User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বই রিভিউ সূচনা : উপন্যাসের সূচনা ছোট্টো চঞ্চল দীপাবলীকে নিয়ে।উত্তর বাংলার চা বাগান,গাছগাছালি আর আঙরাভাসা নদীর কোল ঘেষে যার বেড়ে ওঠা।ভীষন চঞ্চল এই দীপা, তাকে ঘরে আঁটকে রাখা দায়।কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে ওর এই চঞ্চলতা বেশি দিন স্থায়ী রইলো না।ভালো ঘরে পাত্রস্থ করার সুযোগ পেয়ে ১১ বছর বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেয়া হলো দীপা কে।যে বয়সে মেয়েটির খেলার কথা,সে বয়সে দীপা কীনা সংসার করবে! কিন্তু না দীপার কপালে সংসার ও জোটে নি। বিয়ের তিন দিনের মাথায় মারা যায় ওর শারীরিক প্রতিবন্ধি স্বামী। ওর গায়ে লাগে বিধবার তকমা,যা ওকে বহুদিন যাবৎ বয়ে যেতে হয়।এত ধকলের মাঝেই দুম করে নিশ্চুপ হয়ে যায় চঞ্চল দীপা। মনের সাথে যুদ্ধ করে তীব্র মনোবল রেখে বাধা বিপত্তি খানিক এড়িয়ে চা বাগানে আবার পড়াশোনা শুরু করে ।চা বাগান থেকে স্কুল শেষে পাড়ি জমালো জলপাইগুড়ি। এর মাঝে আঘাত স্বরূপ বাবার মৃত্যু,প্রিয় মাস্টার এর মৃত্যু সহ মায়ের অবহেলা কিছুটা চৌচির করে ওকে। কিন্তু সে তো পিছু হটার মেয়ে নয়। জলপাইগুড়িতে হোস্টেলে থেকে কলেজ চালিয়ে যাচ্ছিলো ও। সময়ের পরিক্রমায় একসময় দীপা চাকরি করায় মন স্থির করে। দু- তিনবার অদল বদল ও করেছে অবশ্য। চাকরি,হোস্টেল এসব করে একাকিত্ব দিন কাটছিলো দীপার। কিন্তু এভাবে তো আর দিন যায় না।এইবার কারো প্রয়োজনবোধ মনে হলো দিপার।পরিশেষে হাজার জল্পনা কল্পনা করে দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ের পীড়িতে বসলো দীপা। কিন্তু সেখানে ও দীপার জীবন স্থায়ী হলো না।অমল এর সাথে বাক - বিতণ্ডিতা আর মতের অমিল, এছাড়াও দুজন দুই ভিন্ন গ্রহের মানুষ হওয়ায় দীপা অমলের সাথে দূরত্ব বাড়িয়ে আবার একা এক নতুন জীবন সংগ্রামে নাম লেখালো। পরিশেষে গল্প টা মূলত কুসংস্কারের বেড়াজাল ডিঙিয়ে, সমস্ত বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে একটি মেয়ের পথ চলার গল্প। যে কিনা মেয়ে হয়ে ও ছেলেদের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সমাজের চোখে দিতে পেরেছে আঙুল। আমাদের এপার বাংলা, ওপার বাংলায় গড়ে উঠুক এমন হাজারো দীপাবলী! তাদের হাতে উড়ে বেড়াক ডানা মেলা পায়রার দল! পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে,স্বাধীনতার লকলকে ঝান্ডা উড়িয়ে!
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ।
Was this review helpful to you?
or
একসময় ওপার বাংলার বিশালবপুর বইগুলোর প্রতি আমার একধরনের উন্নাসিকতা ছিলো। সমরেশ মজুমদারের 'সাতকাহন' অনেকবার হাতে নিয়ে একটু পড়ে ফেলে রেখেছি। কিন্তু একদিন বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় বইটা পড়া শুরু করি,পড়ে ফেলি অনেকখানি,দেখি বইটা আর হাত থেকে রাখতে পারছি না! হারিয়ে গেলাম সাতকাহনে,নাকি সাতসমুদ্রে! দীপাবলি যেনো আমারই প্রতিচ্ছবি! এতদিন আমি আমার আমিকেই ফেলে রেখেছিলাম! দীপাবলিকে আমি এতো বেশি ভালোবেসে ফেলি যে পরে আমি সাতকাহন একবার নয় দুবার নয় সাতবার পড়েছি!
Was this review helpful to you?
