User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ওকে
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের কাহিনী আমার ভালো লেগেছে। এই ধরণের কাহিনী নিয়ে কাজ আগে খুব বেশি হয়নি। তাই আলাদা কিছু পড়তে পেরে ভালো লেগেছে। লেখনীর দিকটা যদি বলি, তাহলে বলবো, বইয়ের লেখনীর ধরণটা অনেকটা ওপার বাংলা স্টাইলে লেখা। অনেকেই হয়ত ব্যাপারটাকে নেতিবাচকভাবে দেখবেন, তবে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখেছি। এছাড়া আজকালকার যুগে দুপাতা থ্রিলার বা গোয়েন্দাকাহিনী পড়েই মানুষ থ্রিলার লেখায় হাত দেয়। এই লেখকের বেলায় সেটা হয়নি। লেখক ওয়াসি আহমেদ যে যথেষ্ট পড়াশোনা জানা মানুষ, সেটা তাঁর লেখনীতেই বোঝা যায়!
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম- আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে লেখক- ওয়াসি আহমেদ প্রকাশনী- বাতিঘর প্রকাশনী পৃষ্ঠা সংখ্যা- ১৪৪ মুদ্রিত মূল্য-১৫০ টাকা এই বইয়ের কাহিনী সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা সম্ভব না। অন্তত আমার ক্ষেত্রে। টুকরো টুকরো বেশ কিছু গল্প এক জায়গায় এসে মিলিত হয়েছে। এবং প্রতিটি গল্পই সতন্ত্র। গল্পটা হতে পারে নসিবের। ১৯১৮ সালে যে কিনা বাবার মৃত্যুর পর মাধবগঞ্জে আসে বাউলদের নিয়ে গবেষণার কাজে। গল্পটা হয়তো সেই অন্ধ বাউলের যে তার সুমধুর কণ্ঠ দিয়ে গান গায়। গল্পটা হয়তো তার দৃষ্টিহীনতার কারণের। একজন অঘোরতান্ত্রিক , যে সর্বশক্তিমান হবার ইচ্ছায় মত্ত , তারও হয়তো এই গল্প। কিংবা উপমহাদেশে প্রথম ম্যাজিক নিয়ে আসা ছোট লাট এন্ডারসনের। গল্পটায় আমরা পাবো নীল বিদ্রোহের সময়কার একদল প্রতিবাদী কৃষককে কিংবা পাবো ১৩ বছর বয়সী এক বালককে। গল্পটা রঙ্গিলার বাড়ির এক বিশেষ মানুষেরও হতে পারে। ও হ্যাঁ দেখা মিলবে ঠগি এবং চা বিক্রেতা সুবোধ ঘোষের। হলফ করে বলতে পারি সুবোধ ঘোষের চা পান করতে না পারায় আপনারও আফসোস হবে আমার মত। অতীত ও অতীতেরও আগের কিছু নিয়েই এই গল্প। পাঠ পতিক্রিয়া- আমার পড়া প্রথম গোথিক হরর। এ এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। কেন যে আগে হরর পড়তাম না সেটা ভেবেই এখন চুল ছিঁড়ি। রাফি ভাইয়ার প্রথম মৌলিক। অনেক উত্তেজিত ছিলাম বইটা নিয়ে। খুব ভালো লেগেছে। দারুণ উপস্থাপন। ভাষার ব্যবহার চমৎকার। বেশ কিছু দারুণ দারুণ উপমা ও রূপক ব্যবহার করা হয়েছে। কলেবর আরও বড় হলে আরও ভালো লাগতো। আমার লেখালেখির উন্নতির পিছনে যে তিনজন সাহায্য করে যাচ্ছে ব্যাপকভাবে তার মধ্যে উনি একজন। প্রিয় বড় ভাইয়ের বইটি পড়ে তাই অন্যরকম ভালো লেগেছে।
Was this review helpful to you?
or
সব কিছুই হারিয়ে যায় এক সময় আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে, তবুও রেখে যায় কিছু স্মৃতি যা কিনা ক্ষণে ক্ষণে ভাবিয়ে অস্থির করে তোলে হৃদয়ের অতল তলদেশকে। এ বছর আমার পড়া শ্রেষ্ঠ আধিভৌতিক উপন্যাস এটি। লেখকের ভাষার প্রয়োগ সত্যি আমাকে মুগ্ধ করেছে। সীমিত পরিসরে চরিত্রগুলো বিকশিত হয়েছে যথেষ্ঠ।
Was this review helpful to you?
