User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল লেখকঃ মোহাম্মদ সাইফূল ইসলাম বইয়ের ধরণঃ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী প্রচ্ছদঃ আসিফ সিদ্দিকী প্রকাশনাঃ উপন্যাস প্রকাশন প্রথম প্রকাশঃ মে, ২০১৮ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১২ মুদ্রিত মূল্যঃ ২৩০ টাকা ধর্ম ও বিজ্ঞান-- এ দুয়ের দ্বন্দ্বের ইতিহাস বহু পুরনো। ঠিক কবে থেকে এ দুইয়ের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র আজও পাওয়া যায়নি। যুক্তিনির্ভর বিজ্ঞান ও বিশ্বাসনির্ভর ধর্মের মাঝে চলমান দ্বন্দ্বে জড়িয়ে কতজন যে হতাহত হয়েছে, সে ব্যাপারেও কোনো পরিসংখ্যানিক উপাত্ত পাওয়া যায়না। ধর্মীয় অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো ধর্মে বিশ্বাস করতে বলা হলেও আধুনিক বিজ্ঞানের কোনো তত্ত্ব দিয়ে সরাসরি তাকে প্রমাণ করা যায়না। এ নিয়েই ধর্মবাদী ও বস্তুবাদীদের যত দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে। এমনই এক দ্বন্দ্বের গল্প নিয়ে পাঠক সমাজে হাজির হয়েছেন তরুণ লেখক মোহাম্মদ সাইফূল ইসলাম। ১৯৮১ সালে জন্ম নেওয়া এ লেখকের বাবার চাকরির সুবাদে শৈশব কাটে দেশে-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(কুয়েট) থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি(সিএসই) বিষয়ে স্নাতক(সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে উদ্যোক্তা হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সে প্রতিষ্ঠানের সুবাদে বর্তমানে লিবিয়ায় প্রবাস জীবন যাপন করছেন তরুণ এ লেখক। তো, যা বলছিলাম তখন! ধর্ম ও বিজ্ঞানের এ বিরোধের গল্পের আশ্রয়ে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী তুলে ধরেছেন এ লেখক। মহাবিশ্বের জন্ম ও গঠন নিয়ে মানুষের জল্পনা-কল্পনার কোনো শেষ নেই। বারবার মানুষ চেষ্টা করেছে মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটন করতে। বার বার মানুষ মহাকাশে ছুটে গিয়েছে এ রহস্যের টানে। বার বার ব্যর্থ হলেও মানুষের এ উৎসাহে কোথাও যেন কোনো ভাটা পড়েনি কখনোই। বরং একেক বার ব্যর্থ হবার পর পরের বার দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে ছুটে গিয়েছে মহাবিশ্বের পানে। মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটন করতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থার এক প্রজেক্টের গল্প নিয়ে রচিত বইয়ের নাম "প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল"। পাশাপাশি মানুষের মানবিকতার নানা দিক সংক্রান্ত আলোচনা এ বইটিতে সমানভাবে স্থান পেয়েছে। একদিকে বিজ্ঞান, অন্যদিকে মানবিকতা--- এ দুইয়ের অসম লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কোন শক্তির জয় হয়? বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত দানবীয় শক্তির জয় হয়, নাকি "সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই"---- চণ্ডীদাসের এ জনপ্রিয় উক্তির সত্যতা আরেকবার প্রমাণিত হয়? এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে উল্লেখিত বইয়ের পাতায়। আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার পক্ষ থেকে মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনে এক প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়। প্রজেক্টের নাম "প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল"। টাইম ও স্পেসের মাত্রা শূন্য হলে সেখানে কী ঘটতে পারে, তা খুঁজে বের করাই এ প্রজেক্টের উদ্দেশ্য। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাকাশে স্পেসশিপ পাঠানো হয়। মহাকাশচারী হিসেবে এ অভিযানে অংশ নেন পৃথিবীর সকল বাঘা বাঘা পদার্থবিদ, গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীরা। এদের সাথে এ অভিযানে যাবার সুযোগ পান বাংলাদেশের এক অখ্যাত যুবক। তার নাম প্রবাল। পেশায় বংশীবাদক প্রবাল কী করে এ অভিযানের সওয়ারী হলেন, তা নিয়েই এ বইয়ের গল্প। শুনতে বেশ অবাক লাগলেও এ বংশীবাদক অন্যান্যদের সাথে মহাকাশে পাড়ি জমান। পরবর্তীতে ঘটনাচক্রে যখন তাদের ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা নেমে আসে, তখন এ অখ্যাত বংশীবাদকের প্রচেষ্টায় তারা সকলে বিপদ থেকে মুক্ত হন। কিন্তু একজন সামান্য বংশীবাদক কী করে রক্ষা করতে পারে এ মহাকাশযানকে। প্রিয় পাঠক! সে প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে চোখ রাখতে হবে উপন্যাসের পাতায়। এ তো উপন্যাসের একদিকের গল্প। এর পাশাপাশি দুই নরনারীর অতৃপ্ত প্রেমের গল্প-ও সমানভাবে ফুটে উঠেছে এ উপন্যাসটিতে। প্রেম এ উপন্যাসের মুখ্য কাহিনী না হলেও তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্ভর এ উপন্যাসটাতে। উক্ত উপন্যাসের আলোচ্য বিষয়বস্তু নিয়ে কথা তো কম হলো না। এবার আসি চরিত্রগত বিশ্লেষণের অংশে। আমার মতে, এটাকে ঠিক বিশ্লেষণ না বলে ব্যবচ্ছেদ বলাই বোধ হয় অধিকতর শ্রেয় হবে। কেননা, রিভিউয়ের এ অংশে লেখকের সৃষ্টিকর্মকে ইচ্ছেমত টেনে-হিঁচড়ে, কেটে কুটিকুটি করা হয়। যা হোক, মূল আলোচনায় ফিরে আসা যাক আবার। উপন্যাসের মুখ্য চরিত্রে রাখা হয়েছে প্রবাল নামক এক বংশীবাদককে। মহাবিশ্বের রহস্য সংক্রান্ত জটিল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে পূর্বদেশীয় একজন সামান্য বংশীবাদকের ভূমিকা কী হতে পারে, সেটাও এক অপার বিস্ময়। তার চাইতে বড় বিস্ময় হচ্ছে, এ নগণ্য ব্যক্তির ভূমিকাতেই আসন্ন বিপদের হাত থেকে রক্ষা পায় প্রথিতযশা বিজ্ঞানীর দল। কিন্তু এটাও কি কখনো সম্ভবপর হতে পারে? হ্যাঁ, পাঠক! এটাও সম্ভবপর হয়ে উঠতে পারে, যার সত্যতা পাওয়া যাবে উক্ত বইয়ে। এর পাশাপাশি তার জীবনের এক অতৃপ্ত দিক বেশ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলবার কাজটি সুনিপুণ হাতে করেছেন এ ঔপন্যাসিক। বিজ্ঞানের ডাকে সাড়া দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত জীবনে অনেক কিছুই হারাতে হয় তাকে। যাকে নিজের নিত্যসঙ্গিনী করার কথা ভেবেছিল, সে তার জীবনে বাস্তব হয়ে ধরা দেয় না আর। অধরাই রয়ে যায় তার বহুদিনের লালিত সে স্বপ্ন। সবকিছু হারিয়েও সে যেন আজ জয়ী। এভাবেই এগিয়ে যায় উপন্যাসের কাহিনী। উপরোল্লিখিত চরিত্রের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রয়েছে। সে চরিত্রের নাম বন্দনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক দিলীপ চৌধুরীর একমাত্র সন্তান বন্দনা চৌধুরী। মা-মরা মেয়ে বন্দনার সময় একান্ত নিরবে-নিভৃতে। বাবা তার চাকরি ও কর্মব্যস্ততার কারণে মেয়েকে সময় দিতে পারেন না। এ নিঃসঙ্গতা কাটাতে বন্দনা একসময় শিল্পকলা একাডেমিতে ভর্তি হয়। এ ভর্তির সুবাদে প্রবালের সাথে তার পরিচয় হয়। প্রবালের ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে তাকে ঘিরে বিনা সুতোয় আগামী দিনের স্বপ্নজাল বুনতে শুরু করে দেয় বন্দনা। এক পর্যায়ে নিজের ভাবাবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে নিজের মনের কথা বলে দেয় প্রবালকে। কিন্তু প্রবাল এটাকে নিতান্ত ছেলেমানুষি জ্ঞান করে অবজ্ঞা করতে শুরু করলে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। প্রবালকে নিজের করে পাবার তীব্র বাসনা তার এ স্বপ্ন পূরণের সহায়ক না হয়ে বরং কাল হয়ে দাঁড়ায়। সুদীর্ঘকাল অপেক্ষার পরেও নিজের প্রিয় মানুষ তার আপনজন হয়ে ওঠে না আর! বিজ্ঞান তাকে বেগ দিলেও কেড়ে নেয় আবেগ। এগিয়ে চলে উপন্যাসের গল্প। উপরোক্ত দুইটি মুখ্য চরিত্র ছাড়াও উপন্যাসে আরো কিছু গৌণ চরিত্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু চরিত্র হচ্ছে, ক্যাসিও আন্তের, দিলীপ চৌধুরী, স্বর্ণা, মিলিতা, বিশিষ্ট গণিতবিদ টয়লার, জগদ্বিখ্যাত পদার্থবিদ ভ্লাদিমির, ক্যাপ্টেন চমনোস্কি, ফাদার প্রমুখ। এসবের চরিত্রের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন চরিত্র লাইকাকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যায় এ গল্পে। প্রত্যেকে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী/অধিকারিণী হবার ফলে এ উপন্যাসে এক আলাদা মাত্রা যুক্ত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, টয়লার ও ভ্লাদিমিরের নিত্যকার ঝগড়া উপন্যাসের গল্পে আলাদা এক ব্যঞ্জনা দান করেছে। তেমনি, পেশাগত জীবনে চিকিৎসক মিলিতার হাসি-খুশি ও মিশুক স্বভাব তাকে অন্যান্য চরিত্র থেকে সহজেই আলাদা করে তুলেছে পাঠকের চোখে। এসব গৌণ চরিত্রের আলাদা আলাদা ভূমিকা গল্পের প্রয়োজনেই যুক্ত করা হয়েছে। উপন্যাসের পুরো কাহিনী একটা বৈজ্ঞানিক প্রজেক্টকে ঘিরে এগিয়েছে বিধায় উক্ত প্রজেক্টের নামে নামকরণ করা হয়েছে উপন্যাসের। তবে সবকিছু ছাপিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে প্রবাল ও বন্দনার গল্প। এবার আসি উক্ত বইটির ভাষার গল্পে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হলেও ভাষার ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা চোখে পড়েনি আমার। বেশ সহজ ভাষায় ঔপন্যাসিক এ উপন্যাসের গল্প লিখে গিয়েছেন। গল্পের স্বার্থে কোথাও কোথাও বৈজ্ঞানিক টার্ম ব্যবহৃত হবার ফলে শুরুতে কিছুটা জটিল লাগছিল এগুলো। তবে আশার কথা হলো--- উপন্যাসের শেষে প্রয়োজনীয় টিকা সংযুক্ত থাকার ফলে এগুলো বুঝতে তেমন কষ্ট হয়নি আমার কোনো। এছাড়া বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পাশাপাশি নরনারীর চিরকালীন প্রেমের দিকটি আলাদা মাত্রা যুক্ত করেছে এ বইটিতে। এ দিকটি যুক্ত হবার ফলে এটি অন্যান্য আর দশটি সাধারণ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর তুলনায় ব্যতিক্রমী মনে হয়েছে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ও অতৃপ্ত প্রেমের গল্প--- এ দুইয়ের মধ্যে এক অপূর্ব সমন্বয় সাধিত হবার ফলে বইটি আলাদা এক আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে। সর্বোপরি, এক কথায় বলতে গেলে, উপন্যাসের গল্প, দ্বৈত বিষয়বস্তুর সমন্বয় ও ভাষাশৈলী--- এসব কিছুর বিচারে বইটি দারুণ সুখপাঠ্য এ উপন্যাস বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। যারা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পড়তে ভালোবাসেন, তাদের মনে এ উপন্যাস একটু হলেও আলাদা জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে, এটাই আমার বিশ্বাস। আশা করি, কোনো পাঠক বইটি পড়ে আশাহত হবেন না। উক্ত বই সম্পর্কিত আরো কিছু ব্যাপারে না বললেই নয়। প্রথমত উল্লেখ্য যে, এ বইটি যে প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে, সে প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত প্রথম বই এটি। প্রথম বই হিসেবে কাগজের কোয়ালিটি, বাইন্ডিং থেকে শুরু করে লেখার মান----কোথাও কোনো ব্যাপারে কিছুর কমতি দেখিনি এ বইতে। বিশেষত কোথাও কোনো ভুল-ত্রুটি দেখলে তা তাদের অফিশিয়াল মেইলে জানানোর আহ্বান ও বড় ধরনের কোনো সমস্যা থাকলে রিফান্ডিংয়ের বিষয়টা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে আমার কাছে। উপরন্তু, একটা সুদৃশ্য বুকমার্ক বইয়ের সাথে দেওয়া হয়েছে উপহারস্বরূপ, যা একজন পাঠকের আনন্দ বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। প্রসঙ্গত আরো উল্লেখ্য যে, ইদানীং সময়ে আমাদের দেশের প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলো নবীন লেখকদের লেখা প্রকাশের সুযোগ খুব কম দেয়। সে তুলনায় এ প্রকাশনীর এমন উদ্যোগ এ দেশীয় সাহিত্য অঙ্গনের জন্যে সত্যিকার অর্থেই আশাজাগানিয়া। এমন মহৎ উদ্যোগ আরো অব্যাহত থাকুক। তাদের সরব পদচারণায় মুখরিত হোক বাংলা সাহিত্যের সকল অঙ্গন। আসুন, সকলে সুস্থধারার বই পড়ি। আর সম্ভব হলে, বই কিনে পড়ি। নিতান্তই সত্যিকারের দরকার না হলে ফ্রি পিডিএফকে না বলি!♥ পাঠ অনুভূতি সুখের হোক! ♥
Was this review helpful to you?
