User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
❝মানুষকে কখনোই একটি-দুটি পরীক্ষা দিয়ে বিচার করা যায় না। মানুষ অত সহজ, সস্তা কিছু নয়। সন্তানদের জীবনের পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ হওয়ার শিক্ষা দিন। তারা একদিন হাসবেই। একদিন হাসাবেই!❞ "বাংলাদেশের স্বপ্নচোখ"—শুধু একটি বই নয়, বরং একটি স্বপ্নের খসড়া, যেখানে লেখক ড. রউফুল আলম তার হৃদয়ের গভীর অনুভূতি দিয়ে আঁকেছেন এক সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের প্রতিচিত্র। বইটি বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখা ৫২টি অণুপ্রবন্ধের সংকলন, যা পাঠককে শুধু ভাবায় না, বরং বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। লেখক বইটিতে আশা ও আশঙ্কার এক মিশ্র অনুভূতি তৈরি করেছেন, যা পাঠকের চিন্তার গভীরে প্রবেশ করতে বাধ্য করে। ড. রউফুল আলম একজন বিজ্ঞানী হলেও তিনি সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে ভাবেন, যা তার লেখার প্রতিটি শব্দে প্রতিফলিত হয়েছে। প্রবাসে থেকেও তিনি দেশকে ভুলে যাননি; বরং দূর থেকে দেশকে দেখার তার দৃষ্টিভঙ্গি আরো সূক্ষ্ম হয়েছে। "বাংলাদেশের স্বপ্নচোখ" বইয়ে তিনি সেই দৃষ্টিভঙ্গি পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। বইটিতে সামাজিক অনিয়ম, রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক বৈষম্য, নারী নির্যাতন, শিক্ষাব্যবস্থার সংকট, মেধাবীদের অবমূল্যায়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে বইটি শুধুমাত্র সমস্যার বিবরণ দেয়নি, বরং সম্ভাব্য সমাধানের দিকও নির্দেশ করেছে। ?বইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ঃ বইটির বিভিন্ন অধ্যায় পাঠকদের সামনে বাংলাদেশের বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচন করে। এর মধ্যে কয়েকটি অধ্যায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য: ▪ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা: "প্রিয় বঙ্গবন্ধু" বইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো 'প্রিয় বঙ্গবন্ধু' শিরোনামের অণুপ্রবন্ধ। এখানে লেখক বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও বর্তমান বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন কতটা পূরণ হয়েছে, আর কতটা ধ্বংসের পথে, তা নিয়েই তার বিশ্লেষণ। তিনি ব্যথিত হৃদয়ে প্রশ্ন করেছেন— "আপনি কি চেয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঝিমিয়ে পড়ুক অনিয়ম আর দলীয়করণে?" "আপনি কি চেয়েছিলেন, মানুষগুলো কাজ না করে শুধু লেজুড়বৃত্তি করে বেঁচে থাকুক?" এই প্রশ্নগুলো যে কেবল বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশ্যে, তা নয়। বরং এটি বর্তমান প্রজন্মের কাছে একটি আত্মজিজ্ঞাসা। লেখক বুঝাতে চেয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়ে যারা রাজনীতি করে, তারা আসলে তার আদর্শকে অনুসরণ করছে না। এই অধ্যায়টি পাঠকের চিন্তার জগতে গভীর নাড়া দেবে। ▪ জ্ঞান, শিক্ষা ও চেতনার সংকট: "চোখের আলোয় দেখেছিলাম" একটি সমাজের অগ্রগতি নির্ভর করে তার শিক্ষাব্যবস্থার ওপর। লেখক মনে করেন, আমাদের দেশে শিক্ষিত মানুষ আছে, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানী মানুষের অভাব রয়েছে। "চোখের আলোয় দেখেছিলাম" শিরোনামের অণুপ্রবন্ধে তিনি বলেছেন, "জ্ঞান হলো সেটাই, যেটা মানুষকে নতুন আলো দেখায়। প্রশ্ন করতে শেখায়। সমাজকে জাগাতে নির্ভীক করে তোলে।" তিনি মনে করেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো কেবল সনদ তৈরির কারখানা হয়ে রয়ে গেছে। সত্যিকারের জ্ঞানচর্চা হয় না, নতুন ভাবনার উদ্ভব হয় না। ফলস্বরূপ, সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতা দেখা যায় না। ▪ নারী নির্যাতন ও সামাজিক বিচারহীনতা: "ধর্ষণের বিচার