User login

Sing In with your email

Email Address
Password
Forgot Password?

Not Account Yet? Create Your Free Account

Send

Recipients:
Message:

Share to your friends

Copy link:

    Our Price:

    Regular Price:

    Shipping:Tk. 50

    • Size:
    • Color:
    QTY:

    প্রিয় ,

    সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
    মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?

    Please Login to Continue!

    Our User Product Reviews

    Share your query and ideas with us!

    Customer Reviews

      By Mehnaz Nawmi

      27 Mar 2025 10:04 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বই: মিস্টবর্ন- দ্য ফাইনাল এম্পায়ার লেখক: ব্র‍্যান্ডন স্যান্ডারসন অনুবাদ: অসীম পিয়াস প্রকাশনী: ভূমি প্রকাশ প্রচ্ছদ: জুলিয়ান ইংরেজী প্রথম প্রকাশ: ২০০৬ প্রথম প্রকাশ: ২০২১ পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৬০৭ মূল্য: একহাজার চারশত পঞ্চান্ন টাকা মাত্র রিভিউ: মেহনাজ নওমী ❝মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল গেছে টুটি❞ আমি জানি সবাই আকাশে মেঘ দেখেছেন, মেঘের কোল থেকে নরম রোদ ভূমিজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছেন, কখনো আকাশের কোল থেকে অঝোর ধারায় ঝরে পড়া বৃষ্টি উপভোগ করেছেন। কিন্তু কেউ কি শুনেছেন আকাশ থেকে ছাই ঝরে পড়ার কথা? আজকে যে বইটার কথা বলব সে বইয়ের দুনিয়ায় আকাশ থেকে বৃষ্টির বদলে ঝরে পড়ে ছাই। ১. "দ্য ফাইনাল এম্পায়ার" নামের মতোই গম্ভীর এবং বিষন্নতায় মোড়া। সবসময় আকাশ থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি ছাই ঝরে পড়ছে। আকাশে সূর্যের রঙ সবসময়ই গোধূলি বেলার মতো টকটকে লাল থাকে। ছাইয়ে ঢেকে পড়ে কালচে হয়ে গেছে বাড়িঘর, মাটি, রাস্তা। গাছপালার রঙ সবুজ না, বেশিরভাগ বর্ণহীন কিংবা লালচে। বাহ্যিক জিনিসের মতো ফাইনাল এম্পায়ারে বসবাসরত স্কা জনগোষ্ঠীর জীবনের সব আশাও এই ছাইয়ের তলায় চাপা পড়ে আছে। ২. ❝We must accept finite disappointment but never lose infinite Hope❞ -Martin Luther King Jr. ফাইনাল এম্পায়ার শাসন করছে দ্য লর্ড রুলার। যাকে দেবতা সমতুল্য মনে করে ফাইনাল এম্পায়ারের অধিবাসী। অসীম ক্ষমতাধর এই শাসক ক্ষমতায় আসার পর বহু অগণিত বছর পেরিয়ে গেলেও কেউ তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারেনি। ইতিহাস বলে লর্ড রুলার ক্ষমতায় আসার আগে গাছের রং সবুজ ছিল, আকাশের রঙ নীল ছিল, সূর্য ছিল হলুদ। কিন্তু এখনকার অধিবাসীদের কাছে এসব একেকটা মিথ। কেউ বিশ্বাস করে না। স্কা জনগোষ্ঠীর জীবন কাটে অসহায়ত্বে। লর্ড রুলার স্কাদের মানুষ বলে মনেই করেন না। দামি দামি অভিজাত আর জমিদারদের চাকর আর মজুর হিসেবে বছরের পর বছর খাটানো হয় স্কাদের। দেওয়া হয় না কোনো মজুরি, কিংবা কাপড়। স্কাদের কোনো অধিকার নেই, এমনকি চোখের পাতা ফেলতে দেরি হলেও চাবুকের বাড়ি জোটে পিঠে। অতীতে বহুবার স্কা বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছে। এবং প্রতিবার বিদ্রোহ দমন করে ফেলেছেন লর্ড রুলার। নির্বিচারভাবে হ/ত্যা করেছেন শতো শতো স্কা। অসীম ক্ষমতাধর এই শাসক সকল গোপন খবর বুঝে ফেলেন। ধীরে ধীরে সব আশা হারিয়ে ফেলে সকল স্কা। ভাগ্যকে মেনে নেয়। তাদের জীবন অতিবাহিত হয় শোষিত হয়ে। কোনো স্কার জন্ম থেকে মৃ/ত্যু পর্যন্ত আজীবন কাজ করে যেতে হয়, যারা দুর্বল তাদের মে/রে ফেলা হয়। আজীবন ভয় আর আতঙ্কে বেঁচে থাকা স্কারা এখন বিদ্রোহ শব্দটা শুনলেও তার পরিণতি ভেবে ভয়ে কেঁপে উঠে! ৩. ❝In the midst of Ashes, find your strength to be Reborn❞ সকল নৈরাশ্যের মাঝ থেকেই ইতিহাসের সেরা বিদ্রোহীরা বেরিয়ে আসে। কেলসিয়ের এমনই একজন বিদ্রোহী। কেলসিয়ের নিজেও একজন স্কা, কিন্তু সে নিজের ভাগ্যকে লর্ড রুলার এবং তার অধীনস্ত অভিজাত জমিদারদের চাবুকের বাড়ির ওপর ছেড়ে দেয়নি। কেলসিয়ের এই হতাশা, অনিশ্চিয়তা এবং ভয় নিয়ে বেঁচে থাকা স্কাদের নিয়ে বিদ্রোহের পরিকল্পনা করে। ফাইনাল এম্পায়ারের একজন ব্যক্তিও বিশ্বাস করে না লর্ড রুলারকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব। সবাই জানে লর্ড রুলার অমর। কিন্তু কেলসিয়ের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সে নিশ্চিত যে একদিন লর্ড রুলারকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে। লোকে তাকে "দ্য সার্ভাইভার অফ হাটসিন" বলে। হাটসিন হচ্ছে একটা পিট, যাকে জাহান্নাম সমতুল্য মনে করে স্কারা। যারাই বিদ্রোহ করে ধরা পড়ে, বা বিদ্রোহের চেষ্টা করে তাদের পিটে পাঠিয়ে দেন লর্ড রুলার। পিট হলো গহীন অন্ধকারে ডুবা খনির সুড়ঙ্গ, যেখানে একবার কাউকে পাঠানো হলে কেউ বেঁচে ফিরতে পারে না। আর এই পিট থেকে সার্ভাইভ করা কেলসিয়েরকে সকল স্কা এড়িয়ে চলে, কারণ তারা বিশ্বাস করে, কেলসিয়ের যেখানেই যায় সেখানেই ঝামেলা পাকায়, তারপর সেই ঝামেলার ফলস্বরুপ ধারালো কোপ নেমে আসে স্কাদের ওপরই। ৪. ফাইনাল এম্পায়ারের রাজধানী লুথাডেল। কালো কুচকুচে দুর্গ আর পাথর বিছানো রাস্তায় মোড়া এক শহর। এই শহরেই বিশাল এক প্রাসাদ "ক্রেডিক শ" তে বাস করেন লর্ড রুলার। এই শহরে বসবাসকারী স্কাদের ভাগ্য ক্ষেতে কাজ করা স্কাদের ভাগ্যের থেকেও খারাপ। লুথাডেলে ভিক্ষা করার অনুমতি নেই কোনো স্কার। তবে লর্ড রুলার আর মিনিস্ট্রিকে লুকিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে টিকে আছে অনেক স্কা তস্কর। অভিজাতদের বোকা বানানোই যাদের কাজ। এমনই এক ধান্দাবাজ দলের সর্দার হচ্ছে কামন। তার দলেই আছে ভিন নামক ষোলো বছরের এক বাচ্চা মেয়ে। যে দলের লাত্থিঝাঁটা খেয়ে আর মিনিস্ট্রিকে ধোঁকা দেওয়ার কাজে সাহায্য করে কোনোরকমে টিকে আছে। মিনিস্ট্রি হলো যারা লর্ড রুলারের কাজ আর আইন ওনার হয়ে পরিচালনা করে। মিনিস্ট্রিতে আছে অবলিগেটর আর ইনকুইজিটর। অবলিগেটররা অভিজাতদের সকল বাণিজ্য, চুক্তিতে সাক্ষী থেকে অনুমোদন দেয়। ভিনের দল অভিজাত সেজে অবলিগেটদের বোকা বানিয়ে বক্সিং অর্থাৎ টাকা হাতায়। ভিন ছোটবেলা আবিষ্কার করে তার এক অন্যরকম ক্ষমতা আছে, সে লাক ব্যবহার করে কারও সন্দেহ, রাগ দূর করে দিতে পারে। অবলিগেটর যাতে কোনোরকম সন্দেহ না করে তাই তাদের ওপরও লাক ব্যবহার করে ভিন, কিন্তু সে জানতো না এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে এবং জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিবে! ৫. মিনিস্ট্রির অবলিগেটররা তাদের ওপর কেউ লাক ব্যবহার করলে বুঝে ফেলে। এবং এই জিনিস একদম পছন্দ করে না তারা। লর্ড রুলার এই ক্ষমতার অধিকারী কোনো স্কাকে বাঁচতে দেননা। তাদের মে/রে ফেলার জন্য পাঠানো হয় স্টিল ইনকুইজিটর! ইনকুইজিটররা অদ্ভুত জীব। এরা মানুষ, তবে পরিবর্তিত। অত্যাধুনিক ট্রেনিং প্রাপ্ত, চোখ আর পিঠ থেকে বেরিয়ে থাকে লোহার গজাল। সবাই জানে ইনকুইজিটরদের কেউ হারাতে পারে না, এমনকি এদের মা/রার উপায়ও জানে না কেউ। ভিনকে মা/রার জন্য এমন একটা ইনকুইজিটরকে পাঠানো হলে বুঝে ফেলে কেলসিয়ের। এবং মেয়েটাকে এনে নিজেদের দলে নেয়। প্রথমবারের মতো ভিন জানতে পারে সে আসলে শুধু ছোটখাটো লাক ব্যবহার ছাড়াও, বিশাল একটা ক্ষমতার অধিকারী। ভিন জানতে পারে সে একজন অ্যালোম্যান্সার! স্কাদের মধ্যে অ্যালোমান্সার জন্মায় না। এখন পর্যন্ত একজন অ্যালোমান্সারের দেখাই পেয়েছে স্কারা, সেটা হলো কেলসিয়ের। অথচ ভিন নিজে একজন অ্যালোমান্সার সে জানতোও না। ৬. অ্যালোম্যান্সি কী? অনেক অভিজাত রক্তের অধিকারী তাদের ভোগ বিলাসের জন্য স্কা নারীদের বেছে নেয়। এবং কাজ শেষে কোনো শিশু জন্মানোর আগেই মে/রে ফেলা হয় ওই মেয়েদের, কারণ লর্ড রুলার জানতে পারলে ধ্বংস করেন সেই অভিজাতকেও। অভিজাত রক্ত আর স্কা রক্তের মিলনে জন্ম নেওয়া কোনো শিশু বেঁচে থাকলে সে কোনো একটা ক্ষমতার অধিকারী হয়। মূল আটটা ক্ষমতা আছে যা পাওয়া যায় আটটা মৌলিক ধাতু থেকে, এই বিশেষ স্কারা তাদের দেহে মৌলিক আটটা ধাতুর যেকোনো একটা ধাতু পুড়িয়ে সেটার ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে। একটা ক্ষমতা আছে এমন কাউকে বলা হয় মিস্টিং। আর যেসব মিস্টিং একটার বেশি ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে তাদের বলা হয় মিস্টবর্ন। একটার বেশি দুইটা ধাতু পোড়াতে যে সক্ষম হয় সে মৌলিক আটটা ধাতুর সবগুলো পোড়াতে পারে। আর এদের বলা হয় অ্যালোম্যান্সার বা মিস্টবর্ন! ৭. কেলসিয়েরের দলে সবাই একেকজন মিস্টিং। সারাজীবন মা/র খেয়ে বড় হয়েছে ভিন। এমনকি তার নিজের মাও তাকে মে/রে ফেলার চেষ্টা করে। ভিনকে বাঁচায় তার ভাই রিন। রিন ওকে নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে আসে। ভাই হয়েও ভিনকে ভালোবাসেনি রিন, সারাক্ষণ মা/রের ওপর রাখতো। ভিনকে অনেক শিক্ষা দিয়েছিল রিন, তারমধ্যে অন্যতম একটা হলো কাউকে বিশ্বাস না করা, কারণ সবাই একদিন না একদিন ছেড়ে চলে যায়ই। রিন নিজেও ছেড়ে চলে গিয়েছিল ভিনকে। এবং তারপর থেকে ভিনের মাথার মধ্যে