User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
প্রথমবার রিভিউ লেখার সময় পুরোপুরি নৈর্ব্যক্তিকভাবে লেখা সম্ভব হয়নি! পড়ার গল্প নিয়ে অনেকখানি ক্ষোভ তৈরী হয়েছিলো। এবং লেখার সেই ক্ষোভটুকু রিভিউ এর মধ্য ঢুকে পড়েছিলো! শুধু যে ঢুকে পড়েছিলো সেটিই নয়; একদম সেই ক্ষোভটুকু দিয়েই শুরু করে প্রথম লাইনটি লিখেছিলাম। একদম নবীন একজন লেখিকা গল্প লিখে পাঠকের মনে রাগ, আনন্দ, ক্ষোভ বা মনখারাপের মতো অনুভূতি জন্ম দিচ্ছেন, এর মতো খুশির সংবাদ পাঠকবর্গের জন্য আর কিছু নেই!! বইটি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে একলাইনে কিছু বললে বলতে হবে, খুব যত্ন আর আর আবেগে মোড়া একটি নিপুণ প্রেমের উপন্যাস। ত্রিমাত্রিক প্রেমের গল্পটা আপনার কিংবা আমার মতো চারপাশের মানুষগুলোর। সাধারণের আবরণে ঢাকা একান্ত আবেগের আর বাস্তবতার গল্প। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে জীবন্ত হয়েছে জীবনের জটিলতম একটি অধ্যায়। গল্পের শুরু হয়, ছন্নছাড়া জীবন বেছে নেওয়া মধ্যবয়স্ক রুপম আহসানের আত্মভাবনা দিয়ে। উনিশ বছর আগের প্রাণচঞ্চল, সাদাসিধে, কর্মঠ, একটু অর্ন্তমুখী তরুণ জীবনের অদ্ভুত খেয়ালে বেছে নেয় ভবঘুরে জীবন। বুকভরা প্রগাঢ় ভালোবাসা আর সেই ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরে রাখার যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকা কিংবা সেই যন্ত্রণাকে ভূলে থাকার জন্য সবসময় পালিয়ে বেড়াচ্ছে নিজের কাছে থেকে। মায়া নামের আরেকটি সাদাসিধে মেয়ের ভালোবাসা মায়াজাল যে কখনও ছিন্ন করতে পারেনি, একটি মুহুর্তের জন্যও নয়। এ গল্প উচ্চাভিলাষী বৈষয়িক অভীক আয়ানের। গল্পটা অর্ক নামের তরুণের। যে কিনা খুঁজে বেড়াচ্ছে ছন্নছাড়া, ভবঘুরে রুপম আহাসানকে। বন্ধুত্বের কাছে নিজের প্রেমকে লুকিয়ে ফেলে অন্য এক জগতে বেঁচে থাকা রুপম আহসান কে অর্ক কেন খুঁজে বেড়াচ্ছে পাগলের মতো?? দেখা হবে কী তার সাথে?? অভীক আয়ান পরিচয় নিয়ে নিজের মধ্যই হয়তো প্রশ্ন উঠবে! মনে হবে এরকম মানুষ আপনার চেনাজানার মধ্যই আছে। মীরা নামের তরুণীটি তার যাবতীয় আবেগ নিয়ে অর্কের আশায় পাগল প্রায়। রাহাত আর সেলিনার গল্পও ভাবিয়ে তুলবে মাঝেমাঝে। ভাবতে ভাবতেই কখন নিজের তাদের একজন হয়ে যাবেন, বুঝে উঠতে পারবেন না। পৃথিবীর এতো মানুষের এতো বিচিত্র আবেগ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে শেষ হবে? ১০৪ পৃষ্ঠার বইটি পড়া শুরু করলে শেষ না করে ওঠা কঠিন। এবং আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি, পড়া শেষে পুরোপুরি পরিতৃপ্তি নিয়ে উঠবেন। লেখিকা রিফ্ফাত জাহান মীম-এর লেখা প্রথম বই এটি। পড়ার সময় একবারের জন্য মনে হবে না, নতুন কোন আনাড়ি হাতের লেখা কোন গল্প। শব্দ, বাক্য আর সহজ-প্রাঞ্জল ভাষায় কাহিনী বর্ণণায় রীতিমত মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন লেখিকা। ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ থেকে পড়াশোনা করা লেখিকা বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়ন করছেন। এবারে বইটি সম্পর্কে নিজস্ব অভিমত জানিয়ে শেষ করি। আমি বরাবরই রুপকথা ধরণের লেখার একজন পাঠক। লেখার মধ্য দুঃখ কষ্ট কেন জানি মেনে নিতে পারি না। কিন্তু একবার পাঠকের খাতায় নাম লেখালে সবকিছুই কোন না কোন একসময় পড়তে হয়। সেই কারণেই বইটি পড়া শুরু করেছিলাম। কোন লেখার দিয়ে মানুষের মধ্য আনন্দ বা কষ্টের অনুভূতি তৈরী করা সহজ ব্যাপার নয়, যদি কেউ সেটা করতে পারে তাহলে অবশ্যই তাঁর ক্ষমতা কে তুচ্ছ করে দেখার কোন জায়গা নেই। এরকম ক্ষমতার একজন মানুষকে প্রশংসা না করলে অপমান করা হয়। যতো হালকা ধরণের পাঠকই হই না কেন সেই অপমানটুকু করার দুঃসাহস আমার কখনোই হবে না। যে হারে এবং যে পদ্ধতিতে প্রতিবছর নতুন লেখকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে সবসময়ই ভয়ে থাকি তাদের লেখা পড়ার সময়। এবং ভয়টা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ বহুবার পেয়েছি। শুধু নতুন লেখকদের বেলাতেই নয়, অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখকদের রচনা পড়েও আমার ইচ্ছা করে তাদের কাছে গিয়ে করজোড়ে অনুরোধ করতে, ”প্লিজ আপনি আর গল্প লিখবেন না।” সত্যি কথা বলতে এই বইটা শুরু করার আগেও সেই দুশ্চিন্তাটুকু প্রায় পুরোপুরি ছিলো। কিন্তু শুরু করার পর কীভাবে বই-এর ৭০ টা পৃষ্ঠা শেষ হয়ে গিয়েছিলো, সেটা রহস্য। সহজ ভাষায় গল্প বলে শেষ পর্যন্ত পাঠকের মধ্য আগ্রহ ধরে রাখা কোন সহজ কাজ নয়। খুব ভালো লেখকেরাই শুধু এই কাজটি করতে পারেন। এখানে লেখিকাকে চোখ বন্ধ করে দশে দশ দিয়ে দেওয়া যাবে। বিরহের উপন্যাস বা এইধরণের দুঃখ কষ্টের গল্প আমার পছন্দ না হলেও লেখিকার লেখার দক্ষতার কারণে এখানে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনি কখনোই লেখালিখি বন্ধ করে দিবেন না। মনখারাপ করার মতো অনুভূতি যেভাবে তৈরী করতে পেরেছেন, আগামীতে তার থেকে একশগুন আনন্দের অনুভূতি তৈরী করবেন; সেটুকু আপনার কাছে আশা করি। ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা!