User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন ভালো লাগলো
Was this review helpful to you?
or
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আহমদ ছফার মরণবিলাস বইটি নিয়ে আলোচনা বেশ কমই দেখা যায়। আহমদ ছফার শক্তিশালী কলমে সমাজের উচ্চশ্রেণীর ক্ষমতাশীল মানুষের করা অন্যায়ের ব্যাপারে তিনি নির্ভয়ে সত্য উচ্চারণ করে গেছেন। একজন সাহসী বুদ্ধিজীবী হিসেবে অকপটে সমাজের ক্ষমতাশীল ব্যক্তিদের অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন স্বল্প পাতার এক গভীর উপন্যাস মরণবিলাসে। "মরণবিলাস",নামেই যেন পরিচয়। গল্পের প্লট টা যদিও বা তৈরি করা হয়েছে আশির দশকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফজলে ইলাহির আসন্ন মৃত্যুকে উপজীব্য করে তবে ভিতরে যেতেই যেন ধরা পড়ে অন্য এক গল্প। ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন কিন্তু প্রচন্ড এই কষ্টের মুহুর্তে তার পাশে নেই কাছের কেউ; শুধুমাত্র রয়েছে মওলা বক্স নামের চাটুকার তোষামুদে পিএস। মৃত্যুর ঘণ্টা বাজার আগে আগে ফজলে ইলাহীর জীবনে ঘটে যাওয়া অসংখ্য স্মৃতি রোমন্থন করেন। তার করা অসংখ্য অপকর্ম, পাপাচার ও ভয়াল কাজকর্ম গুলো যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সারাটা জীবনের করা এসব ঘৃণ্য ন্যাক্কারজনক কাজ সংঘটনের আলাপচারিতা চলতে থাকে অবিশ্বস্ত মওলা বক্সের সাথে। অন্তিম মুহূর্তে বলে যাওয়া সেসব স্বীকারোক্তি এবং জীবনভর করে যাওয়া পাপের পরও আত্মপক্ষ সমর্থনের স্পর্ধা একজন মানুষকে ভিন্নরূপে ব্যাখ্যা করা যায় লেখক সাহেব খুব জটিল মনস্তত্ত্বের পরিচয় দিয়েছেন এখানে। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার মুহুর্তে জীবনের অন্ধকার দিকগুলোকে এক অপরিচিত অবিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছে খুচরো পয়সার মত ভাঙিয়ে বলে অসুস্থ মন্ত্রীর প্রয়াণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় উপন্যাস,শিখিয়ে দিয়ে যায় জীবন নাটকের শেষ নাম মরণবিলাস।
Was this review helpful to you?
or
ভালো
Was this review helpful to you?
or
খুবই চমকপ্রদ বিশ্লেষ রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের জীবন চক্র।
Was this review helpful to you?
or
great
Was this review helpful to you?
or
well
Was this review helpful to you?
or
চমৎকার বই গুলো
Was this review helpful to you?
or
ভালো।
Was this review helpful to you?
or
interesting
Was this review helpful to you?
or
good book
Was this review helpful to you?
or
আমাদের দেশের প্রতিটা মন্ত্রীর অন্তত একটিবারের জন্য হলেও 'আহমদ ছফা' রচিত এই বিখ্যাত উপন্যাসটি পড়ে দেখা উচিত। মৃত্যুর প্রহর গোনা মুমূর্ষু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফজলে ইলাহির দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের উত্থান, অর্জন আর পাপের স্বীকারোক্তি নিয়েই মূলত উপন্যাসটি রচিত। অসুস্থ মন্ত্রী যখন বুঝতে পারল--প্রাণপ্রদীপ তাঁর নিভুনিভু, সূর্য উঠার পূর্বেই রাতে মৃত্যু ঘটবে; তখন বেবাক জীবনটা তাঁর বায়োস্কোপের পর্দার মতো চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। ডালপালা শেকড় মূলসমেত গোটা জীবনটা তাঁর চোখের সামনে ক্ষণিক ভেসে উঠছে আবার ক্ষণিক ডুবে যাচ্ছে। সে বুঝতে পারল, মৃত্যুর পূর্বে আসলে মানুষের বোধশক্তি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ হয়ে উঠে। যেসব বিষয় তাঁর মনে কোনোদিন ঘুণাক্ষরেও জাগেনি, কোন গর্ভগুহা থেকে মুক্তিলাভ করে সেসব আজ তাকে জড়িয়ে ধরছে। অতীত জীবন যেন তাকে গ্রেফতার করে ফেলতে চাইছে, সে ধরা পড়ে যাচ্ছে, কিন্তু পালাবার পথ পাচ্ছেনা। শেষমেশ হাসপাতালের নির্বান্ধব পুরীর একমাত্র সঙ্গী-- সাগরেদ 'মাওলা বক্স'কে মন্ত্রী প্রাণের ভাই মানল আর কালের অতলগহ্বর থেকে অপকর্মগুলো তুলে এনে এনে বক্সের কাছে আওড়াতে শুরু করল। প্রথমেই বলল, সেই সৎভাই এর কথা; যাকে সে কিশোর বয়সে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছিল। আজ মৃত্যু শিয়রে নিষ্পাপ কিশোরটির যন্ত্রণাকাতর