেন জানি জমল না চরিত্রটা আমার কাছে।গল্পে বর্ণিত করা হয়েছে তাঁকে অদ্যম সাহসী,ইস্পাতের ন্যায় শক্ত মানসিকতার লোক হিসেবে।কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই গল্পে এই চরিত্রটির অনুপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।আরো উপস্থিতি আশা করেছিলাম উপন্যাসটিতে। আরেকটা চরিত্র যা অনেকটাই উপন্যাসের আন্ডাররেটেড একটা চরিত্র লেগেছে তিনি হল আর.এম.রেনফিল্ড।খুব বেশি অংশ জুড়ে বইয়ে না থাকলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র গল্পের প্রেক্ষাপটে। পাঠ-প্রতিক্রিয়া ১৮৯৭ সালে পাবলিশ হওয়া কাল্ট ক্লাসিক এক উপন্যাস এর পাঠ-প্রতিক্রিয়া আমার মত ক্ষুদ্র পাঠক নতুন করে কি বলব!তবে ভাল এবং খারাপ লাগার কয়েকটি বিষয় সম্পূর্ণভাবে আমার দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরলাম- ১.উপন্যাসটির বেস্ট পার্ট আমার কাছে প্রথম পার্টটি অর্থ্যাৎ জোনাথন হারকারের ট্রানসিলভানিয়া যাত্রার শুরু থেকে একদম পালিয়ে আসার শেষ মুহূর্তটা পর্যন্ত।কি থ্রিল,কি সাসপেন্স আর কি ভীতিকর ছিল বর্ণনাগুলো!!কুয়াশাচ্ছন্ন রাতের পাহাড়ী এলাকার বর্ণনা,বিশাল ভৌতিক প্রাসাদের ভেতরকার বর্ননা বইয়ের প্রতিটি পাতায় পড়ে জাস্ট ভিজুইয়ালাইজ করেছি আর শিউরে উঠেছি কল্পনায়।জোনাথনের অন্য রুমে গিয়ে দর্শন করা সেই বিখ্যাত তিন ডাইনীর কার্যকলাপ পড়ে রীতিমতো কেঁপেছি উত্তেজনায়।সত্যিই রাতের বেলা এই পার্টটা পড়ার পর আমি বাথরুমে যেতে ভয় পেয়েছি!!এর চেয়ে ভয়াবহ,অকল্পনীয়,থ্রিলিং,সাসপেন্সে ভরপুর পার্ট আমার কাছে আর অন্তত পুরো উপন্যাসটির মধ্যে আর নেই।আমার কাছে এটাই সেরা অংশ সবদিক দিয়েই। ২."চরিত্রায়ন " পয়েন্টের মধ্যেই বলেছিলাম লুসির অকাল মৃত্যুর বর্ণনা আমাকে ব্যথিত করেছে।শান্ত,সুন্দরী,মিষ্টি হাসির মেয়েটি কিভাবে রক্তপিশাচ ড্রাকুলার পাল্লায় পড়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তার বর্ণনা পড়ে আমার মন হু হু করে কেঁদেছে।জানি না কেন মনের অজান্তেই লেখকের অসাধারণ লেখনীর দরুন চরিত্রটির মৃত্যু আমার মন মেনে নিতে পারে নি।পরবর্তীতে তে কাহিনীতে লুসির মৃত্যুপরবর্তী ভয়ঙ্কর রূপ তো আমাকে পুরোপুরি হতবিহ্বল করে দিয়েছে। ৩.শুধুই কি গা শিউরানো হরর টাইপ এর বই কি ড্রাকুলা??নাহ!ভুল ভাবছেন তাহলে আপনি।এতে রক্ত হিম করা হরর এর সাথে থ্রিল, সাসপেন্স,প্রেম ভালভাসা,স্নেহ,পাগলামী,পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সব উপাদান ই লেখক দু হাত ভরে যেন উপন্যাসের মধ্যে ঢেলে দিয়েছে।কাহিনীর মধ্যে যখন ডুবে যাবেন পুরোপুরি তখন অনুভব করতে পারবেন জোনাথন মিনার ভালবাসা,লুসি এবং আর্থার এর মধ্যেকার ভালবাসা,আর্থার এর সাথে ড.সেওয়ার্ড,কুইন্স পি.