User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ ?
Was this review helpful to you?
or
Just excellent
Was this review helpful to you?
or
খুব সুন্দর একটি উপন্যাস
Was this review helpful to you?
or
জিমি হাইসন এর লেখা তানহাব হল কি করে
Was this review helpful to you?
or
বইটা পড়েছি প্রায় ৩-৪ মাস হয়ে যাচ্ছে,,,, কিন্তু নীরো, সিজারের অত্যাচার, লিয়ামতিয়াসের অপূর্ণতা, আলিসার স্বপ্ন পূরণ না হওয়া,,,,,,সব যেন এখনো চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। লেখিকার এমন সুন্দর লেখার প্রেমে পড়তে বাধ্য হলাম,,,,,,আশা করছি সামনে এমন আরো অনেক উপহার পাবো,,,,,,ধন্যবাদ।
Was this review helpful to you?
or
লেখক খুব সুন্দর ভাবে ফিকশন আর ইতিহাস কে একিই তালে বলে গেছেন। তাই ফিকশনাল চরিত্রগুলাকেও সত্যিকারের মনে হয়েছে। বইয়ের মনোযোগ ধরে রাখতে তিনি সফল হয়েছেন বলতেই হয়।
Was this review helpful to you?
or
রিভিউ:: বইয়ের নাম : রক্ততৃষ্ণা, এক যোদ্ধার অসমাপ্ত প্রেমকাহিনি। লেখক : জিমি হাইসন। জনরা : হিস্ট্রিক্যাল ফিকশন। প্রকাশনা : ঐতিহ্য প্রকাশনী প্রকাশকাল: জানুয়ারী ২০১৯ পৃষ্টা সংখ্যা: ২৪৮। মূল্য : ৫৫০ টাকা (গায়ের দাম)। কাহিনী সংক্ষেপ :: গল্পটা দুই হাজার বছর পূর্বেকার। প্রাচীন রোমে। রোমে তখন সিজারদের রাজতন্ত্র চলছে। সেই সময়ে লাভার্না গ্রামে বাস করতো এক বালক লিয়ামতিয়াস। শান্ত ভদ্র, এই বালকটিকে তার দাদু ভাই ডাকতো লিয়াম বলে। পাহাড়ের ধারে মেষ চড়াত আর মাঝে মাঝে সেন্ট পিটারের সাথে ধর্মের বানী প্রচার করতো। এছারাও নদীর ওপারে এক মেয়ের সাথে ভাব ছিল। সময়ের সাথে সাথে ভাব প্রনয় হলো। মেয়েটির নাম আলিসা। তো লিয়াম এর জীবনে দাদুভাই নিকোসা, আলিসা আর মেষ গুলোই ছিল সব। তখন রোম এ চলছি নীরো সিজার এর রাজতন্ত্র। শিল্প সাহিত্য সঙ্গীত আর কাব্য পাঠে সিজার নীরো ছিল অনন্য। পুরো রোম জুড়ে গড়ে তুলেছেন কাব্য পাঠের আসর। সেই সাথে নীরো সিজার ছিল প্রচন্ড রকম নারী লোভী। প্রজাদের ঘরে থেকে নারী উৎচ্ছেদ করে সম্ভ্রান্ত্র লুট করাই ছিল তার কাজ। তাছারা ব্যাভিচারি কর্ম অহরহ করতেন নীরো। আবার প্রজাদের মনও জয় করে নিয়েছিলেন তিনি। এদিকে লিয়াম সেন্ট পিটার এর সাথে ধর্ম প্রচারে গিয়েছে। ফিরে এসে তার বাগদত্তা আলিসার সাথে বিয়ে হবে। কিন্তু হায় ভয়াংক নিয়তি তে ছিল না সেসব। ফিরে এসে লিয়াম যা দেখল তা হয়ত কখনো ভাবেননি। ভংকর সেই রাত লিয়াম এর পুরো জীবন ধংস করে দেয়। লিয়াম গ্রাম ত্যাগ করে। শান্ত ভদ্র লিয়াম হয়ে উঠে বিক্ষিপ্ত প্রতিশোধ পরায়ন আর আবেকহীন নিষ্ঠুর। ধর্মের নামে নৈতিকতা,আদর্শ সব জলাঞ্জলী দিয়ে লিয়াম হয়ে উঠে হিংস্র। শতশত লোক মারা যায় লিয়াম এর তরবারির ধারে। তবুও মিটে না তার রক্ততৃষ্ণা। বছরের পর বছর ঘুরে চলছে সেই রক্তের জন্য যে রক্তে মিটাবে তার রক্ততৃষ্ণা। লিয়ামতিয়াস কি পারবে মিটাতে তার রক্ততৃষ্ণা। শুরু হয় রোমান আর্মেনিয়ার যুদ্ধ, ক্রুশ বদ্ধ হয় সেন্ট পিটার, একে একে করে খ্রিষ্টানদের বলি দেয় নীরো । শুরু হয় রোমান ইহুদীদের যুদ্ধ আর শতাব্দীর ভয়নাক অগ্নিকান্ড। ভয়নাক সেই রাত পুড়ে যাচ্ছে সমগ্র রোম তখন মোহনীয় এক সুরে বীনা বাজাচ্ছে নীরো। রোম যখন পুড়ছিলো নীরো তখন বীণা (লির) বাজাচ্ছিলো। পাঠপ্রতিক্রিয়া :: রক্ততৃষ্ণা, এক যোদ্ধার অসমাপ্ত প্রেমকাহিনী। প্রথমত্ব পাঠ প্রতিক্রিয়ায় বলবো গল্পটি সত্যি খুব দারুন লেগেছে। রোমান প্রেক্ষাপট, প্রেম ভালোবাসা, আবেগ যুদ্ধবিগ্রহ প্রতিশোধ মিথ কি ছিলো না এটায়? গল্পটি মূলত প্রেম ভালোবাসার হলেও গল্পটিতে বড় অবস্থানে আছে সম্রাট নীরো সিজার এর শাসনকাল। তার অত্যাচার ব্যাভিচার, খামখেয়ালীপনা,মাতৃহত্যা কিংবা প্রেমিকাকে লাথি দেয়া কিংবা গুরু সেনেকা কে হত্যা ইত্যাদি ভংকর চরিত্র গুলো লিখিকা তুলে ধরছেন খুব সুন্দর