or
অস্থির একটা বই
Was this review helpful to you?
or
আমরা কি আমাদের মহাবিশ্বের ভেতরেই সীমাবদ্ধ? কী আছে মহাবিশ্বের বাইরে? এত এত আলোকবর্ষ পথ পাড়ি দেওয়ার প্রযুক্তি বানিয়ে মানুষ রওনা হয়ে গেল অন্তিমের দিকে। কিন্তু সাথে সামান্য একজন বাঁশিওয়ালা কেন? ধর্মগুরুরই বা কী কাজ এই মহাকাশযানে? 'চার্চ অভ রিজারেক্টেড আর্মি' নামক ধর্মীয় জঙ্গিগোষ্ঠী পথ আটকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। কিছুতেই মানুষকে ঈশ্বরের বেঁধে দেওয়া সীমা পেরোতে দেওয়া যাবেনা, এটা ঘোর পাপ। দারুণ একটি রোমান্টিক কাহিনীও মূল গল্পের সাথে সাথে আগাচ্ছে। কী হতে পারে শেষটায়? ২০ টা অধ্যায়, সুন্দরভাবে সাজানোর কারণে পুরো গল্পটা আরো প্রণবন্ত হয়ে উঠেছে। চমৎকার একটা বই, পড়ার সময় বারবার শিহরিত হবেন। আমার পড়া সেরা কল্পবিজ্ঞানগুলোর একটা হয়ে থাকবে।
Was this review helpful to you?
or
খুব সুন্দর স্টোরি... :)
Was this review helpful to you?
or
বই: প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল জনরা: বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখক: মোহাম্মদ সাইফূল ইসলাম প্রকাশনী: উপন্যাস প্রকাশন প্রকাশ কাল: মে ২০১৮ পৃষ্ঠা: ১১২ প্রচ্ছদ: অাসিফ সিদ্দিকী মুদ্রিত মূল্য: ২৩০৳ কাহিনী সংক্ষেপ : বিজ্ঞানের জয়যাত্রার সাথে সাথে যে ধর্মীয় গোঁড়ামির একটা ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক সে বিষয়টাকে উপজীব্য করে মানবিক অনুভূতির এক রহস্যময় উপন্যাস প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল। বিজ্ঞানের অভিনব নতুন নতুন অাবিস্কারে মানুষ হাতে পেতে চায় সর্বোচ্চ শক্তিকলা অন্যদিকে ধর্মভীড়ু কিছু যাজক ঈশ্বরের দেয়া দায়িত্বে তাদের নিরস্ত করে ধ্বংস করার চেষ্টায় এ গোপন প্রজেক্ট। মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র একটা নতুন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে, টপ সিক্রেট এ প্রজেক্টে রয়েছে উচ্চ পর্যায়ের সব বিজ্ঞানীগণ। স্পেসশিপে যাতে একঘেয়েমি পরিবেশ চলে না অাসে তাই সব শ্রেণির মানুষ নেওয়া হয়েছে তাদের বুদ্ধিমত্তা বিচার করে এমনটাই বলেন ক্যাপ্টেন, বংশীবাদক প্রবালকে। কিন্তু নিজের কোন ভূমিকা দেখতে পায় না এতসব জ্ঞানীগুণী মানুষদের ভিড়ে তবে তারমত অারো একজন অাছে ধর্মযাজক ফাদার অার্থার গুচি। সময়ের চাবিঘরে দিনরাত যেখানে কেবল নিজেদের মনগড়া খেলা সেখানে মাঝে মাঝে সুন্দরী ডাক্তার মিলিতার একটু দুষ্টমিষ্ট কথা যেন পুরো অভিজানে প্রাণ নিয়ে অাসে। অন্যসবার সাথে নাস্তা করা অার বাঁশি বাজিয়েই অভিযানের প্রথম কিছুদিন (পৃথিবীর হিসেবে হয়ত কয়েক বছর) কেটে যায় ক্লাশিকাল বংশিবাদক প্রবালের। অার প্রায়শই স্মৃতিরোমন্থন করে ভাবে ছাত্রী বন্দনার কথা। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থার ব্লাক হোলের একটা পর্যায় পার হবার পরেই শুরু হয় একটার পর একটা অঘটন। স্পেসশিপের সবার জীবনমরন নির্ভর হয়ে পড়ে বাঁশির সুরের উপর তৈরি প্রজেক্টের মারপ্যাঁচে। প্রবাল কি পারবে তার বাঁশির সুরে রক্ষা করতে এতগুলো মানুষের জীবন। অার কী কখনো ফিরে অাসা হবে তার পৃথিবীর বুকে যেখানে বন্দনার মত কেউ হয়তো অপেক্ষায়.. নিজস্ব মতামত : বইটা খুলে হাতে নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠা পড়াতে মন ভালো