User login

Sing In with your email

Email Address
Password
Forgot Password?

Not Account Yet? Create Your Free Account

Send

Recipients:
Message:

Share to your friends

Copy link:

    Our Price:

    Regular Price:

    Shipping:Tk. 50

    • Size:
    • Color:
    QTY:

    প্রিয় ,

    সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
    মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?

    Please Login to Continue!

    Our User Product Reviews

    Share your query and ideas with us!

    Customer Reviews

      By mumin

      17 Oct 2023 11:36 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      এই প্রথম বইয়ের রিভিউ লিখছি-বইটা পড়া শুরু করেছিলাম খুব আগ্রহ নিয়ে,যা শেষ করার পূর্ব পর্যন্ত একটুও কমে নাই বরং বেড়েই চলছিল। লোকাল ট্রেনে বসে পড়ার শুরু করেছিলাম, বইয়ে এতটাই মগ্ন ছিলাম যে, কখন পকেট থেকে ফোনটা চুরি হয়েছে টেরই পায়নি।কিচ অংশের মিল নিজের চলার পথটার সাথে মিল থাকায় আরো প্রতি লাইনেই আগ্রহ হাজারগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছিলো।টানা ৫০ পৃষ্ঠা পড়লাম আর চিন্তাগুলো সুগঠিত হচ্ছিলো।বইয়ের প্রত্যেকটা লাইন আমাকে আটকে রাখছিলো।শেষ করা অব্দি আমার কোন কিছুই ভালো লাগছিলো না।মাদ্রাসায় ঠিকমতো ক্লাস করাতে পারছিলাম না।প্রত্যেকটা লাইন নতুন অভিজ্ঞতা দিচ্ছিলো।মাঝে মাঝে চোখ জোড়া অশ্রুসিক্ত হচ্ছিলো।ঘঠণার স্থান,অবস্থাগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো।সবশেষ ছাত্র ভাইদের জন্য অজান্তেই দোয়া আসছিলো। আল্লাহ তাদের উত্তম জাজা দান করুক এবং লেখককেই। আমি চাই ১ মিলিয়ন না,সব কয়টা মানুষ এই বইয়ের স্বাদ আস্বাদন করুক।

      By Yasin Arafat

      14 Aug 2023 01:58 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      উনার লেখা প্রথম বই পড়ি এইটা।পড়ার পর থেকে উনার লেখনির আর গল্প বলার ধরনের প্রেমে(ভক্ত)পরি।তারপর পড়লাম দখল, প্রিয় লেখকেদের মধ্যে উনার নামটাও জুরে গেলো।

      By FAYSAL

      26 May 2023 11:50 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      An impressive attempt by a lyricist to write a book that can give u some serene answer but ending was not top notch as it starts

      By Al Amin Sarker

      18 May 2023 05:16 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      সমসাময়িক লেখকদের বই খুব একটা পড়া হয় না, আমি চিরায়ত ভক্ত। তবে লতিফুল ইসলাম শিবলীর আসমান উপন্যাসটি পড়ে বেশ ভালোই লেগেছে। ইসলামী ছোয়ায় একটি চমৎকার আত্মউন্নয়নমূলক উপন্যাস লিখেছেন।

      By Mamun Islamic

      03 May 2023 09:09 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Book Review হৃদয় আল্লাহর ঘর?। মানুষের হৃদয় তৈরি করা হয়েছে শুধু আল্লাহর জন্য। সেখানে অন্য কিছু প্রবেশ করলে শুরু হবে জাগতিক অশান্তি। এভাবেই শুরু হয়েছে বইটি। লিখছিলাম ”আসমান” নামে একটি উপন্যাস বই নিয়ে। যেই জিবনের গল্প জিবনের থেকেও বড়। এই উপন্যাসের স্থান সত্য, কাল সত্য, ইতিহাস সত্য, কাল্পনিক শুধু এর চরিত্রগুলো। গত কয়েক মাসে কয়েক হাজার টাকার বই কিনেছি। সেসব অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোন বই নিয়ে রিভিউ করিনি (বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে সময়,কাল,স্থান উপযুক্ত ছিল না হয়তো)। এর বিশেষত্ব হচ্ছে এটি এমন একটি বই যার রসের পেয়ালা এক চুমকেই শেষ করে ফেলেছি।এর আগে আরিফ আজাদের “জিবন যেখানে যেমন” এই বইটি এক দিনেই পড়া শেষ করেছিলাম। তারপর এটিই প্রথম যা সকালে পড়া শুরু করেছি রাত হতে হতেই শেষ করেছি। ? যারা মুলত বিভিন্ন উপন্যাস পড়তে অভ্যস্থ ইসলামি বইয়ে ঢ়েড় অরুচি, দুনিয়াটা মস্ত বড় খাইদাই ফুর্তি কর এমন টাইপের এটি তাদের জন্য অসাধারণ একটি ডোজ। এখানে দেখানো হয়েছে কিভাবে ওমর নামে এক যুবক লেখাপড়া, খেলাধুলা সবখানে ফাস্ট বয় হয়েও কোন এক কারনে এগুলো তার জিবনে বিষাদ নামিয়ে আনে। সবকিছুই তার জিবনে অর্থহীন হয়ে পড়ে। এরপর জিবন মোড় নেয় অন্য মোড়ে। নেশা আর মিউজিকে আত্মার প্রশান্তি খুজতে থাকে। কিন্তু যে আত্মা এসেছে আসমান থেকে তার আহারও রয়েছে আসমানে। অবশেষে জিবনের নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আলোর খোজ পায় ওমর। একসময় সে তার হৃদয়ে স্থান দিয়েছিল দুনিয়াকে। কেউ একজন ছিল তার শয়নে স্বপনে। কিন্ত তার ঘটল করুণ পরিণতি। পরবর্তীতে সে আগের চেয়েও মুল্যবান জিনিস পেয়েও হৃদয়ে একমাত্র আল্লাহকেই স্থান দিল। আল্লাহ তাকে উত্তম বিনিময় প্রদান করলেন। এভাবেই গড়াতে থাকে কাহিনিটি। যদিও এর পরেও আরো কিছু ঘটনা প্রবাহ রয়েছে। মুলত এটা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের ধানমন্ডি থেকে পাকিস্তানের করাচিতে। সেখান থেকে আফগানিস্তানের কাবুল। সেখান থেকে গুয়ান্তনামো বে, এরপর শেষ ঠিকানা রেডক্রসের শেল্টারে।

      By Asif Iqbal

      16 Apr 2023 01:49 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      এই বইয়ের যে প্লট ফ্ল্যাপে দেয়া আছে, সেটা আসলে কাহিনীর শেষ। আমি এর আগে এমন কোন বই পড়িনি, পুরোটাই এক প্রকার মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি, কিছুটা ধোঁকা। লেখনী খুব আহামরি না হলেও সব মিলিয়ে বইটা খারাপ না কিন্তু যে আগ্রহ নিয়ে বইটা কিনেছি সেখানটাতে ফাঁকি।

      By Md. Nazmul Haque

      09 Feb 2023 05:38 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      কি করে আসমানের রিভিউ লিখবো? সে যোগ্যতা আমার আছে বলে মনে হয় না। আমার পড়া শ্রেষ্ঠ বইগুলোর মধ্যে এটি একটি। ?

      By Hasan Shahriar

      03 Feb 2023 12:48 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      অসম্ভব সুন্দর একটি বই

      By Ratul Uddin

      30 Dec 2022 02:52 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Masha Allah onk besi valo legeche.......

      By Kausar Ahmed Opurvo

      16 Dec 2022 04:59 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      সত্যিই অসাধারণ একটা বই আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে বইটি?

      By Mizanur Rahman

      28 Nov 2022 12:43 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      মন ছুয়ে যায়

      By Amatullah Hassan

      08 Sep 2022 12:54 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      অসাধারণ বই

      By Rahnuma Oshin

      18 Jul 2022 04:46 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Best

      By Niaz Mahmud Chowdhury

      18 Apr 2022 02:32 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      অস্বাধারণ বই❤️

      By Pre Coil

      14 Apr 2022 10:47 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      আমার জীবনে পড়া সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস?। রিভিউ দেওয়ার মতো সাহস বা যোগ্যতা কিছুই নেই।

      By Md Samsur Rahman Nayem

      19 Mar 2022 06:28 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      লতিফ শিবলীর এই বইটি আমি প্রথম পড়ি, বইটি খুবই চমৎকার ছিল। আফগানিস্তান সম্পর্কে আমার ধারণা খুবই নগন্য ছিল। এই বইটি পড়ার কারণে এই ব্যাপারে আরো অনেক পড়াশুনা করি আর আফগানিস্তানের ব্যাপারটা ভালোভাবে বুঝতে পারি। লেখকের লেখাটা এতই চমৎকার যে, পড়ার সময় মনে হচ্ছিল চোখের সামনে ঘটনা ঘটে চলছে। লেখকের জন আল্লাহর কাছে নেক হায়াত কামনা করছি। এবং রকমারিকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি বই আমাদেরকে দেয়ার জন্য।

      By Md Sumon

      25 Jan 2022 03:26 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      খুবই ভালো লাগলো বইটা পড়ে

      By Habibur Rahaman

      22 Sep 2021 04:27 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      অসাধারণ

      By MOHAMMAD NAZRUL ISLAM AKASH

      18 Sep 2021 05:19 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      অসম্ভব সুন্দর একটা বই। শিবলী ভাই অন্তরের অনেক গভীর অনুভবতা থেকে বইটা লিখেছেন। অনেক কিছু জানতে পেরেছি বইটা পড়ে। কিন্তু হার্ডকাভারের বইয়ের দামটা অনেক বেশি হয়েছে বলে মনে হয়েছে। আশাকরি,শিবলী ভাই ভবিষ্যতে ব্যাপারটা ভেবে দেখবেন।

      By arfat shafin

      04 Sep 2021 09:53 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Onek valo ekta boi

      By Soliman Hossain Shovon

      07 Jul 2021 02:37 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      অসাধারন... ❤️❤️ প্রতিটা মুসলিমের একবার হলেও এই বইটা পড়া উচিৎ...

      By Mahbuba Moriom shanta

      13 Jun 2021 12:30 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      রকমারি_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_২০২১ #Rokomari_Book_Club_Review_Competition নিজের নামঃমাহাবুবা মরিয়ম শান্তা বইয়ের নামঃআসমান(the fiction based on fact) লেখক:লতিফুল ইসলাম শিবলী প্রকাশনীঃনালন্দা মুদ্রিত মূল্যঃ৩০০ টাকা ★"যে গল্প জীবনের চেয়ে বড়"★ সারসংক্ষেপঃ হৃদয় আল্লাহর ঘর।মানুষের হৃদয়টা তৈরি করা হয়েছে এ-ই জন্য যে সেখানে শুধুমাত্র আল্লাহ থাকবেন,সে ঘরে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু ঢুকলেই শুরু হবে জাগতিক অশান্তি,,, এ-ই কথা গুলো দিয়ে উপন্যাসটি শুরু হয়। আসমান উপন্যাস টি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে লিখিত একটি উপন্যাস।এ-ই উপন্যাস এর মূল চরিত্র ওমার রিজওয়ান,ঢাকার কলাবাগানে যার বাসা,ওমারের দুই বন্ধু,একজন হলেন দ্য উইন্ডো ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট রুশো,অপরজন হলেন ইমাম ইসহাক,তিনি ধানমন্ডির একটি মসজিদের ইমাম। ওমারের দুই বন্ধুর জীবনাচারন চুম্বকের এর দুই মেরুর মতো,,রুশো যেমন ড্রাগ এডিক্টেড, ঔদ্ধত্য জীবনাচারনে অভ্যস্ত অপরদিকে বৃদ্ধ ইমাম শুধুমাত্র গতানুগতিক ইসলামের বিশ্বাসী না,,বরং তারসাথে যুক্তি দিয়ে ইসলামের গভীর বিষয়াবলি সম্পর্কে জ্ঞানবান ব্যক্তি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ওমার,,আধুনিক জীবনাবলিতে অভ্যস্ত,, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বন্ধু রুশোর সহায়তা নিয়ে ড্রাগ এর মাধ্যমে সাময়িক প্রশান্তি লাভ করলেও অন্তরে সম্পূর্ণ অশান্তি দূর করে বন্ধু ইমামের মাধ্যমে,কিন্তু বৃদ্ধ ইমাম কিভাবে তার মনে প্রশান্তি সঞ্চার করে জানতে হলে সম্পূর্ণ উপন্যাস টি পড়ুন। উপন্যাসের এক পর্যায়ে ওমারের সাথে পরিচয় হয় জামাতের একটি দল ও তার দলনেতা আনোয়ারের সাথে।তার সহায়তা ওমার পাকিস্তানের লাহোর তাবলিগের ইজতেমায় যায়,,,সেখানে বিভিন্ন দেশের মানুষ আসে,,আর ইজতেমায় গিয়ে পরিচয় হয় খালিদ এর সাথে।যিনি আফগানিস্তান কে পরাক্রমশালী শক্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য জিহাদের আহবান করেছেন।খালিদের আহবানে ওমার সাড়া দিয়ে আফগানিস্তান যায় এবং তালিবান্দের সাথে যোগদান করে আফগানিস্তানের হয়ে যুদ্ধ করেন,,যুদ্ধে ওমার গুরুতর ভাবে আহত হয়,ভাগ্যক্রমে মৃত্যুর হাত থেকে জীবন ফিরে পায়,,,কিন্তু সেটা কিভাবে জানতে হলে অবশ্যই উপন্যাস টি পড়তে হবে। আহত ওমার কে খালিদ তার বাসায় নিয়ে আসে,আর সেখানে তাকে সেবাদান করে খালিদ এর ছোট বোন আসমা সুস্থ করে তোলেন,আল্লাহ ভীরু ওমার আসমাকে ভালবেসে ফেলে আর আসমাও ওমারকে পছন্দ করে, কিন্তু কেউ সেটা প্রকাশ করে না,,তাদের শেষ প্রনয় হয় কতটা কাকতালীয় আর রোমাঞ্চকর ভাবে হয়েছে সেটা জানতে হলে অবশ্যই উপন্যাস টি পড়তেই হবে। আসমা ওমার এর বৈবাহিক জীবন স্থায়ীত্বকাল ছিল মাত্র ১৪ দিন,,,তারপর শুরু হয় আফগানিস্তানে ভয়াবহ যুদ্ধের তান্ডব।ওমার কে বন্দি করা হয় কুখ্যাত পারওয়ান ডিটেনশন ফ্যাসলিটি নামক জেলখানায়,, ওমার এখানে জানতে পারে তাদের সাথে তারবান্দে গুপ্তচার ভাবে যোগদান করেছিলেন তার সহযোগী শিবাজি,, ওমারের এ-ই করুন পরিনতির জন্য বিশ্বাসঘাতক শিবাজীর প্রভাব রয়েছে।।ওমারকে জেলখানায় নরকতুল্য শাস্তি দেওয়া হয় তবুও সে ইসলাম থেকে বিন্দু পরিমান বিচ্যুত হয় নি। ওমার ১২ বছর পর জেলজীবন থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। তারপর কি হয়েছিল? আবার কি কখনো আসমার সাথে দেখা হয়েছিল ওমারের?জানতে হলে সম্পূর্ণ উপন্যাস টি পড়তে হবে। পছন্দের লাইনঃ ১)নেশাই তো আমাকে মসজিদ দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ২)দীর্ঘ জীবন মানেই শোকের দীর্ঘ সফর। ৩)ভালোবাসা টা হবে বাইন মাছের মতো,ভালোবাসা মানেই রেস্পন্সবিলিটি। ৪)শুধুমাত্র সম্মানিত লোকেরাই নারীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করেন,যারা অসম্মানিত নারীদের প্রতি তাদের আচরণও অসম্মানিত। ৫)ইমাম শুরু হয় অন্তর থেকে,পরে দেহের বাইরে ইসলাম রুপে সেটা প্রকাশ পায়,ইসলাম শুরু হয় বাহির থেকে, পারে অন্তরে প্রবেশ করে সেটা পূর্ণতা পায়। ৬)যে আল্লাহ কে ভয় পায় না সে পৃথিবীর সব কিছুতে ভয় পায়,আর যে আল্লাহ কে ভয় পায়,পৃথিবীর সব কিছু তাকে ভয় পায়। ৭)সত্য বিশ্বাসের বানী আসে হৃদয় থেকে।সত্য যখন কথা বলে মুখ বা স্বরতন্ত্র কথা বলে না,মূলত কথা বলে তার হৃদয়,সেটা অন্য হৃদয়কে স্পর্শ করে। ৮)জেহাদ হলো জমিন তাবলীগ হলো আবাদ। ৯)উড়ে উড়ে আপনি আর কতদূর যাবেন, আপনি ওমার পাখি হতে পারেন তবে আমি আসমা আসমান হয়ে যাবো।কোথায় যাবে বইকতদূর যাবে পাখি আসমান ছেড়ে। ১০)মাটিই তো জীবিত প্রানের শেষ গন্তব্য। রেটিংঃ১০/১০ ব্যক্তিগত মতামতঃ বিপদগামী তরুন সমাজের হিদায়ত এর জন্য একটি যুগোপযোগী বই।প্রতি মুহূর্তে ,একটা পৃষ্টা পড়ে পরের পৃষ্টার জন্য তীব্র আগ্রহ জন্মিয়েছে।পড়ে আত্মতৃপ্তি পাবার মতো একটি বই।

