User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ছোটবেলার স্মৃতি কি এক ধরণের ভুত, যা আজাদ-কৈশোর আজীবন তাড়িয়ে বেড়ায় আমাদের-কে? ওঝা হয়ে তন্ত্রে-মন্ত্রে সেই স্মৃতিকে বশে এনে, আরেকটু এগিয়ে তাকে পণ্যে পরিণত করাটা কি কারো বিশ্বাস ভাঙা,— অন্তত তাদের, যাদের ঘিরে স্মৃতিটুকু তৈরি হয়েছিল? স্মৃতি কি কারো একান্ত সম্পদ নয়, যদি একই ঘটনার স্মৃতি জনে-জনে ভিন্ন হয়? না কি একই ঘটনা নিয়ে দু'জনের স্মৃতি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ কেবল? ইমতিয়াজ সজীবে'র প্রথম উপন্যাস, বাতিঘর প্রকাশনী থেকে ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত "মলয় বাতাসে” পড়তে পড়তে এই প্রশ্নগুলো একজন পাঠকের চিন্তাপটে মনের গহীন হতে বুদ্বুদের মত ভেসে ওঠা অবশ্যম্ভাবী, এবং সাথে আরো কিছু আন্দোলন তারা উপরিতলে তৈরি করে, কিন্তু তা উল্লেখের আগে উপন্যাসের প্রেক্ষাপট অল্পবিস্তারে বর্ণনা করা হয়তো আলোচনাকে সহজতর করবে। গল্পগুলো মুলতঃ তিন জনের, কিন্তু যে জন-কে ঘিরে গল্পরা দানা বেঁধে একটি একক উপাখ্যানে পরিণত হয়েছে, সে মাহিন, একটি বিজ্ঞাপন এজেন্সির কপিরাইটার, যার সাথে ঘটনাচ্ছলে পরিচয় হয় রিমা'র,— তাদের মিথষ্ক্রিয়ায় গল্প এগোতে থাকে; সমান্তরালে চলতে থাকে আরো একজনের গল্প, তানিয়া, একজন শিক্ষিকা ও একলা মায়ের দৈনন্দিন জীবনের গল্প, যার সাথে মাহিনের পরিচয় হয়েছিল সুদূর শৈশব আর কৈশোরের সন্ধিক্ষণে, যোগাযোগ-ও বিচ্ছিন্ন হয়েছিল ঐ কৈশোরেই। গল্প এগোতে থাকে, কিন্তু তার পথে প্রায়-ই হানা দেয় স্মৃতি, কখনো তা মাহিনের জবানিতে, কখনো বা তানিয়ার জবানিতে: একি ঘটনা, তবে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। মাহিনের মাঝে একটা অপরাধবোধ কাজ করে, কৈশোরের স্মৃতিকে বিজ্ঞাপনের গল্প হিসেবে ব্যবহার করাতে, অথবা তখন ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা নিয়ে, যখন সে ক্লাস ফাইভে পড়তো, আর তানিয়া সিক্সে। তানিয়ার প্রতি তার এক অসঞ্জায়িত অনুরক্তির স্মৃতি তার কর্মজীবনে ফিরে ফিরে আসে, যেমন তার জীবনে ফিরে ফিরে আসে রিমা। রিমা একজন মুক্ত আত্মা, তার স্মৃতির শেকল থেকে গল্পটি মুক্ত। তানিয়া তার আপন মেয়ের জীবনে নিজের শৈশবের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়, রোমান্থন করতে থাকে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি। শেষতক কিছু ঘটে না,— সেভাবে-ই শেষ হয়, যেভাবে একজন সাধারণ মানুষের জীবন প্রতিদিন পার হয়, সমস্তদিনের কাজ শেষে সে বাড়ি ফেরে, এবং অবসর পেলে শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি রোমান্থন করে। "মলয় বাতাসে”-ও এমন, হয়তো কয়েকটি ভিন্ন পেশার মানুষের, ভিন্ন প্রেক্ষাপটের, কিন্তু তাদের গল্প আমাদের-ই ঘটনাহীন দৈনন্দিন জীবনের প্রতিফলন। এই ঘটনাহীনতা-ই আর পাঁচটি