User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
What A book
Was this review helpful to you?
or
আমার পড়া প্রথম কালজয়ী উপন্যাসএটি। খুব চমৎকার এবং হৃদয় স্পর্শী উপন্যাস এটি। এক কথায় হৃদয় স্পর্শ করে গেছে।❤ বেশী ভালো লেগেছে অনি এবং লতার (অনিমেষ এবং মাধবীলতা) প্রেম। কখনো ভালোবাসি না বলে কীভাবে দুজন দুজনকে ভালোবাসে, মাধুবীলতা সবসময় তার পাশে থাকে,তার জন্য বাড়ি ছেরে চলে আসে,তাদের ভালোবাসায় পরিনিত ছোট্ট শিশুটিকে অনিমেষের পরিচয়ে বড় করে তুলে। একটু কষ্ট হয় যখন অনিমেষ একের পর এক রাজনীতিতে জড়িয়ে পরে নিজের অনিচ্ছায়। এবং তাকে যখন পুলিশআটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের বদলে ছেরে দেবার কথা বলে সে রাজি হয় না এবং তার কারনে মাধবীলতার প্রেগ্নেন্সি সহ অত্যাচার সহ্য করতে হয়। উপন্যাসটিতে অনি এবং লতা ছাড়াও আমার প্রিয় চরিত্র সমুহ হচ্ছে নীলা,সুভাষ দা, সরিৎশেখর ?। এককথায় ভালোলাগারমতোএকটিউপন্যাস এটি। সত্যি বলতে আমি অনিমেষ এবং মাধবীলতার প্রেমের মোহতে পরে গেছি। দোয়া করি জীবন চলার পথে এমন কাওকে জেন পাই।
Was this review helpful to you?
or
??
Was this review helpful to you?
or
সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস 'উত্তরাধিকারের' পরবর্তী পর্ব 'কালবেলা'। উত্তরাধিকারে যেখানে গিয়ে উপন্যাসটা শেষ হয় তারপর থেকে কালবেলা শুরু। উপন্যাসের শুরুতেই দেখা যায় কলেজ জীবন শেষ করে অনিমেষ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কলকাতা পড়াশোনা করতে আসে অনিমেষ।এমএ পড়ার সময় জড়িয়ে পড়ে রাজনীতিতে। এক পর্যায়ে মাধবীলতা নামের একটি মেয়ে প্রেমের বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে সে। মেয়েটি অনিমেষের যাবতীয় কাজে অকুন্ঠ সমর্থন করে যায়। অনিমেষ যখন খেয়াল করে তার দল আদর্শ লাইনচ্যুত তখন সে বাম রাজনীতি ছেড়ে বিপ্লবের পথে অস্ত্র হাতে অগ্রসর হয়। এখানেও মাধবীলতা তাকে সমর্থন করে যায়। বিদ্রোহের কাজের শুরুতে তাকে কলকাতা ছাড়তে হয়। বিদ্রোহের কাজের এক পর্যারে বারভূমে আসে একটি গোপন বৈঠক করতে। গোপন বৈঠকের রাতটা অনিমেষ মাধবীলতার সাথে কাটায়। সেখান থেকে ফিরে বিদ্রোহের এক পর্যায়ে পুলিশ কতৃক গ্রেফতার হয় এবং জেলে পঙ্গুত্ব বরণ করে। জেলে থাকার সময়টাতে সে সংবাদ পায় বীরভূমের রাতটার ফসল মাধবীলতা দুনিয়াতে আনয়ন করছে। পঙ্গুত্ব টা অনিমেষকে হাঁপিয়ে তোলে। সে পালিয়ে যেতে চায়। সে কি চাইলেই যেতে পারে! মাধবীলতার কাছে নিজেকে সমর্পন করে দেয় সে! নিজের সর্বস্ব দিয়ে এবং দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির বলে মাধবীলতা শত প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের মাথা উঁচু রাখে, নিজের ভালোবাসাকে সমুন্নত রাখে। ভালোবাসার মাঝে যেন বিপ্লবের আরেক নাম হয়ে উঠে এই মাধবীলতা।
Was this review helpful to you?
or
সমরেশের লেখায়,অন্যরকম একটা ভালো লাগার সৃষ্টি হয়। সহজ সরল লেখনীতে হারিয়ে যেতে বাধ্য হই। কালবেলা সমরেশ মজুমদারের অনবদ্য এক সৃষ্টি। অন্যরকম এক গল্পে হারিয়ে যেতে চাইলে এ বইয়ের বিকল্প নেই!!!
Was this review helpful to you?
or
বইঃ কালবেলা লেখকঃ সমরেশ মজুমদার কালবেলা একটা সিরিজ ধরণের বইয়ের অংশ। কালবেলা সিরিজের ২য় বই। এই সিরিজের ১ম বইঃ উত্তরাধিকার । সিরিজের শেষ বইঃ কালপুরুষ কালবেলা উপন্যাসের নায়ক অনিমেষ। যদিও উপন্যাসটা নায়ক-নায়িকার নির্ভর না। নায়িকার নাম মাধবীলতা। উপন্যাসটা শুরু হয় অনিমেষ যৌবনবেলা থেকে শুরু হয়। ছোটবেলার বর্ণনা “উত্তরাধিকার” উপন্যাসে বলা হয়েছে। রাজনীতি শুরুঃ অনিমেষ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বর্ণনা দিয়ে শুরু হয়। কলেজ জীবনে অনিমেষ রাজনীতি করে নাই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে রাজনীতি শুরু করে সুবাস বোসের হাত দিয়ে। প্রথমে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ভালভাবেই রাজনৈতিক কাজকর্ম করে। কিন্তু মাঝে মধ্যে খামখেয়ালপনা ও অতিরিক্ত উৎসুক হবার কারনে বড় কোন পোস্টে যাইতে পারে নাই। ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির শেষের দিকে অনিমেষ এর ছোট চাচা কল্যাণে বড় পোস্টে যাইতে পারত। কিন্ত সেই সময় অনিমেষ ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়ে দেয়। কারণ তার মনে হচ্ছিল ছাত্র ইউনিয়ন শুধু স্বার্থের কারণে রাজনীতি করে। ছোটবেলায় কংগ্রেস করত, সেটাও একই কারনে ছেড়ে দিছে। অনিমেষ সবসময় দেশ ও জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করতে চাইছিল । মাধবীলতাঃ ছাত্র ইউনিয়নের এক অন্দোলনের সময় মাধবীলতার সাথে অনিমেষের পরিচয় হয়। আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে প্রেমভালবাসা হয়। একজন আরেকজনকে না দেখে থাকতে পারত না। মাধবীলতা রাজনীতি করত না, প্রথমদিকে অনিমেষকে বাধা দিবার চেষ্টা করছে। কিন্তু পরবর্তীতে আর বাঁধা দায় নাই। দুই জনের রাস্তা আলাদা হয়ে গেছিল। কেউ কারও ব্যাপারে নাক গলাত না। মাধবীলতা শুধু নিঃস্বার্থভাবে অনিমেষকে ভালবেসেছিল। এই নিঃস্বার্থ ভালবাসার কারনে তাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। নিজের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য হয়ছে। বাবামায়ের সাথে সম্পর্ক চিরতরে শেষ হয় গেছে। নিজের পড়াশোনা কথা না ভেবে স্কুলে চাকুরী করতে হয়েছে। অনিমেষর অবৈধ সন্তানকেও পরম আদরে মানুষ করেছে। এই জন্য সমাজ থেকে অনেক কথা, অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। চাকুরী হারিছে, সামাজিক মর্যাদা হারিয়েছে। তারপরও সে দমে যায় নাই। অনিমেষকে প্রাণ দিয়ে ভালবেসেছিল। নিয়িমিত অনিমেষের সাথে দেখা করতে জেলে যাইত। অনিমেষ যখন সবকিছু হারিয়ে, পুঙ্গ হয়ে জেল থেকে বের হল, তখনও তাকে পরম আদরে নিজ বাসায় নিয়ে আসে মাধবীলতা। নিজ ছেলেকে বাবার সাথে পরিচয় করে দেয় ও তারহাতে তুলে দেয়, যেন নিজইচ্ছা মত অনিমেষ ছেলেকে গড়িয়ে তুলতে পারে। নকশাল আন্দোলনঃ অনিমেষ যখন বুঝতে পারল ছাত্র ইউনিয়ন দিয়ে জনগণের জন্য কাজ করা যাবে না। তখন সহিংস আন্দোলনে জড়িয়ে পরল সেটাও সুবাসদার মাধ্যমেই। কিন্তু এর বিপক্ষে গেল পুলিশ, ছাত্র ইউনিয়ন, তৎকালীন কংগ্রেস সরকার। তাই তাদের আড়ালে থেকে কাজ করতে হত। যখন নকশাল আন্দোলন জনপ্রিয়তা পেল তখন শুরু হল পুলিশের অত্যাচার। নকশাল আন্দোলনও বিভিন্ন বিভক্তি শুরু হয়ে যায়। একদল অন্যদলকে সহ্য করতে পারে না। নকশাল আন্দোলনের জন্য অনিমেষকে জেলে যেতে হয়। তার দাদুর শেষকৃত্য পর্যন্ত ভালমত করতে পারে নাই। বাবা-ছোটমা এর সাথে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। তার বাবা সব সময় চাইতেন অনিমেষ রাজনীতিতে না জড়াক। জেলে অনিমেষকের কাছ থেকে নকশাল আন্দোলনের এক বড় নেতা ঠিকানা জানতে চাওয়া হয়। অনিমেষ মুখ খুলে নাই। একবার মাধবীলতাকে দিয়ে পুলিশ চেষ্টা করছে , কিন্তু মাধবীলতার দৃঢ়তায় সেটাও ব্যার্থ হয়। অনিমেষকে অকথ্য অত্যাচার করা হয়। তার দেহের নিম্নাংশ অকেজো করে দেয় পুলিশ।
Was this review helpful to you?
or
very nice
Was this review helpful to you?
or
বই পড়া মানে হচ্ছে নতুন কিছু জানা
Was this review helpful to you?
or
মফস্বলের ছেলে অনিমেষ মিত্র। জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতা আসে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য। কলকাতায় পা রাখতেই পরে বিপদের মুখে। কলকাতায় তখন কারফিউ চলে। পুলিশ তাকে সন্দেহ করে গুলি ছোড়ে। থাইয়ের নিচে হাটুর উপরের অংশে গুলি লেগে হাসপাতালে পড়ে থাকে তিনমাস। সুস্থ হতে হতে একটা শিক্ষাবছর নষ্ট হয়ে যায় অনিমেষের। রাজনীতি সম্পর্কে বুঝ হবার পর থেকেই সে বামপন্থী মনোভাব ধারন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে জড়িয়ে পরে বামপন্থী কমিউনিস্ট পার্টির সাথে। পুলিশের গুলিতে হওয়া ক্ষতচিহ্নটাকে 'সাধারন মানুষের উপর পুলিশি নির্যাতনের' প্রকৃত হিসেবে ব্যবহার করে ছাত্র ইউনিয়নে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। কিন্তু সে যেই আদর্শ নিয়ে বামপন্থী কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেয় কিছুদিন পরে বুঝতে পারে সবই ফাকি। সবাই ক্ষমতার গদিটাকে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন আদর্শের দোহাই দেয়। ধীরেধীরে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তার সহপাঠিনী মাধবিলতার সাথে। মাধবিলতার ভাষ্য মতে লতার মতই অনিমেষের জীবনে জড়িয়ে পড়ে মাধবিলতা। অনিমেষ চায় সমাজ ব্যাবস্থার পরিবর্তন। কিন্তু এই পরিবর্তন কিভাবে আসবে! রাজনীতি করে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয় সেটা খুব ভালভাবে বুঝতে পেরেছিলো অনিমেষ। যার হাত ধরে বামপন্থী কমিউনিস্ট পার্টিতে এসেছিলো; সেই সুভাসদাকে যখন পার্টি থেকে বের করে দেওয়া হলো তখন সুভাসদার পথ অনুসরণ করে বিপ্লবী হলো অনিমেষ। আর মাধবিলতা?? জানতে হলে যারা পড়েন নাই তারা ঝটপট পড়ে ফেলুন। পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ সমরেশ মজুমদারের পড়ে দ্বিতীয় বই এটা। প্রথম বই 'আট কুঠুরি নয় দরজা' পড়ার সময়ও যেমন হয়েছে; শুরুতে বিরক্ত লাগছিলো। শেষে এসে খুব ভাল লাগলো। বিরক্ত লাগার কারন ছিলো স্বয়ং অনিমেষ। রাজনীতি সম্পর্কে তার ভ্রান্ত ধারনা দেখে বিরক্ত হইছি। সে যখন কলকাতায় আসে সে ছিলো মানসিক দিক থেকে একটি শিশু। গল্পের মধ্যেই ধীরেধীরে তার মানসিকতা সাবালক হলো। সেখান থেকে রাজনীতির বাস্তবতা বুঝতে শিখলো। পুরো গল্প জুড়ে রাজনীতি ও বিপ্লব থাকলেও পাঠকের মনে অনেক বড় জায়গা জুড়ে থাকবে মাধবিলতা। গল্পের শেষে সবাই যখন হারিয়ে গেলো, মাধবিলতায় পূর্ণতা পেলো অনিমেষ। ভালবাসার জন্য মাধবিলতার ত্যাগ বাকি সবকিছুকে ম্লান করে দেয়। পুরো গল্পটা এক নিঃশ্বাসে শেষ করেছি। ফেসবুকেও খুব কম ছিলাম। সবশেষে মনে হলো "যাহ! বইটা শেষ হয়ে গেলো!!"
