User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম: এপারে কেউ নেই লেখকের নাম: শিহানুল ইসলাম ধরণ: মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস প্রকাশনী: ভূমিপ্রকাশ প্রথম প্রকাশ: ২০১৮ প্রচ্ছদকার: সজল চৌধুরী পৃষ্ঠা: ১৭৬ মুদ্রিত মূল্য: ২১০ টাকা ফ্ল্যাপের লেখা: পার্টিশনের ঠিক পনেরো বছর বাদে অরুণ চন্দনপুর ফিরে এলো। নাকি সে পিছিয়ে এলো পনেরোটা বছর? পূর্ববঙ্গের এই ছায়াঘেরা যমুনার কোল, রামকৃষ্ণবাবুদের আমবাগান, মধ্য দুপুরের খাঁ খাঁ করা হাটখোলা, আর পারমিতার অষ্পষ্ট স্মৃতি বুকে নিয়ে জহির এতদিন বসে ছিল, এই চন্দনপুরে৷ সে জানতো— দৃশ্যমান এই জগতে হারিয়ে যাওয়া কোনো স্থায়ী চিত্র নয়। অরুণ একদিন ঠিকই ফিরবে। সেই এক অমোঘ সত্যটা যে তাকে বড্ড পোড়ায়। অরুণ এসে সেই আগুণ নেভাবে না? প্রভাতী, সমসাময়িক এক আধুনিকতার নাম। প্রচণ্ড আত্মকেন্দ্রিক, একগুঁয়ে, উড়নচণ্ডী মেয়েটা মাত্র কিছুকাল আগে আবিষ্কার করেছে— জহির তার বুকের মধ্যেকার সেই অপেক্ষা, যা তার বেঁচে থাকার প্রকৃত অর্থ বহন করে। অতীতের সেই উদ্দেশ্যহীন ছুটে চলা, গৎবাঁধা দিন, আর জীবনের সাথে একলা যুদ্ধ করার কোনো মানে নেই। বাবা রাজেন সরকারের রাজনৈতিক আদর্শের সাথে নিজেকে মিলেমিশে তৈরি করা মেয়েটার হঠাৎই এ কোন বোধোদয় ঘটলো? নাকি নূরজাহান, রেহানার মতো সেও এক চিরন্তন অপেক্ষা পুষে রেখেছে? বুকের গভীরে... মূল রিভিউ: ফ্ল্যাপের লেখা পড়লেই বুঝা যায় যে অরুণ, জহির এ দু'জন উপন্যাসের নায়ক, আর তাদের বেশিরভাগ কথা পারমিতাকে ঘিরে, পারমিতাদির স্মৃতিচারণ করে। তাই পারমিতাকে নায়িকা বললে ভুল বলা হবে না। আবার পুরো বইতে জহিরের প্রভাতীকে উদ্দেশ্য করে লেখা বড় বড় চিঠিগুলো তাকেও নায়িকার আসনে বসাবে। একটা উপন্যাসে একটাই নায়ক, নায়িকা হবে এমন কোনো কথা নেই। কে মূল চরিত্র, কে পার্শ্বচরিত্র এসব নিয়ে মাথা ঘামাবার সময়ই পাবেন না, যদি কাহিনির গভীরে অবগাহন করতে পারেন। কথাগুলো কি খুব হেয়ালী মনে হচ্ছে? এ উপন্যাস পড়ার পর মনে হলো কোনো গতানুগতিক রিভিউ দিব না। গল্পচ্ছলে কিছু ব্যাপার তুলে ধরি। তাহলে হয়তো বইটির ব্যাপারে আপনাদের আগ্রহ আরো বাড়তে পারে! জীবনে এমন অনেক মুহূর্ত আসে, যখন আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। এমন অনেক ঘটনা ঘটে যখন আমাদের অবশ্যই কিছু করা উচিৎ, কিন্তু কিছুই করার থাকে না৷ কোনো এক অদৃশ্য শেকলে হাত-পা বাঁধা থাকে। আপন মানুষকে না চাইতেও দূরে ঠেলে দিতে হয়, তা সে যত আপনই হোক। এমনই ঘটনা ঘটেছিল পার্টিশনের সময়। জহির আর অরুণের ভাগ্য নির্ধারিত করেছিল দেশভাগের কাঁটাতারের সীমানা। বয়ঃসন্ধিকালের অসহ্য সময়ে তাদের আশেপাশের পরিস্থিতিও অসহ্য হয়ে উঠেছিল। যে ভূখণ্ডে তারা জন্মে, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সেখান থেকে সরে যেতে হয়েছিল অরুণদের৷ হ্যাঁ, ৪৭ এর দেশভাগের সময়ের গল্প এটা৷ অরুণ আর জহিরের মনে হাজারখানেক প্রশ্ন জন্ম দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আলাদা করে দেবার গল্প এটা। অরুণ, জহির। একজন হিন্দু, একজন মুসলিম। পাশাপাশি বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই যাদের সম্পর্ক বন্ধুর চেয়েও ভ্রাতৃত্বের, ভালোবাসার চেয়েও মায়ার। এ দুজনের বয়ঃসন্ধিকালের ভালোবাসা, প্রথম প্রেম একজন— পারমিতাদি। যে খুব সাদামাটা হয়েও আর দশটা মেয়ের থেকে আলাদা, নিজের মতো। যাকে ঘিরে অরুণ আর জহিরের শৈশব, কৈশোর