কোথায়?" নারী নির্যাতন আমাদের সমাজের এক ভয়াবহ ব্যাধি, যা দিন দিন মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। "ধর্ষণের বিচার কোথায়?" শিরোনামের প্রবন্ধে লেখক ধর্ষণের পর ভুক্তভোগীকেই কেন দোষারোপ করা হয়, সেই প্রসঙ্গটি তুলেছেন। সমাজের এক শ্রেণির মানুষ ধর্ষিতার পোশাক, তার চলাফেরা, তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ করে, যা ধর্ষকদের সাহস যোগায়। লেখকের মতে, "ধর্ষকের কাছে তো ধর্ম-রাষ্ট্র-জাত পরিচয় নেই। যখন আমি-আপনি ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পরিচয় নিয়ে মেতে উঠি, তখন ধর্ষকরা ধৃষ্টতা নিয়ে উল্লাস করে বেড়ায়।" এই প্রবন্ধটি আমাদের বিচারব্যবস্থা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি কঠিন প্রশ্ন তুলে ধরে—আমরা কি আদৌ নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি? ▪ সামাজিক শ্রেণিবিভাগ ও পরিচয়ের সংকট: "বাবার পরিচয়" "তোমার বাবা কী করেন?"—এই প্রশ্নটি আমাদের সমাজে গভীরভাবে গেঁথে আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির ইন্টারভিউ পর্যন্ত অনেক জায়গায় এটি শুনতে হয়। "বাবার পরিচয়" প্রবন্ধে লেখক দেখিয়েছেন, কীভাবে এই প্রশ্নটি সামাজিক বৈষম্য ও শ্রেণিভেদকে উসকে দেয়। লেখক মনে করেন, "মানুষের সবচেয়ে সুন্দর পরিচয় হলো তার নিজ কর্ম। কর্মে অলংকৃত নয় যে জীবন, সে আর যত অলংকারই পরুক, বৃথা সে।" এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। ▪ গবেষণা ও উন্নয়নের গুরুত্ব: লেখক নিজেও একজন গবেষক, তাই বইতে গবেষণার গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশে গবেষণার অপ্রতুলতা, মৌলিক গবেষণার প্রতি অনীহা এবং ফান্ডিং-এর অভাবের কারণে আমরা এখনো অনেক পেছনে পড়ে আছি। লেখক মনে করেন, দেশের উন্নয়নের জন্য মৌলিক গবেষণায় গুরুত্ব দেয়া জরুরি। ? ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা: "বাংলাদেশের স্বপ্নচোখ" শুধু সমস্যা চিহ্নিত করে না, বরং সমাধানের দিকও নির্দেশ করে। লেখক মনে করেন, ? শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার প্রয়োজন ? দলীয়করণমুক্ত সমাজ গঠন করা জরুরি ? নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ? গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দেয়া ? মেধাবীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা বইটিতে লেখক কেবল হতাশা প্রকাশ করেননি, বরং সমাধানের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন, যা পাঠকদের আশাবাদী করে তোলে। ? রচনাশৈলী: ড. রউফুল আলমের লেখনী সহজবোধ্য, অথচ গভীর ভাবনার জন্ম দেয়। তার লেখার ধরন কাব্যিক, কিন্তু যুক্তিনির্ভর। প্রতিটি শব্দে অনুভূতির স্পর্শ আছে, যা পাঠকের হৃদয়কে নাড়া দেয়। তিনি তীক্ষ্ণ ও সাহসী ভাষায় সমাজের সমস্যা তুলে ধরেছেন, কিন্তু সমালোচনার মধ্যেই সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এটি বইটির অন্যতম শক্তিশালী দিক। তিনি তথ্য-উপাত্তের অতিরিক্ত ব্যবহার না করেও শক্তিশালী বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। প্রতিটি প্রবন্ধ স্বল্প পরিসরে লেখা হলেও এর গভীরতা অসীম। বইটি পড়তে গিয়ে পাঠক কখনো গর্বিত হবেন, কখনো ক্ষুব্ধ হবেন, আবার কখনো হতাশ হবেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বইটি পাঠকের চিন্তার জগতে আলোড়ন তুলতে সক্ষম। ? কিছু সীমাবদ্ধতা: ১. কিছু বিষয় আরও বিশদভাবে আলোচিত হতে পারত: যদিও বইটি ছোট ছোট প্রবন্ধের সংকলন, তবুও কিছু বিষয় আরও বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করলে পাঠকের কাছে তা আরও গ্রহণযোগ্য হতো। ২. সমাধানের দিক আরও জোরালো করা যেত: বইটিতে সমস্যার বিশ্লেষণ চমৎকারভাবে করা হয়েছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলে পাঠকদের জন্য আরও কার্যকর হতে পারত। ? লেখকের জীবন ও