মরিস এর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক,প্রফেসর ভ্যান হেলসিং এর সাথে বাকি সবার পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ,লুসি হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার সবার মধ্যেকার প্রতিজ্ঞাপরায়ণ মনোভাব কোন কিছুরই কমতি দেখবেন না উপন্যাসটিতে।এছাড়া ঊনবিংশ শতাব্দীর ইংল্যান্ড,সেখানকার পারিপার্শ্বিকতা,নারী-পুরুষের সম্পর্ক,আর্থ সামাজিক অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন।সাধে কি আর ১২৫ বছর পরেও আজও এই উপন্যাসটির তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা?? নভেলটির দুইটা নেগেটিভ পয়েন্টের দিকে আলোকপাত করতে চাই একটু, প্রথমত এই দিকটায় একটু আশাহত হলাম সেটা হল, লেখক ব্রাম স্টোকার কেন ট্রান্সসিলভানিয়া দূর্গ থেকে জোনাথনের পালিয়ে যাওয়ার বর্ণনাটা সুপষ্ট ভাবে উল্লেখ করেন নি।হ্যাঁ যদিও বলা হয়েছিল কিভাবে সে পালাবে বাট পুরো ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা আমি খুব করেই চাচ্ছিলাম।প্রাসাদের ভেতরকার কাহিনী আমাকে এতই থ্রিল দিয়েছিল যে শেষের দিকে কি পদ্ধতি অবলম্বন করে জোনাথন পালায় তা বিস্তারিত পড়ার জন্য উদগ্রীব হয়েছিলাম।কিন্তু এখানে আমাকে হতাশ হতে হল।সেবার শ্রদ্ধেয় রকিব হাসান স্যার এর অনুবাদটা পড়ার সময়ও এই বর্ণনা মিসিং ছিল ভাবছিলাম তিনি হয়ত স্কিপ করে গেছেন বাট অরিজিনাল টাতেই লেখক যে বর্ণনা করেন নাই তা ভাবি নি। দ্বিতীয়ত ক্লাইম্যাক্স এর সিনটা যেন একটু তাড়াহুড়ো করেই যেন শেষ করে দেওয়া হয়েছে।এত বড় উপন্যাসের শেষটুকু যেন চোখের পলকেই শেষ হয়ে গেল!আরেকটু বিস্তারিত বর্ণনা যদি করা হত হয়ত আমার শেষ আক্ষেপটুকুও আর থাকত না। অনুবাদের মান আচ্ছা একটু চিন্তা করেন তো,এমন একটা যন্ত্র যদি থাকত ড্রাকুলা উপন্যাস টা লিখার সময় যেখানে ইংরেজীতে লেখক ব্রাম স্টোকার ড্রাকুলা লিখছে আর যন্ত্রটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলায় গল্পের টোন,ভাবগাম্ভীর্যতা ঠিক রেখে বাংলায় অনূদিত হয়ে যাচ্ছে তাহলে লিখা টা কেমন হত? শ্রদ্ধেয় অনুবাদক লুৎফল কায়সার ঠিক এমন সাবলীলভাবেই অনুবাদ করেছেন উপন্যাসটি।এত ঝরঝরে,এত প্রাঞ্জল অনুবাদ ছিল আহ!অনুবাদকের অনুবাদে তো জাদু আছে জাদু!কি আর বলব!উপরোক্ত পয়েন্টগুলো তে উপন্যাসটির এত প্রশংসা মনে হয় না করতে পারতাম যদি না অনুবাদ টা এতটা দুর্দান্ত হত।এক লক্ষ সত্তুর হাজার শব্দের অনুবাদটিতে মনে হয় না কোন জায়গায় পড়তে গিয়ে আটকে গেছি।খটমটে বা আক্ষরিক অনুবাদ কোথাও হয়েছে এমনটাও কখনো মনে হয় নি। সেবার ড্রাকুলা এবং পূর্ণাঙ্গ অনূদিত ড্রাকুলার মধ্যে পার্থক্য (No Spoiler) সবাই জানি আমরা যে বেনজিন প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত "ড্রাকুলা" হচ্ছে প্রথম পূর্ণাঙ্গ ড্রাকুলা অনুবাদ।