কেটেছে, সেই পারমিতাদির জন্য ভালোবাসা তাদের মধ্যে কিছুটা মান-অভিমানের জন্ম দিয়েছে। তবু, মানুষ তো! এজন্মে সবকিছু পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তবু, একটা আক্ষেপ তো থেকেই যায়! পার্টিশনের দীর্ঘ পনেরো বছর পর অরুণ ফিরে এলো— না, ফিরে এলো না বলে বেড়াতে এলো বলি, কেমন? অরুণ বেড়াতে এলো, জহিরদের বাড়িতে৷ সেই পুরনো জানালার গরাদের ফাঁকে মাথা গলিয়ে গালে ঠান্ডা কোমল স্পর্শ পাওয়া। আহ, এমন সুখ আর কোথাও কি পাওয়া যায়? কোলকাতার সেই ঘিঞ্জি জীবনে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যস্ততায় কবে পাওয়া গেছে এমন ঠাণ্ডা কোমল স্পর্শ? যমুনাকে দেখে বড্ড মন খারাপ হয়৷ এক দেড় মাইল কাছে এগিয়ে এসেছে সর্বনাশা স্রোতের সাথে। পারমিতাদির বাড়ি কবে কোথায় হারিয়ে গেলো? তবে কি সে অনেক দেরী করে ফেলেছে? আর কি পাবে না পারমিতাদির খোঁজ? কোথায় আছে, কেমন আছে সে? জহিরের বাড়িতে সবকিছুই পাওয়া যায়। তবে সন্ধ্যার আগে জহিরকে পাওয়া মুশকিল। অফিসে যেয়ে এক দেড় ঘণ্টা অনর্থক বসে থাকে। অরুণের মুখোমুখি হতে বিবেকে বাঁধে৷ অরুণরা চলে যাবার দিন যদি সে অমন না করতো, হয়তো আজ তাদের জীবন অন্যরকম হতো! মনের বোঝা কমাতে প্রভাতীকে লেখা চিঠি। বড় বড় সব চিঠিতে ভাবের সাথে মনেরও আদান প্রদান চলে হয়তো। জীবনের এ প্রান্তে এসে এই একজনকেই সে সবকিছু বলে নির্ভার হতে চায়৷ প্রভাতী, যে থাকে যমুনার অপর পাড়ে। প্রভাতী, যে কুমারী থাকার সিদ্ধান্তে অনড়, তবুও জহিরের কথা শুনলে যার ভেতরে সব ওলোটপালোট হয়ে যায়। ব্যক্তিগত মতামত: আমার কাছে কোনো বই ভালোলাগার পূর্বশর্ত একটাই— বইয়ের কাহিনি মর্মস্পর্শী হতে হবে৷ কাহিনি টেনেছে গভীরে, হারিয়েছি অতলে। রিভিউ লেখার সময়েও মনে হচ্ছে কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছি না। কী বলবো, কীভাবে বর্ণনা করবো, বড্ড বিশেষণহীনতায় ভুগছি। একজন লেখকের দায়িত্ব যদি হয় ভালোমানের বই পাঠকদের উপহার দেওয়া, আমার মনে হয় একজন পাঠক হিসেবে আমাদেরও উচিৎ নিজের ভালোলাগা, মন্দলাগা লেখককে জানানো। আশা করছি আমার কর্তব্য আমি যথার্থভাবে পালন করেছি। প্রিয় লাইন: পুরো বইতেই অনেক সুন্দর সুন্দর ভাবনার খোরাক জাগায় এমন সুন্দর লাইন আছে। আমার সবচেয়ে প্রিয় লাইন এটি— "বয়স হলে তো মানুষ একেকজন একেকটা দ্বীপ হয়ে যায়। কারুর নাগাল আর কেউ পায় না।" শুভ হোক বই পড়া ❤️
Was this review helpful to you?
or
পর্ববঙ্গের এই ছায়াঘেরা যমুনার কোল, রামকৃষ্ণবাবুদের আমবাগান, মধ্য দুপুরের খা খা করা হাটখোলা, আর পারমিতার অষ্পষ্ট স্মৃতি বুকে নিয়ে জহির এতদিন বসে ছিল, এই চন্দনপুরে৷ সে জানতো- দৃশ্যমান এই জগতে হারিয়ে যাওয়া কোন স্থায়ী চিত্র নয়৷ অরুণ একদিন ঠিকই ফিরবে৷ সেই এক অমোঘ সত্যটা যে তাকে বড্ড পোড়ায়৷ অরুণ এসে সেই আগুন নেভাবে না? প্রভাতী, সমসাময়িক এক আধুনিকার নাম৷ প্রচন্ড আত্মকেন্দ্রিক, একগুঁয়ে, উড়নচন্ডী মেয়েটা মাত্র কিছুকাল আগে আবিষ্কার করেছে- জহির তার বুকের মধ্যেকার সেই অপেক্ষা, যা তার বেঁচে থাকার প্রকৃত অর্থ বহন করে৷ অতীতের সেই উদ্দেশ্যহীন ছুটে চলা, গৎবাঁধা দিন, আর জীবনের সাথে একলা যুদ্ধ করার কোন মানে নেই৷ বাবা রাজেন সরকারের রাজনৈতিক আদর্শের সাথে নিজেকে মিলেমিশে তৈরি করা মেয়েটার হঠাৎই এ কোন বোধোদয় ঘটল? নাকি নূরজাহান, রেহানার মতো সেও এক চিরন্তন অপেক্ষা পুষে রেখেছে? বুকের গভীরে
Was this review helpful to you?
