User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
যদি চান এমন কোনও গল্প যা আপনার মনে দাগ কেটে যাবে গভীরভাবে তবে অবশ্যই আপনার পড়া উচিত হবে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর গল্প সমগ্র। অসাধারণ কিছু গল্পের সমাহার আছে এখান। স্যারের বেশিরভাগ লিখাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। কোনোটা রাজাকার গুলোকে ব্যাঙ্গ করে, কোনোটা একজন পা হারানো মুক্তিযোদ্ধার কষ্টের বর্ননা করে, কোনোটা একজন বুদ্ধিজীবীর স্ত্রীয়ের অবস্থার বর্ননা করে আবার কোনোটা একজন যুদ্ধ ফেরত ছেলের স্বপ্ন নিয়ে। প্রতিটি গল্পই মনের ভীতরে ভীষণ ভাবে দাগ কেটে রেখে যায়। এখানে গল্প আছে মোট ২৩টি, এর মধ্যে আমার নিজের বেশি পছন্দ হয়েছে এমন গল্প গুলো নিয়ে একটু কথা বলি। *ছেলেমানুষী- মানুষের বাচ্চা কিনা বেচা হয় যেভাবে আমরা মুরগী কিনে এনে খাই ঠিক ওভাবে। একলোক তার বাসার জন্য একদিন মানুষের বাচ্চা কিনে আনেন কিন্তু একটি ঘটনার পরে ঐ বাচ্চাটির উপর লোকটির স্ত্রী এর মায়া পরে যায়। শেষে একদিন ওইটাকে খাওয়া হয় ঠিকই কিন্তু মহিলার ঐ কথা মনে পরলে লজ্জা পায় আর চিন্তা করে মানুষ কি ছেলে মানুষীই না করে। *ব্যাধি- মানুষ বাঁচে কি করে? আশা নিয়ে। আর ঐ আশা যদি কারও চলে যায় তাহলে সে মৃত্যুর পথে যেতে থাকে। ঐ মানুষ টিকে একটা জিনিশ এ পারে আবার বাঁচাতে তা হল বাঁচার আশা, বাঁচার ইচ্ছা। এখানে গল্পের মধ্যে লেখক এই ব্যাপারটা খুব ভাল ভাবে ফুটিয়ে চুলেছেন *খুনী- নিজের পাপের ফলে নিজের বিবেকের কাছে খুন হওয়াটা লেখক বাস্তবিক ভাবে তুলে ধরেছেন মানে, বিবেক কেই নিজের আরেকটা অস্তিত্ব দেখিয়েছেন। ভাল লাগসছে ব্যাপারটা। *বলদ- রাজাকারগুলি আসলেই বলদ ছিল, ভালভাবে বুঝতে পারবেন এখানে। *আজব ছেলে- এ গল্পটা খুব হৃদয়স্পর্শি। একজন ছেলে যে তার মাকে কখনও দেখেনি, যার মা তাকে যুদ্ধের সময় পালাতে গিয়ে জন্ম দিয়ে মারা যায় সেই মায়ের দুঃখ একটু বুঝার জন্য ঐ ভাবে খালি পায়ে শুধু একটু শুকনো চিড়া খেয়ে হাটতে খাকে মাইলের পর মাইল, আজব ছেলে সত্যিই। *চা-শিরীন চা পাগল মেয়ে কিন্তু ১৪ই ডিসেম্বরের পর থেকে আর চা তার মুখে রুচে না। কারন, তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায় রাজাকারগুলো এবং যাওয়ার সময় তার জীবনের শেষ কাপ চা সে শেষ করে যেতে পারেনি, সেই দৃশ্য চিন্তা করে আর তার চা খাওয়া হয় না। *জনৈক অপদার্থ পিতা- একজন বাবার গল্প আছে যে তার ছেলের চোখে একটু আশা দেখাতে চেয়েছিলেন তাদের মৃত্যুর আগে। এছাড়াও - গোপন কথা, ভালবাসার নক্ষ্যত্র, ছেলে প্রতিটি গল্পই অসাধারণ। তবে শেষে একটা কথা বলব, পাকিরা আমাদের কিভাবে অত্যাচার করছিল তা আমরা দেখিনি ঠিকই তবে পড়ে কিছুটা হলেও তা বুঝতে পারি, আর ওদের প্রতি ঘৃণা আরও বারে। তার পরও আমাদের জেনারেশন এরি কিছু মানুষ বলে রাজাকাররা তো বুড়ো হয়েগিয়েছে, ৫০ বছর আগের কথা ঘেটে লাভ কি, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের কাজ দেখে লজ্জা পাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। যাই হোক, গল্প গুলে অবশ্যই পড়বেন, ভাল লাগবে খুব।
Was this review helpful to you?
or
মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার এর সব কিছুর মত এই বইটিও সুন্দর
Was this review helpful to you?
