User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ইউভাল নোয়া হারারির “Sapiens” বইটি বিশ্বজুড়ে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মানুষ কীভাবে শিকারী-সংগ্রাহক থেকে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত সমাজে রূপান্তরিত হলো, তার সংক্ষিপ্ত ও চিত্রময় বর্ণনা এই বইয়ের মূল আকর্ষণ। তবে এই বইতে ইতিহাস, দর্শন, মনস্তত্ত্ব, নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর নানা স্তরে সমালোচনা উস্কে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে মুসলিম প্রতিবেশীদের মধ্যে বইটির কিছু বক্তব্য বিতর্কিত এবং বিভ্রান্তিকর হিসেবে ধরা হয়েছে। নীচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে যে—হারারির যুক্তিতে কতটুকু বৈধতা আছে, কোথায় তার ইতিহাসি তথ্য প্রমাণহীন ও দুর্বল, দর্শন ও নৈতিকতার স্তরে কী ধরণের ফাঁক আছে, এবং ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বইয়ের মূল ভিত্তিগুলো কতখানি অগ্রাহ্য বা বিপরীতমুখী। পাশাপাশি দেখানো হবে যে, এই বই সামগ্রিকভাবে কীভাবে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে এবং মানুষের মনস্তত্ত্ব ও নৈতিকতাকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। Yuval Noah Harari-র বই “Sapiens: A Brief History of Humankind” বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে, কিন্তু এই জনপ্রিয়তার পেছনে যে দর্শন, যুক্তি ও চিন্তাধারা রয়েছে, তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখলে আমরা দেখতে পাই– এই বইটি অনেক বড় বিভ্রান্তি ছড়ায়, যার ভিতরে রয়েছে দুর্বল যুক্তি, কল্পনাভিত্তিক ইতিহাস, বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, এবং নৈতিকতার ও সত্যের গভীর অবমূল্যায়ন। এই প্রবন্ধে আমরা Harari-র মূল বক্তব্য, তার দর্শন, যুক্তির দুর্বলতা, ইতিহাসের বিকৃতি, ইসলামিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ এবং এই বইয়ের সমাজে নেতিবাচক প্রভাব– সবকিছু পর্যবেক্ষণ করব। হারারির মূল দাবি: একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা হারারি তার বইতে মানব ইতিহাসকে চারটি প্রধান পর্যায়ে ভাগ করেছেন এবং কিছু বিতর্কিত দাবি উপস্থাপন করেছেন: ইমাজিন্ড অর্ডার (কল্পিত শৃঙ্খলা): হারারি বলেন, ধর্ম, জাতি, অর্থ, আইন ইত্যাদি মানব সমাজের মৌলিক ধারণাগুলো বাস্তব কোনো ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত নয়, বরং এগুলো মানুষের কল্পনা থেকে উদ্ভূত। কগনিটিভ রেভল্যুশন: প্রায় ৭০,০০০ বছর আগে মানুষের মধ্যে একটি জ্ঞানগত বিপ্লব ঘটে, যা তাদের ভাষা, গল্প এবং কল্পনার মাধ্যমে বড় গ্রুপে সহযোগিতা করতে সক্ষম করে। এগ্রিকালচারাল রেভল্যুশন: কৃষি বিপ্লবকে তিনি মানবজাতির জন্য একটি "ফাঁদ" হিসেবে বর্ণনা করেন, যা মানুষের জীবনকে আরও কঠিন ও অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে। সায়েন্টিফিক রেভল্যুশন: বৈজ্ঞানিক বিপ্লব মানুষকে অভূতপূর্ব শক্তি দিয়েছে, কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। হারারির এই দাবিগুলো আকর্ষণীয় হলেও, এগুলোর মধ্যে গভীর যৌক্তিক, দার্শনিক এবং ঐতিহাসিক ত্রুটি রয়েছে, যা আমরা এখন বিশ্লেষণ করব। ১. হারারির “কল্পিত আদেশ” (Imagined Orders) তত্ত্ব: স্বয়ংবিকৃতির স্বপরিপূর্ণ বিষয়? হারারি বলছেন, “মানবসভ্যতার মূল চালিকাশক্তি হলো গল্প, বা গল্পের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ‘কল্পিত আদেশ’”। অর্থাৎ—ধর্ম, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, আইন, সংস্থা ইত্যাদি সবই মূলত মানুষের কল্পনাশক্তিতে তৈরি অদৃশ্য গল্প বা বর্ণনা, যা বাস্তবের কিছু মৌলিক بنیادের ওপর দাঁড়িয়ে নয়, বরং মধ্যস্থতাকারী একটি কাল্পনিক কাঠামো। এ “imagined order” কেউ খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করে প্রমাণ করতে পারে না—তবে সবাই যদি ঐ কল্পনার প্রতি সম্মতি জানায়, সেটি তখন “সত্য” হিসেবে বিবেচিত হয়। স্ববিরোধিতা (Self-refutation) হারারি নিজে দাবি করেন, “সারাজীবন মানুষ মনে করে যে তার চারপাশে যে বাস্তবতা, তা সত্যিনিষ্ঠ আর স্বাধীনভাবে অস্তিত্বমান। কিন্তু আসলে সবকিছুই কেবল কল্পনা বা গল্প মাত্র।” কিন্তু যদি “সবই কল্পনা”, তাহলে সেই একই দাবিটিও তো কেবল একটি কল্পনা—অর্থাৎ হারারি নিজে তার বইয়ের মধ্যেই নিজের যুক্তিকেই ভঙ্গুর করেছেন। কারণ তিনি যখন বললেন “কিছুই সত্য নয়”, একই সময়ে তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, সেগুলোও তো “কিছুই সত্য নয়” যুক্তির আওতায় পড়বে। এর ফলে একটি স্বয়ংবিরোধ (self-refuting) চক্র তৈরি হয়: “সবই কল্পনা”—এই বক্তব্য নিজেও কল্পনা, তাই সেটি “সত্য” নয়। কিন্তু যদি সেটি “সত্য” নয়, তাহলে যা বলা হয়েছে, সে কথাবার্তা অর্থহীনই। Harari-র বক্তব্যের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো, তিনি নিজের মতবাদকে “বাস্তব” হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিতে চান, অথচ অন্যদের বিশ্বাসকে সরাসরি “কল্পনা” বলে বাতিল করেন। তিনি বলেন, “তোমরা ধর্মে, জাতিতে, নৈতিকতায়, উদ্দেশ্যে বিশ্বাস করো– এগুলো সব কল্পনা; কিন্তু আমি যে বলছি, সেটা সত্য!” এখানেই লুকিয়ে আছে সবচেয়ে বড় যুক্তিক বিভ্রান্তি। যদি সবকিছুই কল্পনা হয়, তাহলে হারারির এই বইটি এবং তার নিজের দাবিগুলোও কি কল্পনা নয়? তিনি যদি বলেন যে সত্য বলে কিছু নেই, তাহলে তার এই বক্তব্যটিও সত্য হতে পারে না। এটি একটি স্ববিরোধী দাবি (self-contradictory statement)। উদাহরণ: যদি আমি বলি, "এই বাক্যটি মিথ্যা", তাহলে বাক্যটি সত্য হলে মিথ্যা হয়, আর মিথ্যা হলে সত্য হয়। হারারির দাবিও এমনই। তিনি বলছেন, "সবকিছুই কল্পনা", কিন্তু তার এই দাবিটি সত্য বলে দাবি করছেন। এটি যৌক্তিকভাবে অসম্ভব। হারারি অন্যদের মতবাদকে কল্পনা বলে বাতিল করেছেন, কিন্তু তার নিজের মতবাদকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। এটি তার যুক্তির দ্বৈত মানদণ্ড (double standard) প্রকাশ করে। ২. ইতিহাসের দুর্বলতা: এসং, সাধারণীকরণ ও প্রমাণবিহীন বিবৃতি হারারি যেসব ঐতিহাসিক তথ্য উপস্থাপন করেন, সেখানে ব্যাপক সাধারণীকরণ এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রমাণহীন মন্তব্য লক্ষ্য করা যায়। Harari-র বইয়ে ইতিহাসের অনেক অংশই কল্পনানির্ভর, সরাসরি প্রমাণ বা ঐতিহাসিক রেফারেন্স ছাড়াই তিনি অনেক কিছু প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন Harari-র বইয়ের আরেকটি প্রধান দুর্বলতা হলো, তিনি ইতিহাসের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটকে নিজের মত অনুযায়ী ব্যাখ্যা করেছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে একপাক্ষিক, বিকৃত কিংবা প্রমাণহীন ধারণা দিয়েছেন। মূলত, “Sapiens”-এর বেশিরভাগ অংশ “speculative history”– যার ভিত্তি দুর্বল। কৃষি বিপ্লব একটি "ফাঁদ" হারারি দাবি করেন যে কৃষি বিপ্লব মানুষের জন্য ক্ষতিকর ছিল, কারণ এটি তাদের কঠিন পরিশ্রম ও অস্বাস্থ্যকর জীবনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু এই দাবি অতিসরলীকৃত এবং ঐতিহাসিকভাবে দুর্বল। প্রমাণ: কৃষি বিপ্লব শহর গঠন, লিখনপদ্ধতির উদ্ভাবন এবং জটিল সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। হারারি এই ইতিবাচক দিকগুলো উপেক্ষা করেছেন। তিনি "নিজের মতো করে ইতিহাস লিখেছেন, প্রমাণ ছাড়া।" এটি সত্য। হারারি ঐতিহাসিক তথ্যের বদলে নিজের ব্যাখ্যাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। “কৃষি বিপ্লব”কে হারারি দেখিয়েছেন যে, জৈবভাবে এটি মানুষের জন্য সমস্যার উৎস: অনাবৃষ্টির ঝুঁকি, রোগবালাই, শোষণকরী শ্রেণী বের হওয়া ইত্যাদি। আসলে, যদিও প্রাথমিক কৃষি-ব্যবহার শুরুতে কাজে দুর্বলতা ছিল, কিন্তু ইতিহাস গবেষকদের সংখ্যা বলে, কৃষি বিপ্লবের ফলে মোট জনসংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছিল, এবং পরবর্তীতে সভ্যতার বিকাশে অবদান রেখেছিল। হ্যাঁ, “কৃষিকাজে সময় ব্যয় বেড়েছিল”, এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলাও দেখা দিয়েছিল—কিন্তু এ সবই প্রমাণ করে যে কৃষিবিপ্লব “সম্পূর্ণ দুঃখের কারণ” ছিল—এ ধরনের একতরফা উপসংহার হাস্যোজ্জ্বল। ফলে হারারির “কৃষি বিপ্লব মিথ্যা মুক্তিদাতা না, বরং দাসত্বের সূচনা” এরূপ দাবির পেছনে ঐতিহাসিক বিধর্মিতা লক্ষণীয়। শিকারী-সংগ্রাহকের যুগ: “প্ৰায় সবকিছুই নিষ্ঠুর ও দারিদ্র্যময় ছিল” হারারি লিখেছেন, শিকারী-সংগ্রাহকরাজ্যে মানুষ “দারিদ্র্যময়”, “জীবনের অধিকাংশ সময় জোটসুটি করে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতো”, “রোগব্যাধি, দুর্ঘটনা, যুদ্ধ—সব ছিল খুবই প্রচুর”। পরিসংখ্যানের অভাব ও প্রাচীনসমাজের ডিজিটাল রেকর্ডের অভাবে আমরা একটা সুনির্দিষ্ট অবস্থা জানতে পারি না। কিন্তু সাম্প্রতিক মানববিজ্ঞানভিত্তিক ক্ষেত্রবিশেষ গবেষণায় দেখা গেছে, তুলনামূলকভাবে মনুষ্যজাতির বহু শিকারী-সংগ্রাহক গোষ্ঠী মোটামুটি স্বাস্থ্যবান, দৈনিক খাদ্য সংগ্রহের পরিমাণ যথেষ্ট, এবং সামাজিক বন্ধনগুলো ছিল শক্তিশালী। অর্থাৎ “তাঁরা ‘দারিদ্র্যময়’ ছিল”—এ ধরনের গভীর সাধারণীকরণ প্রমাণবিহীন ও বিতর্কিত। এতদ ছাড়াও, যখন হারারি বলেন “শিকারী-সংগ্রাহক মানুষেরা শ্রমব্যস্ততা কম ও অবসর বেশি পেত”, সেটা আধুনিক সমাজের “নষ্ট বিলাসিতা” বোঝাতে চান; কিন্তু