User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন . . . . .
Was this review helpful to you?
or
VALO BOI
Was this review helpful to you?
or
good to read
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ এই পথে আলো জ্বেলে লেখকঃ আনিসুল হক প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ প্রকাশনীঃ প্রথমা। ------------------------- উপন্যাসের শুরুটা ১৯৬২ সালের আষাঢ়ের এক সকালের স্মৃতিতে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার সড়কের ৬৭৭ বাড়ির এক জলসার চিত্র। তারপর যেখানে উঠে এসেছেন ৬২র ছাত্র আন্দোলনের নায়কেরা। ৬৬'র ৬ দফার আদ্যপ্রান্ত, রাজনীতির হালচাল, বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমেদ সহ রাজনৈতিক বন্দীদের কারাগারের জীবন, এক বিদ্রাহী নারীর দৈনন্দিন সংগ্রাম, অজস্র যাত্রা। কি অবিচল, ক্ষুরধার যিনি কঠিন বিপদেও অবিচল থাকেন।
Was this review helpful to you?
or
Good book
Was this review helpful to you?
or
বেগম মুজিব দাওয়াত করেছেন কয়েকজনকে। কিশোর কামাল সেতার বাজিয়ে শোনাল। শেখ মুজিব গান ধরলেন, ভাটিয়ালি গান। ধানমন্ডির বাসায় বসে কামরুদ্দীন আহমদ সে-স্মৃতি চারণ করছেন যখন, তখন শেখ মুজিব কারাগারে। ছয় দফা দেওয়ার পর আইয়ুব খান তাঁকে একটার পর একটা মামলা দিয়ে বন্দী করে রেখেছে। কিন্তু দেশের মানুষ রক্তের দামে ছয় দফা দাবিকে অপরিহার্য করে তুলছে।
Was this review helpful to you?
or
এ উপন্যাসে আছে বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, তার নায়কদের কথা, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবি উত্থাপন, তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা আন্দোলন, তার গ্রেফতারের পর গ্রেফতার হওয়া, সর্বংসহা সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছা রেনুর সংগ্রাম, শেখ হাসিনার সক্রিয় ছাত্ররাজনীতিতে আসা, মওলানা ভাসানীসহ বামপন্থীদের ভূমিকা, জেলে তাজউদ্দীনের জীবন, পিতার সান্নিধ্যবঞ্চিত শেখ মুজিবের ছোট ছেলেমেয়েদের দুঃখ-বেদনা আনিসুল হক এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে পড়তে গিয়ে মনে হবে বর্ণিত ঘটনাগুলো চোখের সামনে দিব্যি ঘটে চলেছে। আনিসুল হকের লেখা এই উপন্যাস ১৯৬২ থেকে ১৯৬৯ কালপর্বের বাংলাদেশের এক মহা আখ্যান।
Was this review helpful to you?
or
বঙ্গবন্ধুর কারাগারের রোজনামচা, কিছুটা নির্মলেন্দু গুনের আত্মজীবনী, আর কামরুদ্দিন আহমেদ এর লেখা। সব মিলিয়ে উপন্যাসের আদলে তৈরি অসাধারন ইতিহাস। যারা ভোর এনেছিল, উষার দুয়ারে, আলো আধারের যাত্রী, এর পরে এই বইটি। ৯-১০ ক্লাসের ইতিহাস পড়ে যারা বিরক্ত, মুখস্থের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছেন। তাদের এই বই গুলি মনে করিয়ে দিতে পারে ইতিহাস মানে খালি সাল মুখস্থ নয়, ইতিহাস পড়ে উপলব্ধি করতে হয়, অন্তরে ধারন করতে হয়। এই বই গুলো হতে পারে সেদিকের এক পাথেয়। বঙ্গবন্ধুর দেশের জন্য আত্মত্যাগ, ৬৯ এর রক্তাক্ত দিনগুলি, বিক্ষোভে উন্মাতাল দিন। আরেকটা বিষয় হল-ইতিহাসের বইগুলি বেগম মুজিব খুব কমই স্থান পেয়েছে-অথচ এই মুজিবের পিছনে সাহস শক্তি যুগিয়েছেন বেগম মুজিব। নবম থেকে দ্বাদশ খালি মুখস্থ ইতিহাস পড়ালে চলবে না। ইতিহাস পড়ে পড়ে চোখে পানি আসবে, নতুন নতুন মুজিবের শক্তি ছড়িয়ে পড়বে সবার মাঝে। দেশের প্রতিটা স্কুল কলেজে পৌছে যাক এই বই। সবাই বই পড়ে অনুভব করুক, যে সেই অন্ধকারে সমরে, দমবন্ধ করা সময়ে দেশের আশা ভরসার একমাত্র প্রতীক হয়ে ছিলেন বন্ধবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
Was this review helpful to you?