সারাক্ষণ ফিসসিস করে চলে রিনের কন্ঠস্বর! অথচ কেলসিয়েরের দলে এসে ভিন আবিষ্কার করলো এই দলের মূল ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস! কেলসিয়ের ভিনকে শর্ত দিলো, সে তাকে আটটা মৌলিক ধাতু পুড়িয়ে কিভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করতে হয় সেটা শেখাবে, বিনিময়ে কেলসিয়েরকে বিশ্বাস করতে হবে ভিনের! এভাবেই দলে যোগ দিয়ে ভিন জানতে পারে, এই দলটার একটা অসম্ভব লক্ষ্য আছে, এরা ফাইনাল এম্পায়ার অর্থাৎ লর্ড রুলারকে উৎখাত করতে চায়! ৮. ধীরে ধীরে দলের সবাইকে নিয়ে পরিকল্পনা আগায় কেলসিয়ের। ইয়েডেন নামক এক স্কা বিদ্রোহী দলের নেতার সাথে চুক্তি করে সে। কিন্তু বিদ্রোহ সফল করানো এবং লর্ড রুলারকে উৎখাত করতে হলে প্রায় দশ হাজার স্কা বিদ্রোহি প্রয়োজন। যেখানে বিদ্রোহের নাম শুনলেই ভয়ে কাঁপে সাধারণ স্কারা, সেখানে বিদোহি দলে যোগ দিয়ে লর্ড রুলারের ক্ষোভের শিকার হওয়া বিলাসিতা। তাই যাত্রাটা আরও কঠিন! একটা বিদ্রোহি দল গঠন করাই বড় চ্যালেঞ্জ। সাথে যোগ হয়েছে লর্ড রুলারকে মা/রা, যেখানে তিনি অমর! ৯. লর্ড রুলার মূলত রাজ্য পরিচালনায় করান মিনিস্ট্রি আর অভিজাতদের মাধ্যমে। এই অভিজাতরা অনেক ক্ষমতাধর। এদের পরিবারে আছে গুপ্তহ/ত্যার জন্য পূর্ণাঙ্গ মিস্টবর্ন। অর্থনীতি আর অস্ত্রের ব্যবসা করায় এরা প্রচন্ড ধনী। এই অভিজাতরা যতোদিন টিকে থাকবে ততোদিন ফাইনাল এম্পায়ার দখল অসম্ভব। রাজনৈতিক কূটকাচালে ভরা একেকটা অভিজাত পরিবার। এরাও স্কাদের মানুষ বলে মনে করে না। নিজেদের আরাম আয়েশ আর বিলাসিতার দিকেই যতো মনোযোগ। এমন এক অভিজাত সাজিয়ে ভিনকে পাঠানো হয় অভিজাতদের আয়োজন করা "বলে"। বল হচ্ছে এমন এক অনুষ্ঠান যেখানে অভিজাতরা মিলিত হয়ে নাচ গান, এবং আনন্দ করে। ভিনের কাজ অভিজাতদের সাথে মিশে তাদের গোপন খবর বের করা। এই খবরগুলো কাজে লাগিয়ে একের পর এক অভিজাত পরিবারকে একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনকে যুদ্ধ শুরু করানোর পরিকল্পনা কেলসিয়েরের। অথচ সবচেয়ে প্রভাবশালী অভিজাতের প্রেমে পড়লো ভিন! একদিকে অভিজাত পরিবারের যুদ্ধে নিজের ভালোবাসাকে হারানোর ভয়, অপরদিকে নিজের দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার ভয়! কোনদিকে যাবে ভিন? এদিকে সেই অভিজাত অবলিগেটরদের লুকিয়ে নিষিদ্ধ বই নিয়ে ঘুরে কেন? ১০. ভিন একদিন দুটো নতুন ধাতু সম্পর্কে জানতে পারলো। মৌলিক আটটা ধাতুর বাইরেও নবম ধাতু এবং সবচেয়ে মূল্যবান দশম ধাতু "এটিয়াম" আছে। এই এটিয়ামের খনিই হলো পিট অফ হাটসিন, যেখানে নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছে কেলসিয়ের। এই এটিয়ামকে অভিজাতদের কাছে চড়া মূল্যে বিক্রি করে লর্ড রুলার! কী এমন ক্ষমতা আছে এই এটিয়ামের? ১১. লর্ড রুলারের প্রাসাদ ক্রেডিক শ'তে একটা রহস্যময় ঘর আছে। কেলসিয়েরের বিশ্বাস ওই ঘরে এমন কিছু আছে যা থেকে বুঝা যাবে লর্ড রুলারকে কিভাবে মা/রা যায়। ওই ঘরে একবার ঢুকতে গিয়ে ইনকুইজিটরদের হাতে ধরা পড়েছিল কেলসিয়ের এবং তার ভালোবাসার মানুষ মেরি। দলের কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তাদের সাথে। এবার আবার সেই ঘরে ঢুকার প্রস্তুতি নিল কেলসিয়ের, সঙ্গে ভিন। এবারেও যদি ঢুকতে না পারে তারা? যদি এবারেও কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে? ১২. এদিকে দলের সবাই ইতিমধ্যে সন্দেহ করতে শুরু করেছে কেলসিয়েরের নিশ্চয় অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। হয়তো ফাইনাল এম্পায়ার দখলের ব্যাপার সবটাই ভাঁওতাবাজি! কিন্তু অন্য কোন লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে কেলসিয়ের? বিদ্রোহী দলের চেয়ে টেরিসম্যানদের প্রাচীন ধর্মগুলো সম্পর্কে এতো আগ্রহ কেন কেলসিয়েরের? ভিনকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কেলসিয়েরের নিযুক্ত করা কিপার কোন রহস্য লুকিয়ে রেখেছে? লর্ড রুলার কেন ভয় পেতেন কিপারদের? ১৩. এমন একটা ঘটনা ঘটলো যে ঘটনায় প্রিয়জন হারানোর সবচেয়ে বড় আঘাত পেলো কেলসিয়ের। প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করলো সে। কেলসিয়ের এমন এক প্রতিশোধ নিল যেটা লর্ড রুলারকে সরাসরি আঘাত করলো। অথচ কেলসিয়ের জানে না লর্ড রুলার কতো ভয়ানক শাস্তি দেবেন সবাইকে। নাকি কেলসিয়ের আগে থেকেই সব জানতো? ইচ্ছে করেই দলকে সে এই পরিণতির দিকে টেনে নিয়ে এসেছে? কিংবা কেলসিয়ের আসলেই সব সন্দেহের উর্ধ্বে। সে আসলেই মনেপ্রাণে বিদ্রোহটা সফল করতে চাইছে। ১৪. এলেভেন্থ মেটালই নাকি একমাত্র মা/রতে পারে লর্ড রুলারকে। কিন্তু এলেভেন্থ মেটাল কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটা জানে না কেউ! এমনকি কেলসিয়ের কিংবা ভিনও না! কিন্তু এই এলেভেন্থ মেটাল জোগাড় করবে কিভাবে? তারা এটাও জানে না যে, বারো নাম্বার আরেকটা ধাতু আছে। যার ব্যবহার ইনকুইজিটরদের দখলে! স্কারা কেন কুয়াশাকে ভয় পায়? কুয়াশা কী আসলেই জীবিত মানুষের আত্মা শুষে নেয়? ১৫. লর্ড রুলারকে আগেও অনেকে মা/রার চেষ্টা করা হয়েছে, তাকে কো/পানো হয়েছে, আগুনে পোড়ানো হয়েছে, গলা কে/টে ফেলা হয়েছে, কিন্তু এতোকিছুর পরেও বেঁচে আছে লর্ড রুলার। অমর এই শাসককে আসলেই মা/রতে পারবে দলটা? নাকি হাজার হাজার বছরে বিলিন হয়ে যাওয়া বিদ্রোহী দলগুলোর মতো তারাও হারিয়ে যাবে? ❝দ্য হিরো অফ এজেস❞, যার কথা ইতিহাস এবং কিংবদন্তী এক ভবিষ্যতবাণীতে বলা হয়েছে, সেই হিরো কি আসলেই এক্সিস্ট করে? রাশেক কে? যাকে ভয় এবং ঘৃণা করে দ্য হিরো অফ এজেস! পাঠ প্রতিক্রিয়া: খুব সম্ভবত এখন পর্যন্ত আমার পড়া সেরা ফ্যান্টাসি বই হচ্ছে মিস্টবর্ন: দ্য ফাইনাল এম্পায়ার! লেখক ব্র‍্যান্ডন স্যান্ডারসন খুব নিপুণভাবে বইটার ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং করেছেন। ওনার সৃষ্টি করা ফাইনাল এম্পায়ারের জগতের চরিত্রগুলো এতো বাস্তব ভাবে গল্পে উঠে এসেছে যে বইটি পড়ার সময় মনে হচ্ছিল লুথাডেল নামে সত্যিই কোনো জগত এক্সিস্ট করে! একটা বইতে সুখ, দুঃখ, কষ্ট, নিপীড়ন, অ্যাকশন সবকিছুর সমাবেশ আছে। বইয়ের কোনো ঘটনা যখন আপনাকে স্কাদের প্রতি ব্যথিত করবে, ঠিক পরমুহুর্তেই আপনি জড়িয়ে পড়বেন অ্যালোম্যান্সারদের কোনো অ্যাকশনে! প্রতিটা চরিত্র এবং ঘটনা অসম্ভব দক্ষতা এবং সৃজনশীলতা ব্যবহার করে তৈরী করা। পুরো গল্পটাই আসলে রহস্যে মোড়ানো। লেখক নিখুঁতভাবে একটার পর একটা রহস্য জোড়া দিয়ে সুতো বানিয়ে বুনন করেছেন গল্পটি। এই গল্পের মাঝখানে অনেক বিষয়কে মনে হবে কাহিণীর বাইরের জিনিস, অথচ শেষে এগুলোই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে। মিস্টবর্ন দ্য ফাইনাল এম্পায়ারের টুইস্টটাই এই বইয়ের বড় সম্পদ। শেষ পর্যন্ত যাওয়া অবধি কেউ ধারণা করতে পারবেন না কি হতে যাচ্ছে। বইয়ে মূল চরিত্রের অদ্ভুত সব কাজকর্ম শেষটাকে পারফেক্টলি ব্যাখ্যা করে! মজার ব্যাপার হচ্ছে এই গল্পের প্রায় দুশো পাতা পড়ার পরই গুগল থেকে একটা স্পয়লার খেয়েছিলাম আমি। প্রচন্ড মন খারাপ হয়েছিল, ভেবেছিলাম আর মজা পাবো না। অথচ গল্পের শেষে এসে দেখি আমি যে স্পয়লার খেয়েছি এটা ক্ষুদ্র একটা অংশ মাত্র। এই অংশের বাইরেও আরও বেশ কয়েকটা টুইস্ট আর রহস্য সাজিয়ে রেখেছেন লেখক। এই গল্পের আরেকটা প্রিয় দিক হচ্ছে বিশ্বাসের ব্যবহার। লেখক দেখিয়েছেন মানুষ যেমন আশা ছাড়া বাঁচতে পারে না, তেমন বিশ্বাস ছাড়াও বাঁচতে পারে না। কাছের মানুষ ছেড়ে যাওয়ার ভয় নিয়েই আমাদের মানুষকে আপন করে নিতে হয়, বিশ্বাস ভঙ্গের ভয় থাকার পরও কাছের মানুষদের বিশ্বাস করতে হয়! সবচেয়ে মজার ব্যাপার, এই বইয়ের একটা চরিত্রকে পুরো গল্প জুড়ে হয়তো আপনি ঘৃণা করবেন। কিন্তু শেষে এসে ওই একটা চরিত্রের প্রতিই ভালোবাসায় শিক্ত হবে আপনার মন। সর্বোপরি হাই ফ্যান্টাসি জগতে হারিয়ে যাওয়ার জন্য পারফেক্ট একটা বই। আপনি এই বইটা পড়লে একটা সেরা ফ্যান্টাসি জগতের স্বাদ তো পাবেনই, সাথে পাবেন অ্যাকশন, রহস্য, ভরসা, বন্ধুত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা এবং আশার মিশেল! নেগেটিভ দিক: সত্যি বলতে বইতে নেগেটিভ দিক আমি পাইনি তেমন। হাতেগোনা দু এক জায়গায় অনুবাদ হালকা একটু কঠিন লাগা ছাড়া। এছাড়া পুরো গল্পে অনুবাদ সাবলীল ছিল। বইয়ের প্রচ্ছদ সুন্দর। এতো মোটা বই কিন্তু শুয়ে শুয়ে পড়তেও কোনো অসুবিধে হয়নি আমার। বইয়ের শেষে প্রতিটা ধাতুর আলাদা করে ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। ওইটুকুতে অ্যালোম্যান্সি এবং কোন ধাতু কোন ক্ষমতা দেয়, বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ ধাতু, সবকিছুই সহজভাবে বুঝানো হয়েছে। ৬০৭ পৃষ্ঠার একটা বইকে পুরোপুরিভাবে রিভিউতে ফুটিয়ে তুলতে পারিনি হয়তো। আসলে একটা রিভিউ দিয়ে হাই ফ্যান্টাসির এই বইকে বর্ণনা করা সম্ভব না। বইটা পড়ে আমার ভালো লেগেছে, এবং স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, আমি মিস্টবর্ন সিরিজের এবং লেখক ব্র‍্যান্ডন স্যান্ডারসনের গুণমুগ্ধ ভক্ত হয়ে গিয়েছি! ব্যক্তিগত রেটিং: ৯.৫/১০