or
একে একে সব হারায়... হারিয়ে যায় আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে... "তবুও তো পেঁচা জাগে; গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে আরেকটি প্রভাতের ইশারায়— অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে..." -জীবনানন্দ দাশ অনেক দিন পর একটা দেশীয় মৌলিক থ্রিলার পড়া হলো। এই বইটাকে পছন্দ করার তেমন কোন আহামরি উদ্দেশ্য না থাকলেও লোকমুখে অনেক শুনেছিলাম এটার কথা। তাঁর মধ্যে কিছু ভালো আর অনেকটাই খারাপ। কিছু মানুষ তো বস্তাপচা বলে ফেলেও দিতে দেখেছি। কেন দিল? এই প্রশ্নটার উত্তর খুঁজতেই পড়া শুরু করা! রিভিউয়ের আগে বইয়ের কাহিনীতে নজর দেওয়া যাক। গল্পটা কার? নসিবের? ১৯১৮ সালে বাবার মৃত্যুর দুঃখকে সঙ্গি করে মাধবগঞ্জে পা রাখে নসিব। উদ্দেশ্য; সাহেব আলী নামের এক রহস্যময় বাউলের জীবন আর কর্ম সম্পর্কে জানা। কিন্তু সেটাই কি তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য? নাকি গল্পটা এণ্ডারসনের? উপমহাদেশে প্রথম সার্কাস প্রবর্তন করেও যার ভাগ্যে ঠগীদের কারণে নেমে আসে নিষ্টুর পরিণতি? নাকি গল্পটা ঐ মাধবপগঞ্জ গ্রামের লোকেদের? যারা যুগ যুগ ধরে কোন এক অজানা ভয়ে ভুলেও মাড়ায় না এণ্ডারসনের পরিত্যক্ত বাড়ীর পথ? আবার গল্পটা হয়তো ষোড়শ শতকের পর্তুগিজ নাবিক অ্যামরিক গিরাল্ডোর। একই সাথে অনিন্দ্য সুন্দরি অনিতার গল্পও বলা যেতে পারে। এরকমই কিছু অদ্ভুত প্রশ্নের জন্ম ও উত্তর মিলবে গোটা বই জুড়ে! এবার আসি রিভিউতে। পোশাকি নামানুসারে এই ধরণের থ্রিলার কে বলা হয় গাথিক হরর থ্রিলার। দুঃখজনকভাবে এই গাথিক হরর শব্দটার মানে আমি জানি না। কেউ যদি জেনে থাকেন তো জানাবেন দয়া করে। বইয়ের কাহিনী আমার ভালো লেগেছে। এই ধরণের কাহিনী নিয়ে কাজ আগে খুব বেশি হয়নি। তাই আলাদা কিছু পড়তে পেরে ভালো লেগেছে। লেখনীর দিকটা যদি বলি, তাহলে বলবো, বইয়ের লেখনীর ধরণটা অনেকটা ওপার বাংলা স্টাইলে লেখা। অনেকেই হয়ত ব্যাপারটাকে নেতিবাচকভাবে দেখবেন, তবে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখেছি। এছাড়া আজকালকার যুগে দুপাতা থ্রিলার বা গোয়েন্দাকাহিনী পড়েই মানুষ থ্রিলার লেখায় হাত দেয়। এই লেখকের বেলায় সেটা হয়নি। লেখক ওয়াসি আহমেদ রাফি যে যথেষ্ট পড়াশোনা জানা মানুষ, সেটা তাঁর লেখনীতেই বোঝা যায়! বইয়ের গল্পের গতিও খুব ভালো ছিল। ইতিহাস, ভয় আর রোমাঞ্চ... তিনটে ব্যাপারই বেশ দক্ষ হাতে মেশানো হয়েছে। এছাড়া বইটি বেশ সুখপাঠ্য অর্থাৎ রিডার্স ফ্রেন্ডলি। তবে এই বইটির এত ভালো দিক যেমন আছে, দূর্বল দিকও আছে। বইটির প্রথম দূর্বল দিক হচ্ছে এটির সাইজ। এধরণের গল্প নভেলা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। লেখক আরো বড় করে লিখলে মনে হয় একটু বেশি আরাম পেতাম। কারণ বইটির কাহিনী তথাকথিত ঢিশুম ঢিশুম টাইপ থ্রিলার না, অনেকটাই বর্ণনা নির্ভর। হাল্কা ক্লাসিক স্টাইলও অনুসরণ করে হয়েছে। যার ফলে গল্পটা ছোট হওয়াতে তৃপ্তি পাই নি। এই ধরণের প্লট আর লেখনীর বই আরেকটু মোটা হলে ভালো লাগতো। দ্বিতীয় দূর্বলতা হচ্ছে, আলসেমী। লেখক যে বইটি বেশ সময় নিয়ে লিখেছেন এটা বইয়ের গতিতে স্পষ্ট বোঝা গেছে। আর তৃতীয় ও সবথেকে বড় দূর্বল দিক হচ্ছে, ভয়! বইটা হরর হলেও বিন্দুমাত্র ভয় অনুভব করিনি। রোমাঞ্চ কিছুটা অনুভব করলেও সেটা ধরার মধ্যে পড়ে না। বরং গ্রামের বর্ণনা, চরিত্রের বর্ণনা, মাঝে মাঝে দেওয়া পংক্তি পড়ে মনে হয়েছে কোন ক্লাসিক বা সামাজিক উপন্যাস পড়ছি! কিন্তু এত কিছুর পরেও বলবো, বইটি আমার ভালো লেগেছে। বইয়ের কাহিনী, বর্ণনার ধরণ, চরিত্র তুলে ধরার দক্ষতা বইটিকে বেশ চমৎকার করে তুলেছে। তাই সবশেষে পাঠকের উদ্দেশ্যে এটাই বলবো, বইটি পড়ে দেখতে পারেন। অসাধারণ না লাগলেও খুব খারাপ লাগবে না। ধন্যবাদ! হ্যাপি রিডিং! বইয়ের নামঃ আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে লেখকঃ ওয়াসি আহমেদ প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা, ২০১৮ প্রকাশকঃ বাতিঘর প্রকাশনী পৃষ্ঠাঃ ১৪৩ মূদ্রিত মূল্যঃ ১৫০ টাকা গুডরিডস রেটিংঃ ৩.৮৩/৫ ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৪/৫
Was this review helpful to you?
or
হরর উপন্যাস! জাস্ট অসাধারণ! খুব সুন্দর ভাবে মস্তিষ্ককে নাড়া দিতে সক্ষম!
