User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বই আলোচনাঃ- উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ইরানি বালিকা রেহান। মাত্র ১৪ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে যেতে তার। কিন্তু রেহান স্বাভাবিক ভাবে পৃথিবী ছাড়েনি। মানুষরুপি ইভিলের কাছে পরাজিত হয়ে পৃথিবীকে বিদায় জানাতে হয় রেহানের। রেহান পৃথিবী ছেড়ে গেলেও পৃথিবীর উপর তার যথেষ্ট রাগ রয়েছে। কারণ পৃথিবীতে প্রতিদিন ইভিল নানা রুপে ফিরে আসে। রেহান রাগে, ক্ষোভে প্রতিনিয়ত পৃথিবীর ধ্বংস প্রার্থনা করে তাই লেখক উপন্যাসের প্রথম খন্ডের নাম দিয়েছেন প্রার্থনা। রেহানের বাবা একজন কৃষক। কৃষকেরা ফসল উৎপাদন করে সমাজের ক্ষুধা মিটাতে ব্যর্থ। সামাজের প্রতিটি মানুষের ভাতের ক্ষুধার পাশাপাশি কামের ক্ষুধা রয়েছে। এই ক্ষুধা যখন ভয়ংকর রুপ নেয় তখন সমাজ থেকে খসে পড়ে একেকটি তারা। রেহান সে সকল তারার একজন। রেহানের বয়স যখন মাত্র ৬ বছর তখন থেকে ইভিলের মেঘের কারণে সে দ্যুতি হারাতে শুরু করে। ইভিল কখনো চাচার রুপ নিয়ে, কখনো মাদ্রাসা শিক্ষকের রুপ নিয়ে, কখনও বা ঝালমুড়ি ওয়ালার রুপ নিয়ে রেহানকে মেঘের আড়ালে নিয়ে যায়। প্রতিবার রেহান সতর্ক হয়ে মেঘেদের আড়াল থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেয়। কিন্তু অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতে যায়েদ আনসারী নামক মেঘের কাছ রেহান হারিয়ে ফেলে তার দ্যুতি। দ্যুতি হারিয়েও রেহান ইভিলের কাছে পরাজয় বরন করেনি। সে যায়েদকে শাস্তি দিয়ে জয়ের সাথে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। কিন্তু রেহানের কাছে হেরে যায় পৃথিবীর বিচার পদ্ধতি। কারণ পৃথিবীর বিচার এখনও ইভিলের অনুসারীদের হাতে... রেহান মতো দ্যুতি হারিয়েছে হ্যাপি, আসিফা ও নাম না জানা অনেকেই । নিজেদের আলো দিয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করার পূর্বেই ইভিলের মেঘদল তাদের আলো কেড়ে নিয়েছি । তারা স্বর্গে প্রতিনিয়ত পৃথিবীর ধ্বংস কামনা করে। কিন্তু পৃথিবীতে এখন তাদের তাদের নিরীহ বাবা-মায়ের মতো কিছু লোক বেঁচে আছে বলে পৃথিবী এখনও ধ্বংস হয়নি... শামস সাইয়ের রচিত 'দুঃখগুলো হাওয়ায় ভাসিয়ে দিও' উপন্যাসটি একটি পত্র উপন্যাস। রেহান নামের ১৪ বছর বয়সী একটি মেয়ে তার মায়ের কাছে লেখা চিঠিতে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ব্যথিত কথাগুলো বর্ণনা করেছে। লেখক তার দক্ষ হাতে সভ্য সমাজে বসবাস করা অসভ্যদের ধিক্কার দিয়েছেন এই বইটির মাধমে। খুব সাবলীল ভাষায় রচিত উপন্যাসটি পাঠ শেষে পাঠক মনে কিছুটা হলেও কষ্ট অনুভব হবে ধর্ষীত নারীদের জন্য... অর্জন প্রকাশনের প্রথম উপন্যাস 'দুঃখগুলো হাওয়ায় ভাসিয়ে দিও'। বইটির প্রোডাকশন কোয়ালিটি যথেষ্ট সুন্দর। প্রকাশনের কলাকৌশলী টিম যথেস্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে প্রোডাকশনে। বইঃ দুঃখগুলো হাওয়ায় ভাসিয়ে দিও লেখকঃ শামস সাইদ প্রকাশনঃ অর্জন প্রকাশন প্রচ্ছদ মূল্যঃ 220 টাকা প্রকাশকালঃ আগস্ট 2018 ধরনঃ পত্র উপন্যাস
Was this review helpful to you?