or
উপন্যাসের মূল এবং প্রধান চরিত্র দীপাবলী। যার নামের মধ্যেই নিহিত আছে অন্ধকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার আভাস।জন্মের পরপরই সে মাকে হারিয়েছে এবং যার বাবা নিখোঁজ তখন থেকেই।মাসি আর মেসমশাই এর কাছেই সে লালিত-পালিত হয়।তাদেরকেই একসময় মা বাবা বলে জানত।দশ বছর বয়সে মাত্র বাহাত্তর ঘণ্টার জন্য যার বিয়ে হয়।বিয়ের ঘটনার মধ্য দিয়েই তার জীবনের এই চরম সত্যটা প্রকাশ পায়।বিয়ের পরের দিন রাতেই একটি বিভৎস ঘটনার মধ্য দিয়ে ফুলশয্যার রাতে তার স্বামী অসুস্থ অবস্থায় মারা যায়।এবং সেই শশুড়বাড়ির একটি কাজের মহিলার সাহায্যে পালিয়ে যায় রাতের অন্ধকারে। এরপরই শুরু হয় তার জীবনের আরেকটি অধ্যায়। সে এক এক করে সব পরীক্ষায় সফলতার সাথে পাশ করে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে একটি সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেয়।সেখানেও তাকে তার সততা ও নিষ্ঠার চরমভাবে মূল্য দিতে হয়।এবং সে বাধ্য হয়ে সেই চাকরি থেকে রিজাইন নিয়ে চলে যায় তার পুরোনো বন্ধুর বাড়িতে।সেখান থেকেই সে আই এস এ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে দিল্লি গিয়ে ভাগ্যের পরীক্ষায় জয় করতে পারে।ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসের চাকরিতে যোগ দিয়ে নতুন জীবন সঙ্গী নির্বাচন করে সে।অতীতের সমস্ত খারাপ স্মৃতি মুছে দিয়ে সে নতুন জীবনের আলো দেখতে শুরু করে।যার নাম আলোক মুখার্জি । যে তার জীবনে আরেকটি আলোর বার্তা হয়ে এসেছিলো।কিন্তু সেই আলোক কি সত্যিই তার জীবনে পরিপূর্ণতা আনতে পারে?নানা ঘাত-প্রতিঘাত সামলিয়ে নিজের ভাগ্যের সাথে বিদ্রোহ করে যে একটি সুন্দর সুস্থ জীবনের স্বপ্ন দেখে সে কি শেষ পর্যন্ত সুখী হতে পারে? সুখী হওয়ার জন্য যে জীবনের চূড়ান্ত সফলতার শেকড়ে পৌঁছাতে চায় সে হয়তো একসময় তা পেরেও যায়।কিন্তু দীপাবলীরা হয়তো তার ব্যক্তিত্ব,সততা,আত্মনিষ্ঠার বলি দিয়ে সেই চূড়ান্ত সুখী হতে পারেনা। দীপাবলীরা সারাজীবন জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে সংগ্রাম করে যায় একটা সুস্থ জীবনের প্রত্যশায়। দিনশেষে এই দীপাবলীরাই সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সমাজের অসুস্থ অসাধু মানুষগুলোকে হারিয়ে দিয়ে জিতে যায়।
Was this review helpful to you?
or
দীপাবলি .. মেয়েটি কে এমন ভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে পাঠক চাইলেও তাকে অবজ্ঞা করতে পারবে না।শুধু পাঠক কেন উপন্যাসের কোন পুরুষ চরিএ পারে নি তার দৃঢ়তা কে অবজ্ঞা,অসম্মান করতে।এই বার আসি এই দিপাবলি কতটা এই ভারতীয় উপমহাদেশের মেয়েদের প্রতিচ্ছবি। উপন্যাসে যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে তা আজ হতে ৬০-৭০ বছর আগের কথা।সেই দিক থেকে দীপাবলির যে ছবি পাই তা সত্যি প্রশংসনীয়। ভাবা,যায় না ১৯৬০ সালের একটি মেয়ে, যে সমাজের রীতিনিতির কথা না ভেবে শুধু নিজের অস্তিত্বের কথা ভেবে এত সংগ্রাম করেছে। অল্প বয়সে বিয়ে তারপরে বৈধব্য মেয়েটির পুরো জীবন কে অন্য বাঁকে ঘুরিয়ে দেয়।তার এই বৈধব্য তাকে যেমন তছনছ করে দিয়েছে সাথে সাথে দিয়েছে অনেক সাহস।সে নিজের অনুপ্রেরণা আর জেদে জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়েছে। জীবনের কঠিন সময় গুলো কীভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে উতরানো যায় এই বিশেষ গুণটি দিপাবলীর মধ্যে ছিল।সমরেশ মজুমদার এমন করে দীপাবলি কে সৃষ্টি করেছেন সত্যি অবাক লাগে।অত আগের একজন মেয়ে এত আধুনিক আর এত ব্যক্তিসম্পন্ন হতে পারে,ভাবাই যায় না!!এখন২০২১সালে এসে ও আমরা দীপার মত হতে পারি নি।জানি না হতে পারবো কি না!! তারমত হতে পারা সত্যি কঠিন।
Was this review helpful to you?
or
