User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
*বইঃ-দিবারাত্রির কাব্য *লেখকঃ-মানিক বন্দ্যোপাধ্যয় *ধরণঃ-চিরায়ত উপন্যাস *ভাষাঃ-বাংলা *প্রকাশণীঃ-বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র *প্রথম বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সংস্করণঃফেব্রুয়ারি-২০১০ *প্রচ্ছদঃ-ধ্রুব এষ *মোট পৃষ্ঠাঃ-১৩৪ *মূল্যঃ-১৫০.০০ ৳ ="দিবারাত্রির কাব্য","পদ্মা নদীর মাঝি" আর "পুতুলনাচের ইতিকথা" লিখে যিনি বাংলা সাহিত্যের সিংহাসনে আরোহন করেন তাকে কেই-বা না চেনে!তবুও তার সম্পর্কে একটু বলে নেওয়া প্রয়োজন মনে করি।প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যয় যার আসল নাম তিনিই হলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যয়।জন্মেছিলেন সাওতালের বিহারে।পড়ালেখায় ছিলেন অসম্ভব রকমের মেধাবী।প্রাথমিক-মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন গনিতে।কিন্তু আর পাশ করা হয়নি এই অসাধারণ কৃতি ছাত্রের!তবে সে ইতিহাস পাঠকদের অজানা থাকবার কথা নয়।ঠিক করেছিলেন—লিখবেন ত্রিশের পর।কিন্তু সেই যে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে "অত সীমামী" নামক গল্প বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশ করে রাতারাতি লেখক বনে যাওয়া তা তো পাঠকদের অজানা কথা নয়।নিজের সিদ্ধান্তের উপরেও যে আরেক অসীম আত্নার সিদ্ধান্ত আছে তাই মনে করিয়ে দেয় মানিকের ঘটনা।প্রবোধ ভেবেছিলেন—ভবিষ্যতে তিনি যেমন লেখা লেখবেন তা তার বর্তমান লেখার সাথে খাপ খায় না!তাই ব্যবহার করেছিলেন ডাকনাম(মানিক)!ভেবেছিলেন—ভবিষ্যতে ভালো লিখলে ব্যবহার করবেন আসল নাম।কিন্তু তার দূর্ভাগ্য অথবা সৌভাগ্য যে তাকে আর নাম বদল করতে হয়নি!করার সুযোগই পায় নি!বাংলা সাহিত্যে তার আগমন যেমন অসাধারণ একটি গল্পের মাধ্যমে তেমনি এক অসাধারণ জনপ্রিয় উপন্যাসের মাঝ দিয়েও।মাত্র একুশ বছরের রচনা "দিবারাত্রির কাব্য"।অবশ্যই প্রেমের উপন্যাস।তবে ঠিক কি ধরণের প্রেম তা জানতে হলে অবশ্যই পাঠকদের যেতে হবে উপন্যাসের গহীন দিয়ে।"দিবারাত্রির কাব্য" নিয়ে হয়েছে অনেক আলোচনা-সমালোচনা।হবে না..?মাত্র একুশ বছরের চোকরা এসে নাড়িয়ে দিল প্রেম নিয়ে মানুষদের মনে গেঁড়ে বসা ধারণাকে।উচ্চারণ করলেন প্রেম নিয়ে নিজ ধ্যান-ধারনা।কেবল প্রেম নয়;পাকা দার্শনিকের মতো বলে গেলেন— . "মানুষ যে স্তরের তার জীবনের উদ্দেশ্য সে স্তরে নেই।ঈশ্বরের মতো,শেষ সত্যের মতো,আমিত্বের মনের মতো সেও মানুষের নাগালের বাহিরে।জীবনের শেষ পরিণতি জীবনে নেই।মানুষ চিরকাল সার্থকতা খুঁজবে।কিন্তু কখনো তার দেখা পাবে না।" আরো বলে গেলেন— . "শান্ত রাত্রি নীহারিকা লোকে, বন্দি রাত্রি মোর বুকে উতল অধীর— অনুদার—সঙ্কীর্ণ আকাশ। মৃত্যু মুক্তি দেয় না যাহাকে প্রেম তার মহামুক্তি।—নূতন শরীর মুক্তি নয়,মুক্তির আভাষ।" ভাবা যায়,মাত্র একুশ বছরের চোকরার লেখা এসব!তবে খুব সম্ভবত লেখা বয়স থেকে আসে না;আসে মস্তিষ্ক থেকে।ভাবনা থেকে,চিন্তা থেকে।তবে বিষ্ময়ের বিষয় এই যে মাত্র একুশ বছরের লেখা "দিবারাত্রির কাব্য"।মানিক নিজেই এই বিষ্ময়ের অবসান ঘটিয়ে গিয়েছে।