ভাবে। রোমান অগ্নিকান্ড, রোমান ইহুদীদের যুদ্ধ আর নীরো শাসনকাল ইত্যাদি ইতিহাস ছিল ভালো লাগার মতোই। অন্যদিকে প্রতিশোধ পরায়ণ লিয়াম আর অসহায় নিরুপায় আলিসা চরিত্র দুটোই ছিল অসাধারন। তাই মূখ্য চরিত্র সৃষ্টিতে লেখিকা সার্থক। এরি পাশাপাশি অন্যান্য চরিত্র গুলোও চোখে পরার মতো। তাই বলা যায় গল্প ও চরিত্র সৃষ্টিতে লেখিকা সার্থক। রক্ততৃষ্ণা বইটার প্রতি আমার আকর্ষন শুরু থেকেই ছিল যখন ট্রিজার ট্রেইলার এ জানতে পারি গল্পটি নীরোর মিথটা নিয়ে। তো ফাইনালি বইটি পড়ে শেষ করলাম। শেষ করে একটি ঘোর লাগনো মুহর্তে আছি। তরুন লেখক লেখিকাদের মাঝে জিমি হাইসনে নাম গত কয়েক বছর যাবৎ আলোচনার টেবিলে । তার লেখার প্রেক্ষাপট প্রায় সবগুলো বইতেই রোমান দের নিয়ে । এর আগে তার রচিত এ মিস্ট্রি অফ ফোর্থ সেঞ্চুরি এবং এ ফায়ার অফ ফোর্থ সেঞ্চুরি যুগোল বই দুটো এক সাথে পড়েছিলাম। রোমান প্রেক্ষাপটে গল্প গুলো সত্যি ভালো লাগার মতো। এবং ইন্দ্রজাল বইটিও ছিল সুন্দর। জিমি হাইসনের সবগুলো গল্প ছোট ছোট ভাগ করে লিখেন আর এই স্টাইলে লেখা পাঠককে টেনে ধরে রাখে। তাছারা তার লেখা খুবই সফট, গুরুগম্ভীর শব্দ বা ভিন্ন ভাষার ব্যবহার নেই। তাই আশা করি তরুন এই লেখিকার হাত থেকে সামনে আরো বই পাবো। ঐতিহ্য প্রকাশনীর বই এর পেজ এর মান নিয়ে কথা বলা লাগে না। ক্রিম কালার এর পেজ চোখের জন্য খুবই আরামদায়ক। ছাপা ছিল সুস্পষ্ট, বানান ভুল একেবারেই নেই। বাধাঁইটা খুব ভালো। কয়েকবার পড়লেও আশাকরি নষ্ট হবেনা। ইতালিয়ান স্টুডিও Giusy D'Anna এর করা এই প্রচ্ছদ আমার দৃষ্টিতে ২০১৯ এর বেস্ট প্রচ্ছদ। সর্বাপরি রক্ততৃষ্ণা বইটা নিয়ে আমার দারুন একটা সময় কেটেছে। তাই আলোচনা সমালোচনা শেষ বইটিকে রেটিং দিবো ৪/৫। মিদুল চকবাজার, ঢাকা। ১২-০৭-২০১৯, বেলা ১২:৩০।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটি বই, পড়া শুরু করলে আর বই ফেলে উঠতে মন চাইবে না।
Was this review helpful to you?
or
"দু’ হাজার বছর আগে রোমের লাভার্না গ্রামে বাস করতো শান্ত নম্র স্বভাবের সুদর্শন এক যুবক, নাম লিয়ামতিয়াস। দাদু আদর করে ডাকতো লিয়াম বলে। সারাদিন পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে মেষ চড়িয়ে বেড়াত লিয়াম। আর মাঝে মাঝে ধর্মের পবিত্র বাণী প্রচারের জন্য সেন্ট পিটারের সঙ্গে বেরিয়ে পড়তো দূর-দুরান্তে। প্রিয়তমা আর বৃদ্ধ দাদুই ছিল যার পুরো পৃথিবী। ভয়ঙ্কর এক অশুভ রাত লিয়ামের পুরো জীবন ধ্বংস করে দেয়। সবুজ অরণ্যে ঘেরা প্রিয় গ্রাম ছেড়ে একেবারে হারিয়ে যায় গ্রামবাসীর অগোচরে। শান্ত আর নম্র স্বভাবের লিয়ামতিয়াসের ক্ষিপ্র এবং নিষ্ঠুর হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগেনা। নৈতিকতা, আদর্শ, ধর্মের পবিত্র শপথ – সব বিসর্জন দিয়ে সে হয়ে উঠে হিংস্রতার এক প্রতীকী। কাঁদতে আর হাসতে চিরতরে ভুলে যায় সে। প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়ে ওঠে তার তরবারি। তারপরও মেটে না তার রক্ততৃষ্ণা। প্রকৃত পিশাচের রক্তের সন্ধান পায় না সে। বছরের পর বছর যার রক্তে স্নান করবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল, ঠিক করে তার ইতিহাস সেই লিখবে……। যে ইতিহাস দু’ হাজার বছর পরও মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত – “রোম যখন পুড়ছিল, নীরো তখন বীণা (লির) বাজাচ্ছিল।"