or
"আমাদের কোন দেশ নেই জেঠিমা। আমরা এপার থেকে বিতাড়িত, ওপারেও যথাযথ সম্মান পাই না। রিফিউজি তকমাটা সহজে ঘুচবে না আমাদের।" অরুণের এই কথাটায় যে হাহাকার তা দেশভাগ সম্পর্কে জানা প্রতিটা লোকই অনুভব করতে পারবেন। বাংলাদেশের সাহিত্যে বর্তমানে প্রায় অনুপস্থিত একটা টপিক হল দেশভাগ। ইংরেজরা চলে যাবার পর যখন দেশভাগ হল তখন দেশের সাথে যে কত পরিবার কত সম্পর্কও ভাগ হয়ে গেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। আমার দাদার বড় বোন যিনি দেশভাগের পর ভারতে চলে গিয়েছিলেন, তার সাথে আক্ষরিক অর্থেই আমার দাদার আর কখনও দেখা হয়নি। অসংখ্য পরিবার অসংখ্য বন্ধুত্বের সম্পর্ক হারিয়ে গেছে এই সীমানার দুপাশে। এমনই কিছু সম্পর্কের গল্প রয়েছে শিহানুল ইসলামের এপারে কেউ নেই উপন্যাসে। আমার ছোটবেলা কেটেছে উত্তরবঙ্গে। বছরখানেক আগে আমি কাজের সুবাদে একবার গিয়েছিলাম। যে গলিতে আমার শৈশব আর কৈশোরের শুরুটা কেটেছে সেই গলিতে গিয়ে দেখলাম অনেক কিছুই চিনতে পারছি না। প্রায় অচেনা সেই মফস্বলে ফেলে আসা সম্পর্কগুলো সেদিন আমি আর খুঁজে পাইনি। পাবার কথাও না। শিহানের উপন্যাসের শুরুর অরুণের সাথে সেদিনকার আমার পার্থক্যটাও এখানে। অরুণ ফেলে আসা সম্পর্কগুলো খুঁজে পেয়েছিল। জহিরের মাঝেও নিজেকে খুজে পাওয়া যায়। পারমিতা আর প্রভাকে খুঁজে না পাওয়ার কষ্টটার সাথে প্রত্যেকেই নিজেকে সহজে একাত্ব করতে পারে। উপন্যাসের চরিত্র চিত্রণের স্বার্থকতাই এখানে। চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজেকে খুঁজে না পেলে। সেই চরিত্রটি স্বার্থক হয় না। সেক্ষেত্রে চরিত্রায়নের দিক থেকে শিহানুল ইসলাম স্বার্থক। এপারে কেউ নেই পড়ে মনেই হবে না এটা শিহানের প্রথম উপন্যাস। চরিত্র চিত্রায়ন, বর্ণনা, ডেভলপমেন্ট, প্লট এবং চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্ব ফুটিয়ে তোলার মধ্যে যে মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায় তা সত্যিই আশাতীত। কিছু কিছু জায়গায় আমার একটু বাধোবাধো ঠেকেছে, এডিটিং আর প্রুফ রিডিংয়ের ক্ষেত্রে লেখককে আরেকটু যত্নবান হওয়া উচিত। উপন্যাসটির চরিত্র আর ডায়লগের মধ্যে যে কাব্যভাব তা আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছে। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। আমি একটু হিউমার দেওয়া বা কাঠখোট্টা বর্ণনা পছন্দ করি বলেই হয়ত। এপারে কেউ নেই দেশভাগের গল্প না, গল্পটা সম্পর্কের, হারানো শেকড়ের। একবার পড়লে যেকারো ভালো লাগবেই। শিহানুল ইসলাম এই উপন্যাসে নিজের স্বকীয়তা দেখাতে সফল। আমি এপারে কেউ নেই, এর সিক্যুয়েল আর লেখকের সাফল্য কামনা করি।
Was this review helpful to you?
or
বেশ অনেক দিন পর এপার বাংলার কোন লেখকের এমন অসাধারণ মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস পড়লাম। কোন ভাবেই বর্তমানের লেখকদের সমসাময়িক উপন্যাসের সাথে একে মেলাতে পারবেন না।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম- এপারে কেউ নেই লেখক- শিহানুল ইসলাম প্রকাশনী- ভূমি পৃষ্ঠা সংখ্যা- ১৭৬ মুদ্রিত মূল্য-২১০ টাকা ১৯৬২ সালের বিভক্ত বাংলা। স্বাধীন বাংলা। কাগজে কলমে স্বাধীন হলেও আসলে কি স্বাধীন? দুই বাংলাই কি অন্যের ছড়ি ঘোরানোতে অতিষ্ঠ নয়? বুকের ওপর দিয়ে কাঁটা তার বয়ে যাবার পরে সবাই কি খুশী? কেউ কেউ কি ভিটে মাটি ছেড়ে থাকতে কষ্ট পাচ্ছে না? পার্টিশনের ১৫ বছর পড় নিজের গ্রামে ফিরে আসলো অরুণ। বুকের ভেতর সূক্ষ্ম একটা ব্যথা অনুভূত তো হচ্ছেই। মনে পরে যাচ্ছে শৈশব কৈশোর এর দিনগুলোর কথা। কলকাতার রিফিউজি অরুণের কাছে নিজের মাতৃভূমিটাও আর নিজের নেই। এই দেশ তার না। এই গ্রাম কি এখনো তার? বন্ধু জহির ও আর সকলের সাথে কয়টা দিন কাটানোর জন্য এখানে ফেরত এসেছে সে। জহির কি আজও প্রভাতিকে ভুলতে পেরেছে? দুজন দুজনের এত কাছে তবুও কেন এত দূরে তারা। এত কাছাকাছি থেকেও কেন তারা এক অপরের হতে পারছে না? পারমিতা কি শুধুই এক স্বপ্নের নাম? অবিভক্ত বাংলার চন্দনপুর আর পূর্ব পাকিস্তানের চন্দনপুর কি আসলে এক? পাঠ পতিক্রিয়া- আমার বেশীরভাগ সময় মারমার কাটকাট থ্রি;আর ফ্যান। ওই জনরার বই বেশী পড়া হয়, তবে এখন ভিন্ন জনরা বই নিয়ে কিছুটা নাড়াচাড়া শুরু করেছি। এই ধরণের স্পর্শকাতর বিষয়ের বই বআগে তেমন পড়া হয়নি। মন খারাপটা হয়েই ফেল। লেখকের লেখনীতে আমি মুগ্ধ।
Was this review helpful to you?