      By Md Rakib Hasan

      13 Oct 2023 10:22 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      ========= কাহিনী সংক্ষেপ ========== রাতে রাজত্ব করে কুয়াশা... পুরো বিশ্বই লর্ড রুলারের করায়ত্বে। প্রায় হাজার বছর ধরে পুরো বিশ্বই শাসন করে চলছে লর্ড রুলার। যিনি ফাইনাল এম্পায়ারের একচ্ছত্র অধিপতি। অজ্ঞাত কোনো এক কারণে গোটা ফাইনাল এম্পায়ার জুড়ে চলে কুয়াশার রাজত্ব, সূর্য অস্ত গেলেই গোটা এম্পায়ার ঢেকে যায় ঘন কুয়াশায়। আর সারাদিন ধরে ধূসর আকাশ থেকে ঝরে পড়তে থাকে ছাই। বিশ্বে এখন মূলত দুই ধরণের মানুষের বাস। এক যে শাসন করে আর অপরজন শোষিত। এখানে শোষিতরা হলো স্কা এর দল, যাদের জীবনের রং ছাইয়ের মতোই কালো আর নোংরা। স্কা-দের কাছে অন্নদাতা, রক্ষাকারী ও একমাত্র আশ্রয়স্থল হলো লর্ড রুলার। এমনকি তিনি নাকি খোদ ঈশ্বরের অংশ, অমর! ফাইনাল এম্পায়ারের সামরিক ও নিরাপত্তার সকল দিক পর্যবেক্ষণের জন্য লর্ড রুলারের অধীনে আছে ইনকুইজিটর নামের কুৎসিত ও ভয়াল দর্শনের খুনির দল, যাদের কেউ পরাস্ত ও হত্যা করতে পারেনা। আর প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক নানা কাজ সামলানোর জন্য রয়েছে অবলিগেটর নামের প্রচুর ক্ষমতাধর এক শাসকদল। এদের কাজ লর্ড রুলারের নিয়ম-নীতি প্রচার ও বাস্তবায়ন, কর আদায় এবং অভিজাতশ্রেণী ও স্কা-দের নিয়ন্ত্রণ করা। হাজার বছর ধরে চলে আসছে এই নীতি যেখানে স্কা নামক একমাত্র সাধারণ মানুষেরা সবসময়ই অত্যাচার ও নিযার্তনের শিকার। কয়েকবার আন্দোলন মাথা চাড়া দিলেও লর্ড রুলার ও তার ইনকুইজিটরের দল সেগুলো দক্ষ হাতে দমন করেছে, নৃশংশভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে তাদের। কিন্তু তবুও বেঁচে থাকে মুক্তির আশা। কিন্তু অনেক বছর বছর পর নতুন এক প্রতিরোধ ও সংগ্রামী দল আত্নপ্রকাশ করে, যার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে ফাইনাল এম্পায়ারের লর্ড রুলারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা ও সাম্যতা প্রতিষ্ঠা করা। এই দলের নেতৃত্বে আছে মিস্টবর্ন কেলসিয়ের। কেলসিয়ের ডাক দেন এক নতুন বিল্পবের, যেখানে থাকবে না কোন শ্রেণী ভেদাভেদ ও দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার। এই কেলসিয়েরই খুঁজে পান ভিন নামক রাস্তার এক সাধারণ স্কা কিশোরীকে। যাকে তার বিপ্লবী দলে অন্তর্ভুক্ত করে নেন কেলশিয়ের। কেউ প্রথমে না বুঝলেও কেলসিয়ের তাকে অ্যালোম্যান্সির প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে বুঝতে পারেন যে, ভিন শুধু মিস্টবর্নই না, বরং আরোও বেশি কিছু! যেটা কেলসিয়েরের নেতৃত্বে এই নতুন ঘটতে যাওয়া বিপ্লবকে হয়তো অপ্রত্যাশিতভাবে প্রাণসঞ্চার করে লর্ড রুলারের শাসনকে চিরতরে অবসান ঘটাবে কিংবা নিজেরাই হারিয়ে যাবে বিস্মৃতির অতল গহ্বরে। ========= পাঠ প্রতিক্রিয়া ========== ফ্যান্টাসি ফিকশনের কাতারে যদি ‘দি ইকাবগ’ বইটিকে ধরি তাহলে এই বইটি ফ্যান্টাসি ফিকশন হিসেবে পড়া আমার ২য় বই। লেখক তার অসাধারণ গল্প বুননের স্বাক্ষর রেখেছেন তার এই বইতে। ফ্যান্টাসি উপন্যাসে ঠিক যেরকম প্লট, গল্প, চরিত্রায়ন, পরিবেশের বর্ণনা একজন পাঠক আশা করবে, ঠিক সেই রকমের উপাদান দিয়ে সাজানো এই উপন্যাসের প্লট ও গল্প। তার উপর সুন্দর ও নিখুঁত ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং, সহজবোধ্য লেখনশৈলী, বিস্তারিত প্রাঞ্জল বর্ণনা, এবং সবশেষে মানানসই একটা সমাপ্তি বইটিকে দিয়েছে এক অনন্য মাত্রা। ম্যাজিক সিস্টেমের ব্যবহার, বিভিন্ন ধাতুর নানা রকম ব্যবহার, অ্যাকশন দৃশ্যের বর্ণনা, প্রায় প্রতিটি প্রধান চরিত্রের বিকাশসহ মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ বইয়ের আকার বৃদ্ধি করলেও তা পড়তে মোটেও বিরক্ত লাগেনি। বরং পাঠকের মনে আরোও আগ্রহ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ব্রান্ডন স্যান্ডারসনের এই সৃষ্টি ফ্যান্টাসির জগতে সর্বদা ওয়ান পিস হয়ে থাকবে। তিনি চিরাচরিত ফ্যান্টাসির পথ বদলে দেওয়া এক বিস্ময়কর কারিগর হয়েই থাকবেন পাঠকদের মনে। ফ্যান্টাসি, রহস্য ও অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পাঠকদের জন্য দারুণ এবং অবশ্যপাঠ্য একটি বই। প্রোডাকশনঃ কভার ডিজাইন ছিলো অসাধারণ এবং বইয়ের মূল কাহিনীর সাথে দারুণ মানানসই। সাথে বইয়ের জন্য আলাদা কভার, লুথাডেলের ম্যাপ সবকিছুই ভূমিপ্রকাশের জন্য এক সিগনেচার প্রোডাক্ট। ফন্ট সাইজ, পৃষ্ঠার কোয়লিটি ভালো লেগেছে। ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৮/১০।