Was this review helpful to you?
or
''তবুও তো পেঁচা জাগে; গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে আরেকটি প্রভাতের ইশারায়— অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে। টের পাই যূথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশে'' ----জীবনানন্দ দাশ #জনরা_বা_ঘরানা_পরিচিতি এটা খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যে, যেই বইটি পড়ছি তার ঘরানা পরিচিতি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া।এতে করে বইটি ঠিকঠাক বৈশিষ্ট্য মেনে লেখা হয়েছে নাকি লেখকের মনগড়া গল্প তা যাচাই করতে সুবিধা হয়।তাছাড়া সাহিত্য অঙ্গনে এই জনরা একটা আলাদা বিশেষত্ব বহন করে।চলুন তবে জেনে নেই গথিক হরর বিষয়টি কী। গথিক হরর শুনলেই মনে হতে পারে ভুতুড়ে কান্ড।ভুতুড়ে কান্ড তো থাকবেই।কিন্তু শিহরিত ও রোমাঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সেখানে অতীতের কাহিনীর সংযোগ, প্রেম, বিরহ, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ থাকবে।সেই সাথে পুরোনো ভৌতিক বাড়ির বর্ণনা থাকতে হবে।কিন্তু এতসবের পরেও নিছক ছেলেমানুষি কাহিনী নয়।হতে হবে শক্তপোক্ত প্লট।এইতো গেলো পরিচিতি। #লেখক_পরিচিতি: নিজেকে খানিকটা আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন লেখক ওয়াসি আহমেদ। জন্ম ও বেড়ে উঠা ঢাকায় হলেও পৈতৃক নিবাস বগুড়া। তিনি পেশায় চিকিৎসক। প্রচুর বই সংগ্রহে থাকা লেখক নেশায় মস্ত বড় মাপের পাঠক। তার ভালোবাসার জায়গায় ঠাঁই করে নিয়েছে ছবি তোলা, গান শোনা। গুনগুন করে গান করতেও ভালোবাসেন। আর গল্প শুনে যেমন আনন্দ পান, গল্প শুনতেও তার তেমনি ভালো লাগে। অনুবাদ কর্ম দিয়ে লেখালিখির কাজ শুরু হলেও, 'আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে' তার প্রথম মৌলিক উপন্যাস। এছাড়া অনুবাদের মধ্যে রয়েছে, দ্য স্পাই, দ্য ব্যাটল অফ কাদেশ, কোরালাইন, আফটার ডার্ক সহ আরো কিছু চমকপ্রদ বই। #কাহিনী_সংক্ষেপ: ঘটনা তো বহুকাল আগের। সেই ১৯১৮ সালের। অজানা রহস্যের জাল পেতে রাখা আছে মাধবগঞ্জের গ্রামটিকে ঘিরে। কিন্তু সেই রহস্য ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য উদ্ঘাটনে তৎপর নওয়াজেশ হায়দার চৌধুরী (নসিব) ছুটলেন গ্রামে। তার উদ্দেশ্য সাহেব আলী বাউলের জীবন ও কর্মের বিশ্লেষণ।নসিব সাহেবের বাবার হৃদয়ে গেঁথে রাখা পুরোনো দুঃখই তাকে এ পথের ঠিকানা করে দিয়েছে। মোস্তফা মাস্টারের পুরোনো নিরিবিলি স্কুলঘরটাই এখন নসীবের রিসার্চের ভালো অঞ্চল। চায়ের দোকানদার সুবোধের ঘটনাটি আরো পুরাতন।পেছনে ফিরে যাওয়া যাক। সাল ১৯০৩, যখন ভাইসরয় কার্জন দেশে চা নিয়ে এলেন। 'অসম চা' কোম্পানির আবির্ভাব থেকে দেশ জুড়ে গরম পানীয়ের দু'এক পদ্ধতি শিখে নিয়ে সাথে জমজমাট নাস্তা-মিষ্টি-সন্দেশ জুড়ে দিয়েই সে কি রমরমা ব্যবসা সুবোধের। তবে কোথা থেকে এক কুঁজো চক্র নিতাইকে নেহাত ময় করে টঙটায় তোলবার পর থেকেই ঘটতে থাকে অঘটন। এদিকে গ্রামের হরিনাথের জল-খাবারের দোকানটার সাথে অনন্য রন্ধনশৈলীর অধিকারী যতীনের সম্পর্ক বড্ডো পুরোনো।কিন্তু ভাগ্যের ফেরে যতীনের বর্তমান কাজ নসিব বাবুর সেবাআত্তি।কিন্তু কোথায় যেন একটা খটকা আছে।