চিন্তাধারা: ড. রউফুল আলম শুধুমাত্র লেখক নন, তিনি একজন গবেষকও। তার শিক্ষা ও গবেষণার পথচলা বাংলাদেশ, সুইডেন ও আমেরিকার মধ্য দিয়ে বিস্তৃত। তার গবেষণার বিষয়বস্তু মূলত রাসায়নিক বিক্রিয়া, যা মানবকল্যাণে ব্যবহৃত হতে পারে। তার গবেষণাগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে, এবং তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করেছেন। একজন বিজ্ঞানী হয়েও তিনি সমাজ ও দেশের সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন, যা তার লেখনীতে ফুটে উঠেছে। দেশের উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও তরুণদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি অত্যন্ত চিন্তিত। তার লেখা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, তিনি শুধু সমালোচনা করেন না, বরং সমস্যার সমাধানও খোঁজেন। ? পাঠ প্রতিক্রিয়া: "বাংলাদেশের স্বপ্নচোখ" একটি সময়োপযোগী ও চিন্তাশীল গ্রন্থ। এটি কেবল একটি বই নয়, বরং একটি আন্দোলন, একটি জাগরণ। সমাজের অনিয়ম, অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লেখকের ক্ষোভ স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে এই বইয়ে। একইসঙ্গে তিনি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের একটি স্বপ্নও এঁকেছেন, যা অর্জন করতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে, ভাবতে হবে এবং কাজ করতে হবে। লেখক বইটির মাধ্যমে কেবল সমালোচনা করেননি, বরং বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য স্পষ্ট দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি চিন্তাশীল পাঠকের উচিত বইটি পড়া এবং এর প্রতিটি প্রবন্ধ থেকে নিজের জন্য কিছু না কিছু নেয়া। কারণ, বাংলাদেশের স্বপ্নচোখ শুধু লেখকের একার নয়, এটি আমাদের সবার স্বপ্নচোখ। ♦️বই : বাংলাদেশের স্বপ্নচোখ ♦️লেখক : রউফুল আলম ♦️পৃষ্ঠা : ১৬০ ♦️প্রকাশনী : জ্ঞানকোষ প্রকাশনী © শাহরিয়ার নাবিল
Was this review helpful to you?
or
A book that should read every citizen (no matter he/she is child or adult) in our country.I think its a must read book.
Was this review helpful to you?
or
বেশ ভালো একটি বই
Was this review helpful to you?
or
The book was great, just like the previous book by the author "একটি দেশ যেভাবে দাড়ায়". The author presented some great ideas from his own experience and proposed several solutions to improve our national education system. Although in some places, I felt the message was repetitive considering the fact that I read the previous book too. But overall, I enjoyed the read and the book provided me with good insights. Thanks to the author.
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশের স্বপ্নচোখ’ বইয়ে লেখক রউফুল আলম শুনিয়েছেন বাংলাদেশ নিয়ে তার ভাবনা। দূর পরবাসে থেকেও বাংলাদেশকে লালন করে চলেছেন হৃদয়ের গভীরে। ৫২টি অণুপ্রবন্ধ দিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। যার বেশিরভাগই বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এই অণুপ্রবন্ধগুলোতে তুলে ধরা হয়েছে প্রিয় মাতৃভূমির সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, এবং আনুষঙ্গিক বেশ কিছু সমস্যা। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কিছু পথও তিনি দেখিয়েছেন। যেকোনো চিন্তাশীল পাঠক নিঃসন্দেহে বইটি পড়তে গিয়ে কখনো আনন্দে উদ্ভাসিত হবেন, কখনো বা চিন্তার জগতে হারিয়ে যাবেন, মাঝে মাঝে হয়তো অজানা কোনো আশঙ্কায় শিহরিতও হবেন।
Was this review helpful to you?
or
great
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
ভালো
Was this review helpful to you?
or
৫/৫
Was this review helpful to you?
or
Good book!
