User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
" গড়াই নদীর তীরে, কুটির খানি লতাপাতা ফুল মায়া রয়েছে ঘিরে বাতাসে হেলিয়া, আলোতে খেলিয়া সন্ধ্যা সকালে ফুটি, উঠোনের কোনে বুনো ফুল গুলি হেসে হয় কুটি কুটি " ছোট বেলায় চতুর্থ শ্রেণী তে থাকতে কবিতাটি পড়েছিলাম। আমার মত সবাই ই হয়তো কবিতাটি পড়েছে। কিন্তু কয়জন জানে, যে কুটিরের বর্ণনা কবি দিয়েছেন,তা সোজন দুলিরই বাড়ির ছবি? এই কাব্য গ্রন্থের শেষে এসে সত্যিই কষ্ট পেয়েছি। আর অভিভূত হয়েছে কবির লেখনী তে। গ্রাম বাংলার সহজ সরল জীবন,আর অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্যের কি অসম্ভব সুন্দর ছবি কবি এই বইতে একেছেন,তা না পড়লে বোঝা সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথ এর অসাধারণ একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃগোরা লেখকের নামঃরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এডিটরঃআনিসুজ্জামান প্রকাশনীঃঅ্যাডর্ন পাবলিকেশন্স মূল্যঃ৩১২ টাকা মাত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর লালন ফকিরের মতাদর্শে বিশাল আকারে মিল ছিল। বলা যায় রবীন্দ্রনাথ লালনের অনেকটা ভাবশিষ্যটাইপ ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের লেখা গানগুলোর একটা বড় ভাগ হল বাউল পর্ব। সেই ভাবের বেশির ভাগ গানই লেখার সময়কাল আর গোরা (১৯০৭-১৯০৯) লেখার সময়কাল একই। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ সেই অচিন পাখিকে চেনার চেষ্টায় আরো বহু গান , কবিতা লিখে গেছেন। গোরা উপন্যাসেও রবিবাবু লালনের সেই ‘সহজ মানুষ’ গানের সুরই বাজিয়ে গেছেন। আমাকে কেউ যদি প্রশ্ন করে কেন এই লোকটাকে আমার এত ভাললাগে? উত্তর খুব সোজা! আর সবকিছু ছাড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ আমার কাছে এই মানুষেরই কবি,তাই!জন্মসূত্রে নিজেকে ভারতবর্ষের পবিত্রজাতি হিন্দু মনে করা গোরা যখন নিজের আসল পরিচয় জানতে পারে তখন তার সমস্ত ভুল ভাঙে। ভুল ভেঙে সে সত্যকে চেনে। সত্য কি? জন্মপরিচয়? নাকি বহুসংশয়ে গড়ে তোলা নিজের বিশ্বাসবোধ? ধর্ম, সমাজ, সম্প্রদায় এসব পাশে ঠেলে রবীন্দ্রনাথ গোরার মধ্য দিয়ে বলে গেলেন সত্যর কথা। সত্য হল মানুষ, মানবসত্য! গোরা তার খোঁজ পায় তার দেশের মাঝে। দেশের সমস্ত মানুষের মাঝে। উপন্যাসের নাম ও মানুষের নামেই। এই গল্প তাই দেশের, দেশের মানুষের। প্রচণ্ড চারিত্রিক দৃঢ়তা নিয়েও শেষ পর্যন্ত গোরা হার মানে। আইরিশ রক্ত শিরায় নিয়ে জন্মানো গৌরমোহন। তবুও সে আমাদের গোরা। খ্রীষ্টান না,হিন্দু না।জন্মপরিচয় মানুষের আসল পরিচয় ঠিক করে দেয় না, মানুষ মানুষই থাকে। অপেক্ষা থাকে শুধু মানুষের উপলব্ধির এটিই এ উপন্যাসের বার্তা। সবারই একবার হলেও পড়া উচিত।
Was this review helpful to you?
or
After completing this book, I feel like a huge storm has calmed down. The tumultuous point-counterpoint, the arrogant urge to follow the rules of society, its necessity and importance had been swirling in mind for days and I was learning with each debate, making my own stand and within minutes Tagore came and broke that. I have read many philosophical novels full of points and counterpoints, for example, The Idiot or Elizabeth Costello; but never have got something so close, never have immersed myself so much into anything. The reasoning, the meticulous description of every detail of human mind have simply blew my mind away. Rabindranath had never got any schooling but his understanding of human psychology is phenomenal. People say ‘Show’; not ‘Tell’. But see here; the poetic rhythm with which Tagore has portrayed the world makes his prose sublime. This is telling at its purest form. The prose feels very sacred and compassionate. After reading this, I find the use of allegory and visuals in 'showing' are very tacky. It was like a great saint was giving lessons for life slowly, calmly, in a straight-forward way. I have read the novel in original Bengali version and would love to read it again and again. This novel, I believe, is the most contextual in present India.