যখন ক্লাস নাইনে পড়ি, আব্বা কিনে দিতেন শরৎচন্দ্রের উপন্যাস গুলো। এর পরে দিলেন সমরেশ মজুমদারের ‘কালবেলা’,কালপুরুষ, সাতকাহন” এইসব উপন্যাস পড়ে বুঝলাম এই বিখ্যাত লেখকরা নারীকে অনেক উঁচু আসনে বসিয়েছেন।দেখিয়েছেন কীভাবে তারা সকল প্রতিকুলতাকে কাটিয়ে উঠতে পারে। আজ থাকছে, সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত উপন্যাস “সাতকাহনের” বুক রিভিউ! নায়িকা বলবোনা, সংগ্রামী নারীর প্রতিক বলবো দীপাবলি কে। যার চাঞ্চল্যতা আর আত্ম সম্মানবোধ আমাদেরকে বুঝতে শিখিয়েছে বাস্তবতাকে কীভাবে রঙিন সুতোয় বাঁধতে হয়! দীপাবলীর মা অন্জলি, ঠাকুরমা মনোরমা, বাবা অমরনাথ, ছোট বেলার বন্ধু খোকন, বিশু তারা আর কেউ নয়—-শত বছর পরেও মনে হবে এই সমাজেরি আমরা কেউ। দীপাবলির প্রতিটা কথা, কর্মউদ্দীপনা, সকল প্রতিকুলতাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলে, কীভাবে নিজের স্বপ্নগুলোকে ছুঁয়ে দেখা যায়,,,তা আমাদের জীবনের গল্প মনে হবে। শৈশব সবসময় আনন্দের আর স্মৃতিতে পরিপূর্ণ। উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে আপনারও মনে হবে শৈশবেই আছি, সাথে থাকবে মায়ের বকুনি, শাসন আর বন্ধুদের চপলতা। তখন বাল্যবিবাহ এর প্রথা চালু ছিলো। দীপার সুন্দর শৈশব কেড়ে নিয়ে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে ফুলশয্যার পরদিনেই চলে আসা। পাঠকের মনকে নাড়া দিবে কালবৈশাখীর মতো। জীবন তো থেমে থাকেনা। বহতা নদীর মতো চলে। সকল বাধা পিছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়াতে হয়! তখন কেউ না কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়। বোঝাতে সাহায্য করে, জীবনকে দ্রুতগামী ট্রেনের মতো চালাতে হয়।দীপা পেয়েছিলো তার শিক্ষক কে। যিনি দীপাকে বুঝিয়েছিলেন মেয়েরাও পারে!”। শুরু হলো জীবন যুদ্ধের এক মহা কাব্য। তিক্ত অভিজ্ঞতাকে মনের ভিতরে রেখে সে ম্যাট্রিক পাশ করলো ফাস্ট ডিভিশনে। এরপর জলপাইগুড়ি কলেজ, তারপর কলকাতা। সেই কিশোরী হয়ে উঠলো স্বতন্ত্র, বিদ্রোহি নারী। সমাজকে তুড়ি মেরে দেখিয়ে দিলো, নারী কোন অংশে কম নয়! তার বিধবা মা,ঠাকুরমা আর শিক্ষক রমলা সেনের অনুপ্রেরণায় হয়ে উঠলো দায়িত্ববান। আকাশকে নিতে চাইলো হাতের মুঠোয়। দুর্গম পাহাড়কে অতিক্রম করা তার নেশা হয়ে গেলো। মনোরমা বলেছিলেন,মাগো, জীবন হিমালয়ের চেয়ে বড়। সেখান থেকে যেটা খুঁজে নিতে চাইবে, সেটা খুঁজবে আন্তরিকভাবে।। কারও সাথে আপোষ করবিনা। আমার বয়সে কিছু খোঁজা যায়না, কিন্তু তোর বয়সটা ঠিকঠাক।”বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাতনীকে জড়িয়ে ধরিয়েছিলেন। এই কথাগুলোর মাধ্যমে নাতনীকে দেখতে চেয়েছিলেন আপোষহীন ও সংগ্রামী নারী হিসেবে। ভাইবা বোর্ডে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো,” আপনি কি বিয়ের আগ থেকে চাকুরী করেন? হ্যাঁ! সেইজন্যই তো বিয়েটা হলো; আজীবন যৌতুক পাবে।” এতো জানেন, বোঝেন প্রতিবাদ করেননা? প্রতিবাদ করলেই, আমি সংসার হারাবো। সবাই সন্দেহ করবে। দীপাবলি কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, বৈধব্যে তুমি ছিলে রাশভারী! দীপা জবাব দিয়েছিলো, নিজেকে আড়াল করতে একটা কিছু নিয়ে থাকতে হয়।আমার পক্ষে এটা ছাড়া আর কিছুই করার মতো ছিলোনা। লেখক বাস্তবচিত্র আর নারীর শিকল ভাঙার গান দুটোকেই সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন! দুপুর পেরিয়ে গেলে অন্জলীর আলমারির হাতলে হাত দিলো দীপা! ওই দূর্ঘটনার পর থেকে রঙিন শাড়ি এড়িয়ে চলে। রঙিন শাড়ির গায়ে হাত দিতেই অদ্ভুত একটা শিরশিরানি এলো শরীরে।ব্যাপারটা এমন যে,, সে নিজেই অবাক হলো। তার চেহারা এইরকম? নিজেকে চিনতে পারছেনা এখন। বাহিরের ঘর পেরিয়ে আসতে সময় লাগলো। পা দুটো যেনো খুব ভারি হয়ে গেছে। এই যে বৈধব্য হলেই যে সাদা শাড়ি পরতে হয় তার প্রতিকী প্রতিবাদ করলো দীপাবলি। দীপাবলি তৎকালীন সমাজ নয়। আজকের অনেক সাহসী নারীর প্রতিচ্ছবি সে। তৎকালীন সমাজের অনিয়ম, ধর্মীয় গোড়ামির বিরুদ্ধে আপোষহীন এক চরিত্র। “সাতকাহন ” এক নারীর দুর্দান্ত জীবনের খুঁটিনাটির গল্প এই বইটা পড়ে চলেন, জীবনকে জানি। প্রতি পাতায় হেঁটে হেঁটে পড়ি, জীবনের আঙ্গিকতা। আসুন, আমরা নারীরা দীপাবলি হয়ে উঠি
Was this review helpful to you?