Was this review helpful to you?
or
অনবদ্য
Was this review helpful to you?
or
The more I read the books, the more I became surprised..If I got rokomari
Was this review helpful to you?
or
আলহামদুলিল্লাহ।
Was this review helpful to you?
or
#Rokomari_Book_Club_Review_Competition রিভিউ লেখক: জ্যোতির্ময় পোদ্দার সাগর বই-এর নাম: বাংলাদেশের স্বপ্নচোখ লেখক: রউফুল আলম প্রকাশনী: জ্ঞানকোষ প্রকাশনী প্রচ্ছদ শিল্পী: সব্যস্যাচী মিস্ত্রী পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৫৮ প্রথম প্রকাশ: মে ২০২১ ’৬০-এর দশকে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন হয়েছিল ছোট দুইটি দেশ – যার একটি নাউরু আরেকটি সিঙ্গাপুর। নাউরু জন্মেছিল প্রকৃতির আশীর্বাদ নিয়ে; কারণ পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট ফসফেট তখন পাওয়া যেত এই নাউরু-তে। পৃথিবী জুড়ে তখন ছড়িয়ে পড়েছে ‘সবুজ বিপ্লব’ – যার অপরিহার্য অংশ রাসায়নিক সার আর রাসায়নিক সারের অপরিহার্য অংশ ফসসেট। ফলে দুই-এ দুই-এ চার মিলে গেল নাউরুর জন্য। ফসফেট বিক্রিলব্ধ অর্থের প্রাচুর্যে স্বাধীনতা পরবর্তি এক দশকেই প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপটি হয়ে উঠল বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী রাষ্ট্র! অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের গল্পটা ছিল একেবারেই ভিন্ন; মালয়েশিয়া ফেডারেশন থেকে সিঙ্গাপুরকে যখন বের করে দেওয়া হয় তখন তা ছিল নিতান্ত-ই এক সমুদ্রঘেঁষা জেলে-পল্লী। তখন সেদেশের না ছিল কোন অর্থনৈতিক ভিত, আর না ছিল কোন প্রাকৃতিক সম্পদ। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ এই অপমান ভুললেন না; তিনি ঠিক করলেন একদিন এই জেলেপল্লী-ই হবে এশিয়ার স্বপ্ন-নগরী! ২০ বছর পর ... ’৯০-এর দশকে এসে দেখা গেল শিক্ষা, উদ্ভাবন আর উন্নয়নে সিঙ্গাপুর হয়ে উঠেছে ‘এশিয়ার বাঘ' আর নাউরু পরিণত হয়েছে এক দেউলিয়া রাষ্ট্রে! সিঙ্গাপুরের মতো দূরদৃষ্টি নাউরুর ছিল না; ফসফেট থেকে আসা বিপুল অর্থ সঠিক জায়গায় ব্যবহার না হয়ে তা ব্যয় হয়েছিল নানা অপ্রয়োজনীয় আর উচ্চাভিলাষী খাতে। আর সেই সাথে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, নৈতিক অবক্ষয় এসব তো ছিলই। তাই ফসফেটের খনি শেষ হওয়ার কিছু সময় পরেই একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয় নাউরু। অপরদিকে বিশ্ববাণিজ্যের আরেকটি রাজধানী হয়ে উঠে সিঙ্গাপুর। বাংলাদেশের স্বপ্নচোখ - বইটিতে লেখক রউফুল আলম-এর লেখায় ফুটে উঠেছে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের দুইটি ছবি; যার একটি হতে পারে এই সিঙ্গাপুরের মতো সমৃদ্ধ, আরেকটি নাউরুর মতো নিঃস্ব! সিঙ্গাপুর ও নাউরুর পরেই ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার জন্য অনেক ত্যাগ আর সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়েছিল এই দেশ। নিন্দুকদের তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে, প্রাকৃতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক সব অস্থিতিশীলতা মোকাবেলা করেই পঞ্চাশ বছরে আজকের বাংলাদেশ। এই অর্ধশত বছরে যেমন অনেক সাফল্য এসেছে তেমনি ব্যর্থতার অপবাদও পিছু ছাড়ে নি। এদেশের শিক্ষা, উদ্ভাবন, গবেষণা আর তারুণ্যের মেধাশক্তির অপচয় দীর্ঘ সময় ধরে রয়ে গিয়েছে সেই ব্যর্থতার তালিকায়। আজ বাংলাদেশের যা কিছু সাফল্য তার পেছনে সবথেকে বেশি অবদান রেখেছে এদেশের গার্মেন্টস আর রেমিট্যান্স খাত। কিন্তু আজ দুনিয়ায় আধুনিক শিক্ষা, উদ্ভাবনের যে জোয়ার বইছে তাতে এগুলো কি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে? আর কিছুদিন পর যদি মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী কর্মীদের কাজ যদি রোবটেরা নেওয়া শুরু করে, ইউরোপ-আমেরিকা যদি আফ্রিকাতে তাদের গার্মেন্টসের বিকল্প বাজার খুঁজে পায় তবে কি বাংলাদেশের সাফল্যে ধ্বস নামবে না? ফসফেট খনি নির্ভর নাউরুর মতো সস্তা শ্রম নির্ভর বাংলাদেশ তখন কোন উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে সামনে এগোবে? একটি দেশে টেকসই উন্নয়ন তখনই সম্ভব হয় যখন সেদেশে দক্ষ আর উন্নত মানসিকতার মানুষ তৈরি হয়। উন্নত মানুষেরা প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করে, প্রতিষ্ঠান সমৃদ্ধ করে সমাজকে আর সমাজ রাষ্ট্রকে। আর উন্নত মানুষ গঠনের প্রধান শর্ত হচ্ছে উন্নত ও আধুনিক শিক্ষা। কিন্তু এই শিক্ষা, উদ্ভাবন আর গবেষণা নিয়ে আমরা কী চিত্র বাংলাদেশে দেখতে পাই? বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বাজারের দুগ্ধপণ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন বলে একজন রাষ্ট্রীয় কর্মচারী তাঁকে শাসাচ্ছেন! বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উঁচু চেয়ারে গবেষকের জায়গায় বসে আছেন আমলারা! সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে শিক্ষা-গবেষণা হয়ে গেছে ঐচ্ছিক আর ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি হয়েছে আবশ্যিক। ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বৈষম্য তো এখানে মামুলি বিষয়; চৌর্যবৃত্তি, প্রশ্নফাঁস, অটোপাস, নিয়োগ বাণিজ্যে ছেয়ে আছে জাতি গঠনের মেরুদন্ড শিক্ষাখাত। তাহলে একজন দক্ষ মানুষ কীভাবে তৈরি হবে? দক্ষ জনশক্তি না থাকলে সামান্য দুধ পরীক্ষার জন্য প্রতিবেশী দেশে যেতে হবে, মহামারি কালে টিকার জন্য তাদের দিকে চেয়ে থাকতে হবে, ভূ-রাজনীতির খেলায় অন্যদের ধরণা দিয়ে বেড়াতে হবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হলিউড সিনেমার বাজেটে মহাকাশ অভিযান করবে; টিকা উদ্ভাবন, উৎপাদন, কূটনীতি