or
~বৃষ্টির দিনে পড়ার মতো একটি বই নিয়ে কিছু কথা~ একটি বর্ষণমুখর দুপুরে বইটা পড়া শুরু করেছিলাম। পৃষ্টার পর পৃষ্টা যতই এগিয়ে যাচ্ছিলাম, বুঝতে পারছিলাম উপযুক্ত সময়েই বইটা হাতে নিয়েছি। বিষন্ন বৃষ্টি দিনে বইটি হয়েছিল আমার একান্ত সঙ্গী। ‘এপারে কেউ নেই’ শব্দ ক’টি চোখে পড়লেই মনে হয়, কোন নদীর এপারে কেউ একজন একা বসে আছে। ওপারে চেয়ে তার হৃদয়ে হাহাকার ধ্বনিত হয়। তার মনে হয়, এপারে সে ছাড়া আর কেউ নেই, সবাই ওপারে। সেই একজনটা আমি। হ্যা, শব্দগুলো দেখে সর্বপ্রথম আমার এটাই মনে হয়েছিল। #সার_সংক্ষেপঃ সার-সংক্ষেপ বলা মানে বইয়ের ভেতর কী আছে সংক্ষেপে বলে দেয়া। গতানুগতিকতা বজায় রাখতেই লিখতে হচ্ছে। নাহয় ইচ্ছে ছিল না। আমার ইচ্ছে পাঠক নিজেই বইটি পড়ে সবটা জানুক। ‘এপারে কেউ নেই’ বইটির একশত ছিয়াত্তর পৃষ্টায় কয়েকটি চরিত্র আছে। শুরুতে মনে হবে ‘অরুণ’ মূল চরিত্র বা নায়ক। কিন্তু আসলে অরুণ একা নয়। আছে জহির, প্রভাতী, রাজেন সরকার। প্রত্যেকেই মূল চরিত্রের ভূমিকায় ছিল বললে ভুল হবে না। সাতচল্লিশের দেশভাগ অরুণের জীবনকে পুরো ওলট পালট করে দিয়েছে। যে মাটিতে তার জন্ম, যেখানে বেড়ে ওটা, শৈশব কৈশোরের নানা স্মৃতি সে মাটি থেকে অরুণদের বিতারিত করা হয়েছিল। সেখানেই সে হারিয়েছে জীবনের অমূল্য সম্পদ। তারপরও পনেরো বছর পর, যখন সে টগবগে যুবক, স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভালোভাবে সব চলছে, তখন কীসের টানে সে ফিরে এসেছে! স্মৃতি হাতড়ে বেড়াতে? পুরনো ক্ষতকে জাগিয়ে তুলতে? কাউকে খুঁজে পেতে? নাকি শুধুই শেকড়ের টানে! জহির, অরুণকে খুঁজেছিল অনেক। কতো কথা জমিয়ে রেখেছিল তাকে বলবে বলে। সেই জহির অরুণকে পনেরো বছর পর কাছে পেয়েও কেন কাছে টেনে নিতে পারে না। বুকের মধ্যে জমে থাকা কথার পাহাড় উগড়ে দিয়ে হালকা হতে পারে না কেন? সময়ের ব্যবধানে কী সবকিছু বদলে গেছে দুই প্রাণের বন্ধুর মধ্যে! মেয়ে হয়েও যে নিজেকে আগে মানুষ বলে ভাবে, আত্মনির্ভরশীল আর কথার মাঝে যার তীব্র সম্মোহনী শক্তি, সুকণ্ঠে গান গেয়ে সে রোজ সকালে পাড়ার ঘুম ভাঙায়। উনিশ বছরের তন্বী তরুণী মেয়েটির নাম প্রভাতী। দেশভাগের সময় সে তার সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে। তারপরও সে বেঁচে থাকে। লাঞ্চনা গঞ্জনা সয়েও সে দিন কাটায়। কার অপেক্ষায়, কীসের অপেক্ষায়! রাজেন সরকার। প্রতাপশালী, মানবদরদী একজন মানুষ। মৃত্যুর সময় কোন পাপের অনুতাপে সে অনুতপ্ত হয়? পারমিতা দুই কিশোরের চোখে অনন্য এক রমণী। অহমিকা যার অলংকার। অথচ প্রথম স্পর্শের অনুভূতির কথা ভুলতে না পেরে মেয়েটা তিলে তিলে নিজেকে শেষ করে দিল। উপন্যাসে আরও কয়েকটি চরিত্র আছে। যেগুলো ঘটনার প্রয়োজনে উপস্থিত হয়ে উপন্যাসটিকে পূর্নাঙ্গতা দান করেছে। #পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ শুরুতেই লিখেছি, ‘এপারে কেউ নেই’ শব্দত্রয় দেখে মনে হয়েছিল আমার কথায়ই বুঝি লেখা আছে উপন্যাসে। আমার অনুমান পুরোপুরি মিথ্যে ছিল না। অরুণ যতবারই তার শৈশবে ফিরে গেছে, অথবা অতীতের সাথে বর্তমানের তফাৎ খুঁজে পেয়েছে ততবারই অরুণের জায়গায় নিজেকে আবিস্কার করেছি আমি। যমুনার তীর, রামকৃষ্ণবাবুদের আমবাগান, মধ্য দুপুরের খাঁ খাঁ করা হাটখোলা আমাকে টেনে নিয়ে গেছে আমার শৈশবের দিনগুলোতে। আমাকে কিন্তু কোন দেশভাগের ঘটনা আমার সেই স্মৃতিময় স্থান থেকে দূরে সরায়নি, পরিস্থিতি আমাকে সে জায়গাটা ছাড়তে বাধ্য করেছে। অরুণের জন্য সাতচল্লিশের সেই দেশভাগটাও পরিস্থিতিই ছিল বটে, তবে নৃশংস ও উত্তাল। লেখক দক্ষ চিত্রশিল্পীর মতো নিঁখুতভাবে প্রত্যেকটা চরিত্র এঁকেছেন। অরুণ, জহির, পারমিতাদি সবাই একই সুতোই বাঁধা। আবার সূক্ষ্মভাবেই একে অন্যের চেয়ে অনেক আলাদা। জহির আত্মগ্লানীতে ভুগতে থাকে আর নিজেকেই নিজে শাস্তি দিতে থাকে। অথচ সে জেনে নিতে পারতো অরুণের সেসব মনে আছে কিনা, অথবা ক্ষমা চাইতে পারতো। কিন্তু সে বেছে নিয়েছে অন্তহীণ প্রায়শ্চিত্ত। রাজেন সরকার আর পারমিতাদি দুটি চরিত্রই রহস্যময়। অথবা বলা যায় মুখোশ পড়ে নিজেকে আড়াল করে রাখে তারা। দুজনেই ভিন্ন ভিন্ন আক্ষেপ নিয়ে জীবন সায়াহ্নে পৌছে। অন্যদিকে প্রভাতী যেন অপেক্ষারই মূর্তিরূপ। যখন রিভিউটা লিখছি, তখনও বৃষ্টি পড়ছে। আগে এক বসাতে পুরো একটা বই শেষ করতে পারতাম। কিন্তু এখন সম্ভব হয়ে ওঠে না। সংসারের দৈনন্দিন রুটিনের ফাঁকে দুটো দিন বের করেছি উপন্যাসটির জন্য। ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল, দুদিনই ঝুম বৃষ্টি হয়েছে। একদিকে বৃষ্টির একটানা ঝরে পড়ার শব্দ, অন্যদিকে জহির, অরুণ, প্রভাতীর হৃদয়ের হাহাকার বর্ষণে আমি সিক্ত হচ্ছি। বইটি বন্ধ করে বিমূঢ় হয়ে ভাবছিলাম, কেন এমন হলো! লেখকের প্রথম উপন্যাসেই তিনি সার্থক বলা চলে। বইটি পাঠককে ধরে রাখতে পারে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়ে। আবার পাঠক নিজেই সব প্রশ্নের উত্তর একে একে পেয়ে তৃপ্ত হবে। বইটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সাতটি দীর্ঘ চিঠি। চিঠির প্রতি যাদের মোহ আছে তাদের নিঃসন্দেহে খুবই ভালো লাগবে। সবশেষে বলব, বইটির কল্যাণে দুটো বিষন্ন দুপুর আমার ভীষণ ভালো কেটেছে। অনেক ভেবেও সমালোচনা করার কিছু পেলাম না। এজন্য দুঃখিত।
Was this review helpful to you?