      By সালমা আফরিন

      10 Jun 2021 09:51 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      #rokomari_book_club_review_competition #রকমারি_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_২০২১ ◼️বই সম্পর্কিত তথ্যঃ- বইয়ের নাম : আসমান লেখক : লতিফুল ইসলাম শিবলী প্রকাশনী : নালন্দা মুদ্রিত মূল্য : ৩০০ টাকা পেপারব্যাক মুদ্রিত মূল্য : ১০০ রিভিউ করছি: সালমা আফরিন উইলিয়াম গ্যাডিস বলেছিলেন, "Justice? you get justice in the next world, in this world you have the law". ন্যায়বিচার? এটা আপনি পরবর্তী পৃথিবীতে পাবেন। এই পৃথিবীতে শুধু আইন আছে। টিভি খুললেই জাস্টিস জাস্টিস বলে মুখে ফেনা তুলতে দেখা যায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের। তাদের মতে, তারাই নাকি পৃথিবীর একমাত্র শান্তির দূত এবং পৃথিবীতে একমাত্র তারাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। অথচ এই আমেরিকাই বিশ্বের তাবত মানবাধিকার কর্মী আর সাংবাদিকদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কয়েকটি গোপন কারাগার নির্মাণ করে রেখেছে। ইরাকের কুখ্যাত 'আবু গারিব' এবং কিউবার 'গুয়ানতানামো বে' সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। আমেরিকার চোখে যারা ভয়ংকর অপরাধী এবং যারা আমেরিকার স্বার্থের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তাদের বিচার করার জন্য এসব কারাগার তৈরি করে রেখেছে আমেরিকার সরকার। গোপনে পরিচালিত এসব কারাগারে বন্দীদের উপর কি নির্মম নির্যাতন চালানো হয়; শুধুমাত্র সন্দেহের বসে একজন মানুষকে বিনা বিচারে বছরের পর বছর আটক রেখে কিভাবে শারীরিক এবং মানসিক যন্ত্রণায় জর্জরিত করা হয় তার কিছুটা বর্ণনা পাওয়া যায় লতিফুল ইসলাম শিবলীর 'আসমান' বইয়ে। বইয়ের প্রধান চরিত্র ওমার একদিকে যেমন আপনাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে ঢাকা শহরের অলি গলি, বুড়িগঙ্গা নদী, ধানমন্ডি লেক, টিএসসি থেকে। ঠিক তেমনি ঘুরিয়ে আনবে ধানমন্ডি লেকের পাশের মসজিদ থেকে শুরু করে পাকিস্তানের রাইওয়াইন্ড হয়ে আফগানিস্থানের কাবুল থেকে কিউবার গুয়ানতানামো বে থেকে। ◼️লেখক পরিচিতিঃ- 'আমি কষ্ট পেতেই ভালোবাসি', 'হাসতে দেখো গাইতে দেখো', 'কেউ সুখী নয়' সহ অসংখ্য গানের রচয়িতা লতিফুল ইসলাম শিবলী মূলত গীতিকবি হিসেবেই অধিক পরিচিত। পাশাপাশি একজন সফল নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক। ৯০ দশক জুড়ে তার লেখা গান গুলো একটা জেনারেশনের দৈন্দদিন দুঃখ সুখের ডায়েরি হয়ে আছে। যা তাকে এদেশের ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি গীতিকবিতে পরিণত করেছে। স্বভাবজাত বোহেমিয়ান শিবলী ঘুরেছেন এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকার পথে প্রান্তরে।করেছেন সাহিত্যে মাস্টার্স। নাটক, গান, কবিতা, উপন্যাস সহ সাহিত্যের অনেক শাখায় রেখেছেন সফলতার ছাপ। 'দারবিশ' এবং 'দখল' তার বেস্টসেলার উপন্যাস। ◼️মূলভাবঃ- সময়টা ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস, দীর্ঘ ৪ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে আফগানিস্থানের অধিকাংশ অঞ্চল নিয়ে 'আফগানিস্তান ইসলামী আমিরাত' প্রতিষ্ঠা করেছে তালেবানরা। একইসাথে ওসামা বিন লাদেন এবং আল কায়েদার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে তারা। দেশের ৯০ শতাংশ এলাকা এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। তালেবানের প্রতিপক্ষ নর্দার্ন অ্যালায়েন্স। প্রাথমিকভাবে তারা বাদাখশন প্রদেশের উত্তর-পূর্ব কোণের নিয়ন্ত্রণ দখল করে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাদেরকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ন্যাটো এবং আমেরিকা। দুপক্ষের মধ্যে চলছে তুমুল সংঘর্ষ। আফগানিস্থানে যখন এমন উত্তপ্ত অবস্থা, সেই একই সময়ে কাবুল থেকে ২৩৭৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঢাকা শহরের ধানমন্ডি ৮ নম্বর রোডের জামে মসজিদের বৃদ্ব ইমাম মাওলানা ইসহাকের কাছে বসে আছে উপন্যাসের নায়ক ওমার রেজওয়ান। উপন্যাসের শুরু এখান থেকেই। বৃদ্ধ ইমাম ওমারকে বললেন, "হৃদয় আল্লাহর ঘর। মানুষের হৃদয়টা তৈরি হয়েছে এই জন্য যে সেখানে শুধুমাত্র আল্লাহ থাকবেন। সে ঘরে আল্লাহ ছাড়া অন্যকিছু ঢুকালেই শুরু হবে জাগতিক অশান্তি"। সেপ্টেম্বরের শেষ দুপুরে বৃদ্ধ ইমামের কাছে বসে থাকা ওমার রেজওয়ান কি জানতো, নিয়তি তাকে নিয়ে যাবে কিউবার দক্ষিণ পূর্বে ক্যারিবীয় সাগরের গুয়ানতানামো উপসাগরে নির্মিত গুয়ানতানামো বে কারাগারে। যে গুয়ানতানামো তার জীবন থেকে কেড়ে নিবে পরবর্তী ১২টা বছর! ◼️কাহিনী সংক্ষেপঃ- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনোমিক্সে ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত ছাত্র ওমর রেজওয়ান। ইন্টারমিডিয়েটে ঢাকা বিভাগের মধ্যে বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন ওমার ১৫ দিনের জন্য ইন্দোনেশিয়া যায় ইউনাইটেড এশিয়া ডিবেটিং কমপিটিশনে অংশ নিতে। ইন্দোনেশিয়া থেকে ফিরে এসে বদলে যায় ওমারের জীবন। প্রেমিকার বিচ্ছেদের বেদনায় হতাশাগ্রস্ত ওমার ড্রাগ আর সংগীতের মাঝে ডুব দেয়। জীম মরিসনের অন্ধ ভক্ত দ্যা উইন্ডো ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট রুশো তার একাকিত্বের একমাত্র সঙ্গী। রুশোর কাছে আছে ড্রাগস, সংগীত, ফিলোসফি, অ্যাডভেঞ্জার। ড্রাগ শরীরকে নিস্তেজ করে দেয় কিন্তু মনের অতল স্পর্শ করতে পারেনা। আর সংগীত মনে আগুনে জ্বালানি কাঠের মতো আগুনটাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। সে মুক্তির কোনো পথ খুঁজে পায়না। কষ্ট থেকে বাঁচতে দিকবিদিকশুন্য হয়ে তেজগাঁওয়ের রেললাইনের নিচে চাপা পড়ে আত্নহত্যা করতে যায়। একটি অসুস্থ কুকুরের ভক্তি দেখে তার মনে বেঁচে থাকার আগ্রহ জন্মে। একটা ফুল, একটা পাখি, একটা ঘাসফড়িয়ের জন্য সে বেঁচে থাকতে চায়। এসময় তার জীবনে পরম বন্ধু হিসেবে আবির্ভাব হয় ইমাম ইসহাকের। যার সাহচর্য তাকে অন্ধকার থেকে আলোর জগতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। ইমামের প্রজ্ঞা দূরদর্শিতায় মুগ্ধ ওমার একসময় নিয়মিত মসজিদে থাকতে শুরু করে। একপর্যায়ে পরিচয় হয় তাবলীগ জামাতের আনোয়ারের সাথে। আনোয়ার তাকে নিয়ে যায় পাকিস্থানের লাহোরে। সেখানে বাগ্মী তালেবান নেতা খালিদের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে পাড়ি জমায় আফগানিস্তানে। এখান থেকে আবারও বদলে যায় ওমারের জীবন। ৩ সপ্তাহের ট্রেনিং সমাপ্ত করে ওমার হয়ে উঠে একজন গেরিলা যোদ্ধা। তালেবানের হয়ে সম্মুখ সমরে নামে ওমার। অপরিসীম বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে আহত হওয়া ওমারের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে আসে সবুজ চোখের মায়াবিনী আফগান মেয়ে 'আসমা'। এর মাঝে পুরো পৃথিবীকে স্তব্ধ করে ঘটে যায় নাইন ইলেভেনের ঘটনা। টুইন টাওয়ার হামলার জের ধরে ২০০১ সালে আমেরিকা এবং ব্রিটেন মিলে 'ওয়ার অন টেরর' নামে সামরিক অভিযান চালায়। সে অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ আসামী হিসেবে গ্রেফতার করা হয় ওমারকে। যার কাছে রয়েছে সিআইএ এর মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি ওসামা বিন লাদেনের খবর। ভয়ংকর আসামী হিসেবে তার স্থান হয় গুয়ানতানামো বে কারাগারে। যেখানে বিনা বিচারে কেটে যায় ওমারের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ১২ টি বছর। হারিয়ে যায় প্রাণপ্রিয় মা আর দুঃসময়ে পাশে থাকা অর্ধাঙ্গিনী। এই বারোটি বছর তার সাথে কি হয়েছিলো? কেমন করে সে আসমাকে হারালো? গুয়ানতানামো বে থেকে সে কি ছাড়া পেয়েছিলো? ওসামা বিন লাদেনের সাথেই বা তার সম্পর্ক কি? সবকিছু জানতে হলে পড়তে হবে আসমান বইটি। ◼️পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ- প্রথমেই বলতে চাই বইটির নামকরণ নিয়ে। 'আসমান- যে গল্প জীবনের চেয়েও বড়' বইটির শিরোনামে নির্ঘাত আপনার নজর আটকে যাবে। লেখক ইতিহাসের সাথে তার ব্যক্তিগত সূক্ষ্মদর্শনের সংযোগ ঘটিয়ে সৃষ্টি করেছেন আসমান নামক উপাখ্যানটি। বইটির পরতে পরতে সাজানো অসংখ্য ভালোলাগার উক্তি পড়তে পড়তে এক পর্যায়ে লেখককে দার্শনিক মনে হয়েছে। এছাড়া লেখক সব রকম বাহুল্যতা এড়িয়ে গিয়েছেন। শুধু শুধু গল্পকে টেনে বড় করার চেষ্টা কোথাও দেখা যায়নি। ঠিক যতটুকু লেখা প্রয়োজন ততটুকুই লিখেছেন। উপন্যাসটির সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হচ্ছে এতে উল্লিখিত স্থান, কাল, ইতিহাস সবই সত্য। শুধু এর চরিত্রগুলো কাল্পনিক। আফগান যুদ্ধের ময়দান, গুয়ানতানামো বে কারাগারের লোমহর্ষক বর্ণনা এসব ঘটনা পড়ে পাঠকমাত্রই শিহরিত হবেন। আমার মতে একটা বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ভাষার প্রাঞ্জলতা। প্রাঞ্জলতার অভাবে একজন পাঠক বইটি পড়েন ঠিকই কিন্তু অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়। আসমান বইটিতে লেখক প্রাঞ্জলতার যথার্থ প্রয়োগ ঘটিয়েছেন কিছু সহজ সরল বাংলা শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে। 'আসমান' আমার পড়া লতিফুল ইসলাম শিবলীর প্রথম বই। এর আগে লেখকের আর কোনো বই পড়া হয়নি। তাই লেখকের লেখার ধরণ সম্পর্কে পূর্বে কোনোরকম ধারণা ছিলোনা। তবে এ বইতে লেখক ইতিহাসকে আশ্রয় করে কাল্পনিক চরিত্রের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে যেভাবে একটি ব্যতিক্রমধর্মী উপন্যাস রচনা করেছেন তাতে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, অন্তত আসমানের জন্য হলেও বাংলা সাহিত্য জনাব শিবলীকে অনেকদিন মনে রাখবে। ◼️নামকরণঃ- 'আসমান - যে গল্প জীবনের চেয়ে বড়'। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে একটা গল্প থাকে। ভালো মন্দ, ঘাত প্রতিঘাত, উত্থান-পতনের ছোট ছোট গল্প নিয়েই মানুষের জীবন। এরপরও কিছু কিছু ব্যতিক্রমী গল্প ছাপিয়ে যায় আমাদের জানা শোনার গন্ডিকে। সেই গল্পগুলো জীবনের চেয়েও বড়। আর এমন গল্প নিয়েই লিখিত উপন্যাস আসমান। বইয়ের বিষয়বস্তুর সাথে নামকরণে শতভাগ মিল রয়েছে। আমার যুক্তিতে উপন্যাসের নামকরণে লেখক ষোলআনাই সফল হয়েছেন। ◼️প্রচ্ছদঃ- আসমান বইটির প্রচ্ছদ আহামরি সুন্দর নয়। একেবারেই সাদামাটা প্রচ্ছদ। Don't judge a book by its cover অথবা "চক চক করিলেই সোনা হয়না" এ প্রবাদ প্রবচনটির প্রমাণ পাবেন বইটি পড়ার পর। ◼️চরিত্র বিশ্লেষণঃ- ১। ওমার রেজওয়ানঃ- উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। প্রেমিকার বিশ্বাসঘাতকতায় হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত এক তরুণ। খুব খুঁজে বেড়াচ্ছে এক আলোর উৎস যা তাকে অন্ধকার থেকে আলোর জগতে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। তুখোড় মেধাবী এই ছেলেটা যুক্তি দিয়ে পরখ করতে চায় সবকিছু। যুদ্ধের ময়দানে তার সাহসিকতা, শত্রুপক্ষের মুখে কালেমা শুনে তাদেরকে মারতে নিষেধ করা এসব বৈশিষ্ট্য ওমারকে উপন্যাসের অন্যতম শক্তিশালী চরিত্রে পরিনত করেছে। ২। ইমাম ইসহাকঃ- ধানমন্ডি ৮ নম্বর রোডের জামে মসজিদের বৃদ্ব ইমাম। তবে তিনি কোনো সাধারণ ইমাম নন। সবকিছুর পেছনে লজিক দেখিয়ে ধর্মকে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ওমারের সামনে তুলে ধরেন। আমার কাছে উপন্যাসের সবচেয়ে শক্তিশালী চরিত্র মনে হয়েছে ইমাম ইসহাককে। তার প্রত্যেকটি কথা চুম্বকের মত আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে। ৩। আসমাঃ- কষ্টসহিষ্ণু মমতাময়ী নারীর প্রতীক। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ওমারের অর্ধাঙ্গিনী। বইতে আসমার চরিত্রকে মনে হয়েছে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল এবং মাদার তেরেসার আফগান ভার্সন। ৪। খালিদঃ- বাগ্মী তালেবান নেতা। জ্ঞানী, সুদর্শন, একাধিক ভাষায় পারদর্শী খালিদ বক্তৃতা দিয়ে সহজেই মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারে। দেশপ্রেম আর জিহাদ খালিদের জীবনের মূলমন্ত্র। ৫। রুশোঃ- জীম মরিসনের পাগলা ভক্ত, দ্যা উইন্ডো ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট। বন্ধুত্বের এক মূর্তিমান নিদর্শন। গুয়ানতানামো বে কারাগারে ওমার যখন বিনা বিচারে নির্যাতিত হচ্ছিল তখন গান গেয়ে তার পক্ষে জনমত গড়ে তুলে রুশো প্রমাণ করেছে কঠিন সময়ে পাশে থাকার নামই বন্ধুত্ব। এছাড়াও ওমারের মা, আনোয়ার এবং লামিয়া, এনায়েত চরিত্রগুলো সময়ের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চরিত্রগুলো অল্প কিছুক্ষণের জন্য এসে উপন্যাসের গতিপথ পালটে দিয়েছে। ◼️সমালোচনাঃ- কিছু কিছু জায়গায় ইংরেজি শব্দ ব্যবহার হয়েছে। যেমন - লোনলিনেস। এর সুন্দর বাংলা শব্দ ব্যবহার করা যেত। ◼️প্রিয় উক্তিঃ- ১। তোমার হাতে তোমার কোনো প্রিয় জিনিসই নিরাপদ নয়। যেকোনো সময়ে সেটা কেড়ে নেওয়া হবে, এমনকি তোমার প্রিয় জীবনটাও। তাই শিক্ষা হলো, যা পেয়েছ তার জন্য এত উল্লাসের কিছু নেই, যা হারিয়েছ তার জন্য এত বিষাদের ও কিছু নেই। ২। বৃষ্টির আগে পিঁপড়ারা টের পায়, ঝড় বা ভূমিকম্পের আগে পাখিরা টের পায়, আর যত আড়াল করে যতদূরেই থাকে সন্তানের কষ্ট মা’রা ঠিকই টের পায়। ৩। এই বিশ্বজগৎ একটা পাঠশালা। এখানে প্রতিটি ঘটনার ভেতরেই একজন শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষক মানে কোনো ব্যক্তি বা অদৃশ্য কিছু নয়। সেই ঘটনাটা নিজেই একজন শিক্ষক। ৪। উড়ে উড়ে আপনি আর কতদূর যাবেন, আপনি ওমার যদি পাখি হতে পারেন তবে আমি আসমা, আসমান হয়ে যাব। কোথায় যাবে, কতদূরে যাবে পাখি আসমান ছেড়ে! আমি সে পাখির জন্য আসমান হয়ে থাকব। ◼️বইটি কেনো পড়বেনঃ- ১। যারা জীবনের কোনো লক্ষ্য খুঁজে পাননা, হতাশা ব্যর্থতায় ডিপ্রেশনে পড়ে আত্নহত্যা করতে যান তাদেরকে জীবনের মানে শিখাবে এ বই। ২। ভালোবাসা মূলত কার জন্য?কাকে ভালোবাসা যাবে, কাকে যাবেনা। আল্লাহ তায়ালার এই পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, বান্দার প্রতি আল্লাহর হক এসব কিছু যুক্তি দিয়ে স্বল্প পরিসরে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন লেখক। ৩। বইটি পড়ে পাঠক জানতে পারবে আফগান জাতির ইতিহাস, তালেবান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, নাইন ইলিভেনের ঘটনার সংক্ষিপ্ত সার। ৪। গল্পের চলে লেখক আপনাকে শিখাবে ধর্ম, বিজ্ঞান, জিহাদ, পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ইত্যাদি সম্পর্কিত নানান তথ্য। সবশেষে বলতে চাই, আসমান নিঃসন্দেহে একটি সুখপাঠ্য বই। এ বই পড়ে যেমন আপনার মন শান্ত হবে ঠিক তেমনি আপনার চোখ প্রশান্তি পাবে। ভাবছেন একথা কেনো বলছি? বইটি পড়েই দেখুন!

      By Md Nazmul Hossain Prince

      08 Jun 2021 02:13 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      আমার পড়া সেরা একটি উপন্যাস।

      By Mahmudul Hasan

      28 Apr 2021 10:42 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      আসমান পড়ে কেঁদেছি, আসমান পড়ে রোমান্টিক হয়েছি, আসমান পড়ে জানলাম ইমাম সাহেবের কাছ থেকে ওনেক কিছু জানা যায়। ধন্যবাদ