ঘটনাবহুল উপন্যাস থেকে "মলয় বাতাসে”-কে আলাদা করেছে; পাঠকের জীবনের আরো নিকটবর্তী করে তুলেছে। বুদ্ধদেব বসু যেমন বলেছিলেন, “বাঙালির জীবনে ঘটনার ক্ষেত্র অনধিক, বৈচিত্রের সম্ভাবনা সীমাবদ্ধ, সেইজন্যেই বাংলা উপন্যাসের ঝোঁক প্রথম থেকেই হওয়া উচিত ছিল মনস্তত্ত্বের দিকে, কেননা জীবনের পারিপার্শ্বিক যতই সংকীর্ণ হোক, মানুষের মনের রহস্যের কোনোদিন কোনোখানে সীমা নেই।” ইমতিয়াজ সজীবের মলয় বাতাসে উপন্যাসটি বুদ্ধদেবে'র সেই মানুষের মনের রহস্য সন্দর্শনের পথে আরেকটি পদক্ষেপ। উপন্যাসটি আরো অনেকভাবেই আমাদের সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে: প্রায়-ই গণকৃষ্টি(pop culture)র বিভিন্ন উপাদানের উল্লেখ, কখনো বিষাদময় গানের চরণ, কখনো হালের জনপ্রিয় লেখকের বই, অথবা নব্বইয়ের দশকের রসময় গুপ্তের ঘোর শৃঙ্গার রসসমৃদ্ধ রচনার, কখনো বা সিনেমার গল্প। খোদ উপন্যাসের নাম-টাই ডি. এল. রায়ে'র একটি গান থেকে ধার করা, যেটা নিয়ে উপন্যাসেরও চরিত্ররাও এক পর্যায়ে আলোচনা করতে থাকে। হারুকি মুরাকামি এই সমগ্র উপন্যাসটির প্রাণ, তাঁর নরওয়েজিয়ান উড উপন্যাসটির কথা ঘুরে ফিরে "মলয় বাতাসে"র চরিত্রদের কথোপকথনে কয়েকবার-ই এসেছে। ইমতিয়াজ সজীবে'র গদ্য, যদিও খুব-ই সরল, তবুও সেখানে মুরাকামি'র-ই ছায়া পাই। হারুকি মুরাকামি যেমন তার উপন্যাসে কূহকী বাস্তবতার উছিলায় একটি পুঁজিবাদী সমাজের যে বাস্তবতার সমালচনা হাজির করেছেন, ইমতিয়াজ সজীব তা-ই করার চেষ্টা করেছেন এই কূহকী বাস্তবতার সাহায্য ছাড়াই; বলার অপেক্ষা রাখে না, অনেক ক্ষেত্রে তিনি সফল-ও হয়েছেন, যেমন: ছোটবেলার স্মৃতির বাজারমূল্য তৈরি করা; মাহিন তার পেশাগত কাজে বিজ্ঞাপনের গল্প লিখতে নিজের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিকে ব্যবহার করে, এবং মনে মনে ভাবে, “শৈশবটাকে কর্পোরেটদের হাতে বেচে দিচ্ছে না তো”— এমন আরো কিছু ঘটনা এসেছে। যতগুলো উপাদান এবং ধারণা তিনি আখ্যানের মাঝে চালান করেছেন উপন্যাসের শুরুতে, সব-ই গল্পের ছলে নাড়িয়ে-চড়িয়ে, উল্টে-পাল্টে উপন্যাসের শেষে তাদের বিকশিত করে নতুন একটা রূপে-রসে-গন্ধে পরিবেশন করতে পেরেছেন, যেমন বিকশিত হয়েছে উপন্যাসের প্রতিটি প্রধান চরিত্র। তবে এসব উপন্যাসের কিছু গৌণ সফলতামাত্র। ইমতিয়াজ সজীব যে সাহসটি দেখিয়েছেন, পুরো উপন্যাসজুড়ে, তা হালের খুব লেখকের লেখাতে-ই দেখা যায়। সমান্তরালে চালাতে থাকা একাধিক গল্প, এবং সময়-কে গল্পের প্রয়োজনে ভেঙে-চুরে নতুন করে সাজানো— এর বাইরে যে নিরীক্ষাটি কয়েকটি অধ্যায়জুড়ে তিনি করেছেন, তা হল বিজ্ঞাপনের চিত্রনাট্য, কখনো সম্পূর্ণ একটি গান-কে উপন্যাসের অঙ্গ বানানো। এই ছোট নিরীক্ষাটি হয়তো অনেক আগে আমরা লেখকদের, যেমন: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-কে করতে দেখতাম, অর্থাৎ গান-কে উপন্যাসের অঙ্গ বানানো, কিন্তু বিজ্ঞাপনের চিত্রনাট্য, সম্ভবত এই উপন্যাসেই প্রথম। বলা বাহুল্য, লেখকের পেশাগত জীবনের অর্জিত অনেক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সমগ্র উপন্যাসজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে; বিজ্ঞাপন ফার্মের বিভিন্ন পরিভাষা থেকে শুরু করে, ও জগতের কুশীলবদের জীবনের খামতি-প্রাপ্তি-শূন্যতা সবই— তাই যখন উপন্যাসটি পাঠ করতে গেলে আমরা গল্পটিকে একটুও কৃত্রিম বোধ করি না, বরং কিছু চরিত্র ও চিত্রের আত্মজৈবনিক উপাদান পাঠককের কাছে উপন্যাসটিকে আরো বিশ্বস্ত করে তোলে; উপন্যাসটিকে মনে হয় এর চরিত্রদের অজান্তে ধারণ করা তাদের ব্যক্তিগত জীবনের একটি অসম্পাদিত ভিডিওচিত্র। হয়তো এ কারণে-ই বলা হয়, সকল সাহিত্যিক কর্ম হয় আত্মজৈবনিক, নয়তো ভন্ডামি; নিঃসন্দেহে "মলয় বাতাসে” কোনো ভন্ডামি নয়। সমগ্র উপন্যাসজুড়ে যে বিষয়গুলো একজন পেশাদার পাঠকের মগজ চুলকানির উদ্রেক করে, তার মধ্যে দু'টি বিষয় এর শব্দচয়ন ও গদ্যশৈলী। উপন্যাসটিতে মাহিনের জবানিতে বর্ণনা করা স্মৃতি, আর তানিয়ার জবানিতে বর্ণিত স্মৃতির ভাষা, শব্দ, বাক্যশৈলী সবই হুবুহু একই; তাদের শব্দচয়নে বা বাক্যগঠনে একই মুদ্রাদোষ, এবং কথা বলার ধরণ-ও একই; দু'টি চরিত্র একই মানুষ-কে উপস্থাপন না করলে তাদের কথা বলার ধরন কিভাবে এতটা সমপাতিত হয়! "মলয় বাতাসে" উপন্যাসটিতে শহুরে নাগরিক জীবনের সংস্কৃতি ও চলন-বলন-কে অত্যন্ত তীব্রভাবে সমালোচনা করার অনেক সুযোগ ছিল, সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই তিনি বিষয়গুলো-কে রোমান্টিসাইজ করেছেন— অথচ এমন সম্ভাবনা সমকালীন প্রায় কোনো উপন্যাসে তেমন কোনো লেখক তৈরি-ই করতে পারেন নি; তবে এমন নয় যে, সুযোগগুলো লেখক সব ক্ষেত্রে-ই রোমান্টিসাইজ করে নষ্ট করেছেন,— যেখানে ব্যবহার করতে পেরেছেন, সেখানে খুব সফলভাবেই সমালোচনা করেছেন। আশা রাখি, লেখক আরো বেশি দায়িত্বশীল হবেন, নিজের শক্তিকে শান দিয়ে আরো ধারালো করে, আরো দক্ষতার সাথে কাগজে আঁচড় কাটবেন। সমগ্র উপন্যাসটিকে একবাক্যে বর্ণনা করতে চাইলে বলে হবে, এটা হারুকি মুরাকামি'র লেখা "মনের মাঝে তুমি" সিনেমার স্ক্রিপ্ট, পার্থক্য কেবল এখানের পরিণতি বিয়োগাত্মক-ও নয়, আবার মিলনাত্মক-ও নয়; যেন অসমাপ্ত একটি নাটক, শেষ অঙ্কটা লেখা হয় নি এখনো, অথবা হয়তো পাঠকের কল্পনা করে নেয়ার জন্য রেখে দিয়েছেন। বাংলাদেশে এমন উপন্যাস আগে কখনো লেখা হয় নি, অথচ পাঠকরা কখনো এর অভাবও বোধ করে নি; আর এখন যখন এমন একটি উপন্যাস আছে, নিশ্চিত ভবিষ্যতে এমন উপন্যাসের পাঠক তৈরি হবে, এবং আমাদের এ ধরনের উপন্যাস আরো আরো প্রয়োজন পড়বে।
Was this review helpful to you?
or
ভালো বই।
Was this review helpful to you?
or
Maybe it's only me but I couldn't connect to the book at all. Everything seemed to be too dramatic.