অবয়ব যেন মন্ত্রীর দিকে বার বার ধেয়ে আসছে। ফজলে ইলাহি 'ভ্রান্ত জারজ' সন্দেহে নিষ্পাপ সৎভাইটিকে হত্যা করার পরও নিজের সাফাই গাইতে লাগল। মাওলা বক্স মন্ত্রীর জঘন্য ঘটনা শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারলনা। যদিও সে কথা দিয়েছিল মন্ত্রীর জীবনবৃত্তান্ত শুনে সে স্থির থাকবে, উত্তেজিত হবেনা। তারপর মন্ত্রী বলতে শুরু করল, রেঙ্গুনে থাকা তাঁর সেই চাচতো ভাইয়ের বউয়ের কথা; যার সঙ্গে সে বাঁশঝাড়ে, পাটক্ষেতে, নির্জন পুকুরপাড়ে অজস্রবার গোপনে সঙ্গম করেছে। তিন চার মাস যেতে না যেতেই ভাবীকে সে গর্ভবতী বানিয়ে দিল। পেটে বাচ্চা যখন দুই কী তিন মাস তখন চাচতো ভাই রেঙ্গুন থেকে ফিরে আসে। কলঙ্ক ঢাকার জন্য স্বামীর উপর মিথ্যা অভিমানের নাটক করে পুকুরপাড়ের কাঁঠালগাছটার ডালে ঝুলে সে আত্মহত্যা করে। ভাবীর শরীরের সঙ্গে মন্ত্রীর সমস্ত কলঙ্কও যেন কবরের নিচে চাপা পড়ে গেল। অথচ কী অদ্ভুত! মৃত্যুর পূর্বে আজ বাতাসে অল্প অল্প তার ঝুলন্ত মূর্তিটি মন্ত্রী দেখতে পাচ্ছে। মন্ত্রী আগের বারের মতো এবারো পরিস্থিতির স্বীকার বলে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে শুরু করল। আর মাওলা বক্সও মন্ত্রীর কুকর্মে ক্ষুব্ধ হয়ে পালটা যুক্তি দিতে আরম্ভ করল। যাই হোক, প্রকাশিত হলো মন্ত্রীর তৃতীয় অপকর্ম--অন্ধ আক্রোশে হেডমাস্টার মশাইয়ের বাড়িতে আগুন দেওয়ার সেই বীভৎস ঘটনা। যে অগ্নিকান্ড ঝলসে দিয়েছিল হেড মাস্টার মশায়, ক্লাসের ফার্স্ট বয় আমিনুল হক সহ একটি জীবন্ত ছাগলের দেহ। মাওলা বক্সের ধৈর্য্যের বাধ ভেঙ্গে যেতে লাগল। মন্ত্রীর অপরাধের ফিরিস্তি শুনতে শুনতে তাঁর নিঃশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম। এপর্যায়ে সে বলেই ফেলল, "ফজলে ইলাহি সাহেব আপনার ঐ জঘন্য কাহিনী আমি আর শুনতে পারবোনা। আমি সহ্যের শেষ সীমায় এসে পৌছেছি। আরেকটা কাহিনীও যদি আপনি বয়ান করেন, আমাকে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করতে হবে।" কিন্তু উপন্যাসের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এবং বোধের জায়গা কোনটি জানেন? এতো অপকর্মের পরও মন্ত্রী আশা রাখে সে উদ্ধার পেয়ে যাবে। মন্ত্রীর বিশ্বাস, মানবজন্ম বৃথা যায়নি তাঁর। চলুন দেখে আসি, মন্ত্রীর মাঝে কেন এমন বোধের উদয় হলো.... সর্বশেষ মন্ত্রী গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংয়ের কথা বলতে শুরু করল। সেই কিলিংয়ে মন্ত্রীও অংশগ্রহণ করেছিল। শত শত মানুষ তাঁদের নেতৃত্বে খুন হয়েছিল। অবশ্য এ নিয়ে মন্ত্রীর কোনো দুঃখবোধ নেই। কেননা তারা না মারলে বিপক্ষরা তাদের মেরে ফেলতো। হাঙ্গামা চলাকালীন সময় পাক সার্কাস এলাকায় এক কিশোরের দিকে দাঙ্গাকারীরা অগ্রসর হচ্ছিল। ঐ কিশোরের পুষ্পের মতো অম্লান সুন্দর মুখ দেখে মন্ত্রীর হৃদয়ে আচমকা একটা ঢেউ খেলল। নিঃস্বার্থভাবে নিজের প্রাণ বাজি রেখে মন্ত্রী ঐ কিশোরকে উদ্ধার করে তার বাবা মায়ের হাঁতে তুলে দিল। কারো ধন্যবাদ পাবার আসায় মন্ত্রী সে কাজ করেনি, কিংবা সে যে কোনো এককালে এক কিশোরকে বাঁচিয়েছিল তাও তার কস্মিনকালে মনে পড়েনি। কিন্তু এখন সেই কিশোরের মুখ সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। অবিকল সেই কিশোর, কোঁকড়ানো সেই চুল। সেই নাম না জানা বালক হাতদুটো বাড়িয়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মন্ত্রীর পাপকর্মসমূহ চারপাশে তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য উন্মত্ত আবেগে উদ্বাহু নৃত্য করছে। কিন্তু কাছে ঘেঁষতে পারছেনা। কিশোরটি তাকে রক্ষা করছে আর মন্ত্রী নিচের কথাগুলো বলতে বলতে মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়ছে, "মাওলা বক্স! মানবজন্ম আমার বৃথা যায়নি। আমার ও কিছু সুকৃতি আছে। আমি উদ্ধার পেয়ে যাবো। আমার আশা আছে মাওলা বক্স আশা আছে।" মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে আমাদের দিকে ধেয়ে আসা অজস্র পাপকর্মগুলোকে প্রতিহত করার ঢাল হিসাবে আমরা কি এমন কোনো পুণ্য করতে পেরেছি? প্রিয় আহমদ ছফা জাতির বিবেকের কাছে এমনই এক গভীর প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে...
Was this review helpful to you?
or
?বইয়ের নাম: মরণ বিলাস ? লেখক: আহমদ ছফা ? প্রকাশনা: খান ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানি ? ক্যাটাগরি: উপন্যাস ? মূল্য: ১৩২ ৳ বাংলাসাহিত্যে এ পর্যন্ত যত প্রাবন্ধিক, লেখক এবং সাহিত্যিক জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সাহসী, বুদ্ধিমান, কুশলী, বহুমুখী এবং তেজদীপ্ত লেখকদের তালিকায় একটি নাম জ্বলজ্বল করবে, নামটি "আহমদ ছফা"। মননশীল এবং সত্যসমৃদ্ধ স্পষ্টবাদী সাহিত্যক আহমদ ছফা ছিলেন সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কণ্ঠ এবং আদর্শনিষ্ঠ-প্রগতিপন্থী একজন গণবুদ্ধিজীবী। নতুন নতুন বিষয় অনুসন্ধান করা তার সাহিত্যের প্রকৃতিজাত স্বভাব।তার উপন্যাসের ভেতর দিয়ে তিনি মানুষের জীবনের-মনস্তত্ত্বের ভাল-খারাপ নানান বিষয়ের আলোকপাত করেছেন খুবই সহজ-সরল ভাষায়।“মরণ বিলাস" আমার পড়া উপন্যাসগুলোর মধ্যে খুবই বিশিষ্ট একটি রচনা।উপন্যাসটি রচিত হয় ১৯৮৮ সালে, এবং পরের বছরই সেটি প্রকাশিত হয়। উপন্যাসের মূল চরিত্র জনাব ফজলে ইলাহি,তিনি দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, যিনি কিনা এক সময়ে পাকিস্তান আমলেও মন্ত্রী ছিলেন এবং ক্রমাগত ভোল পাল্টে মন্ত্রিত্ব বহাল রেখেছেন স্বাধীন বাংলাদেশেও।তিনি মৃত্যুপথযাত্রী,বুঝতে পারছেন ভয়াবহ ক্যান্সারে তিনি মৃত্যুর দিকে ক্রমাগত এগুচ্ছেন।মৃত্যু শয্যায় তিনি দেখতে পাচ্ছেন ইতিপূর্বে করা তার সকল অপকর্ম তার দিকে যেন তেড়ে আসছে,আর মৃত্যুর আগে শেষ সময়টুকু তিনি কাউকে অপকর্মের কথা বলে হালকা হতে চাইছেন। রোগীর সাথে রাতে থাকেন মাওলা বক্স নামক মেরুদণ্ডহীন তোষামুদে এক ব্যক্তি,হাসপাতালে শুয়েশুয়ে যার কাছে মন্ত্রীসাহেব তার অতীতস্মৃতিচারণ করছেন।ছফার বর্ণনায় এ-স্মৃতিচারণ এতটাই সাবলীল হয়ে ওঠে যে, পাঠকের মনে হবে যে, তিনি আসলে তাঁর সময়কার কোন নষ্টরাজনীতিককে প্রত্যক্ষ করছেন। চরিত্রটা তাঁর খুব চেনা। যাকে তিনি প্রতিদিন দেখেন, টেলিভিশনে, পত্রিকায় অথবা কোন জনপরিসরে। পাঠক একই সাথে খুঁজে পাবেন ইতিহাসের উপাদান-রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার, রাজনীতিকদের কুৎসিত যৌনবিলাস, বহুগামিতা ইত্যাদি।উপমহাদেশের দ্বি-মেরুকৃত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে হিন্দু মধ্যবিত্তের নাক সিটকানো, আর পশ্চাৎপদ মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমানের হীনমন্যতা কিভাবে সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয়, সদ্ভাবপূর্ণ দুটি সম্প্রদায়কে কিভাবে ঠেলে দেয় রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের দিকে, তার তাৎপর্যময় বর্ণনা করেছেন আহমদ ছফা।উপন্যাসে দেখা যায়, এক এক করে নিকৃষ্ট কর্মের বর্ণনা শুনে, মাওলা বক্সের মত তোষামুদে ব্যক্তিও বিষিয়ে ওঠে সেই সব অপকর্মের ভারে। তার মনে হতে থাকে এই সব নৃশংসতার কাহিনী তাঁর স্নায়ুকে অবশ করে দিচ্ছে।কিন্ত মন্ত্রীসাহেব তার করা পাপ নিয়ে মোটেই দুঃখিত নন,তিনি স্বীকার করেন সকল অপকর্ম তিনি পরিষ্কার বিবেকে করেছেন কিন্তু দায়ভার চাপিয়ে দেন সমাজ-মহাকাল-ইতিহাস ইত্যাদি বায়বীয় জিনিসের উপর। তা সত্ত্বেও মন্ত্রী জানেন তিনি মানুষ নন, তার ভাষায়, "আমি জানি আমি পশু এবং সারাজীবন পশ্বাচারই করেছি"। অনেক পাপ, অনেক হত্যার দায়ভার তার উপর,কিন্তু দেশভাগের দাঙ্গার সময় নিঃস্বার্থ ভাবে জীবন বাজি রেখে একটি কিশোরকে বাঁচানোর স্মৃতি তাকে নিজের ভিতরকার মানুষটিকে অনুভব করায়--"আমার পাপ কর্মগুলো আমাকে গ্রেপ্তার করার জন্য উন্মত্ত আবেগে উদ্বাহু নৃত্য করছে। কিন্তু কাছে ঘেষতে পারছে না। কিশোরটি আমাকে রক্ষা করছে। মাওলা বক্স,আমার মানবজন্ম বৃথা যায়নি। আমারও কিছু সুকৃতি আছে। আমি উদ্ধার পেয়ে যাবো।" হয়তো তাই..আলোর একটি শিখা অনেকখানি অন্ধকার মুছে দেয়--কে না জানে সে কথা!এভাবে, উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ফজলে ইলাহির জবানের মাধ্যমে আহমদ ছফা মানুষের জীবনের উত্থান-পতন, চড়াই-উৎরাইসহ নানা বিষয়ের যে শৈল্পিক বর্ণনা দিয়েছেন, বোধ করি পাঠককে তা নিরাশ করবেনা মোটেই ! #হ্যাপি রিডিং ?
Was this review helpful to you?
or
"মরণ বিলাস" আহমদ ছফার ভিন্ন আঙ্গিকের নীরিক্ষা ধর্মী একটি উপন্যাস যেখানে ফজলে এলাহী নামক এক অসুস্থ মন্ত্রীর হাস্পাতালে অবস্থানের কাহিনী দিয়ে উপন্যাসের সুচনা হয়। আস্তে আস্তে পুরো উপন্যাসে ধর্মের বিষয়, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আর তৎকালীন সময়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষণের সুক্ষ হিউমার আর উইট ইত্যাদি সবকিছুই চিত্রিত হয়। শেষ অব্ধি অসুস্থ সেই মন্ত্রীর প্রয়ানের মাধ্যমে উপন্যাসের যবনিকাপাত হয় কিন্তু আসলেই কি শেষ হয়, নাকি কালোত্তীর্ণ সিদ্ধহস্ত লেখক " আহমদ ছফা" আমাদের জন্য খুলে রেখেছেন চিন্তার খোরাক।
Was this review helpful to you?
