User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
জোশ বই। পাঁচে পাঁচ। ?
Was this review helpful to you?
or
"বকুলের মালা শুকাবে, রেখে দেব তার সুরভী!" বকুল ফুল নাম শুনলেই আমার এই গানটি মনে পড়ে। তবে বকুল ফুল পড়ার পর থেকে মনে পড়ে রহস্যময়ী "স্মিতা চৌধুরানী" ও "স্মিতা মহল, ১২১৭ বঙ্গাব্দ" এই উক্তিটি! বৃষ্টিস্নাত রাতে দেখা হওয়া রমণীর দশ বছর পরেও অপরিবর্তিত থাকা, হঠাৎ করে পেছন থেকে এসে তার "মশাই" সম্বোধন ও উপস্থিতি জানান দেয়ার জন্য বকুল ফুলের মোহনীয় গন্ধ আভাষ দেয় একটি অতিপ্রাকৃত ঘটনার। কৃষ্ণনগর জমিদারবাড়ীর জমিদারিত্ব নিয়ে কোন্দল ও পরবর্তীতে রুক্সিনী চৌধুরীর আগমন ও তার কর্মকান্ড খুবই সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। নামহীন গল্প কথক, তার জন্মের বিস্ময়কর ঘটনা, তাকে ঘিরে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা, ট্রেনের বগি ছিড়ে যাওয়া এবং মৃত্যুর ভয়ানক যে বর্নণা দিয়েছেন তা আসলেই গা ছমছম করা অনুভূতি এনে দিয়েছিল মনে। সব মিলিয়ে অতিপ্রাকৃত ঘরনার এই বইটি পড়লে সময় নষ্ট হবেনা একদম ই! বই শেষ করেই এর সিক্যুয়াল "বিড়ালাক্ষী" পড়তে আপনি বাধ্য হবেন! বিঃদ্রঃ গল্প কথকে আমি বারবার লেখককেই কল্পনা করছিলাম
Was this review helpful to you?
or
এই যে মশাই!? দশ বছর পর দেখা। অথচ কোন পরিবর্তন নেই। বলছিলাম স্মিতা চৌধুরানির কথা। কৃষ্ণনগর জমিদারবাড়ি, রেলস্টেশন, নীলাসাগর, হিরণমুখী এসবকিছুর ভেতর দিয়েই ঘটে যাচ্ছে একের পর এক ঘটনা। রহিম চাচা এক ব্যাগ দিয়েছিলো মশাইকে সেই ব্যাগ নিয়েই যত কিছু। আর এভাবেই ঘটনার সাথে মশাই জড়িয়ে যায়, দেখা হয় স্মিতার সাথে সেই সাথে পরিচয় হয় এক নতুন গন্ধের। জমিদার মহল, জমিদারি এসবকিছু আবৃত রয়েছে রহস্যের এক মায়াজালে। সেইসব রহস্যে বারংবার পথ হারিয়ে ফেলে মশাই। কিন্তু মায়াবী স্মিতা মশাইকে বের করে নিয়ে আসে। মশাই বিমোহিত হয় স্মিতাকে কেন্দ্র করে সেই পরিচিত গন্ধে। কিসের গন্ধ⁉ গল্পের মাঝখানে আর একটি চরিত্র ফুটে উঠে রুক্সিনি নামের যাকে দেখা যায় ডাক্তাররূপে। জমিদারবাড়ির সাথে রয়েছে তার এক নিবিড় সম্পর্ক। ঘটনা পরিক্রমায় এই রুক্সিনী ফাঁদে ফেলে মশাইকে। মশাইও রুক্সিনীর ফাঁদে পা ফেলে প্রবেশ করে তার বাড়িতে। প্রবেশ লড়াই ভয়ঙ্কর কিছুর সম্মুখীন হয় সে, পেট উগলে আসে, ধরা পড়ে। সে মনে-প্রাণে চায় স্মিতা আসুক। কিন্তু স্মিতা আসে না। স্মিতা এই বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেনা। কিন্তু কেন পারেনা⁉ মশাই যখন রুক্সিনীর সামনে বসা এক আসামি তখনই দেখা যায় রুক্সিনীর বাড়ির একটি কুকুর জখম হয়। সবাই দৌড়ে যায়। আর এর মাঝেই পালিয়ে যায় মশাই। দেখা হয় আবারও স্মিতার সাথে। এবার স্মিতা তাকে নিয়ে যায় স্মিতা মহলে। অনেক অজানা বিষয় এর উদঘাটন হয়। ঠিক এর মাঝেই ক্ষিপ্ত জনগণ ঘিরে ফেলে জমিদার মহল। কিন্তু কেন ক্ষিপ্ত তারা⁉ ক্ষিপ্ত জনগণের হাত থেকে বাঁচার জন্য স্মিতা মশাইকে নিয়ে পালিয়ে যায়। মশাইকে রেলস্টেশনে পাঠাবে বলে স্মিতার এত আয়োজন। জংলার ধারে এসে স্মিতার চোখ প্লাবিত হয়। যে প্লাবনে শুকনো বকুল প্রাণ ফিরে পায়। কিন্তু স্মিতার এই কান্না কেন⁉ কে এই রুক্সিনী কি সম্পর্ক তার জমিদারবাড়ির কি সাথে? যে মায়াবী স্মিতা মশাইকে বারংবার রক্ষা করেছে বিপদ থেকে সে কেন মশাইয়ের হাতের কব্জিতে নখের আঁচড় ফেলেছিলো? একের পর বীভৎস খুন কার দ্বারা হয়েছিলো, কেন হয়েছিলো এসবকিছু জানতে হলে অবশ্যই অতিপ্রাকৃত ঘরানার বকুলফুল সিরিজ পড়তে হবে। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো বই। প্রতিটি পৃষ্ঠার সাথে রয়েছে এক উত্তেজনা। কি হবে, কি ঘটবে ঠিক এমনটাই। বকুলফুল ট্রিলজির দ্বিতীয় বই হচ্ছে বিড়ালাক্ষী যা গত বছর বের হয়েছে আর এই বছর বের হয়েছে তৃতীয় বই বাঁশি।
Was this review helpful to you?
or
সিরিজটা একসাথে পড়ব বলে রেখে দিয়েছিলাম। এখন আফসোস হয় এতদিন কেন আমি রেখেছিলাম। বকুল ফুল, স্মিতা, মশাই। মশাই চরিত্রটাকে খুব ভালো লেগেছে। লেখকের লেখায় একটা আলাদা টান আছে। এই টান ধরে রাখতে পারলে ভালো হবে।
Was this review helpful to you?
or
লেখকের বর্ণনাভঙ্গি খুবই দারুণ। মনে হয় চোখের সামনে সব ভাসছিলো। স্মিতা, রুক্সিনী যেন চোখের সামনে ঘুরছিলো। একটা সময় ভয়ে পেয়ে গেছিলাম, মনে হচ্ছিল বকুলের গন্ধ চারিদিকে।
Was this review helpful to you?
or
স্মিতার প্রেমে পড়ে গেছি ভাই।
Was this review helpful to you?
or
দারুন একটা সিরিজ!?
Was this review helpful to you?
or
প্রিয় বই
Was this review helpful to you?
or
অন্ধকার রাস্তা,পায়ের নিচে কাদা মাটি- হাঁটা দায়, কি লাগল হঠাৎ করে পায়ে পায়ে? একি রক্ত,তাজা রক্ত সামনেই শিশুটার গোটা মুন্ড! এক অভিশপ্ত ইতিহাস গোটা কৃষ্ণনগর গ্রামকে ভয়ে গুটিয়ে রেখেছে। গল্পকথক যার জন্মের পরেই ঘটে অস্বাভাবিক কিছু,তাকে দিয়েই ইতিহাস যেন জীবন্তরূপে প্রকাশিত হয়, এক মৃত মানুষের আত্মাকে শান্তি দেওয়াই যেন কথকের দায়িত্ব। জমিদার বাড়ীতে বছর বছর পূর্বে ঠিক কী হয়েছিল?যার দরুণ শুরু হয়েছে এক মৃত্যুখেলা!এটাই মনে হয় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন গায়ে শিহরণ জাগানো এই উপন্যাসটিতে। জমিদারবাড়ির পটভূমিকায় বর্ণিত এই অতিপ্রাকৃত উপন্যাসটি এক কথায় ছিল অতুলনীয়।
Was this review helpful to you?
or
ফেসবুকে বইয়ের গ্রুপগুলোতে ব্যাপক বিজ্ঞাপন আর আলোচনা দেখে হাতে নিতে অনেকটা বাধ্য হয়েছি বইটা। ভেবেছিলাম যত গর্জাচ্ছে ততো তো বর্ষাবেনা। কিন্তু আমি একটানে শেষ করে মুগ্ধ হয়েছি। লেখকের লেখার হাত বেশ ভালো। বিড়ালাক্ষীও প্রায় শেষ। স্মিতাকে খুব ভালো লেগেছে। রুক্সিনীকে নিয়ে আরো কাজ করা যেত।
Was this review helpful to you?
or
অতিপ্রাকৃত ও রহস্যময় এক উপন্যাস বকুল ফুল। অতিপ্রাকৃত কিছু নিয়ে আমার ছোটবেলা থেকেই আতঙ্ক কাজ করতো। আমি অতিপ্রাকৃত কিছু শুনতে,দেখতে পারতাম না। যখন মিসির আলী পড়া শুরু করলাম তখন এমন হয়েছে একদিকে মিসির আলী পড়ছি আরেকদিকে সারা রাত বইয়ের সব জিনিস স্বপ্নে দেখছি। কত রাত সে সব ভেবে আমার ঘুম হয় নাই। কিন্তু তাই বলে কিন্তু মিসির আলী পড়া থামে নি। বকুল ফুল তেমনি আতঙ্ক মুগ্ধতা ডুবিয়ে রেখেছে। এই বই পড়ার সময়ও সেই আতঙ্ক আবার ফিরে আসলো। প্রথম দিন যখন অর্ধেক পড়লাম সেই রাতে স্বপ্নে দেখলাম এক রহস্যময়ী নারি স্মিতা চৌধুরী বসে আছে কবরের মধ্যে তার সাথে ভয়ার্ত একটি ছেলে হারিকেন হাতে সেও কবরের মধ্যেই বসে আছে। চারদিকে কঙ্কাল। এই স্বপ্ন দেখে সারা রাত ঘুম হয় নি কিন্তু তারপরের দিন সকালেই আবার বকুল ফুল নিয়ে বসেছি। স্মিতা চৌধুরী কি নারী নাকি কোন অশরীরী মায়া সেই রহস্য তো জানতে হবে! কিন্তু স্মিতা চৌধুরী রহস্য টা যখন উন্মোচন হলো তখন মন টা একদম খারাপ হয়ে গেল। পৃথিবীতে ভালো মানুষের সাথে কখনই ভালো হয় না স্মিতা চৌধুরী যেন তার আরেকটা উদাহরণ! ?