মিলেমিশে সব জটিলতার সরাসরি কুটুম্বিতা সেই অ্যান্ডারসন কটেজের সাথে। এখানে শেষ হলেও চলতো। কিন্তু কোথাকার অঘোরনাথ তান্ত্রিক, মোস্তফা মাস্টার, বিকলাঙ্গ বালক সবাই যেন একে অন্যের পরিপূরক। এক সুতোয় গাঁথা বহু পুরাতন মন্ত্রের কলকাঠি। কে এই রহস্যের খলনায়ক? শত বছরের পুরোনো চাপা দেওয়া বিসর্জনের ইতিহাস কার হাত ধরে উন্মোচিত হতে চায়? ভারতীয় উপমহাদেশে যে জাদুকরের হাত ধরে সার্কাসের আবির্ভাব, নীল বিদ্রোহের কড়াল গ্রাস থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত সে অ্যান্ডারসনের নিজস্ব কটেজের সাথে মিশে রয়েছে স্মৃতিবিজড়িত একদল ঠগীর মৃত্যু রহস্যকে কেন্দ্র করে কিছু আর্তনাদ। বিস্মৃত........বিবর্জিত......চিন্তাতীত.....ঐশ্বর্য সাগর পরিমান বিষাদ বুকে নিয়ে যে রহস্য ঘুমিয়ে পড়েছিল তার সাথে মাধবগঞ্জের সম্পর্ক খুঁজে পেতে সত্য-মিথ্যা, রহস্য-সমাধানে একে একে আপনাকেও বিলীন হতে হবে আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে। পথের কাটা সরাতে গতিপথ যখন যায় পাল্টে, তখন রহস্য রূপ নেয় ভয়ে।আপনি তৈরী তো? #পাঠ_প্রতিক্রিয়া উপন্যাসের প্রধান আকর্ষণ হলো এই যে, মাধবগঞ্জকে কেন্দ্র করে গল্পের গোড়াপত্তন ঘটলেও বাস্তব ইতিহাস বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। কখনো ১৯০৩, তো কখনো ১৯১৮ সাল।কিন্তু চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটেছে বর্তমান সময়ে। ভূত-প্রেত-আত্মার মিশেল থাকলেও টুইস্টের অভাববোধ করিনি। তাছাড়া থ্রিলারের স্বাদ একদম ঝাঁঝালো ও অটুট ছিল। কখনো নীল বিদ্রোহের সময়টাতে আপনাকে যেতে হচ্ছে, আবার কখনো ইংরেজদের এই উপমহাদেশে চায়ের বাণিজ্যে। মনে হবে যেন টাইম মেশিনে করে আপনি পুরো খন্ড খন্ড ফ্ল্যাশব্যাক উপভোগ করছেন। ষোড়শ শতকের পর্তুগিজ নাবিক গিরাল্ড-এর গল্পটিতে আপনি যখন খুব মন্ত্রমুগ্ধ, ঠিক তখনি অনিন্দ্য সুন্দরী অনিতাও আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে তার গল্পটি শোনানোর আকুতিতে।প্রত্যেকবারই আপনাকে নড়ে চড়ে বসতে হবে। আমাদের লোকচক্ষুর আড়ালে এমন সব পরাবাস্তব অলৌকিক কর্মকান্ড ঘটে লুকিয়ে থাকা নৈশব্দের জগতে যখন চেতনার স্পন্দন অনুভব করা যায়, তখন জন্ম নেয় অনেক অজানা প্রশ্নের।অজানা অচেনা প্রাচীন শক্তির কাছে চেনা পরিবেশটা যখন পরাস্ত, তখন শিহরিত হওয়ার মতোই বিষয়।আজ থেকে শত বছর পূর্বের ব্যাখ্যাতীত রহস্যের বুননে আপনিও আটকে পড়বেন।রোমাঞ্চের সিঁড়ি গুলোর রাস্তাটা আপনার জন্য না হয় খোলাই থাকলো। #ভালো_মন্দ অনেকদিন পর একটা গথিক হরর পড়ে যারপরনাই অভিভূত হয়েছি। প্রত্যেকটি চরিত্রই অসাধারণ বাস্তব আবেশে তৈরী এবং পাঠকের কল্পনা রাজ্যে চিত্রায়ন। বিশেষত্ব এটাই প্রত্যেকটি চরিত্র ভালো লাগার মতো প্লট টুইস্টে ভরপুর।দুই একটা প্রিন্টিং মিস্টেক ছাড়া তেমন কিছুই চোখে পড়েনি।খুব ভালোই ছিল প্রুফ রিডিং।তাছাড়া কোনভাবেই বোঝার উপায় নেই, উপন্যাসটি লেখকের আনকোরা হাতের প্রথম উপন্যাস।পুরো কাহিনিটিতে লেখকের অনেক রিসার্চ, তথ্য সংগ্রহের প্রমান বিদ্যমান। আর নজরকাড়া প্রচ্ছদ বইটিকে দিয়েছে আলাদা মাত্রা।যে কারো বইটিকে ভালো লাগবে। #পার্সোনাল_রেটিং: ৪.৭/৫.০
Was this review helpful to you?
