User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইটা পড়ে আমার মনে হয়েছে শরৎচন্দ্রের 'পল্লীসমাজ' আর "Alice's Adventures in Wonderland" এর ধারার মিশ্রণে একেবারে অন্যরকম একটা উপন্যাস। লুইস ক্যারোলের উপন্যাসটা ১৮৬৫ তে প্রকাশিত হয়েছিলো এবং আমার মনে হয়েছে ত্রৈলোক্যনাথ অনেকটাই প্রভাবিত হয়েছেন আ্যলিসের গল্পে। ১৮৮১ তে বিলেতে গিয়ে ইউরোপের নানা দেশে ঘুরেছেন এবং অনেক ভাষার পারদর্শী ছিলেন তিনি। আ্যলিসের বই নিশ্চয়ই পড়া ছিলো তাঁর। তবে কল্পজগতে এক তুরুণীর ঘুরে বেড়ানো, নানান প্রাণীর, চরিত্রের আবির্ভাব, তাঁদের সাথে নানান ঘটনার থিমটাকে সম্পূর্ণরূপে আমাদের দেশীয় স্বাদে পরিবেশণ করা হয়েছে এ উপন্যাসে। জানি না আর কোনো পাঠক বা সমালোচক এই মিল খুঁজে পেয়েছেন কিনা। বইটার দুটি অংশ। এক অংশে সেই কল্পরাজ্য আর বাকিটা বাস্তবতার রাজ্য । কল্পনা ও বাস্তবতার অংশ আলাদা হলেও ধারাবাহিকতা আছে। ঠিক এই ধারার কোনো বাংলা উপন্যাস আমি আগে পড়িনি। কোনো অধৈর্য পাঠক যদি শুধু একটি অংশ পড়তে চান, তবুও পড়ার মতো বই। সব মিলে মাত্র ১৬৭ পৃষ্ঠা। আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছে লেখকের ভাষার পারদর্শীতা। ব্যঙ্গাত্মক স্টাইলে কঠিন বাস্তবতাকেই শুধু তুলে ধরেননি, হাসাতেও বাধ্য করেছেন। তখনকার সমাজে ধর্মান্ধতাকে ব্যবহার করে কিভাবে উদ্দেশ্য হাসিল করা যেতো, সম্পূর্ণ আজব বা ridiculous ব্যাপারকেও প্রতিষ্ঠিত করে ফেলা যেতো তাঁর বর্ণনা ভাষার চাতুর্য দিয়ে লেখক তুলে ধরেছেন চমৎকারভাবে। দুঃখজনক সত্যি এই যে বর্তমান প্রেক্ষাপটেও আমাদের উপমহাদেশের ঘটনাবলীর সাথে মিল পাবেন। কঙ্কাবতীর প্রচলিত উপকথাকে খুব ছোট করে লিখে বইয়ের ভূমিকা ও পটভূমি তুলে ধরেছেন। " কথা সম্ভব নয়। যাহা সম্ভব, তাহা আমি বলিতেছি।" রূপকথা বা উপকথাকে নতুন করে বলার সাহিত্যিক ধারাটি এখন জনপ্রিয়, তখন কতোটা ছিলো আমি জানি না। এরপর সেই বাঙালি সমাজের বর্ণনা যেখানে রামতনু রায় একজন বংশজ ব্রাহ্মণ এবং নরক যাওয়া ঠেকানোর জন্য সমস্ত অবশ্য কর্তব্য তিনি পালন করেন। ধর্মরক্ষার যুক্তি দিয়ে তিনি পাঁচশ এবং হাজার টাকা নিয়ে সত্তর এবং পঁচাত্তর বছর বয়সী পাত্রের কাছে বড় দুই মেয়ের বিয়ে দিলেন, যারা অবশ্যম্ভাবী ভাবে বিধবা হয়ে ঘরে ফিরেছে এক বছরের মধ্যেই। ('যাহা সম্ভব' তার এই বর্ণনা পড়ে আমার মনে হচ্ছে এ কিভাবে সম্ভব?)