Was this review helpful to you?
or
বইটিতে লুকিয়ে আছে দুইশত বছরের পারিবারিক কোন্দল, এর প্রধান কারণ জমিদারিত্ব। কাহিনীর প্রত্যেকটা অংশে রয়েছে হিংস্রতা। নীলসাগরের বর্ণনায় যে কাটা মস্তক, বিভৎস লাশ, লাশ চুরির ঘটনা গায়ের লোম খাড়া করে দিয়ে ছিল। শ্যামবর্ণের মায়াবী মেয়েটির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম, হারিয়ে গিয়েছিলাম তার বকুলফুলের গন্ধে। হরর, রহস্য, রোমাঞ্চ আর আর অতিপ্রাকৃত কাহিনীর বই বকুলফুল। বইটির শেষ পাতা পর্যন্ত না আসা পর্যন্ত আগ্রহ নিয়ে বসে ছিলাম এর পর কি হবে। সব মিলিয়ে দারুণ, লেখা সাবলীল। যেভাবে শুরু হয়েছিল ঠিক সে ভাবেই শেষ।
Was this review helpful to you?
or
বকুল ফুল একটি অতিপ্রাকৃতধর্মী উপন্যাস! হরর এবং থ্রিলিংয়ের এক দারুন সমম্বয়। আমি বোধহয় দারুন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে পড়তে পেরেছি। সেজন্য অনুভুতিটাও চমৎকার। আমি সাধারণত অতিপ্রাকৃতধর্মী বই পড়ি না। কিন্তু এটা ভালো লেগেছে। পুরো বইটা আমাকে ঘোরাচ্ছন্ন করতে চেয়েছে বারংবার। কিছু জায়গায় দুর্বলতা দেখেছি। বর্ণনা,এবং কাহিণী গঠনে! আশা করি আগামীতে আরো চমৎকার কিছু পাবো। তো? এই বৃষ্টিশীত সময়ে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ নিয়ে বসে পড়ুন 'বকুল ফুল' উপন্যাসটা হাতে নিয়ে।
Was this review helpful to you?
or
অনেকগুলো প্রশ্ন ছিল, যার সমাধান খোঁজে পাইনি। তবে বুঝতে বাকি রইলো না, বকুল ফুলের সিরিজ হিসেবে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরো একটি বই। প্রত্যাশা থাকবে, পরবর্তী বইয়ে লেখক এগুলোর সুন্দর সমাধান দিবেন। তাছাড়া গল্পের প্রত্যেকটি প্লটই ছিলো ব্যাপক রহস্যে ভরপুর। প্রচ্ছদটিও ছিল মন ভরে যাওয়ার মতো। নালন্দা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির কাগজের মান ভালো থাকলেও বাঁধাই ছিল চালিয়ে নেয়ার মতো।
Was this review helpful to you?
or
নাম-দাম-প্রচ্ছদ পছন্দ হলে মাঝে মাঝে পড়ি কথাটা আগেও একবার বলছি। আজকেও তা-ই হলো। বকুল ফুল নামটা খুব ভাল্লাগছে, তাই পড়ছি। একটানা পড়ার মতো বই হলেও আমি পারিনি একটানা পড়ে শেষ করতে। প্রফেশনাল হোম মেকার হিসেবে এরই মধ্যে যতটুকু পারছি, সময় বের করে নিয়ে পড়ছি। পড়ার মাঝখানে যে সময়টুকু সংসার সামলানোর কাজে ব্যস্ত ছিলাম, পুরোটা সময় ধরেই মনে মনে একটা গানের মধ্যে বিভোর ছিলাম। বকুল ফুল বকুল ফুল সোনা দিয়া হাত কেন বান্ধাইলি.......... গান গাওয়ার মাঝেও একটা তীব্র ঘাণ পেতাম, বকুল ফুলের ঘ্রাণ। মাঝে মধ্যে নিজেই অবাক হয়ে যেতাম। আমি কি আসলেই ঘ্রাণ পাচ্ছি! নাকি সবটাই আমার কল্পনা? আসলে বকুল ফুল বইটাই এরকম। খানিক সময় পর পরই বকুল ফুলের গন্ধে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতাম। মনে পড়ে যেতো ছোট্ট সময়ের কথা। খুব ভোরে ঘুম থেকে জেগেই দৌড় দিতাম বকুল গাছের তলায়। শিশির সিক্ত বকুল ফুল কুড়িয়ে অতি যতনে মালা গেঁথে পড়ার টেবিলে রেখে দিতাম। পুরো ঘর বকুলের গন্ধে মউ মউ করতো। আহা! সে কি রোমাঞ্চকর স্মৃতি! অ নে ক দিন পর আবারো ছোট্টবেলার সেই রোমাঞ্চকর স্মৃতিতে ফিরে গেলাম, মনোয়ারুল ইসলামের বকুল ফুলের কল্যাণে। আমি কিন্তু রিভিউ লিখতে পারি না। এই যে এতক্ষণ আবোল তাবোল লিখলাম, এটাকে কি রিভিউ বলা যায়? কোনো ভাবেই না। রিভিউ লিখতে না পারার কষ্টে তাই মাঝে মধ্যে পড়লেও লিখি না। তবে বকুল ফুল পড়ে আজ যেটুকু লিখলাম, সেটা রিভিউ না হলেও একান্তই আমার মনের অভিব্যক্তি। আসলেই খুব ভাল্লাগছে। সবচেয়ে ভাল্লাগছে রহস্যময়ী চরিত্র স্মিতাকে। পড়তে পড়তে স্মিতার চরিত্রে নিজেকে বহুবার কল্পনা করেছি। বইটিতে ভালো লাগার প্লট ছিল অনেক। সবচেয়ে ভালো লেগেছে, কৃষ্ণনগরের জমিদার বাড়ির স্মিতামহলে স্মিতা চৌধুরানীর মোমবাতির আবছায়া আলোয় ঘুরে বেড়ানোটা। ভালো লাগার মতো শব্দও ছিল অনেক। বিশেষ করে স্মিতা চৌধুরানির বলা 'মশাই' শব্দটা আমার খুবই ভাল্লাগছে। কিছুটা খারাপ লেগেছে, আবার কিছুটা ভয়ও পাইছি নীলাসাগর গ্রামে গিয়ে। ওখানে লাশ নিয়ে টানাটানি ভয় পাইছি। কল্পনা করতে ভয় পাইছি টিউমার ওয়ালা বেঁটে মানুষটাকে নিয়ে। সব মিলিয়ে বকুল ফুল ছিল অসম্ভব ভালো লাগার মতো একটা বই। এরকম বই পেলে আবারো পড়ার প্রত্যাশা রাখি। শুনেছি, সামনের বই মেলায় বকুল ফুলের সেকেন্ড পার্ট আসছে। প্রতীক্ষার প্রহরগুলো দীর্ঘ হয় জানি, তবুও সেই পর্যন্ত প্রতীক্ষায় রইলাম, আরো ভালো কিছু পাবার আশায়। অনেক বেশি শুভ কামনা থাকলো, প্রিয় বকুল ফুলের লেখক মনোয়ারুল ইসলামের জন্য। সবশেষে আরেকটা কথা, লেখক বিয়ে করছেন কিনা জানি না। যদি দিল্লীকা লাড্ডু এখনো না খেয়ে থাকেন, তবে দোয়া করি, উনি যেন স্মিতা চৌধুরানির মতো একটা বউ পান ।
Was this review helpful to you?
or
১২১৭ বঙ্গাব্দে গড়ে উঠা কৃষ্ণনগরের প্রাচীন রহস্যঘেরা জমিদার বাড়ি স্মিতামহলের রহস্যময়ী এক নারীকে কেন্দ্র করেই গল্পের সূচনা। এক বৃষ্টিস্নাত মধ্য রাতে লেখক প্রথম আবিষ্কার করেন এই রহস্যময়ী নারী স্মিতা চৌধুরানিকে। বকুল ফুলের সৌরভ মাখা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির রাতে এই রহস্যময়ী নারীর ছাতা হাতে উপস্থিতি শুরু থেকে লেখককে ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয়। লেখকের বাবার চাকুরীর সুবাদে কৃষ্ণনগরে তার প্রথমবার আগমন। স্মিতামহলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বকুল ফুলের গন্ধ অনুভব হলে চকিত দৃষ্টিতে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই লেখক দ্বিতীয়বারের মতো মেয়েটিকে দেখেন স্মিতামহলের ছাদে। মোমবাতির হালকা আলোয় এক মোহ জাগানীয়া ইঙ্গিতে লেখককে ডাকছে স্মিতা চৌধুরানি। "আমার আর কখনো কৃষ্ণনগরের জমিদারের তৈরি স্মিতা মহলে যাওয়া হবে না। জমিদারমহলের ছাদে দাঁড়িয়ে হাতছানি দেওয়া মেয়েটা কে? তার পরিচয় কী? জানা হবে না। প্রথম প্রথম এসব ভেবে মন খারাপ হতো। সময়ের পরিবর্তনে স্মৃতি অনেক কিছুই সাবধানে মুছে ফেলে। দশ বছর অনেক সময়! অনেক। একসময় ভুলেই গিয়েছিলাম জমিদারমহলের কথা, সুন্দরী মেয়েটার কথা, কিন্তু প্রকৃতি অনেক কিছুই ফিরিয়ে দেয় মাঝে মাঝে। প্রকৃতি চায় মানুষের মন যা খোঁজে তা কিছুটা হলেও পাইয়ে দিতে।" বাবার বদলিজনিত কারণে কৃষ্ণনগর থেকে চলে যাওয়ার পর এভাবেই লেখক তাঁর অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করেন। অজানা অচেনা সেই রহস্যময়ী নারীর জন্য লেখকের বুকের গভীরে যেন তৈরি হয় আরেক স্মিতামহল। হঠাৎ এক রাতে জরুরী প্রয়োজনে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে হিরনমুখী স্টেশন থেকে লেখক একটি লোকাল ট্রেনের কামরায় উঠে পড়েন। নিকষ কালো আঁধারের বুক ছিঁড়ে ট্রেন যখন এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই খুব পরিচিত একটা স্মেল অনুভূত হলে লেখক চমকে উঠেন। ঘুম ঘুম চোখে বুঝতে বেশ কষ্টই হচ্ছিল, এটি কি কল্পনারই বহিঃপ্রকাশ, নাকি অন্য কিছু? নাহ্, কল্পনায় ভেসে বেড়ানো স্মেলের আবেশগুলো এতো গাঢ় হওয়ার কথা না। পরক্ষণেই ট্রেনের সামনের আসনে লেখক তৃতীয় বারের মতো আবিষ্কার করেন কৃষ্ণনগরের জমিদার বাড়ির ছাদে দশ বছর পূর্বে মোমবাতির হালকা আলোয় ঘুরে বেড়ানো সেই রহস্যময়ী নারী স্মিতা চৌধুরানিকে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত একটা শীতল অনুভূতি বজ্রপাতের মতোই আছড়ে পড়ে। অন্ধকার কামরায় দশ বছর পূর্বের সৌরভ আর অতি পরিচিত মোলায়েম কণ্ঠস্বর লেখককে যখন অন্তহীন ভাবনার রাজ্যে ঘুরপাক খাওয়াচ্ছে, ঠিক তখনই ঘটে যায় আরেকটি ভয়াবহ ঘটনা। তরমুজের ফালির মতোই ট্রেনটা দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। রহস্যজনকভাবে স্মিতা