or
"মরন বিলাস" আমার পড়া উপন্যাসগুলোর মধ্যে খুবই বিশিষ্ট একটি রচনা।উপন্যাসটি রচিত হয় ১৯৮৮ সালে, এবং পরের বছরই সেটি প্রকাশিত হয়। উপন্যাসের মূল চরিত্র জনাব ফজলে ইলাহি,তিনি দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, যিনি কিনা এক সময়ে পাকিস্তান আমলেও মন্ত্রী ছিলেন এবং ক্রমাগত ভোল পাল্টে মন্ত্রিত্ব বহাল রেখেছেন স্বাধীন বাংলাদেশেও।তিনি মৃত্যুপথযাত্রী,বুঝতে পারছেন ভয়াবহ ক্যান্সারে তিনি মৃত্যুর দিকে ক্রমাগত এগুচ্ছেন।মৃত্যু শয্যায় তিনি দেখতে পাচ্ছেন ইতিপূর্বে করা তার সকল অপকর্ম তার দিকে যেন তেড়ে আসছে,আর মৃত্যুর আগে শেষ সময়টুকু তিনি কাউকে অপকর্মের কথা বলে হালকা হতে চাইছেন। রোগীর সাথে রাতে থাকেন মাওলা বক্স নামক মেরুদণ্ডহীন তোষামুদে এক ব্যক্তি,হাসপাতালে শুয়েশুয়ে যার কাছে মন্ত্রীসাহেব তার অতীতস্মৃতিচারণ করছেন।ছফার বর্ণনায় এ-স্মৃতিচারণ এতটাই সাবলীল হয়ে ওঠে যে, পাঠকের মনে হবে যে, তিনি আসলে তাঁর সময়কার কোন নষ্টরাজনীতিককে প্রত্যক্ষ করছেন। চরিত্রটা তাঁর খুব চেনা। যাকে তিনি প্রতিদিন দেখেন, টেলিভিশনে, পত্রিকায় অথবা কোন জনপরিসরে। পাঠক একই সাথে খুঁজে পাবেন ইতিহাসের উপাদান-রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার, রাজনীতিকদের কুৎসিত যৌনবিলাস, বহুগামিতা ইত্যাদি।উপমহাদেশের দ্বি-মেরুকৃত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে হিন্দু মধ্যবিত্তের নাক সিটকানো, আর পশ্চাৎপদ মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমানের হীনমন্যতা কিভাবে সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয়, সদ্ভাবপূর্ণ দুটি সম্প্রদায়কে কিভাবে ঠেলে দেয় রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের দিকে, তার তাৎপর্যময় বর্ণনা করেছেন আহমদ ছফা।উপন্যাসে দেখা যায়, এক এক করে নিকৃষ্ট কর্মের বর্ণনা শুনে, মাওলা বক্সের মত তোষামুদে ব্যক্তিও বিষিয়ে ওঠে সেই সব অপকর্মের ভারে। তার মনে হতে থাকে এই সব নৃশংসতার কাহিনী তাঁর স্নায়ুকে অবশ করে দিচ্ছে।কিন্ত মন্ত্রীসাহেব তার করা পাপ নিয়ে মোটেই দুঃখিত নন,তিনি স্বীকার করেন সকল অপকর্ম তিনি পরিষ্কার বিবেকে করেছেন কিন্তু দায়ভার চাপিয়ে দেন সমাজ-মহাকাল-ইতিহাস ইত্যাদি বায়বীয় জিনিসের উপর। তা সত্ত্বেও মন্ত্রী জানেন তিনি মানুষ নন, তার ভাষায়, "আমি জানি আমি পশু এবং সারাজীবন পশ্বাচারই করেছি"। অনেক পাপ, অনেক হত্যার দায়ভার তার উপর,কিন্তু দেশভাগের দাঙ্গার সময় নিঃস্বার্থ ভাবে জীবন বাজি রেখে একটি কিশোরকে বাঁচানোর স্মৃতি তাকে নিজের ভিতরকার মানুষটিকে অনুভব করায়--"আমার পাপ কর্মগুলো আমাকে গ্রেপ্তার করার জন্য উন্মত্ত আবেগে উদ্বাহু নৃত্য করছে। কিন্তু কাছে ঘেষতে পারছে না। কিশোরটি আমাকে রক্ষা করছে। মাওলা বক্স,আমার মানবজন্ম বৃথা যায়নি। আমারও কিছু সুকৃতি আছে। আমি উদ্ধার পেয়ে যাবো।" হয়তো তাই..আলোর একটি শিখা অনেকখানি অন্ধকার মুছে দেয়--কে না জানে সে কথা!এভাবে, নাতিদীর্ঘ, তবে সুখপাঠ্য উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ফজলে ইলাহির জবানের মাধ্যমে আহমদ ছফা মানুষের জীবনের উত্থান-পতন, চড়াই-উৎরাইসহ নানা বিষয়ের যে শৈল্পিক বর্ণনা দিয়েছেন, বোধ করি কোন পাঠককে তা নিরাশ করবেনা মোটেই !
Was this review helpful to you?