Was this review helpful to you?
or
কালবেলা ডায়েরী মৌষলকাল কেনা হয়েছিল। বিশ পাতা পড়াও হল। কিন্তু আগে থেকে অনেকের রিভিউ পড়া থাকায়-বেশ খটকা লাগছিল। সবাই বলছে কোথায় মৌষলকাল আর কোথায় কালবেলা। সেই দম সেই পানি আর নেই। কিন্তু দুক্ষের বিষয় আমার আবার কালবেলা পড়া নেই। কালপুরুষ পড়া আছে। যদিও কথাটি জানাতে লজ্জা লাগছে। কিন্তু তাই পড়া শুরু করলাম। পড়া শুরু করার পর প্রথম দিকে মনে হচ্ছিল হয়তো বইটি পড়ে রিভিউ তে বলা যাবে যদি আমি বইটি কলেজ লাইফে পেতাম তাহলে আর ন্যাতা হয়ে পড়ে থাকতাম না। একটু না বেশ একটু রাজনীতি করতাম। কিন্তু যেতে যেতে আমরা যেভাবে রাজনীতির অসারশুন্যতা প্রমাণ করি তেমন ভাবে তা খুলতে থাকলো। আসলো প্রেম পর্যায়। সব ভুলে গিয়ে আপাতত মাধবীলতার প্রেম। কি জানি ভাই বই আর সিনেমাতেই এক দেখাতেই প্রেম হয়। মেট্রিক বা ইন্টার যুগের প্রেম। আজকাল অনার্স মাস্টার্সে মনে হয় রীতিমত পিতামাতার ধন সম্পত্তির ভাইভা দিয়ে প্রেম হয়ে থাকে শুনেছি। বলছিলাম কালবেলার কথা। এককথায় এই সিরিজের সবচেয়ে আকর্ষনীয় জ্বালাময়ী বই। ভারতের ইতিহাসের একটা অন্যতম অংশ এই নকশাল আন্দোলন। যেই লেখকই সেই সময়কার উপন্যাস বা গল্প লিখেন না কেন-তার কিছু না কিছু অংশে এই নকশাল আন্দোলন থাকবেই। বস্তুত কিছু মেধাবী তরুন রা দেশকে নতুন ভাবে গড়বে বলে, নতুন নীতি আনবে বলে যেভাবে পুলিশ দের হত্যা করেছিল, বিদ্যাসাগরের মুর্তি ভেঙ্গেছিল-তা সেই সময়ে ভাবিত করেছিল অবশ্যই। অনিমেষ সম্পর্কে কিছু না বললেই নয়। বলতে ইচ্ছা করে আপনারা রাজনীতি করেন কিন্তু বেশি বুঝতে যাবেন না। বেশি বুঝতে গেলে দুইদিন পরে রাজনীতির অসারশুন্যতা ধরা পড়বে। তখন আবার নকশাল বিদ হবেন আপনি। আপনি মেধাবী, আপনি সচেতন-কিন্তু আপনি রাজনীতি করেন না-সমাজের কেউ আপনাকে চিনবেনা, আপনি নিচু শ্রেণির মানুষ। কিন্তু যখন সেই রাজনীতির সাথে মেধা যোগ হবে-আপনাকে চারপাশ চিনবে-আপনার উন্নতি শিরোধার্য। রাস্তার দুপাশে ধানক্ষেত, সরু রাস্তা তার মধ্যে দিয়ে সালাম পেতে চান, সম্মান পেতে চান-আপনাকে কেবলমাত্র রাজনীতি করলেই মানুষ চিনবে। ডাক্তারকেও ঠেলায় না পড়লে কেউ পুছে না। সব সালাম ভয়ের না-কিছু সালাম পরিচয়ের। রাজনীতির কারনেই আপনাকে অনেকে চিনবে-আপনার বাবার জানাযার নামাযে অনেকে আসবে-খারাপ কি। কালপুরুষ পড়ে যখন রিভিউ দিয়েছিলাম-অনেকে বলেছিল কালবেলা পড়বেন। আপনি মাধবীলতার প্রেমে পড়তে বাধ্য। নারে ভাই-আমি অক্ষম স্বামীর পক্ষে নই, আপনি নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে শেষ। আর আপনার স্ত্রী আপনার দেয়া সম্বল নিয়েই বসে আছে-এত ভালো স্ত্রী এই যুগ চায় না। তবে মন্দের ভালো অনিমেষ অন্তত নেশা করে জেলে যায় নি। তার জেলে যাবার পিছনে একটা মহৎ উদ্দেশ্য ছিল। যেভাবে শত শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে-দিনশেষে অনিমেষের হাতে একটি একতাল নরম কাদা তুলে দিল এককথায় অবিশ্বাস্য। অনেকেরই ইপ্সিত। আজকাল অনেক ফেসবুকে দেখি-আমার স্বামী আমার জন্য ট্রেনের জানালা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে, অমুক করে। তার নিচে আবার অনেকে কমেন্ট দেয়-ইশ আমার স্বামী কেন এমন হয় না। একটাই কথা ফেসবুকে কখনো কাউকে ডিভোর্সের কথা বলতে শুনছেন। তাহসান মিথিলা আলাদা। কিন্তু ফেসবুক পজিটিভিটিতে ভর্তি। সবাই কত সুখী। সেটা আরেক বিপদ। আপনি এসি রুমে ঘুমাতেও চাইবেন আবার চাইবেন দিনরাত স্বামী আপনার হাত ধরে থাকবে। অসম্ভব, অর্থের সীমাহীন কষ্ট পুরুষ মানুষকে রুঢ করে বৈকি। সবাই অনিমেষ হয়না-সবাই মাধবীলতাও হয়না। মাধবীলতাও তাই পছন্দ হল না। তবে অনিমেষের মত সংগ্রামী পুরুষের জন্য মাধবীলতা আবশ্যক। ২ সপ্তাহ লেগেছে শেষ হতে।
Was this review helpful to you?
or
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কালবেলা,পাঠক হিসেবে উত্তরসূরী।প্রেম-প্রীতি তার সাথে সরলরৈখিকভাবে রাজনীতি,নাগরিক জীবন।বিশেষভাবে লক্ষণীয়,অনি থেকে অনিমেষ হওয়া আর মাধবীলতা থেকে মাধবীলতা মিত্র হওয়া!
Was this review helpful to you?
or
সমরেশ মজুমদারের লেখা “আট কুঠুরি নয় দরজা” এবং “গর্ভধারিণী” বেশ অনেক আগেই পড়েছিলাম । এ দুটো উপন্যাসই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল উনার ভক্ত হবার জন্য । বিশেষ করে “গর্ভধারিণী” উপন্যাসটি ছিল অসাধারণ একটি সৃষ্টি । একই ধারায় উনার “কালবেলা” উপন্যাসটিকেও আমি সম্পূর্ণ একটি সার্থক উপন্যাসের মর্যাদা দিব।
Was this review helpful to you?