      By Faria Jannatul Shiheentaa

      01 Apr 2021 01:58 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      খুঊব ছোটবেলা হতেই বই পড়তে শুরু করলেও আমি কখনোই বইয়ের রিভিউ লেখি না। আম্মু বলেন, ' কি পড়লে তুমি? যদি না একটা বই পড়ে রিভিউ লিখতে পারো?' আমি অনায়াসে হেসে বলি, ' কি আম্মু! সবাই কি তোমার মতো ডায়রিতে বা টাইমলাইন তৈরি করে বইয়ের রিভিউ দেবার জন্য? তাছাড়াও আমি ব্যস্ত মানুষ। একাডেমিক পড়াশোনাতেই সময় পাই না, বইয়ের রিভিউ কখন লিখবো?' আম্মু বলেন, ' তুমি একটা বই হতে কি পেলে সেটাই যদি নিজের মতো লিখতে না পারো বই পড়ে ফায়দা নেই।' তারপরে আর কথা বাড়াই না দুজনের একজনও! একেবারে ঝুম নিরবতা নেমে আসে আমাদের মাঝে। এখন রাত ১ টা বেজে ১ মিনিট। ঘুম আসছে না। আসমান গতকাল পড়ে শেষ করেছি। বারবারই মনে হচ্ছে আসমান নিয়ে কিছু না লিখলে দারুণ বেইনসাফি হয়ে যাবে সাহস করে তাই টাইপ করতে বসা! কিন্তু যোগ্যতা আসলেই বলছে, ' জান্নাত চৌদ্দ হাত দূরে বসে বসে দেখে যাও শুধু। তবুও শত দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব ঝেড়ে লিখতে বসলাম। লোকে বলে, " নির্বোধের সাহসের অভাব হয় না।" একজন নির্বোধ ও অজ্ঞ মানুষ আমি কেন সাহসী হবো না? . বর্তমান সময়ে যেসব লেখক এই জেনারেশনটাকে পথ দেখাতে পথিক নবী হয়ে এসেছেন তাদের মাঝে একজনের নাম অহরহই উঠে আসে। আমি তাকে চিনি ২ বছর যাবত। আমার এক কাছের মানুষ তার খুঊব প্রতি খুঊবই অনুরক্ত ছিলেন। এবং যখনই আমাদের মাঝে লেখক শ্রেণী নিয়ে কথা উঠতো " Latiful Islam Shibli " যেন একটা মাস্ট সেয়িং নেইম ছিলো তার মুখে। তার বেশ কিছু বই প্রকাশিত হলেও আমার তার সাথে পরিচয় ফেইসবুকেই। কিন্তু আজ একজন পাঠিকা হিসেবেই আলোচনা করবো বইয়ের ভালো লাগা মন্দ লাগা নিয়ে। . খুঊব সম্ভবত মার্চের ১৫ তারিখে রকমারিতে অর্ডার করেছিলাম আসমান। ৩ কর্ম দিবসে তারা আমাকে বইটা হোম ডেলেভারী দিয়ে যায়। তারপরে নানান ব্যস্ততায় যেন আসমানকে প্রায় ৭ দিন ধরেই দেখতে পারিনি। আনপ্যাকড করা দূরে থাক। তারপরে ব্যস্ততা কমলে দেখলাম টেবিলের এক কোণে রকমারির সিল যুক্ত একটা প্যাকেট পরে আছে। তারপরে পড়ার টেবিলে বসে প্রতি রাতেই প্রায় ১ - ২ পেইজ সর্বোচ্চ ১০ - ২০ পেইজ পড়েছি। এ কী ঝড় বয়ে গেল পাতার পর পাতায়! এও কি সম্ভব! সোজা হয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে আবারো প্রথম থেকে পড়লাম। এভাবেও লেখা যায় তাহলে! এতটা গভীর, এতটা বিস্তৃত করে! প্রায় অস্পৃশ্য- ছুলেই বিতর্কিত হবার ঝুঁকি, তবু কতটা বাস্তবতার নিরিখে তৈরি হয়েছে সময়ের সবচেয়ে সাহসী গল্প- আসমান। . দূষিত সামাজিক সম্পর্ক, কলুষিত ছাত্র রাজনীতি, মাদকের কড়াল গ্রাস, সন্ত্রাস, ধর্ম, ইসলামের প্রকৃত রূপ, রূপক ও স্বরূপের উন্মোচন, খিলাফতের ব্যাখ্যার শক্তি ও দূর্বলতা, জিহাদের সঠিক সংজ্ঞা ও তার বহুমাত্রিক ব্যবহার, মহান আল্লাহর প্রতি সঠিক ঈমান, ঈমানের পরীক্ষা ও তার জন্য ধৈর্য্যধারণ, আঘাতে-বিচ্ছেদে-করুণতম মুহূর্তেও ঈমানের প্রতি অবিচল থাকা, ঐতিহাসিক ঘটনাপঞ্জির সাথে সামঞ্জস্য রেখে উপন্যাসের চরিত্রগুলোর এগিয়ে চলা, শত্রুর হৃদয় জয় করে সারা পৃথিবীতে নিগৃহীত- ঠিকানাবিহীন হয়েও স্ত্রী-সন্তানের সাথে মিলনে সমাপ্তি ওমার রিজওয়ানের। . শুরুতেই ফ্ল্যাপ নিয়ে দু লাইন লেখি .. " The fiction based on fact." উপন্যাসের স্থান সত্য, কাল সত্য, ইতিহাস সত্য শুধু চরিত্র গুলো কাল্পনিক! এতো নাম ডাক লেখকের বইয়ের শুরুতেই ফ্ল্যাপে যদি এই লাইন চোখে পরে তবে এক বইপোঁকার মাঝে আশার পারদ কতটা চড়তে পারে এবং বইয়ের মাঝের বিষয় বস্তু নিয়ে বিস্তারিত এই রিভিউ। . ফ্ল্যাপের প্রথম অংশটা এরকম, "আমেরিকার কুখ্যাত জেল গুয়ানতানামো বে থেকে বিনা বিচারে ১২ বছর জেল খেটে মুক্তি পেয়েছে এক বাংলাদেশি। ওয়াশিংটন পোষ্টের এই খবরে চমকে গেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সাফ জানিয়ে দিয়েছে এমন সন্ত্রাসীর দায়িত্ব বাংলাদেশ নেবে না। আমেরিকান আর্মির কার্গো প্লেন তাকে ফেলে গেছে আলবেনিয়ার তিরানা বিমান বন্দরে। ট্রাভেল ডকুমেন্টহীন দেশহীন মানুষটাকে পৃথিবীর কোনো দেশ রাজনৈতিক আশ্রয় দেয় না। রিফিউজি স্ট্যাটাস নিয়ে তাকে থাকতে হবে রেডক্রসের শেল্টারে। মানুষটা এখন কোথায় যাবে? " চেনা সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলে, একটা অচেনা দরজা খুলে যায়, জীবন বন্দি হয়ে গেলে সেটা জীবনকে ছাপিয়ে যায়, সেই জীবনের গল্প জীবনের চেয়েও বড় হয়ে যায়..." এই লেখাটুকু নিয়ে শেষে কথা বলবো তার আগে সংক্ষেপে অল্প করে বইয়ের কাহিনী লিখি.. . গল্পের শুরুটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন আধুনিকমনা, মেধাবী, প্রেমে প্রতারিত, আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরে আসা, প্রচণ্ড হতাশায় বিপথগামী, নেশাসক্ত তরুণের সাথে আধুনিকমনা, প্রাজ্ঞ, ধীরস্থির, ইসলামী দার্শনিক, উদারমনা একজন স্থানীয় মসজিদের ইমামের কথোপকথনের মাধ্যমে। পরবর্তীতে দুটি ভাগে গল্প এগিয়েছে। প্রথম ভাগে, স্বদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ওমারের এক আকাশ স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের অনবদ্য চিত্র। সহপাঠী ও সাময়িক সময়ের প্রণয়িনী লামিয়ার ঝড়ো সম্পর্কের ভাঙা-গড়ার গল্প। যে লামিয়াকে একদিন নাম দিয়েছিল মাটি, সে লামিয়ার প্রতারণায় জীবনের অন্ধকার অংশের শুরু হয় গল্পের মূল চরিত্র ওমারের। এ সময়ে তাকে মায়ের অকুন্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসাই প্রেরণা যোগায়। ইমাম সাহেবের দার্শনিক বিশ্লেষণে তার ইসলামের প্রতি আগ্রহ প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহর প্রতি ঈমান সুদৃঢ় হয়। দ্বিতীয় ভাগে তাবলীগের সাথী হয়ে তাকে পাকিস্তান সফরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্যিগুলোর মুখোমুখি হতে হয়। তালেবান শাসন, ইসলামের শক্তি ও ভ্রান্ত ধারণার সাংঘর্ষিক অবস্থান, খিলাফত প্রতিষ্ঠায় স্বীয় ধর্মের অনুসারীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ, মৃত্যুর মুখ হতে ফিরে আসা এবং অমোঘ সত্যের উপলব্ধি- ‘যে মানুষ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কলেমায়ে তৈয়্যেবা সশব্দে পাঠ করে চলেছে, আমি তাকে হত্যা করতে পারি না।’ এ ভাগে এসে আসমার সাথে প্রণয় ও অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে পরিণয়- আসমাকে ওমার কবিতায় ঘোষণা করে ‘আসমান’ বলে। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে গুয়ান্তানামো বে কারাগারের নারকীয় অত্যাচারের বর্ণনাকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। দেশে থাকতে নেশাগ্রস্ত সময়ের বর্ণনা বরং অনেক প্রাঞ্জল। এর প্রয়োজন ছিল। নিষ্ঠুরতায় নয়, ওমারকে মানুষ খুঁজে নেবে ভালোবাসায়, প্রেমে- এটা একটা অবশ্যম্ভাবী চাওয়া পাঠকের-লেখকেরও! এটিই সম্ভাব্য সমীকরণ। সমাপ্তির অংশে আরেকটু সময় কাম্য ছিল। এ বিশাল পৃথিবীতে একজন ঠিকানাবিহীন মানুষের প্রতি সামাজিক আচরণের বহুমাত্রিকতা অনুপস্থিত ছিল। তবে অনুতপ্ত নও মুসলিম জাপানি গুপ্তচর শিমুজির ওমারের প্রতি আত্মসমর্পণ এর অভাব অনেকটা দূর করেছে। সাহিত্যে সুফিবাদের সময়কালকে বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগ নামে অভিহিত করা হয়েছে। আমরা পেয়েছিলাম হাফিজ, ওমর খৈয়ামসহ পারস্য সাহিত্যের দিকপালদের রচনাবলী। আধুনিক সাহিত্য বহুমাত্রিকতায় এগিয়ে চলেছে কিন্তু সুফিবাদ এড়িয়ে গেছে অনেকটা প্রকাশ্যেই। এ রচনার দ্বারা সুফি সাহিত্যের অপ্রকাশিত লড়াই এর সূচনা হলো। সম্ভব হলে আমি স্কুলগুলোতে নবম-দশম শ্রেণির ছাত্রদের জন্য এ বইটিকে অবশ্য পাঠ্য করে দিতাম। গোঁড়া মুসলিম উম্মাহ্ মুক্তি পাবে যদি অন্তরে অস্পষ্ট ব্যাখ্যার ধর্ম নয়, নর-নারীর প্রেম নয়, জান্নাতের লালসা নয়, ভুল নেতৃত্বের খিলাফত নয়, ক্রোধ কিংবা অন্ধ আক্রোশ নয়, প্রতিশোধ নয়, সাময়িক সাফল্যের অহংবোধ নয়, অতি আবেগের দুর্বিনীত প্রকাশ নয়; কেবল মহান আল্লাহকে অন্তরে ধারণ করে, হৃদয় আল্লাহর ঘর- এ সত্য নির্মোহ ভালোবাসায় গ্রহণ করে, যাপিত জীবনের সকল ঘাত-প্রতিঘাতকে সহজভাবে গ্রহণ করে, নিজেকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে, জিহাদের জন্য সর্বদা নিজেকে তৈরি রাখে- জিহাদের স্বরূপ উম্মোচনে নিজের যৌক্তিক অবস্থান নির্ণয়ে অনুসন্ধানী হয়- সেই-ই খলিফা ওমার- ওমার রিজওয়ান! কিংবা খালিদ বিন আব্দুল্লাহ! অথবা, অনুতপ্ত জাপানিজ গুপ্তচর শিমুজি, নেশার মোহভঙ্গ তরুণ রুশো… . পুরো কাহিনী সংক্ষেপ পড়ার পর যারা বইয়ের নামকরন নিয়ে চিন্তিত তাদের জন্য সহজ করে দিই। আসমাকে ভালেবেসে আসমান বলে ডাকতো ওমার। . ব্যক্তিগত মতামত ~ ১) আসমার সাথে কথা বলবার সময় কোরআনের সুরা আর আয়াত নম্বরের রেফারেন্স আগে তুলে দেয়াটা ভালো লাগেনি। এখানে শুধু আয়াতটা পড়ে শোনানোর পর নিচে ছোট্ট করে সুরার নাম আর আয়াত লিখে দিলে ভালো লাগতো। যে জিনিস বক্তৃতায় ভালো লাগে তা স্বামী স্ত্রীর কথোপকথনে ভালো লাগে না। ২) বই থেকে সরাসরি একটা অংশ তুলে দিচ্ছি, "আসমা দুই হাতে চেপে ধরেছে ওমারের পিঠ। তার চুলের মধ্যে ডুবে আছে ওমারের নাক, গভীর শ্বাস টেনে ফুসফুস ভরে নেয় তার চুলের গন্ধ। ডান হাত দিয়ে আসমার কানের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে ফিসফিস করে নতুন শেখা ফারসিতে বলে--- 'আমি কোনোদিন কবিতা লিখিনি, জীবনের প্রথম কবিতাটি আপনার জন্য লিখেছি।' ওমারের মুখে ফারসি শুনে ঝট করে আসমা আলিঙ্গন ছেড়ে মুখোমুখি দাঁড়াল, অবাক বিষ্ময়ে চকচক করছে ওর সবুজ চোখ। 'এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি ফারসি ভুলে যাব।' লজ্জা পেয়ে আবার ওমারকে জড়িয়ে ধরে মুখ লুকায় ওর বুকে। ওমার ওর কানের কাছে ফিসফিস করে ফারসিতে আবৃত্তি করল--- 'যখন আমি ঘরে থাকি বুকে তুলে রাখি যখন আমি বাইরে থাকি মাথায় তুলে রাখি, তাছাড়া আর রাখব কোথায়? হয় না সংকুলান! আমি তোমার একলা পাখি, তুমি আসমান।' . পাখি আর আসমানের সম্পর্কটা বইয়ের ভেতর থেকে জেনে নিতে হবে। ওপরে যে আবহটা তৈরী করেছেন লেখক সেখানে জাষ্ট এ পিঞ্চ অফ সল্ট শর্ট। ঐটুকু হলে এই একটা প্যারা পুরে বইয়ের সবকিছু কাভারআপ করে দিতো। . তারপরে - ৩) বানান ভুল নিয়ে দুঃখ করার কিছু নেই। আমাদের দেশে এই জিনিসটা শুধরাবে এমন আশা ক্ষীণ। তবুও যখন একটা বইয়ের পুনঃপুনঃ মুদ্রন আসে তখন আশা করাই যায় ভুলগুলো শুধরে নেয়া যাবে। ৪) বর্তমান লেখকদের গুছিয়ে শেষ করা একটা লেখা পড়লাম অনেকদিন পর। তাড়াহুড়ো করে শেষ করার যে প্রবণতা বর্তমান লেখকদের মাঝে আছে তার বাহিরে গিয়ে ভালো লাগলো বইটি। ৫) পুরে বইতে আক্ষেপ একটাই আসমাকে লেখক ভিজ্যুয়ালাইজ করানোর চেষ্টা করলো না। আসমার ব্যক্তিত্বকে যেভাবে গেঁথে দেয়া হয়েছে সেখানে নীল বোরখায় সবুজ চোখের এই আফগান মেয়েটাকে ওমারের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে একবার ভিজ্যুয়ালাইজ করালে দারুন লাগতো। অবশ্য বিয়ের রাতে ঘোমটা ফেলে আসমাকে বর্ণনা করার একটা প্রয়াস ছিলো তার কালো চুলগুলো সৌন্দর্যের কাছে হেরে গিয়ে সোনালী রং ছুঁইছুঁই করছে। জাষ্ট আরেকটু দরকার ছিলো। একটা আক্ষেপ থেকেই গেলো। প্রচ্ছদেও আসমাকে ঘোলাটে দেখানো হয়েছে। এই আক্ষেপটাই আসমার প্রতি আকর্ষনটা ধরে রেখেছে। . এবার ফ্ল্যাপটা নিয়ে শেষ দুলাইন বলি। ফ্ল্যাপটা বইয়ের ভেতরের কোনো কিছুকেই রিলেট করলো না। বই যেখানে শেষ হলো ফ্ল্যাপটা সেখানকারই। ফ্ল্যাপটা পড়ার পর আমি জাষ্ট ভেবে নিয়েছিলাম তিরানা বিমানবন্দর থেকে শুরু হবে গল্প। শুরু হবে একটা সার্ভাইভালের গল্প। ধীরে ধীরে খোলাসা হবে অতীত। কিন্তু ভেতরে কি পেলাম? কি দেখলাম? কি কিনলাম? আর কি পড়লাম? অসাধারণ! মোট কথা, ১৫২ পৃষ্ঠায় এ জমিনে আসমান নেমে এসেছে। আর আমি আমার রক্তের অনেক দূষণকে চিনে গেছি। .

      By Md sowban chowdhury

      04 Mar 2021 03:18 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      Alhamdulillah

      By Latiful Islam Shibli

      28 Jan 2021 12:26 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      life changing book

      By Kawkab Nadim

      14 Jan 2021 10:57 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      সত্যি বলছি উনার লেখায় জাদু আছে। অনেক ভালো লাগেছে প্রিয় লতিফুল ইসলাম ভাইয়ের আসলাম। ধন্যবাদ

      By Amran Hossain

      18 Dec 2020 02:22 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      Good

      By Tasnimul Hasan

      23 Jul 2020 04:40 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      ভালো একটা উপন্যাস

      By Mahfuzur

      14 Jul 2020 08:12 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      Quality of writing.....

      By Md Mehedi Hasan Rimon

      29 Feb 2020 10:18 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      আমার বই পড়ার ছোট্ট জীবনে,এমন শ্বাসরুদ্ধকর বই আগে পড়ি নাই। ভালোবাসি এমন লেখককে। ভালোবাসা নিবেদন রইলো।

      By De Mazid islam

      18 Feb 2020 02:55 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      আসমান, শব্দটা শুনলেই যেন কেমন বিশালতার অনুভব হয়। আসলে মুসলিম-মুসলিমাদের জীবন এমনি হওয়া উচিত। আসমান যেমন তার চোঁখ ধাঁধানো বিদ্যুৎ চমক, কান ফাটানো মেঘের গর্জন বুকে নিয়ে কোটি কোটি বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে তেমনি প্রেম, সাহস, আর হৃদয় জুড়ে বিশ্বাস নিয়ে অনন্তের তরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ওমার। উপন্যাস সম্পর্কে লেখক বলেছেন, ঘটনা সত্য, কাল সত্য, স্থান সত্য শুধু চরিত্রগুলো ভিন্ন। বইটি পড়ে আমার যে শুধু বিশ্বাস হয়েছে তাই নয়, মনে হয়েছে ঘটনা ঘটনার সময় লেখক স্বয়ং প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সেখানে উপস্তিত ছিলেন। আমরা হলিউড মুভি দেখি। সেখানে দেখানো হয় পৃথিবীতে অরাজকতা অন্যায় অবিচারের অতলে তলিয়ে যাচ্ছে আর তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সমাজকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে জুলুম অত্যাচার দুর করতে ভিনগ্রহ থেকে নেমে আসে কোন এলিয়েন অথবা অতি প্রাকৃত কোন শক্তি। কিন্তু এগুলো সবই কাল্পনিক শুধুই রঙ্গিন গল্প । বাস্তবে এমন মেলানা। মুভিতে বুঁদ হয়ে থাকতে থাকতে এক সময় এইসব অবাস্তবিক কর্মকান্ড আমাদের সাবকন্সাস মাইন্ডে সেট হয়ে যায়। তার ফলে আমরা ''আইরনম্যান"হতে চাই, ''ক্রিশ" হতে চাই, "স্পাইডারম্যান" হতে চাই। কিন্তু এই পৃথিবীতেও বাস্তব জীবনে এইসব ভিনগ্রহী শক্তির থেকে বড় শক্তি আল্লাহ আমাদের উপহার স্বরুপ দিয়েছেন তিনি হলেন নবী মুহাম্মাদ স.। যার শিক্ষায় অন্ধকারে ডুবে থাকা পৃথিবী হয়ে উড়ে আলোর ফুয়ারা। তিনি দুনিয়া থেকে চলে গেছেন কিন্তু তার শিক্ষা এখনো রয়ে গেছে। উপন্যাসের ওমার তাদেরই একজন যারা আল্লাহুর খাটি বান্দা হতে চাই। যিনি অন্ধবিশ্বাসে বিশ্বাসী নয় সবকিছুকে দেখে যুক্তির নিরিখে। আর সেই বাস্ততাই তাকে মহা অত্যাচারের পরেও আল্লাহুর প্রতি নিরেট বিশ্বাসে অটুট রাখে। এরাই হলো বাস্তবের "আইরনম্যান" "সুপারম্যান"। বইটিতে যে শুধু যে যুদ্ধবিগ্রহ ভরা তা নয় আছে প্রেমের কথোপকথন যার সুবাধে বাংলার কর্ণফুলী নদী আফগানি কুমারীর কানের দুলে পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ উপন্যাস যা উপন্যাসের জন্যই উপন্যাস লেখা কিন্তু শিবলি ভাইয়ের উপন্যাস গুলো সত্যের জন্য উপন্যাস লেখা। উপন্যাসটি মুভি হওয়ার করার দাবি রাখে। ~ মাজেদ ইসলাম উৎসর্গ: লতিফুল ইসলাম শিবলি

      By Rokhsana Bithi

      02 Feb 2020 01:18 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      ২০১৯ বইমেলায় প্রকাশিত "আসমান" লতিফুল ইসলাম শিবলীর তৃতীয় উপন্যাস এবং আমার পড়া লেখকের দ্বিতীয় বই। গল্পের প্লটটা সুন্দর এবং ব্যতিক্রম। জিহাদ, তালেবান গোষ্ঠী ইত্যাদি নিয়ে লেখা সাহসীও বলা যায়। তবে এইসব সেন্সিটিভ টপিক নিয়ে বেশ সুন্দর প্লট সাজিয়েছিলেন লেখক। ওমার এবং রুশো মূলত নেশায় আসক্ত দুই বন্ধু। সেখান থেকে ওমারের পরিচয় হয় ব্যতিক্রমী এক ইমামের সঙ্গে। যিনি ইসলামকে ভিন্ন দৃস্টিকোণ থেকে তুলে ধরেন ওমারের সামনে। সেখান থেকে পরিবর্তিত হয় ওমারের পথ। ওমার জড়িয়ে পড়ে তাবলীগের সাথে। তাদের সাথে অংশ নেয় পাকিস্তানের বিশ্ব ইজতেমায়। সেখান থেকে ওমারের পথ আরেকবার পরিবর্তন হয়। ইসলামের পথে সংগ্রামের, জিহাদের পথে পা বাড়ায় সে। বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখা রয়েছে আমেরিকার কুখ্যাত কারাগার গুয়ানতানামো থেকে ১২বছর বিনা বিচারে সাজা কাটানোর পর মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশি এক যুবক। তবে নিজ দেশের দরজা তার জন্য বন্ধ। এখন কোথায় যাবে সে? যা পুরোপুরিই গল্পের শেষাংশ, গল্পের প্লট নয়। মানুষ ফ্ল্যাপ দেখে মূলত গল্পের প্লট পছন্দ হলে, বই ক্রয় করে। এক্ষেত্রে এখানে পাঠক আশাহত হতে পারে। গল্পের শুরুটা বেশ ভালো। কাহিনী শুরুতে না জমলেও, চরিত্রগুলোর বিল্ড আপ ভালো। তবে গল্পের মাঝে কিছু জায়গায় ডিটেইলিং বেশ প্রয়োজন ছিলো। লেখক বইটিকে আরেকটু বড় পরিসরে করার চিন্তা করে থাকলে হয়ত বইটি মাস্টারপিস হতে পারতো। শেষটা বড্ড তাড়াহুড়ায় করা বলে মনে হয়েছে। বইটি পড়ে ভালো লেগেছে, তবে অনেক ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে, কিছু জায়গায় ঘাটতি লেগেছে। এরকম প্লটে, এই স্টোরি লাইনে লেখকের থেকে আশাটা আরেকটু বেশি ছিল। "নালন্দা" হতে প্রকাশিত ১৫২ পৃষ্ঠার বইটির মলাট মূল্য ৩০০টাকা। বইয়ের বাইন্ডিং ভালো, তবে প্রচ্ছদ ব্যক্তিগতভাবে আমার একেবারেই ভালো লাগে নি।

