User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
একটা বই পড়া হয় প্রধানত মানসিক প্রশান্তির জন্য। একটা বই পড়া শুরু করেছি তাই শেষ করতে হবে এমন মানসিকতা নিয়ে বইটি পড়তে হলে, সেই বই পড়ার অভিজ্ঞতাকে কখনোই আনন্দদায়ক বলা যায় না। আর সে বই পড়াকে প্রকৃত বই পড়াও বলা যায় না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে দশটা বইয়ের মধ্যে নয়টাই হয় এমন যার শুরুটা চমকপ্রদ হলেও, বইটি মাঝপথে এসে খেই হারিয়ে ফেলে বইটি। কিন্তু আশার কথা, অনেকদিন বাদে এমন একটা বই পড়লাম যেটি শুরু থেকে শেষ অবধি সমানভাবে আমাকে বইয়ের কাহিনীর সাথে একাত্ম করে রেখেছিল এমনকি বইটি পড়ার পর বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে গেলেও, ভাল লাগার যে অনুভূতি তা বিন্দুমাত্র রহিত হয়ে যায়নি। দেদিপ্যমান রয়েছে মনের মণিকোঠায়। যেই বইটি নিয়ে এতক্ষণ কথা বলছিলাম, সেটি বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা পাঠকপ্রিয় লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের 'ছোটকুমার'। বইটি পড়ার পর থেকে এক অদ্ভুত ভালো লাগায় বিমোহিত হয়ে রয়েছি আমি। কাজীদা বইটি লিখেছেন বটে ফ্রান্সেস হডসন বার্নেটের 'লিটল লর্ড ফোন্টলেরইয়'-এর ছাড়া নিয়ে, তবু কাজীদার অসামান্য জাদুকরী লেখনীতে উপন্যাসটি এক অন্য মাত্রায় পৌঁছুতে সক্ষম হয়েছে। মূল লেখাটি আমি পড়িনি তারপরও সাহস করে বলতে পারি, মূল লেখার তুলনায় কাজীদার 'ছোটকুমার' কোন অংশেই কম নয়। হয়তবা এমনও হতে পারে কাজীদার যাদুতে 'ছোটকুমার' এর মূল উপন্যাসকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে! বইটি পাঠপূর্বক ভাল লাগা থেকে যা বলছি, অনেকের কাছেই তা অতিকথন ঠেকতে পারে। কিন্তু যাদের অমনটা মনে হচ্ছে তাদের শুধু একটা কথাই বলব, নিজেরাও উপন্যাসটি পড়ে দেখুন তারপর দেখবেন আপনাদের মুখ থেকেও একই ধরণের কথাই বেরুচ্ছে! আলোকপাত করা যাক এই উপন্যাসের কাহিনী সম্পর্কে। এই উপন্যাসে দেখা মিলবে কলি নামের এক সাত বছরের বালকের। এই বালকটি তার সমবয়সীদের তুলনায় একেবারেই আলাদা। সে মানুষকে ভালোবাসে, মানুষের কথা ভাবে, মানুষের কষ্টে ব্যথিত হয়, চেষ্টা করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবার ও তাদের সাহায্য করবার। মাত্র সাত বছর বয়স হওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পর্কে এবং জীবনের বাস্তববাদিতা সম্পর্কে সে অবগত না হলেও, কোনটা ঠিক কোনটা ভুল, কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায় এসব ব্যাপারে সে বেশ ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল। আর তাকে এসব শিক্ষা যিনি দিয়েছেন তিনি হলেন কলির মা। মা আর কলি - এই দুজনের তাদের ছোট্ট সংসার। কলির বাবা মারা গেছেন কলি যখন অনেক ছোট তখন থেকেই। বাবার ভালোবাসা কলি পায়নি তবে মা পূরণ করে দিয়েছেন সেই ভালোবাসা। ভালোবাসা পেয়েছে কলি আরও অনেকের কাছ থেকেই। তাদের সাথে কলির রক্তের সম্পর্ক নাই বা থাক, আছে আত্মার যোগাযোগ। বাসার কাজের মেয়ে, তার বোন ও