or
রাজনীতিকে ছাপিয়ে প্রেমের গল্প 'কালবেলা' সমরেশ মজুমদারের মোহিনী পড়েছেন ক'জনে! অনেকের ভাল লাগেনি, তাইতো! আমার বড্ড ভাল লেগেছিল, কারণ আমি গল্পের ভেতরে আরেক গল্প আবিস্কারের নেশায় বই পড়ি। কালবেলাকে মোহিনীর সাথে তুলনা করবো না, তবে আবিস্কারের নেশায় কালবেলা তেমনই এক উপন্যাস। গভীর রাজনীতির মাঝেও প্রেম খুঁজে পেয়েছি, মোহিনীতে পেয়েছিলাম এক মানুষ নারীকে, প্রাণবন্ত সে নারী। আসলে খুঁজতে হয়েছে, রাজনীতি পছন্দের নয় কিনা! বিশাল সাইজের চিত্রপট নিয়ে সিরিজ বইয়ের দ্বিতীয় এটি, এত বড় সিরিজ লিখতে গেলেই লেখকের ব্যক্তিসত্ত্বা এমনিতেই উঠে আসে। মানে সমরেশের ব্যক্তিজীবন। উনি অবশ্য কিঞ্চিৎ অস্বীকার করেছিলেন। সে করুক, সমরেশ মজুমদার যে অনিমেষের মাঝে আপন সত্ত্বার বীজ বপন করে কালবেলা লিখেছিলেন তা অস্বীকার করার উপায় এই। আসুন একটু হিন্ট দেই, গর্ভধারিনী লেখার পরে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে, সদ্য ক্ষমতায় সিপিআই। আষ্টেপৃষ্ঠে মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট। এদেরই শাখাপ্রশাখা নকশাল আন্দোলন করেছিল। ক্ষমতায় আসার পরে রাজবন্দীদের মুক্তি, ফৌজদারী মামলা তুলে নেওয়ার সব কিছুই করেছিল সিপিআই। উদ্দেশ্য শুরুর আদর্শের সবাইকে আবার একভূত করা। ঠিক সেগুলো পরিষ্কারভাবে এসেছে কালবেলায়। যে কথা বলছিলাম, গর্ভধারিনী লেখার পরে সমরেশ মজুমদারকে সিপিআই মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন গর্ভধারিনী বইটি কমিউনিস্ট পার্টির দলিল হিসাবে ঘোষণা দাও, লাখ কপি বিক্রি হবে। লেখক অবশ্য সেকথা শোনেননি যদিও তার ভেতরে কমিউনিজমের আদর্শই ছিল ঠিক একই জিনিস তিনি বইটির মুখ্য চরিত্র অনিমেষে দেখিয়েছিলেন। এখানে কথা আছে, অভিজ্ঞতা কথা বলে। হয়ত কিছুটা চিন্তাও কাজ করছিল, গতানুগতিক রাজনীতির বই তাও যদি শুধু কমিউনিস্টদের নিয়ে হয় তবে বইটি হয়ে যায় বিশেষ শ্রেণীর। সে সময়কার চরম জনপ্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদার বেশ ডিপ্লোমেটিক ছিলেন বোঝা যায়, তিনি কালবেলায় নিয়ে এলেন প্রেম। আহা যেই সেই প্রেম নয়, মাধবীলতার লদকালদকি প্রেম। বিশ্বাস করুন, শুধু সামাজিক ও রাজনৈতিক উপন্যাস হলে মাধবীলতা চরিত্রের কোন দরকারই ছিল না। কিন্তু অভিজ্ঞ এই লেখক কেন বিশেষ গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকবেন! দেশ পত্রিকায় যখন উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে, উঠতি বয়সী রোম্যান্টিক পড়ুয়ারা দেদারছে কিনেছে পত্রিকা। তৎকালীন সাহিত্য সমালোচকরা বলেছিলেন গোপনে গোপনে সরকারপক্ষও বইটির প্রচারে সহায়তা করেছিল। ওই যে কারণ পটভূমিতে পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট। আরেকটা জিনিস খেয়াল করবেন, উত্তরবঙের জলপাইগুড়ি থেকে কোলকাতায় এসেছিলেন অনিমেষ। লেখক নিজেই কিন্তু তাই! এটা অবশ্য সমস্যা না, লেখক তার চেনা পট, পরিবেশ নিয়ে লিখবেন এটা অন্যায় নয়। কি আছে 'কালবেলা'য়ঃ কী নেই বলুন! একটুতো বললামই, রাজনীতি আর প্রেম। হ্যাঁ ওটা মুখ্যা ওটা ছাড়াও রয়েছে। তার আগে গল্পে আলোকপাত করা যাক। পাহাড় বেলাভুমের চঞ্চল জলপাইগুড়ি, কাঞ্চনজঙ্গার শীতল আবহাওয়া ছেড়ে উপন্যাসের নায়ক অনিমেষ চলে আসে কোলকাতায়। এটা অবশ্য গর্বধারিনীতেই ছিলো। কোলকাতায় আসার প্রথম দিনে পুলিশ ও মিছিলকারীদের মাঝে বুলেটবিদ্ধ হয় অনিমেষ। মিশনারী কলেজ স্কটিশ চার্চে ভর্তি হয়ে যে হোস্টেলে তার জায়গা হয়েছিলো সেখানে ছিল জামসেদপুরের ধনীর দুলাল তরুন কবি ত্রিদিব সেনগুপ্ত। ক্ষণে ক্ষণে কবিতা আর নেশার আভরণে ডুবে থাকা ত্রিদিবের সাথে ভাল সখ্যতা হয় অনিমেষের। বাংলায় এমএর ছাত্র অলক্ষ্যে জড়িয়ে পড়ে কমিউনিজমে, স্বপ্ন সাম্যের ভারতবর্ষ গড়ে তোলা। জলপাইগুড়ির মত পাহাড়ি এলাকা থেকে আসা অনিমেষ তখনো বুঝতে পারেনি রাজনীতির ভেতরেও গভীর বিষাক্ত নগ্নতা রয়েছে। চোখের সামনে ভাগ হতে দেখেছে আদর্শকে। রাজনীতিতে যখন গভীরভাবে অনিমেষ ডুববে তখনই তার জীবনে এলো সহপাঠিনী মাধবীলতা। ধনীর দুলালী মাধবীলতা রাজনীতিতে আকৃষ্ট না হলেও অনিমেষে সঁপে দিয়েছিল নিজেকে। একেবারে গভীরভাবে। একদিকে রাজনীতি অন্যদিকে প্রেম দুটোর মাঝে ব্যাল্যান্স করেছে অনিমেষ। মাধবীলতা তার জগতজূড়ে থাকা অনিমেষকে নিয়ে ভালবাসাছাড়া বিশেষ ভাবনা ছিল না। এদিকে দলীয় কোন্দলে ভাগ হয়ে যায় সুভাষ এবং হয়ে ধীরে ধীরে গড়ে তোলে বিদ্রোহী গ্রুপ। আদর্শ বিবর্জিত নেতাদের ছেড়ে অনিমেষও ভিড়ে যায় সুভাষের সাথে সশস্ত্র আন্দোলনে, নকশালবাদ। একে একে হারিয়েছিল বন্ধু কবি ত্রিবিদ সেনগুপ্ত। সুভাষ'দাকেও। দীর্ঘ এই পরিক্রমায় মাধবীলতা কখনো অনিমেষের উপরে বিশ্বাস হারায়নি। আন্দোলনে পাশে না থাকলেও ব্যক্তিজীবনে সুখ ছড়িয়েছে তারা। সুখ-প্রেমের সেই গভীর ভাবনা লেখক সজীব রেখেছিলেন কালবেলায়। গ্রেফতার হয়ে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে পঙ্গু হয় অনিমেষ। অনিমেষ পঙ্গু হয়ে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিল। এতদিনে মাধবীলতা নিজেকে বিকিয়ে দেয়নি। যে