or
বইটি নিয়ে কিছু বলার আগে একটা প্রশ্ন সবার আগেই করে নিতে চাই। একজন লেখকের স্বার্থকতা কোনটি- 'চলে' টাইপের লেখায় অনেক পাঠক পাওয়া, নাকি পাঠক না পেলেও লেখা দিয়ে হৃদয়ে স্থান করে নেয়া? আমি সাধারণত প্রচণ্ডভাবে মনে গেঁথে না গেলে সেই বই নিয়ে কিছু লিখতে পারিনা। সেখানে এই বইটি পড়ার পর থেকে কিছু লেখার জন্য কিলবিল করছিলো। এই লেখকের পরিচিতি নেই, পাঠক নেই, তবু এই অনলাইনের যুগেও কেন প্রকাশক নিজে এই বইয়ের প্রকাশের দ্বায়িত্ব নিয়েছেন জানেন? কারন যে এই বইটার পাণ্ডুলিপি একবার পড়েছে সে এক বাক্যে বলতে বাধ্য "এই বইটি আজ হোক কাল হোক আলোড়ন তুলবেই।" হ্যাঁ, আমি কেন এই বইটি নিয়ে আজ লিখতে বসেছি জানেন, ঠিক একই কথা, একই তৃপ্তি নিয়ে। বর্তমানে মৌলিক উপন্যাসের মৃত্যপ্রায় আর থ্রিলারমুখী প্রজন্মের সময়ে এমন নিরেট আর অসাধারণ একটা মৌলিক গল্প দীর্ঘদিন অপেক্ষার তৃপ্তির ফল হতে পারে। কী আছে এই বইয়ে? আছে একটি গল্প, আছে লেখকের চমৎকার সাবলীল উপস্থাপনা, আছে হৃদয়ে দাগ কাটার মত মুন্সিয়ানা। দেশ ভাগ নিয়ে অসংখ্য গল্প আছে। তবে সুনীল গাঙ্গুলীর "এপার ওপার" এর পরে দেশ ভাগ নিয়ে আবার কোন উপন্যাস আমার হৃদয়টা চিড়ে দিয়ে গেছে। বইটা আপনি পড়বেন কি পড়বেন না সে নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমি সেটা নিয়ে বলতেও চাচ্ছি না। আমার কথায় কতটুকু ভিত্তি আছে বা নেই সেটাও নাহয় বইয়ের উপরেই থাক। শুধু বলতে পারি, এই বইটি আমার পড়া সেরা বইগুলোর একটা এটুকু অন্তত নিশ্চিত বলতে পারি। বইটি আজ হোক, কাল হোক, আলোচিত হবেই। ভীষণ দাগ কাঁটা একটা উক্তি- "সময় খুব নিষ্ঠুর একটা ঔষধ। যা ভুলতে চাই না, তা সুন্দর করে ধূলোর আস্তরণ মেখে ভুলিয়ে দেয়। আর যা ভুলতে চাই, তা স্তরে স্তরে গুছিয়ে রাখে বুকের মধ্যে। " বইটির ফ্লাপ থেকে যদিও এর মাহাত্ম্য বোঝা যাবে না, বোঝা যাবে না কেন এই বইটি নিয়ে এতকিছু বলা, তবুও বইটির ফ্লাপ থেকে কিছুটা.. পার্টিশনের ঠিক পনেরো বছর বাদে অরুণ চন্দনপুর ফিরে এলো৷ নাকি সে পিছিয়ে এলো পনেরোটা বছর? পর্ববঙ্গের এই ছায়াঘেরা যমুনার কোল, রামকৃষ্ণবাবুদের আমবাগান, মধ্য দুপুরের খা খা করা হাটখোলা, আর পারমিতার অষ্পষ্ট স্মৃতি বুকে নিয়ে জহির এতদিন বসে ছিল, এই চন্দনপুরে৷ সে জানতো- দৃশ্যমান এই জগতে হারিয়ে যাওয়া কোন স্থায়ী চিত্র নয়৷ অরুণ একদিন ঠিকই ফিরবে৷ সেই এক অমোঘ সত্যটা যে তাকে বড্ড পোড়ায়৷ অরুণ এসে সেই আগুন নেভাবে না? প্রভাতী, সমসাময়িক এক আধুনিকার নাম৷ প্রচন্ড আত্মকেন্দ্রিক, একগুঁয়ে, উড়নচন্ডী মেয়েটা মাত্র কিছুকাল আগে আবিষ্কার করেছে- জহির তার বুকের মধ্যেকার সেই অপেক্ষা, যা তার বেঁচে থাকার প্রকৃত অর্থ বহন করে৷ অতীতের সেই উদ্দেশ্যহীন ছুটে চলা, গৎবাঁধা দিন, আর জীবনের সাথে একলা যুদ্ধ করার কোন মানে নেই৷ বাবা রাজেন সরকারের রাজনৈতিক আদর্শের সাথে নিজেকে মিলেমিশে তৈরি করা মেয়েটার হঠাৎই এ কোন বোধোদয় ঘটল? নাকি নূরজাহান, রেহানার মতো সেও এক চিরন্তন অপেক্ষা পুষে রেখেছে? বুকের গভীরে.... . বই- এপারে কেউ নেই লেখক- শিহানুল ইসলাম প্রচ্ছদ- সজল চৌধুরী প্রকাশনী- ভূমি প্রকাশ পৃষ্ঠা- ১৭৬ মলাট মূল্য- ২৩০
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম :এপারে কেউ নেই ধরন:- মনস্তাত্ত্বিক সামাজিক উপন্যাস লেখক:- শিহানুল ইসলাম প্রকাশনী:- ভূমিপ্রকাশ প্রকাশকাল:- ২০১৮বইমেলা পৃষ্ঠা :-১৭৬ মূল্য:-২১০/= " এপারে কেউ নেই " নিছক কোনো নাম নয়, অনেকগুলো হাহাকার,অনুভূতির সমষ্টি "এপারে কেউ নেই "। দেশভাগ কেন্দ্রিক উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র একটি নয়... একাধিক... অরুণ , জহির, প্রভাতী এবং নূরজাহান। সবাই নিজেকে মেলে ধরেছে বইটিতে কি দারুন ভাবে ! কি সাবলীল ভাবে! দেশভাগের ঠিক পনের বছর পর যেন চেপে রাখা অতীত ফিরে এসেছে যমুনা নদীর কোল ঘেষা "চন্দনপুরে " কিন্তু দৃশ্যমান এই জগতে হারিয়ে যাওয়া কোনো স্থায়ী চিত্র নয়। তাই তো দীর্ঘ দিনপর নাড়ির টানে দেশে ফেরা অরুণ যেন বারবার ডুব দেয় অতীতে । বুকে পনের বছরের অাগুন নিয়ে অপেক্ষারত জহির... উত্তাল সময়ে প্রিয় বন্ধুকে অাশ্রয় দিতে না পারার অাগুন অাদৌ কি নেভানো সম্ভব? অাধুনিক, স্বাধীনচেতা, অাত্মকেন্দ্রীক প্রভাতী যেন বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পায় জহিরের কাছে। রেহানাবু অার নূরজাহান যেন একে অপরের ছায়া... বুকে পুষে রাখা এক গোপন অপেক্ষা যে দুজনকেই পোড়ায় ভীষণ। অার্টসেলের বিখ্যাত গান 'অনিকেত প্রান্তর' এর শুধুমাত্র দুটি লাইন- " দুটো মানচিত্র এঁকে দুটো দেশের মাঝে, বিধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ " এর প্রতিচ্ছবি যেন "এ পারে কেউ নেই "। সত্যিই তো দেশভাগের ফলে কত তরুণ হৃদয়ে ঘটে গেছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ । " এপারে কেউ নেই " দারুণ একটি মনস্তাত্ত্বিক সামাজিক উপন্যাস। উপন্যাসের প্রত্যেকটি চরিত্র তরুণ- তরুণী শুধু ব্যতিক্রম রাজেন সরকার অারো ব্যতিক্রম হলো যেন প্রভাতী । উপন্যাসের সবচেয়ে শক্তিশালী চরিত্র মনে হয়েছে প্রভাতীকে। প্রভাতীকে তুলনা করা যায় বর্তমান সময়ের তরণীদের সাথে... অামি নিশ্চিত অনেক মেয়েই প্রভাতীতে নিজেকে খুঁজে পাবে। প্রভাতী অাধুনিক, দৃঢ় স্বাধীনচেতা , বাবার রাজনৈতিক অাদর্শে বেড়ে ওঠা এক তরুণী কিন্তু দেশভাগ যেন অন্যভাবে দেখতে শিখিয়েছে তাকে... অারেকটা শক্তিশালি চরিত্র হচ্ছে অরুণ। মূলত পনের বছরের পুরোনো এক ক্ষত নিয়ে স্বদেশে ফেরা অরুণের অাগমনের মধ্যে দিয়েই অাত্মপ্রকাশ ঘটে সবার । জহির এক ব্যতিক্রমী চরিত্র। প্রিয় বন্ধুকে অাশ্রয় দিতে না পারার যাতনা জহিরকে কুড়ে কুড়ে খায়.... জহির যেন শান্তি খুঁজে ফেরে প্রভাতীর কাছে। তবে সবচেয়ে অবাক করা চরিত্র মনে হয় পারমিতা...যে না থেকেও অাছে নিজের অাবেশ ছাড়িয়ে.... অদ্ভূত এভাবেও লিখা যায়? প্রকৃতি অার সময়ের সাথে চরিত্রগুলো যেন মিশে ছিলো নিবিড়ভাবে। দেশভাগ নিয়ে তো কতই গল্প, উপন্যাস,কবিতা অাছে "এপারে কেউ নেই " অবশ্যই ব্যতিক্রমী কিছু। ঘোর লাগা বর্ণনা, কথোপকথন অার অবশ্যই দারুণ ৫ টি চিঠি । একটানা পড়ে গেছি..... এখন এমন একটা সময় যেখানে বইয়ের মান ও ভালোমন্দ বিচার হয় অনলাইন এক্টিভিটির উপরে। বলছি না এটি খুব খারাপ কিছু কিন্তু বাংলা সাহিত্যের জন্য খুব একটা সুখবর অবশ্যই না। জাত পড়ুয়ারাদের কাছে অনুরোধ থাকবে বর্তমানের এই প্রথাটি ভেঙ্গে বইকে বই হিসেবেই দেখুন। অামার দৃঢ়বিশ্বাস "শিহানুল ইসলাম" বাংলা সাহিত্যে ধূমকেতু হতে অাসেন নি,উজ্জ্বল নক্ষত্র হতেই এসেছেন.....সাধারণত অটোগ্রাফ/ফটোগ্রাফের প্রতি খুব একটা অাকর্ষন নেই, "এপারে কেউ নেই " এ অটোগ্রাফ নিয়েছি বইটি পড়ার পড়েই । লেখকের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_নভেম্বর গল্পটা অরুণের। দেশ ছেড়ে যাওয়ার এক যুগ পেরিয়ে যাওয়ার পর যে ফিরে এসেছে নাড়ির টানে। পার্টিশনের পর যাকে প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল ওপারে। গল্পটা জহিরের। উত্তাল সেই সময়ে যে প্রিয় বন্ধুকে নিজের বাড়িতে জায়গা দিতে পারেনি। যার অনুশোচনা পনেরো বছর ধরে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাকে। পারমিতার অষ্পষ্ট স্মৃতি বুকে নিয়ে জহির অপেক্ষা করছিল। সে জানতো- অরুণ একদিন ঠিকই ফিরবে৷ সেই এক অমোঘ সত্যটা যে তাকে বড্ড