or
বাঙালি জাতির গর্ভে যখন "বাংলাদেশ " নামে পৃথিবীর প্রথম ও একমাত্র বাঙালি রাষ্ট্রটির ভ্রুন বেড়ে উঠেছে তখন তার ধাইমা হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির গর্ভে বেড়ে উঠা ভ্রুণ " বাংলাদেশ" নিয়ে ধাইমা শেখ মুজিবুর রহমানকে যে হ্যাপা পোহাতে হয় তারই খণ্ডচিত্র মিলবে আনিসুল হকের লেখা এই বইটিতে। মাধ্যমিক শ্রেনীর ছেলেমেয়েদের উপযোগী চমৎকার একটা বই এটি।
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ, যে দেশ সৃষ্টির নৈপথ্যে রয়েছে একজন কিংবদন্তির সংগ্রাম। যার জীবন শুরু হয়েছে সংগ্রাম দিয়ে আর শেষ ও হয়েছে সংগ্রামে! যে দেশের মহা আখ্যানের সূচনা হয় এক বর্ষার বৃষ্টিতে যেন তা শেষ হয়েছে ফাগুনে সমারোহতে। যাঁর মূল কেন্দ্রে আবর্তিত হয়েছে মহান এক পুরুষ। যার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৯ সাল সময়পরিসরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের মাটিতে চলমান রাজনৈতিক-সামাজিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত এ উপন্যাসের কাহিনি। লেখকের যারা ভোর এনেছিল,উষার দুয়ারে, আলো-আঁধারের যাত্রীর পরবর্তী খণ্ড এই উপন্যাস 'এ পথে আলো জ্বলে'। উপন্যাসের শুরুটা ১৯৬২ সালের আষাঢ়ের এক সকালের স্মৃতিতে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার সড়কের ৬৭৭ বাড়ির এক জলসার চিত্র। তারপর যেখানে উঠে এসেছেন ৬২র ছাত্র আন্দোলনের নায়কেরা। ৬৬'র ৬ দফার আদ্যপ্রান্ত, রাজনীতির হালচাল, বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমেদ সহ রাজনৈতিক বন্দীদের কারাগারের জীবন, এক বিদ্রাহী নারীর দৈনন্দিন সংগ্রাম, অজস্র যাত্রা। কি অবিচল, ক্ষুরধার যিনি কঠিন বিপদেও অবিচল থাকেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবি উত্থাপন, তাঁকে ঘিরে গড়ে ওঠা আন্দোলন, তাঁর গ্রেপ্তারের পর গ্রেপ্তার হওয়া, সর্বংসহা সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছা রেনুর সংগ্রাম, শেখ হাসিনার সক্রিয় ছাত্ররাজনীতিতে আসা, মওলানা ভাসানীসহ বামপন্থীদের ভূমিকা, জেলে তাজউদ্দীনের জীবন, পিতার সান্নিধ্যবঞ্চিত শেখ মুজিবের ছোট ছেলেমেয়েদের দুঃখ-বেদনা আনিসুল হক স্যার এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে পড়তে গিয়ে মনে হবে বর্ণিত ঘটনাগুলো চোখের সামনে দিব্যি ঘটে চলেছে। এই পৃষ্ঠা পড়তে গিয়ে কিছুক্ষণ থেমে থাকলাম, অশ্রুতে বিমোরিত হলাম, আহ্!আমাদের কি কষ্টের ইতিহাস! ঘটনার মুখে শেখ মুজিব ‘মাটিতে বসে পড়লেন। বাংলার ধূলিমাটি তিনি স্পর্শ করলেন পরম মমতায়।’ তারপর ‘বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, “আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি।” দেখতে দেখতে এসে যায় আটষট্টি সাল। শুরু হলো কথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। আগরতলা মামলায় জড়ানো হলো জাতির এই কিংবদন্তিকে, কারাগারে থাকতে হলো দীর্ঘদিন। এই ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিতে ফুঁসে উঠল ছাত্রসমাজ। তারা সারা দেশে গড়ে তুলল ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’। শুরু হলো মিছিল। সংগ্রাম। সৃষ্টি হলো গণজোয়ার। এই সংগ্রামে, মিছিলে গেল কত প্রাণ! ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যখন জেল কর্তৃপক্ষের পদস্থ আঞ্চলিক সেনাপ্রধান মোজাফফর আহমেদ এসে বলেন, তাঁকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। সন্দেহ হয় মুজিবের। মাথা উঁচু করে বাইরে বেরিয়ে দেখতে পান সামরিক বাহিনীর গাড়ির বহর। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলছেন 'আপনি প্যারোলে মুক্তি নেন।' তিনি বললেন, 'আমার নাম মুজিবুর রহমান। আমি কথার নড়চড় করি না।' তার এই অনুপ্রেরণার মূলে রয়েছে তাঁর স্ত্রী রেণু। বারবার চোখ ভিজে আসছিলো কতোখানি শক্তিমান আর বিদ্রোহী সে অনিন্দ্য নারীটি। যিনি এত্ত বিপদের পর ও স্বামীকে সাহস, অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রিয়তম স্বামী জেলে অথচ তিনি কষ্ট লুকিয়ে দৃঢ চিত্তে এগিয়ে নিচ্ছেন একটি দেশের মানুষকে নিয়ে। কারাবন্দী বাবাকে লেখা রেহানার আবেগঘন চিঠি থরথর করে দিবে প্রতিটি পাঠকের হৃদয়কে,চিঠির কথাগুলো নিয়ে যাবে হৃদয়ের গভীরতায়! অশ্রুতে ভাসবে পাঠকের চোখ! "আব্বা আপনার কথা খুব মনে পড়িতেছে। এবার কি আমি আপনাকে প্রথম ফুল দিতে পারিবো না? যদি ১৭ মার্চ আমাদেরকে দেখা করতে দেয়, তাহা হইলে অবশ্যই আমি আপনার জন্য বেলি ফুল নিয়া যাইব।" দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর শেষে শেখ মুজিবের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হলো , সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তরফ থেকে তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধীতে ভূষিত করা হয় তাকে। এই উপন্যাসে উঠে আসলো আরেক কিংবদন্তি তাজউদ্দীন আহমেদের সংগ্রামের কথা, যার সংগ্রামের পিছনের আরেক নারীর অবদান লিলি তথা জোহরা তাজউদ্দীনের সংগ্রাম। এই উপন্যাসে উঠে আসে শেখ হাসিনার রাজনীতির উত্থান, তাঁর বিয়ে; কবি নির্মলেন্দু গুনের বাউন্ডুলে জীবন, কবিতার আকুতি। . মিছিলের স্লোগানে যখন সাথে জনতার কন্ঠে রব উঠে "আয়ুবশাহির গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে। জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব।" তখন মনে হয় আমিই যেন মিছিলে শামিল। মাকে লেখা মতিউরের আবেগঘন চিঠি, "মা, মিছিলে যাচ্ছি। যদি ফিরে না আসি, মনে করো মা তোমার ছেলে বাংলার মুক্তির জন্য শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য জীবন দিয়েছে।" এই চিঠি যেন এক সন্তান নিশ্চিত মৃত্যু যেন ও মরতে যাচ্ছে সে পথে। কারণ- সে পথ ভালোবাসার পথ, দেশের পথ, ন্যায্যতার