or
"মায়ার বন্ধন বড় কঠিন৷ চোখে দেখা যায় না বটে, তবে ছিঁড়ে-ছুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইলে তা আরও শক্ত হয়ে জড়িয়ে যায়। নিজের কাছে রেখে দিলে পাথরের টুকরোর প্রতিও মায়া পড়ে যায়।" ভয়। মানুষের আদিমতম প্রবৃত্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটা। আর ভয় বলতেই বুঝায় 'অজানা কিছু'র একটা অস্তিত্ব। যদিও বিজ্ঞানের আলোয় 'অজানা কিছু'র তালিকা ছোট হয়ে গেছে এবং অন্ধকারের পরিসীমাও কমে আসছে কিন্তু তবুও নিজের অস্তিত্বের ন্যায় অনস্তিত্বে ভয়ের বিশ্বাস মানুষের আরো জোরালো হয়েছে। ভয়কে কেন্দ্র করেই হরর গল্পের খ্যাতিলাভ। আর হরর গল্পের মধ্যে কয়েকটা ধারা বা উপশাখা আছে যার মধ্যে গথিক হরর একটা উপশাখা। গথ নিয়ে এর আগেই একদিন লিখেছিলাম। গথ থেকেই গথিক শব্দের উৎপত্তি। এক কথায় বললে, ভয়ংকর সুন্দরের পূজারী যারা। গথরা আঁধার ভালোবাসে, আঁধারের সেই কালো রঙটা নিজেদের সাথে মেশানোর চেষ্টা করে, মৃত্যুর মতো করুণ একটা বিষয়কে সৌন্দর্যের চোখে দেখে, আপাত দৃষ্টিতে যা কুৎসিত তার ভেতরের সৌন্দর্য অবলোকন করে গথরা। তবে জানার বিষয় হচ্ছে, গথিক হরর গল্পের বিস্তার হয়েছিল একটা অতিপ্রাকৃত আর উদ্ভট ঘটনার প্রেক্ষিতে। ১৭২৬ সালের কথা। অস্ট্রিয়ার মেডভেজিয়া নামক এক স্থানে ঘোড়ায় টানা গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় আর্নল্ড পাওয়েল নামে এক লোকের। মৃত্যুর আগে পাওয়েল দাবি করতেন, তাকে খুব সম্ভব ভ্যাম্পায়ার বা রক্তচোষা জাতীয় কিছু একটা কামড়ে দিয়েছিল। পাওয়ালের মৃত্যুর পরপরই সে এলাকায় রহস্যজনকভাবে মানুষ মরতে শুরু করে। প্রশাসন তদন্ত শুরু করে নির্দিষ্ট উত্তর খুঁজে না পেলেও প্রচণ্ড রকমের উৎসাহ পেয়েছিলেন (সম্ভবত) পৃথিবীর প্রথম গথিক হরর উপন্যাসের লেখক হোরাস ওয়ালপোল। বলা হয়ে থাকে, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই ওয়ালপোল তার বিখ্যাত গথিক উপন্যাস "দ্য ক্যাসল অব অটরান্টো" রচনা করেন। এরপর মেরি শেলী, এডগার এলেন পো, ব্রাম স্টোকার, বডেলিয়ার কিংবা লাভক্র্যাফট এদের লেখা দিয়ে গথিক হররের ধারাটা টিকে আছে। গথিক হরর- অন্ধকার আর অপছায়ার মধ্যে সৌন্দর্যের মায়া। "আলোর উপস্থিতিতে যা চোখে পড়ে, তাকে সবাই বাস্তব ভাবতে বাধ্য। আঁধারের মাহাত্ম্যটা কিন্তু এখানেই; দৃষ্টির অগোচরে মানুষকে সবকিছুর অস্তিত্ব উপলদ্ধি করায় তা৷ সেই অস্তিত্বকে যেমন পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায় না, ঠিক তেমনি অবিশ্বাসেরও সুযোগ নেই।" গথিক হরর মানেই অস্বাভাবিক রকমের ভুতুড়ে কান্ড, এমন ভাবাটা বোকামি হবে। অবশ্যই ভুতুড়ে কান্ড আছে তার সাথে শিহরিত আর রোমাঞ্চিত হওয়ারও ব্যাপক উপাদান থাকে। আর তাছাড়া, এর সাথে মৃত্যু, অতীতের বেদনাদায়ক ঘটনা, প্রতিহিংসা, প্রেম, অভিশাপ এবং প্রতিশোধ এসবও থাকবে। আর এর সাথে যদি প্রচ্ছদ আর বইটার নামে গল্পের গহীনে আঁধারে হারিয়ে যাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। বাতিঘর থেকে প্রকাশিত ওয়াসি আহমেদ এর প্রথম মৌলিক উপন্যাস "আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে" বইটার কথা বলছি। বাতিঘরের পেইজ আর বাইন্ডিং বরাবরের মতোই তবে যেটার বলার তা হলো প্রচ্ছদ আর নাম। নামটা অনেক কাব্যিক শোনালেও গল্পের শেষে নামের সার্থকতাটা টের পাওয়া যায়। আর প্রচ্ছদটাও বেশ ভালো হয়েছে। “গুণীজন নিজের গুণের কদর শুনতে পছন্দ করে। ভাস্কর মূর্তি গড়ে, গাতক গান গায়, আঁকিয়ে ছবি আঁকে-এখানে মূল উদ্দেশ্যটা শুধু নিজের আত্মার খোরাক