সেটা ইতিহাস-উপাত্তের আলোকে নির্ভুল কি-না সন্দেহজনক। বিশেষজ্ঞরা তর্ক করেন যে, বসবাস, যাতায়াত, খাদ্য-নির্বাহী উৎকর্ষতা ইত্যাদির জন্য প্রচুর সময় ও শক্তি লাগত—এটুকু ভাবিয়া দেখলে “কম শ্রম, অধিক অবসর” ধারনা খুবই আগ্রাসী ও ঐতিহাসিক ভাবে অপ্রমাণিত। সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্ম: একক দিকে দোষারোপ “বিস্তৃত সাম্রাজ্যগুলো দেশে দেশে সংস্কৃতি বিনাশ করেছে; ধর্ম শুধু ক্ষমতার হাতিয়ার ছিল”—এভাবে হারারি প্রাচীনকাল থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত ধর্ম ও সাম্রাজ্যের দ্বন্দ্বকে খুবই লোহিত করে দেখিয়েছেন। তবে ইতিহাসবিদরা বলেন, ধর্ম একদিকে যেমন শোষণের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল, অপর দিকে সমাজে সামাজিক সুবিন্যাস, শিক্ষাব্যবস্থা, বিজ্ঞান-বিকাশ, আর্ত-সংস্কৃতি প্রচারের ক্ষেত্রও ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ইসলামী স্বর্ণযুগে স্কুল, বীমার (হিলালের) মতো সামাজিক কাঠামো তৈরির মাধ্যমে জনগণের হিত সাধন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, গণিত, দর্শন—all জাতীয় ও ধর্মীয় মূলনীতির আওতায় বিকাশ ঘটায়। হারারি সবটুকুকে “শুধু শোষণ” হিসেবে দেখিয়ে দিয়েছেন, অথচ ঐতিহাসিক ‘ব্যালান্স’ ভেঙে দিয়েছেন। মিষ্টি খাওয়ার ব্যাখ্যা হারারি একটি উদাহরণে বলেন যে মানুষ মিষ্টি খায় কারণ লক্ষ কোটি বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা শিকারের পর গাছে মিষ্টি ফল খুঁজত। এটি একটি সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত ধারণা, যার কোনো ঐতিহাসিক বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। সমালোচনা: এটি একটি স্পেকুলেটিভ ফ্যালাসি (speculative fallacy)। হারারি কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক বা জৈবিক প্রমাণ ছাড়াই এই গল্প বানিয়েছেন। আপনি যেমন বলেছেন, "এটার কোনো প্রমাণ নেই, তিনি নিজের কল্পনা দিয়ে লিখেছেন।" “মানুষ কেন মিষ্টি খায়”—এ নিয়ে তিনি বলেন, লক্ষ-কোটি বছর আগে মানুষ যখন জঙ্গলে মাংস খেত, তখন মিষ্টি ফল খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়। ধর্ম, জাতি, অর্থ, রাষ্ট্র– সবকিছুই নাকি মানুষ কল্পনা করে বানিয়েছে, কারণ এগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক বা বস্তুগত ভিত্তি নেই। কিন্তু ইতিহাসবিদরা জানেন, মানবসমাজের বিকাশ, ধর্মের উৎপত্তি, নৈতিকতার ধারণা– এসবের পেছনে বহুস্তরীয় সামাজিক, নৈতিক, আত্মিক, ঐতিহাসিক সত্য রয়েছে, যেগুলো কেবল “কল্পনা” বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দর্শনীয় ও যুক্তিতাত্ত্বিক খামতি ধর্ম ও নৈতিকতার অবমূল্যায়ন হারারি ধর্মকে শুধু কল্পনা হিসেবে দেখেন এবং এর নৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব উপেক্ষা করেন। এটি তার ম্যাটেরিয়ালিস্ট দৃষ্টিভঙ্গির ফল। সমালোচনা: ধর্ম শুধু গল্প নয়, এটি মানুষের জীবনে উদ্দেশ্য, নৈতিকতা এবং সম্প্রদায়ের ভিত্তি প্রদান করে। হারারি এটিকে অস্বীকার করে একটি একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। "আমরা যারা ধর্মে, জাতিতে, নৈতিকতায় বিশ্বাস করি, তিনি বলছেন আমরা কল্পনা করেছি, যুক্তি ব্যবহার করিনি।" হারারি এখানে ধরে নিয়েছেন যে তার নাস্তিক দৃষ্টিভঙ্গিই যৌক্তিক, যা একটি দার্শনিক দুর্বলতা। সত্যের অস্বীকৃতি হারারির দর্শন সত্যের অবজেক্টিভ অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। কিন্তু এটি দার্শনিকভাবে অস্থিতিশীল। যদি সত্য না থাকে, তাহলে জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং যুক্তির ভিত্তি কী? তিনি বিজ্ঞানের কথা বলেন, কিন্তু বিজ্ঞানও সত্যের উপর নির্ভর করে। এটি তার দর্শনের আরেকটি স্ববিরোধিতা। লজিক্যাল ফলাসি ও আত্মবিরোধিতা Harari-র প্রধান যুক্তিটি “self-refuting” বা আত্মবিরোধী। তিনি যদি বলেন “সবই কল্পনা, সত্য বলে কিছু নেই”, তাহলে তার নিজের এই কথাটাই তো সত্য নয়– এটাও কল্পনা! তাহলে পাঠক কেন তার কল্পনাকে সত্য বলে মেনে নেবে? উদাহরণ: বর্তমান সমাজে কেউ যদি দাবি করে– ‘চুরি করা ঠিক’, আর কেউ বলে– ‘চুরি করা ভুল’, Harari-র মতে দুটোই কল্পনা! তাহলে চুরির বিচার হবে কীভাবে? Harari-র মতে, ধর্ম বা নৈতিকতা কল্পনা, কারণ এগুলোর “অবজেক্টিভ” ভিত্তি নেই। কিন্তু নিজেই আবার তার বইয়ে “মানবজাতির ইতিহাস” বলে যে বিশ্লেষণ দেন, সেটাই বা কতটা অবজেক্টিভ? এটি হলো “relativism fallacy”– যার অর্থ, সত্য বলে কিছু নেই বলা, অথচ নিজের মতবাদকে বিশেষভাবে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। দর্শনবিদ Antony Flew এই ধরনের ফাঁদকে “logical