      By Habibur Rahaman

      17 Nov 2019 12:39 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বুক রিভিউ বইয়ের নামঃ আসমান লেখকের নামঃ লতিফুল ইসলাম শিবলী বইয়ের ধরনঃ সমকালিন উপন্যাস প্রচ্ছদঃ মোঃ হাসিব উজ্জামান প্রকাশনীর নামঃ নালন্দা পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৫২ ISBN: 9789849382218 মুদ্রিত মুল্যঃ ৩০০ টাকা। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মানুষতো কত কিছুই করে। তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ওমার রিজওয়ার। নব্বই এর দশকে যখন বাংলাদেশে রক ও ব্যান্ড সঙ্গিতে প্রচন্ড উন্মাদনা চলছে। তখন রক গায়ক বন্ধু রুশোর সঙ্গে তার এখানে সেখানে ঘুড়ে বেড়ানো কাজ হয়ে উঠে ওমারের। মা যখন দেখেন তার আদরের সন্তান দিক হারা হয়ে এক সর্বনাশা পথের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে , তখন মা তাকে পরামর্শ দেন স্থানীয় মসজিদের ইমমা ইসহাক হুরের সঙ্গে দেখা করতে। এই ইমাম ইসহাক হুজুর আর পাচঁ দশ জন হুজুরের মত নয়। সে কথা কথা বলে দীরে সুস্থে চিন্তা ভাবনা করে, তথ্য নির্ভর ও যক্তি দিয়ে। ইসহাক হুজুরের সাথে বেশ কিছু দিনের সংস্পর্শে ওমারের ভিতরের পরিবর্ত নের হাওয়া বইতে শুরু করে। এক সময় স্থানীয় মসজিদে তাবলীগ জামাতের একটি দল আসে। সেখানে পরিচয় হয় যুবক আনোয়ারের সাথে। আনোয়ার ওমারকে দাওয়াতে তাবলীগে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানায়। কিছু দিন পর ঢাকা থেকে পাকিস্তানের লাহোরে তাবলিগ জামাতে একটি প্রতিনিধি দল যাবে, সেখানে আনোয়ার ওমারের মত শিক্ষিত যুবকে চায়। ওমার আনোয়ারের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানের ইজতেমায় শরীক হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন দেশরে প্রতিনিধিরা জড়ো হয় ইজতেমা মাঠে। যুবক ওমার পুরো ইজমেতা মাঠ ঘুরে ঘুরে দেখান। সেখানে পরিচয় আফগান যুবক খালিদের সাথে। খালিদের কথা বার্তা তার খুব পছন্দ হয়ে যায়। খালিদ জিহাদের জন্য সকলকে দাওয়াত দেন। এই জিহাদিআল্লাহর পথে জন্য। ওমার সেখান থেকে খালিদের সাথে আফগানিস্তানের পথে রওয়ানা হয়। আফগানিস্তানে যুদ্ধে মারাত্নক ক্ষতি হয়ে যায় ওমারের। ঠাই হয় খালিদের পরিবারে। সেখানেই ওমার খুজে পায় তার আসমান। খালিদের পুরো পরিবার ওমারকে তাদের পরিবারের এক জন সদস্য হিসেবে গ্রহণ করে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে আমেরিকান বাহিনীর হাতে আটক হন ওমার। তাদের বন্দি করে রাখা হয় বিখ্যাত গুয়োনতানামো বে কারাগারে। আমেরিকার হাতে আটক হবার পর ওমারের জিজ্ঞাসাবাদের সময় আসে সবচেয়ে আর্কষনীয় চরিত্র শিমুজি। শিমুজি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে পুরো উপন্যাস জুড়েই ছিল। এই চরিত্রে মাধ্যমে লেখক সাম্রাজ্যবাদি আমেরিকার যে একটি দেশে দীর্ঘ মেয়াদে তীক্ষ্ন নজরে আবদ্ব রাখেন এবং কিভাবে ভিতরকার তথ্য সংগ্রহ করেন তার একটি চমৎকার উদাহরন তুলে ধরেন লেখক। লেখক এই ১৫২ পৃষ্ঠার বইয়ে সৃষ্টা, সৃষ্টি, প্রেম, যুদ্ধ, রোমাঞ্চ এবং চরিত্রগুলো সুনিপুণ ভাব তুলে এনছেন। বইটি যে প্লটে লেখক লিখেছেন সেটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। লেখকের আরো কয়েকটি বই থাকলেও তার এই বইটিই আমার প্রথম পড়া। লেখকের কলমের যাদুর ছোয়ায় আমি লেখকের ভক্ত বনে গেছি।

      By ashraful

      10 Nov 2019 08:22 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      may be a life changing book..pura golpo ta moner vitore giye lagbe..porar moto ekta boi

      By হিমু

      05 Nov 2019 10:03 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      যখন আমি ঘরে থাকি বুকে তুলে রাখি যখন আমি বাইরে থাকি মাথায় তুলে রাখি, এছাড়া আর রাখব কোথায় হয় না সংকুলান, আমি তোমার একলা পাখি তুমি আসমান..." 'আসমান' নামটার সাথেই বোধহয় অন্যরকমের একটা ভালোলাগা জড়িয়ে আছে। আর মিশে আছে এক আকাশ বিশালতা। এ বিশালতা যুদ্ধবিক্ষুদ্ধ সময়ে সমরাঙ্গনে দাঁড়িয়ে বিধ্বংসী চেতনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ছাঁপিয়ে জেগে ওঠা মানবিক চেতনার বিশালতা... উপন্যাসের কাহিনি নিরীক্ষণ করলে আমরা দেখতে পাই মেধাবী তরুণ ওমার তার প্রেমিকা লামিয়ার দ্বারা প্রবঞ্চনার শিকার হবার ফলশ্রুতিতে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে হারিয়ে ফেলে বেঁচে থাকার খেই। একমুঠো সুখের জন্য জিম মরিসনের পাগলা ভক্ত, তার ছেলেবেলার বন্ধু রুশোর হাত ধরে নেমে পড়ে নেশার রাজ্যে। কিন্তু গাঁজার নেশায় ডুবে গিয়ে জীবনের ব্যর্থতাকে ভুলবার প্রচেষ্টা চালালেও আদতে সে সফলকাম হতে পারে না। নেশার প্রভাব তাকে রুশোর মতো গড়গড় করে মনের যাবতীয় কথা বলার ক্ষমতাও দেয়না। বরং তার ভিতরকার সমস্ত অপূর্ণতারা দানা বাঁধতে বাঁধতে আরো ভারী করে তোলে বক্ষপিঞ্জরকে। এমন মনস্তাত্ত্বিক টানাপড়েনের মুহূর্তে ওমারের সাক্ষাত ঘটে ধানমন্ডি আট নাম্বার রোডের জামে মসজিদের দেবদূতসম ইমাম মাওলানা ইসহাক আব্দুর রহমানের সাথে। কাশফুলের মত শুভ্র দাঁড়িওয়ালা ইমামের সাথে প্রথম দৃষ্টি বিনিময়েই ওমার যেন সম্মোহিত হয়ে পড়ে। লোকটার মোহনীয় বাচনভঙ্গি আর ধর্মীয় দর্শন সম্পর্কে অকাট্য যুক্তি ওমারকে ইমামের প্রতি একটু একটু করে দুর্বল করে তোলে।ওমার খুব ভালোভাবেই খেয়াল করে ইনি গড়পড়তা অন্যান্য ধর্মগুরুর মতো নন। কী যেন বিশেষ একটা গুণ তাকে সবার কাছ থেকে একদম স্বতন্ত্র একটা সত্তা হিসেবে প্রতীয়মান করে রেখেছে৷ ইমামের সান্নিধ্যেই ওমার জ্ঞাত হয় 'পারপাস অব লাইফ' সম্পর্কে। এর আগে জীবনের আসল উদ্দেশ্য বলতে গেকে অবিদিতই ছিল তার কাছে৷ এরপর ওমারের পরিচয় ঘটে মসজিদে তাবলীগ জামাতে আসা একদল সফরকারীর নেতা আনোয়ারের সাথে৷ খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে তাদের পরষ্পরের মধ্যে বন্ধুতা গড়ে উঠলেও ওমার খুব শীঘ্রই বুঝতে সক্ষম হয় আনোয়ারের সাথে তার বিবিধ দর্শনগত অসামঞ্জস্যতা বিদ্যমান। আনোয়ারের সীমিত জ্ঞানে ওমারের অসীম জ্ঞানপিপাসা নিবৃত্ত হয়না। এমনি একটি দ্বিধাময় লগ্নে ওমারের সাক্ষাত ঘটে খালিদ ইবনে হিশাম নাম্নী এক আরব-আফগান যুবকের সাথে। খালিদের দৃঢ় ব্যক্তিত্ববোধ আর যুক্তিবহুল বয়ান ওমারকে যারপরনাই মুগ্ধ করে। সে খালিদের দলের সাথে রওয়ানা দেয় আফগানিস্তানের পথে। এরপর নিজের জীবনের বিনিময়ে জান্নাত লাভের সওদা করে সে উত্তর জোটের বিপক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। যুদ্ধের প্রথম পর্যায়েই সে আহত হয়ে খালিদের বাড়িতে সেবা ও বিশ্রাম লাভের জন্য প্রেরিত হলে সেখানে তার সাক্ষাত ঘটে খালিদের বৈমাত্রেয় বোন আসমার সাথে। আসমার সেবা-শুশ্রুষায় অল্প সময়েই সুস্থ হয়ে ওঠে ওমার। হয়তো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেতেই একে অপরের মায়ায় আর প্রণয়ে জড়ায় তারা যা পরবর্তীতে পরিবারের সম্মতিতে পরিণয়ে গড়ায়। মাত্র কয়েকদিনের দাম্পত্য সুখ লাভের পরই নাইন ইলেভেনের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ঘটনার সাথে ওমারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠলে তাকে কারাবন্দী হতে হয় এবং বিনা বিচারে ১২ বছর অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এরপর কী হয়? লেখক তো আখ্যানের সূচনায় উদ্ধৃতি দিয়েছেন চেনা সব দরজা বন্ধ হলে নাকি খুলে যায় এক অচেনা দরজা! কী সেই দরজা জানতে হলে পড়তে হবে আসমান। এবার পাঠ প্রতিক্রিয়ায় আসি। কয়েকটা গৎবাঁধা বাক্যে এই বিস্তর জীবনদর্শনের আখ্যান সম্পর্কে রিভিউ দেয়াটা আমার কাছে দুরূহই ঠেকছে। তারপরও দুঃসাহস দেখাচ্ছি। বইটার প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে অপার মুগ্ধতা৷ আমার কাছে একে যুগ যুগ ধরে চলে আসা ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে একটা উপযুক্ত দলিল মনে হয়েছে। ওমারের জ্ঞানপিপাসু মনোভাবসমেত মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, রুশোর হৃদ্যতাপূর্ণ বন্ধুতা, ইমামের আন্তরিকতাপূর্ণ গভীর জীবনবোধ, আনোয়ারের সারল্য, খালিদের দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্ব- সবমিলিয়ে এ আখ্যানের প্রত্যেকটা পাত্র-পাত্রীকে ঔপন্যাসিক বিশেষ প্রযত্নে গড়েছেন। প্রিয় উক্তি দাগাতে দাগাতে বইয়ের যাচ্ছেতাই হাল বানিয়েছি আমি। তার জন্যে অবশ্য আমি দুঃখিত নই- কারণ 'আসমান' আমায় ঋদ্ধ করেছে। কয়েকটা ভুল বানান বা প্রিন্টিং মিসটেক দেখে কয়েকবার যে ভ্রু কুঁচকাইনি তা বলবনা। তবে অফুরান মুগ্ধতার মাঝে তা নিতান্তই অপ্রতুল। প্রিয় উদ্ধৃতিসমূহঃ ১. বৃক্ষদের ভেতর বটবৃক্ষ সবচেয়ে দুঃখী বৃক্ষ। এই বৃক্ষের জীবন মানুষের মতো। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর ডালপালার ভেতর থেকে নেমে আসে ঝুরি। ধীরে ধীরে পরিণত হতে থাকে আর ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে এর প্রথম মূলটি। দীর্ঘ জীবন মানেই শোকের দীর্ঘ সফর। ২. মানুষ চায় সবাই না হোক অন্তত 'কেউ একজন' তাকে বুঝুক। হাজারো সম্পর্কের ভেতর দিয়ে মানুষ আসলে সেই কেউ একজনকেই খুঁজে বেড়ায়। এই খোঁজার জার্নিটাই জীবন। ৩.হোঁচট খেলে ব্যথা লাগে, আর সেই হোঁচট খেতে খেতেই মানুষ হাঁটতে শেখে, আর মানুষ কষ্ট পেতে পেতে পরিণত হয়। ৪.আত্মার পরাধীনতা তৈরি হয় সম্পদের লোভে নয়তো নাম, যশ, পরিবার, মায়া, প্রেম,ভালোবাসার লোভে। মানুষের পুরো জীনবনকাল্টাই যুদ্ধ, লোভলালসার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পশু থেকে মানুষ হবার যুদ্ধ। ৫. যে দোয়া কবুল হয় সে দোয়া প্রার্থনাকারীকে স্পর্শ করে। ৬.মানুষ তার সাথে করে একটা চিড়িয়াখানা নিয়ে ঘোরে। তার প্রয়োজন অনুসারে সে একটা করে প্রাণীকে প্রদর্শন করে বা কাজে লাগায়। ৭.এক একটা মানুষ যেন এক একটা নতুন পৃথিবী,এক একটা মানুষ যেন এক একটা নতুন লাইব্রেরি। মানুষ দেখলে বোঝা হয়ে যায় কত বৈচিত্র আর রহস্য নিয়ে এই চরাচরে আপন আপন কক্ষপথে পরিভ্রমণ করছে গ্রহ -নক্ষত্রের দল। ৮. সত্য বিশ্বাসের বাণী আসে হৃদয় থেকে। সত্য যখন কথা বলে তখন মুখ বা স্বরতন্ত্র কথা বলেনা, মূলত কথা বলে তার হৃদয়, সেটা অন্য হৃদয়কে স্পর্শ করে।

      By Rezaul Karim

      03 Nov 2019 04:19 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      লাতিফুল ইসলাম শিবলীর অনবদ্য গ্রন্থ আসমানে বাঙলাদেশী এক নব তরুণের প্রেমে ব্যর্থ হওয়া জীবনের মধ্য দিয়ে সত্য ঘটনার পথোবলম্বনে সাজানো হয়েছে পুঁজিবাদী উপনিবেশিক বৃটিশ-আম্রিকার মিথ্যে অজুহাত দেখিয়ে একটা স্বাধীনচেতা জাতি ও নব স্বাধীনতা লাভকারী রাষ্ট্রকে আরো বিধ্বস্ত জনপদে পরিনত করতে এবং বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে সেই বাঙালি তরুণের উপনিবেশ বিরোধী যুদ্ধে অংশগ্রহণ অতঃপর সেই তরুণকে বিয়ের মাত্র কয়েকদিনের মাথায় বিনা অজুহাতে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় গুয়েন্তোনামো বে' তে।সেখানে একযুগ পাশবিক নির্যাতিত হওয়ার যে গল্প তা জীবনের চেয়েও বড় অবশেষে রাষ্ট্র হারা এক রাষ্ট্রহীন নাগরিকে পরিণত হতে হয় রাজনৈতিক মতাদর্শিতার কারণে।অতঃপর শেষ জীবন কাটাতে থাকে ক্যারাবিয়ান দীপপুঞ্জে এমনি এক মন্ত্রমুগ্ধকর জীবনাচরণের মধ্য দিয়ে প্রচলিত ধর্ম-বিশ্বাসে চেতনাগত পার্থক্য সৃষ্টি করতে চেয়েছেন লেখক, কতোটুকু পেরেছেন? আপনি নিজেই পড়ুন জানুন।

      By Sultan

      01 Nov 2019 09:23 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      আসমান একটি বিশাল পরিসরের উপন্যাস । শিবলী ভাইয়ের এক অনন্য সৃষ্টি । এক বৈঠকেই উপন্যাসটি শেষ করা যায় । আমি প্রায় চার ঘণ্টায় এটা পড়ে ফেলেছি । যেহেতু এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে লিখা সেহেতু এটা অন্য রকম একটা আমেজ ফিল করিয়েছিল পড়ার সময় । এতদিন পর আসমান সম্পর্কে বলছি কারণ আমি বইমেলার পর সাহিত্যে নিয়ে বসার সুযোগ পাইনি । তাই বাড়ি আসার সময় কিছু বই সাথে করে নিয়ে আসি । ইদের আগেই এটা শেষ করেছি । সত্যি বলতে শিবলী ভাইয়ের বই আমি এই প্রথম পড়লাম । যেহেতু ওনার লিখা সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না সেহেতু আমি বইটা বেশি এক্সপেক্টেশান নিয়ে পড়িনি । কিন্তু পড়ার পর আমি শিবলী ভাইয়ের লিখার জাদুর প্রেমে পড়ে গেছি! তার লেখনী অনবদ্য । বচন শৈলীও অসাধারণ । কথার বাকে বাকে দারুণ সব তথ্য উপস্থাপন করে তিনি আমার মন পুলকিত করেছেন । শিবলী ভাইয়ের লিখায় আলাদা ছন্দ আছে । আসমান বইয়ে আমি প্রথম দিকে যদিও ছন্দ বুঝতে পারিনি কিন্তু পড়তে পড়তে ধরে ফেলেছি এবং মজাও পেয়েছি । শিবলী ভাই একজন লিভিং লিজেন্ড । ভাইয়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন ব্যান্ড সংগীত উর্বর হয়েছে অন্যদিকে লেখনীর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যও উর্বর হচ্ছে । আমার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের প্রতি তেমন কোন আগ্রহ আগে ছিল না । এরকম বই খুবই কম পড়েছি । তবে আসমান পড়ে যতটুকু আনন্দ পেয়েছি আমার মনে হয় সেরকম আনন্দ সব বই আমাকে দিতে পারেনি । ওমারের ড্রাগ এডিক্টেড হওয়া, পাকিস্তানে চিল্লায় যাওয়া, খালিদের কথায় আফগানিস্তানে যাত্রা, আফগানিস্তানের জিহাদ, ওমারের আত্মত্যাগ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় মরণ যুদ্ধ, আল কায়েদা নামের গোষ্ঠীর টুইন টাওয়ার আক্রমণ, ওমারের সেবা, আসমা এবং তার পরিবারের উপর ওমারের মায়া জন্মানো, আসমাকে ওমারের বিয়ে করা, আমেরিকার সেনাবাহিনী দ্বারা আফগান আক্রমণ, ওমারের গ্রেফতার, কারাগারে যন্ত্রণাভোগ, শিমুজির মাফ চাওয়া অবশেষে নাটকীয় ভাবে বই শেষ করা ছিল আসমান বইয়ের ১৫২ পাতার সারসংক্ষেপ । আমার পড়া সেরা বইয়ের ভেতর এটা অন্যতম। এক কথায় আমি সসম্মোহিত ! সবদিক দিয়ে এই বই সর্বেসর্বা । বইয়ের মূল চরিত্র ওমারের মাধ্যমে শিবলী ভাই ১৯৯৬-২০১২ পর্যন্ত আফগানিস্তানের সব ঘটনা ব্যাখা করেছেন । যার মাধ্যমে দারুণ কিছু ঘটনা, আফগানিস্তানের তৎকালীন অবস্থা আমি জানতে পেরেছি । তাছাড়া এভাবে কাহিনির ব্যাখ্যা, রচনাশৈলী, প্রত্যেক চরিত্রকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা, আন্তর্জাতিক ঘটনা বইয়ের কাহিনির ভেতর একচ্ছত্র তুলে ধরা আমার কাছে এককথায় অসাধারণ লেগেছে !