মেটানো নয়; সাধারণ লোকে মুগ্ধ হয়ে শিল্পকর্মের প্রশংসা করবে, এতেই তার প্রকৃত আনন্দ।" কাহিনীপ্রসঙ্গঃ ১৯১৮ সাল। অবিভক্ত বাংলায় তখন ব্রিটিশদের রাজত্ব। তবে এই ব্রিটিশদের রাজত্বে বসেও বৃটিশদেরই শেখানো চা দিয়ে রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে সুবোধ ঘোষ। সকাল সকাল সুবোধের হাতে বানানো এক কাপ চা না খেলে এই তল্লাটের অনেকেরই দিন খারাপ যায়। কিন্তু বাষট্টি বছর বয়সী শরীরটা আগের মতো সাহায্য করে না সুবোধ ঘোষকে। মনের এই কথাটাই দেবতা নাহয় অপদেবতার কানে যায়, যার ফলশ্রুতিতে মাঘের কোন সকালে বিকলাঙ্গর ন্যায় দেখতে এক ছেলেকে খুঁজে পায় সুবোধ ঘোষ। কানাই নাম দেয়, থাকার ঘর দেয়, দুবেলা দুমুঠো খেতে দেয় তার বদলে শুধুমাত্র দোকানটার দেখাশুনা করতে হবে ব্যস এইটুকুই। দিনকাল বেশ ভালোই যাচ্ছিলো কিন্তু একদিন কানাই উধাও হয়ে যায় অভিমান করে। দেবতার আর্শীবাদ তখন অপদেবতার অভিশাপে পরিণত হয়। এক রাতে কানাই ফিরে আসে সুবোধের ঘরে কিন্তু চিরচেনা সেই কানাই হয়ে না; অতিপ্রাকৃত আর অলৌকিক শক্তি সাথে নিয়ে। ছয় মাস পরের ঘটনা। মাধবগঞ্জ নামক রহস্যেঘেরা গ্রামে পা পড়ে কলকাতা থেকে আসা নওয়াজেশ হায়দার চৌধুরী নসিব এর। সাথে বাবার আসার কথা থাকলেও বাবার মৃত্যু তা হতে দেয়নি। বাবা মৃত্যুর আগে নসিবকে কিছু একটা বলতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। সেই অজানা প্রশ্ন মনে পুষেই গ্রামে এসেই উঠে বাবার খুব কাছের বন্ধু মোস্তফা সিরাজ যাকে মোস্তফা মাস্টার বলে গ্রামের সবাই ডাকে। রসায়নে বি.এড করা মোস্তফা সিরাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরী হওয়া সত্ত্বেও কোন এক অজানা রহস্যে গ্রামে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। নসিব কলকাতা থেকে গ্রামে এসেছে মাধবগঞ্জে থাকা এক বাউলের জীবন আর কর্ম নিয়ে একটা ব্যক্তিগত অনুসন্ধানের কাজে। নসিবের খাতিরদারি যেন কোন ত্রুটি না থাকে সে বিষয়ে বরাবর সচেতন মোস্তফা মাস্টার; শুধুমাত্র বন্ধুর ছেলে বলে নয় এই পরিবারটার কাছে খুব বেশী ঋণী মোস্তফা মাস্টার। পুরানো পরিত্যক্ত স্কুলঘরটা পরিষ্কার করে দেয়া হয় নসিবের জন্যে। এক রাতে গ্রামের অনিতার সাথে পরিচয় হয় নসিবের কিন্তু গ্রামের মানুষ সেটা বাঁকা চোখে দেখে। অন্য এক রাতে নিজের রাঁধুনি যতীনের সাথে চলাচলের সময় খোঁজ পায় রহস্যঘেরা এক প্রাচীন কটেজের যেখানে দিনেদুপুরে গ্রামের মানুষজন যেতেও ভয় পায়। আর ঠিক তার পর থেকেই গ্রামে কিছু অদ্ভুত আর রহস্যঘেরা মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বাউল সাহেব আলী এক রাতে গান শোনাতে এসে নসিবকে এমন কিছু একটা বলে যাতে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সংশয়ে পড়ে নসিব নিজেই। ১৮৫৯ সাল। নীলকুঠিরের ছোট সাহেব জেফরি অ্যান্ডারসন যে কিনা এডিনবার্গে এককালে যাদুর প্রদর্শনী করতো কিন্তু জমাতে পারেনি বলে কোম্পানির হয়ে এখানে আসা। কি খারাপ কপাল অ্যান্ডারসনের? তা নাহলে কি আর নীলকুঠিতে আসামাত্রই নীলকররা বিদ্রোহ করে বসে? নিজের জান বাঁচাতে কুঠিরের পেছনে থাকা জঙ্গলে দৌড় দেয় অ্যান্ডারসন। লোকে ভাবে বাঘের পেটে যাবে সে কিন্তু না অ্যান্ডারসন ফিরে আসে নতুনরূপে মাধবগঞ্জে। মাধবগঞ্জে সার্কাসের পসরা বসায় অ্যান্ডারসন আর সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সাতান্ন বছর আগে একদল ঠগির মৃত্যুর পর যেখানে ভয়ে কেউ পা বাড়ায়নি ঠিক সেখানেই গড়ে তোলে রহস্যময় এক সুন্দর কটেজ। অথচ নিজে থাকেন তাবুতে আর রাত বাড়লেই চলে যান রঙিলাবাড়ির