or
Adrita Mehzabin Conversation starter · 16 hrs ইভিল কে চেনেন আপনি? ওই যে আদম আর ইভকে গন্ধম খেতে প্ররোচিত করেছিলো? সেই ইভিলের হেরে যাওয়ার গল্প বলি শুনুন। এক ইরানি বালিকা রেহান, প্রতিদিন অভিশাপ দেয় পৃথিবীকে কারণ সেখানে ইভিল আসে নানান রুপ নিয়ে। রেহানের জন্মের সাথে সাথেই ইভিল কালো গোলাপ এগিয়ে দিয়ে তাকে পৃথিবীতে সাদর আমন্ত্রণ জানায়। ঘৃনাভরে মুখ ফিরিয়ে নেয় রেহান। তারপরেও ইভিল আসে বার বার রেহানের বয়স ছয় হতে না হতেই। কখনো মাদ্রাসার শিক্ষক, কখনো বয়স্ক চাচা, কখনো ঝালমুড়ি ওয়ালা কখনো প্রতিবেশী সেজে আসে ইভিল। ছোট্ট রেহান সতর্ক হয়ে যায়। শোলেহ কে জানায় সে কথা। কিন্তু শোলেহ কি বুঝবে! রেহানের কষ্ট, নাকি ভেবে নেবে এসব তার পড়া ফাঁকি দেয়ার অযুহাত! শোলেহর কৃষক স্বামী আর তার সংসারে রেহান অতি প্রিয় হলেও শোলেহ রেহানের জন্মের পরেই বলেছিলো ' " "অভিশাপ "। আচ্ছা প্রতিটি নারী মাত্রই কি বুঝতে পারে, তাদের মতোই তাদের জন্ম দেয়া একই লিঙ্গের সন্তানটি আসলে একটি অভিশাপ! পৃথিবীর কেনো এই বৈষম্যতা! সব বৈষম্য নিয়েই তো বড় হচ্ছিলো রেহান। কিন্তু যায়েদ আনসারি! যে রেহানের নরম শরীর কে খাদ্যে পরিনীত করে তার জন্য কি পৃথিবীতে কোনোই শাস্তি নেই! শোলেহ শুনছো! আজ রেহান একা নেই। ওর সাথে আছে আসিফা, হ্যাপি, নবজাত শিশু। কষ্ট আর অপমানের পাহাড় নিয়ে পঙ্গু নির্লজ্জ বেহায়া কুষ্ঠ ভরা পৃথিবী ছেড়েছে তারা। আজ তাদের কাছে প্রজাপতি আসেনা, আসেনা সুরমা চোখে দেয়া সূর্য ডোবা সন্ধ্যা। আজ কেউ ওদের সামনে থেকে তোমার দেয়া জবের রুটি আর পাঁঠার পাতলা ঝোল কেড়ে নেয়না। শোলেহ কান্নার রাজ্যে আজ তুমি ডুবে আছো। যেনে রেখো সবুজ গালিচা সম্বর্ধনা আর সাতমহলা বাড়ি তোমার জন্যেও অপেক্ষা করছে। কারণ তোমার ঔরসজাত বা তুমি কেউ ইভিলের কাছে সমর্পিত হওনি। ইভিল আজ হেরে গেছে। চোদ্দ বছরের এক কিশোরীর কাছে। যে কি না মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও মৃত্যুকেই বিজয় ভেবে নিয়েছে। আলোচনা - বইটির ভাষার ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের সমাজে ধর্ষিতা একটি মেয়ের যে কি করুণ পরিনতি হতে পারে তা লেখকের সাবলীল বর্ণনায় উঠে এসেছে। যদিও এটি পত্র উপন্যাস, তবে বর্ণনা গুলো আলাদা নামে ভাগ করে দেয়ায় উপন্যাসটি ভিন্নভাব এনেছে। তবে মাঝে মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত ইংরেজি শব্দের ব্যবহার ভালো লাগেনি। বইটির বাঁধাই