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ গোরা লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধরণঃ চিরায়ত উপন্যাস প্রকাশনঃ অ্যাডন প্রকাশনী পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৩৯৯ . (গোরা মূলত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি রাজনৈতিক উপন্যাস।) . গৌরমোহন একটু অন্যরকম মানুষ। ধর্ম, সমাজ এবং সমাজে ধর্মব্যবস্থা এই নিয়ে গৌরমোহন অরফে গোরার আকর্ষণ অন্যদের চেয়ে বেশ অনেকটা বেশী। শুধু তাই নয়, গোরা ভয়ংকর ইংরেজ বিদ্বেষী! ব্রাহ্মসমাজের প্রতি গোরার এক তীব্র আকর্ষণ। ধর্ম নিয়ে প্রায় বাড়াবাড়ি পর্যায়ের চিন্তাধারা গোরার মাথায়। যেমন, যে খৃস্টান দাসীর কাছে ছেলেবেলায় সে মানুষ হয়েছে, খেয়েছে হঠাৎ করে সেই খৃষ্টান দাসীর হাতে নিজে তো খাবেইনা এমনকি বিনয়কেও খেতে দিবেনা বলে বসে! বিনয়। বিনয়ভূষন। গোরার ছেলেবেলার বন্ধু। স্বভাবে গোরার ঠিক উল্টো। ধর্ম ও সমাজ নিয়ে সে যে ভাবেনা তা না, তবে সেটা গোরার মত বাড়াবাড়ি পর্যায়ের না। ধর্ম ও সমাজ ব্যবস্থার সাথে সাথে বিনয়ের মনে প্রেমের কিছু ছোঁয়াও থাকে। প্রথম দেখাতেই বিনয় ভালবেসে ফেলে একটি মেয়েকে। তারপর চলে যাওয়া আসা সেই মেয়েটির বাড়িতে। কে সেই মেয়ে? ব্যাপারটা এতটুকুও পছন্দ নয় গোরার! কিন্তু একসময় কোন এক কারণবশত গোরাকেও দেখা যায় সেই মেয়েটির বাড়িতে! আনন্দময়ী হচ্ছেন গোরার মা। বিনয়কেও নিজের ছেলের মতই ভালবাসেন। এক আশ্চর্য মহিলা। সমস্ত সমাজ ব্যবস্থাকে দূরে সরিয়ে তিনি বরণ করেন মানবধর্ম! গোরা আর বিনয় একটু ভিন্ন মতাদর্শের হলেও মায়ের কাছে মায়ের ভালবাসার কাছে তারা সমান ভাগীদার! অবশ্য গোরার বাবা কৃষ্ণদয়াল অন্যরকম। ছেলে গোরার সাথে উনি কেমন এক দূরত্ব বজায় রাখেন.... পরেশবাবু একজন সাদাসিধে ন্যায়বান মানুষ। গোরার বাবা কৃষ্ণদয়ালের বন্ধু। সুচরিতাকে লালনপালন তিনিই করে আসছেন ছোট বেলা থেকে। সুচরিতা পরেশবাবুর নিজের মেয়ে নয়, তারপরও যেভাবে তিনি মেয়েটিকে আগলে রেখেছিলেন ভালবেসেছিলেন তাতে সে যে তার নিজের মেয়ে নয় তা বুঝা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়! শান্ত অথচ নিজ সিদ্ধান্তে অনড় একটি মেয়ে সুচরিতা। বেশ ভাল লাগে এই মেয়েটিকে উপন্যাসে। পরেশবাবুর স্ত্রী বরদাসুন্দরী। আধুনিক মহিলা হওয়ার খুব চেষ্টায় থাকেন, সাথে চেষ্টা চালান তিন মেয়েকে নিজের মত করে তুলতে। বড় মেয়ে লাবণ্য, মেঝো মেয়ে ললিতা আর ছোট মেয়ে লীলা। বড় আর ছোট মেয়ে মায়ের মত হলেও মেঝো মেয়ে ললিতা একটু অন্যরকম। কথা কম বলে, শান্ত চলাফেরা। দিদি সুচরিতার সাথে অবশ্য খুব ভাব। যাইহোক, পরেশবাবুর বাড়িতে বেশ আসর জমে যায় তর্কবিতর্কের গোরা বিনয় সুচরিতা ললিতাদের। ধীরে ধীরে আসে চিত্রে ভিন্ন এক মোড়! ললিতা হঠাৎ করেই উপন্যাসের এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বনে