or
বইটা পড়তে পড়তে কখন যে এর ভেতর ডুবে গেছি টের পাইনি। প্রতিটা পাতায় একটা জীবনের গল্প আছে। একটা মেয়ের সংগ্রামী জীবন তার পাশাপাশি পারিবারিক ঘটনা গুলি গভীর ভাবে নাড়া দিয়েছে। সমরেশ মজুমদার এর লেখা মানুষের মনকে একদম গভীরভাবে ছুঁয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে। প্রতিটা কথায় আর লেখায় একটা বাস্তবতার চিত্র যা সচরাচর সবার লেখায় চোখে পড়ে না। সাতকাহন আসলেই অনেক সুন্দর একটি বই যা আশা করি সবার ভালো লাগবে
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটা বই।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মার্চ রিভিউ নংঃ ১১ বইয়ের নাম : সাতকাহন লেখকের নাম : সমরেশ মজুমদার ক্যাটাগরি : উপন্যাস প্রকাশনী : নবযুগ প্রকাশনী মূল্য : ৬৮০ টাকা লেখক পরিচিতিঃ সমরেশ মজুমদার বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক। তাঁর অনেক রচনাতেই উত্তরবঙ্গের কথা ঘুরে ফিরে আসে । তিনি বেশ কিছু সফল টিভি সিরিয়ালের কাহিনীকার।সমরেশ মজুমদার জন্মগ্রহন করেন বাংলা ১৩৪৮ সনের ২৬শে ফাল্গুন, ১০ই মার্চ ১৯৪২। তাঁর শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গয়েরকাটা চা বাগানে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল থেকে। তিনি বাংলায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন কোলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এবং মাষ্টার্স সম্পন্ন করেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার প্রকাশনার সাথে যুক্ত ছিলেন।অনেক অসাধারণ লেখনীর শব্দের এই রূপকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরষ্কার, ১৯৮৪ সালে সত্য আকাদেমী পুরষ্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইয়াইএমএস পুরস্কার জয় করেছেন। স্ক্রীপ্ট লেখক হিসাবে জয় করেছেন বিএফজেএ, দিশারী এবং চলচিত্র প্রসার সমিতির এওয়ার্ড। কাহিনী সংক্ষেপেঃ মূল চরিত্রে দেখানো হয়েছ দীপাবলী নামের একটি সাহসী মেয়েকে।কিন্তু দীপাবলী ছাড়াও আরো অনেকগুলো নারী চরিত্র এসেছে উপন্যাসটিতে।আমার মনে হয়েছে দীপাবলীর দাদি মনোরমা সেকালে মানুষ হয়েও অনেকের চেয়ে আধুনিক।চা-বাগানকে ঘিড়ে যাদের জীবিকা,তাদের জীবন কেমন হয় তার চমৎকার বর্ননা পাওয়া যায় বইটিতে।বর্ননাগুলো এতই নিখুদ ছিল যে,পড়ার সময় আমি চা-বাগানে ঝিরঝর করে বৃষ্টি পরার ছবি দেখতে পেয়েছি।পঞ্চাশের দশকে ভারতে এমন আনেক জায়গা ছিল যেখানে তখনও কারেন্ট পৌছায়নি।এই উপন্যাসের চা-বাগানটিও সেধরনের একটি জায়গা।দীপাবলীর উপরে উঠার প্রথম ধাপটি শুরু হয় এই চা-বাগান থেকেই।সাহস আর একাগ্রতার জোরেই অতীততে সবকিছু ভুলে শুরু করতে পেরেছিল নতুন জীবন।নিজের ভাগ্য নিজেই তৈরি করেছিল পড়াশুনার মাধ্যমে।কাছের মানুষরা লোভে ভয়ন্কর দানব হয়ে উঠেও দীপাকে থামাতে পারেনি।তখন দীপা বুঝতে পারে সে আসলে অনেকের মাঝে থেকেও ভীষন একা। পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ উপন্যাসটি মূলত নারী কেন্দ্রিক একটি উপন্যাস।সমাজের অনেক নিচু স্থান থেকে একা একজন মেয়ের উপরে উঠে আসার গল্প।পৃথিবীতে কেউ কাউকে ঠেকাতে পারেনা।যদি তার লক্ষ্য ঠিক থাকে,যদি সে কঠোর পরিশ্রমি হয়।আমাদের সমাজে একটি মেয়ের অবস্থান কোথায় তারই কিছু বাস্তব চিত্র এই উপন্যাস দেখিয়েছেন সমরেশ মজুমদার।দীপাবলীকে আমার মনে হয়েছে ইস্পাতের তৈরি কারন তার ছোট জীবনে এতকিছু ঘটার পরেও সে ভেঙ্গে পড়েনি।কাছের মানুষ বলতে কেউই ছিলোনা দীপার,তার চোখের জল মুছে দেওয়ার মত অথবা সান্তনা দেওয়ার কেউ ছিল না।কেউ হাত বাড়িয়ে দেয়নি দীপার দিকে।সুযোগ ছিলো অনেক,চাইলেই তা হাত বাড়িয়ে নিতে পারতো দীপা।কিন্তু তা সে করেনি।সাধারনের মাঝেই দীপা অসাধারন।যার জীবনে এসে মিশেছে নানা নাটকীয়তা,আর এসব নাটকীয়তাকে ছাপিয়েই যার জীবন এগিয়ে গেছে। চরিত্রটি নিজ স্বকীয়তায় পরিপুর্ন।