মধুবালার কাছে। এক রাতে মধুবালার কোলে আসা অ্যান্ডারসনের সন্তান আর অন্য এক ভোরে কোন এক অভিশাপ থেকে বাঁচতে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে কটেজে রেখে পালিয়ে যান অ্যান্ডারসন। কানাই কি সুবোধ ঘোষের জন্যে দেবতার আশীর্বাদ ছিল নাকি অপদেবতার অভিশাপ? সুবোধ ঘোষেরই বা এমন কি দোষ ছিল? কানাই বা কোথা থেকে অলৌকিক শক্তির খোঁজ পেয়েছিল? নসিবের বাবা নসিবকে কি বলতে চেয়েছিল? মোস্তফা মাস্টারই বা কেন গ্রামে এসে থাকেন? আর নসিবের পরিবারের তার এত কৃতজ্ঞতা কেন? অনিন্দ্যসুন্দর অনিতার সাথে কি নসিবের প্রণয়ঘটিত কোন সম্পর্ক ছিল? রহস্যঘেরা সেই কটেজটারই বা পেছনের কি ইতিহাস থাকতে পারে? বাউল সাহেব আলী নসিবের সম্পর্কে কিভাবে জানতো? অ্যান্ডারসন কীভাবে বা কার সাহায্যে বেঁচে গিয়েছিল জঙ্গলে? অ্যান্ডারসন কিসের অভিশাপ থেকে বাঁচতে নিজের সন্তানকে উৎসর্গ করেছিল? গল্পে শতাব্দীর ফারাকটা কি কেবলই নিছক নাকি প্রতিটা ঘটনা একে অপরের পরিপূরক? লেখকপ্রসঙ্গঃ ওয়াসি আহমেদ পেশায় চিকিৎসক এবং নেশায় পাঠক আর বই সংগ্রাহক। ফেসবুকে তার বন্ধুলিস্টে থাকা কমবেশী সবাইই হিংসে করে তাকে কেননা প্রতি সপ্তাহেই কোন না কোন লেখকের রচনাবলী সমগ্র কিনবেই কিনবে। নেশা উঠলে টাকা ভুতে যোগায় ব্যাপারটা অনেকটা এমন। যাই হোক, লেখালেখির শুরুটা সুদূর শৈশবে হলেও পরিণত বয়স হওয়ার পরই সাহিত্যজগতে অনুপ্রবেশ। শুধুমাত্র লেখালেখি কিংবা চিকিৎসা নয় এছাড়াও ছবি তুলা, গান গাওয়া, গল্প বলাতেও দক্ষতা আছে লোকটার। মৌলিক লেখার আগে বেশকিছু অনুবাদ করে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তার অনুদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে- দ্য জুডাস স্ট্রেইন, দ্য স্পাই, নর্স মিথলজি, মিশর পুরাণ, উই হ্যাভ অলওয়েজ লিভড ইন ক্যাসল, কোরালাইন এবং আফটার ডার্ক। যেই পরিমাণ বই সংগ্রহ করেন এবং পড়েন সে হিসাবে তার মৌলিকই অনেকগুলা হওয়ার কথা। আর তাছাড়া, লেখার ধরনে তাইই প্রকাশ পায়। কিন্তু হয়তো নিজের সীমাবদ্ধতাটা বুঝেন তাই এবারই প্রথম মৌলিক লিখলেন। সে যাই হোক, লেখার সৌন্দর্যতা সম্পর্কে বলার কিছু নেই। এককথায় অসাধারণ লেগেছে। গল্পের ভাজে ইতিহাস জানানোটা অনেকটাই কঠিন। আর সেটাই ওয়াসি ভাই খুব সহজ-স্বাভাবিকভাবেই তুলে ধরেছেন। "অনুদান পাওয়ার সময় মানুষ লোভী হয়ে উঠে৷ প্রতিদানে অনেক বড় আত্মত্যাগের শর্ত থাকলেও মোহের বশে খেয়াল থাকে না তখন। অবশেষে যখন টনক নড়ে, ততোদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়!" একজন পুরোদস্তর লেখক হতে হলে আগে একজন পুরোদস্তর পাঠক হতে হয়। তা নাহলে পাঠক লেখকের লেখায় খেই হারিয়ে ফেলে। আর তা যদি বর্তমানে বসে এক-দেড়শো বছর আগের কাহিনী হয় তা হলে তো সেটা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায় তাও একেবারেই নতুন আনকোরা একজন লেখকের পক্ষে। কিন্তু, ওয়াসি ভাই বর্তমানে বসেও এত সুন্দরভাবে গুছিয়ে গল্প বলেছেন যে মনেই হয়নি লেখকের প্রথম মৌলিক এটা। আর একশো-দেড়শো পৃষ্ঠার একটা বইতে বড় পরিসরে গল্প চালিয়ে নেয়া, দুটো প্যারালাল স্টোরিকে একজায়গায় এনে দাড় করানো এবং চরিত্রের মোক্ষম গঠন চাট্টিখানি কথা না। সবকিছুই খুব ভালোভাবে নিজের লেখা আর মেধায় ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। হ্যা অসঙ্গতিও আছে। শব্দগত ভুল একদমই কম ছিল যা ছিল তাও চোখের পড়ার মতো না। অধ্যায়গুলো সব সংখ্যায় লিখা হলেও একটাতে কথায় লেখা হয়ে গেছে। গল্প শেষের আগে আগে অল্প কিছু জায়গা গতিহীন লেগেছে। উপন্যাসের জনরা নিয়ে