      By Fa Mahmud

      12 May 2022 01:55 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      big but awesome

      By mahbubul islam

      08 Mar 2022 02:46 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      যারা ফ্যান্টাসি পছন্দ করেন তাদের প্রথম পছন্দ স্যান্ডারসন আর বড় বড় সব বইয়ের চমৎকার অনুবাদ করেন অসীম পিয়াস। বইটা নিঃসন্দেহে সেরা একটা বই।

      By Ali Adnan

      02 May 2023 03:36 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      ব্যান্ডন স্যান্ডারসন ফ্যান্টাসি জগতে অন্যতম বড় এক নাম। সেই নামের কারণেই বইটা পড়তে নিয়েছিলাম। এখানে এমন এক দুনিয়ার কথা বলা হয়েছে, যেখানে চলে লর্ড রুলারের রাজত্ব। রুল করে, তো নামটা রুলার, খারাপ নয়। কিন্তু তার অধীনে সাধারণ মানুষ স্কারা যাপন করে মানবেতর জীবন। অনেকটাই ক্রীতদাসের মত। এই একনায়কের বিরুদ্ধে অনেক বিদ্রোহ প্রচেষ্টা চলে; সবই ব্যর্থ হয়। কিন্তু আশা ছাড়ে না সাধারণ মানুষ। নতুন এক উপায় খোঁজে তারা, যেখানে ভবঘুরে এক স্কা-কিশোরিকে সীমাহীন দক্ষতা অর্জন করতে হবে 'মিস্টবর্ন'-এর ক্ষমতা এলোমেন্সি শিখে। তো এই মিস্টবর্ন কী, আর তারা কি হারাতে পারবে লর্ড রুলারকে? এই জবাব ধীরে ধীরে জানা যাবে মিস্টবর্ন সিরিজের এই প্রথম বইটি পড়তে পড়তে। বেসিকলি বিখ্যাত বই বলেই বইটি পড়তে হাতে নিয়েছিলাম আমি। কাহিনী গোছানো, প্লটে ধারাবাহিকতা আছে, এটা এই বইয়ের প্লাস পয়েন্ট। তবে, বইয়ের কাহিনী একটু বেশিই স্লো মনে হয়েছে। ধৈর্য নিয়ে পড়লে ভালো লাগতে পারে। আর মূল যে পার্ট থাকে, সেটা হলো বইয়ের অনুবাদ। সত্যি বলতে, অনুবাদটা আমার কাছে খুব একটা ভালো লাগেনি। অনুবাদে সাবলীলতার অভাব আছে মনে হয়েছে। যেমন, এক জায়গায় দেখলাম, একটা সেন্টেন্সই ৭৬ শব্দের, যেটা খুবই বিরক্তির উদ্রেক করেছে। এত বড় বাক্য পড়তে খুবই আনইজি লাগে। আবার, প্রতিটি বাক্যে সর্বনামের ব্যবহারও ছিল বিরক্তিকর। মোটকথা, অনুবাদ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। তবে, বইয়ের প্রোডাকশন অনেক ভালো। কাহিনীঃ ৪/৫ অনুবাদঃ ২/৫