      By Arif hasan Yean

      03 Oct 2019 12:01 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বর্তমান সময়ে এর চেয়ে ভাল উপন্যাস হতেই পারে না

      By Rezaul Karim

      26 Sep 2019 01:48 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      একটি ইসলামিক গ্রন্থ! ইসলামিক জীবনাদর্শ ও মানবীয়। আবেগের মিশেলে আফগান-আমেরিকান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এক অভূতপূর্ব কাহিনী; যে গল্প জীবনের চেয়েও বড়। আমি ধার্মীক নই, সুতরাং লেখকের বেশ কিছু ধর্ম-আশ্রিত মতাদর্শ আমার তেমন ভালাে লাগেনি; কিছু মতাদর্শ তাে সরাসরি আমার মতাদর্শের সাথে বৈপরিত্যমূলক আচরণ করেছে! তবে নিছক একটি উপন্যাস হিসেবে 'আসমান' অসাধারণ। তার আগের দু'টি বইয়ের তুলনায় এতটাই পরিণত যে এ বইটা পড়তে এসে বড় ধরণের ধাক্কা খেতে হয়েছে। 'দারবিশ' এবং 'দখল' পড়ে আমার মতাে যে সকল পাঠক অতটা তৃপ্ত হতে পারেনি, তাদেরকে এ বইটি পড়ার জন্য জোর আহবান জানাচ্ছি। ... এবং আপনার ইসলাম-ধর্মীয় বিশ্বাস যদি তেমন শক্তিশালী না হয়ে থাকে, বইটি আপনাকে নিছক একটি উপন্যাস হিসেবে পড়তেই অনুরােধ করবাে।

      By Md. Shahrul Islam sayem

      27 Jul 2019 07:36 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      #রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জুলাই বইঃ আসমান লেখকঃ লতিফুল ইসলাম শিবলী প্রকাশনীঃ নালন্দা প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৫২ মুদ্রিত মূল্যঃ ৩০০ টাকা প্রচ্ছদ শিল্পীঃ মো.হাসিব উজ্জামান ◼শুরুর আগে◼ জিহাদ বলতে আমরা কি বুঝি? কতটুকুই বা আমরা জানি জিহাদ সম্পর্কে? আর যেটুকু জানি সেটা কি সঠিক? নাকি তার মধ্যেও আছে ফাঁক-ফোকড়? জিহাদ মানে কি শুধু রক্তারক্তি আর হানাহানি? জিহাদের মধ্যে কি ভাল কিছু নেই? কোনো উপকার নেই? ◼কাহিনী সংক্ষেপ◼ ওমার, লেখাপড়ার পাশাপাশি ডিবেটেও দক্ষ এক যুবক। যার জীবনটা বেশ ভালোভাবেই চলছিলো। সেই ভালোলাগার পালে হাওয়া লাগলো যখন লামিয়া এলো তার জীবনে। দুজন ভালোবাসতো দুজনকে। লামিয়া তার সাধ্যমতো সাহায্য করেছে ওমারকে ডিবেটের বিষয়ে। এরপর ডিবেটের জন্য ইন্দোনেশিয়া যায় ওমার কিন্তু ফিরে এসে লামিয়াকে আবিষ্কার করে অন্যভাবে। তার অনুপস্থিতে অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে লামিয়া। প্রথমে ওমারের বিশ্বাস না হলেও চাক্ষুষ প্রমাণ পেয়ে আর কোনো সন্দেহ থাকে না ওমারের। ভেঙে পড়ে ওমার। পুরো জীবটাই এলোমেলো হয়ে যায় তার। হতাশার এই সময়ে বন্ধু রুশোকে পাশে পায় ওমার। তবে সেটা ভালো কিছুতে না। দুজনে মিলে নেশা আর রক গানের জগতে ডুবে থাকে। আর যখন ওমার একা থাকে তখন গুটিয়ে রাখে নিজেকে। ওমারের এই গুটিয়ে থাকা চোখে এড়ায় না তার মায়ের। তবে সে কখোনোই সরাসরি জিজ্ঞাসা করে বিব্রত করে না ওমারকে। সে ওমারকে বলে ইসহাক হুজুরের কাছে যেতে। ইসহক হুজুরের কাছে গিয়ে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে ওমার। জীবনকে নতুনভাবে দেখতে শেখে ওমার। আর এর কারণ ইসহাক হুজুর অন্য হুজুরদের নয়। তার কথাবার্তা অন্যান্য হুজুরদের মতো কিছু গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়। সে ওমারকে শেখায় 'পারপাস অব লাইফ'। এভাবে ধীরে ধীরে জীবনে পরিবর্তন আসে ওমারের। এরই মাঝে ওমারের সাথে পরিচয় হয় তাবলিগ জামাতের একটি দলের সাথে। একদিন এই তাবলিগ জামাতের নেতা ওমারকে পাকিস্তানে এক ইজতেমা ও চিল্লায় যাওয়ার জন্য তাদের সাথে আমন্ত্রন জানায়। ওমার ইসহাক হুজুর ও তার মায়ের সাথে আলোচনা করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে গিয়ে অনেক দেশের মুসলিমের সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লেগে যায় ওমারের। সেখানে খালিদ নামের এক আফগানিস্তানের যুবক সকলের সামনে আফগানিস্তানের ইতিহাস এবং তাদের সাহসিকতার কথা বলছিলো। সেই সাথে বলছিলো জিহাদ সম্পর্কে। জিহাদ কি, জিহাদের উদ্দেশ্য কি, জিহাদের উদ্দেশ্য এসব সম্পর্কে বলছিলো। আর সেই সাথে মহান আল্লাহ তায়ালার পথে জিহাদের জন্য আহবান করছিলো। তার কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে জিহাদের জন্য আফগানিস্তানের পথে যাত্রা করে ওমার। সেখানে গিয়ে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে ওমার। জীবনের মানে এবং জীবনের আসল উদ্দেশ্য খুঁজে পায় ওমার। বদলে যায় ওমারের জীবন। আফগানিস্তানে প্রকাশ পায় এক নতুন ওমার। কি ঘটেছিলো আফগানিস্তানে? ওমার কি পেরেছিলো তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে? নাকি সে ব্যর্থ হয়েছিলো? উত্তর রয়েছে 'আসমান' বইয়ে। ◼পাঠ প্রতিক্রিয়া ও ব্যক্তিগত মতামত◼ 'আসমান' বইটিতে একই সাথে রয়েছে জীবনের গল্প, জীবন পাল্টে যাওয়ার গল্প। জীবনের বিভিন্ন মুহুর্তে ঘাত-প্রতিঘাতের গল্প। যে গল্প জীবকেও ছাপিয়ে যায়.......... 'আসমান' বইটি আমার কাছে গতানুগতিক অন্যান্য বইয়ের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন লেগেছে। যার মধ্যে প্রথম কারণ হলো এই প্লট। এই কাহিনীর প্লট একটু ব্যতিক্রমধর্মী এবং এই ব্যতিক্রমধর্মী প্লট নিয়ে লেখার ক্ষেত্রেও তার লেখনীর ধার একটুও কমে নি। আর আমার মতে লেখক লতিফুল ইসলাম এই প্লট নির্বাচনের ভিন্নতার জন্যই বাংলাদেশের অন্যান্য লেখকদের তুলনায় একটু আলাদা। কারণ শুধু 'আসমান' ই নয়, তার 'দারবিশ' এবং 'দখল' এর প্লট দেখলেই বোঝা যায়। প্রথমেই বলতে হয় লেখার মানের কথা, যা এক কথায় অসাধারণ। শব্দের গাঁথুনি, লেখার ভঙ্গিমা এক কথায় অসাধারণ। সেই সাথে বইয়ের কাহিনী বিন্যাসের ধরণও খুব সুন্দরভাবে করা হয়েছে। কাহিনীতে অযথা সংলাপ বা বর্ণনা ঢুকিয়ে গল্প বড় করা হয়নি যেটা এই বইয়ের অন্যতম প্লাস পয়েন্ট। এই কাহিনীতে উপস্থিতি কম থাকলেও রুশো এবং ইসহাক হুজুর এই বইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই চরিত্র। সম্পূর্ণ দুই মেরুর দুই মানুষ রুশো আর ইসহাক হুজুর। কিন্তু দুজনকেই গল্পের বুননে যতগাযথ ভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক। তবে এই বইয়ের মূল বিষয়বস্তু হলো জিহাদ এবং আফগানিস্তানের যুদ্ধ। আর এই দুটি বিষয়কে এক সূতায় গেঁথে খুব চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক। জিহাদ সম্পর্কে রেফারেন্স সহ খুব সহজে আসল তথ্য উপস্থাপন করেছেন লেখক। যা আসলেই প্রমাণ করে জিহাদ সম্পর্কে আমাদের ধারণা কতোটা নড়বড়ে। আর এই সাহসী পদক্ষেপের জন্য লেখককে মহান আল্লাহ তায়ালা উত্তম প্রতিদান দান করুক, সেই কামনা করি। এছাড়াও ছোটোবেলা থেকেই টিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে আফগানিস্তানের যুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখে এসেছি। কিন্তু বিষয়টা আমার কাছে কখোনোই পরিষ্কার ছিলো না। 'আসমান' এ রয়েছে আগগানিস্তানের যুদ্ধের একটি স্পষ্ট চিত্র। যা পড়ে আফগানিস্তানের ইতিহাস আর তাদের যুদ্ধের ইতিহাস ভালো করেই জেনেছি। আর সব দ্বিধাদ্বন্দ্বও দূর হয়েছে। পরিশেষে এটাই বলতে পারি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্লটে লিখিত এই বইটি মহান আল্লাহ তায়ালার পাওয়া হিদায়াত, আপনজন হারানোর বেদনা, জীবনের মোড়ে মোড়ে ধাক্কা, জীবনের আসল মানে খুঁজে পাওয়া, জীবনের আসল উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া সহ জিহাদ এবং আফগানিস্তানের ইতিহাস ও যুদ্ধের কারণ জানার জন্য তথ্যবহুল ও চমৎকার একটি বই 'আসমান'।

      By Mehedi Hasan

      21 Apr 2022 06:10 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      পশ্চিমা ভণ্ডামির ভারে চাপা পড়া সত্য ইতিহাসকে এভাবে উপন্যাসের মাধ্যমে রসাত্মকভাবে ফুটিয়ে তোলাটা শুধু বাংলা সাহিত্যেরই নয় বরং বিশ্বসাহিত্যেরই অন্যতম সেরা একটি নিদর্শন এই বইটি। বইটিকে যেমন শুধু তথ্যের পাহাড় দিয়ে রসহীন করা হয় নি, তেমনি গল্পের ছলে সঠিক ইতিহাসও চাপা পড়ে নি, তাই বইটি যেকোন ধরণের পাঠকের কাছেই হবে আকর্ষণীয়, এমনকি যারা নিয়মিত বই পড়েন না তাদের কাছেও ভালো লাগবে বইটি। যারা বইয়ের বদলে তথ্যচিত্র দেখতে ভালোবাসেন তাদের কাছে এটি তার চেয়ে কোন অংশে কম মনে হবে না। লেখক তার অসাধারণ লেখনশৈলীর মাধ্যমে প্রতিটি মুহূর্ত আর দৃশ্যকে এমনভাবে পাঠকের সামনে সাবলীল উপস্থাপন করেছেন, যেন মনে হবে পাঠক নিজেই গল্পের অংশ হয়ে গেছে। সবশেষে একটা কথাই বলতে চাই, যারা বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে আগ্রহী তাদের সামনে বর্তমানের একচোখা গণমাধ্যমগুলোর মিথ্যাচারের অতল গহ্বরে হাড়িয়ে যাওয়া বাস্তবতাকে তুলে ধরবে এই বই।

      By Farid Uddin

      22 Mar 2021 02:15 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      যে দোয়া হৃদয় ছুঁয়ে যায় সে দোয়া আল্লার কাছে পৌঁছে যায়! জীবন মানেই ছোটো বড় কতগুলো গল্পের সমষ্টি। ছোটো বড় সেই গল্প গুলো মিলেই গড়ে উঠে একটা জীবন। সূর্যোদয় থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে সেই জীবনের একেকটা দিনলীপি৷ এভাবে জীবনে যোগ হয় নতুন নতুন দিন, নতুন নতুন ঘন্টা আর নতুন নতুন কিছু মুহুর্ত। এই সব মুহুর্ত গুলোর প্রাপ্তি হয়ে থাকে কিছু স্মৃতি। আর সেই স্মৃতি গুলোর পেছনে ছায়ার মতোই দাড়িয়ে থাকে কিছু গল্প। এভাবেই গল্পের সমস্টিতে গড়ে উঠে জীবন। কখনো কখনো জীবনের গল্প গুলো এতোটাই বিস্তর হয়ে উঠে যে, সেই গল্প গুলো জীবনের চেয়েও বড় হয়ে যায়। আসমান উপন্যাসটাও এমনই। বিশাল আসমানের মাঝে ডানা ঝাপটে উড়তে থাকা একটা পাখি। অথচ সমস্ত আসমান জুড়ে কেবল তার ই গল্প৷ আসমানের গল্পটি মূলত নব্বইয়ের দশকের ঢাকার এক প্রেমঘটিত বেদনায় হতাশাগ্রস্ত যুবক ওমারের শান্তির পথ খুঁজে বেড়ানোর উপাখ্যান। পথের খোঁজে দিশেহারা এই উত্থান পতনের গল্প জীবনের চেয়েও বড়। সব ভুলে বাঁচতে অনেকের মত ওমারও বেছে নিয়েছিলো নেশার জগত। সে জগতে তার বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলো জীম মরিসনের অন্ধ ফলোয়ার মিউজিশিয়ান বন্ধু রুশো। নেশা ব্যাপারটাকে রুশো নিয়ে গিয়েছিলো এক ক্ল্যাসিক পর্যায়ে। রুশোর ভাষ্য ধরেই লেখক টেনে এনেছেন সে সময়কার রক মিউজিশিয়ানদের অনেক চিন্তাধারা ও খুঁটিনাটি গল্প। যেখানে কারো লক্ষ্য গায়ক হওয়া আর কারো লক্ষ্য গুরু হওয়া। কেউ গানের ভক্ত তৈরি করতে চায় কেউ চায় মুরিদ তৈরি করতে। এসব পার্থক্য কেবল দেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের উত্থানের অন্যতম পুরোধা লেখকের সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখেছেন। রুশোর চরিত্রটি ব্যান্ড জগতে নতুন করে আসা অনেক প্রতিভাবান শিল্পীর জীবনাচারকেই প্রতিফলিত করেছে। রুশোর পাশাপাশি ওমারের জীবনে একসময় বন্ধু হিসেবে জায়গা করে নেয় ধানমন্ডি মসজিদের বৃদ্ধ ইমাম মাওলানা ইসহাক।কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন পথের দিকে পা বাড়ানো ওমার ই ইমামের মতো একজন বন্ধু পেয়ে হয়ে উঠে আলোকিত এক মানুষে। উপন্যাসের এই চরিত্রটি (মসজিদের ইমাম)নানা কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। কারণ- হৃদয়, ভালোবাসা, অস্থিরতা এসব ব্যাপার যে ধর্মেও আছে তা চমৎকার সব উদাহরণের মাধ্যমে মাওলানা ইসহাক ব্যাখ্যা করেছেন। ইসলাম সম্পর্কে, ইসলামী বিধান সম্পর্কে এতো চমৎকার যৌক্তিক বয়ান ধর্ম নিয়ে লেখকের পড়াশোনা ও প্রজ্ঞাকেই ফুটিয়ে তুলেছে। কোরআনের অসংখ্য রেফারেন্স এবং যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যায় হতাশাগ্রস্থ জীবন থেকে উত্তরণের যে পথের সন্ধান মাওলানা ইসহাক দিয়েছে তা যে কারো মনোজগতে আলোড়ন তৈরি করবে। যেমনটা ছাপ ফেলেছে উপন্যাসের মূল চরিত্র ওমারের মনোজগতে। ধর্মের মধ্যেই ওমার খুঁজে পায় ‘পারপাস অব লাইফ’। মসজিদমুখী ওমার জীবনটাকে ভিন্ন চোখে দেখার উদ্দশ্যে ইমাম ইসহাকের ছায়া থেকে বের হয়ে ঘটনাক্রমে পৌছে পাকিস্তান। সেখান থেকে এক তালিবান নেতার হাত ধরে ভিনদেশি আরো অনেকের সাথে সাথে ওমার পৌছে আফগানিস্তান। আফগানিস্তান থেকেই আসলে উপন্যাসের মূল অংশের শুরু। এই অংশ থেকে গল্পের বয়ান বদলে গেছে। শুরু হয়েছে এক নতুন অধ্যায়ের। বাগ্মী তালিবান নেতা খালিদের ভাষ্য দিয়েই লেখক আলোকপাত করেছেন আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস, তালিবান উত্থানের পটভুমি ও তাদের জীবনযাত্রা। সোভিয়েত আগ্রাসন, রুখে দাঁড়ানো আফগান জাতি, মোল্লা ওমরের তালিবান গঠনের প্রেক্ষাপট কোন কিছুই বাদ যায়নি এখানে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকার তিন সপ্তাহের ট্রেনিং আমুল বদলে দেয় এক বাংলাদেশি যুবকের ভাবনার জগত। কিন্তু বাগরাম নামক স্থানে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধে উপন্যাসের প্রথম ধাক্কাটা লক্ষণীয়। কোনঠাসা শত্রুপক্ষের মুখে কালিমা উচ্চারণের শব্দে ওমারের ভুল ভাঙ্গে। অস্বীকৃতি জানায় শত্রুকে হত্যা করতে। দৃঢ় কন্ঠে ঘোষনা করে এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে হত্যা করতে পারেনা। হিন্দুকুশ পর্বতমালার পাদদেশের নগরী পাঘমানেই ওমারের সাথে প্রথম সাক্ষাত ঘটে উপন্যাসের নায়িকা আসমা ওরফে আসমানের সাথে। সবুজ চোখ, দুধের মত সাদা গায়ের রঙ আর হঠাত বাঁক নেয়া পাহাড়ি ঝর্নার মত চুলের বর্ণনার এই আফগান নারী যেন প্রেমের দেবি হয়ে পাঠকের সামনে ধরা দেয়। তকদীর ভৌগলিক দূরত্ব ছাপিয়ে তাদেরকে এক সুতোয় গেঁথে দেয়। তবু তারা জানে ও মানে পৃথিবী বিচ্ছেদের জায়গা, মিলনের জায়গা হলো জান্নাত। সেখানে হারানোর কোন ভয় কাজ করেনা। নাইন ইলেভেনের টুইন টাওয়ার হামলার সাথে মোড় ঘুরে যায় পরিস্থিতির। আমেরিকা হামলার দায় চাপায় আল কায়েদার ওপর। ভয়াবহ বোমা হামলায় তছনছ হয় এক সমৃদ্ধ জনপদ। ঘটনাক্রমে ধরা পরে প্রাণে বেঁচে যাওয়া ওমারকে গুরুত্বপূর্ণ বন্দী হিসেবে পাঠানো হয় গুয়ান্তানামো বে কারাগারে। অকথ্য সে নির্যাতনের বর্ণনা পাঠক হৃদয়কে ছুঁয়ে যাবে নিশ্চিতভাবেই। গুয়ান্তানামো বে কারাগারের এই অংশের কাহিনী বিনা বিচারে আটক অসংখ্য বন্দীর জীবনের গল্পকেই প্রতফলিত করেছে। এই যুদ্ধ বিগ্রহ প্রেম বিরহ মিরাকল নিয়েই উপন্যাস আসমান। #পাঠ_প্রতিক্রিয়া : আসমান উপন্যাসের প্রতিটা লাইন পড়ছিলাম আর মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ইসলাম, জীবন, জীবনের মানে,সাম্রাজ্যবাদ, প্রেম, বিরহ, অশ্রু, নামাজ, ইবাদাত,যুদ্ধ, জিহাদ, পুজিবাদ, রক এন্ড রোল আর সর্বোপরি আধ্মাতিকতার এক অনন্য মিশ্রণ। ধর্ম আর জীবনবোধ নিয়ে এতো গভীর আধ্যাত্মিক কথাগুলো যতোই পড়ছিলাম ততোই মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ইসলামের গভীরতা যে কতোটা বিশাল তার কিছুটার হলেও স্মাদ পেয়েছি এই বইটাতে। এতো সুন্দর বর্ণনা চোখ জোড়াকে আটকে রাখতে বাধ্য করছিলো বইটির উপর। ওমারের জীবনের উত্থান পতন দেখে কখনো কখনো অশ্রু সিক্ত হয়েছে মহাজাগতিক পানি নামক লবনাক্ত জলে, আমার কখনও বা মুগ্ধ হয়ে ভেবেছি সুন্দর সুন্দর লাইনগুলোর গভীরতা নিয়ে। ইতিহাস আর গল্পকে একই ট্রেনে পাশাপাশি সিটে বসিয়ে দিয়ে একই পথে খুব সুন্দর আর মনোমুগ্ধকর ভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন লেখক। ধর্ম, কুরআন, হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনের জটিলতা গুলো সমাধানের যে অনন্য অসাধারন দৃষ্টান্ত লেখক রেখেছেন তা সত্যিই মুগ্ধকর। লেখকের ভাষাশৈলী, মনোমুগ্ধকর বর্ণনা আর সর্বোপরী আধ্যাত্মিকতা আসমানকে দিয়েছে এক বিশাল মর্যাদা। প্রতিটা লাইনে লেখকের জ্ঞান, প্রজ্ঞা আর বইটির পেছনের নিরলস পরিশ্রমের অস্পর্শী ছোঁয়া খুজে পাচ্ছিলাম যা আমাকে বাধ্য করেছে বইটি নিয়ে লিখতে৷ সত্যি বলতে ওমারের জীবনের গল্পটার শেষের দিকটা নিজের অজান্তেই আমার চোখ দুটোকে কান্না করতে বাধ্য করেছিলো। তাই আমি তৃপ্তির সাথে কেঁদেছিলাম আর ঝাপসা হয়ে উঠা দৃষ্টিতে একমনে আসমান পড়ছিলাম৷ বইতে ভালো লাগা লাইন সমূহঃ ? ০১.আমি তাকে মাটি নামে ডাকতাম। আমি তাকে আমার জীবনের শেষ গন্তব্য হিসেবে মেনেছিলাম। মাটিই তো জীবিত প্রাণের শেষ গন্তব্য, তাই না। ০২.কাদার মধ্যে থেকেও বাইন মাছের গায়ে কোনো কাদা লাগে না৷ তুমি বস্তুর সমুদ্রে থাকবে কিন্তু বস্তু তোমাকে ডুবাতে পারবে না। তুমি বস্তুকে ভোগ করবে কিন্তু বস্তু তোমাকে ভোগ করতে পারবে না৷ ০৩.মানুষ তখনই শ্রেষ্ঠ যখন সে ভোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আর না পারলে সে একটা সাধারন প্রাণী ছাড়া আর কিছুই না৷ ০৪.ইমান শুরু হয় অন্তর থেকে, পরে দেহের বাইরে ইসলাম রুপে সেটা প্রকাশ পায়। ইসলাম শুরু হয় বাইর থেকে পরে অন্তরে প্রবেশ করে তা পূর্ণতা পায়৷ ০৫.আকাঙ্খা থেকে বেঁচে থাকার নামই স্বাধীনতা। ০৬.আমি প্রেমে পড়ার পূর্বেই প্রেমের গল্প বলেছি, কিন্তু আমি যখন প্রেমে পড়লাম তখন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। ০৭.এই মধ্য এশিয়ান জোছনায় সিল্করোড ধরে নিঃশব্দ ছায়া ফেলে চলে যাই যে ক্যারাভ্যান তার নাম ইতিহাস৷ ০৮.তোমার হাতে তোমার কোনো প্রিয় জিনিসই নিরাপদ নয়৷ যেকোনো সময় তা কেড়ে নেওয়া হবে, এমনকি তোমার প্রিয় জীবনটাও৷ তাই শিক্ষা হলো যা কিছু পেয়েছ তার জন্য এতো উল্লাসের কিছু নেই, যা হারিয়েছ তার জন্য এতো বিষাদেরও কিছু নেই। ০৯. চেনা সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলে, একটা অচেনা দরজা খুলে যায়,জীবন বন্দী হয়ে গেলে সেটা জীবনকেও ছাপিয়ে যায়,সে জীবনের গল্প জীবনের চেয়ে ও বড় হয়ে যায়... ১০.আপনার সতর্ক দৃষ্টি আমার অভ্যাস খারাপ করে দেবে,নিলে বাকি জীবন আমি একা হাটতে পারবো না। ১১. আপনি ওমার যদি পাখি হতে পারেন তবে আমি আসমা, আসমান হয়ে যাবো৷ ১২. যে দোয়া কবুল হয় সে দোয়া প্রার্থনাকারীকে স্পর্শ করে৷ বই সম্পর্কিত তথ্য ? বইয়ের নামঃ আসমান-যে গল্প জীবনের চেয়েও বড় লেখকঃ লতিফুল ইসলাম শিবলী প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ প্রকাশনীঃ নালন্দা মুদ্রিত মূল্যঃ ৩০০ টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৫২ লেখক পরিচিতিঃ লতিফুল ইসলাম শিবলী জন্ম ১৯৭১ এ পহেলা বৈশাখ। শৈশব -কৈশোর কেটেছে নাটোরে, যৌবনের শহর ঢাকা আর লন্ডন।বাংলা সাহিত্যে করেছেন মাস্টার্স। তিনি সর্বাধিক গীতিকার হিসাবে পরিচিত। লিখেছেন অসংখ্য হৃদয় ছোঁয়া গান, হাসতে দেখো, গাইতে দেখো,জেল থেকে বলছি,তুমি আমার প্রথম সকাল। ৯০ দশক জুড়ে লিখেছেন এমন তিন -চারশো গান। লেখেছেন অসংখ্য নাটক ও সিনেমার কাহিনী। আসমান তার তৃতীয় উপন্যাস। ২০১৭ এ লেখা 'দারবিশ' ২০১৮ এ লেখা 'দখল' বেস্টসেলার বই।