হয়ে যাওয়ার অনুভূতি। যেখানে পাঠক, লেখক, প্রকাশকের এক সেতুবন্ধন। প্রকাশনীর এ দিকটা খুব ভালো লাগছে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীভিত্তিক হলেও মূলত গল্পটা মানবিক অনুভূতির। যেখানে বন্দনা তার জন্মপরিচয়ের অস্তিত্ব নিয়ে সংকট কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন এক অপেক্ষার প্রহরগোনা শুরু করে ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার। গল্পের নায়ক প্রবাল মুখফুটে বলতে না পারলেও তার অনুভূতির সফল রূপ দিতে রাজি হয়ে যায় বিজ্ঞানের বলিদান হতে, কিন্তু সময় যে বড্ড স্বার্থপর কখনো ভবিষ্যৎ কখনোবা অতীতে নিয়ে দাবার অংকে নৌকা ভাষায়... সব মিলিয়ে প্রকাশনীর অার লেখকের প্রথম একক বই হিসেবে প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল স্বার্থক বলা চলে।
Was this review helpful to you?
or
বই: প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল (বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী) লেখকঃ মোহাম্মদ সাইফূল ইসলাম প্রচ্ছদঃ আসিফ সিদ্দিকী উপন্যাস প্রকাশন - Uponnash Prokashon প্রথম প্রকাশঃ মে, ২০১৮ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১২। মুদ্রিত মূল্য : ২৩০ টাকা। "সবচেয়ে মৌলিক ও আদি বাদ্যযন্ত্র হচ্ছে আমাদের কণ্ঠ। তারপরেই আবির্ভাব হয়েছে বাঁশির। সুরের প্রতি মানুষের সেই যে টান লক্ষ বছরের বংশপরম্পরায় এখনো তা বিদ্যমান, এখনও সুরের টানে ঘর ছাড়ে মানুষ। মানুষ কাঁদে, মূর্ছা যায় এই সুরের কুহকে।" - কথাগুলো ক্লাসিকাল বংশীবাদক প্রবালের। ভাবছেন, সায়েন্স ফিকশনে সঙ্গীত আর মানবিক বোধের কথা এলো কোত্থেকে? আশা করি, আলোচনা শেষে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম বিজ্ঞানী-গণিতবিদ-প্রকৌশলীদের নিয়ে মহাকাশে ছুটে চলেছে অত্যাধুনিক মহাকাশযান সক্রেটিস-১। গণিতবিদ টয়লার, পদার্থবিদ ভ্লাদিমির, ক্যাপ্টেন চমনোস্কির মতো কীংবদন্তিখ্যাত অভিযাত্রীদের মাঝে বাংলাদেশের এক সাদাসিধে বংশীবাদকের উপস্থিতি বড় বেমানান। প্রবাল নিজেও জানে না, তার কাজটা কী। এখানে তাকে আনাই বা হলো কেন? এতবড় কোন মিশনে নিশ্চয়ই খেয়ালের বশে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয় না! তবে কী সেই মহান উদ্দেশ্য? আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থার এক অভিনব প্রজেক্ট : "প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল"। মহাশূন্যের সীমারেখার ওপারে কী আছে, তা জানতে সময়ের বলয়কে ভেদ করে মহাবিশ্বের বাইরে চলে যাওয়াই এ প্রজেক্টের উদ্দেশ্য। গন্তব্য অসীম, পরিণতি অজ্ঞাত; তবুও সাফল্যের আশায় বুক বেঁধে অত্যাধুনিক মহাকাশযানে পাড়ি জমালো তারা। পৃথিবীর ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, বিজ্ঞানের শুরু থেকেই ধর্মীয় দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। সৃষ্টির রহস্য নিয়ে গবেষণাকে সীমা লঙ্ঘনের অপচেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যুগে যুগে। ঠিক একইভাবে, 'প্রজেক্ট প্রজেক্টাইলে' অভিযানের মাধ্যমে যখন ঈশ্বরের বেঁধে দেয়া সীমারেখা ডিঙিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সঙ্গত কারণেই বাধ সাঁধে এক ধর্মীয় জঙ্গীগোষ্ঠী 'চার্চ অভ রিজারেক্টেড আর্মি' এর একটাই উদ্দেশ্য, যে করেই হোক এই