      By Mohammed Arafat

      29 Dec 2021 06:25 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      really awesome book.i love this??????

      By Zakaria Minhaz

      25 Feb 2022 04:23 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      #Book_Mortem 21 #মিস্টবর্ন_দ্য_ফাইনাল_এম্পায়ার লেখকঃ ব্র‍্যান্ডন স্যান্ডারসন অনুবাদকঃ অসীম পিয়াস প্রকাশনীঃ ভূমিপ্রকাশ প্রচ্ছদঃ জুলিয়ান মূদ্রিত মূল্যঃ ১০৫০ টাকা এই বইয়ের ফ্ল্যাপ পড়ে আসলে কোনোভাবেই বুঝা সম্ভব না যে এই বইটা কতোটা আকর্ষনীয়। মোটামুটি শর্টকাটে এতোটুকু বলা যায় এই বইটা হলো পুরো দুনিয়া জুড়ে চলা লর্ড রুলার নামক এক প্রচন্ড ক্ষমতাধর শাসকের একক শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটা খুব ক্ষুদ্র গ্রুপের বিদ্রোহ নিয়ে লেখা বই। পৃথিবীর মানুষের কাছে ঈশ্বর হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করা, হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকা অমর একজন সম্রাটকে উৎখাত করার এই প্ল্যান আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব বলেই মনে হয়। যেখানে সাধারণ জনগন মুখ বুঝে সব অত্যাচার আর নিপীড়ন মেনে নিয়েছে (কেমন জানি খুব মিল পাওয়া যাচ্ছে বিষয়টা ?), সেখানে এই সামান্য ৫/৬ জনের একটা দল কি পারবে তাদের এই পরিকল্পনায় সফল হতে?? এতোটুকু পড়লে খুবই সাদামাটা একটা কাহিনী মনে হয়। কিন্তু আদতে এই বইয়ের কাহিনীর পরিব্যাপ্তি বিশাল। আপনারা যদি বইটা শুরু করার পূর্বে এর ফাইনাল এম্পায়ারের ওয়ার্ল্ড, আ্যলোমেন্সি পাওয়ার আর কারেক্টার ডেভেলাপমেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত একটা হেডস আপ পেতে চান, তাহলে কমেন্টে জানাবেন আমি সেটা নিয়ে আলাদা করে স্পয়লার বিহীন একটা পোস্ট দিবো। রিভিউ এর অংশে সেটা দিলে কেউই পুরো রিভিউ পড়ার ধৈর্য খুঁজে পাবেন না। #পর্যালোচনাঃ এ এক অনন্য অসাধারণ অনুভূতি। বইটা শেষ করেছি ৭২ ঘন্টার বেশী হয়েছে, কিন্তু আমার কাছে এখনো মনে হচ্ছে আমি বুঝি লুথাডেলেই রয়ে গেছি!! ফ্যান্টাসীর ব্যাপারে আমার সর্বোচ্চ দৌড় এর আগে "হ্যারি পটার" ইউনিভার্স পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো। সেই তরুণ বয়সেও আমি দীর্ঘদিন পর্যন্ত মাঝেমাঝেই নিজেকে হগওয়ার্টসের দুনিয়ায় আবিষ্কার করতাম!! লেখক ব্র‍্যান্ডন স্যান্ডারসন তাঁর অসাধারণ লেখনীর মাধ্যমে আবারো তেমনি একটা জাদুময় দুনিয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন এই পরিণত বয়সের আমাকেও। ফ্যান্টাসী জনরাটা যে আমার কত্তো প্রিয় তা আরেকবার নতুন করে উপলব্ধি করলাম "মিস্টবর্ন" পড়ে। তবে স্যান্ডারসনের এই কজমেয়ার দুনিয়াটা হ্যারি পটারের দুনিয়ার মতো কালারফুল নয়। এখানে বাস করে শুধুই হতাশা, আর ভয়, এখানে থাকে নিরানন্দ মানুষেরা, এখানে ফুটে না কোনো ফুল, এখানে ধনী আর গরীবদের মাঝে ফারাক এতোটাই যে ধনীরা এমন কি গরীবদেরকে মানুষ হিসাবেও মনে করে না!! তারা শুধুই "স্কা", মানুষের মতো দেখতে তবে চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতাহীন!! লেখক তার সুনিপন দক্ষতায় এমন একটা নিরানন্দ দুনিয়া ফুটিয়ে তুলেছেন যে আপনি কখন যে নিজেকে সে দুনিয়ার একজন দুঃখী মানুষ ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন তা নিজেও বুঝতে পারবেন না। অনেক অনেক বর্ণনার মাধ্যমে লুথাডেল শহর, ফাইনাল এম্পায়ারের আশেপাশের আরো কিছু এড়িয়া, রাতের কুয়াশা, সেই কুয়াশায় হেঁটে বেড়ানো অতিপ্রাকৃতিক মিস্টরেইথ, পিটস অফ হাটসিনের গুহাগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। আর এসব কিছুই আপনাকে এই দুনিয়াটার সাথে অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে। এরপরেই আসে এই বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলিমেন্ট "আ্যলোমেন্সি" এর কথা। সোজা কথায় এটাই এই দুনিয়ার "ম্যাজিক"। মাই গড!! আমি কখনো ভাবিনি এভাবেও ম্যাজিক দেখানো যেতে পারে। বয়সটা নেহাতই কম নয় আমার, সাথে আছে বিস্তর মুভি এবং টিভি সিরিজ দেখার অভিজ্ঞতা। কিন্তু কোথাও এমন অদ্ভুত ম্যাজিক সিস্টেম আমি এর আগে দেখিনি। আর সে কারনেই শুরুর দিকে ম্যাজিক্যাল অংশটুকু কল্পনায় সাজিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছিলো। তবে যতোই বইয়ের ভিতরে এগিয়েছি, ততই আরো পরিষ্কার ধারণা পেয়ে যাচ্ছিলাম এই আ্যলোমেন্সির ব্যাপারে। লেখক অন্য অনেক কিছুর মতোই পুরো বই জুড়ে ছোটো ছোটো প্রশ্নের জন্ম দিয়ে কাহিনীকে এগিয়ে নিয়েছেন। শুরুর অনেকখানি অংশ আপনার মনে হতে পারে, এটা কি পড়তেছি কিছুই তো বুঝতে পারছি না!! কিন্তু বিলিভ মি যখন আস্তে আস্তে পুরো বিষয়গুলো লেখক ক্লিয়ার করে দিবেন তখন আর এই কনফিউশান তো থাকবেই না, উলটো বিমোহিত হবেন সব বুঝে যাওয়ার পরে। এবার আসি বইয়ের একশন সিকুয়েন্স নিয়ে। সম্ভবত পাঠকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন অংশ হবে এইগুলো। তবে একবার বিষয়টা ধরতে পারলে এক ইউনিক ধরণের অভিজ্ঞতা হবে আপনাদের, যা আগে কখনো দেখা হয়ে উঠেনি। আর যদি বলি বইয়ের চমক কিংবা টুইস্ট নিয়ে?? মাইন্ড ব্লোয়িং ৩/৪টা টুইস্ট ছিলো শেষে। যার কোনোটা হয়তো আপনার চোখ কপালে তুলে দিবে, কোনোটা আপনাকে আনন্দ দিবে, কোনোটা আপনাকে পরের পর্বের অপেক্ষায় পাগল করে তুলবে আবার কোনো একটা টুইস্ট হয়তো আপনাকে তীব্র বিষাদের সাগরে ফেলে দিবে ?। কতো কতো কতো কিছু যে বলতে ইচ্ছে করতেছে বইটি নিয়ে, শুধুমাত্র স্পয়লারের ভয়ে বলতে পারছি না ?। #চরিত্রায়নঃ এতোবড় কলেবরের বিশাল এক দুনিয়ায় স্বাভাবিকভাবেই অনেক অনেক চরিত্র উঠে এসেছে। আর লেখক এখানেও উনার মুন্সিয়ানার ছাপ ফেলেছেন চমৎকার ভাবেই। সব চরিত্রকেই প্রয়োজনীয় মনযোগ দিয়েছেন, সকলকেই কোনো না কোনোভাবে গুরুত্বপূর্ন কোনো মিশনের অংশ করেছেন। তবুও এর মাঝে আলাদা করে ৩টা চরিত্রকে নিয়ে বলতেই হয়। ভিন, সাজেদ এবং ক্যালসিয়ের। ক্যালসিয়ের একটা পিউর ভালোবাসা। এই বইয়ের ক্যালসিয়ের হলো সেই চরিত্র যা আমরা সব সময়েই কল্পনায় নিজেদেরকে ভাবতে পছন্দ করি। শত কষ্ট আর বাঁধা পেড়িয়ে সদা হাসিমুখ ধরে রেখে, নিজের "সার্ভাইভর অফ হাটসিন" বিশেষনকে ব্যবহার করে গরীব দুঃখী স্কা দেরকে উজ্জীবিত করা মহানায়ক তিনি। বর্তমান সময়ে আমাদেরও এমন একজন মানুষের বড্ড প্রয়োজন!! আর ভিন?? ভিন কে এই বইয়ে সর্বোচ্চ যত্নের সাথে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। একদম শুরু থেকেই ভিনের প্রতিটা মনোভাব, চিন্তা ভাবনা, তার মনের দ্বিধা দ্বন্দ্ব এমন ভাবে ফুটানো হয়েছে যে আপনি তার নেয়া প্রতিটা সিদ্ধান্তের পিছনে কোনো না কোনো যুক্তি খুঁজে পাবেন। ভিনের গায়ের কাপড় নিয়েও যতোগুলা বর্ণনা দেয়া হয়েছে তার সবকিছুই এন্ডিং এ গিয়ে ভিনকেই ডিফাইন করেছে। সামনের পর্বগুলোতে আরো পরিণত ভিনকে দেখার আশায় রইলাম। এরপর আসে সাজেদ এর নাম। সাজেদ এখানে আমাদের শিক্ষক। এমন শিক্ষক যার ক্লাস কোনো ছাত্র কখনো মিস করতে চাইবে না!! এই বিশালদেহী "টেরিসম্যান" এর মনটাও তার দেহের মতোই বিশাল। এমন একজন জ্ঞ্যানী কিন্তু নিজের দায়িত্বের প্রতি সর্বাধিক যত্নবান কেউ পাশে থাকলে পুরো পৃথিবীটাই সুন্দর মনে হবে। এছাড়াও ডকসন, হ্যামন্ড, ব্রিজ, মার্শ, স্পুক, এলেন্ড, রেনক্স প্রত্যেকেই স্ব স্ব মহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন পুরো বই জুড়েই। শুধু ক্লাবস চরিত্রটাকেই আমার মনে হয়েছে একটু আড়ালে রয়ে গিয়েছিলো। যদিও সবকিছুই তারই তত্ত্বাবধানে হচ্ছিলো৷ এছাড়া ছিলো লর্ড রুলার, অবলিগেটর আর ইনকুইজিটররা ?। ভীতিজাগানিয়া এই চরিত্রগুলাও একদম পারফেক্ট ছিলো। আর তাই পাঠকদেরকে প্রতিটা চরিত্রের সাথেই নিজেকে রিলেট করতে কোনোই অসুবিধা হবে না। এমন পারফেক্ট চরিত্রায়ন খুব খুব কম দেখা যায়। #অনুবাদঃ এটা অসীম পিয়াস ভাইয়ের আমার পড়া ২য় অনুবাদ। এর আগে সানবার্ড পড়েছিলাম। প্রথম দিকে বইটা আসলে বুঝতে একটু সমস্যা হচ্ছিলো এর ওয়ার্ল্ড এবং কারেক্টার ডেভেলপমেন্ট ধীরলয়ে গড়ে উঠায় আর কিছু কঠিন কঠিন শব্দের ব্যবহারের কারনে। ভেবেছিলাম পিয়াস ভাই মেবি উনার বেস্টটা দিতে পারেননি এই বইয়ে!! অন্তত সানবার্ড লেভেলের বেস্ট দিতে পারেননি! পরে ইংলিশ ভার্সনের ইপাব ডাউনলোড করে একটু চোখ বুলালাম। খাইছে আমারে!! এই শব্দটাই বের হয়েছে আমার সেটা পড়তে গিয়ে। প্রচুর কঠিন সব শব্দ ব্যবহার করেছেন লেখক মূল বইয়ে। আর সেটাকে যেভাবে পিয়াস ভাই সাবলীল ভাবে ফুটিয়েছেন তা আসলে অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। প্রচন্ড পরিশ্রম করতে হয়েছে উনাকে এই বইটা অনুবাদ করতে গিয়ে এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। বিশেষ করে একশন সিকুয়েন্স গুলাতে। শেষের দিকে ক্যালসিয়েরের সাথে ইনকুইজিটরের যে ফাইটিং সীনটা ছিলো!! উফ সেরা সেরা সেরা ভাই। তবে তারপরেও একান্তই সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখলে আমার মনে হয় কিছু কিছু জায়গায় একটু গতানুগতিক সহজ শব্দ ব্যবহার করা যেতো, যা আমরা হরহামেশাই ব্যবহার করি। এটা কোনো ভুল না, এটা জাস্ট খুবই ভালো কে পারফেক্ট হওয়ার জন্য বললাম। #প্রোডাকশনঃ বেস্ট ইন দ্য ইন্ডাস্ট্রি। এক কথায় বললে এই বইয়ের প্রোডাকশনকে এটাই বলা যায়৷ চমৎকার পেইজ কোয়ালিটি, ফন্ট সাইজ, বাইন্ডিংস এবং সম্পাদনা। বানান ভুল ছিলো না বললেই চলে। বইয়ের শুরুর দিকে ম্যাপ আর শেষের দিকে দেয়া নির্ঘন্ট গুলো প্রচুর কাজে লেগেছে বইটা পড়তে গিয়ে৷ আর বইয়ের মাঝেমাঝে কিছু ইলাস্ট্রেশন দেয়াটা ছিলো বাড়তি প্রাপ্তি। এইগুলার জন্য ভূমিপ্রকাশ আলাদা ধন্যবাদ প্রাপ্য। পাঠকদেরকে উনারা শুধুই গল্পটা দিতে চাননি, উনারা সেটাকে যতোটা সম্ভব সহজভাবে পাঠকদেরকে বুঝানোর ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। জুলিয়ান ভাইয়ের করা প্রচ্চদটা ইনিশিয়ালি ভালো না লাগলেও হাতে নেয়ার পর সেটাও বেশ ভালোই লেগেছে। সোজা কথায় আউটস্ট্যান্ডিং ইন এভরি ওয়ে। যে সমালোচনা গুলো এই বইটা বের হওয়ার আগে কিংবা পরে ভূমিপ্রকাশ পেয়েছে তার জন্য আমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি নিজেও সেই তালিকায় ছিলাম!! বইটা পড়ার পর বাকীসব স্রেফ ভুলে গিয়েছি। বই শেষ করার পর আমার কাছে এখন বক্সটাও ভালো লাগতেছে ?। সত্যি বলতে আমার দরকার নাই আর কিচ্ছুই, আমার শুধু ফাইনাল এম্পায়ারের দুনিয়াটাই দরকার। ধন্যবাদ এই বই প্রকাশের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বইয়ের ২য় খন্ড নিয়ে আসুন এটাই দাবী রইলো ?। #রেটিংঃ ১০/১০ (পারফেক্ট বই সম্ভবত এগুলাকেই বলে)। #পরিশিষ্টঃ আমার পাঠ প্রতিক্রিয়ার শেষে এসে আমি এটাই বলবো এটা একটা মাস্ট রিড বই। একটু ধৈর্য নিয়ে পড়ে ফেলতে পারলে অনেক কিছুই পাবেন। যারা কিনেছেন তারা প্লিজ বইটা ফেলে না রেখে পড়ে ফেলুন। যারা ফ্যান্টাসী পছন্দ করেন না, তারাও একবার চেষ্টা করে দেখুন। আশা করি ভালো লাগবে। ঢাউস সাইজ দেখে ভয় পেয়ে কিংবা অনেক ডিটেইলড সবকিছুর বর্ণনা আছে শুনে হয়তো অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে বসে আছেন। কারন আমার পর্যবেক্ষণ বলে এই দেশের বেশীরভাগ পাঠক ফাস্ট পেসড বই পছন্দ করেন। কিন্তু বিশ্বাস করেন এই বইয়ের কোনো বর্ণনাই একেবারে অযথা নয়। তাই ধীরেসুস্থে শুরু করে দেন আর হারিয়ে যান ফাইনাল এম্পায়ারের দুনিয়াতে।