যায়! সে বুঝতে পারে মনে মনে যাকে সে ভাবতে শুরু করেছে তার সাথে এই সমাজের অনেক মানুষই ভাল ভাবে মেনে নিতে পারবেনা তার সম্পর্ক। বিনয়ের মাঝেও হঠাৎ করে আরেক পরিবর্তন দেখা দেয়.... তার চিন্তা জুড়ে যে মেয়েটি ছিল এতদিন হঠাৎ করেই সে জায়গা যেন দখল করে নেয় অন্য কেউ। সুচরিতার মাঝেও লাগে পরিবর্তনের আঁচ! হারানবাবু! হারানবাবুর সাথে বিয়ে মোটামুটি ঠিক সুচরিতার। সুচরিতার চলাফেরা চিন্তাধারা হঠাৎ করেই অন্যরকম লাগে হারানবাবুর কাছে। তিনি এর জন্য দায়ী করে বসেন সুচরিতার পিতৃসম মানুষ পরেশবাবুকে! ধীরে ধীরে হারানবাবু নামক এই মানুষটার প্রতি বৈরি ভাব তৈরি হত সুচরিতার মাঝে.... কেন? কার জন্য হারানবাবুকে ভাল লাগেনা সুচরিতার? কার চিন্তায় বিভোর হঠাৎ সুচরিতা... এক পর্যায়ে আগমন ঘটে সুচরিতার মাসী হরিমোহিনীর। বিনয়ের সাথে খুব ভাব হয় মাসীর। পরেশবাবুর স্ত্রী বরদাসুন্দরী এমনিতেই সুচরিতাকে পছন্দ করেননা তারপর সুচরিতার মাসীর আগমন সংসারে লাগায় অশান্তির আগুন। এক পর্যায়ে পরেশবাবুর আর সুচরিতা দুজনের ইচ্ছাতেই সুচরিতা মাসীকে নিয়ে উঠে আলাদা বাড়িতে। ধীরে ধীরে পরিবর্তনের আঁচ লাগে মাসীর মাঝেও! গোরাকে উনার বেশ অপছন্দ। অন্যদিকে সুচরিতা মনে মনে গুরু ভেবেই সাধনা করে আসছে গোরাকে। এবার সুচরিতার চিন্তাধারার উপর কতৃত্ব ফলাতে শুরু করেন হরিমোহিনী!...... মহিম, গোরার ভাই, মেয়ে শশীর সাথে বিয়ে দিতে চান বিনয়ের। কিন্তু বিনয় তখন অন্য কারো চিন্তায়। কার? ফাটল ধরে ছোট বেলার দুই বন্ধু গোরা এবং বিনয়ের মধ্যে... কেন? কেনই বা গোরার বাবা আর গোরার মধ্যে একটু দূরত্ব.... আর শেষমেশ কি এমন চমকপ্রদ ইতিহাস বের হয়ে আসে গোরার জীবনের? একটা সময় কাহিনীতে আসে নাটক করার প্রবণতা। বরদাসুন্দরী তার তিন মেয়ে আর বিনয়কে নিয়ে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়েন নাটক করার জন্য। বেশ মজা লাগে এই দিকটা! বিনয়কেও দেখা যায় খুব আগ্রহের সাথে নাটক করতে! চলতে থাকে.... ধীর গতিতে গড়ায় উপন্যাসের কাহিনী অন্যদিকে। গোরা আর বিনয়ের সম্পর্ক কি ঠিক হয় শেষ পর্যন্ত? কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিন্তাধারা থেকে কি বের হয়ে আসতে পারে গোরা? নাকি সেই অন্ধ গোঁড়ামিতেই থেকে যাবে গোরা............ . রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লিখা আমার পড়া প্রথম উপন্যাস হচ্ছে #গোরা। এই একটা বইয়েই করল বাজিমাত! এই বই পড়ার পর থেকেই রবীন্দ্রনাথের বইয়ের প্রতি শুরু হয় ভাল লাগা :) যদিও বইয়ের রাজনৈতিক ব্যাপার গুলো বুঝতে একটু সময় লাগে, বেশ বিস্তারিত ভাবেই আলোচনা রয়েছে বিভিন্ন সমাজ নিয়ে, তারপরেও উপন্যাসের মূল বিষয়টা ধরতে এতটুকু সময় লাগেনা। চমৎকার একটি বই! যারা এখনও পড়েননি এখনও তারা অবশ্যই পড়ে নিবেন :) হ্যাপি রিডিং :)
Was this review helpful to you?