পথ,অধীকার আদায়ের পথ,এই কখনো থেমে থাকে না কারণ এই পথেই আলো জ্বলে! চিঠিটি পড়ে অশ্রু সংবরণ করতে পারলাম না। এভাবে দুঃখ বেদনায় বর্ণিত হয়ে 'এই পথে আলো জ্বলে' উপন্যাস। পাঠ সমালোচনা ও মন্তব্যঃ বঙ্গবন্ধুর কারাগারের দিনলিপি। ত্রিকালদর্শী ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী একে অপরকে বলছে সেই কাহিনী। দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি শেখ মুজিবের ভালোবাসা, ভালোবাসার টানে মিছিলে শামিল হওয়ার ঘটনা এবং কারাগারে শেখ মুজিবুর মনবল যেভাবে নিক্ষুত ও সূঙখানো ও সাবলীল ভাবে লেখক, তুলে ধরছেন তা সত্যি প্রশংসানীয় আমাদের করুণ ইতিহাসের বইয়ের প্রতিটি লাইন যেন ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো কল্পনায়। আমি যেন তাদের সামনেই বসে আছি। আমার বিশ্বাস প্রতিটি পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে এই বই, বইয়ের চরিত্রে আবেগপ্রবণ হয়ে যাবে সবাই। বইয়ের শিক্ষাঃ ০১.নিজের জীবন থেকে ও মাতৃভূমিকে বেশি ভালোবাসা। ০২দেশ রক্ষায় ঝাপিয়ে পড়া। ০৩.যেকোন বিপদে মনোবল না হারিয়ে সাহস অনুপ্রেরণায় এগিয়ে যাওয়। ০৪. যেকোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বুদ্ধি ও বিচুক্ষণতার সাথে জাস্টিফাই করা। ০৫.সততা আর ন্যায্যা অধীকারে জন্য নিজেকে সংগ্রামে লিপ্ত করা বই সম্পর্কিত তথ্য ? বইয়ের নামঃ এই পথে আলো জ্বলে লেখকঃ আনিসুল হক প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ প্রকাশনীঃ প্রথমা।
Was this review helpful to you?
or
এমন ভালো একটা বই অনেক কম পড়েছি।
Was this review helpful to you?
or
বইটি অনেক ভালো, পরে ভালো লাগলো।
Was this review helpful to you?
or
এই পথে আলো জ্বেলের খসড়া হতেঃ কিছু সুন্দরের বয়ানঃ আগুনের পরশমণি কখনো কখনো স্পর্শ করে একটা জাতিকে। কখনো কখনো ব্যক্তিমানুষ এবং সম্মিলিত মানুষ নিজেদের মধ্যে ধারণ করে মহাকাশের বিশালত্ব, অতলান্ত সমুদ্রের গর্জন, মহামানবের চিরকালের অভ্যুদয়-সম্ভাবনা। কখনও কখনও ব্যক্তিমানুষ নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থচিন্তার অনেক ওপরে যায় উঠে। কী জাদুস্পর্শে ১৯৬৯ সালে বাংলা ভূখ-ের মানুষ জেগে উঠেছিল মহামহিমায়। বাংলাদেশের প্রতিটা জনপদের মানুষ যেন জেগে উঠেছিল মহাজাগরণে। প্রতিটা রাজপথ হয়ে উঠেছিল মিছিল, প্রতিটা মহল্লা হয়ে উঠেছিল প্রতিবাদী সমাবেশ, প্রতিটা মানুষ হয়ে উঠেছিল একেকজন ভ্যানগার্ড। ২৪ জানুয়ারি ১৯৬৯। ভোরবেলা থেকেই মানুষ বেরিয়ে আসতে থাকে রাজপথে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এই দিন ডাক দিয়েছে প্রতিবাদ দিবসের। রাস্তায় কোনো যানবাহন নেই। নির্মলেন্দু গুণ হাঁটছেন। আজ হরতাল, কোনো যানবাহন নেই। ব্যারিকেড চতুর্দিকেই। ভালোবাসা তোমাকেও নগ্নপদে হেঁটে যেতে হবে। হেলাল হাফিজ যোগ দিয়েছেন মিছিলে। তিনি