চৌধুরানির অবরুদ্ধ কারাগারে অজানা এক মায়াজালের আবেশে বন্দি হয়ে যান লেখক। অপরিচিত এই নারীর লেবু চা পানের আমন্ত্রণকে অগ্রাহ্য করার মতো শক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। বকুল ফুলের মায়াবী ঘ্রাণে জড়িয়ে, আঁধারের বুক ছিঁড়ে একটা শীতল হাতে হাত রেখে রহস্যের আরেক তীর্থভূমি নীলাসাগর গ্রামে লেখক পা রাখতেই ঘটতে থাকে একটার পর একটা অপার্থিব ঘটনা। প্রত্যেকটি ঘটনার সাথেই পরিচিত সেই বকুল ফুলের সৌরভ আর মাঝে মধ্যেই রহস্যজনকভাবে স্মিতা চৌধুরানির গায়েব হয়ে যাওয়া তাকে ভীষণ রকম ভাবিয়ে তোলে। নীলাসাগর গ্রামের লাহুর নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের ময়লা ভিটা, লম্বা ভিটা ও নতুন ভিটায় কান পাতলে এখনো স্পষ্ট শোনা যায় শত সহস্র বেওয়ারিশ লাশের আত্মচিৎকার আর প্রহরে প্রহরে ডেকে উঠা শিয়ালের ভয়ঙ্কর ডাক। দূর্বাঘাসে পতিত হওয়া রাতের শিশির মারিয়ে রজস্যময়ী এই নারীর সাথে চলতে থাকা লেখক এখানে মুখোমুখি হতে থাকেন একটার পর একটা অতিপ্রাকৃত সব ঘটনার। ওঁৎ পেতে থাকা পদে পদে বিপদ, বেওয়ারিশ লাশের গোরখুদকের নৃশংস মৃত্যু, নীলাসাগর গ্রামের তরুণীদের রহস্যজনক লাপাত্তা, বিভৎস সব লাশ, বুনো শিয়ালের ভয়ার্ত হাঁকডাক, নবজাতক শিশুর ছিন্নভিন্ন মুন্ডু, অদ্ভূত টিউমারে ভরপুর খাটো নারীর আবির্ভাব সবই যেন নীলাসাগরের নিত্য ঘটে যাওয়া স্বাভাবিক সব ঘটনা। সব ঘটনার সাথেই স্মিতা চৌধুরানির দেবীরূপে অাবির্ভাব আর বকুল ফুলের গন্ধ রহস্যের জটলাকে ক্রমেই ঘনীভূত করেছে। অতিপ্রাকৃত জনরার বই এই প্রথম পড়লাম। একজন থ্রিলারপ্রেমী হিসেবে অন্য জনরার বইয়ের রাজ্যে খুব একটা ঢুঁ মারা হয় না। কিন্তু অনলাইনে বইটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা আর সমালোচনাই মূলত আমাকে বকুল ফুলের বাগানে বিচরণ করতে অনুপ্রাণিত করেছে। বইটি পড়তে যেয়ে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী কবিতার কয়েকটি চরণ বার বার মনের মধ্যে হানা দিচ্ছিলো। "বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশিরবিন্দু।" সত্যিই আমি অভিভূত! বাংলা সাহিত্যে শত সহস্র বইয়ের অন্তরালে যে এতো সুন্দর একটি বই শিশিরবিন্দুর মতো হাতের নাগালেই পড়ে ছিল, বইটি না পড়লে হয়তোবা আক্ষেপই রয়ে যেতো। শুরু থেকেই বকুলফুলের এই রহস্যময়তা আমাকে টেনে নিয়ে গেছে গভীর থেকে আরো গভীরে। মাঝে মধ্যেই বকুলফুলের অপার্থিব গন্ধ অনুভব করেছি। গল্পকথনে লেখকের মুন্সিয়ানার তারিফ না করে পারছি না। পুরো বইটি লেখকের নিজ জবানীতে ব্যক্ত করে আলাদা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। বকুল ফুলের স্মেলের সাথে স্মিতা চৌধুরানির উপস্থিতি যে ভঙ্গিমায় তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন, পড়তে যেয়ে কখন যে আমি এই রহস্যময়ী নারীর উপর ক্রাশ খেয়েছি বুঝতেই পারিনি। প্রায় দুইশত বছর পূর্বে ঘটে যাওয়া লোভ, লালসা আর পারিবারিক কলহকে কেন্দ্র করে লিখা 'বকুল ফুল' নামের এই অতিপ্রাকৃত উপাখ্যানটি পড়ে সত্যিই আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমার বিশ্বাস, লেখার এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে লেখক এগিয়ে যাবেন অনেকদূর। বাংলা সাহিত্যে রেখে যেতে পারবেন অসামান্য অবদান। বইটির আরেকটি বিশেষত্ব হলো- যতক্ষণ পড়েছি, পুরো সময়টাতেই বকুল ফুলের অপার্থিব গন্ধে মাতোয়ারা ছিলাম। গল্প কথককে স্মিতা চৌধুরানির 'মশাই' সম্বোধনটাও আমার কাছে অন্যরকম লেগেছে। বইটির বেশিরভাগ অধ্যায়ে লেখক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিছু আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা পড়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে আমি তেমন কোনো জটিলতার সম্মুখীন হইনি। কেননা, আমার শ্বশুড়বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া হওয়ার সুবাদে ওখানকার আঞ্চলিকতা আমার ভালোই রপ্ত করা ছিলো। একটি অতিপ্রাকৃত জনরার বই হিসেবে বইটি পড়ার সময় আমি খুবই ধীরগতিতে পড়েছি। চেষ্টা করেছি প্রতিটি বাক্য বুঝে পড়ার। এক্ষেত্রে কিছু প্রিন্টিং মিসটেক আমাকে ভালই পীড়া দিয়েছে। একটা অসঙ্গতির কথা না বললেই নয়। নীলাসাগর গ্রামে রহস্যময়ী নারী স্মিতা চৌধুরানির সাথে লেখক যখন একের পর এক অতিপ্রাকৃত সব রহস্যজনক ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছিলেন, তখন লেখক নিকষ কালো আঁধারের বর্ণনার পরমুহুর্তেই আবার জোৎস্নার উপস্থিতি নিয়ে এসেছেন। এটিও অতিপ্রাকৃত কোনো বিষয় কিনা আমার বোধগম্য নয়। নাকি ঘটে যাওয়া অতিপ্রাকৃত সব ঘটনার আবেশে জড়িয়ে নিজেও ভুল পড়লাম কিনা তাও ক্লিয়ার হতে পারছি না। বাস্তবে আমরা যা দেখে আসছি, লোকাল ট্রেনগুলোতে সাধারণতঃ যাত্রীদের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গাটুকুও অবশিষ্ট থাকে না। কিন্তু হিরনমুখী স্টেশন থেকে লেখক একটি লোকাল ট্রেনে চড়ে ফাঁকা আসনে একেবারে ঘুমানোর মতো জায়গা পেয়ে গেলেন! আবার সামনের আসনটিও খালি ছিল! এটিও অতিপ্রাকৃত কোনো ঘটনা কিনা ঠাহর করতে পারছি না। অনেকগুলো প্রশ্ন ছিল, যার সমাধান খোঁজে পাইনি। তবে বুঝতে বাকি রইলো না, বকুল ফুলের সিরিজ হিসেবে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরো একটি বই। প্রত্যাশা থাকবে, পরবর্তী বইয়ে লেখক এগুলোর সুন্দর সমাধান দিবেন। তাছাড়া গল্পের প্রত্যেকটি প্লটই ছিলো ব্যাপক রহস্যে ভরপুর। প্রচ্ছদটিও ছিল মন ভরে যাওয়ার মতো। নালন্দা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির কাগজের মান ভালো থাকলেও বাঁধাই ছিল চালিয়ে নেয়ার মতো। সবশেষে কি আর বলবো, 'উত্তম পুরুষে খুবই ভালো লিখেছেন মশাই।' বই : বকুল ফুল লেখক : মনোয়ারুল ইসলাম প্রকাশনায় : নালন্দা প্রকাশনী প্রচ্ছদ : মোস্তাফিজ কারিগর পৃষ্টা সংখ্যা : ১৩৫ মুদ্রিত মূল্য : ২৭৫ টাকা
Was this review helpful to you?
or
রহস্য, রোমাঞ্চ আর অতিপ্রাকৃত ঘটনাবলীর বই বকুল ফুল। একদিকে যেমন আপনি মুগ্ধ হবেন, মায়ায় পড়বেন, ভালবেসে ফেলবেন স্মিতা চৌধুরানিকে অন্যদিকে ঠিক তেমনি ভীত হবেন, রোমাঞ্চিত হবেন আবার কখনো বা অবাক হবেন তার কাজকর্মে। একদিকে কাটা মস্তক, বিভৎস লাশ, লাশ চুরির ঘটনাগুলো যেমন আপনাকে ভয় পাইয়ে দেবে অন্যদিকে আংটির রহস্য আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করবে। স্মিতার আগমণের সাথে সাথে পাওয়া ৬২ বার ( সত্যি আমি গুনেছি!) বকুল ফুলের গন্ধের বর্ণনা শুনে কখন যে আপনি ইট, সিমেন্টের রুমে বসেও বকুলের গন্ধ পেতে শুরু করবেন তা আপনি টেরও পাবেন না!
Was this review helpful to you?
or
আমার আর কখনো কৃষ্ণনগরের জমিদারের তৈরি স্মিতা মহলে যাওয়া হবে না। জমিদারমহলের ছাদে দাঁড়িয়ে হাতছানি দেওয়া মেয়েটা কে? তার পরিচয় কী? জানা হবে না। প্রথম প্রথম এসব ভেবে মন খারাপ হতো। সময়ের পরিবর্তনে স্মৃতি অনেককিছুই সাবধানে মুছে ফেলে। দশ বছর অনেক সময়! অনেক। একসময় ভুলেই গিয়েছিলাম জমিদারমহলের কথা, সুন্দরী মেয়েটার কথা, কিন্তু প্রকৃতি অনেককিছুই ফিরিয়ে দেয় মাঝে মাঝে। প্রকৃতি চায় মানুষের মন যা খোঁজে তা কিছুটা হলেও পাইয়ে দিতে।" কথাগুলো জনপ্রিয় লেখক মনোয়ারুল ইসলামের লেখা আলোড়ন সৃষ্টিকারী উপন্যাস "বকুলফুল" থেকে নেয়া। ১২১৭ বঙ্গাব্দে গড়ে উঠা কৃষ্ণনগরের স্মিতামহলের রহস্যময়ী নারী 'স্মিতা চৌধুরানি'কে নিয়ে গল্পের সূচনা। এক বৃষ্টিস্নাত মধ্য রাতে লেখক প্রথম আবিষ্কার করেন এই রহস্যময়ী নারী স্মিতা চৌধুরানিকে। শুরু থেকেই বকুলফুলের এই রহস্যময়তা আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে গভীর থেকে আরো গভীরে। মাঝে মধ্যেই বকুলফুলের অপার্থিব গন্ধ অনুভব করছি।
Was this review helpful to you?