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_নভেম্বর_২০১৮ উপন্যাসঃসাতকাহন লেখকঃসমরেশ মজুমদার প্রকাশনঃআনন্দ ধরনঃপশ্চিমবঙ্গ মুল্যঃ৯৫০ টাকা মুল চরিত্রঃদিপাবলি বন্দোপাধ্যায় উপন্যাসটি এরকম একটা মেয়ের গল্প যে কিনা এই পুরুষ শাসিত সমাজে একটু স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতে চেয়েছে। যেহেতু একটা জীবনের গল্প তাই সেই জীবন কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে বাধাবিপত্তির সম্মুখিন হতে হবে এটাই স্বাভাবিক,, আর ঐ জীবনটা যদি হয় কোন নারীর,, তাহলে তো কোন কথাই নেই,,, কতোটা ভীতিকর পরিস্হিতিরর মধ্যে দিয়ে সাহসিকতার সাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় সেই পরিস্থিতিগুলোকে,প্রতিটি মেয়ের তা সহজবোধগম্য।। আর ঠিক তার পরের প্রশ্ন,, "সাফল্য"।। আসে কি নারীদের জীবনে?? আর দীপাবলির জীবনেও কি এসেছিলো?? এই চরিত্রটা আমার সেই বয়সে অনেক মনে ধরেছিল,, কিশোর বয়সে দুরন্তপনা,,মাসির বকুনি,,মেসোর সাপোর্ট অসাধারন ছিলো,, হঠাৎ করেই বিয়ে হয়ে যায় দিপাবলির,, কিন্তু স্বামী প্রথম রাতেই মৃত্যুবরন করেন,,, তাহলে দিপার জীবন কি ওখানেই শেষ হয়ে যায়?? সে কি পেরে ওঠে ঐ সময়ের কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ থেকে বের হয়ে এসে তার স্বপ্নন পুরনের প্রত্যেক ধাপ পার করতে?? কাহিনী এখানেই থেমে থাকেনা,, উত্থান পতন শুরু হয়,, জীবনের বাকে বাকে ঘটতে থাকে কিছু ঘটনা,, পরিচিত হয় দিপাবলি নতুন নতুন মুখদের সাথে,, চিনতে শেখে জীবনের বাস্তবতা।। আর এই দিপাবলির জীবনে কখনও কি কোন পুরুষের আগমন ঘটে?? কেউ কি পারে তার মনের কোনে দুর্বলতা হয়ে জায়গা করে নিতে?? হঠাৎ করেই মারা যায় দীপার মেসোমসাই,, পরিবার থেকে তাকেই দোষি করা হয়,, এবং এক পর্যায়ে আলাদা করে দেয়া হয়.. তারপর?? কি হয় দিপাবলির,,?? জীবনযুদ্ধে সে কি জয়ি হয়?? নাকি সমাজ থেকে সে ঝরে পড়ে?? জানতে হলে পড়ে ফেলুন।। পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ বইটি পড়া শুরু করলে প্রথম দিকে তেমন ভালো লাগেনা, তবে কয়েক পৃষ্ঠা পরার পরে কাহিনি আপনাকে নিজেই টেনে নিয়ে যাবে তখন আর শেষ না করে উঠতে ইচ্ছা করবেনা। দীপাবলীর ছোটবেলা, শিক্ষাজীবন, মোকাবেলা সবকিছু আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি উপন্যাসটি কে নারী জাতির সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে ধরি।
Was this review helpful to you?
or
I have a long cherished desire to read this Novel. I will buy this book from Rokomari
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন একটা বই, বই পড়ুয়া পাঠকের ভালো লাগবে বলে বিশ্বাস করি।্সবাই পড়বেন তো...।।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা #অক্টোবর : ১০ বই : সাতকাহন লেখক : সমরেশ মজুমদার মূল্য : ৫০০টাকা ধরন : সামাজিক উপন্যাস বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে : এ উপন্যাসের কেন্দ্ৰচরিত্র সাহসী, স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত এক মেয়ে দীপাবলী, যার নামের মধ্যেই নিহিত অন্ধকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আভাস। নিয়ত সংগ্রামরতা প্ৰতিমার মতো সেই মেয়ে দীপা, আর চালচিত্রে একের-পর-এক বর্ণাঢ্য ছবি। উত্তরবাংলার চা-বাগান, গাছগাছালি আর আংরাভাসা নদী দিয়ে সে-চালচিত্রের সূচনা। ক্রমান্বয়ে ফুটে উঠেছে পঞ্চাশ দশকের কলকাতা ও শহরতলি, কো-এডুকেশন কলেজ, ছাত্ৰ-আন্দোলন ও রাজনৈতিক পটভূমি, সর্বভারতীয় কর্মজীবনের পরিবেশ ও প্রতিকূলতার জীবন্ত চিত্রাবলি। স্বাধীনতা-উত্তর বাঙালি জীবনে স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছনোর প্রয়াসে মেয়েদের সাধ, সংকল্প ও সংগ্রামের এক জীবন্ত, ধারাবাহিক ছবি ফুটিয়ে তোলার জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে সমরেশ মজুমদারের সুদীর্ঘ, সুকল্পিত, সুবিন্যস্ত এই উপন্যাস, ‘সাতকাহন’। পাঠ প্রতিক্রিয়া : সমরেশ মজুমদার দীপাবলীর সাথে আমার প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন এক সন্ধ্যে নামা মুখে। আকাশে ভয়ঙ্কর মেঘ করেছে তখন। দীপা দাঁড়িয়ে আছে কদম গাছের নিচে। মনে তার ভয়,সন্ধ্যে হয়ে এল, এখনো বাড়ি ফিরতে পারেনি। সেই কয়েকটা লাইন দিয়েই আমার দীপার সাথে দেখা। তারপর কখন যে দীপার সাথে মিশে গেছি বুঝে উঠতেই পারিনি। সেই ডুয়ার্সের চা বাগান, গাছগাছালি, বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট নদীটার উপর রাতের জোনাকীর খেলা, চাঁপার ঘ্রাণ আর খুব ভোরে শিউলি কুড়ানো দীপার গল্প যেন প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা প্রতিটি মেয়ের গল্প। মায়ের চোখরাঙ্গানি, পিটুনি, ঠাকুরমার নিষেধ উপেক্ষা করে বার বার খোলা মাঠে ছুটে যাওয়া, পথ-ঘাট পেরিয়ে - কখনো ফুল কুড়োতে, তো কখনো বড়শী নিয়ে বন্ধুদের সাথে মাছ ধরতে যাওয়া। অদ্ভুত প্রাণ শক্তিতে ভরপুর এক মেয়ে সে। তার বন্ধু খোকন আর বিশু ! কোন মেয়ে বন্ধু নেই তার। তাদের সাথে হৈচৈ করতে দেখলে মা-ঠাকুরমা রেগে ওঠেন। কেন মা-ঠাকুরমার বিপত্তি তার মেয়ে হয়ে বাইরে যাওয়ায়, তা দীপা বোঝে না। খোকন, বিশুরা ফড়িং বা মাছ ধরতে যেতে পারলে সে পারবে না কেন? ওরা হাঁটুর উপরে প্যান্ট পরলে কোন দোষ নেই - অথচ দেয়াল টপকে পার হতে, গাছে উঠতে বা কোছা ভরে ফুল কুড়োতে তার যদি একটু হাঁটু বের হয়েই যায়, তাতেই বা তার কি দোষ? এরকম নানা প্রশ্ন তাকে তাড়া করে বেড়ায় প্রতিনিয়ত। তারপর সেই চঞ্চল মেয়েটির জীবনে ঘটে যায় এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। দুঃস্বপ্নের মত দীপার জীবনে সেই তের বছরেই জড়িয়ে যায় এক নিষ্ঠুর অতীত। শুধুমাত্র উত্তরাধিকারের জন্যে এক ধনী পরিবারের রোগাক্রান্ত, মৃতপ্রায় ছেলের সাথে তার বিয়ে দেয়া হয়। ফুলশয্যার রাতেই মারা যায় সেই ছেলেটি। বিয়ের সাথে সাথে সে এটাও জানতে পারে, যাদের এতদিন বাবা-মা বলে জেনে এসেছে, তারা তার আসল বাবা মা নয়। জীবনের আরো কিছু ভয়ানক অভিজ্ঞতা বুকে নিয়ে সেদিন পালিয়ে বাঁচে দীপাবলি। কিন্তু আসলেই কি বেঁচেছিল? এই অপরিনামদর্শী জীবন তার ভাগ্যে রেখে যায় বিধবার কালো দাগ। তবুও তীব্র প্রাণ শক্তির জোরে জীবনের এই নির্মম অধ্যায় মুছে ফেলে সে শুরু করতে চেয়েছে নতুন জীবন। পুঁজি ছিল প্রতিকূলতায় হার না মানা তার দৃঢ় মনোবল। কঠোর পরিশ্রমে গড়ে নিতে চেয়েছে নিজের ভাগ্য। সাথে তার স্রোতের মত গতিশীল মনে ঝড় তুলত নানা প্রশ্ন, যার উওর সে পায়নি কারো কাছে। বিধবারা পেয়াজ, ডিম, মাছ-মাংস খেলে কি হয়? কেন মেয়েদের পদে পদে কঠোর অনুশাসনের মধ্যে না চললে নরকবাসী হতে হবে? এই কঠিন নিয়মগুলোর বিরুদ্ধে এভাবেই তার ভেতরে ফুটে ওঠে প্রতিবাদী স্বাধীনচেতা এক রূপ। দীপাবলী এমন এক চরিত্রের নাম, যাকে ভাগ্যদেব সুপ্রসন্ন হয়ে কখনো নিরবিচ্ছিন্নভাবে কিছু দেয়নি। বেঁচে থাকার জন্য, সমাজে নিজের জায়গা করে নেয়ার জন্য যাকে প্রতিটি মুহূর্ত লড়ে যেতে হয়েছে - কখনো পারিপার্শ্বিকতার সাথে তো কখনো নিজের সাথে। কঠোর পরিশ্রমে অর্জন করে নিয়েছে আয়করের চাকুরী, সম্মান, প্রতিষ্ঠা, বেছে নিয়েছে জীবনসঙ্গী। তারপরেও তার লড়াই থামেনি। জীবনের সর্বোচ্চ সম্মানের পর আত্মমর্যাদা ও আদর্শের লড়াই এ নামতে হয় তাকে। কাছের মানুষের আত্নকেন্দ্রিক লোভী চেহারাগুলো তাকে ক্ষতবিক্ষত করলেও নিজের নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে সে থেকেছে অনড়। তবুও কি পেয়েছে সে জীবনের শেষে? অনেক সংগ্রাম,অনেক ব্যর্থতা, অনেক না পাওয়া কষ্টানুভূতির পরও দীপাবলি প্রতিটি মেয়ের অনুপ্রেরণা। আর আমার এ পর্যন্ত পড়া সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র
Was this review helpful to you?