self-destruction” বলেছেন– কারণ, নিজের যুক্তি নিজের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়ে যায়। “নিহিলিজম” বা শূন্যবাদী সুর বইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে বারবার এসেছে “সর্বত্র সত্য বলে কিছু নেই, তার মানে ‘সবই কল্পনা’”—একে Nihilism (শূন্যবাদ) বলা যেতে পারে। তবে Nihilism-এর বিপরীত হল যে, কিছু মৌলিক সত্য, নৈতিকতা ও উদ্দেশ্য আছে—যা হারারি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। প্রকৃতপক্ষে, দর্শনে Nihilism খারাপ নয়, কিন্তু তারও পরিপ্রেক্ষিতে “existential vacuum” পূরণ করার পক্ষপাতী কেউ হলে সেটি “responsibility” ও “free will”কেও ব্যাহত করে। হারারি মনে করেন, “মানুষ সবকিছুকে ভাঙিয়ে দেখে, তার কোনো মূলে বিশ্বাস করতে হয়নি”—কিন্তু এ পন্থা থেকে, অর্থাৎ কেউ মূলে বিশ্বাস করে না, তখন সমাজে নৈতিক vacío তৈরি হয়। নিজেরাই “কোনও আদর্শ নেই” বলে দিলে মানুষ নিজের ‘value system’ কোথা থেকে আনবে? “ইমাজিনারি অর্ডার” vs. সমাজবদ্ধতা হারারি ধারণা দেন যে, মানব সমাজ এককভাবে “কল্পনা” এর ওপর দাঁড়িয়ে; এতে “রাষ্ট্র”, “আর্থিক ব্যবস্থা”, “আইন-বিধি”—সবই একটি নিউজনেটিভ ফ্রেমওয়ার্কের অংশ। তবে সমাজবিজ্ঞানে দেখা যায়—মানুষ “বিশ্বাস” ছাড়া মোটেও একত্রিত হয় না, এবং “বিশ্বাস” অনেক ক্ষেত্রেই ঐশ্বরিক হতে পারে, শুধুমাত্র “কল্পনা” নয়। প্রত্যেক উন্নত সমাজে ধর্মীয় অথবা বিষ্ময়-নির্ভর নৈতিক মানদণ্ডই মানুষের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা, কূটনৈতিক আদান-প্রদান, সামুদ্রিক ক্রসকালচারাল যোগাযোগ রক্ষা করতে সহায়ক। হারারির “সবই কল্পনা” বলে দিলে, মানুষ মানসিকভাবে “কোনো একটি বিশ্বাস” বজায় রাখতে অক্ষম হয়—এতে সামাজিক বন্ধন ভেঙে যেতে পারে। সামাজিক অসন্তোষ ও মানসিক উদ্বেগ যদি সবকিছুকে “কল্পিত” ধরিয়ে দেওয়া হয়, সেখান থেকে মানুষ মানসিকভাবে “নিহিলিস্ট” হয়ে যেতে পারে। উদাহরণ: কেউ পড়াশোনা করে, চাকরি করে, বিবাহ-বিচ্ছেদ, সন্তানপালন সবকিছুই সে ভাবে লক্ষ্য করলে—“এগুলো মুলত কল্পনা, অর্থহীন”—এমন অবস্থায় সে আত্মহত্যা, বিষণ্নতার দিকে ঝুঁকতে পারে। ইসলাম মনস্তত্ত্বে সমর্থন দেয়—আল্লাহর দিকে ফিরে আধ্যাত্মিক শান্তি খুঁজতে। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসই মানসিক সুস্থতার উৎস। হারারির দৃষ্টিতে এই সমর্থন কার্যত “অলৌকিক” বা “কল্পনা” হিসেবে খারিজ হয়ে যায়। --- দর্শন ও যুক্তির সংকট Harari-র দর্শন মূলত “materialistic atheism”– অর্থাৎ, বস্তুবাদী ও নাস্তিক চিন্তাধারা। তিনি বিশ্বাস করেন, মানুষের জীবন, উদ্দেশ্য, নৈতিকতা– সবই জৈবিক ও সামাজিক কল্পনার ফল; ঈশ্বর, আত্মা, পরকাল– এসবের কোনো বাস্তবতা নেই। কিন্তু এই দাবি চূড়ান্তভাবে “reductionist”—জীবনের সব গভীর সত্যকে কেবল জৈবিক ও কল্পনানির্ভর বলে ছোট করে ফেলা। এত সরলীকরণে মানবজীবনের নৈতিক, আত্মিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক রূপ অবজ্ঞাত হয়। এই দর্শন মানুষকে উদ্দেশ্যহীন, অর্থহীন, মূল্যহীন এক অস্তিত্বে ঠেলে দেয়। Storytelling” পদ্ধতি: বিজ্ঞান-বিশ্লেষণের অবক্ষয় হারারি গল্পের চমৎকার অলংকরণে সবকিছু ব্যাখ্যা করেন—উদাহরণস্বরূপ, তিনি “মানুষ ‘এমবায়োরিক বাফলো’ যেভাবে বন্য পশুই ভেবে বাছুরকে দুধ খাওয়ায়”—এভাবে কৃষিকাজের উদ্ভবতি বর্ণনা। কিন্তু বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণের আলোকে প্রশ্ন ওঠে: 1. কীভাবে এমবায়োরিক বাফলো এরকম সুনির্দিষ্ট আচরণ তৈরি হলো? 2. জিনগত, পরিবেশগত, সামাজিক পরিবর্তনগুলো কীভাবে সংঘটিত হলো? 3. কোনো প্রোটোকল বা পর্যবেক্ষণাত্মক নিবন্ধিত তথ্যের ভিত্তি নেই—সেখানে শুধুমাত্র এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা। এর ফলে, “গল্পের ভাষা” ভীষণ আকর্ষণীয় হলেও, বাস্তব গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক দলিলের বিচারে সত্যিষ্ঠ কি-না তা নিশ্চিত হয় না। সামাজিক ও নৈতিক ক্ষতি: বিভ্রান্তি, উদাসীনতা ও আত্ম-ধংসাত্মক মনোভাব বারবার “কিছুই সত্য নয়” বা “সবই কল্পনা” এই ধরনের সংগঠিত নিশক্রিয়া মানুষকে সামাজিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে: সামাজিক বন্ধন ও ঐক্যবোধ ক্ষয় ধর্ম, জাতি, সংস্কৃতি—এসব মানুষের মধ্যে ঐক্যবোধ সৃজন করে। হারারি যখন বলছেন “এগুলো সব কল্পনা, কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই”, তখন একদিকে ঐক্যবোধ ভেঙে যেতে পারে, অন্যদিকে সামাজিক বন্ধন দুর্বল হতে পারে। ইসলামে, “ইমাম”, “উম্মাহ”, “ঈমানের বন্ধন”—এসব এক আদর্শগত কাঠামোয় প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু হারারি সরাসরি এই কাঠামোকে “ইমাজিনারি