or
অতিপ্রাকৃত এই বইটিতে লুকিয়ে আছে দুইশত বছর পুরনো পারিবারিক কোন্দলের কাহিনী। কাহিনীর পদে পদে হিংস্রতা, লালসা। লালসার স্বীকার হওয়া কতগুলো মানুষের আহাজারি। লেখক পুরো বইয়ে আকর্ষণ বজায় রাখতে সক্ষম ছিলেন। তবে গল্পকথকের নাম দেয়া থাকলে বিষয়টা আরো সুন্দর হতো। সম্পূর্ণ বই জুড়ে স্মিতার তাকে সম্বোধন ছিলো -'মশাই।' মন্দ না। আর রুক্সীনি চরিত্রটা আমার কাছে শেষ পর্যন্ত ঘোলাটে লেগেছে। একই উপনামের এই নারীর সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক আছে বৈকি কিন্তু আরেকটু স্পষ্ট করা যেত। কিন্তু যতটুকু টানটান উত্তেজনা অতিপ্রাকৃত বই পড়ার সময় অনুভূত হওয়া উচিত তার পুরোটাই ছিলো বলে আমি মনে করি।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ বকুল ফুল লেখকঃ মনোয়ারুল ইসলাম ধরণঃ উপন্যাস প্রকাশনাঃ নালন্দা প্রকাশকঃ জুয়েল রেদুয়ানুর মূল্যঃ ২৭৫ প্রচ্ছদঃ মুস্তাফিজ কারিগর। 'বকুল ফুল' একটি উপন্যাসের নাম। সদ্য প্রকাশ পাওয়া বইটি রচনা করেছেন তরুণ লেখক মনোয়ারুল ইসলাম। এটি লেখকের প্রথম উপন্যাস, কিন্তু পাঠকালে তা বুঝা মুশকিল। মনে হয় যেনো লেখকের আরো অসংখ্য উপন্যাস আগে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি অভিজ্ঞতার একটি নিদর্শন। সত্যিটা হল এটি লেখকের প্রথম উপন্যাস, তবে দ্বিতীয় গ্রন্থ। লেখক মনোয়ারু ইসলামের প্রথম গ্রন্থ 'ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাষার অভিধান' প্রকাশিত হয়েছিল বাতিঘর প্রকাশনী থেকে। এই কাজ তার জন্য খুন সহজতর ছিল না। 'ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাষার অভিধান' গ্রন্থটি প্রকাশের মধ্যে দিয়ে লেখক যে সাহসিকতা এবং ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন তার বাস্তবিক এক নিদর্শন 'বকুল ফুল'। কেনো 'বকুল ফুল' উপন্যাসে লেখকের ধৈর্য্য, শ্রম উঠে এসেছে? প্রত্যুত্তরে বলবো ভাষাশৈলী, গল্প বলার ঢঙ, ছোট ছোট বাক্য সাজানো আর প্রতিটি বাক্যের ধারাবাহিকতার ছন্দই তার উৎকৃষ্ট চিত্র৷ আমরা পড়ি উপন্যাস। কিন্তু উপন্যাসের মাঝেও কবিতার মতো ছন্দের প্রয়োজন। ঝরঝরে বাক্য না হলে আমাদের পাঠক মন বইপাঠে আলসেমিকে প্রশ্রয় দিয়ে বসে। খৈ হারিয়ে ফেলি আমরা। 'বকুল ফুল' উপন্যাসে সেই সময় অবকাশ নেই। 'বকুল ফুল' উপন্যাস প্রকাশিত হয় নালন্দা প্রকাশনী থেকে। বইটির দুর্দান্ত এক প্রচ্ছদ করেছে প্রচ্ছদ শিল্পী মোস্তাফিজ কারিগর। বইটি প্রকাশের কম সময়েই হাতে যখন আসে আমি মুগ্ধ হয়ে যায়! প্রচ্ছদের সৌন্দর্য্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেমনটা দেখেছিলাম তার চেয়েও অসাধারণ হয়েছে হার্ডকপিতে। এটা প্রকাশকে এবং কাভার প্রিন্টিং ব্যবস্থাপনার অবদানেই হয়েছে। এটি প্রশংসনীয়। লেখক তার বহু পরিশ্রমের চিহ্নটি উৎসর্গ করেছেন তার আদরের ভাগ্নি 'সাবীহা'কে। যাকে তিনি নিজকন্যাতূল্য মর্যাদা দিয়েছেন। হৃদয়ের কতোটা জায়গা জুড়ে এই 'সাবীহা' থাকলে তাকে এমন কাজের উৎসর্গ করা যায়! এটা ভালো লাগার। 'বকুল ফুল' উপন্যাস শুরু করবার আগে লেখক মনোয়ারুল ইসলাম পাঠকদের লেখক হুমায়ুন আজাদের কথা স্মরণে এনে দিয়েছেন। তুলে ধরেছেন হুমায়ুন আজাদেরঃ- ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো। ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো। ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা। ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা। ভালো থেকো। -হুমায়ুন আজাদ। প্রসংঙ্গকথাঃ বকুল ফুল, ঘুটঘুটে আঁধার। সুনসান নীরবতা চারদিকে। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির আভাসেও কথক ঘর ছেড়েছে গভীর রাতে রাস্তায় হাটার রোজকার অভ্যাসে। প্রায়শই এভাবে গভীর রাতে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার মা-বাবা জানলে এতে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। হয় দু'একটা কথা বলে, বিশেষ ভাবে ঝাড়ি নয়। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির নীরব রাতে কথকের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে কে যেনো হাটছে! এই অনুভূতি পরিলক্ষিত হলে কথক কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ে। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির জোর বাড়তেই বৃষ্টি আর আগুন্তুক মেয়ের পায়ে থাকা নুপুরের আওয়াজ মিলে ঝুম শব্দ! কিন্ত এই পরিবেশে কথক বিচলিত। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মাঝেও কপালে ঘামবিন্দুর জমাট। সে আগুন্তুক মেয়েটিকে আবিষ্কার করতে চেষ্টা করলো, ব্যর্থ হল। নিগূঢ় অন্ধকারে মেয়েটিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। চেহারা অস্পষ্ট। বাতাসে এলো মিষ্টি গন্ধ। মেয়টির গাঁ থেকেই আসছে! গন্ধটা কিসের? কর্পূর নাকি বকুল ফুলের! কথকের বাবার চাকরির সুবাদে কৃষ্ণনগর থাকা। কৃষ্ণনগরের জমিদার বাড়ির কাছাকাছিই তাদের বাড়ি। এই জমিদারবাড়ির জমিদারের নামই ছিল 'কৃষ্ণচন্দ্র'। তার নামেই অঞ্চলটির নাম হয়েছে কৃষ্ণনগর। কথক আগে কখনোই জমিদার বাড়ি দেখেনি। বইপত্রে যা দু'একবার পড়াশুনা হয়েছিল। খুব কাছাকাছি থাকা জমিদার বাড়ি দেখা কৌতূহল তাকে আঁকড়ে ধরলো। উচ্ছ্বাস নিয়ে একদিন ছুটে গেলো, দাড়াঁলো জমিদারমহলের সামনে। ঘুরে দেখাকালীন সময়ে তার নাকে ফুলের গন্ধ এসে লাগে। আর্দ্র ঘ্রাণ স্মরণ করিয়ে দেয় বকুল ফুলের কথা। কিন্তু চারপাশে কোনো বকুল ফুল গাছ নেই! বৃদ্ধ নারকেল গাছ আর তরুণ জাম গাছ ছাড়া আর কিই-বা আছে! নেই, বকুল ফুল গাছ নেই। অথচ ঘ্রাণের তীব্রতা এতো গাঢ় যে, মনে হয় যেনো পাশেই বকুল ফুলের গাছটি দাঁড়িয়ে। জমিদার মহলের মূল ফটে দাঁড়িয়ে দেখছিল সে। শ্বেতপাথরের খোদাঁই করা নাম- স্মিতা মহল, ১২১৭ বঙ্গাব্দ। হঠাৎ তার কানে ভেসে এল পরিচিত কন্ঠ। রহিম চাচার কন্ঠ। তিনি জানালেন এটা কোনো ঘুরবার মতো জায়গা নয়। ফিরে যাবার কথা বলেন। আর বলেন ফিরবার সময় যেনো পেছনে না তাকায়। কিন্তু কথকের কৌতূহলী মন! ফিরবার সময় ফিরে তাকালো সে। একি! স্মিতা মহলের ছাদে সে কাকে দেখছে? সেইরাতে মেয়েটি-ই তো! বিষয়টা রহিম চাচা বুঝতে পেরে হকচকিয়ে গেলো। ভয়ার্ত চোখে, বিরক্তিমাখা কন্ঠে কথককে কথা শুনিয়ে ফিরিয়ে নিল। ঘটনার কিছুদিন পর কৃষ্ণনগর ছেড়ে যেতে হয় তাদের। কারণ কথকের বাবার বদলি হয়েছে। উনার নাকি গ্রাম ভালো লাগে না। তাছাড়া সন্তানদের পড়াশোনার ব্যাপারেও তিনি চিন্তিত ছিলেন। মন খারাও হয় কথকের। আর কৃষ্ণনগরের জমিদার বাড়ি দেখা হবে না তার। স্মিতামহলের ছাঁদে দাঁড়িয়ে হাতছানি দিয়ে যে মেয়েটি ডেকেছিল, সে কে? কি তার পরিচয়? সে কী করে? কখনোই আর জানা হবে না। নিকষ অন্ধকারে মেইল ট্রেনে কথকের পাশে কোন এক যুবতি আছে। সে শুয়ে নাকি বসে আছে তা বুঝবার অবকাশ নেই। শুনশান নীরবতায় কথক কেবল নিজের নিশ্বাস উপলব্ধি করতে পারছে। আর নাকে ভেসে আসছে বকুল ফুলের গন্ধ। মেয়েটি কথকের সাথে কথোপকথনে জড়াতে চায়। কথক চায় না। জানায়, সে অপরিচিত কারোর সাথেই কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। প্রত্যুত্তরে মেয়েটি বলে, 'এখানে অপরিচিত কে মশাই!' মশাই শব্দটি খুব ভালো ভাবেই কথকের কানে গিয়ে ভিড়লো। তাকে একজন ছাড়া কেউ কখনো 'মশাই' বলেনি। সেই কতো আগে কৃষ্ণনগরের সেই সুন্দরী মেয়েটিই থাকে 'মশাই' বলেছি! তাহলে কি এই সেই মেয়ে! ভেবেই কথক বিচলিত হয়। প্রচণ্ড ভয় আছড়ে পড়ে মস্তিষ্কে। তারপর ভয়ের প্রভাব সাড়া শরীরে। বাতাসের সাথে যুদ্ধ করে সাদা একটা আলো নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে। কিছু মুহূর্ত পর মানুষের অবয়বের উপস্থিতি। বিড়ির আগুন স্পষ্ট। ভাবান্তরের দীর্ঘটান যেনো প্রতি টানে। লোকটা রিক্সাচালক। রিক্সা নিয়েই এসেছে। কিন্তু এই রাতে রিক্সা নিয়ে যাবার জায়গা কই! ভাবলো কথক। রিক্সাওয়ালা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, 'রাইতের বাসে আইছেন মনে হয়! কই যাইবেন?' 'কৃষ্ণনগর'... শেষকথাঃ এই গ্রন্থের আলাদা একটা মর্যাদা পাওয়া উচিত। কি সেই মর্যাদা? সেটা গুণীরা-ই ভেবে দিক, আমি অধম। সামান্য পাঠক। লেখকের শ্রম বৃথা যেতে দেয়নি লেখক নিজেই। প্রথম উপন্যাসে তার সেরাটা দিয়েছেন৷ তিনি শীর্ষের স্বপ্ন দেখতেই পারেন। যোগ্যতা তার স্পষ্ট। কিন্তু 'বকুল ফুল' দুর্বল হৃদয়ের মানুষের জন্য নয়। সত্যিই নয়। আমি গতকাল বিকালে বইটি পড়তে নিয়েছি। মাঝেমাঝে বিবিধ কাজের কারণে বইটির মলাট বন্ধ করেছি। রাতেও পড়েছি। হালকা ভয়ের হাওয়া লেগেছিল। তবে ভীতু প্রকৃতির নয় বলে ভয়টাকে প্রশ্রয় দেইনি। কবে যেনো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম রাতে। তারপর সকালে বইটি পড়ে শেষ করবার চ্যালেন্জ নিলাম। এই শীতের দুপুরে আগমন পূর্বে বইটি শেষ করেছি ঠিক কিন্তু আমার গায়ের লোম দাঁড় করিয়েই ছাড়ছে। এটাই কি লেখকের সার্থকতা! লেখকের কাছে আকুল আবেদন, আপনি লেখুন। আরো লেখুন। অজস্র লেখা এই পাঠকের হাতে তুলে দিন। ভালোবাসা রইল লেখক। বইটির জয় হোক, জয়ের যোগ্যতা এই বইয়ের আছে।
Was this review helpful to you?