or
বিনয় আর গোরা ছোট্টবেলার বন্ধু ।ছোটবেলায় মা-বাবা হারানোর পর গোরার মা আনন্দময়ীকেই নিজের মা বলে মনে করে ও।ছোটবেলা থেকেই বিনয়ের উপর গোরার প্রভাব অস্বাভাবিক মাত্রায় বেশি।সেখান থেকেই গল্পের শুরু। গোরা একজন কট্টরপন্থী ভারতীয় এবং হিন্দু।একইসাথে প্রবল ব্রিটিশ বিরোধী।এই উপন্যাসে তাঁর মাঝে উগ্র জাতীয়তাবাদ দেখতে পাওয়া যায় ।প্রবল তেজদীপ্ত কন্ঠ আর দৃঢ় মনোবলের মিশেলে গোরা চরিত্র অনন্য।অন্য ধর্ম বা জাতির ছিদ্রান্বেষনে গোরা যতটা আগ্রহী,নিজ ধর্মের জাতপ্রথার প্রতি ততটাই দুর্বল।তার কাছে সবার উপরে সামাজিক সংহতি রক্ষা করে সমগ্র হিন্দুজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠত্বে প্রমাণ করা।ছোট জাতের ছোঁয়া জল সংস্কারবশত পান না করলেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে গোরা উচ্চকন্ঠ এমনকি জেলে যেতেও প্রস্তুত!! নারী জাতিকে গোরা চিরজীবনই সমাজের বাইরে কল্পনা করে এসেছে,কিন্তু বিনয়ের কথা তার কল্পনাকে বাস্তবের সাথে মেলাতে বাধ্য করলো।তখন দৃশ্যপটে হাজির সুচরিতা। ক্ষণিকের পরিচয়ে বিনয় পরেশবাবুর পরিবারে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠল।জাতে ব্রাহ্ম, পরেশবাবুর সাথে মেলামেশা গোরা একেবারেই মেনে নেতে পারে নি, বিনয়কে ঐ জাল থেকে ছিন্ন করতে গোরা উঠেপড়ে লাগল।পরেশবাবুর সাথে তর্ক করে যুক্তিযুদ্ধে পরাজিত করতে পরেশবাবুর বাড়িতে গেল গোরা,তেজস্বী ভাষনে জেরবার করলো পরেশবাবুকে,কিন্তু ওর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকা পরেশবাবুর মেয়ে সুচরিতার ঘনকালো চোখ গোরাকে কী বলতে চায়?? একদিকে বন্ধুত্ব অন্যদিকে প্রেম নিয়ে টানাপোড়েনে বিনয়।চিরজীবনই বিনয় নিজের মুখ দিয়ে গোরার কথা বলে গেছে,কিন্তু সত্যিই কি ঐ কথাগুলোতে বিশ্বাস করে ও??ললিতার সাথে পরিণতির বাঁধা শুধু গোরা নয়,হিন্দু-ব্রাহ্ম সমাজ ব্যবস্থাও।বিনয় কি পারবে গোরার ছায়া ছেড়ে নিজের আলোতে আলোকিত হতে??বিনয়-ললিতার প্রেমকাহিনী কি পূর্ণতা পাবে?নাকি আরও একবার তথাকথিত সমাজব্যবস্থার কাছে হেরে যাবে ভালোবাসা?? পুরো উপন্যাস বিনয়কে ঘিরে আবর্তিত হলেও নেতৃত্বটা ছিলো গোরার হাতেই।গোরার মতবাদ আপাতদৃষ্টিতে কট্টর মনে হতে পারে,বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে,কিন্তু যুক্তির বিচারে ফেলে দেওয়ার উপায় নেই।