অর্ডার” বলে রাজনৈতিক-সামাজিক চেতনার “ডিবিল্ডিং” (debuilding) করতে চায়, যার ফলে মানসিক অবসাদ ছড়ানো সম্ভব। ব্যক্তি-স্তরে মানসিক বিভ্রান্তি একজন সাধারণ পাঠক যদি “সবই কল্পনা” বিশ্বাসে আটকে যায়, তারা হয়তো জীবনের উদ্দেশ্যহীন মনে করবে, “যান্নাত-নরক ধাঁধা, ঈমান-ইসলাম সবই গল্প”। ফলাফল: আত্মহত্যা, মাদকাসক্তি, হতাশা, পারস্পরিক বিশ্বাসহীনতা—এসব চরম পরিণতির আশঙ্কা থেকেই যায়। ইসলামী উপদেশ হলো, “আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসেই শান্তি ও স্থায়িত্ব”। হারারি স্কুল অফ ফিকশন (fiction) দিয়ে সে স্থায়িত্ব দুর্বল করতে চায়। নৈতিক শূন্যতা ও বিধ্বংসী আচরণ “সত্য বলতে কিছুই নেই, সকল মুল্যবোধ একটি গল্প”—এ থেকে মানুষ নৈতিক শৃঙ্খলা হীন হয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, “মানুষ চুরি, হত্যা, জালিয়াতি সব কিছুই করে”—কারণ “এ তো সবই কল্পনা, কোনো আধ্যাত্মিক সাজা নেই!”—এ ধরনের মনোভাব গড়ে ওঠে। অথচ ইসলামে, প্রতিটি কাজের পরিণতি অদৃশ্য বিচারকের দ্বারাই নির্ধারিত; নৈতিকতার ভিত্তি আল্লাহর আদেশে স্থাপন। হারারি এই বিশ্বাসকেই চ্যালেঞ্জ করে মানবকে নিস্তেজ ও আত্মকেন্দ্রিক হতে প্রলুব্ধ করেন বিভ্রান্তি ও মানসিক অবক্ষয় Harari-র বইয়ের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, এটি সমাজের মানুষের মধ্যে সত্য, নৈতিকতা, উদ্দেশ্য, ঈশ্বর– এসবের ওপর সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং হতাশা ছড়িয়ে দেয়। মানুষ যখন বিশ্বাস করতে শেখে, “সবই কল্পনা, সত্য বলে কিছু নেই”, তখন সে আর কোনো নৈতিক বোধ, উদ্দেশ্য, দায়িত্ববোধ, ত্যাগ, ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করে না। এই দর্শন সমাজকে আত্মকেন্দ্রিক, উদ্দেশ্যহীন, মূল্যবোধহীন এক অবস্থায় ঠেলে দেয়। এর ফলাফল– পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়, আত্মহত্যা, মানসিক রোগ বাড়ে, সামাজিক অবক্ষয়, দারিদ্র্য, অপরাধ বৃদ্ধি পায়। যৌক্তিক সমালোচনা: স্ববিরোধিতা ও দুর্বলতা ১. "সবকিছুই কল্পনা" - একটি স্ববিরোধী দাবি হারারির মূল তত্ত্ব হলো যে ধর্ম, জাতি, অর্থ ইত্যাদি "ইমাজিন্ড অর্ডার" বা কল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং এগুলোর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। কিন্তু এই দাবিটি নিজেই একটি যৌক্তিক ফাঁদে পড়ে। যদি সবকিছুই কল্পনা হয়, তাহলে হারারির এই বইটি এবং তার নিজের দাবিগুলোও কি কল্পনা নয়? তিনি যদি বলেন যে সত্য বলে কিছু নেই, তাহলে তার এই বক্তব্যটিও সত্য হতে পারে না। এটি একটি স্ববিরোধী দাবি (self-contradictory statement)। উদাহরণ: যদি আমি বলি, "এই বাক্যটি মিথ্যা", তাহলে বাক্যটি সত্য হলে মিথ্যা হয়, আর মিথ্যা হলে সত্য হয়। হারারির দাবিও এমনই। তিনি বলছেন, "সবকিছুই কল্পনা", কিন্তু তার এই দাবিটি সত্য বলে দাবি করছেন। এটি যৌক্তিকভাবে অসম্ভব। হারারি অন্যদের মতবাদকে কল্পনা বলে বাতিল করেছেন, কিন্তু তার নিজের মতবাদকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। এটি তার যুক্তির দ্বৈত মানদণ্ড (double standard) প্রকাশ করে। ২. লজিক্যাল ফ্যালাসি: সার্কুলার রিজনিং হারারি যখন বলেন যে মানুষ ধর্ম বা নৈতিকতা কল্পনা থেকে তৈরি করেছে, তখন তিনি এই দাবির সমর্থনে কোনো শক্তিশালী প্রমাণ দেন না। তার যুক্তি হলো: "এগুলো কল্পনা, কারণ আমি বলছি এগুলো কল্পনা।" এটি একটি সার্কুলার রিজনিং (circular reasoning) ফ্যালাসি। তিনি নিজের কল্পনা দিয়ে একটি গল্প বানিয়েছেন এবং সেটিকে সত্য বলে চাপিয়ে দিচ্ছেন। "তিনি কল্পনা করে বলছেন যে আমাদের পূর্বপুরুষ কল্পনা করে ধর্ম বানিয়েছে।" এটি ঠিক। হারারি কোনো প্রমাণ ছাড়াই নিজের কল্পনাকে বৈধ করছেন, যেখানে তিনি অন্যদের কল্পনাকে অবৈধ ঘোষণা করছেন। ৩. অবজেক্টিভ সত্যের অস্বীকৃতি হারারি যদি বলেন যে সত্য বলে কিছু নেই, তাহলে এটি জীবনের বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক। আপনি যেমন বলেছেন, "সত্য না থাকলে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না।" উদাহরণস্বরূপ: একজন চোর বলে, "আমি চুরি করিনি।" মালিক বলে, "সে চুরি করেছে।" যদি সত্য বলে কিছু না থাকে, তাহলে দুজনের দাবিই একই সাথে সত্য ও মিথ্যা হয়, যা যৌক্তিকভাবে অসম্ভব। সত্য একটি বাস্তব জিনিস, যা সমাজ ও জীবনের ভিত্তি। হারারি এটি অস্বীকার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। Harari-র নিজস্ব কল্পনা ও দ্বিমুখিতা সবচেয়ে বড় ইরনি হলো, Harari নিজেই “কল্পনা” দিয়ে বইটি লিখেছেন! তিনি বলছেন– “সবই কল্পনা”, কিন্তু তাঁর বইটাই বা কী? এটাও তো তার “imagined order”—নতুন এক গল্প, যেটা তিনি বিশ্বাস করতে