আর প্রচ্ছদ অপূর্ব। বইএর নাম আর বইয়ের বর্ণনায় আছে চমৎকার মিল। অন্তত বই থেকে দুটি লাইন পাঠকদের জন্য না লিখে পারছিনা - বসন্তের কোনো এক সন্ধ্যায় পথ হারিয়েছিলো পৃথিবী। দাঁড়িয়েছিলো মুখ গোমরা করে। চারদিকে নেমে এসেছিলো শোকের মিছিল। সন্ধ্যার শরীরে কালো পোশাক। সেই অন্ধকারে ওত পেতেছিলো এক দানব। সে ইভিলের অনুসারী। - একশত নয় পৃষ্ঠার বইয়ের মুদ্রিত মূল্য মাত্র- ২২০ টাকা। এতো সুন্দর একটি বই, ইচ্ছে হচ্ছে সবাইকে পড়তে বলি। বই পড়ুন, বইএর সাথেই থাকুন। আগামীর পৃথিবী হোক বইএর রাজ্য #- Adrita Mehzabin
Was this review helpful to you?
or
রেহান। পৃথিবী থেকে অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে বিদায় নেয়া একটি মেয়ে। যার সৌভাগ্য হয়েছিল মাত্র চৌদ্দটি বসন্ত দেখার। প্রচণ্ড ঘৃণা নিয়ে পৃথিবীকে অভিশাপ দিয়ে চিঠি লিখে তার মা শোলেহ কে। অথচ এই মায়ের মুখে হাসি ফোঁটাবার জন্যেই ঈশ্বরের অনুরোধে অনিচ্ছাসত্ত্বেও পৃথিবীতে এসেছিল। তার আগমনের পিছু পিছু আসে মানুষের চিরশত্রু ইভিল। নানাভাবে রেহানকে নিজের দলে ভেড়াবার চেষ্টা করে ইভিল। বিভিন্নরূপে রেহানের সামনে আসে সে। তার বাড়িতে বসেই যবের রুটি আর কচি পাঁঠার ঝোল খায়। তারপর একদিন জায়েদ আনসারী হয়ে আগমন ঘটে তার। রেহানের ঘরে আসে বহুদিন ধরে তক্কেতক্কে থাকা ধনীর দুলাল জায়েদ। পৃথিবীতে ধনীদের জন্য কোন পাপ নেই, সব কাজই বৈধ। আর এ তো দরিদ্র কৃষকের মেয়ের সাথে একটু রঙ তামাশা মাত্র। এই ভাবনা থেকে রেহামের উপর চড়াও হয় জায়েদ আনসারী। অনেক কসরতের পর জয়ী হয় সে। লুঠ করে রেহানের সবচেয়ে পবিত্র সম্পদ- সম্ভ্রম। কিন্তু রেহান কি তাকে এত সহজে ছেড়ে দেয়? কেন তাকে চৌদ্দ বসন্ত পরেই পৃথিবী ত্যাগ করতে হয়েছিল? সৃষ্টিকর্তাকে কোন প্রশ্নের মুখোমুখি করে সে? কেন রেহান পৃথিবীকে ধ্বংসের অভিশাপ দিচ্ছে? যেখানে এখনও জীবিত আছে তার প্রিয় জন্মদাত্রী, ঘরের খাবার কেনা বাদ দিয়েও ময়না পাখি কিনে দেয়া প্রিয় কৃষক বাবা, ছোট সহোদর। কী ঘটে বাংলাদেশের ছোট্ট একটি মেয়ে হ্যাপি, আসিফা কিংবা কৃত্তিকা ত্রিপুরার জীবনে? উত্তরগুলো বইতে। #পাঠ_প্রতিক্রিয়া_ও_মতামতঃ লেখক শামস সাইদের প্রথম কোন বই পড়লাম। এর আগে উনার ‘ধানমণ্ডি ৩২ নাম্বার’ শিরোনামের দুই খণ্ডের বইয়ের নাম জেনেছিলাম। কিন্তু ‘দুঃখগুলো হাওয়ায় ভাসিয়ে দিও’ দিয়েই ওনার লেখার সাথে পরিচিত হওয়া। এটি প্রথাগত কোন উপন্যাস নয়। চিঠির মাধ্যমে এক