User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
'শিখর থেকে শিখরে' উপন্যাসে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দেখিয়েছেন মানুষের স্বপ্নের শিখর কতটা উঁচু হতে পারে, আর কতখানি অসীম হতে পারে। তিনি এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন যে সত্যিকারের স্বপ্নচারীরা স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যায় কিন্তু সেই স্বপ্ন কিভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে তা নিয়ে ভেবে ভেবে তারা চলার পথকে সংকুচিত করে তোলে না। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ এক অসাধারণ কাহিনী। এ এমনই এক কাহিনী যা পাঠকের মনে অদ্ভুত ভালোলাগার সৃষ্টি করবে। দারুণ মানসিক শক্তি জোগাবে মানুষের বাহ্যিক ও দৃশ্যমান সকল দুর্বলতাকে এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিতে। কুলদীপ সিং নামের একজন মানুষকে নিয়ে আবর্তিত হয়েছে উপন্যাসের কাহিনী। কুলদীপ কোন সাধারণ মানুষ না। ভারতের প্রথম এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী ও আর্মির সোলজার। পর্বতারোহনের সপ্তাখানেকের মধ্যেই সে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অংশ নেয়। এভারেস্ট জয়ের পথে যেমন তার সাথে ছিল তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু রবি (যদিও রবি নিজে শেষ অব্দি এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে পারেনি) তেমনি যুদ্ধের ময়দানেও ছিল রবি। যুদ্ধের এক পর্যায়ে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। কিন্তু শত্রুপক্ষ যুদ্ধ বিরতির কথা জানত না। তাই তারা ঠিকই আক্রমন চালিয়ে যায়। এই আক্রমনে প্রথমে গুলিবিদ্ধ হয় রবি। রবিকে বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার হয় কুলদীপও। এর ফলে কুলদীপকে হসপিটালাইজড করা হয়। জ্ঞান ফেরার পর কুলদীপ টের পায় তার কোমরের নিচ থেকে পুরো নিম্নাংগ একেবারে অবশ হয়ে গেছে। সে হয়ে পড়েছে পৌরুষহীন পঙ্গু। নিজের এই অবস্থা নিয়ে তীব্র মানসিক যন্ত্রনা আর হীনম্মন্যতায় ভুগতে শুরু করে কুলদীপ। নিজেই সম্পর্ক ছিন্ন করে বাগদত্তা গীতার সাথে। ওদিকে রবির যে কি হয়েছিল, তা সবাই তার কাছ থেকে এড়িয়ে যেতে থাকে। রবি বেঁচে আছে না মরে গেছে তাই নিয়ে কুলদীপের মনে ঝড় ওঠে। ফ্ল্যাশব্যাকের মাধ্যমে বারবার তার মনে পড়তে থাকে রবির সাথে বন্ধুত্ব আর গীতার সাথে ভালোবাসার স্মৃতি। এই মনোঃকষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে চায় সে। কিন্তু এখানেই কাহিনী শেষ না। আত্মহত্যায় ব্যর্থ হয় সে। পরে চিকিৎসার তাকে সরকারিভাবে পাঠানো হয় ইংল্যান্ডে। সেখানে গিয়ে নতুন করে সম্পর্কে জড়ায় নার্স মেরির সাথে। কিন্তু যৌন অক্ষমতার কথা মনে পড়তেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে উঠতে থাকে কুলদীপ। কিন্তু তা সত্ত্বেও মেরি তার সাথে ক্রমেই ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। এই ঘনিষ্ঠতাকে প্রেম হিসেবে চিহ্নিত করে কুলদীপ। কিন্তু অনেকটাই সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার সময় এলে তার সাথে আসতে যখন অস্বীকৃতি জানাল মেরি, তখন কুলদীপ বুঝল সবটাই ছিল মেরির ছলনা। তাকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে মেরির অভিনয়। দেশে ফিরে নতুন করে জীবন শুরু করতে চায় কুলদীপ। এরপর আবারো নিজের যৌন অক্ষমতার তীব্র হতাশা নতুন করে ফিরে এল কুলদীপের জীবনে যখন নীনা নামের প্রাণোচ্ছল এক যুবতীর সাথে নতুন করে জড়িয়ে পড়ল সে। এবার সে শুরু থেকেই ছিল সচেতন। তার যৌনাবেগ না থাকলেও মানবিক আবেগ ঠিকই ছিল। কিন্তু সেই মানবিক আবেগের তোয়াক্কা না করে কুলদীপ দূরে সরিয়ে দিতে চায় নীনাকে। কিন্তু নীনা অন্য মেয়েদের মত নয়। তাই ঠিকই একসময় কুলদীপের জীবনসঙ্গিনী হয়ে ওঠে সে। ওদিকে কুলদীপ জানতে পারে তার প্রিয় বন্ধু রবির করুণ কাহিনীর কথা। সে বুঝতে পারে তারচেয়েও বেশি অসহায় রবি। কুলদীপ নিজে এভারেস্টজয়ী বলে সরকারের দয়ায় নিজেকে অনেক খানি সামলে নিতে পেরেছে। কিন্তু রবি এভারেস্ট বিজয়ের কাছাকাছি গেলেও শেষ অব্দি তো আর তা পারেনি। তাই তাকে কেউ কোন দয়া করেনি। ফলে দেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে রবির অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কুলদীপ আরও একবার ধাক্কা খায় যখন নীনাকে নিয়ে লাদাখে গিয়ে জানতে পারে, এভারেস্ট বিজয়ের সময় কুলদীপদের গাইড হিসেবে যে শেরপা ছিল, সেও এক দুর্ঘটনায় পড়ে পা হারিয়েছে। অথচ দেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলে এমনটা হত না। তখন কুলদীপ সিদ্ধান্ত নেয়, যেকোন উপায়েই হোক দেশে একটা আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল বানাবে যাতে তাদের মত পর্বতারোহিদের জীবন অকালে ঝরে না যায় বা নষ্ট হয়ে না যায়। এ এক কঠিন লড়াই যাতে জেতার সামর্থ্য কুলদীপের একার ছিল না। এ লড়াইয়ে কুলদীপ কারো সহায়তাও পায় না। কিন্ত নীনা ঠিকই তার সাথে এই অসম্ভব লড়াইয়ে যোগ দেয়। ক্রমশ তারা এক অসীম পর্বতের শিখরে নিঃসংগভাবে আরোহণের চেষ্টা চালাতে থাকে। শেষ অব্দি কি সেই শিখরে পৌঁছাতে পারবে কুলদীপ? কুলদীপ পারার স্বপ্ন দেখে যায়... সত্যিই এই উপন্যাস এক অসাধারণ কাহিনীর ততোধিক অসাধারণ চিত্রায়ন। ফিনিশিংয়ে এসে পাঠক বাকরুদ্ধ হতে বাধ্য। শুরু থেকে যে কাহিনীর পরতে পরতে হতাশাবাদীতার ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছিল, যে কাহিনী নিছকই এক বিয়োগান্তক পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছিল, শেষে এসে যে তা এমন ভীষণ রকম ইউটার্ন নেবে সেটা কে জানত? সত্যিই আগে থেকে বোঝা অসম্ভব ছিল যে এই কাহিনী হঠাৎই দারুণ উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠবে, পাঠকের চোখ থেকে সস্তা চোখের জল বের করে আনার বদলে তাদেরকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শেখাবে।