চান এবং আমাদের বিশ্বাস করাতে চান। যদি সত্য বলে কিছু না থাকে, তাহলে Harari-র বইটাও “সত্য” নয়– এটাও কেবল কল্পনা! তাহলে, পাঠক কেন তার কল্পনাকে মেনে নেবে? এটা নিজেই তার দর্শনের “logical collapse”—নিজের যুক্তিই নিজের বিরুদ্ধে যায়। নাস্তিকতার প্রচার আপনি বলেছেন, "তিনি নিজের নাস্তিক মতবাদ ছড়ানোর জন্য এই বই লিখেছেন।" এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। হারারি তার বইয়ের মাধ্যমে একটি নাস্তিক ও ম্যাটেরিয়ালিস্ট বিশ্বদৃষ্টি প্রচার করছেন, যা বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিভ্রান্তিকর এবং ক্ষতিকর। Harari-র দর্শন মূলত “materialistic atheism”– অর্থাৎ, বস্তুবাদী ও নাস্তিক চিন্তাধারা। তিনি বিশ্বাস করেন, মানুষের জীবন, উদ্দেশ্য, নৈতিকতা– সবই জৈবিক ও সামাজিক কল্পনার ফল; ঈশ্বর, আত্মা, পরকাল– এসবের কোনো বাস্তবতা নেই। কিন্তু এই দাবি চূড়ান্তভাবে “reductionist”—জীবনের সব গভীর সত্যকে কেবল জৈবিক ও কল্পনানির্ভর বলে ছোট করে ফেলা। এত সরলীকরণে মানবজীবনের নৈতিক, আত্মিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক রূপ অবজ্ঞাত হয়। এই দর্শন মানুষকে উদ্দেশ্যহীন, অর্থহীন, মূল্যহীন এক অস্তিত্বে ঠেলে দেয়। সমাজে বিভ্রান্তি ও মানসিক অবক্ষয় Harari-র বইয়ের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, এটি সমাজের মানুষের মধ্যে সত্য, নৈতিকতা, উদ্দেশ্য, ঈশ্বর– এসবের ওপর সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং হতাশা ছড়িয়ে দেয়। মানুষ যখন বিশ্বাস করতে শেখে, “সবই কল্পনা, সত্য বলে কিছু নেই”, তখন সে আর কোনো নৈতিক বোধ, উদ্দেশ্য, দায়িত্ববোধ, ত্যাগ, ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করে না। এই দর্শন সমাজকে আত্মকেন্দ্রিক, উদ্দেশ্যহীন, মূল্যবোধহীন এক অবস্থায় ঠেলে দেয়। এর ফলাফল– পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়, আত্মহত্যা, মানসিক রোগ বাড়ে, সামাজিক অবক্ষয়, দারিদ্র্য, অপরাধ বৃদ্ধি পায়। নৈতিক ভিত্তির ক্ষয় হারারির বই যদি মানুষকে বোঝায় যে ধর্ম, জাতি, নৈতিকতা সব কল্পনা, তাহলে এটি সমাজের নৈতিক ভিত্তিকে ধ্বংস করতে পারে। আপনি যেমন বলেছেন, "এটি সমাজকে ধ্বংস করবে।" উদাহরণ: যদি নৈতিকতা কল্পনা হয়, তাহলে চুরি, হত্যা বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো যুক্তি থাকে না। এটি সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। ২. মানসিক অস্থিরতা হারারির দাবি মানুষের মধ্যে অস্তিত্বগত সংকট তৈরি করতে পারে। যদি জীবনের উদ্দেশ্য, ধর্ম বা বিশ্বাস সব কল্পনা হয়, তাহলে মানুষ কী নিয়ে বাঁচবে? এটি মানসিক অস্থিরতা ও হতাশার জন্ম দিতে পারে। “Sapiens”-এ Harari ইতিহাস ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণ বা প্রত্যক্ষ উৎসের পরিবর্তে নিজের কল্পনাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি বহু জটিল ও বহুস্তরীয় ঘটনার সহজীকরণ করেছেন, যেগুলোর গভীর সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় ব্যাখ্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি সেগুলোকে কেবল “কল্পিত” বলে সরলীকরণ করেছেন। ১. ঐতিহাসিক প্রমাণের অভাব Harari-র অনেক বক্তব্যে সরাসরি ঐতিহাসিক দলিল বা গবেষণার উদ্ধৃতি নেই। উদাহরণস্বরূপ, মানবসমাজে ধর্ম ও নৈতিকতার সূচনা নিয়ে তিনি যে ব্যাখ্যা দেন, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুমাননির্ভর (“speculative”) এবং প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসবিদদের বিশ্লেষণ থেকে আলাদা। ২. একপাক্ষিকতা ও পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি Harari-র ইতিহাসচর্চায় পশ্চিমা বস্তুবাদী চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। ইসলামিক, আধ্যাত্মিক, বা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইতিহাসের বিশ্লেষণ এখানে অনুপস্থিত। ফলে পুরো ইতিহাসটাই একপাক্ষিকভাবে ব্যাখ্যাত হয়েছে। ৩. জটিল সত্যের সরলীকরণ ইতিহাসের ঘটনাবলী– ধর্মের বিকাশ, নৈতিকতার উত্থান, সমাজ গঠনের কারণ– এসবের পেছনে
Was this review helpful to you?
or
আমি নিজে রকমারি থেকে এই বই কিনেছি এবং অনুবাদ আমার কাছে যথেষ্ট ভালো লেগেছে। বিনা সংকোচে নিতে পারেন।
Was this review helpful to you?
or
কমেন্টগুলো করার জন্য ধন্যবাদ। রেটিং দেখে কেনা বন্ধ রেখেছিলাম। অনুবাদ দারুণ লেগেছে। অনুবাদক কষ্ট করে নিজস্ব কথা ব্যবহার করেছেন। যারা রেটিং কম দিয়েছেন তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
Was this review helpful to you?
or
মাস্টারপিস❤️
Was this review helpful to you?
or
Good.