পোড়ায়৷ তার বিশ্বাস, অরুণ এসে সেই আগুন নেভাবে। সত্যিই কি অরুণ জহিরের বুকের মধ্যকার আগুন নেভাতে পেরেছে? গল্পটা প্রভাতীর। প্রচন্ড আত্মকেন্দ্রিক, একগুঁয়ে, উড়নচন্ডী মেয়েটা মাত্র কিছুকাল আগে আবিষ্কার করেছে- জহির তার বুকের মধ্যেকার সেই অপেক্ষা, যা তার বেঁচে থাকার প্রকৃত অর্থ। মেয়েটা জীবনের সাথে একলা যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত। তাই সে জহিরকেই আঁকড়ে ধরতে চায়। গল্পটা নূরজাহানের, সেও বুকের গভীরে এক চিরন্তন অপেক্ষা পুষে রেখেছে। অপরিচিত শহরের প্রতি যার অদ্ভুত ভালোবাসা … গল্পটা রাজেন সরকারের। যিনি রাজনৈতিক আদর্শের সাথে নিজেকে একাকার করে দিয়েছেন। এবং গল্পটা অবশ্যই পারমিতার। যে বইয়ে নেই, কিন্তু পুরো বই জুড়ে যার আবেশ ছড়িয়ে আছে। গল্পটা সাতচল্লিশের উত্তাল সময়ের মুখোমুখি হওয়া মানুষগুলো মনস্তত্ত্ব নিয়ে … পাঠ প্রতিক্রিয়া সাধারণত থ্রিলার হাইভোল্টেজ বইগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, একবার বই হাতে নিলে শেষ না করে রাখা যায় না। এসবক্ষেত্রে জীবনধর্মী বইয়ে অত স্পিডে না পড়লেও চলে। আমি চেয়েছিলাম এই বইটি তারিয়ে তারিয়ে পড়ব। একটু একটু করে পড়বো যাতে শেষ না হয়ে যায়। কিন্তু আমি আমার ইচ্ছেটাকে বহাল রাখতে পারিনি। বইটা পড়তে শুরু করার পর অদ্ভুত এক আচ্ছন্নতায় ডুবে গিয়েছি। মনে হচ্ছিল একটা অস্ফুট হাহাকার বুকের মধ্যে আটকে আছে। তাই টানা পড়ে যাচ্ছিলাম, যদি এই হাহাকারের আবেশ থেকে বেরুতে পারি … শেষ পর্যন্ত বেরুতে পেরেছিলাম কি না, বলবো না। সেটা আপনারা নিজেরা যাচাই করবেন। প্রভাতীর চরিত্রটার মধ্যে যেন নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলাম। আমার কেন যেন মনে হয়, এই বইয়ের কোনো না কোনো চরিত্রে মেয়েরা নিজেকে খুঁজে পাবেই। চরিত্রগুলো যেন তৈরিই করা হয়েছে সেভাবে। পুরো বইটা যেন একটা চিঠির পশরা। মোট পাঁচটি চিঠি বইয়ে। চিঠিগুলো যেন একেকটা গল্প। নিজের ভিতরের স্বত্ত্বার প্রকাশ, পারিপার্শ্বিকতা, আবেগ, জীবনবোধে টইটম্বুর। বইয়ে চিঠির ফ্রন্টটাও দারুণ। হাতে লেখা চিঠির ফ্লেভার পাচ্ছিলাম। বইয়ের কিছু কিছু জায়গা পড়ে কেমন ধাক্কার মতো লাগে। পাশাপাশি বসে এককালের প্রাণের বন্ধু জহির, পনেরো বছর পর এপারে ফিরে আসা অরুণকে যখন বলে, "শুধু কাছাকাছি থাকলেই কি ছোঁয়া যায়? তুই কি পারছিস অরুণ, আমায় ছুঁতে?" বেদনার সমস্তটা যেন বাঁধভাঙা ঢেউয়ের মতো এক ঝাপটায় ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায় এই লাইনদুটোতেই। এখানটায় তীব্রভাবে কেঁপে উঠেছিলাম। সত্যিই তো। পাশাপাশি বসে থেকেও যেন অরুণ আর তার বন্ধুকে ছুঁতে পারছিল না। এমনটা তো আমাদের জীবনে অহরহ হয়। খুব কাছাকাছি থেকেও যেন ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। বর্ণনাভঙ্গির কথা একদম না বললেই নয়। প্রকৃতির এরকম উপমারহিত সৌন্দর্য আর পড়িনি। বই থেকে কয়েকটা লাইন তুলে দিই। " চন্দনপুরের ভোর মানে এক পাল ঠান্ডা বাতাসের পরশ৷ মনে হয়- কাছেই কোথাও খুব জোরে ঢল নেমেছে৷ অথচ তা নয়, হাজার মাইল পেরিয়ে এইখানে এসে বাতাসেরা একটু জিরিয়ে নেয়৷ যমুনার ঘোলা জলের ওপর আলতো করে শুয়ে থাকে, গা ধোয়৷ তারপর ভেজা শরীর নিয়ে বয়ে চলে যায় পশ্চিমের কোন মরুভূমিতে … " কিংবা " … যমুনার বিশালতার মধ্যে বুঁদ হয়ে রইল খানিক্ষণ৷ এরপর আমায় পেছনে ফেলে পাড় ধরে উত্তর দিকে হাঁটতে লাগল৷ স্রোতের উল্টোদিকে৷ আমি বেশ জোর গলায় বললাম, 'তোর একটা চিঠি আছে আমার কাছে৷ পারমিতা'দির লেখা৷ এতদিন ঠিকানা ছিল না বলে পোস্ট করা হয়নি৷' অরুণের কোন সাড়া শব্দ নেই৷ তাকিয়ে দেখি- অনেকটা দূরে চলে গেছে৷ আমার