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_এপ্রিল বই - রক্ততৃষ্ণা লেখিকা - Jimee Hison প্রিয়জন হারানোর বেদনা মানুষকে অনেকদিন এমনকি আজীবন তাড়া করে বেড়ায়। প্রতিনিয়ত নিজের সামনে প্রিয়জনকে কষ্ট পেতে দেখা সত্ত্বেও কিছু করতে না পারার অক্ষমতা কোন কিছু থেকেই রেহাই দেয় না। সবসময় বিদগ্ধ যন্ত্রণা নিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। সহ্যসীমা ছাড়িয়ে এই যন্ত্রণা যখন চরম পর্যায়ে উপনীত হয় তখন মানুষ হয়ে ওঠে মানবিকতাহীন। সে নিজের জন্য বেঁচে থাকে না; তার যন্ত্রণা লাঘবের জন্য, তৃষ্ণা মেটাবার জন্য বাঁচে। এই তৃষ্ণা যদি হয় রক্তের? দু'হাজার বছর পূর্বে রোমের এক গ্রামে বাস করতো সুদর্শন, শান্ত ও নম্র স্বভাবের লিয়ামতিয়াস নামের যুবক। ছোটবেলায় মা-মাবাকে হারানো লিয়াম দাদুর কাছে বড় হতে থাকে। দাদু আদর করে তাকে লিয়াম বলে ডাকতো। পাহাড়ে মেষ চড়িয়ে তার দিনাতিপাত হতো। মেষ চড়ানোর সময় পাহাড়ের নিচে নদীর ধারে এক অনিন্দ্য সুন্দরী মেয়েকে মন খারাপ করে বসে থাকতো দেখতো লিয়াম। কত দিন ভেবেছে নিচে নেমে নদী পার হয়ে তার মেষ গুলোকে নিয়ে নদীর ওপারে যাবে। মেষ গুলো দেখে হয়তো মেয়েটির মন ভালো হয়ে যাবে। মাঝেমধ্যে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে দূরদূরান্তে বেরিয়ে পড়তো সে। মা-বাবা হারানো লিয়ামের কাছে তার প্রিয়তমা আর বৃদ্ধ দাদুই ছিল পুরো পৃথিবী। প্রিয়তমা আর দাদুকে রেখে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে রোম থেকে রেভিটে যায় লিয়াম। ফিরে এসে দেখে তার সাজানো পৃথিবী লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। কোন কিছুই আর আগের মত নেই। মূহুর্তেই লিয়াম নিজেও পাল্টে যায়। শান্ত, নম্র যে যুবকটি ধর্মের বাণী প্রচার করে মানুষকে শান্তির পথে আহবান জানাতো আজ তারই হাত রঞ্জিত হচ্ছে শত মানুষের তাজা রক্তে। সে হয়ে ওঠে হিংস্রতার অপর নাম। এত মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েও রক্ততৃষ্ণা মেটে না। যার জন্য লিয়ামের সাজানো পৃথিবী লণ্ডভণ্ড হয়েছে তার রক্ত ছাড়া এই তৃষ্ণা মিটবে না। শান্ত স্বভাবের লিয়ামের নিষ্ঠুর হওয়ার নেপথ্যে কে ছিল সেই পিশাচ? লিয়াম কি রক্ততৃষ্ণা মিটিয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করবে? যে ইতিহাস দু'হাজার বছর পরও মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত - "রোম যখন পুড়ছিল, নীরো তখন বীণা (লির) বাজাচ্ছিল!" লেখিকা জিমি হাইসন রহস্যময় রোমান সম্রাট 'নীরোর' শাসনামলের প্রেক্ষাপটে রচনা করেছেন 'রক্ততৃষ্ণা' উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যে প্রাচীন ও রহস্যে ঘেরা রোমান উপনিবেশিক প্রেক্ষাপট নিয়ে মৌলিক কাজ করে তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল। 'রক্ততৃষ্ণা' উপন্যাসের সময়কাল আজ থেকে দুই হাজার বছর পূর্বে। স্থান প্রাচীন রোম। খামখেয়ালি শাসক নীরোর শাসন চলছে তখন। প্রাচীন এই সময়, কাল ও শাসনব্যবস্থাকে উপজীব্য করে 'রক্ততৃষ্ণা' রচিত হয়েছে। লেখিকার সুনিঁপুন লেখনীতে সেই সময়ের জীবনব্যবস্থা সুচারুরূপে ফুটে উঠেছে। পাঠক অভিভূত হয়ে প্রাচীন রোমে ঘটে যাওয়া কাহিনিতে ডুবে যাবে। মানুষের জীবনে কিছু বিষয় থাকে যা সবকিছুর উর্ধে। তা হারিয়ে গেলে আর মূল্য থাকে না। কিন্তু ভালোবাসার মাঝে কোন মূল্য নেই। ভালোবাসা হয় অমূল্য। 'রক্ততৃষ্ণা' উপন্যাসে ভালোবাসার মানুষের প্রতি যে অমূল্য সম্পর্ক তা প্রতীয়মান হয়। যুগ যুগ ধরে এই সম্পর্ক চলে আসছে। প্রাচীন রোম থেকে শুরু করে আধুনিক এই যুগেও বহমান। অনেকসময় সাদামাটা জীবনের গল্প আমাদের মাঝে একঘেয়েমির সৃষ্টি করে। গল্পের মাঝে রহস্য, রোমাঞ্চ একঘেয়েমি থেকে পরিত্রাণ দিতে দারুণ সহায়ক। এই রহস্য, রোমাঞ্চ যদি হয় প্রাচীন কোনো সময়ের এবং ইতিহাসে নামকরা কোন ব্যক্তি, অঞ্চলকে নিয়ে তাহলে তো কথাই নেই। 'রক্ততৃষ্ণা' পাঠকের মনে এমন রহস্য, রোমাঞ্চের উদ্রেক সৃষ্টি করবে যা তাকে বইয়ের শেষ অবধি নিয়ে যাবে। 'রক্ততৃষ্ণা' এক যোদ্ধার গল্প যে তার প্রিয়জন হারিয়ে প্রিয়তমার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। যার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে প্রাচীন রোম ও ইতিহাসে নাম করে নেওয়া সম্রাট নীরো।
Was this review helpful to you?