or
মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর লেখা কিশোর উপন্যাস এবং সায়েন্স ফিকশন উপন্যাসের জন্যেই সবচেয়ে বেশি আলোচিত হন। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তিনি একজন অসাধারণ ছোটগল্পকারও। তিনি যে কত শক্তিশালী ছোটগল্পকার তার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া যাবে ‘গল্প সমগ্র’ বইটিতে। বইটি শিখা প্রকাশনী থেকে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির বইমেলায় প্রথম প্রকাশিত হয়। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। ‘গল্প সমগ্র’ বইটিতে লেখকের লেখা ২৩টি ছোটগল্প স্থান পেয়েছে। এই গল্পগুলোর কিছু লেখক যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছিলেন তখন লেখা। লেখক বইয়ের ভূমিকা অংশে লিখেছেন তাঁর তখন গল্প নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার উৎসাহ অনেক বেশি ছিল। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যে লেখক খুব ভালভাবেই উতরে গেছেন, এই বইয়ের অসাধারণ সাহিত্যমান সম্পন্ন গল্পগুলোই তার প্রমাণ। আবার বইটির কিছু গল্প লেখক যখন বিদেশে ছিলেন তখন লেখা। এই ২৩টি গল্প বিষয় বৈচিত্র্যে অনন্য। এখানে যেমন ক্রাইম ফ্যান্টাসী নিয়ে গল্প আছে, আবার তেমনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পও আছে। আবার বেশ কিছু গল্পে লেখক মানবমনের জটিল গলি-ঘুপচিতে অবলীলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। আমি এখন এই সংকলনের দ্বিতীয় গল্প ‘ব্যাধি’ নিয়ে আলোচনা করবো। তাহলেই আশা করি পাঠকেরা এই গল্পগুলোর শক্তিমত্তা সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন। ‘ব্যাধি’ গল্পটিতে চরিত্র সংখ্যা মাত্র দুটি। পুরো গল্পটি একটি ঘরের মধ্যে দুই যুবকের কথোপকথন আর কিছু সংশ্লিষ্ট বর্ণনার উপর ভিত্তি করেই কাঠামো লাভ করেছে। এই দুই যুবকের একজন মন্টু। যে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। মন্টু একটা মেয়েকে ভালোবাসতো। কিন্তু যেদিন থেকে সে জানলো মেয়েটাও তাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে সেদিন থেকেই সে মেয়েটার ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, সেদিন থেকে সে পুরো নারী জাতির প্রতিই মোহ হারিয়ে ফেলেছে। তার এক ভাই মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলো। কয়দিন আগে মন্টু তার মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে। মন্টু দু’দিন আগে একটা বেশ ভালো চাকরিও পেয়েছে। তার জীবনে এই কয়টা বিষয়েই উৎসাহ ছিল। এই সব পাওয়া হয়ে যাওয়ার পর থেকে সে আর বেঁচে থাকার কোন উৎসাহ খুঁজে পাচ্ছে না। তার জীবনে আর কোন ইচ্ছা নেই, বেঁচে থাকার স্পৃহা নেই। সে একটা বিছানায় শুয়ে থেকে আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এই অবস্থায় দ্বিতীয় যুবক, যে মন্টুকে খুব ভালো করেই চেনে সে মন্টুকে বাঁচানোর কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। শুধু নীরবে তাকিয়ে তাকিয়ে মন্টুর অতলে তলিয়ে যাওয়া দেখছে। সে মন্টুকে গান শোনার অনুরোধ করছে, ভয়ংকর নেশা করতে বলছে। কিন্তু মন্টু কিছুই করছে না। শুধু আস্তে আস্তে মারা চোখের সামনে মারা যাচ্ছে। তখন সে শেষ চেষ্টা হিসেবে একটা অত্যন্ত ধারালো ছুরি দিয়ে মন্টুর হাত ক্ষতবিক্ষত করা শুরু করলো। মন্টুর প্রচণ্ড যন্ত্রণা, বীভৎস কষ্ট শুরু হল। সে এই ভয়ানক কষ্ট থেকে মুক্তি চাইলো। অন্তত এই বেদনা উপশমের জন্যে হলেও তার ভিতরে জীবনের স্পৃহা জেগে উঠলো। আসলে আমরা মানুষেরা ঠিক কী কারণে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চাই, মানুষের জীবনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্যই বা কী লেখক খুব সূক্ষ্মভাবে অসাধারণ দক্ষতায় এই প্রশ্নগুলোর দিকে ইঙ্গিত করেছেন ‘ব্যাধি’ গল্পটির মাধ্যমে। আসলে মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় অবলম্বন যে না পাওয়া জিনিষগুলোই, ছোট ছোট কষ্টগুলোই এখানে সে সত্যই উঠে এসেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ছোটগল্পের সংকলন ‘গল্পসমগ্র’ সবারই ভালো লাগবে আশা করি।