or
"আমার আর কখনও কৃষ্ণনগরের জমিদারের তৈরি স্মিতা মহলে যাওয়া হবে না, জমিদারমহলের ছাদে দাঁড়িয়ে হাতছানি দেওয়া মেয়েটা কে? তার পরিচয় কী? কী করে? জানা হবে না, প্রথম প্রথম এসব ভেবে মন খারাপ হতো। সময়ের পরিবর্তনে স্মৃতি অনেককিছুই সাবধানে মুছে ফেলে। দশ বছর অনেক সময়! অনেক। একসময় ভুলেই গিয়েছিলাম জমিদারমহলের কথা, সুন্দরী মেয়েটার কথা; কিন্তু প্রকৃতি অনেককিছুই ফিরিয়ে দেয় মাঝে মাঝে। প্রকৃতি চায় মানুষের মন যা খোঁজে তাকে কিছুটা হলেও পাইয়ে দিতে..." উপরে উদ্ধৃত লাইনগুলো বকুল ফুল উপন্যাসের। প্রাথমিক পর্যায়ে সামাজিক জনরার উপন্যাস ভাবলেও বইখানা হস্তগত হবার পর হাড়ে হাড়ে টের পেলাম ভাবনা আর বাস্তবতার মধ্যে প্রায় সাযুজ্য নেই বললেই চলে। বকুল ফুল নামটার সাথে জড়িয়ে আছে এক অন্যরকমের ভালোলাগা, এক অদ্ভুত, অমোঘ আকর্ষণ। বইয়ের পরতে পরতে তার উপস্থিতি অনুভব করেছি। উপন্যাসের কাহিনি এগিয়েছে কৃষ্ণনগর গ্রাম ও তৎসংশ্লিষ্ট প্রায় দেড়শো বছরের জমিদারিপ্রথার চড়াই-উৎড়াই, ক্ষমতা হস্তগত করার তীব্র প্রচেষ্টাসহ যাবতীয় বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে। অতীত এই ঘটনার সাথে আশ্চর্যজনকভাবে উপন্যাসের নায়কের যোগসূত্র স্থাপিত হয় কাকতালীয়ভাবে কিংবা পরিকল্পনামাফিক। পুরো বই জুড়ে কথক নায়ক সীমাহীন বিপদের মধ্য দিয়ে গেছেন। উপন্যাসের কাহিনিকে পাঠকের কাছে সর্বাধিক আকর্ষণীয় করে তুলেছে স্মিতা নাম্নী এক শ্যামাতন্বী মায়াবী নারী- যার অস্তিত্বের সাথে বকুলফুলের সুঘ্রাণ জড়িয়ে আছে। স্মিতার চরিত্র সম্পর্কে নায়করূপি কথকের মতো দ্বৈধ প্রতিক্রিয়ায় ভুগতে বাধ্য হবেন পাঠকও। উপন্যাসের নায়ক একেক সময় একেক রূপে দেখেছেন স্মিতাকে। এই স্মিতা কখনও প্রকৃতির চিরন্তন মায়াময়ী নারীসত্ত্বা, আবার কখনওবা ক্রোধে ভরপুর আগ্রাসী কোনো মানবী। লেখকের তথা নায়কের ভাষ্যে, " স্মিতা আমার কোনো ক্ষতি করে না, তবুও সে স্বাভাবিক কেউ না..." "মেয়েটা মুহূর্তেই নিজেকে বদলে নেওয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা রাখে। " রুক্সিনি চৌধুরী, রহিম খাঁন- এই চরিত্রগুলোকে লেখক বিশেষ প্রযত্নে গড়েছেন। এছাড়া উপন্যাসের অন্যান্য চরিত্রগুলোও স্ব-স্ব মহিমায় প্রজ্জ্বল। কিছু চরিত্র- যেমন মনা পাগলা, ছলিম, হযরত, আলিম, জয়নাল, সুবীর, রমা, প্রবীর সূত্রধর, দুর্জয় শাকিল, মাশরুফ প্রভৃতিদের উপস্থিতি খুব কমসময়ের জন্য হলেও উপন্যাসের কাহিনিকে টেনে নিয়ে যাবার জন্য এদের প্রয়োজন মোটেও কম গুরুত্ববহ ছিলো না। বইটির নাম কেন বকুল ফুল হলো তা জানতে চাইলে বেশ মনোযোগের সাথেই শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়ে ফেলতে হবে- সম্ভব হলে তা এক নিঃশ্বাসেই। আদতেই কি বকুলফুলের সাথে এ উপন্যাসের নামকরণের কোনো যোগসাজশ আছে? আছে কি না তা নিজেরাই পড়ুন! কল্পনাশক্তির প্রখরতার প্রভাবেই হোক আর উত্তম পুরুষে লেখা লেখকের মুখাবয়ব পরিচিত হবার কারণেই হোক- বইটি যখন পড়ছিলাম তখন বিপদাপন্ন নায়কের স্থলে যেন লেখককেই দেখতে পাচ্ছিলাম। আসলে একজন লেখকের স্বার্থকতা বোধহয় তখনই হয় যখন তাঁর সৃষ্ট বিমূর্ত চরিত্র মূর্ত হয়ে পাঠকের কল্পনায় ধরা দেয়... সবমিলিয়ে 'বকুল ফুল' পড়ে বেশ ভালো লেগেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত প্রিন্টিং মিস্টেকে যে কয়েকবার বিরক্ত হইনি তা বলবনা। তবে বাক্যবিন্যাসে লেখককে আরেকটু সচেতন হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।
Was this review helpful to you?
or
যে রহস্যটা গল্পে এনেছেন সেটাও খুব ভালো লেগেছে। একদম শেষ পাতা পর্যন্ত টেনে ধরে রাখতে সক্ষম। পড়ার সময় আমিও আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেছি, এরপর কী হবে, এরপর কী হবে ভেবে। গল্পে ভৌগলিক বর্ণনা কম। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ কারণে জায়গাটা ইমাজিন করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। নালন্দার বইয়ের মান সবসময়ই ভালো। এটাতেও ব্যতিক্রম নেই। কাগজের মান, ছাপা, বাইন্ডিং সবই ভালো। বইয়ে বানান ভুলের সংখ্যাও কম, তবে বেশকিছু প্রিন্টিং মিস্টেক নজরে পড়েছে। ইতোমধ্যেই শুনেছি বইয়ের দ্বিতীয় মুদ্রণ চলে এসেছে, আশা করব ওটাতে ভুলগুলো থাকবে না। আচ্ছা, আপনাদের মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে। বইটার নাম বকুলফুল কেন? এটার উত্তর বইয়েই পাবেন, বলতে গেলে পুরো বই জুড়েই বকুল ফুলের অস্তিত্ব পাবেন। তবে, গল্পটার সাথে প্রচ্ছদটা মানানসই মনে হয়নি আমার কাছে। প্রচ্ছদটা আরো আকর্ষণীয় করা যেতো। ❝ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো। ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো। ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা। ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা। ভালো থেকো।❞
Was this review helpful to you?
or
বকুল ফুলের ঘ্রাণের আবেশের মতো এই বকুল ফুল ও শব্দে ,লাইনে প্রতি পাতায় এক মায়ায় আবদ্ধ করে রেখেছিল পড়ার সময়। এত সাবলীল ও সুন্দর লেখা যে এক বসাতে শেষ না করে উঠতে পারি নি......
Was this review helpful to you?
or
এক কথায় অসাধারণ একটি বই। সকলেট এই বইটা সংগ্রহেে রাখা উচিত। রহস্যে ঘেরা এই বইটি নবীন লেখক হিসাবে সত্যিই দারুণ। অনেকদিন অপেক্ষা করার পর বইটি হাতে পেলাম। লেখককে কাছ থেকো দোখার সখ আমার।
Was this review helpful to you?
or
বহুযুগের পুরানো ইতিহাস যদি আপনার সামনে জীবন্ত হয়ে ধরা দেয়, তবে কেমন অনুভূতি হবে? কোনো এক গভীর রাতে অপরিচিতা এক রমণী যদি হঠাৎ আবির্ভূত হয় আপনার সামনে, কথা বলে পরিচিত কারো মতো - তাকে দেখে কি ভয় পাবেন? গল্পকথকের সাথেে শ্যামবর্ণের মায়াবী মেয়েটির দেখা হয়েছিল মূলকাহিনীর দশ বছর আগে। সে সময়ে তিনি থাকতেন কৃষ্ণনগর গ্রামে। তাদের বাড়ির কাছেই এক জমিদার বাড়ি। জমিদারের নামে গ্রামের নাম। গল্পকথকের অভ্যেস ছিল রাতে-বিরাতে ঘুরে বেড়াবার। তখনই তার প্রথম দেখা মেয়েটির সাথে। রাতের নির্জন রেলস্টেশনের পথে। প্রথমে মেয়েটিকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেও মেয়েটি কিন্তু নিতান্ত আপনজনের মতো ব্যবহার করে তার সাথে। কে এই মেয়ে? কিছুদিন বাদে তারা সপরিবারে চলে আসেন কৃষ্ণনগর থেকে। দশ বছর পরের কথা। হিরণমুখী জংশন থেকে রাতের মেইল ট্রেনে যাত্রী হলেন গল্পকথক। ততোদিনে মেয়েটির কথা ভুলেও গিয়েছেন তিনি। পুরানো মায়া গিয়ে জমেছে মনের কোণায় কোনো ভুলে যাওয়া কুঠুরীতে। কিন্তু স্মৃতি আবার ফিরে এলো জীবন্ত হয়ে। ট্রেনের কামরায় তার সাথে একজন মেয়ে এসে উঠলো। সেই দশ বছর আগের মুখটি। স্মিতা চৌধুরানি। আশ্চর্য! এত বছরেও তার চেহারার কোনো পরিবর্তন হয় নি! ট্রেন ছাড়ার চল্লিশ-পঞ্চাশ মিনিট পার হবার আগেই সেটি পড়লো দুর্ঘটনায়। ট্রেন ছিন্ন হয়ে দু'ভাগে ভাগ হয়ে অচল পড়ে রইলো রাতের আঁধারে। স্মিতার উৎসাহে ট্রেনের কামরা ছেড়ে চায়ের খোঁজে হাড়কাঁপানো শীতের রাতে বাইরে বেরিয়ে এলেন গল্পকথক। কোথায় চা, কোথায় কি? কামরা ছেড়ে রাস্তায় বের হবার পরই ঘটতে লাগলো উদ্ভট সব ঘটনা। নীলাসাগর গ্রামের পথে জমাট অন্ধকারের রাত্রিতে একের পর এক রহস্য আবির্ভূত হতে থাকলো। গল্পকথকের অবস্থা হলো অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাবার মতো। যে পরিস্থিতির কোনো কূলকিনারা করতে পারছে না। স্মিতা কেন তাকে বের করে নিয়ে এলো বাইরে? কিছুক্ষণ বাদে টের পায় তারা কবরখানার মধ্যে দিয়ে হাঁটছে। এখানে কি কাজ তাদের? এই