or
"Nero Fiddled While Rome Burned" রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বীণা বাজাচ্ছিল। কথাটা কি আসলেই সত্যি নাকি কেবল এক মিথ? কেউ বলেছিল এটা নাকি মিথ কারন কন কন গল্পে নাকি বলা আছে নিরো তখন ভায়োলিন বাজাচ্ছিল। কিন্তু নিরোর মৃত্যুর অনেক পরে ভায়োলিন এসেছিল। এরপরে কিছু সূত্র থেকে শুনেছি তখন বীণা বা লি নামের এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র পাওয়া যেত। নিরো লি বাজাতে নাকি ভালবাসতেন। যীশু খ্রিষ্টের অন্তর্ধানের কিছু বছর পরের কথা। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন নিরো ক্লডিয়াস সিজার দ্রুসাস জার্মানিকাস। বহুগামী,অত্যাচার্ খামখেয়ালি এই সম্রাট যখন ইচ্ছা কারো গলা কেটে নিচ্ছে, যখন ইচ্ছা আত্মহত্যার আদেশ দিচ্ছে। যে নারী কে পছন্দ হচ্ছে তাকে হয় তুলে নিয়ে আসছে। নিজে মা কিংবা স্ত্রী উপর মানসিক অত্যাচার করে যাচ্ছে। একটা সময় পার করে প্রথম স্ত্রীকে নির্বাসন দিল অন্য একজঙ্কে স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করতে। আবার প্রথম স্ত্রীকে নির্বাসনে পাঠাতে নিজের মা কে হত্যা করতে দ্বিতীয়বার ভাবেনি। এদিকে নির্বাসিতা স্ত্রীকে খুন করে ফেলল অনায়াসেই। কেন? যে নারীর জন্য প্রথম স্ত্রী নির্বাসনদেন আর খুন করে , একদিন সেই নারীকে কে বিয়ে করেন এবং অন্তঃসত্তা অবস্থায় সেই সম্রাজ্ঞী কেউ খুনও করে ফেলেন। প্রচণ্ড অহমিকা বোধের কারনে খুব অল্প বয়েসে নিরো এক সভায় বলেছিলেন একদিন পুরো নগরী জ্বালিয়ে এর উপর নতুন করে নগরী গড়ে তুলবেন। এর কিছুদিন পরেই নিরো রাজধানী থেকে দূরে দেহরক্ষী বাহিনীসহ কিছু মানুষ কে তিনি শোনাচ্ছিলেন ট্রয় নগরী ধ্বংসের উপাখ্যান। আর ঠিক সেই সময়ে ধ্বংস হচ্ছিল রোমিউলাসের সাধের রোম। যখন রোম নগরীর এক প্রান্তে আগুন ধরে গেছে, ঠিক সেই মূহুর্তে নিরো মগ্ন ছিলেন তার সাহিত্য সাধনাতে। পুড়ে গেল রোমিউলাসের রোম। অত্যাচারী রোম শাসকদের হাতে লিয়ামতিয়াস ছোটবেলাতেই বাবা মা কে হারিয়েছে। দাদু নিকোসার কাছে সে মানুষ। খুব দরিদ্র না হলেও খুব যে স্বচ্ছল ছিল সেটাও না। পাহাড়ের এই ঢালে বাস করা লিয়াম আর তাঁর দাদুর জীবন কাটে মেষ চড়িয়ে, মেষের পশম তাদের জীবিকার উৎস। একদিন গভীর রাতে লিয়াম জানতে পারে এক সত্য। সে তাঁর দাদু কে দেখে প্যাগান ধর্মের সব দেবতার মুর্তি কে বস্তাবন্দী করতে। লিয়াম এর জেরার মুখে নিকোসা শিকার করল তারা খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহন করবে। এক ঈশ্বরবাদের কথা শোনাল। এরপর থেকেই শুরু হল লিয়ামের খুব গোপনে তাদের ধর্ম পালন আর ধর্ম প্রচার। সাথে রয়েছে পিটার,রেগান সহ আরো অনেক মানুষ। যে পাহাড়ে মেষ চড়াত লিয়াম তার ওপারে নদীর ওপারে থাকে ছোট্ট মেয়ে আলিসা। ছোট্ট মলিন মুখ আর অসহায় মায়াভরা চোখের এই মেয়েটির মা আর ছোট ভাই মারা গেছে বেশ’ক বছর হল। সৎ মা এর অত্যাচারে অতিষ্ট ছিল আলিসা। আলিসাদের সংসারেও অভাবের ছায়া। নানা মিথ এর মত এই গ্রামে এক মিথ ছিল, কোন এক জঙ্গলের গভীরে কোন এক কুয়ো আছে। সেই কুয়ো থেকে নাকি প্রতি রাতে মৃত ব্যক্তিদের আত্মা বের হয়ে আসে। আলিসা এক গভীর রাতে সেই কুয়োর ধারে যায়, মা আর ভাই এর আত্মাকে খুঁজতে কিন্তু সে দেখে সঙ্গীতের দেবতাকে বীণা বাজাতে দেখে। বেশ ক’বছর পার হয়ে গেল। পাহাড়-নদীর এপার ওপারে আলিসা-লিয়াম। কেউ কিছু না বলেও কেউ কিছু না বলেও , কেবলমাত্র দৃষ্টি বিনিময় করেই লিয়াম-আলিসা ভালবেসে ফেলে একজন অন্যজনকে। একদিন অনেক সাহস নিয়েই লিয়াম দেখা করতে যায় আলিসার সাথে। কারন সে নিজে মেয়েটার অদ্ভুত মায়া চোখের রহস্যের সন্ধান করছিল, ঠিক যেমন সেই মেয়েটির মায়া ছিল মেষপালকের জন্য। একটা ছোট্ট ঘটনা বদলে দেয় লিয়াম-আলিসার জীবন।