শরীর সে অনিমেষকে দিয়েছিল সেই শরীরের বয়েছে অনিমেষের রক্তও। একমাত্র পুত্র সন্তানকে নিয়ে জীর্ণশীর্ণ সেই বাড়িতেই ওঠে অনিমেষ। তিনটে মানুষের সে ঘর। শারীরিক অক্ষমতা, দারিদ্র, মাথার ওপরে শীর্ণ চাল থাকলেও সেখানে মাধবীলতার ভালবাসা ছিল। আর ফলাফল স্বরূপ সন্তান। যে ভালবাসা হৃদয়ের সেখানে বিশ্বাসের বন্ধন ছিল, সামাজিক বিয়ের দরকার হয়নি তবুও সে মাধবীলতা মিত্র। অনিমেষ মিত্রের স্ত্রী। ব্যক্তিগত মতামতঃ নিখাদ রাজনৈতিক উপন্যাস 'কালবেলা' তবে রাজনীতি খুব বেশি পছন্দের নয় বলে আমি বইটিকে বলব অপরাজনীতির সুন্দর বিবরণ। অপরাজনীতি যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার বাস্তব দৃশ্যপট পশ্চিমবঙ্গ। একই সময়ে যখন ভারতের অন্য প্রদেশগুলো সমৃদ্ধি করেছে পশ্চিমবঙ্গ খুইয়েছে ঐতিহ্য। অথচ কী ছিলনা তাদের। নকশালবাদ, বামরাজনীতি নিঃশেষ করে দিয়েছে। লেখক নিজে কমিউনিস্ট বলে একটা ভালোর শেষ দেখিয়েছেন। কিন্তু বইটি জুড়ে তিনি দেখিয়েছেন সেই অপরাজনীতির অবক্ষয়ের চিত্র, রক্তপাত হানাহানি। সেই রাজনীতির কথা বলতে গিয়ে এই জনপ্রিয় লেখক মুদ্রার অন্য পিঠের কোন চিত্রের শিক্ষা দেখাতে পারেননি। বাতলে দিতে পারেননি কেন ঘটলো। টাইটেল দিয়েছিলাম, রাজনীতিকে ছাপিয়ে প্রেমের গল্প 'কালবেলা'। ঠিক এখানে রেখেছেন দারুণ সব বার্তা, বলা চলে প্রেমের বার্তা। নারী ও ভালবাসার সংগ্রামের বার্তা। চরম বাস্তববাদী রাজনীতির সাথে সাথে প্রেম পছন্দ করেননা এমন পাঠকের উপন্যাস নয় 'কালবেলা'। তবে একটা মেয়ে ভালবাসার দায়বদ্ধতাকে ছাপিয়ে কীভাবে পরিপূর্ণ নারী হয়ে উঠতে পারে সেটার জীবন্ত উদাহরণ মাধবীলতা। লেখক হয়ত অনিমেষকে নেতা নয় বরং বিদ্রোহীই রাখতে চেয়েছিলেন বলে মাধবীলতাকে গণ্ডীতে আবদ্ধ রেখেছিলেন। শক্তিশালী লেখকদের লেখায় আমি রেটিং দেওয়া থেকে বিরত থাকি, বইটির জন্য লেখক আকাদেমি এওয়ার্ড পেয়েছিলেন। :D
Was this review helpful to you?
or
সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় উপন্যাস উত্তরাধিকারের পরবর্তী পর্ব কালবেলা। উত্তরাধিকারে যেখানে গিয়ে উপন্যাসটা শেষ হয় তারপর থেকে কালবেলা শুরু। উপন্যাসের শুরুতেই দেখা যায় কলেজ জীবন শেষ করে অনিমেষ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কলেজ জীবনটাতে প্রতিসপ্তাহে জলপাইগুড়ি থেকে দুটো চিঠি আসতো তার নামে, একটা বাবার, অন্যটা দাদুর। অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছে অনি বাবা দাদুর কথাগুলো। কিন্তু এখন সময় এসেছে নিজেই নিজের পথ খুজেঁ নেয়ার। সেদিন যখন প্রথম এই কোলকাতা শহরে এসেছিল, সেদিনকার দাঙ্গার কঠিন চিহ্ন সে আজো বহন করে বেঁচে আছে। কি দোষ ছিল তার যে তাকে ট্রেন থেকে নেমে শহরে পা দিয়েই গুলি খেতে হল? এর দায় কে নেবে? এর দায় নিতে হবে ঘুণে ধরা সমাজ আর এই সমাজের পঁচে যাওয়া মানুষকে। কিছু অতিরিক্ত সুবিধালোভী মানুষ আর তাদের দোসর রাজনীতিবিদ, পুলিশের জন্য সাধারণ মানুষের আজ এত কষ্ট। কংগ্রেস এত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের ভেতরের কোন্দল আর লুটপাট নিয়েই ব্যস্ত। তাই স্বাধীনতার এত বছর পরেও আজ এই অবস্থা। এই নষ্ট, পঁচে যাওয়া সমাজকে উদ্ধারের জন্য বামপন্থী ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেয় অনিমেষ। চেষ্টা করে নতুন কিছু করার, নতুন একটা সমাজের স্বপ্ন দেখে সে। আর এমন সময়ে তার দেখা হয় মাধবীলতার সাথে। মাধবীলতার সারল্য, দৃঢ়তা, আর স্বাধীনচেতা মনোভাবের প্রেমে পড়ে অনিমেষ। অন্যদিকে মাধবীলতাও অনিমেষের আদর্শে তাকে অনুপ্রাণিত করে। এমন সময়ে এক অসতর্ক মুহূর্তে ঘটে যায় চরম এক ঘটনা। কিন্তু তবুও মাধবীলতা অনিমেষের আদর্শের পথে বাধা হতে চায় না। এরপর ১৯৭০-এর প্রথমার্ধে নকশালবাড়ি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়ে নির্যাতিত হয় অনিমেষ। অমানুষিক নির্যাতন সইতে হয় তাকে। অত্যাচার থেকে মাধবীলতাও নিস্তার পায়না। অনিমেষের জীবনের চড়াই-উৎরাই, উত্থান-পতনের কাহিনী ঘিরে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক এবং সামাজিক চিত্রের একটি নিখুঁত চিত্র এই উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়েছে। আমার কথা : উত্তরাধিকারের তুলনায় কালবেলা আমার একটু কম ভাল লেগেছে। সম্ভবত রাজনৈতিক ব্যাপার স্যাপার আছে বলেই। রাজনীতি ঠিক আমি ভাল করে বুঝিনা। বুঝতে কেন জানি ভালোও লাগে না। তবে মাধবীলতার উপস্থিতির জন্য উপন্যাসটা অনেকটা সহনশীল মাত্রায় ছিল। অন্যদিকে সেই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজনীতিবিদ ও সমাজের হর্তাকর্তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক চিত্র আমাকে পুরোপুরি হতাশ করেছে। সমাজের এই কলুষিত দিক সামনে এলে আসলেই একটু অস্বস্তি লাগে। সম্পূর্ণ নতুন একটা দেশে জনসেবামূলক কর্মকান্ডের চেয়ে নিজের পকেট ভরতেই যেন ব্যস্ত ছিল সবাই। সব মিলিয়ে তৎকালীন সমাজ সভ্যতার এক অপূর্ব প্রাসঙ্গিক চিত্র যেন কালবেলা। ভালো লাগবে সবার এই কামনা করি। হ্যাপি রিডিং।।।
Was this review helpful to you?