বিড়বিড় করছেন, এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। মিছিলের সব পা কণ্ঠ এক নয়। এখানে সংসারি থাকে, সংসার বিবাগী থাকে। কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার। কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার। মিছিলে হাঁটছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মিছিলে হাঁটছে স্কুলের বালক। ওই তো সারিবদ্ধভাবে মিছিল নিয়ে এলো মেয়েদের হল থেকে একদল ছাত্রী। মিছিলে হাঁটছে কারখানার শ্রমিক। রিকশা গ্যারাজে তালা মেরে রেখে এসেছে একদল রিকশাওয়ালা। রাস্তার ভবঘুরেরা আজ কাজ পেয়েছে, মিছিলের চেয়ে বড় কাজ আর কী হতে পারে। মিছিলে নেমে এসেছেন কেরানি আর সাহেবেরা। ওয়াপদার পরিচালক আর ডিআইটির সভাপতি। মিছিলে তাদের পাশে হাঁটছেন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি আর পরিবহন শ্রমিকেরা। মিছিলে এসেছেন সওদাগর অফিসের কনিষ্ঠ কেরানি আর মতিঝিলের বড় ব্যাংকার। মিছিলে নেমেছেন কোটিপতি ঠিকাদার আর নিঃস্ব রিক্ত দীন ভিখিরি। মিছিলে নেমে এসেছে তন্দুরে রুটি সেঁকা বাবুর্চি আর ডালপুরি বানানো চা-দোকানের গাড়িগড়। মিছিলে এসেছে দোলাইখালের ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি আর মেথর পল্লি থেকে ধাঙরেরা। একদল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ এসেছে সাদাছড়ি নিয়ে। টঙ্গি গাজিপুর তেজগাঁ আদমজি থেকে এসেছে কারখানার শ্রমিকেরা। বাস-ট্রাক বন্ধ করে মিছিলে নেমে এসেছেন পরিবহন শ্রমিকেরা। তাদের পাশে হাঁটছেন বাসট্রাকের মালিকেরা। সবার হাত মুষ্টিবদ্ধ। সবার চোয়ালে ইস্পাতের দৃঢ়তা। সবাই স্লোগানে স্লোগানে কাঁপিয়ে ফেলছেন আকাশ বাতাস ইমারত যানবাহন। আদালত থেকে গাউন পরে বেরিয়ে আসছেন উকিলেরা। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরাও আজ মিছিলে। মিছিলে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপকেরা। মিছিলে এসেছে নাম না জানা খালিপা অসংখ্য মানুষ। মিছিলে এসেছে নবকুমার স্কুলের ছাত্ররা। প্রধান মিছিল বেরিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে। সেই মিছিলে আছেন তোফায়েল আহমেদ। সেই মিছিলেই হাঁটছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। মিছিল এগুচ্ছে। সামনে পুলিশ। মিছিল এগুচ্ছে। পেছনে ইপিআরের এলএমজি সাজানো কনভয়। মিছিল এগুচ্ছে। সহসা আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে শোনা গেল টিয়ার সেলের শব্দ। সেই শব্দকে ঢেকে দিয়ে স্লোগান উঠছে: তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা। জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো। আয়ুবশাহির গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে। জেলের তালা ভাঙব শেখ মুজিবকে আনব। ১১ দফা ১১ দফা মানতে হবে মানতে হবে। টিয়ার সেল পড়ামাত্র সেটা ধরে পাল্টা পুলিশের দিকে ছুড়ে মারছে মিছিলকারীরা। এগিয়ে যাচ্ছে মিছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে হাইকোর্ট হয়ে মিছিল এগুচ্ছে প্রেসক্লাবের দিকে। মিছিল চলছে।