      By Mohammad Mijan

      11 Aug 2019 12:34 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      এটা কোন বুক রিভিউ নয়, একান্তই একজন পাঠকের অনুভূতি উপলব্ধি... সিস্টেমের বিরুদ্ধে, এস্টাবলিশমিন্টের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন এমন মানুষ কম, এরকম শিল্পী সাহিত্যিক একদমই কম, আর এরকম শিল্প সাহিত্য তো আরো কম। সেই কম মানুষদের মধ্যে, সেই অতি অল্প শিল্পী সাহিত্যিকদের মধ্য নিঃসন্দেহে অন্যতম লতিফুল ইসলাম শিবলী। লতিফুল ইসলাম শিবলী নামটা হয়ত লেখক হিসেবে ততটা পরিচিত নয়।আমি নিজেও এনাকে আগে চিনতাম না।কিন্তু এনার আরেকটা পরিচয় আছে সে পরিচয়ে আমরা সবাই কমবেশি ওনাকে চিনবই। নব্বই দশকের ব্যান্ড সংগীতের সাথে যাদের ভাল পরিচয় আছে তাঁরা শিবলীকে খুব ভালভাবেই চিনবেন।তাঁর লেখা কয়েকটা গানের শিরোনাম পড়লেই চিনবেন " আমি কষ্ট পেতে ভালবাসি,হাসতে দেখো গাইতে দেখো,তুমি আমার প্রথম সকাল, কেউ সুখী নয়, জেল থেকে বলছি,হাজার বর্ষা রাত,পলাশীর প্রান্তর, প্রিয় আকাশী... ৯০ দশক জুড়ে লিখেছেন এমন তিন চারশো গান। পুরো একটা জেনারেশনের দুঃখ -সুখের ডায়েরি হয়ে আছে শিবলীর গান। আধুনিক তারুণ্যের ভাষাকে তিনি গীতিকবিতায় এঁকেছেন অত্যন্ত সহজসরল 'রক' এর ভাষায়, সেটাই শিবলীকে ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তীতে পরিণত করেছে। গ্রুপ থিয়েটারে "নাট্যচক্রে" তার যাত্রা শুরু।তারপর শিল্পের সব মাধ্যমে। 'কমপ্লিট ম্যান' খ্যাত সেঞ্চুরি ফেব্রিকসের দুর্দান্ত ঝুঁটিবাঁধা শিবলী ছিলেন ফ্যাশন আইকন। নাট্যাভিনয় থেকে নাট্যকার হওয়া সব জায়গায় তাঁর অবাধ বিচরণ। পাঠক হিসেবে আমার পছন্দ ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি,ধর্ম মূল্যবোধ এবং মানুষ। আমার পড়াশুনার ৯০% প্রবন্ধ। আখ্যানের চেয়ে যুক্তিযুক্ত, তথ্যপূর্ণ এবং বাস্তবিক আলোচনা আমার কাছে বেশি প্রিয়। এর বাইরে কবি বলতে জীবনানন্দ, কথাসাহিত্য বলতে ক্লাসিকাল বা ধ্রুপদী সাহিত্যই পড়া হয়। ক্লাসিকাল সাহিত্যের বাইরে গত ৫ বছরে চেতন ভগতের গোটা পাঁচেক উপন্যাস শাহাদুজ্জামানের দুটো উপন্যাস পড়েছি।এর বাইরে যাদের লেখা পড়েছি তাঁরা মূলত ক্লাসিক রাইটার যেমন অরুন্ধতী রায়,মারিও পুঁজো,আলবেয়্যার কাম্যু, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, ভিএস নাইপল। কিন্তু ক্লাসিক রাইটার বাদে যাদের লেখা পড়েছি তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে লতিফুল ইসলাম শিবলীর লেখা। লতিফুল ইসলাম শিবলীর লেখা চেতন ভগৎ কিংবা শাহাদুজ্জামানের লেখার চেয়েও অনেক অনেক বেশি ভাবিয়েছে, সমৃদ্ধ করেছে। শিবলীর লেখার কিছু সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য আছে যেটা যে কোন পাঠককে ভাবাবে। কিছু পয়েন্ট আউট করে দিচ্ছি আমার নিজের পাঠ উপলব্ধি থেকে... ১.প্রত্যেকটা চরিত্রের সুগভীর জীবনবোধ। ২.চরিত্রের পারপস অফ লাইফ সম্পর্কে সুস্পষ্ট উপলব্ধি। ৩. পূজিবাদ, সম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মানুষের পক্ষে লেখকের সুস্পষ্ট অবস্থান। ৪. মানুষের পক্ষে, জীবনের পক্ষে তার সাহিত্য। ৫. পূজিবাদ সম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মানুষের পক্ষে সকল সংগ্রামে আছে লেখকের নায়কেরা। সেটা হতে পারে সেক্স, ড্রাগ আর রক এন রোলে মত্ত হিপ্পিরা,কিংবা আন্ডারওয়ার্ল্ডের কোন গডফাদার এমনকি আফগানিস্তানে কোন তালেবান যোদ্ধা। এদের সবার মাঝেই একটিই মিল এরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত নষ্ট সিস্টেম আর পুঁজিবাদ আর সম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত, আদর্শনিষ্ঠ। ৬. পূজিবাদ সম্রাজ্যবাদের তৈরি সংজ্ঞাকে অস্বীকার করেছেন। পূজিবাদী মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা গ্রহণ করেন নি বরং সত্য সন্ধানে ব্রতী হয়েছেন। ৭.হুমায়ুন আহমেদ এর মত সহজ ভাষা আর সরল উপস্থাপনায় এত জটিল গভীর বোধকে ব্যক্ত করা অতুলনীয়। ওনার প্রথম উপন্যাস "আসমান" পড়ে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম।যে "আসমান" উপন্যাস এক বসাতেই পড়ে শেষ করেছি।পড়া শেষ করে তখনি রকমারিতে ওনার যে বাকী দুটো উপন্যাস "দারবিশ" এবং "দখল" আগেই প্রকাশিত হয়েছিল সে দুটো অর্ডার করেছি। এই উপন্যাস দুটো উপন্যাসের প্রত্যেকটা এক বসাতেই পড়ে শেষ করেছি। প্রথম উপন্যাস দারবিশের বিষয়বস্তু ৭০ এর দশকে যুদ্ধবিরোধী, পুঁজিবাদ আর সম্রাজ্যবাদ বিরোধী হিপ্পি আন্দোলন। হিপ্পি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়া এক বাংলাদেশি তরুণের আখ্যান। তার শেষ পরিণতি। দ্বিতীয় উপন্যাস দখলের বিষয় 'শহরের ভিতরে এক গোপন শহর দখলের লড়াই।' আন্ডারওয়ার্ল্ডে জড়িয়ে পড়া দুই কমিউনিষ্টের লড়াই। তার পাশে কবি, কবিতা আর বিমুগ্ধ বিশুদ্ধ পাঠক জেনির আর্তনাদ। ক্ষমা নাকি রিরংসা! প্রেমের জন্য কেউ রক্ত আর বারুদের মধ্যেও বিশুদ্ধ হবার ফেরার কিংবা সিস্টেম ভাঙ্গার আপ্রাণ চেষ্টা। ক্ষমতার উপরের কাঠামোয় বসে থাকা আদর্শহীন নোংরা জানোয়ারের সাথে অন্ধকার জগতের এক আদর্শবাদী গডফাদারের লড়াই। অন্যদিকে, ফুল পাখির এক কবির প্রেমের জন্য রক্ত বারুদে হিংস্র হয়ে ওঠা। রাজনীতি, সিস্টেম, হৃদয়বেদ্য, হৃদয়হীনতা,কবি,কবিতা,বন্দুক,বারুদ, আর আদর্শের জটিল থেকে জটিলতর সমীকরণ। সর্বশেষ প্রকাশিত উপন্যাস "আসমান"। 'যে গল্প জীবনের চেয়ে বড়।' উপন্যাসের কাহিনী সম্ভবত আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিদের কাছে একটা ট্যাবুই। আজ পর্যন্ত এদেশের কোন সাহিত্যিকের কাছে এরকম কাহিনী নিয়ে কোন উপন্যাস পড়িনি। বাংলা উপন্যাসের নায়ক একজন ইসলামিস্ট হবেন এটা কি ভাবা যায়! তাও আবার যে নায়ক কি'না নেশা, রক ব্যান্ড,গাজা,মাদক,ড্রাগস ছেড়ে গোড়া ইসলামিস্ট হবেন! তাবলীগ জামায়াত হয়ে পাকিস্তান, সেখান থেকে আফগান, তালেবান,সেখান থেকে গোয়েন্তানামো বে কারাগারে বন্দী। মুক্তি পাওয়ার পরেও রাষ্ট্রহীন দেশহীন এক নাগরিকের আখ্যান নিয়ে কোন উপন্যাস! ভাবাই যায় না। এটা তো শুধু লেখার কনটেক্সট! কিন্তু পুরো উপন্যাসটা যখন পড়বেন। নায়কের সুগভীর উপলব্ধি, জীবনবোধ, বৈচিত্র্যময় জীবন অভিজ্ঞতা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। আর উপন্যাসের উপস্থাপনার ধরণ, ভাষা, শব্দচয়ন পাঠককে আকৃষ্ট করবেই। পড়ে দেখতে পাড়েন যে কোন একটা উপন্যাস।

      By Shahariar Sajol

      25 Jul 2019 06:44 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      #রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জুলাই 'হৃদয় আল্লাহর ঘর। মানুষের হৃদয়টা তৈরি করা হয়েছে এই জন্য যে সেখানে শুধুমাত্র আল্লাহ থাকবেন। সে ঘরে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু ঢুকালেই শুরু হবে তোমার জাগতিক অশান্তি।' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত যুবক ওমারের হৃদয়জুড়ে অশান্তি। ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তার জীবনে নেমে এসেছে নিদারুণ বিভীষিকা। অশান্ত হৃদয়ে প্রশান্তির খোঁজে ওমার অন্ধকার পথে পা বাড়ায়। ড্রাগসের নেশায় বুঁদ হয়ে রক মিউজিক শুনে সে তার কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু ক্ষণেক্ষণে জীবন যেনো আরো বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে। সন্তানের কষ্ট ওমারের মা বুঝতে পারেন তবে তিনি সেবিষয়ে কিছু জানতে চান না। যখন দেখেন আদরের ধন দিনেদিনে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তখন তিনি ওমারকে স্থানীয় মসজিদের ইমাম ইসহাক হুজুরের সাথে দেখা করতে বলেন। ধানমন্ডি আট নাম্বার রোডের জামে মসজিদের বৃদ্ধ পেশ ইমাম ইসহাক হুজুর আর পাঁচজন সাধারণ হুজুরের মতো নন। তিনি বাস্তবতা ও যুক্তি দিয়ে কথা বলেন। ইসলাম যে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান এবং যেকোনো সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় এরইমাঝে নিহিত আছে এটি ওমারের সামনে তুলে ধরেন। বাস্তব জীবনে কিভাবে খুব সহজে নিজের মাঝে ইসলামকে ধারণ করা যায় তা বিশ্লেষণ করেন। ইসহাক হুজুরের সান্নিধ্যে আসার পর ওমার ভুল বুঝতে পেরে আলোর পথে ফিরে আসে। এরইমধ্যে ওমারদের মসজিদে আনোয়ার নামের এক যুবকের নেতৃত্বে তাবলীগ জামাত আসে। তাবলীগের সমস্ত নিয়মকানুন ওমারের মনে না ধরলেও তাদের ভ্রাতৃত্ববোধ ভালো লাগে। কিছুদিন পর আনোয়ারের দাওয়াতে সাড়া দিয়ে তারা পাকিস্তানের লাহোরে যায় তাবলিগি ইজতেমায়। সেখানে ওমারের পরিচয় হয় খালিদ নামের এক আরব-আফগান যুবকের সাথে। যে তাদের জিহাদের পথে আহবান জানায়। এই জিহাদ হলো 'আল জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ' যার অর্থ আল্লাহর পথে যুদ্ধ। ইজতিমা শেষ করে ওমার দেশে না ফিরে আল্লাহর রাস্তায় আফগানিস্তানের পথ ধরে। যে আফগানিস্তান এখন গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। যুদ্ধ থামানোর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ওমার তার জীবন আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিতে চায়। সৃষ্টিকর্তা হয়তো তার নিয়তি অন্যরকম করে সাজিয়ে রেখেছে। যেখানে ওমার দেখা পাবে তার আসমানের। কবি, গীতিকার, নাট্যকারসহ বহুল পরিচয়ে পরিচিত লতিফুল ইসলাম শিবলি ঔপন্যাসিক হিসেবে নতুন পরিচিতি পাওয়ার পাশাপাশি পেয়েছেন পাঠকের তুমুল ভালোবাসা। প্রথম উপন্যাস 'দারবিশ' এর মাধ্যমে তিনি যে যাত্রা শুরু করেছেন তা সহজে থামার নয়। 'আসমান' এর মতো উপন্যাস তাকে পাঠকের হৃদয়ে বহুকাল স্থান করে দিবে। 'আসমান' উপন্যাসে বর্ণিত জিহাদ সম্পর্কে ইতোপূর্বে বলেছি। প্রথমেই এই বিষয়টা একটু খোলাসা করা যাক। জিহাদ শব্দটি শোনার পরই আমাদের মধ্যে জঙ্গি জঙ্গি একটা মনোভাব কাজ করে। যারা নিরপরাধ মানুষদের মেরে জিহাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আসলে জিহাদ কিন্তু তা নয়, ইসলামে এই জিহাদের কথা বলা হয়নি। তাহলে কোন জিহাদের কথা বলা হয়েছে এবং কিভাবে করতে হয় তা 'আসমান' উপন্যাসে লেখক সুস্পষ্টভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। কাহিনিতে আফগানিস্তানের কথা উল্লেখ আছে। সেখানে কোন পরিস্থিতিতে কারা জিহাদে অংশ নিয়েছিল তার বিস্তর বর্ণনা দিয়েছেন। এরকম একটা দুঃসাহসিক প্লট নিয়ে কাজ করার জন্য লেখককে সাধুবাদ জানালে তা কম হয়ে যাবে। উপন্যাসের ব্যপ্তি খুব বড় না আবার ছোটও না। কাহিনিটা বাংলাদেশ থেকে শুরু হয়ে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, গুয়ানতানামো বে'র কুখ্যাত কারাগার পর্যন্ত গড়িয়েও থেমে যাইনি। আরো বিস্তৃতি লাভ করেছে। বিস্তৃত এই কাহিনিতে অনেক গুলো চরিত্রের সমাগম ঘটেছে। ওমার রিজওয়ান উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। আলো-অন্ধকারের মাঝে বিচরণ তার। সে যেকোনো সময়ের যুব সমাজের প্রতিনিধি। এছাড়াও ইমাম ইসহাক, ওমারের বন্ধু রুশো, আনোয়ার, খালিদ, আসমা ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রয়েছে। উপন্যাসে সারপ্রাইজিং চরিত্র হিসেবে আছে শিমুজি। চরিত্র আবার সারপ্রাইজিং হয় নাকি! ইসহাক হুজুর এবং খালিদের মাধ্যমে লেখক অনেক জটিল বিষয় সহজ করে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। ইসহাক হুজুরের মতো বন্ধু যে কারো কাম্য হতে পারে, কারণ তার চরিত্র জুড়েই রয়েছে মুগ্ধতা। পাকিস্তান, আফগানিস্তান শুনলেই মনে হয় দেশকে বাদ দিয়ে বুঝি বিদেশকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। না সেটা হয়নি। লেখক কাহিনির মাঝে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আনার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে দেশের প্রতি মমত্ববোধ প্রকাশ করেছেন। উপন্যাসের অধিকাংশ কাহিনি বর্ণিত হয়েছে আফগানিস্তানের প্রেক্ষাপটে। সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে তাদের যে সংগ্রাম এবং নেপথ্যের ইতিহাস সুনিঁপুনভাবে তুলে ধরেছেন। অনেক অজানা তথ্য ও ইতিহাস বর্ণিত আছে। এরমাধ্যমে আমাদের মাঝে বিরাজমান অনেক ভ্রান্ত ধারণা দূরীভূত হবে। লেখক উপন্যাসে জুড়ে স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির যে গভীর মমত্ববোধ তা অত্যন্ত প্রগাঢ় ভাবে ব্যক্ত করেছেন। ফারসি কবি জালাল উদ্দিন রুমি'র ছোটছোট কবিতা পাঠককে একরাশ মুগ্ধতায় গ্রাস করে নিবে। যুগে যুগে যুবসমাজ হতাশার পর্যবসিত হয়ে নানান অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু এগুলো তাদের মুক্তি দেয়নি বরং নিঃশেষ করে দিয়েছে। হতাশায় নিমজ্জিত যুবসমাজের জন্য 'আসমান' একটি সুন্দর জীবন সহায়ক বই হতে পারে। স্রষ্টা, সৃষ্টি, প্রেম, যুদ্ধ, রোমাঞ্চে ভরপুর 'আসমান' এর গল্প জীবনের চেয়েও বড়।