or
মরনবিলাস আহমদ ছফার একটি ব্যাতিক্রমী উপন্যাস বলে আমার মনে হয়। উপন্যাসের প্রধান দুটি চরিত্র হচ্ছে ফজলে এলাহী এবং মাওলা বক্স। ঘটনার সূত্রপাতে দেখা যায় ক্যানসারে আক্রান্ত স্বরাষ্ট্রমনমন্ত্রী ফজলে এলাহী মৃত্যু শয্যায় শায়িত। তাকে দেখা –শুনা করার জন্যই মাওলা বক্সকে স্বয়ং রাষ্ট্রেপতি নিয়োগ দিয়েছেন। ঘটনা প্রবাহে দেখতে পাই ফজলে এলাহী অনুধাবন করে আজই তার শেষ রাত। মৃত্যুর আগে সে তার পাপের বোঝার ভারমুক্ত হওয়ার জন্য মাওলা বক্সকে তার জীবনের পাপ গুলো বলে যেতে চায়। তার বলার মাধ্যমে হৃদয় বিদারক বিভিন্ন মন্দ কাজের সম্পর্কে জানতে পারি। ঘটনা গুলো শোনার ফলে মাওলা বক্সের মনে হয় একেক টা গল্প তার আত্মার উপর নতুন বোঝা চাপিয়ে যায়, আর বেশিক্ষন যদি এভাবে সে শুনতে বাধ্য হয়,তা হলে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলাব। মন্ত্রী তার পাপের ভার কমাতে সমাজ ও রাষ্ট্রের দোষারোপ করে। মাওলা বক্সের মতে, আমাদের এই পোড়া দেশে সুবিচার কোহিনূর পাথরের চাইতে ও দুলর্ভ।তারপর ও তার মনে হয় মন্ত্রী সাহেবের কাহিনী সবিস্তারে উপস্থিত করা হলে নিশ্চিত তার দশবার মৃত্যুদন্ডের নির্দেশ দিতেন। তথাপি বারবার মন্ত্রী সাহেবের অদম্য ইচ্ছাশক্তির বশে মাওলা বক্স তার কথা শুনতে বাধ্য হয়।
Was this review helpful to you?
or
অত্যন্ত সুখপাঠ্য উপন্যাস। সবাইকে পড়ার অনুরোধ থাকলো।
Was this review helpful to you?
or
চমৎকার একটা বই
Was this review helpful to you?
or
আহমদ ছফা বাংলার সাহিত্যাকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার সাহিত্য রচনার বিষয় বড়ই বৈচিত্র। নতুন নতুন বিষয় অনুসন্ধান করা তার সাহিত্যের প্রকৃতিজাত স্বভাব। এই উপন্যাসের ভেতর তিনি মানুষের জীবনের ভাল-খারাপ নানান বিষয়ের আলোকপাত করেছেন খুবই সহজ-সরল ভাষায়। যা বুঝতে আমাদের মোটেই কষ্ট হয় না। “মরন বিলাস” খুবই আলাদা ধরণের একটা লেখা। এটাকে হয়তো 'নষ্ট রাজনৈতিকে'র 'ভ্রান্ত সমাজের' মাঝ দিয়ে 'প্রতিষ্ঠা' পাবার কাহিনী হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেত। কিন্তু আমি লেখাটাতে আসলে তিনটি জিনিসের মাঝে তেমন কোনো দৃঢ় সংযোগ পাইনি। এটা আমার কাছে তাই মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস।একজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, বুঝতে পারছেন ক্যান্সারে তিনি মারা যাচ্ছেন, যিনি কিনা এক সময়ে পাকিস্তান আমলেও মন্ত্রী ছিলেন এবং ক্রমাগত ভোল পাল্টে বাংলাদেশেও মন্ত্রিত্ব বহাল রেখেছেন। মৃত্যু সজ্জায় তার সকল অপকর্ম তার দিকে তেড়ে আসছে আর মৃত্যুর আগে শেষ সময়টুকু তিনি কাউকে অপকর্মের কথা বলে হালকা হতে চাইছেন। রোগীর সাথে রাতে থাকেন মাওলা বক্স নামক তোষামোদে এক ব্যক্তি। নিজের সম্পর্কে সে বলে " মেরুদণ্ড থাকাটা আসলেও খুব খারাপ ব্যাপার। যাতে স্যারের মত মহান ব্যক্তিদের দরবারে প্রয়োজনে হাজির থাকতে পারি, সেজন্য বহু কষ্ট করে ওটাকে বাঁকিয়ে নিয়েছি"। একেক করে নিজের নিকৃষ্ট কর্মগুলো বলতে থাকেন মাওলা বক্সের নিকট। মাওলা বক্সের মত তোষামুদে ব্যক্তিও বিষিয়ে ওঠে সেই সব অপকর্মের ভারে। সে আর শুনতে চায় না এসব অপকর্মের কাহিনী। তার মনে হতে থাকে এই সব নৃশংসতার কাহিনী তাঁর স্নায়ুকে অবশ করে দিচ্ছে। কিন্তু শয্যাশায়ী মন্ত্রীর ইচ্ছাশক্তির হাত থেকে তার নিস্তার নেই, তাকে শুনে যেতে হয় সেই কাহিনী। ঘৃণা প্রকাশ্য হয়ে ওঠে তার বক্তব্যে। সে দোষী সাব্যস্ত করতে চায় যে মন্ত্রী