এরপরে কিছুদিন এর মধ্যে লিয়াম আলিসার বাগদান হয়ে যায়। লাল টুকটুকে টোগা পোশাকের আলিসাকে লাল পরীর লেগেছিল সেদিন। এদিকে আলিসার বাবা আর আলিসাকে খ্রিষ্ট ধর্মে নিয়ে আসে লিয়াম। ঠিক হল লিয়াম-আলিসার বিয়ে। এর মধ্যে ধর্ম প্রচারে লিয়াম তার বন্ধুসহ বেশক’জন ধর্ম প্রচারকের সাথে ধর্ম প্রচারে যায়। সাথে যায় আলিসার বাবাও। যেদিন ধর্ম প্রচারক বাহিনী ফিরে আসবে এর দুই এক দিন আগের কথা, আলিসা একা একা যায় লিয়ামের দাদুর বাড়িতে, উনাকে দেখতে। ফেরার পথে সেদিন ঘটে যায় এক ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। নিরোর লালসার শিকার হয় লালপরী আলিসা। এদিকে নাত বধু আলিসা কে বাঁচাতে গিয়ে মারা যান লিয়াম এর একমাত্র স্বজন তার দাদু। তার মৃত দেহ পড়ে থাকে শহরের এক কোনে। একমাত্র স্বজন দাদুকে হারিয়ে পাগল্প্রায় লিয়াম। তবুও বিয়ে করতে চেয়েছিল আলিসাকে, সেই নির্দিষ্ট দিনেই । কিন্তু যার জীবনে দুঃখ আসে, তার সুখের দেখা পাওয়া কি সহজ? নিরোর মত মানুষের নজর যখন একবার পরীর মত মেয়ে আলিসার উপরে পড়েছিল, সে কি আর ছেড়ে দেবে? নিজের মা আর স্ত্রীকে অগ্রাহ্য করে আলিসা কে তুলে নিয়ে আসে নিরো, নিজের রাজপ্রাসাদে। এদিকে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রতি রাগের দরুন একের পর এক মানুষকে মেরে রোমকে রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে সাহিত্য সাধনা আর ক্রীড়া চর্চায় মগ্ন ছিলেন অমানুষ নিরো। স্বেচ্ছাচারী নিরো হঠাৎ সিদ্ধান্তের স্বীকার হন তার গুরু সেনেকা থেকে শুরু করে অসংখ্য সিনেটর সদস্য। কাউকে অপমান কিংবা হত্যা করার আগে দু’বার ভাবার প্রয়োজন বোধ করেনি নিরো। নিজের প্রিয়তমার সম্ভ্রমহানি আর নিজের বাবা মা আর দাদুর খুনের বদলা নিতে নিজের হাত কে রক্তে রঞ্জিত করে লিয়াম। রোমের সেনাবাহিনীতে যোগদান করে গোপনে, অস্ত্র চালনায় পারদর্শী লিয়াম । খুবসহজেই আরো বেশি দক্ষ হয়ে যায় সে। যুদ্ধে চলে যায় বেশ কিছুদিনের জন্য। প্রায় ৯ বছর কেটে যায় এভাবে। নির্লিপ্ত লিয়াম এর হাতের তরবারী রক্তে রঞ্জিত হতে থাকে, তার হাতের তলোয়ারে রয়েছে রক্তের তৃষ্ণা, যা মিটবে কেবল এক জনের রক্তে রঞ্জিত হবার পরেই। আর তাই নিরো কে হত্যার উদ্দেশ্যে সুকৌশলে নিরোর দেহরক্ষাকারীবাহিনী “প্রিটোরিয়ানের” দলে ভিড়ে লিয়াম। অন্যদিকে নিরোর অতাচারে অতিষ্ঠ দেশের সম্মানীয় কিছু ব্যক্তিসহ অনেক মানুষ একটা গোপন ছক কষতে থাকে, নিরোকে সরিয়ে ফেলবার জন্য। দানা বাধতে থাকে দ্বন্দ। কিছু মানুষ নিরোর হাতে ধরা পড়েও যায়। ফলে সেই আবার রক্তপাত। এদিকে আলিসা কে নিয়মিত ভোগ করতে ভোলে না নিরো। লিয়াম-আলিসা মাঝে মধ্যেদেখা করে, খুব গোপনে। আলিসা চায় এখান থেকে পালাতে, কিন্তু লিয়াম চায় তার তৃষ্ণা মেটাতে। কে জিতবে শেষমেশ? দীর্ঘ ৯ বছর।অনেক কষ্ট, ত্যাগ, অনেক ধৈর্য, প্রিয়জন হারানোর বেদনা, এল লিয়ামের প্রতিশোধ এর দিন । কিন্তু সেদিন বদলে গেল তার দুনিয়া শেষবারের মত। কি ঘটেছিল? রক্তের যে তৃষ্ণা সে ন’বছর বছর বয়ে বেড়ালো সেই তৃষ্ণা কিভাবে মিটেছিল? পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ রক্ততৃষ্ণা আপনাকে রক্তের তৃষ্ণা জাগাবে কিনা জানিনা, তবে বই পড়ার তৃষ্ণা জাগাবে। আসলে বইটা একটানে শেষ করার মতই বই,। বই এর প্রিন্ট, পেপার প্রচ্ছদ সবগুলো বেশ অন্য রকম। প্রথমে পড়লে অনেক ক্ষেত্রেই অনুবাদ বলে মনে হবে। কিন্তু এই বইটিতে অনেক অজানা তথ্য জানা যাবে। বইটি কেবল উপন্যাস নয়। গবেষণাধর্মী এই বইটি থ্রিলার, প্রেম, প্রতিশোধ, ষড়যন্ত্র,খুন, রক্তপাত, ভাঙ্গা-গড়া অনেক কিছুর সমন্বয়। একদিকে আগুনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে দেশ, অন্যদিকে গড়ে উঠছে সাহিত্যের বিশালাকার ভিত্তি। এই ভাঙ্গা গড়ার খেলা সত্যি অদ্ভুত!
Was this review helpful to you?