ধর্ষিতা নারীর মনের ব্যথার জ্যান্ত বর্ণনা ফুটে উঠেছে পাঠকের চোখের সামনে, মনের পর্দায়। ইরানী মেয়ে রেহান আসলে সারা পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার হওয়া অসহায় নারীদের প্রতিকৃতি যেন। যে কিনা মৃত্যুর পরে আত্মার জবানীতে তার মায়ের কাছে নিজের আদ্যন্ত বর্ণনা করে গিয়েছে ব্যথাতুর ভাবে। শুধু তাই নয় পাঠকের কাছে মনে হবে যে মা শোলেহ নয়, আসলে রেহানের এই বর্ণনা সারা পৃথিবীর সমস্ত মানুষের কাছে ধিক্কার বাণী। সম্ভ্রম হারানো ও নারী হয়ে জন্মাবার কারণে যে করুণ অবস্থার শিকার সর্বত্র হয়েছে, তা আপাত সভ্য বলে পরিচয় দেয়া মানুষের মাথা লজ্জায় হেঁট করে দেবার জন্যে যথেষ্ট। সেই সাথে রেহাম অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার একজন জ্বলন্ত প্রতিবাদী নারী। যে কিনা শত অবস্থাতেও নিজেকে প্রতিবাদের বাহিরে নিয়ে যায় নি। এমনকি পৃথিবী ত্যাগ করার প্রাক্কালেও, শত চেষ্টাতেও ইভিলের বশ্যতা সে স্বীকার করেনি। পুরো কাহিনীটি মনে হতে পারে ইসলাম ধর্ম কেন্দ্রিক কিন্তু অত্যন্ত দক্ষ হাতে লেখক কাহিনীটি সব ধর্মের জন্য সু-গ্রহণযোগ্য করে দিয়েছেন, এর জন্য লেখককে আন্তরিক ধন্যবাদ। নয়তো একটি বিতর্ক সৃষ্টির জোর সম্ভবনা ছিল। চিঠির মাধ্যমে পুরো একটি উপন্যাস বর্ণনা করা খুব সহজ কাজ নয়, কিন্তু লেখক সেটিকে বেশ সূচারুভাবেই পেরেছেন। পুরো ঘটনায় যেভাবে ধর্ষিতা নারীর বয়াণে সারা পৃথিবীর নারীসত্ত্বাদের এহেন পরিস্থিতিতে সৃষ্টিকর্তাকে তার সৃষ্টির প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে এবং ইভিল সহ সবাইকে যেভাবে সৃষ্টিকর্তা সে প্রশ্নের জবাব দেন তার জন্যে ভূয়সী প্রশংসার প্রাপ্য লেখক। বিষয়টির ধর্মীয়, সামাজিক, সাহিত্য সবকিছুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজের দক্ষতার পুরোটা দিয়েছেন। কাহিনীতে সারা পৃথিবীতে জালিম ও মজলুমের পার্থক্য দারুণভাবে তুলে ধরার চেষ্টা ছিলো। ছিলো মজলুমের প্রতি, নারীদের প্রতি জগতের বিচারকদের চিরাচরিত দৃষ্টিভঙ্গির সুষ্ঠু প্রয়োগ। সেইসাথে নামকরণের কারনটিও পরিষ্কার হয়ে যায় কাহিনীর শেষভাগে এসে। কাহিনীতে মেয়ের প্রতি বাবার ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি মায়ের আকুতির যে চমৎকার নিদর্শন আমরা দেখতে পাই তা সচেতন পাঠকমাত্রেই হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। এতসব চমৎকার উপস্থাপনার ভেতরেও দৃষ্টিকটু লেগেছে কিছুকিছু