সেবা থেকে অনেক আগে প্রকাশিত শ্রদ্ধেয় রকিব হাসান স্যার এর অনুবাদটি হচ্ছে সংক্ষিপ্ত বা রূপান্তর।বাংলাদেশের প্রায় ৯০% পাঠকই সেবার অনুবাদ টাই পড়েছেন। আসি এবার মূল কথায়,গল্পের প্রথম পার্ট এর সাথে অর্থ্যাৎ জোনাথন হারকারের ড্রাকুলার প্রাসাদে যাওয়া এবং ফিরে আসা এইটুকু অংশের সাথে সেবার করা অনুবাদটির অনেকাংশ মিল থাকলেও আপনি যতই গল্পে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকবেন ততই দুই বইয়ের মধ্যেকার পার্থক্য স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন।শেষ দিকে বলতে গেলে প্রায় কোন মিলই খুঁজে পাওয়া যায় নি।অনেক কিছুই বদল করেছেন উনি।জানি না কোথেকে রকিব স্যার রূপান্তর করেছিলেন তবে আমি বলব যে পূর্ণাঙ্গ অনুবাদটি আপনারা পড়লে দুইটার মাঝে বিস্তর ফারাক সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন।এরপর বুঝতে পারবেন কি পরিমাণ জিনিস মিস করেছেন মূল গল্পের। প্রোডাকশন ড্রাকুলার বইয়ের পার্সেলটি খুলে দেখার পর বইটি হাতে নেওয়ার পর মুখ দিয়ে একটা বাক্যই বের হয়েছিল,"What a quality production!"ধরেই বুঝেছি কত সাধনা,কত পরিশ্রম,কত যত্ন নিয়ে এই বইটির কাজ করা হয়েছিল।বইটি ধরলেই অদ্ভুত এক ভাল লাগার ফিল এসে যায়। ইলাস্ট্রেশন :- চমৎকার ইলাস্ট্রেশন ব্যবহার করা হয়েছে।এক কথায় ফ্যান্টাসটিক।প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুর আগেই ইলাস্ট্রেশনগুলো দেওয়া হয়েছে।প্রায় প্রতি অধ্যায় পড়ার মাঝপথেই ইলাস্ট্রেশনগুলো বারবার দেখেছি আর আমার কল্পনায় ভাবা ভিজুয়ালগুলোর সাথে যেন পুরোপুরি মিলে গেছে।যেমন প্রথম অধ্যায়টিতেই জোনাথনের ট্রান্সসিলভানিয়ায় কাউন্টের প্রাসাদে যাওয়ার আগ মুহুর্তে সেই ভয়ংকর সিন টা যেমন কল্পনায় ভেবেছি ঠিক তেমনিভাবে অধ্যায় শুরুর আগের পাতায় ইলাস্ট্রেশনটি দেওয়া ছিল।একদম হুবুহ আমার কল্পনার সাথে মিলে গেছে।একদম গল্পের সাথে পারফেক্ট কম্বিনেশন করে যেন ইলাস্ট্রেশনগুলো দেওয়া হয়েছে। প্রচ্ছদ :- দুর্দান্ত একটা প্রচ্ছদ।সামনের কাভারে প্রথমেই নীচের দিকে ড্রাকুলার সঙ্গী কতগুলো নেকড়ের ছবি।এরপর উপরের দিকে উঁচু পাহাড়ের উপর ড্রাকুলার সেই প্রাসাদের ছবি।ড্রাকুলার ট্রেডমার্ক বাদুড়ের ছদ্মবেশের ছবিও বাদ যায় নি প্রচ্ছদ থেকে।সবচেয়ে জোস লাগছে এতকিছুর মধ্যেও হাল্কা ভাবে ড্রাকুলার অবয়ব দেখানোটা।আবার ব্যাক কাভারে একটা মেয়ের ছবি দেখে মনে হয়েছে লুসির অবয়ব টাই যেন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।প্রত্যেক টা জিনিস একদম ইউনিক বানিয়ে দিয়েছে পুরো প্রচ্ছদটিকে।প্রচ্ছদশিল্পী কে হ্যাটস অফ এমন প্রচ্ছদের জন্য। বুকমার্ক টা তেমন পছন্দ হয় নি আমার তবে ক্যারেক্টার কার্ডটি অনেক পছন্দ হয়েছে।