or
প্রাচীন রোম। টাইবার নদীর তীরে, সাত পাহাড়ের মাঝে রোমিউলাসের সুন্দরী রোম। যে রোমের বাসিন্দারা শিল্পে, স্থাপত্যে, শক্তিতে হয়ে উঠেছিল অদ্বিতীয়, সামাজ্য বিস্তার করেছিল ব্রিটেন পর্যন্ত। কালের সাথে সাথে সিজারদের অত্যাচার আর কুশাসনও গ্রাস করে নিচ্ছিলো রোমকে। ৫৪ খ্রিস্টাব্দ। সম্রাট ক্লডিয়াসকে বিষপান করিয়ে হত্যা করেছেন তারই ভাতিজি এবং স্ত্রী অ্যাগ্রিপিনা দি ইয়ংগার। বিষাক্ত মাশরুম খাইয়ে হত্যা করা হলো মৃত সম্রাটের প্রথম স্ত্রীর পুত্র ব্রিটানিকাসকেও। রোমান সাম্রাজ্যের মুকুট পরলেন অ্যাগ্রিপিনার সন্তান নীরো। তখনো বেশীদিন হয়নি, বহু ঈশ্বরবাদী প্যাগান ধর্মের অনুসারী রোমানরা যীশুর সাম্য ও একেশ্বরবাদের বাণী সহ্য করতে না পেরে ক্রুশবিদ্ধ করেছে তাঁকে। তবু তাঁর অনুসারীরা লুকিয়ে প্রচার করতে থাকলেন খ্রিস্টধর্ম। সেই বার্তা পৌঁছুলো রোমান রাজধানীর অদূরে লাভার্না নামের ছোট্ট এক গ্রামে। সেখানে কুটিরে বাস করে লিয়ামতিয়াস, তার দাদুকে নিয়ে। লিয়ামের যখন দু'বছর, তখন অত্যাচারী স্বৈরশাসক ক্যালিগুলা সিজারের সৈন্যবাহিনী তুলে নিয়ে যায় তার মা'কে, বাধা দিতে গিয়ে মারা যান বাবাও। সেই থেকে লিয়াম ও তার দাদা নিকোসা একে অন্যের অবলম্বন হয়ে বেঁচে আছে। আঠারো বছরে পা দিয়েছে লিয়াম। সেইন্ট পিটার ও পলের সাথে প্রায়ই দূর দূরান্তে যায় খ্রিস্টধর্ম প্রচারে। বাদবাকি সময় পাহাড়ে পাহাড়ে মেষ চড়ায়। দেখতেও সে সুদর্শন, গ্রামের মেয়েরা তার প্রতি আকৃষ্ট। কিন্তু লিয়ামের মন পড়ে থাকে নদীর ওপারে পাথরের উপর বসে থাকা ফুলের মতো সুন্দর মেয়েটির কাছে। সেই ছোটবেলা থেকে, মেষ চড়াতে গিয়ে রোজ তাকে দেখে লিয়াম। কবে যেন ভালোও বেসে ফেলেছে, কখনো কথা না বলেই। একদিন সাহস করে চলে গেলো পাহাড় পেরিয়ে মেয়েটির বাড়িতে। নাম তার আলিসা। ফেরালো না তাকে আলিসা, মন বিনিময় হলো। খ্রিস্টধর্মের চাদরের নিচে নিয়ে এলো লিয়াম প্রিয়তমাকেও। বিয়ে ঠিক হয়ে গেল দুজনের। কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল অন্যরকম। বিয়ের আর মাত্র চারটে দিন বাকি। ধর্ম প্রচারে রেভিটে গিয়েছে লিয়াম। ফিরে এসে দেখল সব তছনছ হয়ে গেছে। দুর্বৃত্তের হামলা হয়েছে আলিসার ওপর, দাদুর ক্ষতবিক্ষত লাশ পড়ে আছে কমিটিয়ামের পাশে। জেনে গেলো লিয়াম, তার পরমশত্রুটি কে! প্রতিশোধের আগুনে জ্বলন্ত জীবন শুরু হলো লিয়ামতিয়াসের। আলিসাকে উদ্ধার করবে, তার আগে তরবারির ফলার আঘাতে টুকরো টুকরো করবে শত্রুকে। লিয়ামতিয়াস কি পারবে তার রক্ততৃষ্ণা মেটাতে? জিমি হাইসনের লেখা 'রক্ততৃষ্ণা' উপন্যাসটি ইতিহাস আশ্রিত হওয়ায় আমার এমনিতেই বইটির প্রতি আগ্রহ ছিল একটু বেশি। লেখিকা তার উপন্যাসের পটভুমি সাজিয়েছেন রোমান সাম্রাজ্যকে কেন্দ্র করে। প্রাচীন রোমান সভ্যতা, খ্রিস্টধর্মের প্রসার, আর্মেনিয়ার সাথে যুদ্ধ ইত্যাদি বিভিন্ন ঐতিহাসিক বাস্তবতা উঠে এসেছে গল্পে। গল্পটার মূল ভিত্তি লিয়াম - আলিসার প্রেম হলেও, তাতে বহুলাংশে স্থান পেয়েছে রোমান সম্রাট নীরোর জীবনকাহিনী। নীরোর অত্যাচার, বহুগামীতা, খামখেয়াল, রাগ আর কুপ্রবৃত্তির বশীভূত হয়ে করা কর্মকান্ড একসাথে করে লেখিকা ফুটিয়ে তুলেছেন ভয়ংকর এক চরিত্র। যে কখনো অন্য নারীর লোভে মস্তকচ্ছেদ করছে নির্বাসিত স্ত্রীর, খুন করেছে মা'কে, পেটে লাথি মেরে হত্যা করেছে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে, পথ চলতে চলতে খেয়ালের বশে গলা কেটে ফেলেছে নিরীহ ফলওয়ালার। মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে শত শত খ্রিষ্টানের, তার সেনাপতি ও নিকটজনদের। ধীরে ধীরে সৃষ্টি হয়েছে বিদ্রোহ আর প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, এত মানুষের আর্তনাদ আর অভিশাপ তাড়া করে বেড়িয়েছে নীরোকে। অন্যদিকে ছিল প্রতিশোধের অনলে দগ্ধ লিয়াম আর তার অপেক্ষায় জীবন্মৃতের মত বেঁচে থাকা আলিসার গল্প। আলিসাকে নিয়ে সুন্দর সংসারের স্বপ্ন পাশে সরিয়ে রেখে রক্ত পিপাসাকে জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে নিয়েছিল লিয়াম। কিন্তু তার জন্য তাকে দিতে হয়েছে চরম মূল্য, শান্ত - কোমল তরুণ পরিণত হয়েছে ঘৃণায় ভরা এক পাথরের মূর্তিতে, অন্তর থেকে কেড়ে নিয়েছে প্রেম। ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস আমার সবসময়ই প্রিয়। লেখিকা গল্পকে বাড়তি তথ্য দিয়ে একঘেয়ে করেননি, তবে ছুঁয়ে গেছেন নীরোর জীবনের বেশীরভাগ ঘটনাই। উপন্যাসটি নীরো ও রোমান সভ্যতা সম্পর্কে আরো জানতে আমাকে আগ্রহী করেছে। ক্লডিয়াস, ক্যালিগুলা, অ্যাগ্রিপিনা, অক্টাভিয়ার মধ্যকার সম্পর্কগুলো পরবর্তীতে বিস্তারিতভাবে জেনেছি। উপন্যাসের শুরুতে খ্রিস্টাব্দের হিসেবে একটু গরমিল রয়েছে, যেটা পরে কোনো মুদ্রণে লেখিকা হয়তো শুধরে নেবেন। 'রক্ততৃষ্ণা' বাংলাদেশী লেখিকা জিমি হাইসনের মৌলিক উপন্যাস। লেখিকার গল্প বলার ধরণ যথেষ্ট পরিপক্ক। ইতিহাসের ভাবগাম্ভীর্য ধরে রাখতে মাঝে মাঝে কিছু কঠিন শব্দ ব্যবহার করেছেন৷ তবে ছোট ছোট অধ্যায়ে ভাগ করা উপন্যাসটি পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখবে। বইটির আকার সাধারণ বই থেকে একটু বড়, অনেকটা ছোটবেলার রূপকথার গল্পের বইয়ের মতো।চড়া দাম চুকানোর দুঃখ ভুলেছি চমৎকার বাঁধাই ও উন্নত মানের পাতার জন্য। বানানের ক্ষেত্রেও সচেতনতা ছিল। প্রচ্ছদ বেশ ভালো লেগেছে। রাজনীতি, ধর্ম, যুদ্ধ, আর পাপিষ্ঠের অত্যাচারের আড়ালে চাপা পড়ে যাওয়া অসমাপ্ত প্রেমকাহিনী 'রক্ততৃষ্ণা' পড়ার আমন্ত্রণ রইলো পাঠকদের প্রতি। বই: রক্ততৃষ্ণা লেখক: জিমি হাইসন প্রকাশক: ঐতিহ্য প্রকাশকাল: জানুয়ারী ২০১৯ পৃষ্ঠাসংখ্যা: ২৪৮ মূল্য: ৫৫০ টাকা
Was this review helpful to you?
or
ঈশপ বলেছিলেন, একদা জিউস নাকি মানুষের সকল ভালোমন্দের নিশ্চয়তা কৌটায় পুরে এক লোকের কাছে রেখে অলিম্পাসে গিয়েছিলেন ফিরে এসে বিলিয়ে দেবেন বলে। বলে গিয়েছিলেন কৌটা যেনো না খোলা হয়। জিউসের কৌটা দেখার লোভ সে লোক সামলাতে পারেন নি। কৌটা খুলেছিলেন। খুলতেই কি সব যেনো উড়ে যাচ্ছিলো। ভয়ে তিনি কৌটা লাগিয়ে দেন। আসলে কৌটা খুলতেই সুখ-দুঃখের নিশ্চয়তা সব উড়ে গিয়েছিল, তাড়াতাড়ি কৌটা লাগিয়ে দেয়ায় নিচে পড়েছিল 'আশা'। জিউস সরল বিশ্বাসে তাই সকলের মাঝে বিলিয়ে দেন। সেই থেকে মানুষের সুখ-দুঃখের কোন নিশ্চয়তা নেই, মানুষ বেচে থাকে আশা নিয়ে.... আসলে ভুল বললাম। সবাই আশা নিয়ে বেচে থাকে না, কেউ কেউ আশা নিয়ে মরে থাকে, প্রতিদিন মরে যায়। মৃত একটা মানুষ জীবন্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। তারা হয়ে থাকে জীবন্মৃত।।। হ্যা, এটা এক জীবন্মৃতের রক্ততৃষ্ণার গল্প, আরেক জীবন্মৃতের নতুন জীবন পেতে চাওয়ার গল্প, এ গল্প হয়তো এক ইতিহাসের... সুন্দর এক জীবন ছিল লিয়ামতিয়াসের। দাদুকে নিয়ে সুন্দর এক সংসার করার স্বপ্ন ছিলো তার। কিন্তু মানুষ চিরকাল চায় এক, আর হয় আরেক। সে কি কখনো ভাবতে পেরেছিলো, জন্মই তার আজন্ম পাপ হয়ে রবে!!! আর আলিসা? তার জন্যেই হয়তো কবি লিখেছিলেন, "আপনা মাংসে হরিণা বৈরী"। এক দমকা হাওয়া শেষে অশুভ চন্দ্রগ্রহণের রাতে যে তাকিয়ে দেখেছে তার স্বপ্নগুলো.... এতো কাছে, তবু এতো দূর!!! ভীষণ না চাওয়াতেও এই দুই ভাগ্যের দেখা হয়ে যায় এক ইতিহাসের সাথে। কি ছিলো সেই ইতিহাস??? দুহাজার বছর আগের রোম এ উপন্যাসের পটভূমি। যতক্ষণ বইটা পড়বেন, আপনার মনে হবে এ এক অনিদ্যসুন্দর ঐতিহাসিক উপন্যাস। সে সময়কার রোমের ইতিহাস আমার জানা নেই তবে... ইতিহাস আমি যদ্দুর জানি, একে ঐতিহাসিক উপন্যাস না বললে ক্ষতি নেই। সম্ভবত সে সময়ের ইতিহাস উপন্যাসের উপকরণ মাত্র, অনুপ্রেরণা নয়। ইতিহাসের কিছু বিশেষ উপলব্ধি মানব ভাগ্যকে আমাদের কল্পনায় যে বিশিষ্ট তাৎপর্যে উদ্ভাসিত করে, উপন্যাসে লেখিকা তাকেই প্রাণদানের চেষ্টা করেছেন। বইয়ের সকল চরিত্রই ইতিহাসের এক বিষময় পরিবেশের শিকার। বইয়ের পাতায় তাদের