User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অনেক ভালো উপন্যাস।পড়তে পারেন সবাই।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম : শুভদা, ক্যাটাগরি :উপন্যাস, প্রকাশকাল :১৯৩৮ সালের জুন মাস 'শুভদা' অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি উপন্যাস।এটি তিনি বাল্যকালে রচনা করেছিলেন।কিন্তু উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় তার মৃত্যুর পরে। কারণ 'শুভদা' উপন্যাসের প্রভাব তার প্রথম বয়সের লেখা 'অন্নপূর্ণার মন্দির' এর উপর পরে। 'অন্নপূর্ণার মন্দির ' প্রকাশিত হলে শরৎচন্দ্র পড়ে দেখেন যে 'শুভদা' উপন্যাসের প্রভাব এতে যথেষ্ট রয়েছে।তাই এটা তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। #কাহিনী_সংক্ষেপ : সহজ সরল কোমল একটা চরিত্র শুভদা। গ্রামে এমন কেউ নেই যে তাকে পছন্দ করে না। সংসারে রয়েছে অত্যাচারী স্বামী হারাণচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ,দুই কন্যা সন্তান ললনা ও ছলনা এক পুত্র সন্তান মাধন ও বড় ননদিনী রাসমণি। কষ্টের সংসার শুভদার। কখনো ভালো যেত কিন্তু অধিকাংশ সময়টা কষ্টের মধ্যেই যেত। হারাণ মানুষটা মোটেও সুবিধার নয়।মানসিক অশান্তিতে রেখেছে পুরো পরিবারকে।নেশা করার অভ্যেসতো রয়েছেই সাথে আরো কিছু বদ অভ্যাস ছিল।দুদিন,তিনদিন কখনো বা পাঁচ/ছয়দিনও তিনি বাড়ি ফিরতেন না। তখন উপবাস করেই কাটাতে হয় সবাইকে।এমনি করে কী আর দিন চলে! তবুও ললনা ও শুভদা মিলে প্রাণপণে চেষ্টা করে সবার মুখে দু চারটা ডালভাত জুগিয়ে দেবার।ললনা শুভদার বড় মেয়ে।বাল্যকালে বিয়ে হয়েছিল।বিয়ের এক বৎসরের মধ্যে বিধবা হয়েছে সে।সেই থেকে বাবার বাসায় আছে। একেতো সংসার টানাপোড়নের মধ্যে চলছে অন্যদিকে মাধব প্রায় বছর খানেক ধরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে আছে।সবার ছোট মাধব।নিয়মিত চিকিৎসায় হয়তবা সুস্থতা ফিরে আসতো কিন্তু সে সামর্থ্য শুভদার নেই। ছলনা শুভদার ছোট মেয়ে ঠিক ললনার বিপরীত।ললনা দু,চারটার বেশি কথা বলে না।আর ছলনার মুখের কথার শেষ নেই।কিছুটা আহ্লাদী স্বভাবের।দেখতে দুজনই রূপসী কিন্তু কাজে কর্মে পুরো বিপরীত। হারাণের সব অপকর্ম শুভদা নীরবে সহ্য করে যায়।কখনো কোন প্রতিবাদ করে না।অধিকাংশ সময় তার না খেয়েই কাটে।হারাণ যখন বাড়ি ফিরে না তখন সেও না খেয়ে দিন রাত পার করে।হারাণের এ নিয়ে কোন চিন্তা নেই মাঝে মধ্যে একটু দুঃখ প্রকাশ করলেও স্বভাবে তার পরিবর্তন নেই। শুভদার ভিতরের সুপ্ত কষ্টগুলো সবার দৃষ্টি এড়িয়ে গেলেও ললনার চোখে প্রতিনিয়ত ধরা পড়ে।মায়ের কষ্ট,যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে না সে।তাই যেমন করেই হোক সহায়তা করার চেষ্টা করে। তাদের এই কষ্টের দিনে এগিয়ে আসে সদানন্দ।লোকে তাকে সদা পাগলা বলে ডাকে।সাদা মনের মানুষ সে।সবার বিপদে এগিয়ে যায়।ললনার প্রতি তার একটা মায়া ছিল বলেই হয়তো এই পরিবারের প্রতি তার বিশেষ টান রয়েছে। হঠাৎ একটা সময় শুভদার এই কষ্টের সংসার আরো করুণ আকার ধারণ করে।হারাণের অধিকাংশ সময় খোঁজ খবর থাকে না,সদানন্দও তার পিসিমাকে নিয়ে কাশিতে চলে যায়,যাওয়ার আগে কিছু টাকা দিয়ে গেলেও তা ফুরিয়ে অনাহারে কাটাতে হয় তাদের,মাধবের শরীরটা দিনদিন খারাপ হতে থাকে। এদিকে ছলনারও আর কয়েকমাস গেলে বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাবে।এসবের যন্ত্রণায় শুভদা ভেঙে পড়ে। মায়ের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ললনা একদিন ভোরের আলো না ফুটতেই গঙ্গার জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।শুভদার এই কষ্টের সংসারের পরিণতিটা তখন কোনদিকে মোড় নিয়েছিল জানতে হলে পড়তে হবে উপন্যাসটি। #আমার উপলব্ধি : শরৎচন্দ্রের লেখা মানে পল্লীসমাজকে ঘিরে সাধারণ মানুষগুলোর জীবন কাহিনীর সুন্দর উপস্থাপন।এটাও এর ব্যতিক্রম নয়।মূলত তার সাহিত্যে নারী চরিত্রের ভূমিকা অনেক বেশি থাকে।