      By Marufa Akter Swarna

      03 Jul 2019 06:19 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Larger than life বুঝি একেই বলে! ওমার- হৃদয়ঘটিত কারণে যে যুবক হতাশার অতল সমুদ্রে হারিয়ে গিয়ে মজে যায় নেশার ধ্বংসাত্মক দুনিয়ায়। তার জীবনে ইসলাম কেমন করে পরিবর্তন আনে। হয়ে ওঠে ধর্মপ্রাণ মুসলমান। ঢাকার বিশেষ কিছু কুখ্যাত অলিগলি যার নখদর্পণে সে কেন আফগানিস্তানের যুদ্ধের মাঠে। যার খেসারত দিতে হয় ১২ বছর কুখ্যাত গুয়ান্তানামো বে কারাগারে বিনা বিচারে জেল খেটে- অকথ্য নির্যাতন সহ্য করে। কিন্তু পরম করুণাময় কি এতই নিষ্ঠুর যে তার জীবন কে এক বিয়োগ গাঁথা হিসেবেই লিখবেন? না- তিনি পরম করুণাময়, প্রত্যেকের জন্য যিনি রেখেছেন উত্তম প্রতিদান। তাই উপন্যাসের শেষে ওমার যেন এক মুক্ত বিহঙ্গ- সে খুশি এক আসমান ভালবাসা নিয়ে। কোন অন্ধ বুলি নয়। তীক্ষ্ণ যুক্তি দিয়ে গড়া ধর্ম ইসলাম। ইসলামের দর্শন নিয়ে আমরা কমই ভাবি। উপন্যাসটি আপনাকে ভাবাবে। আছে রক সংগীতের গল্প, ঢাকার অলি গলির গল্প। এবং শেষে অপ্রত্যাশিত চমক। সব মিলিয়ে ৫/৫ না দিয়ে পারলাম না।

      By shahper zaman

      10 Mar 2019 10:33 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      দারবিশ, দখল পড়ার পর এবার আসমান পড়ে আগের মতই মুগ্ধ হলাম! তিনটা বই এ তিন রকম ভালো লাগা তৈরি হয়েছে। কেন জানি লতিফুল ইসলাম শিবলীর উপন্যাস পড়ার পর তার রেশ বহুদিন থেকে যায়। আসমানের ক্ষেত্রে তাই হল। বারবার পড়েছি। আসমান এমন একটা বিষয় নিয়ে লেখা হবে তা ভাবতে পারছিলাম না। উপন্যাসটা একেবারেই নতুন আর বাস্তব ঘটনা তুলে ধরেছেন লেখক। আজকাল এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে কত জন বিভিন্নভাবে ভুল পথে মোটিভেটেড হয়েছে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার জন্য। আসমান এমন একটা বই যেখানে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া হয়েছে। বইটা পড়লে বোঝা যায় লেখক এই বিষয়ে অনেক স্টাডি করেছেন তাই অনেক জানেন। ইসলামের আয়াত গুলো ব্যাখ্যা করার সময় কোড দিয়ে লিখেছেন এই ব্যাপারটা আমার কাছে বিশেষভাবে ভালো লেগেছে। এতে ভুল বোঝাবুঝি অবকাশ থাকে না। এক কথায় বলা যায় চমৎকার এবং অসাধারণ একটা উপন্যাস আসমান। ভবিষ্যতে এমন আরও তথ্যভিত্তিক-হৃদয় ছোঁয়া উপন্যাস লেখকের কাছে আশা করছি। শুভকামনা। বই : আসমান রেটিং :১০/১০ প্রকাশক নালন্দা

      By Zahidul

      27 Feb 2019 11:44 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      জেল থেকে বলছি হাসতে দেখো গাইতে দেখো কেউ সুখী নয় পলাশীর প্রান্তর কষ্ট কাকে বলে এমন অসংখ্য গান যার হাত দিয়ে তৈরী... ছোটবেলার সেই ''রাজকুমারী'' নাটক এর হিরো আমাদের ৯০ পাগল মানুষের একটা ভালোবাসার নাম প্রিয় Latiful Islam Shibli এবছর প্রিয় লেখক এর লেখনীতে এক অন্য রকম রূপ দেখলাম #দারবিশ(বেষ্ট সেলার উপন্যাস ২০১৭) #দখল(২০১৮) এর পর ৩য় উপন্যাস ''আসমান'' প্রিয় লেখক এর উপন্যাস গুলোর একটা ভালোলাগার দিক হল উপন্যাস গুলো গ্লোবাল, আমি ঢাকায় বসে যে থ্রিল পাবো,অন্য ভাষার কলোরাডোবাসী একজনও সেইম থ্রিল পাবে। ... নাহ ১৫ দিন ধরে রিভিউ লিখতে বসেও ব্যর্থ আমি...উপন্যাস এর রিভিউ দেয়া যায় কিন্তু যখন উপন্যাস উপন্যাস এর মাত্রা ছাড়ায় তখন কিংকর্তব্যবিমূড় বসে থাকা ছাড়া কিছু করার থাকেনা... খুব সম্ভবত আসমান এর বেস্ট রিভিউ টা আসমান এর প্রচ্ছদেই দেয়া আছে... ''যে গল্প জীবন থেকেও বড়'' এবং আসলেও তাইই! একজন মেধাবীর ছেলের নিরংকুশ ভালোবসার সম্পর্ক এর মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ফাটল,যার কারণে তার মেধার জীবন থেকে ছিটকে পড়া, সাফোকেটেড জীবন থেকে বেড়িয়ে আসতে নেশা ও মিউজিক এবং তারপর জীবনের অদ্ভুত রকম টার্ন নেয়া এমন সব নাটকীয় বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে ... দায়িত্ব থেকে নয়,বরং ভালোবাসা মানে দায়িত্ব,মায়ের দোয়ার শক্তি,স্রষ্টার কাছে আত্নসমর্পণ এর প্রশান্তি, জ্ঞানী মানুষ এর তর্ক থেকে বেঁচে থাকা এমন অসংখ্য শিক্ষা অত্যন্ত সাবলীল সুন্দরভাবে প্রিয় লেখক তুলে ধরেছেন।ধর্ম আর আইডিলজি, স্রস্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক অভূতপূর্ব কৌশলে লেখক তুলে এনেছেন।আসলে, ''আসমান'' এর রিভিউ দেয়ার আমার যোগ্যতা নাই এক কথায়... ''আসমান'' বন্ধু-শত্রু,মিউজিশিয়ান,রকস্টার ,পোজার দল মত নির্বিশেষে সবাইকে পড়ার জন্য আমার অনুরোধ থাকবে। প্র্যাকটিসিং মুসলিম ভাইদের জন্য বইটি হতে পারে এক কথায় ''Reborn of your reborn'' আর আমার জীবনে ''আসমান'' যে কি সেটা নাহয় প্রিয় লেখককেই জানালাম!

      By Muhammad Asrafur Rahman

      14 Mar 2024 08:47 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      নিউজ ফিড স্কল করতে করতে একটা ভিডিও সামনে পড়লো, একজন সাংবাদিক একজন লোককে প্রশ্ন করছে যে আপনি সর্বশেষ কোন বইটা পড়েছেন লোকটি উত্তরে বলল "আসমান "।নামটা শুনে মনের ভিতর কেমন যেন একটা অনুভূতি হলো। বইয়ের ব্যাপারে আমার একটা দুর্বলতা আছে। মন থেকে বলল এই বইটা কিনতে হবে পড়তে হবে জানতে হবে। আর কিছু না ভেবে জমানো টাকা থেকে বইটি কিনে ফেললাম। কিন্তু কেনার পর আর পড়তে মন চাচ্ছিল না। কয়েকদিন পরে যখন পড়তে বসলাম বইয়ের প্রথম অর্ধেক পড়ে হারিয়ে গেলাম এবং তারপরের দিন ভোরে বাকিটুক শেষ করলাম। কি পড়লাম, কি বুঝলাম এখনও ভাবছি। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসকে অন্তরে আরও দৃঢ় করে দিয়েছে বইটি। আমার জীবনের অন্যতম একটি ভালো পড়া এবং বুঝা ছিল এটি। সবাইকে বইটি একবার হলেও পড়ার অনুরোধ করবো।

      By Md. Raiyan Hossain

      16 Aug 2024 04:45 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      While reading, at one terrible situation, I said why Omar ( the main character) is not committing a suicide, right then did Omar recite a verse from the Holy Quran which told that our births and deaths-both- are for and by Allah. It really strengthened my belief on Allah, and made me think that suicide cannot be an option. We have to have trust in Allah and believe Him. He knows when to take our lives. I have just said one factor of this books, there are even more important things here. It may shed drops of tears from some people's eyes. P.S.: The verse is not exactly given as it is in the Quran or in the book, for I didn't memorize it, but the meaning is same.

      By আল আমিন ( জীবন)

      16 Jul 2020 01:07 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      আমার পছন্দের বইগুলোর মধ্যে এটি একটি।

      By phoenix imteaz

      23 Oct 2019 05:39 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      কিছু কিছু অনুভূতি কখনো বোঝানো সম্ভব নয়।আজকে বিকেলের অনুভূতিটাও তেমন।মনে হচ্ছে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলো অনবরত কাঁপছে। অনেক কষ্টে চোখের জল আটকে রেখেছিলাম।কিন্তু শেষের ঘটনা চোখ আনন্দাশ্রুতে ভেসে গেল।একটা বইয়ের সম্মোহনী শক্তি এতোটা প্রবল তা জানা ছিলো না।অনেকদিন পর এমন একটা বই পরলাম যা ভিতরে একটা অদ্ভুত আলোড়ন তৈরি করলো।আমার জীবনে পড়া ১২০০+ বইয়ের মধ্যে মনে রাখার ছোট্ট তালিকায় এ বইটি সারাজীবন থাকবে। অসাধারণ বললেও কম বলা হবে "আসমান" বইটিকে।হে আল্লাহ, তুমি আমাদের সকলকে জীবনের উদ্দেশ্য বুঝার তৌফিক দান করো।

    • Was this review helpful to you?

      or

      বইয়ের নাম – আসমান লেখক – Latiful Islam Shibli ভাষা – বাংলা ঘরনা – সমকালীন উপন্যাস, থ্রিলার বইয়ের পৃষ্ঠা – ১৫২ বিনিময় মূল্য – ২২৫ টাকা প্রকাশনী – নালন্দা ব্যক্তিগত অনুযোগ (রেটিং) – ৪.৮/৫ অমুসলিম লোকটি মাথা নিচু করে বসে আছে, তার হাত কাঁপছে, ঠোঁট চেপে ধরে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করছে। অবশেষে, অমুসলিম লোকটি ওমারের হাত চেপে ধরলো। বললো, “ওমার আমি মুসলমান হতে চাই। তোমার হাত ধরে ই হতে চাই।” উপরের অনুভূতিগুলো, আবেগগুলো, কথাগুলো ‘আসমান’ বইয়ের, যার লেখক শিবলী ভাই। বইটি ক্ষাণিক আগে পড়া শেষ করেছি, আর এখন পর্যন্ত উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছি। পুরোটা শরীর কাঁপছে, সেই সাথে মস্তিষ্কের কোষগুলো লাফাচ্ছে। বার বার বলেছে, “কি পড়লাম? কি পড়লাম? কি পড়লাম?” বাস্তবিক জীবনে, অন্তত আমি নিজে, মানুষকে পড়ে খুশি হই। মানুষের জীবন পড়ে আমি আনন্দিত হই, নাম না জানা গল্প থেকে আমি হারিয়ে যাওয়া মানুষের গল্প শুনতে ভালোবাসি। আর, তেমনিভাবে, এমন এক গল্পকে আমার সামনে তুলে ধরেছেন শিবলী ভাই। শিবলী ভাইয়ের ‘দারবিশ’, ‘দখল’ বই দু’টো আমি আগে পড়েছি, তাই শিবলী ভাই কেমন আর কতটুকু লেখেন, তা আমার ধারণা আছে। কিন্তু, যেই বিষয় ধারণা একদম ছিলো না, তা হলো, ‘নতুনত্ব।’ প্রতিটি বইয়ের ভিন্ন ভিন্ন প্লট, ভিন্ন ভিন্ন আবহ আমাকে প্রতিবার মুগ্ধ করে। আমি ‘দখল’ পড়ার পর কখনো ভাবি নি যে, ‘দখল’ ছাড়া অন্য কোনো বই আমাকে এতোটা অভিভূত করবে। কিন্তু, আমি ভুল ছিলাম। কারণ, গল্পকার নতুন কাহিনীর জন্ম না দিলেও কবি শিবলী ভাই নতুনত্বকে সৃষ্টি করেছেন। ‘আসমান’ বইটি এতো এতো এতো চমৎকার আর মনোমুগ্ধকর যে, বইটা পড়া শেষ হওয়ার পর আমার দু’টি বিষয়ে খুব্ব বেশি আক্ষেপ আর কষ্ট হচ্ছে! রাগের আর ক্ষোভ কারণঃ এক. মাত্র একশ বায়ান্ন (১৫২) পৃষ্ঠা বই কেনো? দুই. এতো দামি গল্পের এতো কম ‘বিনিময় মূল্য’ কেনো? ‘আসমান’ বইয়ের চতুর্থ মুদ্রণ গতকাল এসেছে, স্বাভাবিক দরে হিসেবে করলে দুই হাজার (২,০০০) বই বিক্রি হয়েছে অথবা হালচাল দেখে বলতে গেলে দুই হাজার পাঁচশ বই বিক্রি হয়েছে এই বইমেলায়। আমি নির্দ্বিধায় এবং নিঃসন্দেহে বলবো যে, “যারা এখনো বইটি কিনেন নি, তারা প্রথমত, দ্বিতীয়ত, তৃতীয়ত এবং চতুর্থত ঠকেছেন। পঞ্চমত ঠকেছেন তারা, যারা বইটা কিনে নেওয়ার পর এখনো পড়েন নি।” বইটি এখনো আরো ‘অযুত’ পাঠকের হাতের কাছে যেতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশি পাঠক, মুসলমান ধর্ম সহ বাকি ধর্ম ওস ম্প্রদায়ের পাঠকরা ‘ইসলাম,’ ‘মুসলমান,’ ‘জঙ্গি,’ এই শব্দগুলো সম্পর্কে কখনো জানতে পারবে না। বুঝতে পারবে না। শিখতে পারবে না। ‘আসমান’ এর একশ বায়ান্ন (১৫২) পৃষ্ঠা পড়ার পর আমার ইচ্ছে করছে, আমি কমপক্ষে, লেখকের কষ্টটাকে সার্থক করার জন্য পনেরো-বিশ পৃষ্ঠার একটা মন্তব্য লিখি। কিন্তু, এতো বড়ো বই পর্যালোচনা আজকের সময়ে, কারোর পড়ার সময় নেই। তবুও, নিজের ভালোলাগা আর আবেগগুলোকে চেপে ধরে ছোট করে লেখার চেষ্টা করছি! ওমার আজ আচমকা আসমার চোখের দিকে সরাসরি তাকালো, এক ঝলক তাকানো মাত্র সাথে সাথে চোখটা নামিয়ে নিলো। আসমা ওমারকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার সময় ওমার ‘উহ’ করে উঠলো, ব্যথার শব্দ শুনতে পেয়ে আসমা জিজ্ঞেস করলো, “আজ ই প্রথম ব্যথা পেলেন বুঝি?” “হে।” ওমার ছোট্ট করে বললো। মুচকি হেসে দিয়ে আসমা বলে, “আল্লাহ আপনাকে একটু করে শাস্তি দিলেন।” “কেনো? শাস্তি দিলেন কেনো?” অনেকটা অবাক হয়ে জানতে চাইলো ওমার। “কারণ, আজ প্রথম আপনি সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকালেন।” ‘আসমান’ বইয়ে গড়ে ওঠা নিষ্পাপ দুটি চরিত্রের কথোপকথনকে এতোটা নানন্দিক আর রুচিসম্মতভাবে তুলে ধরেছেন যে, আমি নিজেকে, পাঠক হয়ে, শব্দে আঁকা সবুজ চোখের আসমা’র প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছি! এটা সত্য এবং বাস্তব। সবেমাত্র কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে পদাপর্ণ করা ওমার তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অর্থনীতি’ বিভাগে ভর্তি হয়, স্কুল জীবন থেকে ভালোবেসে আসা লামিয়া ফুটে ওঠে নিজস্ব রঙে, নিজস্ব ভঙ্গিমায়। তেত্রিশ পৃষ্ঠার শেষোক্ত প্যারা দ্বিতীয় লাইন থেকে শেষ শব্দ পর্যন্ত প্রতিটি শব্দ বাস্তবতার রূপের সাথে সাদৃশ্য হয়েছে, জীবনের অলিগলি দিয়ে হারিয়ে যাওয়া অতীতগুলোকে শব্দের তুলিতে রঙিন আঁচড়ে ফুটিয়েছেন ‘আসমান’ এর লেখক শিবলী ভাই। বইটিকে বিভিন্ন পাঠকদ্বয় বিভিন্ন দিক থেকে পর্যালোচনা করেছেন, তাই আমি ব্যক্তিগত ভাবে এখানে কিছু বলবো না। তবে, ‘আসমান’ বইটিতে একজন মুসলমান যুবকের কৌতূহল, উদ্দীপনা, প্রশ্ন, বিবেক বোধ সহ একজন সাধারণ ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষিত ছেলের মনের মানসিক অবস্থাকে তুলে ধরা হয়েছে এই বইতে। বর্তমানে, আধুনিক সমাজে, ‘তাবলীগ জামা’আত’ এর অবর্ণনীয় কষ্টের ইতিহাসের ফলে বর্তমান যমানার মুসলমানরা দ্বীনের খাতিরে, ইসলামের খাতিরে, ‘ইসলাম’কে জানতে, বুঝতে আগ্রহী হচ্ছে। তাদের সেই যাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে ‘তাবলীগ জাম’আত’ কাজ করে যাচ্ছে এক জোট হয়ে, ‘কালেমাওয়ালা মুসলমান’কে সত্যিকার অর্থে ‘কালেমধারী মুসলমান’ বানানোর মেহমত করে যাচ্ছে তাবলীগ জাম’আত। ‘ইসলাম সম্পর্কে জানা, ইসলামকে শুধু অন্ধের মতো বিশ্বাস করা, ইসলামের বিধিবদ্ধ জ্ঞানগুলোকে মেলে ধরা’ সহ একজন সাধারণ শিক্ষিত যুবকের পথভ্রষ্ট দিলকে সৃষ্টিকর্তা তথা আল্লাহমুখী করতে ‘ইমাম’ এর ভূমিকা ছিলো অনন্য। ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’ প্রবাদটি বহুল প্রচলিত হলেও বর্তমান যমানার অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে এবং তাদের পিতা-মাতা এদিকে বেখেয়ালি। ‘আসমান’ বইতে তেমনিভাবে উঠে আসা চরিত্র রুশো, লামিয়া, আনোয়ার, খালিদ, জনাথন সহ বিভিন্ন বিভিন্ন চরিত্রগুলোর চিত্রায়ণ এতোটা মনোমুগ্ধকর আর শৈল্পিক ভঙ্গিমায় করার জন্য শিবলী ভাইকে আমি শুধুমাত্র একজন পাঠক হিসেবে কিংবা একজন মুসলমান হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে আমি ‘ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা’ জানাই। আমেরিকার কুখ্যাত জেল ‘গুয়ানতানামো বে’ থেকে বিনা বিচারে বারো (১২) বছর জেল খেটে মুক্তি পেয়েছে এক বাংলাদেশি, ওয়াশিংটন পোস্টের এই খবরে চমকে গেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এমন সন্ত্রাসীর দায়িত্ব বাংলাদেশ নেবে না। আমেরিকার আর্মির কার্গো প্লেন তাকে ফেলে দিয়ে গেছে আলবেনিয়ার তিরানা বিমান বন্দরে, ট্রাভেল ডকুমেন্টহীন দেশহীন মানুষটাকে পৃথিবীর কোনো দেশ রাজনৈতিক আশ্রয় দেয় না। ‘রিফিউজি’ নাম নিয়ে তাকে থাকতে হবে রেডক্রসের শেল্টারে? মানুষটা এখন কোথায় যাবে!? চেনা সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলে, একটা অচনা দরজা খুলে যায়, জীবন বন্দি হয়ে গেলে সেটাও জীবনকেও ছাপিয়ে যায়, সেই জীবনের গল্প জীবনের চেয়েও বড় হয়ে যায়....... ‘দ্য ফিকশন বেইসড অন ফ্যাক্ট,’ যে উপন্যাসের স্থান-কাল-ইতিহাস সত্য, কাল্পনিক শুধু এর চরিত্রগুলো। বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা থেকে আমার অনুযোগ (রেটিং) চার..চার দশমিক তিন....চার দশমিক পাঁচ...তিন দশমিক নয়...চার দশমিক পাঁচ.... করতে করতে সবশেষে চার দশমিক আট (৪.৮) এ এসে থেমে গেলো। আর, ‘চার দশমিক আট (৪.৮)’ আমি হাতের আঙুলে কড়াগোনা যায় এমন কয়েকটা বইকে দিয়েছি। ‘আসমান,’ যে বইয়ের প্রথোমাংশ আমার জীবনের গল্প, যে গল্প আমার জীবনের গল্প, যে গল্প অন্ধকার হাতড়ে আলোতে ফিরে আসার গল্প..... সেই গল্প পড়া এবং নিজের অন্তরের অন্ধকার দূর করার জন্য প্রত্যেক সাহিত্যপ্রেমীদের, বইপ্রেমীদের এবং বিশেষত তরুণ-যুবক বয়সের প্রত্যেক ‘মুসলমান’কে এই বইটি পড়ার সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি....... #বইয়েরদুনিয়ায়স্বাগতম।