or
অনিমেষ চেতনা নিমেষ বিপ্লবে জাহাঙ্গীর আলম শোভন অনিমেষ যেন হাজারো সমান্তত্রী আদর্শের বিপ্লবী চেতনার এক প্রতীক। শ্রেণী শোষন থেকে মানুষ মুক্ত করতে যে যুবক একদিন কলকাতার ট্রেন ট্রামে দোলা দিয়েছিল বিপ্লবী চেতনার। ভারত সরকারের নানা বাাঁধা বিপত্থি অস্থির সময়ের অস্থিরতা অনিমেষকে নিয়ে ফেললো এক জোয়ারি নদীর বাাঁকে। স্বশস্ত্র সংগ্রাম, জীবন বাজি রেখে ডাকিাতি, ডাকাতির বিলি করে জনসেবা। সবই ঘুম হারাম করে দিয়েছিল ভারত সরকারের। আর পথভ্রষ্ট যুবকদের ফেরাতে নষ্ট পথ বেঁচে নেয় তারা। তার আগেই এক ভালোবাসার লতা জড়িয়ে যায় অনিমেষের গায়ে। যার নাম মাধবীলতা। তারা ভালোবাসার ঘোরে থেকেও বিপ্লবের মন্ত্র শোনায় অনটনের দিনরাতে। পুলিশ ছাড়েনা অনেমেষকে। ধরে মাধবীকেও। আর অনিমেষের সামনেই গর্ভবতী মাধবীর পেটে লাথি মারে সরকারী পোষা াহিনীর লোক। যেন লাথি মারে শ্রেণী সংগ্রামের গর্ভে। পুলিশের ধরপাকড়, এনকাউন্টার, মামলায় ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যায় শ্লোগান-‘‘ তোমার নাম আমার নাম- ভিয়েতনাম ভিয়েতনাম। একসময় হাফছেড়ে বাঁচে সরকার। হারিয়ে যায় অনিমেষরা কেউবা গুটিয়ে নেয় তল্পিতল্পা। সেই অভিজ্ঞতার ঢালি নিয়ে আজ পাশের দেশের সরকার ধর্মীয় রাজণীতিকদের দমনের স্টিম রোলার চালু করেছে। হামলা, মামলা, গুম, বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙ্গা, ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা, মাথায় পিস্তল রেখে গুলি। এসবে একদিন নকশালদের দমন করেছিল ভারত। আজ বাংলাদেশ দমন করছে... তাই কালবেলা ফুরায়না ফিরে ফিরে ফিরে আসে।
Was this review helpful to you?
or
বইঃ কালবেলা লেখকঃ সমরেশ মজুমদার সমরেশ মজুমদারের “কালবেলা” এমন একটি উপন্যাস যেখানে প্রেম এবং বিপ্লব একসাথে মিলেমিশে হয়েছে একাকার । “কালবেলা” । যার মানে অশুভ সময় । “কালবেলা” আসলেই একটি অশুভ সময়ের চিত্র উপস্থাপন করেছে । যেই চিত্রে আদর্শের পথে হাঁটতে গিয়ে বিপথগামী হয়েছে তৎকালীন অসংখ্য ভারতীয় তরুণ । তাদের মধ্যে অনিমেষও একজন । মূলত অনিমেষের হাত ধরেই সমগ্র উপন্যাসে সমরেশ মজুমদার তুলে ধরেছেন তৎকালীন সময়টিকে । আর অনিমেষের সঙ্গী হিসেবে জুড়ে দিয়েছেন মাধবীলতাকে। অনিমেষ আর মাধবীলতার যে প্রেমের সম্পর্ক তা এই উপন্যাসের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে টপকিয়ে খুব সহজেই এটিকে একটি প্রেমের উপন্যাসে পরিণত করেছে । সুতরাং, “কালবেলা” যেমন একটি রাজনৈতিক উপন্যাস তেমনি একটি প্রেমের বা ভালোবাসারও উপন্যাস হিসেবেও এটি সম্পূর্ণ সার্থক । অবশ্য সমরেশ মজুমদার এটিকে রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবে দেখতে নারাজ । তিনি এটিকে একটি ভালোবাসার উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃতি দিতেই আগ্রহী । এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হল অনিমেষ । প্রথমবারের মতো কলকাতায় এসেই অনিমেষ পায়ে গুলি খায় পুলিশের । এরপর ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ে কলেজের বাম রাজনীতির সঙ্গে কিন্তু তাতে কেমন যেন খটকা থেকে যায় তার মনে । ফলে অস্ত্র হাঁতে বিপ্লবের পথে হাঁটতে শুরু করে । বিপ্লবের আগুনে ঝাপিয়ে পড়ে অনিমেষ বুঝতে পারে যে দাহ্যবস্তুর কোন সৃষ্টিশীল ক্ষমতা নেই । এই বিপ্লবে জড়িয়ে যাবার আগেই অনিমেষের জীবনে জড়িয়ে পড়ে একজন রমণী । যার নাম মাধবীলতা । অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী এই মাধবীলতা । যে জীবনের সবকিছু দিয়ে ভালোবেসে গিয়েছে অনিমেষকে । তার জন্য ভালোবাসাটিই মনে হয় আসল বিষয় । বিনিময়ে আশা করেনি কিছুই কিন্তু ছেঁড়ে আসে সব অতীত, সব বন্ধন এবং পেছনের সব সম্পর্ককে শুধুমাত্র এই ভালোবাসার টানে । উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে যেমন অবাক হয়েছি অনিমেষের ব্যক্তিত্ব নিয়ে তেমনি অবাক হয়েছি মাধবীলতার ক্ষেত্রেও । মাধবীলতার ক্ষেত্রে আমি হয়তো আরও একধাপ এগিয়ে ছিলাম । কারণ এই চরিত্রটিকে যতই আবিস্কার করেছি ততই আমার কাছে মনে হয়েছে এ মাধবীলতা যেন আমারই কাঙ্ক্ষিত প্রেমিকা । বারবার প্রেমে পড়েছি আমি এই মাধবীলতার । নিজের সর্বস্ব দিয়ে এবং দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির বলে মাধবীলতা শত প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের মাথা উঁচু রাখে, নিজের ভালোবাসাকে সমুন্নত রাখে । ভালোবাসার মাঝে যেন বিপ্লবের আরেক নাম এই মাধবীলতা । সমরেশ মজুমদারের লেখা “আট কুঠুরি নয় দরজা” এবং “গর্ভধারিণী” বেশ অনেক আগেই পড়েছিলাম । এ দুটো উপন্যাসই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল উনার ভক্ত হবার জন্য । বিশেষ করে “গর্ভধারিণী” উপন্যাসটি ছিল অসাধারণ একটি সৃষ্টি । একই ধারায় উনার “কালবেলা” উপন্যাসটিকেও আমি সম্পূর্ণ একটি সার্থক উপন্যাসের মর্যাদা দিব । কারণ উনার এই উপন্যাসে যেমন উঠে এসেছে সত্তরের দশকের স্বাধীন ভারতবর্ষের চিত্র, তেমনি উঠে এসেছে সেই সময়টি । একই সাথে তৎকালীন ভারতবর্ষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে সাথে উঠে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমের চিত্র । একদিকে যেমন প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করা হয়েছে তেমনি আরেক দিকে তুলে ধরা হয়েছে শ্রেণীহীন নতুন ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখা একদল তরুণের আন্দোলনের চিত্র । রাজনীতির পথগুলো কতটা তির্যক তা এই উপন্যাসটি পড়লেই বুঝা যায় । রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণের পাশাপাশি একজন নারীর জন্য তৎকালীন সময়ের প্রতিবন্ধকতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে এখানে । নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমাজের উঁচু, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষের মানসিকতার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র উঠে এসেছে এই সমগ্র উপন্যাসে । বাদ যায়নি একজন নর এবং নারীর পারস্পারিক বিশ্বাসে ভালোবাসার চিত্রটিও । সমরেশ মজুমদারের অসাধারণ একটি সৃষ্টি এই “কালবেলা” । এই “কালবেলা” উপন্যাসটির জন্য তিনি ১৯৮৪ সালে সাহিত্যে আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন । ২০০৯ সালে গৌতম ঘোষের পরিচালনায় এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও পাউলি দাম অভিনীত একই শিরোনামে একটি সিনেমাও মুক্তি পায় এই উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে । সুতরাং, নির্দ্বিধায় পড়ে ফেলতে পারেন এই অসাধারণ বইটি ।
Was this review helpful to you?
