User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণার একশত বছর পেরিয়ে গেল। এই সময়ে নারী আন্দোলনে অনেক পরিবর্তন এসেছে, নারীর দাবি-দাওয়ার ধরনও পাল্টেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও প্রতিবন্ধকতাকে সামনে রেখে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করা বই ‘নারী ও বাংলাদেশ’। বইটি পাঠ করলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে নারীর সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। বরং ব্যাপ্তি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর মৌলিক অধিকারের বিষয়টি স্বীকৃত হলেও এদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে। গ্রামীণ পর্যায়ে ৮৪% এবং শহরে ৫৯% নারী অবৈতনিক গৃহ পরিচালিকা হিসাবে কর্মরত থাকে। বাংলাদেশে নারীরা পুরুষের তুলনায় সপ্তাহে গড়ে ২১ ঘণ্টা বেশি সময় কাজ করে। যদিও ঘর গৃহস্থালীর কাজে যুক্ত নারীশ্রমকে অর্থনৈতিক মানদণ্ডে কর্মকাণ্ড হিসাবে ধরা হয়েছে কিন্তু এর অর্থমূল্য এখন পর্যন্ত জাতীয় আয় গণনায় হিসাব করা হয় না। কিছু গ্রহণযোগ্য আইন সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় এবং জাতীয় সংসদে ৪৫টি নারী সংরক্ষিত আসন থাকা সত্ত্বেও এর গুণগত পরিবর্তন হওয়া দরকার। বাংলাদেশে নারী শ্রমশক্তির পরিমান ২৫ মিলিয়ন। ১০,০০০ জন প্রশাসনিক কাজে, প্রায় ৭৯% নারী কাজ করে কৃষিখাতে(মৎস ও বনায়নসহ) ৯.৯% ম্যানুফ্যাকচারিং ও পরিবহন খাতে, ২.২% বিপণন কাজে ও ০.৬% করনিক কাজে নিয়োজিত। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে মর্যাদার সাথে বসবাস করার জন্য নারীর সুরক্ষা প্রয়োজন। প্রখ্যাত নারীবাদী ব্রাউন মিলারের মতে, “নারীর ওপর পুরুষের নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি হচ্ছে নারী নির্যাতন”।অপরপক্ষে নারীর নিরাপত্তা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার সাথে জড়িত আর্থিক নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা। কর্ম ও কর্মক্ষেত্রের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও শ্রমজীবী ও পেশাজীবী উভয় স্তরের নারীর সামাজিক নিরাপত্তা বা সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাবে প্রায়শ নিজ-নিজ কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের চ্যালেঞ্জ, যৌন উৎপীড়ন, নিপীড়নসহ বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার নারী ও শিশু পাচার হয়। দেশের বাহিরে বিভিন্ন পতিতালয়ে পাচারকৃতদের মধ্যে ২.৭% বাংলাদেশি নারী রয়েছে। পরিতাপের বিষয় এই যে, যুদ্ধরত জাতির অংশ হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা চিহ্নিত হয়েছেন নির্যাতিতা বা ধর্ষিতা হিসেবে, পঙ্গু হিসেবে নয়। কাছের মানুষ, পাশের মানুষ, সামাজিক মানুষের চেহারা বদলে যাওয়াতে চেনাজগতের আটপৌরে জীবনে তাঁরা আর কোনদিন ফিরতে পারেনি। জাতির ইতিহাস বিনির্মাণে তাদের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়। বীরাঙ্গণাদের তালিকা নষ্ট করে ফেলাতে যুদ্ধাপরাধীরা পার পেয়ে যায়। সমাজে অনেক ক্ষেত্রে নারী প্রয়োজনে হাতিয়ার, নারী পণ্য, নারীকে ভোগ করতে হবে, কিন্তু নারীর কর্ম, নারীর ত্যাগ, টিকে থাকার লড়াইয়ে সহমর্মিতা দেখাতে এতো কার্পণ্য কেন দেশ, সমাজ ও জাতির? কবে নারী পাবে তার মর্যাদা? নারীর প্রতি কবে দায়িত্ববান হবে মানুষ? বীরাঙ্গনা নারীরাওতো মানুষ? তাদের তো সুন্দর করে বাঁচার অধিকার আছে? তাদের কেন বঞ্চিত করা হলো? কেনইবা দেশের প্রচলিত আইনে ধর্ষকদের বিচার করা হলো না? এর জবাব কে দেবে? প্রশ্ন ‘নারী ও বাংলাদেশ’ বইটির লেখকদ্বয়ের। সর্বোপরি, বাংলাদেশের নারী উন্নয়নের বহুল আলোচিত মোট দশটি বিষয়ের সুগভীর বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা অনুসন্ধান করার নিরন্তর চেষ্টা করা হয়েছে এই বইয়ে। প্রবন্ধগুলো থেকে জানা যাবে নারীর সংগ্রাম– অর্জন-সীমাবদ্ধতা ও সমাধানের অনন্য কলাকৌশল। ড. নিবেদিতা দাশ পুরকায়স্থ ও উপমা দাশগুপ্তের যৌথভাবে লেখা ‘নারী ও বাংলাদেশ’ বইটি প্রকাশ করেছে ‘সূচীপত্র’ প্রকাশনী। প্রচ্ছদ করেছেন সাঈদ বারী, মূল্য : ২২৫টাকা।