প্রজেক্টকে বানচাল করে দিতে হবে। আর তাই, ষড়যন্ত্র করে ছদ্মবেশে সক্রেটিস-১ স্পেসশিপে পাঠিয়ে দেয়া হয় তাদের এক প্রতিনিধিকে। শেষমুহূর্তে হয় সে অভিযাত্রীদেরকে যাত্রার দিক পরিবর্তনে বাধ্য করবে, নতুবা ধ্বংস করে দেবে সবকিছু! সমান্তরালভাবেই এগিয়েছে বন্দনা নামের একটি মেয়ের জীবনকাহিনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত একজন পদার্থবিজ্ঞানী প্রফেসরের মেয়ে বন্দনা কবির। নিজের জন্মপরিচয় নিয়ে অজানা এক রহস্যের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সে অসহায় বোধ করে। আরেকদিকে প্রবালের বাঁশির সুরে ব্যকুল হয়ে ওঠে তার হৃদয়। অজান্তেই কখন যেন বাঁশির শিক্ষককে ভালোবেসে ফেলে মেয়েটা। আবেগের বশবর্তী হয়ে প্রবালকে সে কথা জানানোর পর, নিছক ছেলেমানুষি ভেবে প্রবাল বারবার পাশ কাটিয়ে যায়। তবু পৃথিবী থেকে অনেক অনেক দূরে এসে, প্রবালের স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে বন্দনার কথা। বাধাবিপত্তি কাটিয়ে অনেকটা পথ পাড়ি দেয় মহাকাশযান। কিন্তু অযুত-নিযুত আলোকবর্ষ দূরে, লক্ষ্যের কাছাকাছি এসে ঘটতে শুরু করে একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। একদিকে নভোচারীদের সিদ্ধান্থীনতা, আরেকদিকে মৃত্যু তাড়া করে ফিরছে প্রতিপদে। এ অবস্থায় কি আদৌ মহাবিশ্বের সীমারেখা ভেদ করা সম্ভব? ঈশ্বর কি সত্যিই সীমারেখা টেনে রেখেছেন? সেই সীমালঙ্ঘনের ফলেই কি ঘনিয়ে আসছে চরম বিপর্যয়? কীই বা আছে সীমানার ওপারে? জীবন-মৃত্যুর সিদ্ধান্ত গ্রহণে নির্মম এক ধাঁধাঁর সমাধান খুঁজে বের করতে প্রবালকে। বাঁশি বাজিয়ে সেই গহীন দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সে কতোটা প্রস্তুত? মৃত্যুর অপেক্ষায় ক্লান্ত কেন্দ্রীয় মহাকাশ সংস্থার প্রাক্তন পরিচালক ক্যাসিও আন্তের। মৃত্যুর আগে কোন রহস্যের পর্দা উন্মোচন করতে মরীয়া হয়ে উঠেছেন বৃদ্ধ? বইয়ের পাতায় মিলবে সে উত্তর। বিজ্ঞানের যুক্তিকে দমিয়ে রাখতে যুগে যুগে উত্থান ঘটেছে ধর্মীয় গুপ্তসংঘের। আগ্রাসী হস্তক্ষেপে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে যুক্তিবাদীদের। ধর্মীয় ধারনাকে অবজ্ঞা করে, পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে এ ধ্রুব সত্যটি বলার কারণে বিজ্ঞানী ব্রুনোকে জীবন দিতে হয়েছে। গ্যালিলিও ধর্ম যাজকদের ভয়ে নিরুপায় হয়ে পৃথিবী যে সূর্যকে বেষ্টন করে ঘূরে, সেই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে ভীত ছিলেন । নিজের মতামত প্রচার থেকে বিরত ছিলেন একই কারণে। বাধা এসেছে, অস্ত্রের জোরে সত্যকে দমিয়ে রাখা হয়েছে বহুবার। তবে তাতে কিন্তু বিজ্ঞান থেমে থাকেনি। জ্ঞানপিপাসু মানুষ খনি হাতড়ে বের করে এনেছে সত্যের রত্নভাণ্ডার। চিরাচরিত সেই দ্বন্দ্বকে কল্পকাহিনির পাতায় ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। আকাশ বিজয়ের ইতিহাস বহু পুরনো, মানুষের জ্ঞান তাকে আরো দূরের পথ পাড়ি দিতে উদ্বুদ্ধ করে। ডানাবিহীন মানুষ যখন বিজ্ঞানের কল্যাণে আকাশে উড়তে শিখেছে, তবে সেই বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তথাকথির সীমারেখাকেও সে ভেঙে ফেলতে চায়। ঈশ্বরকণার গতি-প্রকৃতি, বিগ ব্যাং থিওরি, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ, আপেক্ষিকতার তত্ত্ব- বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানীরা যুগান্তকারী আবিষ্কার করেই চলেছেন। কল্পবিজ্ঞানের ছলে হলেও 'প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল' তাই যথেষ্ট বাস্তবসম্মত হয়ে ধরা দেয় আমাদের চোখের সামনে। সায়েন্স ফিকশনের নামে হাস্যকর, আজগুবি তথ্য সম্বলিত আধিভৌতক উপন্যাস পড়ার দুর্ভাগ্য হয়েছে এর আগে। দুর্বোধ্য বিষয়ের উপস্থিতি টেনে ভজঘট পাকাতেও দেখেছি অনেককে। প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল সেদিক থেকে পুরোপুরি সফল। সায়েন্স ফিকশন হিসেবে স্ট্যান্ডার্ড বলা যায় নি:সন্দেহে। টেকনিকাল টার্মের ব্যবহারজনিত জটিলতা থাকলেও শেষাংশে নির্ঘণ্ট জুড়ে দেয়ায় তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। প্রতিষ্ঠিত থিওরির সহজ স্বাভাবিক ব্যাখ্যা, তার সাথে কাল্পনিকতার পূর্ণাঙ্গ মিশ্রণ- ভালো না লেগে উপায় নেই। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী সাহিত্যেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘরানা। তাই লেখার গুণগত মান অবশ্যই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। নবীন লেখক মোহাম্মদ সাইফূল ইসলাম সেক্ষেত্রে তেমন অভিযোগের সুযোগ রাখেননি। তার বর্ণণাভঙ্গি যথেষ্ট সাবলীল, শব্দচয়নে আছে স্বাতন্ত্র। ছোট্ট কলেবরের বইটিতে প্রয়োজন অনুযায়ী অনেকগুলো চরিত্রের উপস্থিতি ঘটেছে। প্রতিক্ষেত্রেই দাঁড় করানো হয়েছে শক্তিশালী ব্যাকগ্রাউন্ড। প্রবালের বাঁশির সুর যেন কাগজের জড়জগত থেকে বেরিয়ে এসে আঘাত করে কানের পর্দায়। বন্দনার জমে থাকা অভিমান, অতীতের অনুসন্ধানে উৎকণ্ঠিত হৃদয় আমাদের বিষণ্ণ করে তোলে। গণিতবিদ টয়লার এবং পদার্থবিদ ভ্লাদিমিরের খুনসুটি আমাদেরকে পক্ষপাতিত্বের দিকে ঠেলে দেয়। হাস্যমুখী ডাক্তার মিলিতাকে আপন করে নিতে ইচ্ছে হয়। এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন লাইকাকেও যেন অনুভব করা যায় মানসপটে। আলাদা আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করতে গেলে অনেক কিছু বলতে হয়। তবে সামগ্রিক বিবেচনায়, দিনশেষে চরিত্রগুলো বড় একাকী। মহাকাশের রহস্যময় জগতে সেই নি:সঙ্গতার অনুভূতি আমাদের মনে দাগ কেটে যায়। লেখকের কৃতিত্ব এখানেই- পাঠক খুব সহজেই চরিত্রগুলোকে আপন করে নিতে পারবেন; তাদের একাকীত্বে ভারী হয়ে উঠবে আপনার মন, সুখ-দু:খের অনুভূতিতে আলোড়িত হবেন আপনি নিজেও। নিছক সায়েন্স ফিকশন নয় প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল। এই ব্যাপারটা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অজানাকে অনুসন্ধানের গল্প প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল। চাক্ষুষ সীমানাকে ছাড়িয়ে ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ানোর গল্পও এটা। তবে ঠিক একইভাবে মানব-মানবীর অকৃত্রিম প্রেম এ গল্পে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। রোমাঞ্চকর থ্রিলারধর্মী আবহের সাথে চমৎকারভাবে সমন্বয় ঘটেছে মানবিক আবেগের। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে নিজেদের অহং বিসর্জন দিয়ে ভ্লাদিমির আর টয়লারের এক হয়ে যাওয়া, বৃহত্তর স্বার্থের দিকে তাকিয়ে নিজের অস্তিত্বকে তুচ্ছজ্ঞান- মানভসভ্যতা টিকেই আছে এই পরিচিত আবেগের বহি:প্রকাশকে ভিত্তি করে! অতৃপ্ত প্রেমের গল্পের উপসংহারে মনের ভেতর বেজে ওঠে অজান্তেই, "কে জানে কীসের লাগি প্রাণ করে হায় হায়!" এবার আনুষঙ্গিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা যাক: প্রথম বিষয়, গুণগত মান। একজন পাঠকের কাছে উপাত্তগত বিষয়ের পাশাপাশি বইয়ের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ চেহারাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। প্রকাশনার জগতে সদ্যোজাত হয়েও উপন্যাস প্রকাশনী এক্ষেত্রে চমৎকার পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে। বইয়ের বাঁধাই, মসৃণ ক্রিমরঙা উন্নত কাগজ, ত্রিমাত্রিক স্পট লেমিনেশনের ঝকঝকে প্রচ্ছদ; রুচিশীল পাঠকের মন কেড়ে নিতে এর চেয়ে বেশি আর কিই বা প্রয়োজন? বাড়তি উপহার হিসেবে পাওয়া দৃষ্টিনন্দন বুকমার্ক সেই ভালো লাগাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, "Communication is a Two way process" - আক্ষরিক এই সংজ্ঞাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে উপন্যাস প্রকাশনী। বই খুলতেই মূল্যকথন শিরোনামের যে লেখাটি চোখে পড়ে, তা মূলত পাঠকের মতামতকে অগ্রাধিকার দেয়ারই একটি অভিনব প্রয়াস। একইভাবে 'নতুন বইয়ের পিডিএফ বিরোধী' অনুচ্ছেদ এবং যেকোন প্রকার ত্রুটি থাকলে বই বদলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি; আলোচনা এবং দৃষ্টি আকর্ষণের এই আন্তরিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। তৃতীয়ত, ইদানীং প্রুফজনিত সমস্যার কারণে বইয়ের পাতায় প্রচুর মুদ্রণপ্রমাদের অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল বইটায় 'ছাপাখানার ভূত' বোধহয় প্রভাব খাটাতে পারেনি। বানান অথবা শব্দগত ত্রুটি প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন প্রকাশনী হয়েও এমন দৃষ্টান্তের উপস্থাপন আবারও প্রশংসার দাবীদার। #ভালো না লাগা বিষয়গুলো: ১) 'আগে দর্শনদারী, তারপর গুণবিচারী।' হ্যাঁ, বইয়ের প্রচ্ছদটি মূল গল্পের সাথে অতি সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবুও বলতে হয়, তা অনেকাংশেই শিশুতোষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কালার কম্বিনেশনের দিক থেকে আকর্ষণীয় হলেও প্লট অনুযায়ী আরো মানসম্পন্ন প্রচ্ছদ অন্তত আমার কাছে কাম্য ছিল। ২) লেখার ভঙ্গি স্বতন্ত্র এবং সুখপাঠ্য। তবে বর্ণণার ক্ষেত্রে কিছু জায়গায় ধারাবাহিকতায় অসামঞ্জস্য লেগেছে। একই সাথে ফ্ল্যাশব্ল্যাক এবং প্যারালাল স্টোরিটেলিং এ এমনটা হতে পারে। তবু আরো যত্নশীল হওয়ার সুযোগ ছিল বোধহয়। ৩) আগেও বলেছি, এই গল্পের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর আড়ালে মিশে থাকা মানবিক অনুভূতি। তবে শেষপর্যায়ে এসে, এই আবেগের অতিবহি:প্রকাশই আবার ভ্রূকুটি করতে বাধ্য করেছে(নিতান্তই ব্যক্তিগত মতামত)। ভালোবাসায় বারবার একই ধরণের বাধা, একই দুর্ভাগ্য...না থাক, এই ব্যাপারে বলতে গেলে স্পয়লার হয়ে যায়। আলোচনা, সমালোচনা সব মিলিয়ে বলতে গেলে প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল একটি উপভোগ্য সায়েন্স ফিকশন। মানসম্মত বই নিয়ে যাত্রা শুরু করায় উপন্যাস প্রকাশনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন। নতুন বইয়ের পিডিএফ সংক্রান্ত পাইরেসিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আমাদের সাহিত্য এগিয়ে যাক আলোকবর্ষ দূরে, সেই কামনায় শেষ করছি।