অইখানে ড্রাকুলার লম্বা চুলের স্টাইল দেখে পুরা ফিদা হয়ে গেছি?! পৃষ্ঠা এবং বাঁধাই :- ভাবছিলাম বইটির ভিতর এত পজিটিভের ভীড়ে হয়ত বাঁধাই ও পৃষ্ঠা কোয়ালিটি তে এসে কিছু ডিফেক্ট দেখতে পারব বইটির মধ্যে কিন্ত না বাঁধাই টা ছিল আরো জোস।এত স্মুথ ছিল যে শুয়ে,বসে,টেবিলে রেখে একপাশে কাত হয়ে পড়তে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় নি। পেইজ কোয়ালিটির মানের দিকেও সন্তোষ্ট।তবে আমার প্রথম এডিশনের বইটি তে শুরু থেকে ৫১২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত এক কালার এরপরে শেষের পৃষ্ঠা গুলোর কালার ভিন্ন ছিল।পৃষ্ঠার কি টান পড়েছিল নাকি?যাই হোক এটা বড় ব্যাপার না কোন। সম্পাদনা ও প্রুফ রিডিং :- সম্পাদক "মহিউল ইসলাম মিঠু" এবং বানান সংশোধন "বীক্ষণ সম্পাদনা সংস্থা" এক লক্ষ সত্তুর হাজার শব্দের অনুবাদটি কে নির্ভুলভাবে পাঠকদের কাছে তুলে ধরতে চেস্টার যে ত্রুটি করে নি সেটা তাদের বই প্রকাশের পূর্বের কার্যক্রম দেখে অনেকটা আঁচ করতে পেরেছিলাম।তাই বলে একদম নির্ভুল ছিল না সবকিছু।কিছু বানান ভুল,টাইপিং মিসটেক,বাক্যে এক শব্দ কখনো কখনো দুইবার এসেছে।যা পড়তে যাওয়ার সময় পড়ার গতিকে কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত করেছে।তবে দুর্দান্ত অনুবাদ,অসাধারণ প্রডাকশন এর কারণে এতটুকু পাঠক ছাড় দিতেই পারে❤️। সব খেয়াল না থাকলেও পড়ার সময় কিছু কিছু ভুল মার্ক করে রেখেছিলাম পড়ার সময়- ★১৪৬ পৃষ্ঠা তে কুকুর এর জায়গায় " কুকু" ব্যবহৃত হয়েছে। ★৪৪২ পৃষ্ঠা তে একটি বাক্য এমন ছিল,"কিছুক্ষণের জন্য খুশিতে ভরে উঠল ভরে উঠলো ওর মুখটা"-এখানে "ভরে উঠল ভরে উঠল" দুইবার এসেছে। ★৫১১ পৃষ্ঠা তে বাক্যটা ছিল এরকম"সেগুলো উলটে দেখলেন লাগলেন"- এখানে " দেখতে লাগলেন" হবে। ★৫৫২ পৃষ্ঠা তে একটা বাক্য এমন ছিল, "বৃত্তের উপর পবিত্র গুঁড়া ছিটিয়ে আমার পাশের এসে দাঁড়ালেন প্রফেসর- " পাশের" না হয়ে "পাশে" হবে। ★কোন কোন জায়গায় উপকূলরক্ষীর জায়গায় "উপকুলরক্ষি" ব্যবহার হয়েছে। ★এছাড়া স্পষ্ট শব্দটির জায়গায় "স্পস্ট",তথ্য এর জায়গায় " তখ্য",মুছছেন এর জায়গায় "মুখছেন" এসব ছোটখাট ভুল লক্ষ করা গিয়েছে। পরিশিষ্ট ৩ মে থেকে ৬ নভেম্বর।এই হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত কালজয়ী হরর উপন্যাস ড্রাকুলা গল্পের টাইমলাইন।গথিক হরর,কসমিক হরর,অকাল্ট হরর,পজেশন বেসড হরর যত টাইপের হরর গল্প আমি পড়েছি কোনটাই "ড্রাকুলা"(অবশ্যই পূর্ণাঙ্গটা) বইটির ভাল লাগার মাত্রা এবং আবেদনকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না আমার কাছে।