or
প্রকৃতি শ্রেণীকাঠামো বা ছেলে-মেয়ের মধ্যে তার অকৃত্রিম রং-রূপ-রস ঢেলে দিতে বাছবিচার করে না। আমাদের দীপাবলীর বন্ধু খোকন আর বিশু ছেলে, তাতে কি! ওদের কাছেও তো আঙরাভাসা নদীটা নীল আর চা বাগানগুলো সবুজ, একই রঙ একই গন্ধ। তাহলে কেন মা-ঠাকুমার যত বিপত্তি তার মেয়ে হয়ে বাইরে যাওয়ায়। এরকম চারপাশের প্রকৃতির প্রতি একটি শিশুর সরল-সহজাত আকর্ষণ, আর পদে পদে বাধা পেয়ে অন্ধকারে নিত্য আলোর শিখা খুঁজতে থাকার মতই তার ছোট মনে দানা বেঁধে উঠতে থাকা মেয়েদের উপর সমাজ আরোপিত নানা বিধিনিষেধের প্রতি প্রশ্ন। কেন মেয়েদের পদে পদে কঠোর অনুশাসনের মধ্যে না চললে ভগবানের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে? ধর্মের এই একচোখা নিয়মগুলোর বিরুদ্ধে এভাবেই তার ভেতরে ফুটে ওঠে প্রতিবাদী স্বাধীনচেতা এক রূপ।দীপাবলী এমন এক চরিত্রের নাম, যাকে ভাগ্যদেব সুপ্রসন্ন হয়ে কখনো নিরবিচ্ছিন্নভাবে কিছু দেয়নি। বেঁচে থাকার জন্য, সমাজে নিজের জায়গা করে নেয়ার জন্য যাকে প্রতিটি মুহূর্ত লড়ে যেতে হয়েছে - কখনো পারিপার্শ্বিকতার সাথে তো কখনো নিজের সাথে। কঠোর পরিশ্রমে অর্জন করে নিয়েছে আয়করের চাকুরী, সম্মান, প্রতিষ্ঠা, বেছে নিয়েছে জীবনসঙ্গী। তারপরেও তার লড়াই থেমে থাকেনি। লেখক সমরেশ মজুমদার তার জনপ্রিয় উপন্যাস 'সাতকাহন' এর দীপাবলী-কে এঁকেছেন আপোষহীন সংগ্রামী এক নারী চরিত্র হিসেবে। কেন দীপাবলীর মত এমন একটি চরিত্রটি তার মনে এল এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন - "আমি এগারো বছর বয়সের একটি বিধবা মেয়ে দেখেছিলাম। সে আমাদের চা বাগানের। তাকে দেখে আমার মনে হয়েছিল এত সুন্দর, কোমল, নিষ্পাপ একটি মেয়ে কেন এভাবে হারিয়ে যাবে? শেষ হয়ে যাবে? সাতকাহন লেখার সময় সেই মেয়েটিকেই আমি আমার মতো করে রূপ দিয়েছি। তাকে সমাজ, সংসারের বেড়াজালের ভেতর দিয়ে আমি পরিপূর্ণ মানুষ করে তুলতে চেয়েছি।" দীপাবলীর একা থেকে যাওয়াটা অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি, এব্যাপারেও লেখকের বক্তব্য স্পষ্ট - "বাংলাদেশের মেয়েরা যে আত্নমর্যাদাসম্পন্ন এটা আমাদের শ্রদ্ধার সঙ্গেই মনে রাখা দরকার।"লেখক পরিচিতি/সমরেশ মজুমদার শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা বাগানে।সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস “দৌড়” ছাপা হয়েছিলো দেশ পত্রিকায় ১৯৭৬ সালে। তিনি শুধু তাঁর লেখনী গল্প বা উপন্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী থেকে কিশোর উপন্যাস লেখনীতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। সমরেশ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য উপন্যাস গুলির মধ্যে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অনেক অসাধারণ লেখনীর শব্দের এই রূপকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার অর্জন করেছেন।
Was this review helpful to you?
or
ধূমায়িত এককাপ চায়ের উষ্ণতায় আসুন গল্প করি। গল্পের বিষয় বস্তু হোক সমরেশ মজুমদার এর সাতকাহন। সাতকাহন বইটির নাম শুনলেই বাঙ্গালী পাঠকদের মনে চলে আসে উপন্যাসের মূল চরিত্র দীপাবলী। সাতকাহন পড়ুক কিংবা না পড়ুক দীপাবলীকে চিনেনা এমন বাঙ্গালী পাঠক খুব কমই আছে। দীপাবলী সমরেশ মজুমদার এর কালজয়ী সৃষ্টি। এই সাতকাহন বইটি নিয়ে বাঙ্গালী জাতির জীবনে আবেগের অন্ত নেই। আমার ব্যাক্তিজীবনেও সাতকাহন অনন্য। ছোটবেলায় যখন ক্লাস সিক্স কি সেভেন এ পড়তাম তখন নীলক্ষেত এ ফুটপাতে সাতকাহন বইটার প্রচ্ছদ আমাকে খুব টানতো। তখন ভাবতাম এটা বোধ হয় বড়দের বই, খুব বড়দের বই, যখন বড় হবো এটা আমি পড়বোই। তারপর স্কুল কলেজ পেরিয়ে আজ পর্যন্ত কত বই পড়া হলো কত থৃলার পড়া হলো কত রিভিউই করা হলো কিন্তু সাতকাহনটা আর হাতে নেয়া হলো না। গ্রুপে অনেক রিভিউ দেখেছি অনেক পোস্ট দেখেছি কিন্তু মোটা বই বলে কিনেও পড়া হয়নি। তারপর এবার সত্যি সত্যি পড়া শুরু করে দিলাম এবং শেষ করে ভাবছি কেন শেষ হলো। যাই হোক গল্পের কথায় আসি। সাতকাহন এর মূল চরিত্র দীপাবলী। এই দীপাবলীর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়েই রচিত বইটি। আঙ্গরভাসা নদীর তীরে চা বাগানের এক কর্মচারী অমরনাথের মেয়ে