User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ভুলতে চাওয়া ভুলের মুখোমুখি - তানিম ইশতিয়াক প্রতিটি মানুষের একটি একান্ত গল্প থাকে। কারোবা থাকে গল্পের মতো জীবন। কেউ উচ্ছ্বাস নিয়ে গল্প বলে যায়, কেউ দুঃসহ ভার নিয়ে লুকিয়ে রাখে আস্ত জীবন। ঘটন-অঘটনে ভরা মানুষের এসব বিচিত্র ও স্বতন্ত্র গল্পগুলো তুলে আনেন ঔপন্যাসিক-গল্পকাররা। গল্প বলে যাওয়া সেসব গল্পকারের জীবনেও থাকে প্রাসঙ্গিক প্লট, বিস্তৃত ক্যানভাস। কিন্তু চাইলেই কি সেইসব গল্প বলা যায়? জীবনচক্রের কোনো একটি ভুল ব্যথাতুর অনুতাপ হয়ে গেঁথে থাকতে পারে মস্তিষ্কে। শত মানুষের শত ভুল-শুদ্ধের ঘটনা বলে যাওয়া একজন মানুষ যদি নিজের জীবনের গল্পটি না বলতে পারে, হাহাকারে ভরে ওঠে বুক। কিন্তু নির্ভার হওয়ার আয়োজন করতে গেলেই ভুলতে চাওয়া সেই ভুলের মুখোমুখি হতে হয়। এমনই দ্বন্দ্বমুখর বিব্রতকর অভিজ্ঞতার আখ্যান নিয়ে উপন্যাস লিখেছেন গল্পকার সোহেল নওরোজ। বইয়ের নাম- গল্পটি শুনতে চেয়ো না। গড়গড়িয়ে গল্প লেখা নওরোজের প্রথমবার পরিচিতি ঘটল ঔপন্যাসিক হিসেবে। উপন্যাসের প্লট হাফিজুল হক নামের একজন লেখককে নিয়ে, যিনি একটি উপন্যাস লিখছেন। হাফিজুল হকের লেখার একটি বিশেষ কৌশল পাঠককে আকৃষ্ট করে শুরুতেই। তিনি প্রথমে তার গল্পের চরিত্রগুলোর ছবি আঁকেন। ছবি আঁকা আর লেখা দুটো সমান্তরাল গতিতে চলে। আমরা পাঠকেরা যেমন কোনো গল্প পড়তে গেলে মস্তিষ্কের অদৃশ্য স্ক্রীনে একটি ছবি ভাসতে দেখি। সেই চরিত্রের চলাচল, কার্যক্রম, হাসি-কান্না আমরা কল্পনায় দেখতে পাই; তারপর তার পুরো ভূমিকা অনুযায়ী নায়ক-খলনায়ক, ভালো-খারাপের ছাপ লাগিয়ে দেই; হাফিজুল হকের লেখার কৌশল ঠিক তেমনই। তার গল্প লেখা যখন শেষ হয়, ছবি আঁকাও সম্পূর্ণ হয়। চরিত্রগুলোই যেন লেখককে দিয়ে তাদের ভূমিকা লিখিয়ে নেয়। হাফিজুল হক এখন যেসব চরিত্র নিয়ে কাজ করছেন, তা যেন ধীরে ধীরে তার নিজের জীবন ও জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর অবয়ব পরিস্ফূটিত হচ্ছে। একজন লেখক যতই চরিত্র নিয়ে খেলা করুক, তার অভিজ্ঞতায় দেখা কিংবা নিজের যাপিত জীবনটাই যে সেখানে বড় প্রভাব ফেলে, সেই সত্যটাও বেরিয়ে আসে এই লেখকজীবনের গল্প থেকে। মূল গল্পের শুরুটা এতিমখানায় বেড়ে ওঠা দুজন কিশোরকে দিয়ে। এই দুই কিশোর এতিমখানার কড়া নিয়মকানুনে অভ্যস্ত হতে না পেরে এবং কৈশোরিক উদাসীনতার শাস্তি এড়াতে এক রাতে পালিয়ে যায়। এই ঘটনার বড় প্রভাবক চরিত্র অনিকেত। জীবন সম্পর্কে তার রয়েছে এক সন্নাসী দৃষ্টিভঙ্গি। রহস্যময় এই পৃথিবীর মতো তার রয়েছে নিজস্ব কুয়াশাচ্ছন্ন ভাবজগত। এতিমখানা থেকে নাহিদকে নিয়ে পালানোর পর কিছুদিন তারা একসঙ্গে থাকে। একদিন অনিকেত তার আপন পথেই অদৃশ্য হয়। নাহিদ আশ্রয় পায় এক সমাজকর্মীর বাসায়। সেখানে থেকে পড়াশোনা করে। কলেজে ভর্তি হবার পর নাহিদ ওই পরিবারের মায়াজাল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়। ঠিকানা হয় মেস থেকে মেসে। সেখানেই লেখক হাফিজুল