ফজলে ইলাহিকে। কিন্তু মন্ত্রীর সর্বগ্রাসী মানসিক শক্তির কাছে সে পেরে ওঠে না। তার করা পাপ নিয়ে তিনি দুঃখিত নন। স্বীকার করেন সকল অপকর্ম তিনি পরিষ্কার বিবেকে করেছেন কিন্তু দায়ভার চাপিয়ে দেন সমাজ-মহাকাল-ইতিহাস ইত্যাদি বায়বীয় জিনিসের উপর। তা সত্ত্বেও মন্ত্রী জানেন তিনি মানুষ নয়, "আমি জানি আমি পশু এবং সারাজীবন পশ্বাচারই করেছি"। অনেক পাপ, অনেক হত্যার দায়ভার তার উপর। কিন্তু নিঃস্বার্থ ভাবে জীবন বাজি রেখে একটি কিশোরকে বাঁচানোর স্মৃতি তাকে নিজের ভিতরকার মানুষটিকে অনুভব করায়। "আমার পাপ কর্মগুলো আমাকে গ্রেপ্তার করার জন্য উন্মত্ত আবেগে উদ্বাহু নৃত্য করছে। কিন্তু কাছে ঘেষতে পারছে না। কিশোরটি আমাকে রক্ষা করছে। মাওলা বক্স আমার মানবজন্ম বৃথা যায়নি। আমারও কিছু সুকৃতি আছে। আমি উদ্ধার পেয়ে যাবো।"হয়তো তাই...আলোর একটি শিখা অনেকখানি অন্ধকার মুছে দেয়! কিংবা তার উলটো...এক ফোঁটা বিষ অনেকটা পানিকেবিষাক্ত করে ফেলে! কে জানে.. উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চবিত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফজলে ইলাহির জবানের মাধ্যমে আহমদ ছফা মানুষের জীবনের উত্থান-পতন, চড়াই-উৎরাই নানা বিষয়ের বর্ণনা দিয়েছেন। যাতে আহমদ ছফার দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। অপনারা সবাই উপন্যাসটি পড়বেন, না হয় বড় ধরণের মিস করবেন।
Was this review helpful to you?
or
বাংলাসাহিত্যে এ পর্যন্ত যত প্রাবন্ধিক, লেখক এবং সাহিত্যিক জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সাহসী, বুদ্ধিমান, কুশলী, বহুমুখী এবং তেজদীপ্ত লেখকদের তালিকায় একটি নাম জ্বলজ্বল করবে, নামটি "আহমদ ছফা"। মননশীল এবং সত্যসমৃদ্ধ স্পষ্টবাদী সাহিত্যক আহমদ ছফা ছিলেন সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কণ্ঠ এবং আদর্শনিষ্ঠ-প্রগতিপন্থী একজন গণবুদ্ধিজীবী। নতুন নতুন বিষয় অনুসন্ধান করা তার সাহিত্যের প্রকৃতিজাত স্বভাব।তার উপন্যাসের ভেতর দিয়ে তিনি মানুষের জীবনের-মনস্তত্ত্বের ভাল-খারাপ নানান বিষয়ের আলোকপাত করেছেন খুবই সহজ-সরল ভাষায়।“মরণ বিলাস" আমার পড়া উপন্যাসগুলোর মধ্যে খুবই বিশিষ্ট একটি রচনা।উপন্যাসটি রচিত হয় ১৯৮৮ সালে, এবং পরের বছরই সেটি প্রকাশিত হয়। উপন্যাসের মূল চরিত্র জনাব ফজলে ইলাহি,তিনি দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, যিনি কিনা এক সময়ে পাকিস্তান আমলেও মন্ত্রী ছিলেন এবং ক্রমাগত ভোল পাল্টে মন্ত্রিত্ব বহাল রেখেছেন স্বাধীন বাংলাদেশেও।তিনি মৃত্যুপথযাত্রী,বুঝতে পারছেন ভয়াবহ ক্যান্সারে তিনি মৃত্যুর দিকে ক্রমাগত এগুচ্ছেন।মৃত্যু শয্যায় তিনি দেখতে পাচ্ছেন ইতিপূর্বে করা তার সকল অপকর্ম তার দিকে যেন তেড়ে আসছে,আর মৃত্যুর আগে শেষ সময়টুকু তিনি কাউকে অপকর্মের কথা বলে হালকা হতে চাইছেন। রোগীর সাথে রাতে থাকেন মাওলা বক্স নামক মেরুদণ্ডহীন তোষামুদে এক ব্যক্তি,হাসপাতালে শুয়েশুয়ে যার কাছে মন্ত্রীসাহেব তার অতীতস্মৃতিচারণ করছেন।ছফার বর্ণনায় এ-স্মৃতিচারণ এতটাই সাবলীল হয়ে ওঠে যে, পাঠকের মনে হবে যে, তিনি আসলে তাঁর সময়কার কোন নষ্টরাজনীতিককে প্রত্যক্ষ করছেন। চরিত্রটা তাঁর খুব চেনা। যাকে তিনি প্রতিদিন দেখেন, টেলিভিশনে, পত্রিকায় অথবা কোন জনপরিসরে। পাঠক একই সাথে খুঁজে পাবেন ইতিহাসের উপাদান-রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার, রাজনীতিকদের কুৎসিত যৌনবিলাস, বহুগামিতা ইত্যাদি।