করবে; জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-দীক্ষার প্রতিযোগিতায় পরাশক্তি হয়ে উঠবে। আর বাংলাদেশের তরুণ সমাজ কারেন্ট এ্যাফেয়ার্সে সেসব মুখস্ত করে নিজ মেধাশক্তি ব্যয় করবে! তাহলে কি এভাবেই চলতে থাকবে, নিঃশেষ হয়ে যাবে সব? না! যে জ্ঞান ও শিক্ষার অভাবে এই অপূর্ণতা সেই শূণ্যস্থান পূরণ হলেই বাংলাদেশে ফিরে আসবে সমৃদ্ধি। লেখক তাঁর স্বপ্নচোখে এমন এক বাংলাদেশকে দেখতে পান যেখানকার তরুণেরা জ্ঞান-উদ্ভাবনের নেশায় ছড়িয়ে পড়ছে দেশ-দেশান্তরে। মহামারী কাল কেটে যাওয়ার পর রাষ্ট্র বুঝতে পারবে আত্ম-শক্তির গুরুত্ব। তাই দেশের বিজ্ঞান গবেষণাগার থেকে সচিবালয়ের লোকদের সরিয়ে সেখানে জায়গা করে দেবে জাঁদরেল গবেষকদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন স্বার্থের রাজনীতি থাকবে না, হানাহানি থাকবে না; শিক্ষকেরা থাকবেন জ্ঞান বিতরণ আর গবেষণায়। শিক্ষার্থীরা আর কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স পড়ার জন্য লাইব্রেরির সামনে লাইন ধরে দাঁড়াবে না। তাদের আর কৃষি বিজ্ঞান পড়ে কাস্টমস কর্মকর্তা হওয়ার তাড়া থাকবে না। কারণ তারা জানবে রাষ্ট্র এখন যোগ্যতমকেই পুরস্কৃত করবে আর অযোগ্যকে করবে ‘কিক আউট’! মেধার প্রতিযোগিতায় হবে রাষ্ট্রের চালিকা শক্তি। তা দেখে বিদেশে থাকা বাংলার মেধাবী সন্তানেরা দেশে ফিরে আসা শুরু করবে। রাষ্ট্র তাদের প্রাপ্য সম্মান আর কর্ম পরিবেশের সুবিধা নিশ্চিত করবে। যদি এমন হতে থাকে তবে আর দুই-তিন দশক পর কেমন হবে আজকের বাংলাদেশ? শিক্ষা ও গবেষণার উন্নতিতে তৈরি হবে সৎ, দায়িত্বশীল, কর্মমুখী এক জনগোষ্ঠী; তৈরি হবে এক ভুবন বিজয়ী বুনিয়াদ। এরপর আরো অনেক বছর কেটে যাবে। বাংলাদেশের শতবর্ষের জন্মদিবসে ইউরোপ-আমেরিকা থেকে ছেলে-মেয়েরা পড়তে আসবে এদেশে। ওরা বাংলাদেশীদের কোন বোতাম-বেল্ট ছাড়াই লুঙ্গি-শাড়ি পড়তে দেখে অবাক হয়ে যাবে। চামচ ছাড়াই বাঙ্গালীরা কেমন চটপট আঙ্গুল দিয়ে খাবার খায় তা নিয়ে গল্প করবে। আর হয়তো গবেষণা করবে - কীভাবে পঞ্চাশ বছর আগের ত্যাগী, মেধাবী তরুণ জনগোষ্ঠীর হাত ধরে গড়ে উঠেছে এই সমৃদ্ধ দেশ!
Was this review helpful to you?
or
Most Important Book
Was this review helpful to you?
or
লেখকের কর্ম সম্পর্কিত চ্যাপ্টারগুলো প্রশংসার দাবিদার। প্রচলিত প্রগতিশীল ধারায় সাচ্ছন্দ্যবোধ করলে বইটি ভালো লাগবে। লেখকের লেখায় তার কিছু বিশেষ ব্যক্তি বা সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ব্যাপারটি অনুমেয়। তবে পুরোটা জুড়েই বইয়ের পৃষ্ঠা বাড়ানোর একটা তৎপরতা দেখা গেছে।
Was this review helpful to you?
or
wanted that one! really good. but the only problem is that this book hasn't introduced a option to solve the problems, otherwise it's a good book
Was this review helpful to you?