      By Peal Roy Partha

      19 Feb 2022 09:05 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      ⚈ স্পয়লার-ফ্রি রিভিউ⚊ ❛মিস্টবর্ন : দ্য ফাইনাল এম্পায়ার❜ কোনো এপিক ফ্যান্টাসি বইয়ে লেখক যখন নিজের কাল্পনিক দুনিয়ার বর্ণনা দিয়ে থাকে; সেই বর্ণনার অবলম্বন হিসেবে বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় নির্ঘণ্ট থাকে। সম্পূর্ণ নতুন কাল্পনিক দুনিয়া তৈরির মোক্ষম ও সূক্ষ্ম একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে—রক্ষা করা। এখন কী রক্ষা করা আর কার থেকে রক্ষা করা; সেই আলোচনা না-হয় বইয়ের ভেতরের জগতের জন্য তোলা থাক। ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং, ম্যাজিক সিস্টেম, দুর্বোধ্য ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক কৌশলের মতো দিকগুলো নিয়ে মূলত এপিক ফ্যান্টাসি লেখা হয়। লেখক এই সব অনুক্রমণিকা পুরো গল্পের বাঁকে বাঁকে ঢুকিয়ে দিয়ে একইসাথে বেদনাদায়ক ও উত্তম স্বাদযুক্ত আবেগের সৃষ্টি করে। সেই সৃষ্টি পাঠক মনে একটা সময়—অজানা এক বিদ্রোহের উৎপত্তি ঘটিয়ে থাকে। ❛মিস্টবর্ন : দ্য ফাইনাল এম্পায়ার❜ তেমনই এক উপন্যাস; যেখানে পাঠক স্বাদযুক্ত উপাদান, ব্যর্থতার নিদর্শন, বন্ধুত্বের বন্ধন ও ত্যাগের মহিমার আলোকচ্ছটা প্রতিফলিত হয়ে—অনুধাবন করে পুরো সময় জুড়ে। মোহগ্রস্ত সেই দুনিয়ায় নিজেকে তখন বইয়ের কোনো এক পার্শ্বচরিত্র অথবা প্রত্যক্ষদর্শী রূপে বিচার করতে বেশ ভালো লাগে। ❛মিস্টবর্ন : দ্য ফাইনাল এম্পায়ার❜ উপন্যাস লেখা হয়েছে বিশাল এক জগতকে কেন্দ্র করে। অথবা সহজ করে বললে, ❛মিস্টবর্ন : দ্য ফাইনাল এম্পায়ার❜ সেই জগতের একটি অংশ। স্যান্ডারসনের এই জগতকে বলা হয়—কজমেয়ার। মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, কজমেয়ার মূলত কী? ছোট্ট করে বললে—ব্রান্ডন স্যান্ডারসনের বেশিভাগ চলমান সিরিজগুলো এই কজমেয়ার জগতের অন্তর্ভুক্ত। এই কজমেয়ার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা বা বিস্তারিত পেতে ঢুঁ মারতে হবে স্যান্ডারসনের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার, রেফারেন্স টেক্সট ও ওয়েবসাইটে। ⚊ এখন আসা যাক ❛মিস্টবর্ন : দ্য ফাইনাল এম্পায়ার❜ উপন্যাস নিয়ে। চিরাচরিত ফ্যান্টাসির পথ বদলে দেওয়া এই সিরিজের জন্ম ২০০৬ সালের ১৭ জুলাই। কী আছে এই মিস্টবর্ন সিরিজে? স্পয়লার ব্যতীত সংক্ষেপে সেটা আলোচনা করা যাক। ❛মিস্টবর্ন : দ্য ফাইনাল এম্পায়ার❜ বইয়ের মূল স্তম্ভ হচ্ছে ফাইনাল এম্পায়ার রাজ্য। যে রাজ্য শাসন করে লর্ড রুলার। শাসনের পারিপার্শ্বিক দিকসমূহ দেখাশোনার দায়িত্ব আছে স্টিল মিনিস্ট্রি। এই মিনিস্ট্রি আবার অবলিগেটর ও ইনকুইজিটর নামে দুই দলে বিভক্ত। অবলিগেটররা সাধারণ মানুষ হলেও প্রতিপত্তির দিক থেকে খুবই ক্ষমতাবান। তাদের কাজ হচ্ছে ব্যাবসাবাণিজ্য, কর আদায়, অভিজাত বংশের বিবাহের ঘটকালি, লর্ড রুলারের নিয়ম-নীতি প্রচার করা। অভিজাত ও স্কা-দের নিয়ন্ত্রণও এদের হাতে। অন্যদিকে ইনকুইজিটররা হচ্ছে ভয়ানক ও পিশাচ জাতীয় জীব। মূলত আইন রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে এরা কাজ করে। যদিও ফাইনাল এম্পায়ারে আলাদাভাবে সেনাবাহিনী রয়েছে। ফাইনাল এম্পায়ারে সাধারণ মানুষদের বলা হয় স্কা। এই স্কা-দের মধ্যে প্রায়ই মানুষ অভিজাতদের চাকর, খেতখামার ও কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। এরা খুবই শোষিত ও নির্যাতিত। আরেকদল স্কা-কে বলা হয় তস্কর। যাদের আমরা চোর বলে আখ্যায়িত করি। এই তস্করা মূলত অভিজাতদের থেকে চুরি ও বাটপাড়ি করে দিনাতিপাত করে। ধরা পড়লে করুণ পরিণতি ভোগ করে ইনকুইজিটরদের হাতে। এইবার আসা যাক সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট মিস্টবর্ন ও মিস্টিং নিয়ে। মিস্টবর্ন ও মিস্টিং কে বা কারা? যেহেতু এই সিরিজের নাম মিস্টবর্ন তাই এই নিয়ে ছোট্ট করে জেনে নেওয়া যাক—মূলত অবলিগেটর বা অভিজাত কোন বংশের লর্ড ও সাধারণ স্কা নারীর অবৈধ সম্পর্কের ফসল হলো মিস্টবর্ন। সহজ ভাষায় যাদের আমরা জারজ বলে ম্যানশন করি। স্যান্ডারসন এই জারজদের রূপ দিয়েছে মিস্টবর্নে। আবার অনেক অভিজাত সন্তানরাও মিস্টবর্ন বা মিস্টিং হতে পারে। তবে সেটা হতে পারে স্ন্যাপ হওয়ার ফলে অথবা চেষ্টার খাতিরে। কেবল অবৈধ সন্তানরা শুধু মিস্টবর্ন বা মিস্টিং হয় না। তাদেরও এই ক্ষমতা সক্রিয় করতে হলে স্ন্যাপ বা গুরুতর কোনো ধাক্কা খাওয়া লাগে। এই মিস্টবর্নের মধ্যে রয়েছে এক অলৌকিক ক্ষমতা। যে ক্ষমতা ব্যবহার হয় আটটি মৌলিক ধাতু ও দুইটি উচ্চ ধাতুর কার্যকারিতার মাধ্যেম। কী সেই কার্যকারিতা বা ক্ষমতা তা নিয়ে অনুবাদ বইটির শেষে ধারণা রয়েছে। এই ধাতুর ব্যবহারকারীকে বলা হয় অ্যালোম্যান্সার। যখন একজন ‘অ্যালোম্যান্সার’ কোনো ধাতুকে কাজে লাগিয়ে শক্তির প্রদর্শন করে থাকে সেটাকে বলা হয় ‘অ্যালোম্যান্সি’। যারা আটটি ধাতুর কার্যকারিতা আয়ত্ত করে কাজ লাগাতে পারে তারাই মিস্টবর্ন। অন্যদিকে মিস্টিং’রা যে-কোনো একটি ধাতু দিয়ে কার্য সিদ্ধি করতে পছন্দ করে। ❝ধাতু ব্যবহার করে এই পুশ বা পুল করে চলাটা মোটেও ওড়ার মতো লাগে না, বরং পতনের অনুভূতির মতো লাগে—শুধু সেটা নিচের দিকে না হয়ে উলটোদিকে। সঠিক ভরবেগ পাওয়ার জন্য একজন অ্যালোম্যান্সারকে খুবই শক্তি দিয়ে পুল করতে হয়, আর সেটাই তাকে সবকিছু ভেঙেচুরে অবিশ্বাস্য গতিতে নিক্ষেপ করে তার অবলম্বনের দিকে।❞ এই উপন্যাস আবর্তিত হয়েছে দুইজন মিস্টবর্ন ঘিরে। এ-ছাড়াও রয়েছে আলোচিত কয়েকজন মিস্টিং। যাদের ভূমিকা এই গল্পে অপূরণীয়। তাদের মধ্যকার সম্পর্ক এবং সকলে একত্রিত হওয়ার সংকল্প নিয়ে রচিত হয়েছে জীবনবোধ ও এক স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের গল্প। আরও একটি জাতি এই উপন্যাসে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে, তারা হচ্ছে—ফেরুকেমিস্ট। এই নিয়ে বিস্তারিত কাহিনি পাবেন উপন্যাসে। যা খুবই চমকপ্রদ ও ভাবনারও বটে। ➲ আখ্যান— রাতে রাজত্ব করে কুয়াশা... পুরো বিশ্বই লর্ড রুলারের করায়ত্তে। প্রায় হাজার বছর ধরে বর্ষিত হচ্ছে ছাই, ফুটছে না কোনো ফুল। প্রায় হাজার বছর ধরে স্কা-রা লর্ড রুলারের ভয়ে বাস করছে ক্রীতদাসের মতো জঘন্য জীবন। হাজার বছর ধরে, ঈশ্বরের মতোই সবার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে সর্বময় ক্ষমতা আর সীমাহীন আতঙ্ক ছড়িয়ে শাসন করে যাচ্ছে লর্ড রুলার। যার বিরুদ্ধে করা প্রতিটা বিদ্রোহই ব্যর্থ হয়েছে শোচনীয়ভাবে। কিন্তু