Was this review helpful to you?
or
I read this book thoroughly. It was quite amazing. I will highly recommend you to read this book. Translation is good. You will have knowledge about our history.
Was this review helpful to you?
or
Good book
Was this review helpful to you?
or
Nice books
Was this review helpful to you?
or
Outstanding
Was this review helpful to you?
or
very good book
Was this review helpful to you?
or
অনুবাদ খুব সুখ পাঠ্য নয়। তবু ভাল লেগেছে।
Was this review helpful to you?
or
হারারির সাপিয়েন্স রিলিজ হয়েছে বেশ কয়েক বছর হলেও বাংলা অনুবাদের অভাবে (যেহেতু আমার ইংরেজি জ্ঞান প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চা লেভেলের) বইখানা এতদিন পড়া হয়নি। অবশেষে ইউপিএল কল্যাণে বই খানা পড়া হলো। কিন্তু অনুবাদটি সুস্বাদু না।
Was this review helpful to you?
or
কেন যে সবাই খারাপ অনুবাদ বলছে বুঝতে পারছি না ,আমার কাছে তো দুর্দান্ত মনে হয়েছে। বইয়ের কোয়ালিটি ও নিঃসন্দেহে প্রিমিয়াম
Was this review helpful to you?
or
Translation was better by Shuvro, Ragib Ahsan from BUET and edited by Mustaq Ahmed. I recommend their book.
Was this review helpful to you?
or
Translation is really good. I'm recommending it to everyone.
Was this review helpful to you?
or
khub eii sundor ekta boi
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
বেশ ভালো
Was this review helpful to you?
or
ভালো কন্ডিশনে পেয়েছি।
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
চমৎকার বই। বইটি নতুনভাবে ভাবতে উৎসাহ দেয়। অসাধারণ একটি বই। অনুবাদও সন্তোষজনক।
Was this review helpful to you?
or
Best ❣️❣️
Was this review helpful to you?
or
full fresh book and premium quality
Was this review helpful to you?
or
nice book about Human
Was this review helpful to you?
or
এই বইতে ইসলামের জন্ম লিখা হয়েছে ১৪০০ বছর আগে। কিন্তু প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, ইসলামের জন্ম ইব্রাহীম (আ) এর সময় থেকে প্রায় ৪০০০ হাজার বছর আগে। ইব্রাহিম (আ) মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে জন্মেছিলেন। ইব্রাহীম (আ) এর জিন্মের প্রায় ৯০০ বছর আগে নূহ (আ) ও এক আল্লাহর দিকে মানুষকে ডেকে ছিলেন। কাজেই ইসলাম ১৪০০ বছর আগের এমন তথ্য সঠিক নয়।
Was this review helpful to you?
or
ছাপা ভালো, তবে দুটো একটা বানান ভুল না হলে আরও ভালো হত।
Was this review helpful to you?
or
faltu boi
Was this review helpful to you?
or
One of the Best Books I have ever read.
Was this review helpful to you?
or
অনুবাদটা ভালো করেছে
Was this review helpful to you?
or
একদম বাজে অনুবাদ। ধুর।
Was this review helpful to you?
or
কিনবেন ত ঠকবেন ইংরেজী টা কিনেন
Was this review helpful to you?
or
❝আমরা গমকে গৃহপালিত উদ্ভিদে পরিণত করিনি, বরং গমই আমাদের গৃহে আবদ্ধ করেছে। ইংরেজি ’ডোমেস্টিকেট' শব্দটি ল্যাটিন 'domus' থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে 'গৃহ'। কিন্তু এখন গৃহে বাস করছে কে? গম নয়, বরং স্যাপিয়েন্সরাই।❞ আরেহ্, এ কী কথা! এভাবে তো ভাবা হয় না! স্যাপিয়েন্সরাই জগতের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে এটা ভাবতে আমাদের ভালো লাগে, এ্যামনটা ভেবেই আমরা সাধারণভাবে অভ্যস্ত। এই সাধারণ ভাবনায় আঘাত আসে এরকম কিছু প্রশ্ন পেলে। আসলে স্যাপিয়েন্সরা নিয়ন্ত্রক, নাকী নিয়ন্ত্রিত? সভ্যতা মানুষকে প্রভু করেছে, নাকী দাস? বিজ্ঞান পড়ার একটা সুবিধা হলো, এর সব তত্ত্বকে বিশ্বাস না করলেও চলে। বিজ্ঞান নিজেই অজ্ঞানতাকে স্বীকার করে। বিজ্ঞান স্বীকার করে মানুষের সকল জানা এখনো সম্পূর্ণ হয়নি, জগতের সব জ্ঞান মানুষের করায়ত্ত হয়নি এখনো। তাই বিজ্ঞানের যেসব তত্ত্ব আপনার কাছে যৌক্তিক লাগবে, আপনি সেগুলো মেনে নিতে পারেন। যেগুলো যুক্তিসঙ্গত লাগবে না, সেগুলো মানার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সেগুলো নিয়ে আপনি বরং আরও বিস্তৃত পরিসরে ভাবতে পারেন। এই বই আপনার মস্তিষ্ককে ভাবনার খোরাক জোগাবে। সাথে উপরি পাওনা হিসেবে পাবেন ইতিহাস। ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার রেফারেন্স হতে পারে এই বই। অনুবাদের সাবলীলতা ইতিহাসের এই জার্নিকে করেছে উপভোগ্য। বইয়ের শেষে আছে পর্যাপ্ত তথ্যসূত্র।
Was this review helpful to you?
or
আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি- কেননা মূল ইংরেজি বইটার সাথে মিলিয়ে পড়েছি আমি- ইউপিএল এর অনূদিত স্যাপিয়েন্স বইটা যথেষ্ট ভালো হয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
great logical explanation, fantastic writing.