ওরফে হাসিবের সঙ্গে নাহিদের পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা। এমন সহজ সরল জীবনের গতিপথে লেখক পাঠকদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। যেখানে নানা জটিলতা থাকলেও বাঁকে বাঁকে রোমান্স ও নাটকীয়তা ছিল। কিন্তু মূল মোড় পরিবর্তন হয় নাহিদের আশ্রয়দাতার মেয়ে তাহিয়ার আত্মহত্যায়। এর পেছনে দায়ী বখাটেদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে গিয়ে অনাকাক্সিক্ষত এক ফাঁদে পড়ে যায় হাসিব। তার ফল হয় ভয়ংকর ও বীভৎস। উপন্যাসের এই পর্যায়ে আর এগুতে পারছিলেন না হাফিজুল হক। একটা অদৃশ্য কোমল হাত তাকে আটকে দিচ্ছিল বাকি ঘটে যাওয়া সেই কাহিনি লিখতে। হাফিজুল হক লিখতে না পারলেও সোহেল নওরোজ পাঠকদের জানিয়ে দিয়েছেন তার আগাগোড়া। সবাই জানলেও জানে না হাফিজুল হকের মেয়ে অর্পা। সোহেল নওরোজের মুনশিয়ানা হচ্ছে, এই পুরো ব্যাপারটা তিনি দারুণ চিত্রনাট্যে সাজিয়েছেন, যেখানে হাফিজুল হক, অর্পা আর পাঠক- তিন পক্ষের জন্য তিনটি লেয়ার তৈরি করেছেন। মাঝখানে রেখেছেন সূক্ষ্ম পর্দা। সেখানে পাঠক হয়েছেন দর্শক। তারা দেখতে পাচ্ছেন হাফিজুল হকের গল্প লেখার কায়দা ও বর্তমান স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে জীবন যাপন। হাফিজুলের লেখার প্রথম পাঠক ও সমালোচক অর্পা। তিনিও মেয়ের সঙ্গে লেখালেখির আলোচনায় দারুণ মজে ওঠেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার কাছেই লুকাতে হয় এই গল্পের মূল দৃশ্য। না হলে হাসিব নামের চরিত্রের স্কেচটি হাফিজুল হকের অবয়ব নিয়ে সামনে দাঁড়াবে। তখন সহ্য হবে না বাবার কিংবা মেয়ের। তাই রহস্যময় অনিকেতের বিমূর্ত ব্যক্তিত্বই হাফিজুল হকের আরাধ্য হয়ে ওঠে। মেয়েকে ’গল্পটি শুনতে চেয়ো না’ চিরকুট লিখে ভরা পূর্ণিমার ঘরপালানো জোছনায় তিনি রাস্তায় নেমে যান। আর সত্যিই দেখা পান অনিকেতের। এ কি কাকতালীয়, নাকি প্রকৃতির অদ্ভুত সমীকরণ? কে জানে!
Was this review helpful to you?
or
মানুষের জীবনের সব গল্প কি বলা যায়? বোধহয় না। কিছু গল্প এতটাই ব্যক্তিগত যে তা কেবল ব্যক্তির ভেতরেই সীমাবদ্ধ রয়ে যায়। সেসব গল্প কখনো উসকে উঠে মনের ভেতর হাহাকারের ঝড় তোলে। বাড়িয়ে দেয় আক্ষেপ, বিষণ্নতা। মনে হয়, এ গল্পটা জীবন থেকে মুছে ফেলা সম্ভব হলে বেশ হতো। কিন্তু জীবনের গল্প মুছে ফেলার মতো কোনো ইরেজার নেই। গল্প বলা একজন মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া তেমন একটি গল্প, যা তিনি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন; সেটিই হঠাৎ সামনে চলে আসে। তিনি অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। লেখকের সামনে তার একমাত্র কন্যা আর বলতে না পারা গল্প। এ দুটোকে পাশাপাশি রাখতে না পেরে তিনি অন্য এক জীবনের সন্ধানে নামেন। যে জীবনের গল্প তিনি তার বন্ধুর মুখে শুনেছিলেন। একজন লেখকের জীবনের এমন দ্বন্দ্বমুখর গল্প নিয়েই সোহেল নওরোজের প্রথম উপন্যাস ‘গল্পটি শুনতে চেয়ো না’।