নারীদের দুঃস্থ জীবনের গল্পগুলোকে নিপুণতার সাথে তিনি তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করেছেন যা পাঠককে সহজে হৃদয়স্পর্শী করে তোলে।।শুভদাও এরকম হৃদয়স্পর্শ করার মত একটি উপন্যাস। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাকে।পরিবারের প্রত্যেকের প্রতি তার যে আকূলতা তা সহজে হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। **চরিত্রের বিশ্লষণ: ১। 'শুভদা' এমন একটা চরিত্র যে কষ্টের শত কড়াঘাতেও টিকে থাকে শেষ অব্দি।দুঃখ, ভারাক্রান্ত পরিস্থিতিতে সে ভেঙে পড়েছে কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি।যুদ্ধ করেছে পরিস্থিতির সাথে, নিজের সাথে। সাধারণত কোন উপন্যাস পড়লে আমি একটা চরিত্রে নিজেকে কল্পনা করতে থাকি।কিন্তু 'শুভদা' পড়ে নিজেকে সে আসনে বসাতে পারিনি।কারণ এতো কষ্টের জীবন কল্পনা করলেই ভয় লাগছিল।কিন্তু এরকম হাজার হাজার 'শুভদা' আমাদের চারপাশেই রয়েছে যাদের কপালে 'সুখ ভোগ' বলে কোন শব্দ নেই।তাদের নেই কোন আত্মসম্মান। তারা শুধু ত্যাগ করতে জানে,সংসারের মায়ার তারা জীবনযুদ্ধ করে নিজেকে বিসর্জন দিতে জানে।জীবনবধি দুঃখের এক গ্লানি তাদের বয়ে বেড়াতে হয়।তারা অন্তরালে কাঁদে।তাদের এ কান্না কারো কানে পৌঁছায় না।একসময় চোখও শুষ্ক হয়ে যায়।তখন চাইলেও সে চোখ দু ফোটা জল ফেলতে পারে না। ২।'হারাণচন্দ্র' এই চরিত্রটার প্রতি খুব বিরক্তি এসেছে,প্রচন্ড রাগ উঠেছে।এরকম স্বামী থাকার চেয়ে না থাকাই উত্তম।এই চরিত্রের মানুষও আমাদের সমাজে কম নেই।এরা শুধু ভোগ করতে জানে।এদের বিবেকবোধ বলতে কিছু নেই।এই সমস্ত মানুষদের কর্মের ফল আজীবন বয়ে বেড়াতে হয় বাকিদের।ভালবাসা, মায়ার তাড়নায় এদের না যায় ত্যাগ করা না যায় সহ্য করা। ৩।'ললনা' চরিত্রটা আমার কাছের শুভদার মতই ত্যাগী মনে হয়েছে।ললনা চরিত্রটা একটা জীবন্মৃত চরিত্র।বেঁচে থেকেও সে সকলের কাছে মৃত।কোন না কোনভাবে নিজের কাছে কলঙ্কিত,দুশ্চরিত্র।কেউ যদি তাকে কলঙ্কিত করে তবে তা একমাত্র পরিস্থিতি। সহজ সরল ছোট এই নারীটা পরিবারকে সহায়তা করার জন্য কত ভয়াবহ একটা রাস্তা বেছে নিয়েছিল।বারবার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সে সবার দুঃখ ঘুচানোর চেষ্টা করে গিয়েছে।নত হয়েছে নিজের ভালবাসার মানুষটার কাছেও। ৪।সবচেয়ে মায়া লেগেছে 'মাধব' এবং 'সদানন্দর' জন্য।কোন রক্তিম সম্পর্ক ছাড়াই সদানন্দ এই পরিবারটার জন্য নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছিল।এটা প্রশংসার দাবিদার। মনে মনে সে ললনাকে খুব ভালবাসতো সেটা সরাসরি প্রকাশ না পেলেও এড়িয়ে যাবার মতও ছিল না। ছোট মাধবের বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা বারবার চোখকে অশ্রুসিক্ত করেছে। এছাড়া আরেকটা চরিত্রের প্রতি রাগ লেগেছে। সেটা হলো শারদা।শারদার সাথে ললনার প্রণয় ছিল।এরপর ললনার বিয়ে হয়ে যায়।বিধবা হবার পর সে শারদাকে একদিন তাকে বিয়ে করে করুণ এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে বললে শারদা জাতি চলে যাওয়ার ভয়ে আর বাবার আত্মসম্মানেরর কথা চিন্তা করে তাকে ফিরিয়ে দেয়।তারও হয়তো কোন দোষ ছিল না।সবার বিপক্ষে যায় বিয়ে করে সে ললনাকে নতুনভাবে বিপদে ফেলতে চায়নি।ললনার নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ার পিছনে সে নিজেকে দায়ী মনে করতো। তাই ছলনাকে বিয়ে করে এ দায় থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল। সর্বোপরি মন খারাপ করে দেওয়া একটা উপন্যাস। এই উপন্যাসের আলোকে ১৯৮৬ সালে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যা বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। ছবির মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আনোয়ারা, অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজ্জাক, বুলবুল আহমেদ, জিনাত সহ অনেকে।উপন্যাস আর চলচ্চিত্রের কাহিনীর মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন থাকতে পারে।