User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
আমেরিকান লেখক জেফ মেসন মনে করেন, মৃত্যু চিন্তার কোনো ‘সাবজেকটিভ’ অর্থ নেই (The concept of death has no subjective meaning)। মৃত্যু হলো নিরেট শূন্যতা (absolutely empty)। কবি আলীম হায়দায়ের ‘আকণ্ঠ সরোবরে আগুন জোছনা’ পড়লাম। আমি আগেও তার কবিতা পড়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। তখনো আমি একপ্রস্থ সমালোচনা লিখেছিলাম। সে বহুদিন আগের কথা। সেবার তার কবিতায় সুস্পষ্ট নাগরিকতার ছাপ ছিল।মনে হয়েছিল, কবি শামসুর রাহমানের পর আমাদের প্রজন্মের এক কবির চোখ দিয়ে ঢাকা শহরের লাল-হলুদ বাতিগুলোকে আবারও নতুন করে পড়েছিলাম। সে যাই হোক- এতবছর পর যখন আবার তার নতুন কাব্যগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি পড়ছি। আমার মনে হলো- কবিতার পরতে পরতে ‘মৃত্যু’ ভাবনার ছড়াছড়ি। কবি আলীম হায়দার কেন এমন একটি ভাবনার পিছু ছুটেছেন যার কোন ‘সাবজেকটিভ’ মানে নেই? নাকি তিনি শূন্যতার ভেতরেও মৃত্যুর অর্থ অনুসন্ধান করতে চাইছেন? চলুন; আমরা হেটে আসি আলীম হায়দারের কবিতার পথ ধরে, যেখানে কবি নিজেই তার প্রথম কবিতায় উল্লেখ করেছেন- ‘হণ্টনক্লান্তপথ, আদিম পিতাদের ফেলে যাওয়া পথজুড়ে দীর্ঘশ্বাস শেষ হয় না কখনো..’১ দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা যদি ধরে নিই- মৃত্যুকে প্রকাশ করার কোনো নির্দিষ্ট আধেয় (কনটেন্ট) আমাদের কাছে নেই, তাহলে আমরা রূপকের (মেটাফোর) আশ্রয় নিতে পারি। কবি আলীম হায়দারও তাই করেছেন। মৃত্যু কবে আসে, কবে যায়? তিনি মনে করেন, প্রচণ্ড আকাঙ্ক্খা নিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চাইলেও মৃত্যু আসে না। এ যেন এক রহস্য। আবার মত্যুদূতের হাত থেকে বন্ধুকে ফিরিয়ে আনার বন্দনা করেছেন তিনি তার ‘প্রোফেটিক’ কবিতায়। বডড অদ্ভুত! কবি মৃত্যুর পথ ধরে হেঁটে গেছেন অনেক দূর। এখানে বুঝতে হবে- কবির এ হেঁটে চলা মোটেও আনন্দযাত্রা নয়। তিনি হেঁটেছেন তাচ্ছিল্য নিয়ে। তার ভেতরে কাজ করেছে অবজ্ঞা, জীবনের প্রতি। যারা জীবিত থেকেও মৃত, তাদের প্রতি। ‘একদল জীবন্মৃতের মাঝে জীবন ছুড়ে দিয়ে আমি মৃত্যুর পথে হাঁটতে থাকি অবিরত মৃত্যু আমাকে নিতে এলো না। দিন থেকে রাত, রাত থেকে দিনে, আমি মৃত্যুর পিছে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত ... ’২ তাহলে কবি আলীম হায়দার কী শূন্যতার ভেতর মৃত্যুর অর্থ খুঁজে বেড়াচ্ছেন? নাকি জীবনের ভেতর দিয়ে মৃত্যুর অস্তিত্ব বোঝার চেষ্টা করছেন? তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে যদি মৃত্যুকে ‘শূন্যতা’ ধরে নেওয়া হয়, তাহলে আরো একটি পথ বাকি থাকে- যে পথ ধরে মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে। সেটা হলো জীবনকে খোঁজা। কবি সে চেস্টাও করেছেন। তিনি বলছেন- যেখানে জীবন নেই, সেখানেই মৃত্যু। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, কবি আলীম হায়দার জীবন বলতে কী বোঝেন? তিনি বলছেন, ‘একটা পরিপূর্ণ জীবন নিজের সাথে মীমাংসিত কথোপকথন।’৩ তো চলুন, আমরা আলীম হায়দারের কবিতায় এই কথোপকথনের ধরন জানার চেষ্টা করি। তিনি মনে করেন, জীবন হলো বাতাসে ভেসে আসা শব্দ। সুর। যা কানের কাছে কম্পিত হয়। দ্যোতনা তৈরি করে। জীবন হলো চোখের পাতার নিচের সৌন্দর্য্য। যার কোনো সীমারেখা নেই। জীবন মানে নিশ্চিন্ত মনে আনন্দে ডুব দেওয়া। অবগাহন করা। ‘কানের দু’পাশে হাত দাও, করতলে বাতাস খেলাও কিছু শুনতে পাও? তবে শোনো সব সুর খেলা করে ওখানে, মন মতো তরঙ্গ খেলাও। চোখের পাতার নিচে পৃথিবীর সব সুন্দর বন্ধ করো আঁখি, রঙের বাজিতে মনকে পোড়াও জীবন ওড়ে, অসীমে ওড়াও; জীবন ডোবে, অতলে ডোবাও।’৪ কবি আরো বলছেন, জীবন কথা বলে। জীবন ভাসে। জীবনকে মন্থন করা যায়। ‘চমচম চাঁদ’, ‘খুররম রাত’-এর ভেতর জীবন লুকিয়ে থাকে। ‘বাতাসে জীবন ভাসে পানিরও প্রাণ থাকে, কথা বলে। সাগর আর জীবন একপ্রকারেই খেলে।’৫ তাহলে আলোচনা এটাই দাঁড়াচ্ছে যে-কবি আলীম হায়দায় পাশ্চাত্য দার্শনিকদের মতো মৃত্যু ভাবনাকে অনুভব করেননি। তারা যেটাকে ‘অ্যাবসুল্যুট এম্পটিনেস’ বা নিরেট শূন্যতা বলে ফুলস্টপ বসিয়ে দিয়েছেন, কবি আলীম হায়দায় সেই শূন্যতা থেকে শুরু করেছেন। এটা করতে গিয়ে তিনি রূপকের আশ্রয় নিয়েছেন। রূপক যখন মৃত্যুকে প্রকাশ করতে ব্যর্থ হচ্ছে,তখনো তিনি থেমে যাননি। কৌশলী কবি জীবনের নেতিকরণের ভেতর দিয়ে মৃত্যুর অস্তিত্ব বোঝোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। শুধু তাই নয়, মৃত্যুকে যদি পথযাত্রী কল্পনা করি, তাহলে সেই মৃত্যু আদিম পিতাদের ফেলে যাওয়া হণ্টনক্লান্তপথ ধরে জীবনের কাছে গিয়ে মিলেছে। সবশেষে কবির মতো আবারো বলবো, ‘একটা পরিপূর্ণ জীবন নিজের সাথে মীমাংসিত কথোপকথন।’ এর চেয়ে সুন্দর জীবনের সংজ্ঞা আর কবে কে দিয়েছে! কবির জন্য শুভকামনা। ভালোবাসা। লেখক: ফরচুন শামীম। ২০১৮। ১অস্থির পেণ্ডুলাম ২প্রোফেটিক ৩নাগরদোলা ৪নাগরদোলা ৫জীবনমন্থন