      By Raihan Uddin

      14 Feb 2019 02:22 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম হতাশা। আমার কাছে যেটা মনে হয় ড্রাগ বা সন্ত্রাস থেকেও ভয়াবহ এই হতাশা নামক রোগের প্রভাব। হতাশা থেকে বাঁচার জন্যই মানুষ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের পথে হাঁটতে শুরু করে। কিছু একটা করে হতাশাটাকে সে ভুলে থাকতে চেষ্টা করে। “ আসমান” লেখকের তৃতীয় উপন্যাস। লেখক লতিফুল ইসলাস শিবলী ঠিক রোগটাই যেন ধরতে পেরেছেন একদম ঠিক সময়টাতে। উপন্যাসের কেন্দ্রিয় চরিত্র ওমার দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যপিঠে অধ্যয়ন রত এক হতাশা গ্রস্থ মেধাবী কিশোর। প্রিয়তমার দেয়া কষ্ট ভুলে যেতে সে ড্রাগ আর উশৃঙ্খল জীবন যাপন বেছে নিয়েছে। অন্ধকারের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। এ যেন বর্তমান সময়ের হাজারও কিশোর বা যুবকের একটা সাধারণ গল্প। লেখক এই হাজারও বা লাখো অশান্ত আশ্রয়হীন হৃদয়েয় গতি পথ নির্দেশ করেছেন তার ”আসমান” উপন্যাসে। তিনি ওমার কে দিয়ে বুঝিয়েছেন কে আমি, আমার কি দ্বায়িত্ব, আমাকে কি পেতে হবে, কি ছাড়তে হবে। আমরা জাগতিক যে বিষয় গুলো নিয়ে এত হতাশ আসলেই কি এগুলো আমাদের প্রয়োজন? জবাব মিলবে ”আসমান ’’ এ। আসমান কে তাই একটা উপন্যাস বলতে ইচ্ছুক নই আমি। এটা একটা জীবন দর্শন, হতাশার আশার আলো, কোটি প্রাণের দিক নির্দেশনা। আমারএই লেখা টুকু পড়ে যে কারো ধারনা হতে পারে এটা হয়ত কোন উপদেশ মূলক বোরিং গ্রন্থ। কিন্তু শিক্ষা নেয়ার জন্য যে প্রকৃতি কে শিক্ষক হিসেবে নেয় সে চলতে চলতেই শেখে। তাই আলগা উপদেশ দিয়ে ভারি করা হয়নি একটা পাতাও। উপন্যাস টির প্রথম অংশ বৈচিত্রময় ঢাকা শহরের ওলি গলির অচেনা (চেনা) রূপ তুলে ধরে, আর দ্বিতীয় অংশে আফগান যুদ্ধের মাঠে নিয়ে যাবে সরাসরি ফ্রন্ট লাইনে। লেখকের প্রবল ইতিহাস জ্ঞান এই পৃথিবীর পরিক্রমার সাথে সাথে ওমার কিভাবে তার জীবন কে বৈশয়িক করে তোলে তার গল্প তুলে ধরেছেন পাতায় পাতায়। ভৌগলিক অবস্থার পাশা পাশি প্রাকৃতিক পরিবেশের নানা বৈচিত্র উপন্যাসটিকে দিয়েছে আলাদা এক মাত্রা। ”আসমান” পড়ে আমি নতুন করে কিছু বিষয় কে জানতে পেরেছি প্রেম, ক্ষমতা, অস্ত্র, ড্রাগ, আমার নিজের পরিচয় এগুলোর আমার জানার বাইরেও অনেক অর্থ আছে। ’’আসমান” সম্পর্কে আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে এটা কি ধরনের উপন্যাস? এক কথায় আমি উত্তর দিতে পারব না। কারন এখানে আছে থ্রিল, আছে রোমাঞ্চ, আছে রোম হর্ষক ভ্রমন কাহিনী, আছে সদুপদেশ। তাই আমি বলব এটা উপন্যাসের মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে অথবা উপন্যাসের পরিধিকে করেছে আরও বিস্তৃত। লেখকের জন্য শুভ কামনা রইল, শুভকামনা রইল যারা এই অসাধারন বইটার সাথে যে কোনভাবে জড়িত ছিলেন, শুভকামনা তাঁর জন্য যিনি আসমানের নামকরণ যে দৃশ্যে ফুটে উঠেছে ঠিক সেই দৃশ্যটিকে প্রচ্ছদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, সর্বপরি শুভকামনা নালন্দা প্রকাশনী কে এমন একটা উপন্যাস কে বাস্তবে রূপদান করে বাজারে আনার জন্য। কষ্টকরে লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

    • Was this review helpful to you?

      or

      #রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মার্চ 'আমার মনে অশান্তির আগুন জ্বলে, কি করবো?' 'ওজু করো। আগুন তো পানিতেই নেভে, নাকি?' ইমাম ইসহাকের এমন সব মজাদার সহজ কিন্তু অর্থপূর্ণ কথা আকৃষ্ট করতো ওমারকে।  ওমার রিজওয়ান। নব্বইয়ের দশকে যখন বাংলাদেশে রক এবং ব্যান্ড সংগীতের জন্য প্রচন্ড উন্মাদনা, তখন রক গায়ক বন্ধু রুশোর সাথে ঢাকা শহরের পথেঘাটে ঘুরে বেড়ায় উদ্দেশ্যহীন ছেলেটা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্র ওমার, কিন্তু প্রেমিকার অপ্রত্যাশিত প্রতারণায় বেঁচে থাকার সব রঙ হারিয়ে বসেছে। আত্মহত্যার চেষ্টা করেও পারেনি, এখন রুশোর সঙ্গে এখানে সেখানে ঘুরে, গাঁজা - ফেন্সিডিল খেয়ে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করে। শান্তি খুঁজে পেলো বৃদ্ধ ইমাম ইসহাকের বন্ধুত্বে। সাধারণ হুজুরদের মতো জাহান্নামের ভয় বা জান্নাতের লোভ দেখান না তিনি  ওমারকে। তিনি বলেন যুক্তির কথা, দর্শন আর জীবনের লক্ষ্যের কথা, হৃদয়ের শূন্যতার কথা। তাঁর কথা শুনতে শুনতেই ওমার অনুভব করে নিজের অন্তরের পরিবর্তন। রুশোর জীবনাদর্শ পিছে ফেলে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে শান্তি খুঁজে পায়।  তাবলিগ জামাতের সাথে পাকিস্তানের রাইওয়াইন্ডে আসে ওমার। বিভিন্ন দেশের ২০ লাখ মুসলিমের সম্মেলনে পরিচয় ঘটলো তালিবান নেতার পুত্র খালিদ বিন হিশাম এর সাথে। আফগান তালিবানরা তখন নিজেদের ভূমিতে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরূদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। কাবুল এবং বিভিন্ন অঞ্চলে কমিউনিজমের বিষ ছড়িয়ে পড়েছে, তা হটিয়ে একটি প্রকৃত ইসলামী রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য খালিদ এবং আরো অনেকে যুদ্ধ করছে। খালিদের চিন্তার স্বচ্ছতা এবং লক্ষ্যের দৃঢ়তা ওমারকে স্পর্শ করলো৷ বিশ্বাস রক্ষার জিহাদে পাড়ি দিলো আফগানিস্তানে। ট্রেনিং-এর পর বারগামে সশস্ত্র যুদ্ধের সময় ধাক্কা খেলো ওমার। যাদের আক্রমণ করেছে তারাও যে কালিমাই পড়ছে!  যুদ্ধে আহত ওমার আশ্রয় নিলো খালেদের বাড়িতে। সেখানে খুঁজে পেল স্রস্টার পক্ষ থেকে তার জন্য নির্ধারিত ভালোবাসা আসমাকে, বিয়ে করলো। যুদ্ধে ফিরলো না আর ওমার, নিজ মুসলিম ভাইদের উপর অস্ত্র ধরতে মন চাইলো না।  কিন্তু ১/১১ এর হামলার পর আমেরিকা শুরু করলো আফগান জনপদকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার অভিযান। আবারো সব হারালো ওমার, নিরপরাধ হওয়া স্বত্বেও স্থান হলো কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগারে। আলোর মুখ দেখেনি ওমার ১২ বছর হলো। নিজের দেশেও পরিচিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে। স্ত্রী আসমার সাথে কি আর দেখা হবে? জীবনের উত্থান-পতন, তবু বিশ্বাস না হারানোর গল্প 'আসমান'।  পাঠপ্রতিক্রিয়া: কিছু বই অন্তরের অন্তঃস্থল পর্যন্ত আমূল নাড়িয়ে দিয়ে যায়। আসমান উপন্যাসটি তেমনই। এটা শুধু ওমারের কাহিনি নয়, আমাদের গতানুগতিক যে ধর্মীয় চিন্তাধারা, তার থেকে এক কদম বেশি ভাবতে শেখাবে গল্পটা। ধর্মকে যারা প্রশ্ন করতে চান, বা যারা ধর্ম নিয়ে খুব বেশি ভাবেন না, সবার জন্যই ওমার চরিত্রটি। ওমারের মতই আমাদের অনেকেরই জীবনে ভুল আছে, হৃদয়ের ব্যাথা আছে, ফিরে আসার গল্প আছে। ওমার তাই কেবল গল্পের চরিত্র নয়, ভীষণ বাস্তব। ইমাম ইসহাকের যুক্তিবাদী চরিত্রটি মুগ্ধ করার মতো। দিকভ্রান্ত এক তরুন, যে মানবীর প্রেমে এতোটাই বুঁদ ছিলো যে সেই প্রেম হারিয়ে তার জীবন উদ্দেশ্য হারালো, তাকে তিনি জানালেন হৃদয়ে আল্লাহর প্রেমকে স্থান দিলেই কেবল জাগতিক সব অশান্তি থেকে মুক্তি ঘটে। এখনকার তরুনদের মধ্যে যে অস্থিরতা তার সমাধানের সহজ ব্যাখা দিয়েছেন লেখক ইমামের বয়ানে। সেই অস্থিরতার স্বরূপ অনেকটা দেখিয়েছেন রুশোর মধ্যে। রুশোর সাথে ওমারের কথোপকথনগুলোতে একজন অবিশ্বাসী আর বিশ্বাসীর দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য ফুটে উঠেছে। ইমামের চরিত্রের বিপরীত দিক বলা যায় আনোয়ারকে৷ আনোয়ার পড়ালেখা খুব একটা করেনি৷ তাবলিগ জামাতের সাথে যুক্ত আছে প্রায় দশ বছর, ধর্ম তার কাছে যুক্তির উর্ধ্বে তীব্র বিশ্বাসের জায়গা। আনোয়ার ধর্মের অলৌকিকত্বে বিশ্বাস করে,  কিন্তু যা বিশ্বাস করে সেখানেই তার আন্তরিকতা। আনোয়ারের চরিত্রটা থেকে বোঝা যায়, একজন বিশ্বাসী যদি খুব চিন্তা করতে নাও চায়, তবু ধর্মের প্রতি আন্তরিকতা আর সরলতা তাকে শান্তি এনে দিতে পারে। তাবলীগ জামাতের যে ভ্রাতৃত্ববোধ আর শৃঙ্খলা সেটাও চিত্রিত করেছেন লেখক। একই সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিন ধরে রটে যাওয়া কর্মপদ্ধতির ত্রুটিটাও উঠে এসেছে। একজন দূর্বল মুসলমানের জন্য তাবলিগ উপযোগী, কিন্তু বর্তমান আধুনিক তরুনরা যারা প্রশ্ন করতে জানে, বুদ্ধি দিয়ে ভাবে তাদের জন্য তাবলিগের সংস্কারের প্রয়োজন। যাদের সংস্পর্শে এসে পুরোপুরি ঘুরে গেলো ওমারের জীবন, সেই তালিবানদের জীবন ফুটে উঠেছে গল্পে। খালিদের মাধ্যমে জানা যায় আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস। লেখক বলেছেন জঙ্গিবাদীতার বিরুদ্ধে, নিরপরাধ মানুষকে অকারণে হত্যার বিপক্ষে। ইসলামে জিহাদেরও অবস্থান ব্যাখা করেছেন লেখক, 'অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের স্বপক্ষে দাঁড়ানোর নাম জেহাদ।' আধুনিক বিশ্বে ইসলামের বিভিন্ন সংগঠনের ইতিহাস উঠে এসেছে গল্পে। তাবলিগ জামাত, তালিবান, আল কায়েদা এদের কথা এসেছে, এসেছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, টুইন টাওয়ার হামলা ও তার ফলশ্রুতিতে অকারণ গণহত্যা। গুয়ানতানামো বে'র নৃশংসতা আর নিরপরাধ মানুষের উপর অত্যাচার এর গল্প আছে, আছে বন্দীদের নিয়ে বিশ্ব রাজনীতির উপরও আলোকপাত করা হয়েছে। লেখকের কঠিন দর্শনের কথা সহজভাবে বোঝানোর মুন্সিয়ানা প্রসংশা করার মতো। উপন্যাসের শুরুর দিকে রক নিয়ে আলোচনা আরো সংক্ষিপ্ত করলে ভালো হত। বিভিন্ন চরিত্রের মুখে দীর্ঘ সব আলোচনা রয়েছে, যার কারণে অনেকে ক্লান্ত বোধ করতে পারেন। তবে ধৈর্য ধরে পড়লে অনেক মেসেজ পাওয়া যায়, চিন্তা করার মতো খোরাক আছে। আফগানিস্তানে ট্রেনিং আর যুদ্ধের অংশগুলো উত্তেজনাময়, এখান থেকেই গল্প গতি পাওয়া শুরু করে।  হতাশায় পতিত জীবন থেকে ফিরে আসার, সহজে যুক্তি দিয়ে ভাবতে শেখার, আর মানুষকে, জীবনকে এবং সবকিছুর অগ্রে স্রষ্টাকে ভালোবাসার গল্প আসমান।  'যে গল্প জীবনের চেয়েও বড়।' বই: আসমান লেখক: লতিফুল ইসলাম শিবলী প্রকাশনায়: নালন্দা প্রকাশকাল: বইমেলা, ২০১৯ পৃষ্ঠাসংখ্যা: ১৫৮ মূল্য: ৩০০ টাকা

      By Leeon Haque

      06 Feb 2019 09:01 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      'লতিফুল ইসলাম শিবলী' ভাই এর লেখা। হোক সেটা গানের কলি, হোক সেটা গল্প-উপন্যাস এর কথামালা। সেই কোন কৈশরকালে অপেক্ষায় থাকতাম কবে শিবলী ভায়ের লেখা গান আসবে ক্যাসেটে। দিন বদলে এখন অপেক্ষায় থাকি কবে ভাইয়ের লেখা বই আসবে। 'আসমান' আর যাই কিছু হোক না কেনো 'দারবিশ' অথবা 'দখল' থেকে অনেক ভিন্ন। আমার মতে এই তিনটির মধ্যে 'আসমান' শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। এটি আসলেই জীবনের চেয়ে বড় গল্প। এ গল্প শুধু গল্পই না; এতে মানুষের জীবন দর্শনের বেশ কিছু শুভ ইংগিত আছে, আছে সু-পরামর্শ। পাশাপাশি আছে কিছু অশুভ তত্ত্ব। আমি আমার বিবেক দিয়ে গল্পের সর্বোচ্চ স্বাদ নিয়েছি সাথে মগজে গেঁথেছি শুভ ইংগিতগুলো। এটা হয়তো আল্লাহ'রই ইশারা। আলহামদুলিল্লাহ।

    •  

    Recently Viewed


    Great offers, Direct to your inbox and stay one step ahead.
    • You can pay using


    JOIN US

    icon Download App

    Rokomari.com is now one of the leading e-commerce organizations in Bangladesh. It is indeed the biggest online bookshop or bookstore in Bangladesh that helps you save time and money. You can buy books online with a few clicks or a convenient phone call. With breathtaking discounts and offers you can buy anything from Bangla Upannash or English story books to academic, research or competitive exam books. Superfast cash on delivery service brings the products at your doorstep. Our customer support, return and replacement policies will surely add extra confidence in your online shopping experience. Happy Shopping with Rokomari.com!