নাগালের বাইরে৷ এই দূরত্ব ঘোচায়, কার সাধ্য?" কথোপকথনগুলো মোটেও সাধারণ নয়। ডায়লগগুলোর মধ্যে যে কী গভীর মনস্তত্ত্ব! আমি শিওর এই লোক তার বৌকে এরকম বাক্যবাণ দিয়েই কাবু করবে! কেবল প্রশংসাই করে গেলাম। একটা বইয়ে কোনো খুঁত থাকবে না, তা তো হয় না। খুঁত আছে। তা হলো, লেখনীতে ওপার বাংলার একটা টান আসে। ঠিক নির্দিষ্ট কোনো লেখকের মতো নয়। ওপারের লেখকেরা কিছু বিশেষ শব্দ ব্যবহার করেন নিজেদের লেখায়। সেসব শব্দের কিছু এই বইয়েও আছে। তবে লেখনীতে ডুবে গেলে এটা খুব একটা সমস্যা করে না। বইয়ের প্রচ্ছদ একদম পারফেক্ট হয়েছে টপিকের সাথে। বাঁধাইও বেশ ভালো। নতুন প্রকাশনী হিসেবে ভূমি ভালো কাজ দেখাচ্ছে। খুব করে আবেশিত হতে চাইলে, বইয়ের পাতায় পাতায় বুঁধ হয়ে থাকতে চাইলে "এপারে কেউ নেই" বইটি আমার পক্ষ থেকে হাইলি রেকমেন্ডেন্ট। বই- এপারে কেউ নেই (মনস্তাত্ত্বিক সামাজিক উপন্যাস) লেখক- শিহানুল ইসলাম প্রচ্ছদ- সজল চৌধুরী প্রকাশনা- ভূমি প্রকাশ মলাট মূল্য- ২১০ প্রকাশকাল - বইমেলা ২০১৮ প্রাপ্তিস্থান : অনলাইন বুকশপ, নীলক্ষেত এবং তাদের শোরুম : ৩৮ বাংলাবাজার, ২য় তলা। (সিঁড়ি দিয়ে ওঠে বাদিকে ফেইথ বুকস এর সাথে লাগোয়া।)
Was this review helpful to you?
or
বই: এপারে কেউ নেই জনরা: মনস্তাত্ত্বিক সামাজিক উপন্যাস লেখক: শিহানুল ইসলাম প্রকাশনী: ভূমি প্রকাশ প্রকাশ কাল: বইমেলা ২০১৮ পৃষ্ঠা: ১৭৬ প্রচ্ছদ: সজল চৌধুরী মুদ্রিত মূল্য: ২১০৳ কাহিনী সংক্ষেপ : এ গল্পটা নাড়ীর টানে ১৫ বছর পর ফিরে অাসা এক যুবক অরুনের। দেশ ভাগের পর ওপার বাংলায় যার অাশ্রয় মিলে। যে দেশে তার শিকড়, শৈশব, বেড়ে ওঠা ভালো লাগা তা যেন এক নিশ্বাসে উপরে ফেলে বিচ্ছিন্ন করা এক শুকনো লতা। যেই দেশটা তার হয়েও তার অাপন না কোলকাতায়ও যার পরিচয় রিফিউজি। কিংবা গন্ডগোলের সময় ভাইয়ের চেয়ে প্রিয় বন্ধুকে নিজ বাড়িতে অাশ্রয় দিতে না পারার গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকা জহিরের। দিনের পর দিন সূক্ষ্ম অপরাধ বোধ যাকে কুড়ে কুড়ে খায়। কিন্তু পনের বছর পর অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েও যেন শেষ হয় না। ইচ্ছে হলে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিতে পারলেও যেন বন্ধুর মনটা এখন অার ছুঁয়ে দেখতে পারছে না যোজন যোজন দূরত্ব কিংবা কাঁটতারের বেড়ায় ঝুলে অাছে অনুভূতি গুলো। অথবা পারমিতা'দির যে না থেকেও পুরোটা সময় জুড়ে অাকড়ে ছিল জহির, অরুনের মানসপটে। কিছু সুখস্মৃতি অার অপরাধবোধ যা তাড়িয়ে বেড়ায় তিনজনকেই। প্রভাতী নামক অাত্মপ্রত্যয়ী, স্বাধীনচেতা মিষ্টি মেয়েটার। ছুঁয়ে দেখার অাজন্ম তৃষ্ণা থেকেও যে অস্পৃশ্য সমাজে। রাজেন সরকারের মত প্রভাবশালী মানুষের মৃত্যুকালীন অনুতাপ বা রেহেনা'বু, অনুর মত অপেক্ষার প্রহর গুণে কাটানোর কিছু খন্ডচিত্র নিয়েই যার কাহিনী ঘেরা। নিজস্ব মতামত: পাহাড় ভালো লাগার কারনে ওপার বাংলার লেখকদের লেখার প্রতি অামার একটু দুর্বলতা ছিল। তাদের পাহাড়, চাবাগান, দার্জিলিংয়ের গল্পের প্রতি। এবইয়ে কোন পাহাড়ের গল্প নাই তবু যেন বইটা খুব করে অামার ভালো লাগলো যেন ওপার বাংলার কারো বইয়ের সেই প্রেম এখানে, কোন মন্দ লাগা নেই যেখানে। বইটা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল কোন এক বিকেলে যমুনার পাড়ে নিশব্দে হাঁটতে হাঁটতে গল্প খুঁজছি এ পাড়ে কি সত্যই কেউ নেই। নুরজাহানের মত অচেনা শহরের প্রতি প্রবল অাগ্রহ থেকেই অামার যমুনা পাড়ে যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে। এছাড়া বইয়ের কাহিনী নির্ভর যে চিঠিগুলো লেখক লিখছেন তার শীতল স্পর্শ পাঠক মনকে ছুয়ে যাবে।