আমার পড়া সর্বশ্রেষ্ঠ হরর বই কোনটি কেউ জিজ্ঞেস করলে আমি সবসময় ড্রাকুলার কথাই বলি(হ্যাঁ সেবার সংক্ষিপ্তটা পড়েও আমার উত্তর একই ছিল)। প্রকাশক,অনুবাদক,সম্পাদক,প্রচ্ছদশিল্পী,প্রুফ রিডার,বেনজিন প্রকাশনি সহ সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ " ড্রাকুলা" নামক এই কাল্ট ক্লাসিক হরর বইটির পূর্ণাঙ্গ অনুবাদটির জন্য।সবার চেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই আজ আমি সহ সারা বাংলাদেশের পাঠকরা পূর্ণাঙ্গ অনুবাদটি পড়ার স্বাদ নিতে পারছি। এবং বিশেষ ধন্যবাদ "আহমেদ আজিজ" নামক মানুষটিকে যার গুডরিডস এ রিভিউ না দিলে এবং অনুবাদক লুৎফুল কায়সার না দেখে থাকলে কে জানে হয়ত পূর্ণাঙ্গ অনুবাদটি কখনোই পড়া হত না। যারা পড়েননি এখনো তাদের বলব দ্রুত বইটি সংগ্রহ করে অন্ধকারের রাজপুত্র "কাউন্ট ড্রাকুলা" এর কার্যকলাপ এর সঙ্গী হয়ে যান।আশা করি হতাশ হবেন না। ব্যাক্তিগত রেটিং : ৫/৫ অনুবাদ রেটিং : ৫/৫ প্রোডাকশন রেটিং : ৪.৮
Was this review helpful to you?
or
অবশেষে শেষ হল ৫৬০ পৃষ্ঠার সফর। সত্যি কথা বলতে খুব কম বই আমি এত জলদি শেষ করে ফেলতে পারি। আমি অত ভাল রিভিউ লিখতে পারি না। কিন্তু একজন সাধারণ পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে বইটা সম্বন্ধে আমার অনুভূতি ব্যাখ্যা করব। বইয়ের প্রডাকশন কোয়ালিটি আর প্রচ্ছদ নিয়ে অনেক রিভিউ আছে। নতুন করে কিছু বলতে হবে না। আমি কথা বলব, বইয়ের অনুবাদ নিয়ে। প্রথমেই বলে রাখি, ড্রাকুলা হালের সাহিত্য নয়। লেখা হয়েছে অনেক আগে। আর আমার অল্প জ্ঞানে যা জানি, তখনকার লেখনী বর্তমানের মত ছিল না। তাই এই অনুবাদটা ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং একটা বিষয়। Lutful Kaiser & team এই জায়গায়, নিজেদের পুরোটাই উজার করে দিয়েছেন। প্রাঞ্জল অনুবাদ, লেখকের লিখে যাওয়া মূল কাহিনি বিন্যাস বজায় রাখা, পরিস্কার ছাপা এই বইকে নিয়ে গেছে অন্য মাত্রায়। প্যাশনের সাথে ডেডিকেশনের কম্বিনেশন ঘটলে এটাই হয়। বইটা পড়ার সময় আমার একবারও মনে হয়নি অনুবাদ পড়ছি। মনে হচ্ছিল ব্রাম স্টোকার নিজেই বাংলা ভাষায় লিখে গেছেন। আর সবচেয়ে যেটা ভাল লাগল, গতানুগতিক শুধু অনুবাদ লেখক করেননি। পাঠকের যাতে বুঝতে সুবিধা হয় এবং যাতে বইয়ের পুরো মজাটা পাওয়া যায়, তার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় টীকা এবং বইয়ের শুরুতে প্রেক্ষাপট দিয়েছেন। আর যখন পরছিলাম, মনে হচ্ছিল আমি প্রতিটা চরিত্রের পাশেই ছিলাম। হয়ত বলবেন এটা তো মূল লেখকের কৃতিত্ব। কিন্তু মূল লেখা থেকে অনুদিত ভার্সনে একই অনুভূতি বজায় রাখার কৃতিত্ব পুরোটাই Lutful Kaiser & টিম এর। নিঃসন্দেহে সেরা একটা কাজ। তো এই আর কী। এগিয়ে যাক বেনজিন। পাঠক হারাক কাউন্ট ড্রাকুলার সেই ঠান্ডা, স্যাঁতস্যাতে প্রাসাদে।