নিজেই বলেছে,,আসলে শুধু প্রেম কে ভিত্তি করে পুরো একটা উপন্যাস লিখে ফেলার সাহস মানুষ একুশ বছরেই করতে পারে! . যাইহোক,"দিবারাত্রির কাব্য" পর্যালোচনা করতে বসে যদি তা সম্পর্কে কিছু না বলি তবে অন্যায় হবে। "দিবারাত্রির কাব্য" কে অবশ্যই প্রেমের উপন্যাসের তালিকায়ই ফেলতে হবে।তবে তা ঠিক কি ধরণের প্রেম..?বহুমুখী প্রেম নাকি ইংরেজিতে অ্যান্টিপ্রেম যাকে বলা হয় তা..?হয়তোবা তাই!উপন্যাসের প্রধান চরিত্র সম্ভবত হেরস্ব।যে সবকিছু যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করে।এমনকি বিশ্বাসের জায়গাটাকেও সে যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করে।এ জায়গায় পাঠক বিজ্ঞানমনস্ক মানিককেই যেনো খুঁজে পায়।হেরস্বের স্ত্রীর নাম হলো 'উমা'।তবে সে এক সন্তান রেখে গলায় দড়ি দেয়।কেনো দেয় তার যথাযথ উত্তর উপন্যাসের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।অন্তত আমি পাইনি!তবে খুব সম্ভবত হেরস্বের খেয়ালিপনা আর মেয়েলোককে নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক ভাবে খেলার ছলই 'উমা' কে আত্নহত্যার প্ররোচনা যোগায়।হেরস্বের প্রাক্তন প্রেমিকা হলো 'সুপ্রিয়া'।যাকে সে পাঁচবছর আগে ছল করে রুপাইকুড়ার দারোগা অশোকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়!কিন্তু অশোক আর সুপ্রিয়ার দাম্পত্য জীবনে ছিল না কোনো প্রকৃত সুখ।যা ছিল তা হলো যৌনতা আর ক্ষুধা।পাঁচবছর পরে যখন হেরস্ব আশ্রয় নেয় সুপ্রিয়ার বাড়িতে।তখনই সুপ্রিয়ার মনে জ্বলে উঠে পুরোনো প্রেমের কয়লা!সে আবার হেরস্বের প্রেমে পড়তে চায়।জড়াতে চায় পরকীয়া নামক আরেক যৌন সম্পর্কে।তারপর হেরস্বের জীবনে আসে 'আনন্দ'।তবে হেরস্ব আনন্দের প্রেমে পড়েছিল নাকি আনন্দ হেরস্বের প্রেমে পড়েছিল..?সম্ভবত অনাথ-মালতীর মেয়ে আনন্দই পড়েছিল হেরস্বের প্রেমে।অনাথ-মালতী দুজনেই ঘর ছাড়ে বিশ বছর পূর্বে।তাও প্রেমের টানে!পড়ার সময় পাঠকের মনে হবে পুরো উপন্যাস জুড়েই বুঝি কেবল প্রেম আর প্রেম..?উত্তরটা হবে,নাহ্।কেননা,উপন্যাসে কিছুটা সার্থকতাও দেখানো হয়েছে।তবে কিসের..?জীবনের নাকি প্রেমের..?তার বিচার অন্য পাঠকদের হাতে।যাইহোক,অনাথ-মালতী প্রেমের টানে ঘর ছাড়লেও তাদের মাঝে আজ আর প্রেম নেই।প্রেমের ছিঁটে-ফোটাও নেই।সম্ভবত কাঁচা প্রেমগুলোর পরিণতি এমনি হয়!সেই অনাথ-মালতীর মেয়ে আনন্দ।আনন্দ যখন প্রথমবারের মতো হেরস্বের সামনে এসে দাঁড়ায় তখন হেরস্বের মতো পাঠকও দেখতে পান— "আনন্দ অস্পরী নয়,বিদ্যাধারী নয়,তিলোত্তমা নয়,মোহিনী নয়।তাকে চোখে দেখেই মুগ্ধ হওয়া যায়,উত্তেজিত হয়ে উঠার কোনো কারণ থাকে না।" সেই আনন্দ হেরস্বের প্রেমে কিংবা হেরস্ব আনন্দের প্রেমে পড়ে।তবুও একসময় হেরস্ব মনে করে অপাপবিদ্ধা আনন্দের প্রেমে পড়েছে সে।কারণ তার বিশ্বাস— "প্রেমিকের কাছে প্রেমের অগ্রগতির ইতিহাস নেই।যতদূরই এগিয়ে যাওয়া যাক সেইখান থেকেই আরম্ভ।আগে কিছু ছিল না।ছিল অন্ধকারের সেই নিরন্ধ্র কুলায়,যেখানে নব জন্মলাভের প্রতীক্ষায় কঠিন আস্তরণের মধ্যে হৃদয় নিষ্পন্দ হয়ে ছিল।" তবে আনন্দর মনে প্রেম সম্পর্কে কোনো মিথ্যা মোহ জাগাতে চায় না হেরস্ব।যা পাঠক কিছুটা আন্দাজ করতে সক্ষম হবেন তাদের কথোপকথনের মাঝ দিয়ে। আনন্দ বলল,'প্রেম কতদিন বাঁচে?' হেরস্ব হেসে বলল,'কী করে বলব আনন্দ।।