বোনের স্বামী থেকে শুরু করে অন্য পাড়ার এক বুটপালিশওয়ালা কিংবা পাড়ার বদমেজাজি মুদি দোকানদার, সবার সাথেই কলির দারুণ খাতির। এদের সবাইকে নিয়ে কলির স্বপ্নের জগত। কিন্তু কলির জীবনে রয়েছে আরও একটা জগত যার কথা কলি কখনো স্বপ্নের ভাবেনি। তার বাবা ছিলেন বাংলাদেশের এক বিশাল জমিদারের সন্তান। কলির বাবা যখন পরিবারের বিশেষ করে তার জমিদার বাবার অমতে কলির মাকে বিয়ে করেছিলেন, তখন থেকেই তাদের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে কলির বাবা-মার। কলির দাদা আজও খুবই বিরূপ ধারণা পোষণ করেন কলির মা সম্পর্কে। কিন্তু তারপরও তিনি নিরুপায়। কলির বাবা ও দুই চাচা মারা যাওয়ায় এখন কলিই তার দাদার জমিদারির একমাত্র উত্তরাধিকার। এজন্য কলি ও তার মাকে এক অদ্ভুত শর্তে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিতে কোলকাতায় লোক পাঠালেন কলির দাদা। কলির মা ও কলি সম্মত হল যেতে। বাংলাদেশে গিয়ে দাদার কাছে থাকতে শুরু করল কলি। কিন্তু তার মায়ের জায়গা হয়নি রাজপ্রাসাদে তাই তাকে থাকতে হয় অন্যখানে। সব কষ্ট হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন কলির মা। কলিও চেষ্টা করছে। আর ওদিকে কলি তার নিষ্পাপ সরল মন দিয়ে বেধে ফেলতে শুরু করেছে তার দাদার একগুঁয়ে, বদমেজাজি মনকে। কলিকে কাছে পেয়ে নতুন জীবন পেয়েছেন যেন তিনি। এতদিন তার থেকে যেসব কাজ আশা করা ছিল নিতান্তই অপরাধ, কলির মুখের দিকে চেয়ে সেসব হাসি মুখে করতে শুরু করলেন তিনি। কলির ভালোবাসার জালে আটকে পড়ে অত্যাচারি জমিদার থেকে দারুণ মানবতাবাদী এক আদর্শ মানুষে পরিণত হলেন তিনি। সবকিছুই কাটছিল ভালমতই। শুধু কলির মাকে মেনে নেননি তিনি। একসময় কলির মাকেও তিনি মেনে নেবেন, বরণ করে নেবেন পরম ভালোবাসায়। কিন্তু তার আগে পাড়ি দিতে হবে কাহিনীর এক চরম চড়াই উতরাই। এমন কিছু অবিশ্বাস্য ঘটনার অবতারণা ঘটবে যা নাড়িয়ে দেবে উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রকে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটাই মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে একটি সুখী-সমাপ্তির। অসাধারণ কাহিনী তা বলাই বাহুল্য। অসাধারণত্ব আরও বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে কাজীদার লেখনীতে। কাহিনী খুবই গতিশীল, ভাষা সাবলীল ও প্রাণবন্ত। চরিত্রসমূহের চিত্রায়ন একদম নিখুঁত ও সুস্পষ্ট। শুধু একটা জিনিসই বিচিত্র লেগেছে তা হল সাত বছরের কলির মুখে প্রায়ই লেখক যেসব কঠিন কঠিন সংলাপ বসিয়েছেন তা রীতিমত অবিশ্বাস্য। একটা সাত বছরের ছেলে কখনোই কঠিন কঠিন শব্দ ব্যবহার করে জটিল বাক্য বলবে না। হ্যাঁ, তার বক্তব্যে গভীরতা থাকবে অবশ্যই তবে সেই গভীরতার বহিঃপ্রকাশ ছোট ছোট কিন্তু শক্তিশালী বাক্যের ব্যবহারের মাধ্যমেও ঘটানো যেত। যাইহোক, সবমিলিয়ে 'ছোটকুমার' উপন্যাসটি পুরো দশে দশ পাওয়ার মত একটা কিশোর উপন্যাস। কিশোর সাহিত্যের অনবদ্য সংযোজন। 'ক্লাস এইট' ও 'ইশকুল বাড়ি'র মত এই বইটিও পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।