or
যেমনটা আশা ছিলো, তার চেয়েও ভালো ছিলো :)
Was this review helpful to you?
or
সমরেশ মজুমদারের লেখায় আলাদা একটা আবহের জন্ম হয়। যে আবহ পাঠককে দেয় সাধারণ গল্পের এক অসাধারণ শৈলী আবাহনের সুযোগ। খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে গল্প বলা শুরু করে পাঠকের অজান্তেই গল্পের স্রোতটাকে পরিণত করেন খরস্রোতা প্রবাহিনীর মতো। আর আমার মনে হয়, যে লেখক মানুষের যতোটা কাছাকাছি, সেই লেখকের লেখনী ততোই শক্তিশালী। ডুয়ার্সের চা বাগানে কাটানো শৈশব আর কলকাতায় করা তারুণ্যের অনুসন্ধান লেখক সমরেশ যেন মানুষের গল্পের বরপুত্র। নিজের অসামান্য লেখনীতে ফুটিয়ে তোলা কালবেলা শুধুমাত্র একটা উপন্যাসই না, তাঁর লেখালেখির জীবনে একটা অন্যতম মাইলস্টোন। উত্তরাধিকার - এর বালক অনি, মানে আমাদের অনিমেষের কলকাতাবাসী জীবন পরিস্ফুটিত হয়েছে কালবেলা তে। মফস্বলের ছেলে অনিমেষের কলকাতার কলেজ জীবন শেষে একই শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনাচরণ দিয়েই কাহিনির শুরু। কলকাতায় পা দিয়েই যাকে আকস্মিকভাবে অপ্রিয় ঘটনার শিকার হতে হয়, তার জীবনটা স্বাভাবিকের খোলসে অস্বাভাবিকতাকেই লালল করবে। ছেলেবেলা থেকেই বামপন্থী রাজনীতিতে কৌতুহলী অনি অনেকটা হঠাৎ করেই জড়িয়ে পড়ে ছাত্র ফেডারেশনের সাথে। অনিকে যেন ব্যবহার করতে থাকে দলটা। যেচে প্রায় বলীর পাঁঠা হওয়া অনিমেষ ঝুঁকে পড়ে আরেক বামপন্থী দলের দিকে। দোটানা, সন্দেহ, বিভ্রান্তি যেন নিত্যসঙ্গী। মুখের কথা আর কাজের যেন মিল নেই কোথাও। কংগ্রেসের অপশাসন থেকে দেশকে পরিবর্তনের ছায়াতলে আনতে চাওয়া অনিমেষ বারবার আঁকড়ে ধরেছে আপাত বিশ্বাসী নানা মানুষকে। ঠকেছে অবধারিতভাবেই। অনেক মেয়ের মতো তার জীবনে আসে মাধবীলতা। আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ এই মেয়ে এক নিমেষেই অনিমেষের ভেতরে আনে পরিবর্তন, জন্ম দেয় নিখাদ ও পবিত্র এক প্রেমানুভূতির। মাধবীলতার ব্যক্তিত্ব যেন অটল পর্বত, আর তার ভালোবাসা যেন গ্রীষ্মের খরতাপে শীতল ছায়াদায়িনী। পরষ্পরের প্রেমে প্রবল নির্ভরতা খুঁজে নেয় তারা। মাধবীলতার প্রেমকে শেকল না বানিয়ে অনিমেষ আরো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে সক্রিয় বামপন্থী রাজনীতির সাথে। পুরো কলকাতা ও কলকাতার আশেপাশে চালাতে থাকে নিজের কাজ। মাধবীলতা কিন্তু তাকে বাধা দেয়নি, বরং অনুপ্রাণিত করেছে তার প্রতিটা পদক্ষেপে। আর মাধবীলতার এই ভালোবাসাই অনিমেষের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মূল চালিকাশক্তি। কালবেলা উপন্যাসে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে আপাত স্বাধীন ভারতবর্ষের তৎকালীন বাস্তব চিত্র। কল্পনার পটে বাস্তবের মতো ফুটে উঠেছে বিভিন্ন বামপন্থী দলের মধ্যকার নীতিগতো ও প্রায়োগিক অন্তর্দ্বন্দ, কংগ্রেসের মুলা ঝুলানোর রাজনীতি, সাধারণ মানুষের হতাশাসৃষ্ট নির্লিপ্ততা, আর অনিমেষের মতো কিছু স্বপ্নবাজ মানুষের স্বপ্ন - যারা সাম্যের সুর তুলতে চেয়েছিলো বাতাসে, দেশের খেটে খাওয়া মানুষকে দিতে চেয়েছিলো সত্যিকারের স্বাধীনতর সন্ধান। সমান্তরাল গতিতে এগিয়ে চলা কালবেলা'র কাহিনি হঠাৎ-ই পরিবর্তন করেছে স্বীয় গতি। কাহিনির এক পর্যায়ের ঘটনাবলী বিবেচনায় আনলে এটাকে আংশিক থ্রিলারও বলা যায়। শেষের দিকে অনিমেষের অবস্থা কল্পনা করে শিউড়ে উঠেছি। তার ও মাধবীলতার কথা চিন্তা করে দুশ্চিন্তায় ভরে উঠেছে মন। লেখকের মর্মস্পর্শী লেখনীতে মোচড় মেরে উঠেছে বুকের ভেতরটা। উপন্যাসটা শেষ করার পর আমার অনুভূতি একটাই - এর চেয়ে ভালো হওয়া বোধহয় আর সম্ভব না। অসামান্য, অসাধারণ, অতুলনীয়। সাহিত্য একাডেমী পুরষ্কার - ১৯৮৪ পাওয়া এই উপন্যাস আমার পাঠকজীবনের একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা। অনিমেষ আর মাধবীলতাকে যেমন অসংখ্য পাঠক ভালোবেসেছেন, ভালোবেসেছি আমিও।
Was this review helpful to you?