দিন গুনে বলা যায় না।তবে বেশিদিন নয়।এক দিন,এক সপ্তাহ,বড়জোর এক মাস!' শুনে যেন আনন্দ ভীত হয়ে উঠে।অজান্তেই বলে উঠে,'মোটে!' হেরস্ব আবার হেসে উঠল,'মোটে হল?একমাসের বেশি প্রেম কারো সহ্য হয়?মরে যাবে আনন্দ—এক মাসের বেশি হৃদয়ে প্রেম পুষে রাখতে হলে মানুষ মরে যাবে।মানুষ একদিন কি দু'দিন মাতাল হয়ে থাকতে পারে।জলের সঙ্গে মদের যে সম্পর্ক মনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তাই—প্রেম এত তেজী নেশা।' তবুও আনন্দ প্রেমে পড়ে।হেরস্ব সেটাই চাইছিলো।উপন্যাসের শেষে দেখা যায় হেরস্ব তার তৃতীয় প্রেমেরও ইতি টানে।তবে সেই ইতি কেমন..?হেরস্ব আনন্দকে আত্নহত্যার প্ররোচনা দেয়।তার তত্ত্ব,চিন্তা ও জীবনের ব্যাখ্যা—সবই আনন্দকে ভেতরে ভেতরে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত করে তোলে। তবুও শেষপর্যন্ত প্রেমের উপন্যাস হয়ে উঠা ছাড়া 'দিবারাত্রির কাব্য'র গত্যন্তর থাকে না!কারণটা লেখকই বলে দিয়েছেন— "মৃত্যু মুক্তি দেয় না যাহাকে প্রেম তার মহামুক্তি।" এ জায়গায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পুরোপুরি সফল।পাঠকের মস্তিষ্ক নিয়ে খেলা সুন্দরভাবেই এবং বলা চলে সবচে' সার্থক ভাবেই শেষ করেছেন।আর সেই শেষটা মৃত্যুর মধ্য দিয়ে... রেটিংঃ-৫/৫ #রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ #এপ্রিল-২০২০ ~ফখরুল ইসলাম।
Was this review helpful to you?
or
দিবারাত্রির কাব্য মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর উল্লেখ্যযোগ্য একটি উপন্যাস। উপন্যাসটি তিনটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশ...দিনের কবিতা।যেখানে অধ্যাপক হেরম্ব ও দারোগা অশোকের স্ত্রী সুপ্রিয়ার বিক্ষিপ্ত মনের কথা।বিপত্নীক হেরম্ব একদিন তার বিগত প্রেমিকা সুপ্রিয়ার কাছে যায়।তাদের কথার মাঝখানে জানা যায়,হেরম্বের স্ত্রী উমা আত্মহত্যা করেছে।হেরম্বই সুপ্রিয়ার বিয়ে দেয় অশোকের সাথে।অশোক ও সুপ্রিয়ার দাম্পত্যে সুখ ছিল কিনা তা জানা যায়না তবে শান্তি আছে।এই অংশে জানা যায় হেরম্ব নিরলিপ্ত,নিরাসক্ত।সু্প্রিয়ার প্রেম ও অন্তর্বেদনা এবং লব্ধ ও নিরাশ্রয় স্ত্রী। দ্বিতীয় অংশ...রাতের কবিতা।এখানে মালতি ও অনাথের মেয়ে আনন্দকে নিয়ে হেরম্বের কাহিনি।মন্দিরের আবহাওয়ায়,স্থুল ও শিথিল শিক্ষায় যুবতী হয়েছে আনন্দ।এরা হেরম্বের পূর্ব পরিচিত।মালতি অনাথের সাথে গৃহত্যাগ করে বৈষ্ণব মতে বিয়ে করে।তাদের দাম্পত্যজীবন অবিশ্বাসের।প্রতিনিয়ত সেখানে দবন্ধ কলহ।হেরম্ব অনাসক্ত ও বিপত্নীক হয়েও আনন্দকে অন্তরে আবিস্কার করে।অসমপ্রেম বিকশিত হতে থাকে শেসাওংস...দিবারাত্রির কাব্য।এখানে আনন্দ ও হেরম্বের মাঝে উপস্থিত হয় সুপ্রিয়া।ঈর্ষা ভরা অন্তর নিয়ে।সাথে থাকে অসুস্থ স্বামী অশোক।অশোক খুন করতে চায় সুপ্রিয়াকে।সুপ্রিয়া দন্ধ করে আনন্দের সাথে।অশোক অপমান করে হেরম্বকে।অনাথ মালতিকে ফেলে পালিয়ে যায়।মালতি চলে যায় গোসাইয়ের কাছে।আর সবশেসে আনন্দ আগুন জালিয়ে নাচতে নাচতে আত্মহত্যা করে। সবার পরিণতিই এখানে করুন ও নিয়তি দবারা নির্দিষ্ট। কিন্তু তাও সবকিছুই যেন অবিশ্বাস্য এক অনুভুতির জন্ম দেয়। এখানেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় একজন সফল ঔপন্যাসিক