ইংরেজি শব্দসমূহের ব্যবহার। পুরো ঘটনাটি যেভাবে এগিয়েছে তাতে স্বাভাবিক বাংলা শব্দের ব্যবহারই যথোপযুক্ত ছিল। রেহান যে ইরানী তা বোঝানোর জন্য আরো কিছু উপাদান যোগ করা যেত। নয়তো ইরানী সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব একটা জানা না থাকলে পাঠক তাকে পাকিস্তানী বা আফগানী কোন মেয়ে ভেবে বসতে পারেন যদিও রেহাম সারা পৃথিবীর নারীদের হয়েই পুরো ঘটনাতে ছিল। মাঝের কিছু অংশের বর্ণনায় সাবলীল গতি ধরে রাখতে পারেন নি লেখক। কিন্তু ততক্ষণে রেহানের প্রতি যে মমত্ববোধ সৃষ্টি হয়ে যায় পাঠকের মনে সেটাই শেষ অবধি নিয়ে যায় পাঠককে। ১৫ পর্বে সাজানো থাকলেও সূচীপত্র এভাবে দেয়াটা শোভনীয় লাগেনি আমার কাছে। আমার মতো অনেকেই একক গল্প সংকলন ভেবে শুরুতে ভুল করে বসতে পারে। সবমিলিয়ে আমার কাছে বইটি খুবই ভালো লেগেছে। বইয়ের পেইজ, বাঁধাই ছিল চোখে পড়ার মতো। একবারো মনে হয়নি যে এটি আমাদের দেশীয় বই, বরং কোলকাতার বই ভাবতেই ভালো লেগেছে বেশি। এজন্য বইটির প্রকাশককেও ধন্যবাদ। মুস্তাফিজ কারিগরের দারুণ প্রচ্ছদে ততোধিক চমৎকার বইটি ২২০ টাকা (মুদ্রিত) মূল্যে প্রকাশ করেছে অর্জন প্রকাশন। আশা করি বইটি সবারই ভালো লাগবে। সমাজে ধর্ষিতা নারীদের জন্য সহানুভূতি, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জোগাবে বইটি। বইটি পাঠকপ্রিয়তা পাক। লেখকের জন্য শুভ কামনা। আসুন ভালো বইয়ের কথা সবাইকে জানাই। রিভিউ করেছেন #Shahadat Sabbir
Was this review helpful to you?
or
লেখক শামস সাইদের সদ্য প্রকাশিত উপন্যাস 'দুঃখগুলো হাওয়ায় ভাসিয়ে দিও' শেষ করলাম গতরাতে। উপন্যাসের নামটার মধ্যেই কেমন একটা বিষাদ বিষাদ ভাব আছে আবার সেই বিষাদকে উড়িয়ে দেবার একটা মন্ত্রণারও আভাস আছে। বিষাদ সত্যি তার অজস্র সৈন্য ছেড়ে দিয়েছিল মনের ভেতর। তারা ক্ষতবিক্ষত করেছে মন। কৈশোর না পেরানো রেহান নামের মেয়েটির জন্য মন কেঁদে উঠেছে। কেনো মানুষ এতো পাষণ্ড হয়? কেনো এতো নীচে নামে? হ্যাঁ, উপন্যাসে দুঃখ-জাগানিয়া মেয়েটির নাম, রেহান। রেহানের বয়স পনের। জগৎ ও জীবনের কুৎসিত রূপের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে এই পনের বছরের অপরিণত বয়সের পদে পদে। চারদিকে অমানুষের লোলুপ হিংস্র নখর। রেহান দেখেছে কীভাবে কাছের মানুষগুলো, চেনা মানুষগুলো মানুষ থেকে মুহূর্তেই শয়তান হয়ে যায়। লেখক শামস সাইদকে দৈত্যাকার আকৃতির উপন্যাস রচনা করতেই দেখে আসছি। গত বছর ‘ধানমণ্ডি ৩২’ শিরোনামে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক উপন্যাস এসেছে তার হাত ধরে। এবারও শুনেছি ‘ধানমণ্ডি ৩২’ এর দ্বিতীয় খণ্ড আসবে। যাহোক, ‘দুঃখগুলো হাওয়ায় ভাসিয়ে দিও’ উপন্যাসে যেন অন্য এক শামস সাইদকে দেখলাম। বেশ দরদ দিয়ে, শাণিত ভাষায় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অভিনব আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন এই উপন্যাসে। একটি মেয়ের ছোট থেকে ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠার পথটা যে কতোটা অমসৃণ, কতোটা বন্ধুর লেখক শামস সাইদ সুন্দরভাবে সেই দিকটি ফুটিয়ে তুলেছেন উপন্যাসে। 'দুঃখগুলো হাওয়ায় ভাসিয়ে দিও’ উপন্যাসটি মূলত পুরোটাই বর্ণিত হয়েছে রেহানের জবানিতে। এটাকে পত্র-উপন্যাস বলা যেতে পারে। উপন্যাসের চরিত্রগুলো আমাদের চেনা পরিবেশের নয়, কিন্তু তবুও তাদেরকে অচেনা মনে হয় না। রেহানের জীবনের পদে পদে আসা বিপদগুলো, তার জীবনের বিভৎস অভিজ্ঞতা যেন প্রতিটি সমাজের প্রায় প্রতিটি মেয়ের জীবনের চিরচেনা প্রতিবন্ধকতার প্রতিচ্ছবি। রেহান চরিত্রটাকে তাই পাঠকের কাছে ভিনদেশি চরিত্র মনে হয় না কখনো। রেহান সময় ও সমাজকে অতিক্রম করে সবার আপন হয়ে ওঠে। সে যেন বিশ্বজনীন। সে যেন হ্যাপি। সে যেন আসিফা। সে যেন কৃত্তিকা। লেখক যেন রেহানের অমানবিক পরিনতির মধ্য দিয়ে হ্যাপি, আসিফা, কৃত্তিকাদের হৃদয়বিদারক মৃত্যুর জন্য দায়ী আমাদের এই কুৎসিত সমাজকেই চাবুক মেরেছেন। 'দুঃখগুলো হাওয়ায় ভাসিয়ে দিও'র ভাষা খুবই ঋজু, সাবলীল। ভাষায় হোচট খাওয়ার কোন বাঁধা নেই। তরতর করে শিম গাছের মতো লেখকের শব্দমালা পাঠককে টেনে নিয়ে যাবে। তবে মাঝে মাঝে উপন্যাসটা পড়ার সময় কেমন জানি একটু খটকা লেগেছে। মনে হয়েছে রেহানের বর্ণনার ভাষাটা যেন একটু কৃত্রিম। কেমন যেন একটু অনুবাদের মতো ভাষা। জন মিল্টনের 'প্যারাডাইস লস্ট' এর কথা মনে পড়েছে কথোপকথনগুলো পড়ার সময় অনেক জায়গায়। যাহোক, 'দুঃখগুলো হাওয়ায় ভাসিয়ে দিও’ বিষাদ-জাগানিয়া সুন্দর একটি উপন্যাস-- এ কথা বলতেই হবে। সমাজের বীভৎস বাস্তব একটা দিক লেখক খুব সাবলীল ভাষায়, অচেনা অথচ চিরচেনা পরিবেশে, নবরূপে পেশ করেছেন। লেখক শামস সাইদকে তাঁর এই সুন্দর প্রয়াসের জন্য শুভকামনা রইলো। আশা করি উপন্যাসটি পাঠক-সমাদৃত হবে। ~~ তাহসিনুল ইসলাম কথাসাহিত্যিক @ উল্লেখ্যঃ উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে 'অর্জন প্রকাশনী' ।