Was this review helpful to you?
or
Thanks to you all who commented below. After reading the comments I cancelled the order!!! It is highly unexpected from UPL.
Was this review helpful to you?
or
এতটা খারাপ অনুবাদ হবে আশা করিনি। প্রচ্ছদ যতটা সুন্দর হয়েছে, অনুবাদ ততটাই অখাদ্য। ইউপিএল থেকে এ ধরনের অনুবাদ আশা করিনি।
Was this review helpful to you?
or
হোমো স্যাপিয়েনস : রিটেলিং আওয়ার স্টোরি" লেখকঃ ডা. রাফান আহমেদ এই বইতে রেফারেন্স সহ বিবর্তন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা পাবেন সবাইকে পড়ার অনুরোধ রইল। "ইউভাল হারারি পাঠ ও মূল্যায়ন ( পশ্চিমা অ্যাকাডেমিকদের চোখে)" এই বইটাও দয়া করে পড়বেন।
Was this review helpful to you?
or
মানবজাতির ইতিহাস লেখক তুলে ধরেছেন এই বইয়ে । বইটি আমার চিন্তাভাবনায় ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিয়েছে হ্যাপি রিডিং ...
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ বই আর অসাধারণ অনুবাদ, অনেক কিছু জানতে পেরেছি বইটা থেকে। উপরে রিভিউতে কিছু মানুষ বোঝা যাচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বইটাকে খারাপ বানাবার চেষ্টা করেছে।
Was this review helpful to you?
or
Besh bhaloi anubad!! Ami english ebong bangla duto boi porechi. Eto baje review er kono mane dekhi na
Was this review helpful to you?
or
এতো নামি দামি বইয়ের অনুবাদ সত্যিই কি বাজে হয়েছে ? কিনতে চাচ্ছি। আরো কয়েকটা রিভিউ দেখলে বুঝতে সুবিধা হবে।
Was this review helpful to you?
or
অনুবাদ ভালো হয়েছে। আক্ষরিক অনুবাদ করেনি এজন্য অনুবাদকদ্বয় কে ধন্যবাদ জানাই। বইটির বিষয় সবার জন্য সহজ বোধগম্য নয়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে বর্তমান মানুষের অবস্থানটি কোথায়? মানুষ কি মহাবিশ্বের সাথেই বিবর্তিত একটি সত্ত্বা না মানুষ মহাবিশ্ব থেকে আলাদা ভাবে সৃষ্ট? বর্তমান মানুষ প্রজাতিটি অন্যান্য প্রানী প্রজাতির সাথে বিবর্তিত হয়ে কিভাবে আজকের হোমো স্যাপিয়েন্স হয়ে উঠেছে তার ব্যাখ্যা চমৎকার ভাবে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। বইটি ভালো ভাবে বুঝতে হলে পৃথিবীর ঈশ্বরবাদী ও নিরীশ্বরবাদী প্রধান ধর্ম ক'টি বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে এবং মহাবিশ্বের সৃষ্টি বিষয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক তত্ত্ব জানা থাকলে বইটি আরো ভাল লাগবে।মোট কথা আফ্রিকার এক কোনে বিবর্তিত এক নগণ্য প্রানী হোমো স্যাপিয়েন্স পরবর্তী সত্তর হাজার বছরের টিকে থাকার সংগ্রামে টিকে থেকে আজকের মানুষে রূপান্তরিত হোল তারই ইতিহাস হোল এই বইটি। আর ইউপিএল এর বই হলেই যে বানান ভুল পাওয়া যাবে না,তা নিশ্চিত করে বলা যায়না। ৩৩৪ পৃষ্ঠার ৪র্থ লাইনে 'চার' শব্দটির স্হলে বোধহয় ' তার ' শব্দটি বসবে। শেষে বইটির অনুবাদকদ্বয় ও প্রকাশক কে ধন্যবাদ জানাই।আশা করছি ইউপিএল এ ধরনের চিন্তাধারা বই আরো প্রকাশ করবে।
Was this review helpful to you?
or
সুন্দর সাবলীল অনুবাদ। সাথে লেখক নোট গুলিও বেশ পরিস্রম করে করা। হুদাই মানুষ বাজে এবং নেতিবাচক কথা বলতেসে। বই না কিনে Review দেয়া বন্ধ করে দেয়া উচিত।
Was this review helpful to you?
or
এত সুন্দর ও সাবলীল অনুবাদ খুব কম বাংলা বইয়েই আছে। যারা অনুবাদের ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন তারা হয় বইটি পড়ে দেখেন নি, অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে
Was this review helpful to you?
or
সবার রিভিউ দেখে প্রথমে ভাবতেছিলাম নিব না। কিন্তু রকমারি শুরুতে কিছু পড়ে দেখার যে সুযোগটা রেখেছে তা পড়ে আমার বেশ ভালোই লেগেছে। বাক্যগুলোকে অনেকটা ছোট ছোট করে সাজানোই অনেকের হয়তো তা পছন্দ হয়নি। কিংবা আরো একটা কারণ থাকতে যেটা বইটা পড়ার পর বুঝতে পারব। তাই অর্ডার করেই দিলাম।
Was this review helpful to you?
or
বইটার অনুবাদ অনেক ভাল,অনেক সাবলীল।অনুবাদক অনেক শ্রম দিয়েছেন এই অনুবাদের পেছনে তা পড়লেই বোঝা যায়।বইটি কেনার আগে সংশয়ে ছিলাম যে বইটা কি আসলেই খারাপ?কিন্তু বইটি পড়ার পর দেখলাম বইটির অনুবাদ অনেক ভালো।কেন যে অনুবাদটিকে অখাদ্য,বাজে বলা হয়েছে তা বুঝলাম নাহ!
Was this review helpful to you?
or
নাহ.. ইউপিএলের ভার্সনটা দেখতে সুন্দর হলেও অনুবাদের মান নিম্ন। বাইন্ডিং + পেইজ কোয়ালিটিও ভালো মানের না। অনুবাদ কেমন যেন ছাড়া ছাড়া লাগলো।
Was this review helpful to you?
or
অনুবাদের যান্ত্রিক, আঁশটে গন্ধটা নাই। কেন যে সবাই অনুবাদের ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন জানিনা। অনুবাদক ফয়েজ আহমেদ এবং প্রত্যাশা প্রাচুর্য-র এই চেষ্টা প্রশংসনীয়।