গ্রামের কাহিনীটাই বা কি? মানুষগুলো হারিয়ে কোথায় যায় এখানে? চলতে চলতে যে বীভৎস লাশগুলো চোখে পড়লো, সেগুলোই বা কার কাজ? স্মিতা কেন ভয় পায় না কোনো কিছুতেই? এতোকিছুর মধ্যে রুক্সিণী চৌধুরীর ভূমিকা কি? স্মিতা ছুটছে কিসের আশায়? পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ বেশি কিছুদিন থেকেই মনে হচ্ছিল রিডার্স ব্লকে পড়ে গিয়েছি। শেষমেশ চিন্তা করলাম পড়বো পড়বো করে রেখে দেওয়া "বকুল ফুল"-টাই পড়া হোক তবে। বাংলায় অতিপ্রাকৃত জন্রার বই খুব বেশি সংখ্যক বের হয় তা না। পারসোনালি আমার অসম্ভব পছন্দের একটা জন্রা। সেজন্যই এতো আগ্রহ নিয়ে শুরু করা। উত্তম পুরুষে লেখা হয়েছে পুরো উপন্যাস। একবসায় শেষ করতে পারবেন। যেই তালে শুরু হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই শেষ হয়েছে। কোথাও বোরড হবার সুযোগ নেই। জমিদারবাড়ির পটভূমিকায় যে কাহিনীটা বর্ণনা করা হয়েছে - আমার অনেক ভালো লেগেছে। কাহিনী যতটুকু বর্ণনার দরকার ঠিক ততোটুকু করা হয়েছে। এই জিনিসটাই বেশি দারুণ লাগল যে অতিরঞ্জন নেই কোথাও। চরিত্র বর্ণনার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। বইয়ে বেশকিছু বানান ভুল ছিল যেটা খানিকটা দৃষ্টিকটু লেগেছে। আশা করি পরবর্তী মুদ্রণে এসবে নজর রাখা হবে। ওভার-অল, নতুন বই হিসেবে সকলের পড়া উচিত বলে মনে করি।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_এপ্রিল বইয়ের নাম : বকুল ফুল লেখক : মনোয়ারুল ইসলাম প্রকাশনী : নালন্দা, প্রকাশকাল : বইমেলা ২০১৯ পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৩৫, মূল্য :২৭৫ "বকুল ফুল, বকুল ফুল সোনা দিয়া হাত কেনো বান্ধাইলি...!" বইয়ের নামটা দেখলেই গানটা মনে হয়ে যাবে! কিন্তু কাহীনিটা কি আদৌ গানটার সঙ্গে মিলে? . মাত্র একটা রাত যদি আপনার জীবনে এমনকিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা নিয়ে আসে; যার সংযোগ কখনই আপনার সঙ্গে ছিলো না, কিন্তু আপনি ওতপ্রোতভাবে এখন জড়িয়ে গেছেন সেই রাতের আঁধারের মত রহস্যের বেড়াজালে! তখন কি অনুভূতি হবে আপনার? এমনই একটা রাত, যতটুকু ভয়ংকর হলে জীবনের বাঁক নেতিবাচকভাবে ঘুরতে পারে, ঠিক ততটাই খারাপ হয়ে গল্পকথকের জীবনের সাথে মিশে যায়। এর আগেও এক রহস্যময়ী নারীর সঙ্গে তার দেখা হয়েছিলো দুবার, বছর দশেক আগে; কৃষ্ণনগরে। তাকে নাম জিজ্ঞেস করায় সে পুরনো জমিদার মহলটি দেখিয়ে বলে তার নামেই মহলটির নাম। সেই মহলের নাম ফটকে লেখা -'স্মিতা মহল, ১২১৭ বঙ্গাব্দ।' তার সঙ্গে গল্পকথকের আবার দেখা হয়ে গেলো ট্রেনে, তৃতীয়বারের মতন। কিছু জিনিসকে মাত্রই কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দেয়াটা কতটুকু যৌক্তিক? এখান থেকেই মূলত কাহিনীর সূত্রপাত! শীতের রাতে সেই রহস্যময়ী নারী তাকে ট্রেন থেকে বের করে আনে চা খাবার কথা বলে। তার কথা বলার মধ্যে কিছুতো ছিলো যেটা গল্পকথক অগ্রাহ্য করতে পারেনি! আপাদমস্তক রহস্যে আবৃ এই আবেদনময়ী নারী যখনই পাশে থাকে, তীব্র বকুলের গন্ধ টের পাওয়া যায়! এই যা...এই ঠান্ডায়ও কেমন ফিনফিনে শাড়ি পরে রয়েছে, তার মধ্যে মানবীয় অনুভূতির উদ্রেক হয়না বুঝি! আবার কি করে যেন মনের কথাও বুঝে ফেলছে সে! এসব কি হচ্ছে! যতবার তাকে গল্পকথক দেখছিলেন, ঠিক যেন সেইই আগের ছবিটাই ভাসছিল, মেয়েটা দশবছরে একটুও বদলায়নি নাকি! নীলাসাগর গ্রামটা বেশ অদ্ভুত, রহস্য জটলা পাকিয়ে আছে কোণেকোণে! এই গ্রামে অদ্ভুতভাবে তরুণীরা হারিয়ে যায়! যুবাদেরও মৃত্যু হয় প্রায়শই! এই মৃত্যুগুলো আসলে স্বাভাবিক না। গ্রামবাসীর বদ্ধমূল ধারণা এর পিছে কৃষ্ণনগরের জমিদারবাড়ির হাত আছে। কিছু একটা সূক্ষ যোগসূত্র অবশ্যই রয়েছে নীলাসাগর আর কৃষ্ণনগরের মধ্যে! এমনই যোগসূত্র, যার শিকড় গল্পকথলের জীবন পর্যন্ত জড়াবে! নীলাসাগরের মাঝেই লাহুর নদী। ওখানে তিনটা ভিটা -লম্বা ভিটা, ময়লা ভিটা আর আর নতুন ভিটা। মূলত তিনটাই কবর! ময়লা ভিটায় গল্পকথক দেখা পায় এক গোরখোদকের, বেওয়ারিশ লাশ কবর দিতে দেখা যায় তাকে। এক পর্যায়ে তাকে খুবই করুন মৃত্যুর স্বীকার হতে দেখা যায়! দেখা মিলে এক কদাকার অবয়বের, শরীর ভর্তি টিউমার! সে কিছুতো একটা করছিলো কবরটাতে! কিছু খুঁজছিল কি? আবার তাকেই দেখা যায় লাহুর নদীর তীরে আসা নৌকায় সহযোগীদের সাথে। গল্পকথককে সাক্ষী হতে হয় আরো অনেক বিভৎস মুন্ডুহীন, বুকচেরা লাশ, কবর আরও ভয়ংকর রহস্যের। আর এই পুরো ঘটনাটি একটি রাতেই ঘটে! সেই ভয়ংকর রাত থেকে গল্পকথক ফিরে আসে, কিন্তু সেই নারী কিংবা বকুল ফুলের গন্ধ তাকে ছেড়ে যায়নি! মেয়েটা তাকেই কেন বারবার দেখা দিচ্ছে..আবার গল্পকথকও মেয়েটার উপস্থিতিতে মনে অদ্ভুত সস্তি পান। গল্পকথক কি জানতো..অজান্তেই সে ফেঁসে গেছে কারো আমানত পৌঁছে দেয়ার জালে! স্মিতার দরকার মুক্তি। আর এই মুক্তির মাধ্যম হতে কিভাবে গল্পকথক মধ্যস্থ হবে সেটা এক ঘনীভূত রহস্য। একই উপনামের আরেক রহস্যময় চরিত্র রুক্সীনি চৌধুরানী, আগাগোড়া রহস্যময়ী সেও কম নয়। এসব যা কিছু ঘটছে, তা নতুন নয়। এই শিকড় খুব গভীর পর্যন্ত ছড়ানো। আর এসব অদ্ভুত ঘটনার সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এই রুক্সীনির প্রবলভাবে! গল্পকথক ক্রমশই এর ভেতরে প্রবেশ করছে, শেষটা যে তার হাত ধরেই হবার ছিল....! . #পাঠ_প্রতিক্রিয়া : অতিপ্রাকৃত ঘরানার এই বইটিতে লুকিয়ে আছে দুইশত বছর পুরনো পারিবারিক কোন্দলের কাহিনী। কাহিনীর পদে পদে হিংস্রতা, লালসা। লালসার স্বীকার হওয়া কতগুলো মানুষের আহাজারি। যেই লালসার প্রবলগ্রাসী ছোবল কিছু মানুষের জীবনে এতটাই বিপন্ন করেছিলো, যার অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছিলো অনেকটা বছর পরও! লেখক পুরো বইয়ে আকর্ষণ বজায় রাখতে সক্ষম ছিলেন। তবে পুরো বইটাতে গল্পকথকের কোন নাম উল্লেখ ছিল না। সম্পূর্ণ বই জুড়ে স্মিতার তাকে সম্বোধন ছিলো -'মশাই।' মন্দ না, বরং গল্পকথকের কথা মনে আসলেই এই সম্বোধনটা কানে বাজে। এই বইয়ের যতটুকু খাস ছিলেন এই বকুলের গন্ধে আবৃত রহস্যময়ী নারী স্মিতা এবং গল্পকথক, তততাই রুক্সীনিও! একই উপনামের এই নারীর সঙ্গে স্মিতার রক্তের সম্পর্ক আছে বৈকি, যেটা ঠিক সূক্ষভাবে উজ্জ্ব আছে। যতটুকু টানটান উত্তেজনা অতিপ্রাকৃত বই পড়ার সময় অনুভূত হওয়া উচিত তার পুরোটাই ছিলো বলে আমি মনে করি। বকুল ফুল কি খুব প্রিয়? বকুলের মালা হাতে নিয়ে খুশী হয়না এমন মানুষই হয়তো বিরল। একবার এই বইটা পড়ুন, দেখুন তো তারপর..বকুলের গন্ধটা কি আগেরমত স্রেফ ভালোলাগা দিচ্ছে, নাকি সুগন্ধের সঙ্গে পাঠকমনকে উদ্বেলিত করার রসদও জোগাচ্ছে! পরিশেষে শুধু বলবো...আত্মতৃপ্তির সুখপঠন।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মে বই: বকুল ফুল লেখক: মনোয়ারুল ইসলাম পৃষ্ঠা সংখ্যা:১৩৫ মুদ্রিত মূল্য:২৭৫৳ প্রকাশনী: নালন্দা ব্যক্তিগত রেটিং:৮.৫/১০ মেয়েটির সাথে তৃতীয়বারের মতো দেখা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে চেহারার কোন পরিবর্তন নেই। কীভাবে সম্ভব? প্রথমবার যখন দেখি তা দশ বছর আগের ঘটনা। বৃষ্টির জল চোখেমুখে মেখে হাঁটছি হঠাৎ কোত্থেকে এসে মাথায় ছাতা ধরে এক আগন্তুক। মুখাবয়ব দেখি না, শুধু বকুলের গন্ধ পাই।নূপুরের শব্দ শুনে বুঝি, মেয়েমানুষ। এত রাতে একলা একটা মেয়ে কীভাবে ঘর থেকে বের হলো জানতে চাইলে সে বলে, 'আপনি যেভাবে বের হলেন' তা বলে এত রাতে! সে উত্তর দিল, 'ভিজে যাচ্ছিলেন,এগিয়ে দিয়ে গেলাম।