সাথে চলতে গিয়ে অনুভূতি গভীরতা লাভ করে, আকাঙ্ক্ষা তীব্রতর হয়, হতাশ হৃদয় বিদীর্ণ হয়, রক্তাক্ত হয় মন। তবে সবচে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, দুহাজার বছর আগের যে জীবনোপলব্ধিকে যে প্রকৃয়ায় 'রক্ততৃষ্ণা'য় উজ্জ্বলতা দান করা হয়েছে তা সর্বাংশে আধুনিক!!! ইতালির শিল্পি Giusy D'Anna'র করা প্রচ্ছদটি সুন্দর লেগেছে। বইটা লম্বা ও চওড়ায় আগের দুটো বইয়ের চেয়ে বড় করা হয়েছে। ভার্জিন রেজিন অফসেট পেপার দিয়ে মুদ্রিত বইটির কাগজের মান, মুদ্রণ, বাইন্ডিং চমৎকার ও আমার অসচেতন দৃষ্টিতে নির্ভুল মনে হয়েছে। তবে বাইন্ডিং কোয়ালিটিতে এটাও প্রথম বইটার সমকক্ষ বা তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। তবে এ বইটায় একটা বুকমার্ক ফিতা আছে, এ বিষয়টা খুব ভালো লেগেছে। ♣ যারা লেখিকার আগের দুটো বই পড়েছেন, তারা নিঃসন্দেহে দেখতে যাচ্ছেন মুদ্রার উল্টো পিঠ। আর যারা আগের দুটো বই পরেন নি, তারা পরিচিত হতে যাচ্ছেন এক নতুন মুদ্রার সঙ্গে!!! ♣ লিয়ামের জন্য আমার অদ্ভুত দুঃখ হচ্ছিলো। এখন তার সমস্ত পথ জুড়ে টলমল করছে একটি অশ্রু বিন্দু। ঐ অশ্রু বিন্দু পেরিয়ে এ জন্মে সে আর তার কাছে পৌঁছুতে পারবেনা; তাহলে আগামী জন্মগুলো সে কার দিকে আসবে ??? ♣ দুঃখ হচ্ছিলো আলিসার জন্যে। কি অদ্ভুত! অবলীলাক্রমে কেউ বেছে নেয় পৃথক প্লাবন, কেউ কেউ এইভাবে চলে যায় বুকে নিয়ে ব্যাকুল আগুন!!! ♣ খারাপ লাগছিলো ইভানার জন্যে। কিছু মুগ্ধতা, কিছু অপূর্ণতা, কিছু বিস্ময় হয়তো তার কোনকালেই কাটবেনা। মুগ্ধতায় সে বলেছিলো, "এতদিন জেনে এসেছি, দেবতারা স্বর্গে বাস করেন। আমার জানায় ভুল ছিল। আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন কোন জীবন্ত দেবতা।"... অগণিত রাতেও যে মুগ্ধতা শেষ হবার নয়।।। মায়া লাগছিল সম্রাজ্ঞী অক্টাভিয়ার জন্য, সেনাপতি কারবুলোর জন্য, সেন্ট পিটার, গুরু সেনেকা.... সবার জন্য। তবে সজ্ঞানেই এড়িয়ে গেলাম এ উপন্যাসের ভিলেন, নায়ক কিংবা কেন্দ্রীয় চরিত্রের কথা। সে সমন্ধে বিচারের ভার বই যারা পড়বেন তাদের উপর।।। কিছু মন্দ লাগার কথাও বলতে চাই- ♦ আমি সরি, তবে বলতেই হচ্ছে, সবচে বাজে লেগেছে নামকরণটা। এই নামে অনীশ দাস অপু, মোশতাক আহমেদের বই থাকার পরও এই নামটাকেই কেন প্রয়োজন পড়লো!! কেন? কেন?? কেন??? ♦ যথারীতি এ বইয়ের পাত্রপাত্রীরাও অসাধারণ রূপবান-রূপবতী! কেন? সাধারণ কারো জন্যে কি কোন গল্প রচিত হতে পারেনা?? অবশ্য এর উত্তর হয়তো অবচেতন মনে লেখিকা দিয়ে দিয়েছেন- "অবচেতন মনেই মানুষ সৌন্দর্যের উপাসক। একজন সুদর্শন ব্যাক্তি যদি কোন কথা বলে সেই কথাটাকেও মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনায়....." ♦ বইয়ের সাইজটা আগেরগুলোর মতো হলে ভালো হতো। পাশাপাশি রাখতে সুবিধে হতো। দেখতে ভালো লাগতো। ♦ আগের দুই বইয়ের কিছু বিষয়কে খুব মিস করেছি। নায়ক আর খলনায়ক খোজার দ্বন্দ্বটা মিস করেছি, অসাধারণ সংলাপগুলোকে খুব মিস করেছি। ♦ এটা নিঃসন্দেহে বিশ্লেষণধর্মী উপন্যাস। কিন্তু ইতিহাসকে ধারন করতে গিয়ে কিছু সময় আমার কাছে গল্পের গাঁথুনি আলগা মনে হয়েছে। লেখিকা এ দিকে নজর দিবেন আশা রাখি।
Was this review helpful to you?
or
"রক্ততৃষ্ণা" পড়েছি বেশ কিছুদিন হলো। কিন্তু এখনো আমি বাস্তবে ফিরতে পারিনি। ঘোরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। বিষয়টা অনেকটা এমন, টাইম মেশিনে চড়ে দুই হাজার বছর পেছনে চলে গিয়েছি। এখন সেই টাইম মেশিনটা আর খুজে পাচ্ছিনা। তাই আর ফেরা হয়ে ওঠেনি। আমি অভিভূত। গল্প, ইতিহাস, মিথ, অনুভূতির এত সুন্দর সংমিশ্রণ আমাকে অভিভূতই করেছে। প্রতিটি কথা, এমনকি না বলা কথাগুলোও আমাকে ছুয়ে গিয়েছে। ধন্যবাদ জিমি হাইসন আপু "রক্ততৃষ্ণা" নামক টাইম মেশিনটি আবিষ্কারের জন্য। "রক্ততৃষ্ণা"র মাধ্যমে পাঠকের বইয়ের প্রতি তৃষ্ণা যে বেড়ে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।