or
রউফুল আলম স্যারের লেখা 'বাংলাদেশের স্বপ্নচোখ' বইটায় একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিকের আর্তনাদ, ক্ষোভ এবং সময়োপযোগী ভাবনা প্রকাশিত হয়েছে। স্পষ্টতই একটা দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে তারুণ্য। আবার একটা দেশের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিকটাও হচ্ছে তারুণ্য। তারুণ্যকে যদি দেশের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য ব্যবস্থাপনা না নেওয়া হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই একটা অংশ বিপথে চলে যাবে। আর তারাই একসময় দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। যা আমরা এখনই দেখছি। দেশে ধর্ষণের হার বেড়েছে। দূর্নীতি সব প্রতিষ্ঠানে ছেয়ে গেছে। তরুণরা মাদকাগ্ৰস্থ হয়ে হয়ে গেছে। যা অব্যবস্থাপনারই ফল। লেখক স্পষ্টতই আমাদের দেশে একটা বৈজ্ঞানিক বিপ্লব দেখতে চাচ্ছেন। আর তার জন্য যে বাঁধা বিদ্যমান তা প্রকাশ করেছেন। আমাদের কিছু চিরায়ত সংস্কৃতি যা আমাদেরকে খর্ব করে রেখেছে তা ভেঙে ফেলার আকুতি জানিয়েছেন। দেশে বিজ্ঞান খাতে অনগ্ৰসরতার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন লেখক। তার জন্য যে একজন দূরদর্শিতা সম্পন্ন শাসকের প্রয়োজন তাও তিনি তুলে ধরেছেন। আর তার প্রমাণ হিসেবে তিনি কাইম ভাইজম্যান এবং জওহরলাল নেহেরুকে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একজন গবেষকের স্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ঘটানোর জন্য মা প্রয়োজন তা মেটাতে আর্জি জানিয়েছেন। তরুণদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য লেখক সত্যেন বোস এবং ওয়াজেদ মিয়ার জীবন নিয়ে দুটো অণুপ্রবন্ধও লিখেছেন। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অসংখ্য তরুণ বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্ৰহণ করার জন্য যাচ্ছে। তাদের কে ফিরিয়ে এনে দেশে গবেষণায় লিপ্ত করার জন্য সরকারের প্রজেক্ট নেওয়া অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছেন লেখক। যার মাধ্যমে আমাদের দেশও যেন বিজ্ঞানের এই পৃথিবীতে অবদান রাখতে পারে। আমরাও যেন বিশ্ব থেকে পিছিয়ে না থাকি। বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির নামে যা চলছে তার সমালোচনা করে লেখক বারাক ওবামা, আ্যঞ্জেলা মার্কেল এবং জওহরলাল নেহরু ছাত্ররাজনীতি করেছেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। উত্তর হল না তাদের ছাত্রজীবনে রাজনীতির লেশ মাত্র পাওয়া যায়নি। লেখক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন। দেশের অধিকার আদায়, নিজেদের অধিকার আদায়, শিক্ষকদের অধিকার আদায়, দূর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের নাম যেন ছাত্ররাজনীতি হয় তা প্রত্যাশা করেছেন। শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি, শিক্ষক পদোন্নতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমলাদের প্রভাব, সর্বক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের সমালোচনা করেছেন এবং এ অবস্থা নিরসনে সরকারে দৃঢ় পদক্ষেপ কামনা করেছেন। লেখক শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতির ক্ষেত্রে সব দিক দিয়ে যোগ্যতা দেখার চেয়ে যে কাজের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে তার যোগ্যতা দক্ষতা কিংবা সফলতার দিকে নজর দেওয়ার জন্য বলেছেন। পদোন্নতির ক্ষেত্রে জৈষ্ঠ্যতার দিক বিবেচনা না করে দক্ষতা এবং গুণাগুণের মানে পদোন্নতি দেয়ার কথা বলেছেন। বইটি মোট বায়ান্নটি অণুপ্রবন্ধ নিয়ে লেখা হয়েছে। আমার পক্ষে সবগুলো নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়। বইটি আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি আশীর্বাদ। আমাদের কে ভুবন জয়ের স্বপ্ন দেখাবে বইটি। তাই যারা বইটি এখনো পড়েননি তারা পড়ে নিন। বই: বাংলাদেশের স্বপ্নচোখ লেখক: রউফুল আলম মুদ্রিত মূল্য: ৩০০৳ জ্ঞানকোষ প্রকাশনী
Was this review helpful to you?
or
লেখকের আগের বইটি পড়েছি। ভালোও লেগেছে। তাই অন্যদেরকেও বইটি পড়তে বলেছি। কিন্তু একটি বিষয় খুব মিস করেছি। আর তা হলো, লেখক অনেক গুলো সমস্যার কথা বলেছে। যেগুলো অবশ্যই যৌক্তিক। কিন্তু আমাদের যুবসমাজের উদ্দেশে কোনো সরাসরি দিকনির্দেশনা ছিলো না। আশা করি এই বইটি আমার/আমাদের এই আশাটিও পূর্ণ করবে। বই পড়ার অপেক্ষা সহ্য হচ্ছে না!!