কিন্তু বিশ মিনিটের মধ্যেই ফিরে যাবেন' বিশ মিনিট! চমকে উঠি। সে কি আমাকে ভয় দেখাতে চায়? মেয়েটির নাম জানতে চাইলে কাছেই দাঁড়ানো কদম গাছ লাগোয়া বাড়িটা দেখিয়ে বলল, 'মশাই, ঐ বাড়ির নামেই আমার নাম' রহিম চাচা কৃষ্ণনগর জমিদার বাড়ি নিয়ে গল্প বললেন।গল্পটি এরকম, " স্মিতামহলের ছাদে রাতের বেলায় এক তরুণী হাঁটে মোটা মোমবাতি হাতে নিয়ে,তার গায়ের রঙ খুব ফরসা নয়। জমিদারের মেয়েরা যতটা সুন্দরী হয় ততটা নয়। মেয়েটা হঠাৎ হাসে।আবার হুহু করে কাঁদে,তখন গ্রামের কুকুর-বিড়ালেরাও কুঁইকুঁই করে খুব করুণভাবে কাঁদে।যে রাতে মেয়েটার কান্নার শব্দ শোনা যায় সে রাতে গ্রামের কেউ জরুরি প্রয়েজনেও ঘর থেকে বের হয় না।এমন এক কান্নার রোল উঠেছিল অনেক আগে এক অনাবশ্যার রাতে।তখন শীতকালও না আবার বর্ষাও না; তবুও টিনের চালা বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে জমানো কুয়াশার মতো। ওই রাতে তিনজন মারা যায়,রহস্যময়ভাবে তিনজনই পুরুষ এবং তিনজনই বাসর রাতে মারা গেছে।" সতর্ক করে দিলেন যেন জমিদারবাড়ির এলাকায় চলাকালীন কখনো পিছনে ফিরে না তাকাই।কিন্তু কান্নার শব্দে আমি কৌতূহলপরবশ হয়ে পিছনে তাকালাম।দ্বিতীয়বার মেয়েটিকে দেখলাম।ভর সন্ধ্যায় মোমবাতি নিয়ে হাঁটছে,শরীরভর্তি গহনা। মহলের নামফলকে লেখা ''স্মিতা মহল,১২১৭ বঙ্গাব্দ"। মহলের ছাদে দাঁড়ানো মেয়েটি হাত নাড়িয়ে আমাকে ডাকছে। ট্রেনের কামরায় বকুলফুলের গন্ধে ভুরভুর করছে। পাশের ছিটে এক অপরিচিত তরুণী।তরুণী কিছু জিজ্ঞেস করলে বলি, 'অপরিচিত কারো সাথে কথা বলি না' -এখানে অপরিচিত কে মশাই? চমকে উঠি মশাই সম্বোধনে। স্মিতা চৌধুরাণী!! মেয়েটা আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে।এই আছে এই নেই হয়ে যায়।চোখের পলকে কোথায় হারিয়ে যায়। হঠাৎ একটা বিকট শব্দ হলো।ট্রেন ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে স্পিড কমিয়ে নিল।ভাবলাম ট্রেন থামবে।কিন্তু তরুণী আমাকে চমকে দিয়ে সাবলীলভাবে বলে, ট্টেন থামেনি।দুই ভাগ হয়ে ছিঁড়ে গেছে। কী আশ্চর্য!! স্মিতা চৌধুরাণী আমার মনের কথা আগে থেকে টের পেয়ে যায়।আমার ব্যাগে কী আছে সব জানে সে।রহিম চাচা আমাকে একটা পোটলা দিয়েছেন।যা আমার ব্যাগে রাখা। কী আছে তাতে আমি জানি না।কিন্তু স্মিতা বলে, পোটলার জিনিস পেলেই নাকি সে মুক্ত! কী আছে পোটলাতে! নীলসাগর গ্রামে তিনটি কবর আছে। লম্বা ভিটা,ময়লা ভিটা আর নতুন ভিটা।এ গ্রামের মেয়েরা অদ্ভুতভাবে হারিয়ে যায়।তাদের খবর কেউ জানে না।গ্রামের মধ্যদিয়ে লাহুর নদী বয়ে গেছে। নদীর পানিতে নাকি মিশে আছে কৃষ্ণনগরের জমিদারের রক্তরঞ্জিত ইতিহাস। সেই ইতিহাসের পেছনে ছুটে চলি নদ-নদী,মাঠ-ঘাট, শ্মশান পেরিয়ে কবরে। রাতের অন্ধকারে ঘাটে নৌকা এসে থামে। নৌকায় নিঃশব্দে এক মহিলা উঠে যায়।যার শরীরভর্তি গুটি টিউমার।স্মিতা নিজেকে সন্তর্পণে আড়াল করে রাখে। কেন? বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত ঘটনাতে আমি হকচকিয়ে যাই।ফিরে যেতে চাই।কিন্তু স্মিতা বাধা দেয়। 'আমাকে রেখে আপনি যেতে পারেন না।আমি ছাড়ব না আপনাকে।প্লিজ আপনি যাবেন না' স্মিতার কাজল চোখের কোণে শিশিরের মতো অশ্রুকণা।অজানা অপরিচিত যুবকের জন্য এই তরুণীর কীসের মোহ! কীসের মায়া! নাকি অন্যকিছু মায়ার আড়ালে! রুক্মিণী চৌধুরী আমেরিকাফেরত ডাক্তার।কৃষ্ণনগর এর সাথে তার কী সম্পর্ক? সে ও চায় পোটলার মধ্যকার বস্তু যা রহিম চাচা আমাকে দিয়েছিল। কী আছে এতে? জমিদার বাড়ির সাথে কী সম্পর্ক জিনিসটার? সবকিছুর উত্তর আছে 'কৃষ্ণনগর জমিদার বাড়ি' পাঠ প্রতিক্রিয়া: অতিপ্রাকৃত জনরার উপর বরাবরি আমার একটু বেশি ভাললাগা কাজ করে।এ বইটাও ব্যতিক্রম না। আনাচেকানাচে টুইস্ট লুকিয়ে আছে। পড়তে নিয়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে বইটা আকৃষ্ট করে রাখবে। শেষ করে নিজের অজান্তেই বলে উঠবেন, এটা লেখকের প্রথম উপন্যাস? সিরিয়াসলি? প্রথম উপন্যাস হিসেবে বইটা অসাধারণ।বর্ণনাভঙ্গি এবং বাক্যালাপ চমৎকার। বর্ণনা শৈলী দেখে খুব সহজেই আন্দাজ করা যায় লেখক শুধু ভালো লেখক নন ভালো পাঠক ও বটে! বইয়ের বাঁধাই সুন্দর। বানান ভুল খুব কম চোখে পড়েছে। তবে কিছু স্থানে দুটি শব্দের মধ্যকার স্পেস ব্যবহৃত হয়নি।যেমন, গন্ধবাজেভাবে (গন্ধ বাজেভাবে), মাজানলে (মা জানলে) ইত্যাদি। প্রিন্টিং মিস্টেক আরকি! বইয়ের নাম বকুল ফুল ঠিক আছে।কিন্তু বকুল ফুলের গন্ধটা খুব বেশি করে,বেশিবার হাইলাইট করা হয়েছে।যা এতবেশি ব্যবহার না করলেও হতো বলে মনে হয়েছে। রুক্মিণী চৌধুরীর পরিচয়টা খোলসা করা হয়নি।করলে ভালো হতো। লাশ বা বীভৎস খুনের বর্ণনা অনেক বেশি। অতিপ্রাকৃত করতে গিয়ে লেখক হয়তো এগুলো ব্যবহার করেছেন।মাঝখানে একটু বিরক্ত বোধ হয়েছিল।কিন্তু রহস্য আমাকে থামতে দেয়নি। সর্বোপরি বইটা বেশ ভালো। হ্যাপি রিডিং ♥
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মার্চ মনে করুন এক বৃষ্টির রাত। খেয়ালের বশে ছাতা ছাড়াই বাইরে বেড়িয়েছেন। ঝুপ ঝুপ বৃষ্টি পড়ছে, গ্রামের মেঠো পথ অন্ধকার। পাশ থেকে মাথায় ছাতা ধরলো কে জানি! শাড়ি পরা শ্যামবর্ণ মেয়েটি, অন্ধকারে ভালো করে দেখা যায় না। শুধু শুনতে পাবেন তার নুপুরের টুংটাং আর বকুলের ঘ্রাণ। 'ভয় পাচ্ছেন?' মনের কথাটাও যেন টের পায় সে। তার কাছ থেকে আর মুক্তি নেই, অশরীরী হলেও সে বকুল ফুলের মতই মায়াময়, তীব্র নেশা তার উপস্থিতিতে। তার প্রেমে পড়বেন না সে সাধ্যি আপনার নেই! আসুন, ঘুরে আসি কৃষ্ণনগর গ্রাম থেকে। পুরনো জমিদারবাড়ির ছাদে ঘুরে বেড়ায় মেয়েটি, স্মিতা মহলের স্মিতা চৌধুরানী। গল্পকথকের সাথে তার দেখা হয়ে যায় বারেবার। গভীর রাতে ট্রেনের কামরায় পাশে এসে বসে স্মিতা। চায়ের কথা বলে একরকম জোর করেই ট্রেন থেকে নামিয়ে আনে কথককে। ভুতুড়ে এক গ্রাম নীলাসাগর, বুক চিরে বয়ে যায় লাহুর নদী। সে গ্রামে কবরস্থানে গোর দেওয়া হয় বেওয়ারিশ লাশ, কেউ জানে না কোথায় হারিয়ে যায় গ্রামের তরুণীরা। সারা শরীরে টিউমার এক নারীমূর্তির, কবরে কি যেন খুঁড়ে চলে যায় দ্রুত। প্রচন্ড ভয় গ্রাস করে, স্মিতার মায়াময় চলনের ফাঁকে ফাঁকেও অশুভ কিসের আভাস! নীলাসাগর এর ভয়াবহ রাত থেকে স্মিতা কথককে বুক আগলে রক্ষা করে। কিন্তু অতিপ্রাকৃত কিছুর অস্তিত্ব পিছু ছাড়লো না। আবার ফিরে যেতে হবে কৃষ্ণনগরে, সেখানেই সব প্রশ্নের উত্তর। কি চায় রহস্যময় রুক্সিনী চৌধুরী? স্মিতার মুক্তির চাবিকাঠি কি? এতোগুলো বীভৎস মৃত্যু কেন ঘটে যাচ্ছে? পাঠপ্রতিক্রিয়া: 'বকুলফুল' যত্নে লেখা অতিপ্রাকৃত উপন্যাস। গল্প বলা হয়েছে বর্ণনামূলক উত্তম পুরুষে, কোথাও মূল চরিত্রের নাম উল্লেখ করা হয় নি। অতিপ্রাকৃত অংশগুলো গা শিউরানোর মত, কেমন একটা ঘোরের মধ্যে নিয়ে যায়। স্মিতার অশরীরী ভয়ংকর ভাবটা আভাসিত রেখেও মায়াবীনি দিকটা কথকের সামনে তুলে ধরার ঢং-টা ভালো লেগেছে। বইয়ের প্রচ্ছদ ভালোই, বাঁধাই এর মান খুবই ভালো। গল্পের শেষের দিকটা গতানুগতিক লেগেছে। কিছু প্রশ্নের উত্তরও খাপছাড়া, হয়তো লেখক পরবর্তী পর্ব আনবেন। প্রাচীন জমিদার বাড়ির মেয়ে হিসেবে স্মিতার নামটা কি অন্যরকম হতে পারতো? আমি ঠিক মানিয়ে নিতে পারছিলাম না! ভৌতিক উপন্যাস যারা ভালোবাসেন, তারা কোন এক বৃষ্টির রাতে বইটা নিয়ে বসে পড়তে পারেন। উপন্যাস : বকুলফুল লেখক: মনোয়ারুল ইসলাম প্রকাশকাল : #বইমেলা ২০১৯ প্রকাশনী: নালন্দা প্রকাশনী
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামের মতই বকুল ফুলের গন্ধে বইটি মেতে ছিলো। সাবলীল লেখা,খুব সুন্দর গল্পের প্লট সব মিলিয়ে বইট দারুন লেগেছে। লেখকের জন্য শুভ কামনা রইলো।
Was this review helpful to you?