। এই তনু রায়ের ছোট মেয়ে কঙ্কাবতী। কঙ্কাবতীর ভাগ্যেও কি একই ঘটনা ঘটবে? খ্রিস্টানদের তৈরি বরফ খাওয়ার কারণে ক্ষেত্রকে একঘরে করে যে সমাজ, তাঁর চরম বাস্তব বিবরণের মধ্যেই হঠাৎ করেই কল্পলোকের মতো ঘটনা ঘটতে থাকলো। উপকথার অসম্ভব গল্প খন্ডাতে গিয়ে এ কোন রূপকথা ফাঁদছেন লেখক, পাঠক দ্বিধায় পড়ে যেতে পারেন। পরে সেটা পরিস্কার হবে৷ কল্পলোকের চরিত্রগুলো চমপকপ্রদ। কঙ্কাবতীকে বন্ধু বানানো মশা "রক্তবতী", ইংরেজি বলে জাতে উঠতে চাওয়া ব্যঙসাহেব, ভুত-কোম্পানি, ভুতনী নাকেশ্বরীর গল্পের মধ্যে আবার বাস্তব অনেক চরিত্রের সাথে মিলও পাওয়া যাবে। কিছু উদাহরণ দিচ্ছি বইটির ভাষার ও বর্ণনার। " আজকাল আর সহমরণ প্রথা নাই বলিয়া, ইনি মাঝে মাঝে খেদ করেন। কারণ, তাহা থাকিলে ভগিনী দুইটি নিমেষের মধ্যে স্বর্গে যাইতে পারিতেন। বসিয়া বসিয়া মিছামিছি বাবার অন্নধ্বংস করিতেন না"। " ব্যাঙ এদিক ওদিক চাহিয়া দেখিলেন। দেখিলেন যে, কেহ কোথাও নাই। কারণ, লোকে যদি শুনে যে, তিনি বাঙ্গালা কথা কহিয়াছেন, তাহা হইলে তাঁহার জাতি যাইবে, সকলে তাঁহাকে "নেটিভ' মনে করিবে। যখন দেখিলেন, - কেহ কোথাও, তখন বাঙ্গালা কথা বলিতে তাঁহার সাহস হইলো"। মশা বলিলেন, "শুনো মনুষ্যশাবক, এই ভারতে যতো নরনারী দেখিতে পাও, ইহারা সকলেই মশাদিগের সম্পত্তি।" ভিন্নধারার এবং উপভোগ্য কিছু পড়তে চাইলে বইটি পড়তে পারেন। প্রকাশনার মানঃ লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর যে কোনো বইয়ের কপিরাইট ফ্রি হয়ে যায়। তাই যে কোনো প্রকাশক বের করতে পারে ধ্রুপদী সাহিত্যের বই। এটি প্রকাশ করেছে আ্যডর্ন পাবলিকেশন ২০০৯ সালে। বইয়ের মলাট, কাগজ, ছাপার মান ভালো এবং অক্ষর পড়ার সুবিধামতো বড়ো আর স্পষ্ট। এ ছাড়া আর তেমন ভালো কিছু বলার পেলাম না। মূদ্রণে কয়েকটি ভুল পেয়েছি। বইটির সম্পাদক হিসাবে নাম দেওয়া আছে "আনিসুজ্জামান" কিন্তু ঠিক কি সম্পাদনা করা হয়েছে তা বুঝলাম না। বইয়ের ভূমিকায় মাত্র চারটি অনুচ্ছেদে দেড় পাতায় লেখক পরিচিতি ও বইয়ের পরিচিতি সেরে ফেলা হয়েছে। ভীষণরকমের দায়সারা কাজ এবং অমার্জনীয় অপরাধ বলে আমি মনে করি। সম্পাদনার কাজ এটুকুতেই শেষ হয়ে যায় না। আমি অনলাইনে একটু খুঁজেই যা জানলাম, লেখকের জীবন ও তাঁর সাহিত্যকর্ম অনেক বিচিত্র এবং প্রচুর তথ্য পাঠকের জন্য তুলে ধরার সুযোগ ছিলো। উপন্যাসটি, তাঁর পটভূমি ও সমালোচকদের মতামত যোগ করাও আবশ্যিক ধ্রুপদী সাহিত্যের ক্ষেত্রে। ফ্রি কপিরাইটের সুযোগ নিয়ে কোনকিছু হুবহু ছেপে দিলে প্রকাশক আর ছাপাখানার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না।
Was this review helpful to you?
or
ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় সাহিত্য চর্চা করেন পরিণত বয়সে। তবে তার স্নগে সঙ্গেই সিদ্ধিলাভ করেন বাংলা সাহিত্যের রঙ্গ ব্যঙ্গের একজন শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা রূপে। ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় যখন সাহিত্য ক্ষেত্রে প্রবেশ করেন, তখন বাস্তব সমাজজীবনের চেয়ে রোমান্সের কল্পনা রঙ্গিন জগত বাঙালি লেখক ও পাঠককে মাতিয়ে রেখেছিলো। বঙ্কিমচন্দ্র প্রদর্শিত ঐতিহাসিক রোমান্সের পথে ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় অগ্রস্র হননি। তার অনুসরণে সামাজিক উপন্যাস লিখতেও প্রবৃত্ত হননি। বাস্তব জীবনকে তিনি গভীর ভাবে অনুধাবন করেছিলেন সন্দেহ নেই কিন্তু তার মধ্যে এম্ন অনেক কিছু প্রত্যক্ষ করেছিলেন যা মনুষ্যোচিত বলে মানতে পারেননি। ফলে একি সঙ্গে তিনি বিদ্রুপ বাণ হেনেছেন ।আবার ভুত প্রেত ও কাল্পনিক জীব জন্তু এর এমন এক জগত নির্মাণ করেছেন যার অভিনবত্ব পাঠককে বিশ্বাস অবিশ্বাস এর মাঝামাঝি আটকে রাখে তার প্রথম রচনা কঙ্কাবতীর পরিচয় তিনি নিজেই দিয়েছেন উপকথার উপন্যাস বলে। রুপকথার জগত থেকে ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় আমদানি করেন কঙ্কাবতীকে। তার ভাই একটি আম এনে ঘরে রেখে দিলে বলে, সেটা যেন কেউ না খায়, যে খাবে শে তাকে বিয়ে করবে। কঙ্কাবতী এ কথা জানত না। ঘরে আম দেখে শে খেয়ে ফেলে।ভাই তখন তাকেই বিয়ে করবে বলে ঘোষণা করে। লজ্জিত ও নিরুপায় কঙ্কাবতী এক নৌকো নিয়ে খিড়কির পুকুরে ভাসলও। রূপকথার এই সুত্র ধ্রে উপন্যাসের শুরু। এই সুচনাটুক ছাড়া উপন্যাসের প্রথম ভাগে বর্ণিত হয়েছে বাস্তব জীবনের কথা। সে বাস্তবে অবশ্য ভন্ডামি, অমানবিকতা ও ক্রূরতার প্রাধান্য। দ্বিতীয় ভাগে লেখক আমাদের নিয়ে যান রুপকথার কল্পজগতে। তারপর আমরা যখন এ কাহিনীকে বড়োদের রূপকথা বলে সাব্যস্ত করি। ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় আমাদের নিয়ে যান বাস্তবলোকে ফিরিয়ে। আমরা জানতে পারি এতক্ষন যাকে আমরা কল্পলোকের সামগ্রী বলে গণ্য করেছিলাম আসলে তা জ্বর বিকারের ঘোরে দেখা এক স্বপ্ন জগতের ইতিবৃত্ত। এই সুযোগে লেখক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় বাঙালি সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত বিশ্বাস ও অন্ধ সংস্কারকে আঘাত হেনেছেন এবং বিদ্রুপ করেছেন তাদের যারা সবকপোল্কল্পিত কথা কে শাস্ত্র বলে চালায় তাদের