সামনে পড়ল একজন মন্ত্রীর বাড়ি। ছুটে গেল কয়েকজন। আপনারা বাড়ি থেকে বের হন। এই বাড়িতে এখন আগুন দেওয়া হবে। ত্রস্ত মন্ত্রীগৃহবাসী পড়িমরি ছুটতেই আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করতে লাগল মন্ত্রীবাড়িটিকে। পুলিশ আর ইপিআর এখন মরিয়া বেপরোয়া। চালাও গুলি। গুলি চলল। নির্মলেন্দু গুণের কানের কাছ দিয়ে আগুনের শলাকার মতো ছুটে যেত লাগল সীসার বুলেট। তিনি তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লেন। ওই এখানে একটা কিশোর শরীর লুটিয়ে পড়ল। ওই দিকেও গুলি হচ্ছে। আরো মারা যাচ্ছে। হাসপাতালে নিতে নিতে মারা গেল চার কিশোর, আলমগীর, রুস্তম, মকবুল আরো এক নাম না জানা মানুষ। মানুষ ছুটছে হাসপাতালে। তারা রক্ত দান করতে চায় গুলিবিদ্ধ সহযোদ্ধাকে। না তারা মারা গেছে। কান্নার রোল উঠল গেন্ডারিয়ায়। কান্নার রোল উঠল ফকিরের পুলে। আজহার আলী মল্লিককে কে যেন বলল, তোমার ছেলে মতিউর হাসপাতালে, গুলি খাইছে। আজহার আলী ন্যাশনাল ব্যাংকের ক্লার্ক। তিনি ছুটতে লাগলেন হাসপাতালের দিকে। সেখানে চারটা লাশ তিনি উল্টেপাল্টে দেখলেন। রক্ত অভিন্ন, কিন্তু মানুষ তো অভিন্ন নয়। এখানে তো তার ছেলে নাই। তোফায়েল আহমেদ ছিলেন কিশোর মতিউরের পাশে। লাশ নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা গেছে মতিউর। তাকে কাঁধে করে নিয়ে মিছিল চলেছে ইকবাল হলে। সেখানে সেই কিশোরের রক্তাক্ত জামার পকেটে পাওয়া গেল একটা চিরকুট। গোটা গোটা হাতে লেখা: মা, মিছিলে যাচ্ছি। যদি ফিরে না আসি, মনে করো মা তোমার ছেলে বাংলার মুক্তির জন্য শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য জীবন দিয়েছে। ইতি মতিউর মতিঝিল ব্যাংক কলোনি ইকবাল হলের মঞ্চের সামনে মতিউরের লাশ। লাশ সামনে রেখে ছাত্রনেতারা শপথ নিচ্ছেন হাত উঁচিয়ে, এই হত্যার প্রতিশোধ আমরা নিবই। আয়ুব খানের পতন ছাড়া আমরা ঘরে ফিরে যাব না। স্লোগান উঠছে: শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। মতিউরের বাবা ইকবাল হলের মাঠে হাজার হাজার জনতার সামনে গিয়ে তাঁর ছেলের মৃতদেহের পাশে দাঁড়ালেন। ছাত্ররা তাঁকে তুলে দিল মঞ্চে। তিনি মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ালেন। তাঁর চোখে একটা ফোঁটা অশ্রু নাই। তিনি বলছেন: আমি ন্যাশনাল ব্যাংকের সামান্য কর্মচারী। আমার ছেলে মতিউর নবকুমার ইন্সিটিউটের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান শাখার একজন মেধাবী ছাত্র। মতিউরের শাহাদতবরণে আমার কোনো দুঃখ নাই। আমি গৌরবান্বিত। সে দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য জীবন দিয়েছে। এদেশের স্বাধিকারের জন্য জীবন দিয়েছে। আমি