User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
একুশে পদকপ্রাপ্ত শ্রদ্ধেয় হেলেনা খান বাংলার শুরুর দিককার শিক্ষিত মহিলা সমাজের কর্ণধার। পূর্ব পাকিস্তানের সর্বকনিষ্ঠ সরকারি প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। তাঁর হালকা চালের এই ভ্রমণকাহিনীতেও সেই শিক্ষার ছাপ সুস্পষ্ট। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘সিংহল’ কবিতা থেকে বইয়ের নাম নেয়া। বইটি নাতিদীর্ঘ। লেখিকা সম্পূর্ণ শ্রীলঙ্কা ঘুরতে পারেননি, সময়ের অভাবে। কলম্বো, ক্যান্ডি আর অনুরাধাপুর - এই। এর বাইরে সিগিরিয়া ঘুরার ইচ্ছা থাকলেও কোনো কারণে বাদ দিয়েছিলেন, যদিও দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছেন স্বপ্নে সিগিরিয়া পাহাড় ঘুরে এসে। সেই স্বপ্নের মাঝেই রাজা ধাতুসেনা, রাজপুত্র কাশ্যপ, মোগগাল্লানা, প্রতিশোধপরায়ণ মিগারাসহ সর্বোপরি সিগিরিয়া দূর্গের যে ইতিহাস শুনিয়েছেন তা বেশ ইন্টারেস্টিং। শ্রীলঙ্কার ভূস্বর্গ ক্যান্ডি। লেখিকা সেখানে ঘুরেছেন বিখ্যাত বোটানিক্যাল গার্ডেনে, সময় কাটিয়েছেন কৃত্রিম হ্রদের মাঝে দ্বীপে নির্বাসিত রাণীর কথা ভেবে, জানিয়েছেন কিভাবে ক্যান্ডির রাজা প্রথম জয়সিংহ পুরো শ্রীলঙ্কা থেকে পর্তুগীজদের তাড়িয়েছিলেন। এছাড়া পবিত্র ডালাডা মালিগাওয়া মন্দিরে সংরক্ষিত গৌতম বুদ্ধের দাঁতের ইতিহাস তো আছেই। এর বাইরে অনুরাধাপুরের হারিয়ে যাওয়া প্রত্নতত্ত্ব, রত্নপুরার রত্নখনি, ত্রিনকোমালির রাবণের কবর এবং পল্লোনারুবার ধর্ম মেলার উল্লেখও পাবেন। বইটিতে ভ্রমণের পাশাপাশি বারবার এসেছে ইতিহাস। যেমন রাজা বিজয়সিংহের শ্রীলঙ্কায় পদার্পণ, যক্ষদের কথা, দেবনাম পিয়াতিস্যার বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ ও অশোকের পুত্র মহেন্দ্র-কন্যা সংঘমিত্রার শ্রীলঙ্কায় আগমন, অনুরাধাপুরে বোধিবৃক্ষ রোপণ, রাজা ১ম বিজয়বাহুর চোলদের পরাজিত করা, শ্রীলঙ্কার সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা মহান পরাক্রমবাহুর উত্থান এবং জায়না ও কোট্টে ঘিরে কিভাবে যুগে যুগে তামিল ও সিংহলী রাজ্যের মাঝে সংঘর্ষ হয়েছে তার উল্লেখ। বইটিতে মধ্য ও আধুনিক যুগেরও ইতিহাস আছে। শ্রীলঙ্কার মসলা, রত্ন ও চালের লোভে কিভাবে একে একে পর্তুগিজ, ডাচ ও ইংরেজ এলো তার কথা আছে। আছে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী সিরিমাভো বন্দরনায়েকের কথাও। সেই নব্বইয়ের দশকেই শ্রীলঙ্কা যথেষ্ট উন্নত। নারী পুরুষ সমান অধিকার সবখানে। মেয়েরাও ছেলেদের মতোই বিভিন্ন প্রফেশনে কাজ করে, অনেকেই উচ্চশিক্ষিতা। ধর্মীয় গোঁড়ামি, পোশাকের বাঁধানিষেধ নেই। প্রাইমারি শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক। সরকার শিক্ষাখাতে প্রচুর ব্যয় করে থাকে। রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন, নিরাপত্তা যথেষ্ট। শ্রীলঙ্কানরা কৃষিকাজকে খুবই গুরুত্ব দেয়, ফলে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশটি। সেই সাথে পর্যটনের বিকাশ তো আছেই। যদিও শ্রীলঙ্কান বৌদ্ধ, হিন্দু ও খ্রিস্টান সমাজে কোষ্ঠী আর যৌতুকের বাড়বাড়ন্ত এবং মুসলিম সমাজে রক্ষণশীলতা একটু দৃষ্টিকটু ছিল। বর্তমানে হয়তো এই সমস্যাগুলো আরো বেড়েছে। সিংহলী তামিলের সমস্যা তো ছিলোই, এখন বৌদ্ধ-মুসলিম সংঘাতও বেড়েছে শ্রীলঙ্কায়। সাথে অর্থনৈতিক সমস্যা তো আছেই। সিংহল নিয়ে আরো বই পড়ার ইচ্ছা আছে। এবং অবশ্যই ইচ্ছা আছে একদিন অনুরাধাপুরের বোধিবৃক্ষ কিংবা সিগিরিয়ার দূর্গ দেখতে দেখতে নারকেল তেলের তরকারি খাওয়ার। সিন্ধুর টিপ সিংহল দ্বীপ - হেলেনা খান। রেটিং ৪/৫।