সুচরিতা প্রশ্নেও বারবার লেখক গোরাকে দৃঢ় রেখেছেন। বিনয়কে লেখক পুরো উপন্যাসের কোথাও পায়ের তলে মাটি দেন নি ।বরং সবসময়ই তাকে একজন দিধান্বিত চরিত্রই মনে হবে,কিন্তু লেখক সময়ের সাথে সাথে তাকে ভিন্ন ছাঁচে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন,যাতে তিনি সফল!! ললিতা পুরো উপন্যাসেই একটা প্রতিবাদী চরিত্র ।বিনয়কে গোরার ছায়া থেকে বের করে আনতে যেমন তার কঠোর রূপ দেখি,আবার বিনয়ের জন্য তার প্রেমময়ী রূপও দেখি।পুরো উপন্যাসেই ললিতার স্পষ্টবাদী আচরণ পাঠককে আকৃষ্ট করতে বাধ্য । সুচরিতা একজন দ্বিধাযুক্ত চরিত্র ।গোরাকে যেমন সে ভুলতে পারে না,তেমনি সমাজের সংস্কার ভাঙতেও ললিতার মতো সাহসী হতে পারে না।তবে সুচরিতার মধ্যে আমরা চিরন্তন বাঙালি নারীর পরিচয় পাই। গোরার মা আনন্দময়ী এবং লীলা-ললিতা-সুচরিতার বাবা পরেশ খুব সম্ভবত এই উপন্যাসের সবচেয়ে উদার এবং আলোকিত চরিত্র ।আনন্দময়ী শুধু গোরার মমতাময়ী মা নন,ছোটবেলায় পিতা-মাতা হারানো বিনয়কেও তিনি নিজের ছেলের মতোই দেখেন। জাত-পাত অনেক আগেই ছেড়েছেন,মানুষ তাকে খ্রিস্টান বললেও তিনি কিছু মনে করেন না। কিন্তু কেন তার এই পরিবর্তন??রহস্যই থাকুক,উদঘাটনের দায়িত্ব পাঠকের। পরেশবাবু তার মেয়েদের সবসময়ই বাইরের মানুষের সাথে মেশার সুযোগ করে দিয়েছেন।একজন ব্রাহ্ম হয়েও প্রতি পদে পদে যে উদারতা,যে প্রাজ্ঞতা আর জ্ঞানের পরিচয় দিয়েছেন,তা তৎকালীন সময় বিবেচনায় এককথায় অকল্পনীয়।সংযম,ত্যাগ আর পরিমিতবোধে অনন্য এই চরিত্রকে গোরাও সম্মান করতে বাধ্য হয়েছে।সুচরিতা, বিনয়,ললিতার যখনই সমস্যায় পড়েছে,তখনই পরেশবাবু সমাজ ,ব্যক্তি, ধর্ম,পরিবারের উর্ধ্বে উঠে সুন্দর সমাধানের পথ বাতলে দিয়েছেন।আজকের এই চরম হানাহানির যুগেও আমাদের সমাজে যদি পরেশবাবুর মতো চরিত্র থাকত,তবে পৃথিবীটা আরও সুন্দর হতো,শান্তিময় হতো সন্দেহ নেই। পুরো উপন্যাসটাই সুখপাঠ্য।এখানকার প্রতিটা চরিত্রই আজকের এই বর্তমান যুগেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।রাজনৈতিক উপন্যাসের আড়ালে রবীন্দ্রনাথ মানুষ,সমাজ আর ধর্মের যে সংঘাত এখানে তুলে ধরেছেন,তা এককথায় অনন্য।সংঘাতের সমাধানের পথটাও বাতলে দিয়েছেন অসাধারণভাবে। কী সেই পথ??জানতে হলে পড়ে ফেলুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অসাধারণ উপন্যাসটি।