দেখছি হাজার হাজার ছাত্র তরুণ জনতা আমার সামনে। আমি এক মতিউরকে হারিয়ে লক্ষ মতিউরকে পেয়েছি। ছাত্ররা ফুলে ফুলে ঢেকে দিল মতিউরের লাশ। তারাই কাঁধে তুলে নিয়ে লক্ষ মানুষের মিছিলসমেত এগিয়ে চলল মতিঝিলের দিকে। মধুমিতা সিনেমা হলের পেছনে কলোনির বাসায় তারা পৌঁছে দিল মতিউরের দেহ। সঙ্গে হেঁটে হেঁটে এলেন ডাকসু সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ, এলেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা শামসুজ্জোহা প্রমুখ। মানুষ আরো মারমুখী। আজ যেন তারা সব শোষণ বঞ্চনা রাগক্ষোভ অভিমানের প্রতিশোধ নিয়ে নেবে। তারা মিছিল নিয়ে যাচ্ছে আগরতলা মামলার এক বিচারপতির বাড়ির দিকে। আগুন লাগিয়ে দিল তারা সেই বাড়িতে। তারা এবার হামলা করতে গেল মর্নিং নিউজ অফিসে। অভিযোগ প্রেসট্রাস্টের পত্রিকা দুটো সরকারের দালাল। তারা লেখে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে। প্রেসট্রাস্টে হামলা করতে চলল উন্মত্ত জনতা। এই মহাস্রোতধারা কে রুখবে? মনে হচ্ছে সুন্দরবন থেকে এক লক্ষ বাঘ গর্জন করতে করতে চলে এসেছে মতিঝিলে। মনে হচ্ছে, পদ্মা মেঘনা যমুনা করোতয়া তিস্তা সব নদনদীর জল পাহাড় থেকে ঢল হয়ে নেমে ঢুকে পড়েছে মতিঝিলের রাস্তায়, রাস্তাকে নদী ভেবে দুকূল প্লাবিত করে সব কিছু ভেঙেচুরে ডুবিয়ে ভসিয়ে তাড়িয়ে নিয়ে তারা চলেছে প্রেস ট্রাস্টের দিকে। পথে পড়েছে মুসলিম লীগের এমএনএ লশকরের বাড়ি। তিনি পূর্ব পাকিস্তানে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বানানোর বিরোধিতা করেছিলেন। লশকরের বাড়িতেও আগুন দেয়া হচ্ছে, কেউ কারো কথা শুনছে না। আগুন লেগেছে রক্তে মাটির গ্লোবে। জনতা প্রেস ট্রাস্টের ভেতরে ঢুকে মনিং নিউজ প্রেসে দিল আগুন লাগিয়ে। নির্মলেন্দু গুণ তখন তার দীর্ঘ দেহ লম্বা পাঞ্জাবির হাতা থেকে হাতটা উত্তোলিত করে বলতে লাগলেন, ভাইসব, আপনারা দৈনিক পাকিস্তানে আগুন লাগাবেন না, কারণ এটাতে আমাদের মতো কবিদের কবিতা ছাপা হয়, এর সাংবাদিকেরা সবাই আমাদের আন্দোলনের সমর্থক। আপনারা আমার কথা শুনুন। চলুন আমরা আরো সামনে এগিয়ে যাই। ফলে দৈনিক পাকিস্তানের ছাপাখানা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগুন নেভাতে ঘণ্টি বাজিয়ে দমকল আসে। জনতা দমকলে ঢিল মারতে শুরু করলে পুলিশ ফের গুলি। আরো একজন লুটিয়ে পড়ে রাজপথে... নির্মলেন্দু গুণ ফিরে গিয়ে কবিতার খাতা বের করেন। তার ঘুম আসে না। তিনি লিখতে থাকেন: তুমি বোললে তাই, আমরা এগিে গেলাম, নিষ্পাপ কিশোর মরলো আবদুল গণি রোডে ৷ তুমি বোললে রাজপথ মুক্তি এনে দেবে, আমরা ভীষণ দুঃখী, নিপীতি শত-অত্যাচারে 'গীতাঞ্জলি' অকর্মণ্য হবে; আমরা তাই রঙিন-প্ল্যাকার্ড সাজিয়েছি মাও সে তুং, গোর্কি, নজরুলে ৷ তুমি বোললে পাপ, ক্রান্তিকালে নির্জনতা, ব্যক্তিগত নিঃসঙ্গতা খোঁজা, আমি তাই আলোড়িত সশব্দ মিছিলে পল্টনের জনাকীর্ণ মাঠে