or
কলকাতা পড়াশোনা করতে আসে অনিমেষ মিত্র। বিএ পড়াশোনার করার পর এমএ পড়ার সময় জড়িয়ে পড়ে রাজনীতিতে। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার তখনকার সময়ে মাধবীলতার নামের একটি মেয়ে নিজেকে সমর্পণ করে অনিমেষের কাছে। ঠিক সমর্পণ নয় মাধবীলতার প্রেমের বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে। মেয়েটি অনিমেষের যাবতীয় কাজে অকুন্ঠ সমর্থন করে যায়। দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় অনিমেষ খেয়াল করে তাহার দল আদর্শ লাইনচ্যুত। সে দল ছেড়ে বিপ্লবের পথে এগোনো দলের সাথে সংযুক্ত হয়। এখানেও মাধবীলতা তাকে সমর্থন করে যায়। বিদ্রোহের কাজের শুরুতে তাকে কলকাতা ছাড়তে হয়। অনিমেষ কলকাতা থেকে বিদ্রোহের কাজে তাহার ছেলেবেলার পুন্যভূমি স্বর্গছেড়া টি-এস্টেটে চলে যায়। বিদ্রোহের কাজের এক পর্যারে সে আসে একটি গোপন বৈঠক করতে বীরভূমে। গোপন বৈঠকের রাতটা অনিমেষ মাধবীলতার সাথে কাটায়। সেখান থেকে ফিরে বিদ্রোহের এক পর্যায়ে পুলিশ কতৃক গ্রেফতার হয় এবং পঙ্গুত্ব বরন করে। জেলে থাকার সময়টাতে সে সংবাদ পায় বীরভূমের রাতটার ফসল মাধবীলতা দুনিয়াতে আনয়ন করছে। পঙ্গুত্ব টা অনিমেষকে হাঁপিয়ে তোলে। সে পালিয়ে যায়তে চায়। সে কি চাইলে যাইতে পারে?? মাধবীলতার কাছে নিজেকে সমর্পন করেদেয়। প্রতিক্রিয়াঃ উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ এগুলো কাল জয়ী উপন্যাস।এগুলো সম্পর্কে আমি অধম কেমন করবো।তবুও বলি অনিমেষ, মাধবীলতাকে আমি ভুলতে পারব না।আর দশটা পাঠকের মত আমিও মাধবীলতায় পড়ে গিয়াছি।
Was this review helpful to you?
or
সমরেশ মজুমদারের “কালবেলা” এমন একটি উপন্যাস যেখানে প্রেম এবং বিপ্লব একসাথে মিলেমিশে হয়েছে একাকার । “কালবেলা” । যার মানে অশুভ সময় । “কালবেলা” আসলেই একটি অশুভ সময়ের চিত্র উপস্থাপন করেছে । যেই চিত্রে আদর্শের পথে হাঁটতে গিয়ে বিপথগামী হয়েছে তৎকালীন অসংখ্য ভারতীয় তরুণ । তাদের মধ্যে অনিমেষও একজন । মূলত অনিমেষের হাত ধরেই সমগ্র উপন্যাসে সমরেশ মজুমদার তুলে ধরেছেন তৎকালীন সময়টিকে । আর অনিমেষের সঙ্গী হিসেবে জুড়ে দিয়েছেন মাধবীলতাকে । অনিমেষ আর মাধবীলতার যে প্রেমের সম্পর্ক তা এই উপন্যাসের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে টপকিয়ে খুব সহজেই এটিকে একটি প্রেমের উপন্যাসে পরিণত করেছে । সুতরাং, “কালবেলা” যেমন একটি রাজনৈতিক উপন্যাস তেমনি একটি প্রেমের বা ভালোবাসারও উপন্যাস হিসেবেও এটি সম্পূর্ণ সার্থক । অবশ্য সমরেশ মজুমদার এটিকে রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবে দেখতে নারাজ । তিনি এটিকে একটি ভালোবাসার উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃতি দিতেই আগ্রহী । এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হল অনিমেষ । প্রথমবারের মতো কলকাতায় এসেই অনিমেষ পায়ে গুলি খায় পুলিশের । এরপর ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ে কলেজের বাম রাজনীতির সঙ্গে কিন্তু তাতে কেমন যেন খটকা থেকে যায় তার মনে । ফলে অস্ত্র হাঁতে বিপ্লবের পথে হাঁটতে শুরু করে । বিপ্লবের আগুনে ঝাপিয়ে পড়ে অনিমেষ বুঝতে পারে যে দাহ্যবস্তুর কোন সৃষ্টিশীল ক্ষমতা নেই । এই বিপ্লবে জড়িয়ে যাবার আগেই অনিমেষের জীবনে জড়িয়ে পড়ে একজন রমণী । যার নাম মাধবীলতা । অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী এই মাধবীলতা । যে জীবনের সবকিছু দিয়ে ভালোবেসে গিয়েছে অনিমেষকে । তার জন্য ভালোবাসাটিই মনে হয় আসল বিষয় । বিনিময়ে আশা করেনি কিছুই কিন্তু ছেঁড়ে আসে সব অতীত, সব বন্ধন এবং পেছনের সব সম্পর্ককে শুধুমাত্র এই ভালোবাসার টানে । উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে যেমন অবাক হয়েছি অনিমেষের ব্যক্তিত্ব নিয়ে তেমনি অবাক হয়েছি মাধবীলতার ক্ষেত্রেও । মাধবীলতার ক্ষেত্রে আমি হয়তো আরও একধাপ এগিয়ে ছিলাম । কারণ এই চরিত্রটিকে যতই আবিস্কার করেছি ততই আমার কাছে মনে হয়েছে এ মাধবীলতা যেন আমারই কাঙ্ক্ষিত প্রেমিকা । বারবার প্রেমে পড়েছি আমি এই মাধবীলতার । নিজের সর্বস্ব দিয়ে এবং দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির বলে মাধবীলতা শত প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের মাথা উঁচু রাখে, নিজের ভালোবাসাকে সমুন্নত রাখে । ভালোবাসার মাঝে যেন বিপ্লবের আরেক নাম এই মাধবীলতা । সমরেশ মজুমদারের লেখা “আট কুঠুরি নয় দরজা” এবং “গর্ভধারিণী” বেশ অনেক আগেই পড়েছিলাম । এ দুটো উপন্যাসই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল উনার ভক্ত হবার জন্য । বিশেষ করে “গর্ভধারিণী” উপন্যাসটি ছিল অসাধারণ একটি সৃষ্টি । একই ধারায় উনার “কালবেলা” উপন্যাসটিকেও আমি সম্পূর্ণ একটি সার্থক উপন্যাসের মর্যাদা দিব । কারণ উনার এই উপন্যাসে যেমন উঠে এসেছে সত্তরের দশকের স্বাধীন ভারতবর্ষের চিত্র, তেমনি উঠে এসেছে সেই সময়টি । একই সাথে তৎকালীন ভারতবর্ষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে সাথে উঠে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমের চিত্র । একদিকে যেমন প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করা হয়েছে তেমনি আরেক দিকে তুলে ধরা হয়েছে শ্রেণীহীন নতুন ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখা একদল তরুণের আন্দোলনের চিত্র । রাজনীতির পথগুলো কতটা তির্যক তা এই উপন্যাসটি পড়লেই বুঝা যায় । রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণের পাশাপাশি একজন নারীর জন্য তৎকালীন সময়ের প্রতিবন্ধকতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে এখানে । নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমাজের উঁচু, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষের মানসিকতার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র উঠে এসেছে এই সমগ্র উপন্যাসে । বাদ যায়নি একজন নর এবং নারীর পারস্পারিক বিশ্বাসে ভালোবাসার চিত্রটিও । সমরেশ মজুমদারের অসাধারণ একটি সৃষ্টি এই “কালবেলা” । এই “কালবেলা” উপন্যাসটির জন্য তিনি ১৯৮৪ সালে সাহিত্যে আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন । ২০০৯ সালে গৌতম ঘোষের পরিচালনায় এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও পাউলি দাম অভিনীত একই শিরোনামে একটি সিনেমাও মুক্তি পায় এই উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে । সুতরাং, নির্দ্বিধায় পড়ে ফেলতে পারেন এই অসাধারণ বইটি ।