দীপাবলী। কিন্তু অমরনাথ আর তার স্ত্রী দীপার আসল মা বাবা নয়। তবুও দীপার চোখে তারাই তার পিতামাতা। ছোট বেলা থেকেই দীপা একটু ভিন্ন। ছেলে বন্ধুদের সাথে মেশা, নৌকা চরা, কালীপূজা দেখতে যাওয়া অর্থাৎ উড়নচন্ডী স্বভাবের। বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে দীপার বিয়ে হয়ে যায় এগারো বছর বয়সে। তারপর একদিনের সংসার। হুম একদিনের সংসার ভাবতে অবাক লাগে তাই না, স্বামীর ছোঁয়া পেলোনা, সংসারের কাজকর্ম পেলোনা সে কিনা বিধবা হয়ে গেলো। বিয়ের রাতেই সে বিধবা হয় দীপা। আর এই বৈধবত্যার টাইটেল দীপার লেগে থাকে সারাটি জীবন। দীপা চলে আসে বাবার বাড়ি। রীতিমতো কিছুদিন বিধবা পোশাক পরলেও নিজেকে কখনো বিধবা ভাবেনি। কিন্তু সমাজ তো তার পদবী নিয়েই ব্যাস্ত। আর দীপার জীবনের চলার পথ এখান থেকেই শুরু। পড়ালেখা দীপা চালিয়ে গেলো। স্কুল ছেরে কলেজ, বাড়ি ছেরে হোস্টেল। সেই হোস্টেল জীবনে দীপবলীর অনেক ঘটনা। ছেলে বন্ধু, সমাজের সাথে চলা, নাটক থিয়েটার করা, একা ঘর ভারা নেয়া,টিউশন করা, প্রচলিত নারীদের বিধি নিষেধ, সব উপেক্ষা করে দীপাবলী চলছে জীবন যুদ্ধে। কিন্তু জীবনটা এতোটা সহজ নয় বিশেষ কোন মেয়ের জন্য। আত্মমর্যাদাশীল চরিত্র হিসাবে আমরা দীপাকে বার বার লক্ষ করি, যখন দীপার বাবা তার পড়ালেখার খরচ তার শশুড় বাড়ি থেকে আনতো তখন দীপার প্রতিবাদ কিংবা অর্জুন নায়েক এর মুখের উপর জবাবদেয়ার জন্য চাকুরী ছেড়ে দেয়া ইত্যাদি বিষয় বস্তুর মাঝে আমরা আত্মমর্যাদাশীল দীপাকেই পাই। দীপা ভাঙ্গবে না, অন্যায় এর সাথে আপোষ নয়, কিংবা কেঁদে ভেসে যাওয়াও নয়, প্রতিবাদ এবং শক্ত হাতে লড়াই করাই ছিল দীপার আদর্শ। দীপাবলী লেখা পড়া শেষে চাকুরী পায়, সবচে বড় সরকারী চাকুরীটাই নিজের করে নেয় কিন্তু ভগবান সুখটুকু দীপাবলীর ধম্মে দেয়নি। দীপাবলীর এই চলার পথে তার জীবনে অনেক পুরুষ আসে কিন্তু কারো সাথে শেষ পর্যন্ত আর থাকা হয়না, কেউ হয়না তার জীবন যুদ্ধের সঙ্গী। একজন এসেছিলো বিয়েও হয়েছিল,ঘর হয় সংসারও হয় কিন্তু মনের মানুষ হয় না। দীপাবলীর জীবনে যারা ছিল বন্ধুবান্ধব স্বামী বাবা মা কিংবা মাস্টার কেউ, কেউই শেষ পর্যন্ত দীপাবলীর সাথে ছিল না। সময়ের সাথে সাথে ঘটনার অন্তরালে একেক করে দীপাবলী একা হয়ে যায়। গল্প শেষ আমরা একজনকে পাই যে কিনা দীপাবলীর সাথে বাকি জীবন কাটিয়ে দিবে এ সেই মানুষ যে দীপার জীবনে শুরু থেকেই ছিল। এই মানুষটিকে খুঁজে বের করা পাঠকের দায়িত্ব। সমরেশ মজুমদার এর লেখা আর বর্ননা ভঙ্গী এতো সুন্দর যা বলার মতো ভাষা রাখেনা। দীপাবলীর জীবনের প্রতিটা ঘটনা প্রতিটা অধ্যায় এতো সুন্দর করে সাজানো যে পাঠক হিসাবে মুগ্ধ। দীপাবলী গল্প ছাড়িয়ে যেন বাস্তব জীবনে চলে এসেছে। প্রায় সারে চারমাস অন্যান্য বই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কর্মব্যস্ততা সব কিছু ছাড়িয়ে দীপাকে নিয়ে আমার অল্প অল্প সময় ভালোই কাটছিলো। কিন্তু যার শুরু আছে তার শেষও আছে। শেষ করে বার বার মনে হচ্ছে কেন শেষ হলো। সত্যি বলছি সাতকাহন সমরেশ মজুমদারের একটি মাস্টারপিস। বইটি পড়ার আগে বার বার ভাবতাম সাতকাহন মেয়েলী বই কিংবা মেয়েদের অনেক বিষয়াবলি যার জন্য আমি বয়সে অনেক ছোট বার বার দেখেছি বইটার সাপোর্ট শুধু মেয়েরাই দেয়। কিন্তু বইটি পড়ার পর ভাবছি, একটা মেয়ের জীবন কতটা সংগ্রামী, একটা পুরুষ শাষিত সমাজে একটা মেয়েকে কতটা কঠোরতার মধ্যদিয়ে যেতে হয়, কতটা উত্থান পতনের মধ্যদিয়ে আগে বাড়তে হয়। আর আমরা পুরুষেরা তাদের প্রতিযোগী বানিয়ে ফেলি,সমাজ সংস্কার এর মাধ্যমে আমরা তাদের পিছিয়ে রাখি। কিন্তু না দীপাবলীরা হয়ত আমাদেরই বোন কিংবা স্ত্রী কিংবা মাতৃজাত। দীপাবলীদের প্রতিযোগী হিসাবে নয় সহযোগী হিসাবে তাদের সাথে চলাই হোক সবার প্রত্যয়। সর্বাপরি ধন্যবাদ এতোক্ষন ধৈর্য ধরে রিভিউটি পড়ার জন্য। ফিরে দেখা :: বইয়ের নাম : সাতকাহন লেখক : সমরেশ মজুমদার প্রকাশনা : আনন্দ প্রকাশনী কলকাতা মূল্য :৮০০ টাকা (ভারতীয় রুপী) পৃষ্টা সংখ্যা :৭৩০ পেজ।
Was this review helpful to you?
or
Original Indian edition. Highly recommended.
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন একটা বই, বই পড়ুয়া পাঠকের ভালো লাগবে বলে বিশ্বাস করি।