জিন্দাবাদ। আল মাহমুদ লিখে চললেন: ঊনসত্তরের ছড়া ট্রাক ! ট্রাক ! ট্রাক ! শুয়োরমুখো ট্রাক আসবে দুয়োর বেঁধে রাখ। কেন বাঁধবো দোর জানালা তুলবো কেন খিল ? আসাদ গেছে মিছিল নিয়ে ফিরবে সে মিছিল। ট্রাক ! ট্রাক ! ট্রাক ! ট্রাকের মুখে আগুন দিতে মতিয়ুরকে ডাক। কোথায় পাবো মতিয়ুরকে ঘুমিয়ে আছে সে ! তোরাই তবে সোনামানিক আগুন জ্বেলে দে! চারদিকে আগুন। চারদিকে স্লোগান। চারদিকে মিছিল। চারদিকে প্রতিবাদ। এ-রকম বাংলাদেশ কখনো দেখেনি কেউ। শিল্পী-সাহিত্যিক-কবি-গায়ক সবাই নেমে পড়েছেন মিছিলে। ছাত্র মারা যাচ্ছে, শ্রমিক মারা যাচ্ছে, এমনকি পুলিশের গুলিতে মারা যাচ্ছে মায়ের কোলের শিশুও। কারফিউ জারি হচ্ছে প্রতিদিন। আল মাহমদু আরো লিখলেন: কারফিউ রে কারফিউ আগল খোলে কে ? সোনার বরণ ছেলেরা দেখ্ নিশান তুলেছে। লাল মোরগের পাখার ঝাপট লাগলো খোঁয়াড়ে উটকোমুখো সাস্ত্রী বেটা হাঁটছে দুয়ারে। খড়খড়িটা ফাঁক করে দে বিড়াল-ডাকে ‘মিউ’, খোকন সোনার ভেংচি খেয়ে পালালো কারফিউ। *** মওলানা ভাসানি বসে আছেন সাইদ হাসানের বাড়ির বৈঠকখানায়। মোটা মোটা বেতের সোফা। ওপরে কাপড়ে মোড়ানো গড়ি। তার সামনে বসে আছেন হায়দার আকবর খান রনো। আরো দু একজন তার ভক্ত কর্মী। ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯। প্রতিদিন লড়াই হচ্ছে রাস্তায়, প্রতিদিনই কারফিউ। প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে মানুষ। সেই যে ৬ ডিসেম্বর ১৯৬৮ সালে মওলানা ভাসানি শুরু করে দিয়েছিলেন গভর্নর হাউজ ঘেরাও কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। সেই আগুন তো নিভলই না, বরং ছড়িয়ে পড়ল সবখানে। এত ক্ষোভও জন্মেছিল মানুষের মনে! মওলানা ভাসানি বললেন, বুঝলা রনো। ঘটনা কী হইল। আমি একটু গুড় লাগায়া দিছিলাম। আর বাকিটা এমনে এমনে হইয়া গেল। গুড়ের গল্পটা জানো তো! বাড়িত জামাই আইব। ভালো ভালো খাওন পাক হইছে। একটার উপরে আরেকটা হাঁড়ি চাপায়া সাজায়া থুইছে। শয়তানে করল কী, এক ফোঁটা গুড় লাগায়া দিল উপরের হাঁড়িটার ঢাকনাতে। তো গুড়ের লোভে প্রথমে আইল পিঁপড়া। তারপর পিঁপড়া ধরতে আইল টিকটিকি। টিকটিকি দেইখা আইল ইন্দুরে। ইন্দুরে তাড়া করতে আইল বিলাই। বিলাই দেইখা তাড়া করতে আইল কুকুর। কুকুররে তাড়া করল বাড়ির পোলা। কুকুর গেল পাশের বাড়ি। এই বাড়ির পোলারা লাঠি লইয়া পাশের বাড়ি যেই না গেছে ওই বাড়ির পোলারাও লাঠি লইয়া বাইর হইয়া আইছে। লাগল মারামারি। কুকুর মারতে গিয়া বাড়ি পড়ছে বউয়ের পিঠে। তখন তো লাগল প্রলয়ঙ্করী যুদ্ধ। বুঝো। মামলা-মোকদ্দমা! চলতাছে। সেই যে ডিসেম্বরে গুড়টা লাগাইলাম, ডিসেম্বর গেল, জানুয়ারি গেল, ফেব্রুয়ারি আইসা পড়ল, আগুন তো আর নিভে না। কও নিভে! কও ক্যান নিভে না। কারণ বনের আগুন নিভান যায়, মনের আগুন নিভান যায় না। আগুন তো মানষের মনে। (আনিসুল হকের লেখা 'এই পথে আলো জ্বেলে'র খসড়া থেকে