উপমহাদেশের দ্বি-মেরুকৃত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে হিন্দু মধ্যবিত্তের নাক সিটকানো, আর পশ্চাৎপদ মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমানের হীনমন্যতা কিভাবে সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয়, সদ্ভাবপূর্ণ দুটি সম্প্রদায়কে কিভাবে ঠেলে দেয় রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের দিকে, তার তাৎপর্যময় বর্ণনা করেছেন আহমদ ছফা।উপন্যাসে দেখা যায়, এক এক করে নিকৃষ্ট কর্মের বর্ণনা শুনে, মাওলা বক্সের মত তোষামুদে ব্যক্তিও বিষিয়ে ওঠে সেই সব অপকর্মের ভারে। তার মনে হতে থাকে এই সব নৃশংসতার কাহিনী তাঁর স্নায়ুকে অবশ করে দিচ্ছে।কিন্ত মন্ত্রীসাহেব তার করা পাপ নিয়ে মোটেই দুঃখিত নন,তিনি স্বীকার করেন সকল অপকর্ম তিনি পরিষ্কার বিবেকে করেছেন কিন্তু দায়ভার চাপিয়ে দেন সমাজ-মহাকাল-ইতিহাস ইত্যাদি বায়বীয় জিনিসের উপর। তা সত্ত্বেও মন্ত্রী জানেন তিনি মানুষ নন, তার ভাষায়, "আমি জানি আমি পশু এবং সারাজীবন পশ্বাচারই করেছি"। অনেক পাপ, অনেক হত্যার দায়ভার তার উপর,কিন্তু দেশভাগের দাঙ্গার সময় নিঃস্বার্থ ভাবে জীবন বাজি রেখে একটি কিশোরকে বাঁচানোর স্মৃতি তাকে নিজের ভিতরকার মানুষটিকে অনুভব করায়--"আমার পাপ কর্মগুলো আমাকে গ্রেপ্তার করার জন্য উন্মত্ত আবেগে উদ্বাহু নৃত্য করছে। কিন্তু কাছে ঘেষতে পারছে না। কিশোরটি আমাকে রক্ষা করছে। মাওলা বক্স,আমার মানবজন্ম বৃথা যায়নি। আমারও কিছু সুকৃতি আছে। আমি উদ্ধার পেয়ে যাবো।" হয়তো তাই..আলোর একটি শিখা অনেকখানি অন্ধকার মুছে দেয়--কে না জানে সে কথা!এভাবে, নাতিদীর্ঘ, তবে সুখপাঠ্য উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ফজলে ইলাহির জবানের মাধ্যমে আহমদ ছফা মানুষের জীবনের উত্থান-পতন, চড়াই-উৎরাইসহ নানা বিষয়ের যে শৈল্পিক বর্ণনা দিয়েছেন, বোধ করি পাঠককে তা নিরাশ করবেনা মোটেই !
Was this review helpful to you?
or
মরণ বিলাস। আহমদ ছফার একটি রাজনৈতিক উপন্যাস। নষ্টসময়ের রাজনীতিতে একজন নষ্টরাজনীতিকের রাজনৈতিক সামাজিকায়ন অথবা পেশাদার রাজনীতিক হয়ে ওঠার এক অনবদ্য বর্ণনা-এ উপন্যাসটি। আকারে ছোট, মাত্র ৮৬ পৃষ্ঠার এক সুখপাঠ্য উপন্যাস। উপন্যাসের মূলচরিত্র, যিনি সে-সময়কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মৃত্যুপথযাত্রী, হাসপাতালে শুয়েশুয়ে তার অতীতস্মৃতিচারণ করেন। ছফার বর্ণনায় এ-স্মৃতিচারণ এতটাই সাবলীল হয়ে ওঠে যে, পাঠকের মনে হবে যে, তিনি আসলে তাঁর সময়কার কোন নষ্টরাজনীতিককে প্রত্যক্ষ করছেন। চরিত্রটা তাঁর খুব চেনা। যাকে তিনি প্রতিদিন দেখেন, টেলিভিশনে, পত্রিকায় অথবা কোন জনপরিসরে। পাঠক একই সাথে খুঁজে পাবেন ইতিহাসের উপাদান, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার, রাজনীতিকদের যৌনবিলাস, বহুগামিতা, ইত্যাদি। উপমহাদেশের দ্বি-মেরুকৃত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ঐতিহাসিকভাবে শ্রেণীর দ্বন্ধটা সবসময় আড়ালে থেকেছে, শ্রেণীর পরিবর্তে ধর্মটাই সামনে এসেছে, সামনে আনা হয়েছে, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার রাজনৈতিক অর্থনীতির বিষয়টিও স্বল্পপরিসরে খুবসুক্ষভাবে চিত্রিত হয়েছে। পুরো বর্ণনায় লেখকের যে রসবোধ সেটি পাঠক কিছুতেই ভুলতে পারবেন না। মরণ বিলাস-এর নষ্টরাজনীতিকের শেষপর্যন্ত মৃত্যু হয়। কিন্তু নষ্টরাজনৈতিক সামাজিকায়ন? সেটিতো অব্যাহতই আছে। উপন্যাসটির বড় প্রাসঙ্গিকতা বোধহয় এখানেই।