তারপরেও বেঁচে থাকে আশা। এক নতুন ধরনের প্রতিরোধের পরিকল্পনা করা হয়; যেটা নির্ভর করছে এক প্রতিভাবান তস্করের ধূর্ততা আর একজন আপাত অসম্ভাব্য নায়িকার দুঃসাহসের ওপরে, যে কি না রাস্তার এক স্কা-কিশোরী, যাকে একজন মিস্টবর্নের ক্ষমতা “অ্যালোম্যান্সি” শিখে হতে হবে দক্ষ। কী হবে যদি দৈববাণীতে বলা নায়ক ব্যর্থ হয় ডার্ক লর্ডকে হারাতে? উত্তর পাওয়া যাবে মিস্টবর্ন ট্রিলজিতে, অবাক বিস্ময়ে ভরা এক উপাখ্যান; যা বদলে দিয়েছে চিরাচরিত ফ্যান্টাসির পথ। আর যার সূচনা এই সাড়া জাগানো বই দিয়ে। ➤ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা— ❛মিস্টবর্ন : দ্য ফাইনাল এম্পায়ার❜ উপন্যাস পড়াকালীন সময়ে গাঢ় কুয়াশা যেন আমাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছিল। সেই কুয়াশার মধ্যে খুলে যাওয়া এক পোর্টালে আমিও চলে গিয়েছি লর্ড রুলারের বিরুদ্ধে স্কা বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থল ফাইনাল এম্পায়ারে। দিনের আকাশ থেকে অনবরত পড়তে থাকা ছাই, সেই ছাইয়ে রাস্তার পাশে জমে থাকা স্তুপ, মাথা নিচু করে কাজ করে যাওয়া ক্লান্ত স্কা আর রাতের আঁধারে অভিজাতদের লালসার শিকারে পরিণত হওয়া নিরুপায় কোনো স্কা নারী—এই যেন আমাদের সমাজের অতি চেনা পরিচিত রূপ। সার্ভাইভার অব হাটসিন খ্যাত কেলিসিয়ের, ধূর্ত তস্কর ভিন, দার্শনিক হ্যাম, বিজ্ঞ ডকসন, চুপচাপ আর রুক্ষ মেজাজের ক্লাবস, দক্ষ মার্শ—এরা যেন অতি পরিচিত কেউ। দর্শন, শাস্ত্র, রাজনীতি, ষড়যন্ত্র এবং সবশেষে যুদ্ধ; পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও ব্যর্থতার শূন্যস্থান পূরণে লেখা ❛মিস্টবর্ন : দ্য ফাইনাল এম্পায়ার❜ উপন্যাস যেন অদ্ভুত এক মোহগ্রস্ত জগৎ। ফাইনাল এম্পায়ার ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং গঠন করা হয়েছে অতি দক্ষতার সাহায্যে। লেখক যে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ, তা ওনার বিস্তারিত বর্ণনার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। খুবই ধীরে, একেবারে কোনো তাড়াহুড়ো ছাড়া পুরো উপন্যাস লেখা হয়েছে। যা একজন ফ্যান্টাসি পাঠক হিসেবে যথাযথ লেগেছে। এই ধীর ও বিস্তারিত বর্ণনার কারণে গল্পের আবহের সাথে মিশে যেতে পেরেছি গভীরভাবে। সূক্ষ্ম কথোপকথন, ম্যাজিক বা অ্যালোম্যান্সি টার্ম বর্ণনা, ইউনিক অ্যাকশন সিকোয়েন্স, গভীর দর্শন, অভিজাতদের চালচলন, স্কা-দের চিন্তাভাবনা, ইনকুইজিটরদের নৃশংসতা-সহ তাত্ত্বিক বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা অনেক সহজ ও সাবলীল লেগেছে। ধৈর্য ও অপেক্ষার মিশ্রণে যদি পুরো উপন্যাস শেষ করা যায়, তাহলে তপ্ত হৃদয়ে এক অন্যরকম প্রশান্তির আবির্ভাব ঘটবে। পুরো উপন্যাসে বুঁদ হয়ে থাকতেও অন্যরকম এক অনুভূতি হচ্ছিল; যেন এই যাত্রা আমার, এই ফাইনাল এম্পায়ারে আমার বসবাস আর বিদ্রোহীরা আমার আপনজন। স্যান্ডারসন দাদা যে, এই উপন্যাস পড়ার মাধ্যেম আপনাকেও ‘সুদ’ করে ফেলবে—এই গ্যারান্টি অন্তত দিতে পারি। বাই দ্য ওয়ে, সুদ একটি অ্যালোম্যান্সি। ‘পিতল’ ধাতু পোড়ানোর মাধ্যমে তৈরি হয়। যা আপনার আবেগকে করে দিবে শান্ত। আর ‘সুদ’ যারা করে তাদের বলে ‘সুদার’ (অ্যালোম্যান্স্যার)। ● সূত্রপাত— গল্পের সূত্রপাত লর্ড ট্রেস্টিংয়ের কেল্লা থেকে। যেখানে ফাইনাল এম্পায়ার সম্পর্কে স্বল্প বর্ণনা উঠে আসে ট্রেস্টিং ও আগত অবলিগেটরের কথোপকথন ও দৃশ্যায়নের মাধ্যমে। গল্পের হিরো কেলিসিয়েরের আগমন, কারণ ও কার্য সম্পাদনের মাধ্যমে শুরু হয় এই যাত্রা। এর পরের কাহিনি ঘুরে যায় লুথাডেল শহরের দিকে। যেই শহরে বসবাস লর্ড রুলার-সহ বিভিন্ন অভিজাত পরিবার, শোষিত ও নির্যাতিত স্কা-দের নিয়ে। বাকিটা নিজ দায়িত্ব শুরু করুন... ইহা এক লম্বা যাত্রা হতে যাচ্ছে। ● গল্প বুনট— স্যান্ডারসনের গল্পের বুননের প্রশংসা যত বেশি করব তা-ও কম পড়ে যাবে। এত অদ্ভুত সুন্দর গোছানো প্লট খুব কম লেখকের উপন্যাসে দেখা যায়। ফ্যান্টাসিতে ঠিক যেইরকম প্লট একজন পাঠক আশা করবে, ঠিক সেই রকমের উপাদান দিয়ে সাজানো এই উপন্যাসের প্লট। নিখুঁত ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং, সহজ লেখনশৈলী, বিস্তারিত প্রাঞ্জল বর্ণনা, পারফেক্ট চরিত্রায়ন এবং মানানসই সমাপ্তি। এত এত কারসাজি চরিত্রদের নিয়ে, গভীর মনস্তত্ত্বত ও হার্ড ম্যাজিক সিস্টেমের সহজ বর্ণনা যেন অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে এই উপন্যাসকে। এই বই পুরো মাখন অথবা বলা যায় পারফেক্ট ডেজার্ট। যদি আপনি পুরো খাবার আয়েশ করে শেষ করতে পারেন তবেই সুস্বাদু ডেজার্টের মর্ম বুঝবেন। অনেকটা ‘কাঁসা’ পোড়ানোর মতো। যা করলে শরীরে আলাদা এক শক্তির আভাস পাওয়া যায়। এই বই শেষ করে সেইরকম অনুভূতি ঘিরে ধরবে বলে মনে করি। এই কাঁসা পোড়ানোর প্রক্রিয়া গ্রহণকারীকে বলা হয় ‘পিউটার‌আর্ম বা থাগ’। ● লেখনশৈলী— মোলায়েম। সহজ ও আকৃষ্ট করার মতো। এই উপন্যাসে লেখনশৈলীর বেশ কয়েকটি টার্ম রয়েছে। ম্যাজিক সিস্টেম ব্যবহার করে অনুশীলন ও ফাইটিং সিকোয়েন্স, আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে আলাপচারিতা, লেখকের নিজস্ব দর্শন ও বর্ণনা, চরিত্রের আলাদা মনস্তাত্ত্বিক ক্রিয়াকলাপ—সব মিলিয়ে অনেক মিশ্র প্রক্রিয়া থাকার পরেও কোথাও কমতি দেখা যায়নি। অথবা বলা যায়, অহেতুক বা অস্বাস্থ্যকর কোনো বাক্য ঢুকিয়ে গল্পের রেশ কমিয়ে দেয়নি। পুরো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কয়েকটা রেখায় ভাগ হয়ে গেলেও, লেখনশৈলী নির্দিষ্ট রেখার মধ্যে থেকে গিয়েছে। বিচ্যুতি কোনোভাবে ঘটেনি। অনেকটা ‘লোহা’ পুড়িয়ে আশেপাশের ধাতুকে টেনে আনার মতোই। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উজ্জ্বল রেখার মধ্যে থেকে নির্দিষ্ট রেখায় কনভার্ট করে নিজের দিকে পুল করার প্রক্রিয়া। এই ধাতু প্রয়োগকারী বা মিস্টিংকে বলে ‘লার্চার’৷ ● বর্ণনাশৈলী— পারিপার্শ্বিক মোহনীয় বর্ণনা, সেটা বাইরের দুর্দশাগ্রস্থ পরিবেশ হোক কিংবা অভিজাতদের আয়োজন করা বল-এর ভেতরকার পরিবেশ। দিনের ছাই পড়া শুকনো রাস্তা অথবা রাতের কুয়াশা ঢাকা ভেজা পথ। সবই যেন এই পৃথিবীর কোন এক দেশের। অথবা নিকটবর্তী কোনো এলাকার পরিচিত স্থানের গল্প। দৃশ্যায়ন দর্শনে লেখক কোনো কমতি রাখেননি, বিস্তারিত আর প্রাঞ্জল লেখার এই গুণ সত্যি চমকে দেয়। একজন লেখকের সার্থকতা ঠিক এইখানে। যে নিজের জগতে অনায়াসে আপনার মনকে বিচরণ করিয়ে দিতে পারে। ঠিক যেন জেগে থেকে স্বপ্ন দেখার মতো। অতুলনীয়। এই বর্ণনাশৈলী আবেগকে উথলে দেয়। ঠিক যেমন করে একজন রায়টার (অ্যালোম্যান্সার) ‘দস্তা’ পুড়িয়ে অন্য কারও আবেগকে উচ্ছলিত করে থাকে। ● চরিত্রায়ন— প্লটের পাশাপাশি পুরো উপন্যাসের চরিত্রের বৃষ্টি নেমেছে। তবে এই বৃষ্টি; একটা সময় ছাই হয়ে উড়ে গিয়েছে। প্রয়োজনীয়, কম প্রয়োজনীয়-সহ বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট চরিত্র আছে পুরো উপন্যাস জুড়ে। অপ্রয়োজনীয় তেমন কাউকে মনে হয়নি। চাইলেও ‘স্টিল’ পুড়িয়ে কাউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার মতো না। এই স্টিল পোড়ানো অ্যালোম্যান্সারকে বলা হয় ‘কয়েনশট’। আর এই ধাতু; অন্যান্য আট মৌলিক ধাতু থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণও বটে। যাহোক, ধাতুর আলাপের সাথে এমনিতে চরিত্রদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সেইদিক থেকে ব্যাখা দেওয়া। চরিত্র নিয়ে আলাদাভাবে বলতে গেলে, প্রথম সারিতে কেলিসিয়ের ও ভিনের নামের অকপটে আসবে। দুজনের কেরামতি ও কারিশমা ভালোই প্রভাব ফেলেছে পুরো ফাইনাল এম্পায়ারে। প্রিয় চরিত্র কে এই নিয়ে বাক-বিতণ্ডা করতে চাই না। তবে এইটুকু নির্দ্বিধায় বলতে পারি, প্রত্যেকটি চরিত্র মনে দাগ টেনে দিয়েছে। ● অবসান— একটি উপন্যাসকে যদি স্বয়ংসম্পূর্ণ ট্যাগ দিতে হয় তাহলে সমাপ্তি এই ক্ষেত্রে ভালোই প্রভাব ফেলে। তবে এই উপন্যাসের ক্ষেত্রে পূর্ণতার সব কয়টি মার্ক অন্তত আমার থেকে পাবে। অনুবাদে ৭৪২ পৃষ্ঠা শেষ করার পর, নিজের রুচিকে তৃপ্ত করার মতো ❛মিস্টবর্ন : দ্য ফাইনাল এম্পায়ার❜ একটা দুর্দান্ত কাহিনি বটে। স্ট্যান্ড অ্যালোন হিসেবে এই বইয়ে আলাদা ভূমিকা রেখেছে। বলা যায়, পূর্ণতা প্রদান করে শুরুটা মাত্র হয়েছে। নতুন আরেকটি অধ্যায়ের শুরু... যা ‘টিন’ পুড়িয়ে ইন্দ্রিয়কে উদীপ্ত করার মতোই। আর এই কাজ করতে পারে শুধুমাত্র একজন ‘টিন‌আই’ (অ্যালোম্যান্স্যার)। ● খুচরা আলাপ— উদাহরণস্বরূপ ছয়টা ধাতুর রূপরেখা টানার চেষ্টা করলাম। বাকি মৌলিক দুই ধাতু আর উচ্চ দুই ধাতু এবং বিশেষ এক ধাতুর চমক এখনও দেওয়া হয়ে ওঠেনি। চেয়েছি রিভিউতে ম্যাজিক সিস্টেম বা অ্যালোম্যান্সির ব্যবহার নিয়ে দুয়েকটা ধারণা দিতে। সত্য বলতে পুরো মিস্টবর্নের এই হার্ড ম্যাজিক বা অ্যালোম্যান্সি প্রক্রিয়া অসাধারণ লেগেছে। ধাতু দিয়ে ম্যাজিক; ভাবা যায় তা-ও পেটের ভেতর পুড়িয়ে! যাহোক, সব জট আমি খুলে দিলে অনেক না পড়া পাঠকদের হয়তো কিছুই খোলার থাকবে না! ওয়েট, এই কথা পুরোপুরি মিথ্যা। আদতে আমি এই বইয়ের মূল কাহিনির সারাংশ শুধু বলেছি কিন্তু কার্যপরম্পরা নিয়ে কিছুই বলেনি। সাসপেন্স আর টুইস্ট তো বহুত পড়ের কথা। ওইসব নিয়ে লিখতে গেলে, লেখা আর থামবে না। তাই শুধু বলব, একজন সহিষ্ণু পাঠক হলেই তবে বইটি হাতে তুলে নিন। নাহয় পরবর্তীতে ১০০ পৃষ্ঠা পড়ে গাঁইগুঁই শুরু করে দিবেন। আমি যদি বলি পুরো বইয়ের ৬০০ পৃষ্ঠা প্লট বিল্ডাপ আর অ্যালোম্যান্সি নিয়ে ধারণা দিয়ে গিয়েছে তাহলে কি বিরক্ত হবেন? হয়েও লাভ নেই, ফ্যান্টাসি বইয়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এইটা। তাই ঠান্ডা মাথায়, সময় নিয়ে বইটি নিয়ে বসুন। এর পরে হারিয়ে যান ফাইনাল এম্পায়ারের জগতে একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে। ➣ লেখক ও অনুবাদক নিয়ে কিছু কথা— ব্রান্ডন স্যান্ডারসন নিয়ে কোনো কথা হবে না। বস একজনই। আর সর্বদা ওয়ান পিস হয়ে থাকবেন। চিরাচরিত ফ্যান্টাসির পথ বদলে দেওয়া এক বিস্ময়কর কারিগর। যার লেখার মুগ্ধতা আর নির্বাক হওয়ার প্রতিক্রিয়া শুধু মানাই। অনুবাদক অসীম পিয়াস দাদাকে নিয়ে নতুন কিছু বলার নাই। মূল বই পড়লাম না অনুবাদ টের পাইনি। অবশ্য পেতে দেননি বলা যায়। না হয় হাতে গোনা ৩ দিনের কম সময়ে এই দানবাকৃতির বই শেষ করা অসম্ভব বলা যায়। পিয়াস দাদার কাছ থেকে আরও ফ্যান্টাসি বইয়ের অনুবাদ প্রত্যাশা করছি। আশা করছি দ্রুত পেয়ে যাব। এই দারুণ অনুবাদ কর্মকে কোনোভাবে ‘তামা’ পুড়িয়ে লুকিয়ে রাখা সম্ভব না। যতই সে দক্ষ ‘স্মোকার’ হোক। আমরা পাঠকরা ঠিকই ‘ব্রোঞ্জ’ পুড়িয়ে সেটার সন্ধান বের করে ফেলব, একেকজন ‘সিকার’ হয়। ● সম্পাদনা ও বানান— সম্পাদনা বেশ ভালো হয়েছে। তার জন্য ফুয়াদ ভাইকে ধন্যবাদ। দুয়েকটা লাইনে শুধু বাক্যের অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে। তবে সেটা খুবই সামান্য, নবম ধাতুর মতো। এমনকি বানান ভুলও সেইরকম। তবে দ্বিতীয় সংস্করণে চাইলে সেগুলো ঠিকঠাক করে নেওয়া যাবে। ● প্রচ্ছদ, অলংকরণ, নামলিপি— প্রচ্ছদ দারুণ। নামলিপি দুটো, দুইরকম ফিল দিয়েছে। অলংকরণ বা কয়েকটি চিত্র ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত করে যথাস্থানে ব্যবহার করার কারণে চরিত্র পরিচিতি অনেকটা সহজ হয়েছে। ● মলাট, বাঁধাই, পৃষ্ঠা— পুরো বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৭৫২। ৭৪২ পৃষ্ঠায় কাহিনি শেষ, বাকি ১০ পৃষ্ঠায় আনুষাঙ্গিক বিষয়বস্তু দেওয়া। সত্য কথা বলতে, এই বই আরাম করে পড়া শেষ হয়েছে। ঢাউস সাইজ হওয়া সত্ত্বেও শক্ত মলাট ও মজবুত বাঁধাইয়ের কারণে কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হয়নি। এক কথায় প্রোডাকশন কোয়ালিটি দারুণ। ⊙ বই : দ্য ফাইনাল এম্পায়ার (মিস্টবর্ন #১) ⊙ লেখক : ব্রান্ডন স্যান্ডারসন ⊙ জনরা : এপিক ফ্যান্টাসি ⊙ প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর ২০২১ ⊙ অনুবাদক : অসীম পিয়াস ⊙ নামলিপি ও প্রচ্ছদ : জুলিয়ান ⊙ প্রকাশনা : ভূমিপ্রকাশ ⊙ মুদ্রিত মূল্য : ১০৫০ টাকা মাত্র ⊙ পৃষ্ঠা : ৭৫২

    •  

    Recently Viewed


    Great offers, Direct to your inbox and stay one step ahead.
    • You can pay using


    JOIN US

    icon Download App

    Rokomari.com is now one of the leading e-commerce organizations in Bangladesh. It is indeed the biggest online bookshop or bookstore in Bangladesh that helps you save time and money. You can buy books online with a few clicks or a convenient phone call. With breathtaking discounts and offers you can buy anything from Bangla Upannash or English story books to academic, research or competitive exam books. Superfast cash on delivery service brings the products at your doorstep. Our customer support, return and replacement policies will surely add extra confidence in your online shopping experience. Happy Shopping with Rokomari.com!