or
বই পাঠ-পর্যালোচনাঃ ০৩ (গ্রন্থমেলা'১৯) 'বকুল ফুল' একটি উপন্যাসের নাম। সদ্য প্রকাশ পাওয়া বইটি রচনা করেছেন তরুণ লেখক মনোয়ারুল ইসলাম (Monowarul Islam)। এটি লেখকের প্রথম উপন্যাস, কিন্তু পাঠকালে তা বুঝা মুশকিল। মনে হয় যেনো লেখকের আরো অসংখ্য উপন্যাস আগে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি অভিজ্ঞতার একটি নিদর্শন। সত্যিটা হল এটি লেখকের প্রথম উপন্যাস, তবে দ্বিতীয় গ্রন্থ। লেখক মনোয়ারু ইসলামের প্রথম গ্রন্থ 'ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাষার অভিধান' প্রকাশিত হয়েছিল বাতিঘর প্রকাশনী থেকে। এই কাজ তার জন্য খুন সহজতর ছিল না। 'ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাষার অভিধান' গ্রন্থটি প্রকাশের মধ্যে দিয়ে লেখক যে সাহসিকতা এবং ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন তার বাস্তবিক এক নিদর্শন 'বকুল ফুল'। কেনো 'বকুল ফুল' উপন্যাসে লেখকের ধৈর্য্য, শ্রম উঠে এসেছে? প্রত্যুত্তরে বলবো ভাষাশৈলী, গল্প বলার ঢঙ, ছোট ছোট বাক্য সাজানো আর প্রতিটি বাক্যের ধারাবাহিকতার ছন্দই তার উৎকৃষ্ট চিত্র৷ আমরা পড়ি উপন্যাস। কিন্তু উপন্যাসের মাঝেও কবিতার মতো ছন্দের প্রয়োজন। ঝরঝরে বাক্য না হলে আমাদের পাঠক মন বইপাঠে আলসেমিকে প্রশ্রয় দিয়ে বসে। খৈ হারিয়ে ফেলি আমরা। 'বকুল ফুল' উপন্যাসে সেই সময় অবকাশ নেই। 'বকুল ফুল' উপন্যাস প্রকাশিত হয় নালন্দা প্রকাশনী থেকে। বইটির দুর্দান্ত এক প্রচ্ছদ করেছে প্রচ্ছদ শিল্পী মোস্তাফিজ কারিগর। বইটি প্রকাশের কম সময়েই হাতে যখন আসে আমি মুগ্ধ হয়ে যায়! প্রচ্ছদের সৌন্দর্য্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেমনটা দেখেছিলাম তার চেয়েও অসাধারণ হয়েছে হার্ডকপিতে। এটা প্রকাশকে এবং কাভার প্রিন্টিং ব্যবস্থাপনার অবদানেই হয়েছে। এটি প্রশংসনীয়। লেখক তার বহু পরিশ্রমের চিহ্নটি উৎসর্গ করেছেন তার আদরের ভাগ্নি 'সাবীহা'কে। যাকে তিনি নিজকন্যাতূল্য মর্যাদা দিয়েছেন। হৃদয়ের কতোটা জায়গা জুড়ে এই 'সাবীহা' থাকলে তাকে এমন কাজের উৎসর্গ করা যায়! এটা ভালো লাগার। 'বকুল ফুল' উপন্যাস শুরু করবার আগে লেখক মনোয়ারুল ইসলাম পাঠকদের লেখক হুমায়ুন আজাদের কথা স্মরণে এনে দিয়েছেন। তুলে ধরেছেন হুমায়ুন আজাদেরঃ- ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো। ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো। ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা। ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা। ভালো থেকো। -হুমায়ুন আজাদ। প্রসংঙ্গকথাঃ বকুল ফুল, ঘুটঘুটে আঁধার। সুনসান নীরবতা চারদিকে। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির আভাসেও কথক ঘর ছেড়েছে গভীর রাতে রাস্তায় হাটার রোজকার অভ্যাসে। প্রায়শই এভাবে গভীর রাতে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার মা-বাবা জানলে এতে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। হয় দু'একটা কথা বলে, বিশেষ ভাবে ঝাড়ি নয়। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির নীরব রাতে কথকের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে কে যেনো হাটছে! এই অনুভূতি পরিলক্ষিত হলে কথক কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ে। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির জোর বাড়তেই বৃষ্টি আর আগুন্তুক মেয়ের পায়ে থাকা নুপুরের আওয়াজ মিলে ঝুম শব্দ! কিন্ত এই পরিবেশে কথক বিচলিত। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মাঝেও কপালে ঘামবিন্দুর জমাট। সে আগুন্তুক মেয়েটিকে আবিষ্কার করতে চেষ্টা করলো, ব্যর্থ হল। নিগূঢ় অন্ধকারে মেয়েটিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। চেহারা অস্পষ্ট। বাতাসে এলো মিষ্টি গন্ধ। মেয়টির গাঁ থেকেই আসছে! গন্ধটা কিসের? কর্পূর নাকি বকুল ফুলের! কথকের বাবার চাকরির সুবাদে কৃষ্ণনগর থাকা। কৃষ্ণনগরের জমিদার বাড়ির কাছাকাছিই তাদের বাড়ি। এই জমিদারবাড়ির জমিদারের নামই ছিল 'কৃষ্ণচন্দ্র'। তার নামেই অঞ্চলটির নাম হয়েছে কৃষ্ণনগর। কথক আগে কখনোই জমিদার বাড়ি দেখেনি। বইপত্রে যা দু'একবার পড়াশুনা হয়েছিল। খুব কাছাকাছি থাকা জমিদার বাড়ি দেখা কৌতূহল তাকে আঁকড়ে ধরলো। উচ্ছ্বাস নিয়ে একদিন ছুটে গেলো, দাড়াঁলো জমিদারমহলের সামনে। ঘুরে দেখাকালীন সময়ে তার নাকে ফুলের গন্ধ এসে লাগে। আর্দ্র ঘ্রাণ স্মরণ করিয়ে দেয় বকুল ফুলের কথা। কিন্তু চারপাশে কোনো বকুল ফুল গাছ নেই! বৃদ্ধ নারকেল গাছ আর তরুণ জাম গাছ ছাড়া আর কিই-বা আছে! নেই, বকুল ফুল গাছ নেই। অথচ ঘ্রাণের তীব্রতা এতো গাঢ় যে, মনে হয় যেনো পাশেই বকুল ফুলের গাছটি দাঁড়িয়ে। জমিদার মহলের মূল ফটে দাঁড়িয়ে দেখছিল সে। শ্বেতপাথরের খোদাঁই করা নাম- স্মিতা মহল, ১২১৭ বঙ্গাব্দ। হঠাৎ তার কানে ভেসে এল পরিচিত কন্ঠ। রহিম চাচার কন্ঠ। তিনি জানালেন এটা কোনো ঘুরবার মতো জায়গা নয়। ফিরে যাবার কথা বলেন। আর বলেন ফিরবার সময় যেনো পেছনে না তাকায়। কিন্তু কথকের কৌতূহলী মন! ফিরবার সময় ফিরে তাকালো সে। একি! স্মিতা মহলের ছাদে সে কাকে দেখছে? সেইরাতে মেয়েটি-ই তো! বিষয়টা রহিম চাচা বুঝতে পেরে হকচকিয়ে গেলো। ভয়ার্ত চোখে, বিরক্তিমাখা কন্ঠে কথককে কথা শুনিয়ে ফিরিয়ে নিল। ঘটনার কিছুদিন পর কৃষ্ণনগর ছেড়ে যেতে হয় তাদের। কারণ কথকের বাবার বদলি হয়েছে। উনার নাকি গ্রাম ভালো লাগে না। তাছাড়া সন্তানদের পড়াশোনার ব্যাপারেও তিনি চিন্তিত ছিলেন। মন খারাও হয় কথকের। আর কৃষ্ণনগরের জমিদার বাড়ি দেখা হবে না তার। স্মিতামহলের ছাঁদে দাঁড়িয়ে হাতছানি দিয়ে যে মেয়েটি ডেকেছিল, সে কে? কি তার পরিচয়? সে কী করে? কখনোই আর জানা হবে না। নিকষ অন্ধকারে মেইল ট্রেনে কথকের পাশে কোন এক যুবতি আছে। সে শুয়ে নাকি বসে আছে তা বুঝবার অবকাশ নেই। শুনশান নীরবতায় কথক কেবল নিজের নিশ্বাস উপলব্ধি করতে পারছে। আর নাকে ভেসে আসছে বকুল ফুলের গন্ধ। মেয়েটি কথকের সাথে কথোপকথনে জড়াতে চায়। কথক চায় না। জানায়, সে অপরিচিত কারোর সাথেই কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। প্রত্যুত্তরে মেয়েটি বলে, 'এখানে অপরিচিত কে মশাই!' মশাই শব্দটি খুব ভালো ভাবেই কথকের কানে গিয়ে ভিড়লো। তাকে একজন ছাড়া কেউ কখনো 'মশাই' বলেনি। সেই কতো আগে কৃষ্ণনগরের সেই সুন্দরী মেয়েটিই থাকে 'মশাই' বলেছি! তাহলে কি এই সেই মেয়ে! ভেবেই কথক বিচলিত হয়। প্রচণ্ড ভয় আছড়ে পড়ে মস্তিষ্কে। তারপর ভয়ের প্রভাব সাড়া শরীরে। বাতাসের সাথে যুদ্ধ করে সাদা একটা আলো নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে। কিছু মুহূর্ত পর মানুষের অবয়বের উপস্থিতি। বিড়ির আগুন স্পষ্ট। ভাবান্তরের দীর্ঘটান যেনো প্রতি টানে। লোকটা রিক্সাচালক। রিক্সা নিয়েই এসেছে। কিন্তু এই রাতে রিক্সা নিয়ে যাবার জায়গা কই! ভাবলো কথক। রিক্সাওয়ালা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, 'রাইতের বাসে আইছেন মনে হয়! কই যাইবেন?' 'কৃষ্ণনগর'... শেষকথাঃ এই গ্রন্থের আলাদা একটা মর্যাদা পাওয়া উচিত। কি সেই মর্যাদা? সেটা গুণীরা-ই ভেবে দিক, আমি অধম। সামান্য পাঠক। লেখকের শ্রম বৃথা যেতে দেয়নি লেখক নিজেই। প্রথম উপন্যাসে তার সেরাটা দিয়েছেন৷ তিনি শীর্ষের স্বপ্ন দেখতেই পারেন। যোগ্যতা তার স্পষ্ট। কিন্তু 'বকুল ফুল' দুর্বল হৃদয়ের মানুষের জন্য নয়। সত্যিই নয়। আমি গতকাল বিকালে বইটি পড়তে নিয়েছি। মাঝেমাঝে বিবিধ কাজের কারণে বইটির মলাট বন্ধ করেছি। রাতেও পড়েছি। হালকা ভয়ের হাওয়া লেগেছিল। তবে ভীতু প্রকৃতির নয় বলে ভয়টাকে প্রশ্রয় দেইনি। কবে যেনো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম রাতে। তারপর সকালে বইটি পড়ে শেষ করবার চ্যালেন্জ নিলাম। এই শীতের দুপুরে আগমন পূর্বে বইটি শেষ করেছি ঠিক কিন্তু আমার গায়ের লোম দাঁড় করিয়েই ছাড়ছে। এটাই কি লেখকের সার্থকতা! লেখকের কাছে আকুল আবেদন, আপনি লেখুন। আরো লেখুন। অজস্র লেখা এই পাঠকের হাতে তুলে দিন। ভালোবাসা রইল লেখক। বইটির জয় হোক, জয়ের যোগ্যতা এই বইয়ের আছে।