কিছুটা কনফিউশন আছে। গথিক উপন্যাস বলা হলেও থ্রিলাররর স্বাদ আছে আবার কিছু জায়গা পড়ে আরবান ফ্যান্টাসির মতো মনে হয়েছে। সে যাই হোক, গল্পের আবহটা এমনভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখেছেন যে ভয় না পেলেও আস্তে আস্তে গল্পের ভিড়ে সেই ভয়ের দিকেই ঠেলে নিয়ে গেছেন লেখক। না খুব বেশী বই পাওয়ার মতো বই এটা নয় কিন্তু অদ্ভুত ভালোলাগার মতো একটা বই। বইটা পড়ার একটা দীর্ঘ সময় ধরে অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করবে। একই সাথে অনেক কিছু জানাটা অদ্ভুত ভালোলাগারই ব্যাপার বটে। ভালো লাগা কিছু উক্তিঃ "উত্তাল সময় জন্ম দেয় উন্মত্ত মানুষের!" "ঈশ্বর যে সৌন্দর্যকে নিজ হাতে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, তাকে এক জায়গায় সীমাবদ্ধ রাখা মানে সৃষ্টিকুলের প্রতি অবিচার করা।" "বেঁচে থাকার এটাই প্রকৃত আনন্দ, হুটহাট নিজেকে অচল করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।" "আলোতে পথ চিনতে যে ভুল করে, আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে সে তো হারাবেই।" "সীমা বলে আদৌ কিছু যদি থেকে থাকে-তা সসীম, অসীম যাই হোক না কেন, মানুষের সাধারণ লৌকিক জ্ঞানে সেই পরিমাপ ধরা যায় না। আর সেকারণেই প্রাণের মাঝে হঠাৎ হঠাৎ যখন মহা-প্রাণ দেখা দেয়, তখন তার স্বরূপ বোঝাও অসম্ভব হয়ে ওঠে।" "আত্মা, সত্তা, শক্তি, উপস্থিতি-যে নামেই ডাকা হোক না কেন, জগতে যখন কারো সহসা আগমন ঘটে তখন তার কারণ সব সময় উদঘাটন করা যায় না।" "অশুভের প্রতি সহানুভূতি, কখনও শুভ ফল বয়ে আনে না!" “তবুও তো প্যাঁচা জাগে; গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহুর্তের ভিক্ষা মাগে আরেকটি প্রভাতের ইশারায়-অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে।” -জীবনানন্দ দাশ। বইঃ আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে লেখকঃ ওয়াসি আহমেদ মূল্যঃ ১৫০/- প্রকাশনীঃ বাতিঘর #জ্ঞানগেলা #গথিক_হরর
Was this review helpful to you?
or
আধুনিক যুগে উপন্যাসের জনরা ঘরে যখন "ভৌতিক/হরর" লেখা থাকে, বেশিরভাগ মানুষিই ভ্রুঁ কুঁচকায়। ঠোঁটের কোনে হালকা হাসির রেখা ফুটে ওঠে অনেকের। আনন্দিত হওয়ার হাসি না। ব্যঙ্গের হাসি, বিদ্রুপের হাসি। আধুনিক যুগের পাঠকদের কাছে ভৌতিক উপন্যাস মানেই আরেকটা হাস্যরসের আখড়া! অথচ, আধুনিক যুগের পাঠক হয়তো জানেনিই না, বাংলা সাহিত্য কেনো, বিশ্ব সাহিত্যের অসংখ্য মহারথীই ভৌতিক সাহিত্যের চর্চা করেছেন। বিশ্ব সাহিত্য আপাতত চুলোয় দিলাম, দিয়ে তার ছাই ও আকাশে উড়িয়ে দিলাম। শুধু বাংলা সাহিত্যই হোক আলোচ্য বিষয়। সৈয়দ মুজতবা আলি, পাঁচকড়ি দে, গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন গুপ্ত, বিমল মিত্র, সমরেশ মজুমদার, সৈয়দ মুজতবা সিরাজ, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি সকল মহারথীরাই ভৌতিক সাহিত্য চর্চা করতেন, আদিভৌতিক এবং পরাবাস্তব বিষয়ে রচনা করেছেন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা , গল্প কিংবা উপন্যাস এবং যুগে যুগে সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকে। এবং আমি তাদের রচনার সাথে, বেশ স্বতস্ফূর্ত ভাবেই আরেকজন লেখকের একটি উপন্যাসের নাম জুড়ে দিতে চাই। হুম, উপন্যাশের নাম "আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে"! হুম, একটা ব্যাপারে দুঃখ আছে। দুঃখ আছে যে, এতো অসাধারণ একটি উপন্যাশ এতো দেরিতে শেষ করলাম আমি! আর সত্যিই, এতো ইতিহাস সমৃদ্ধ বা কাহিনির গভীরতা সমৃদ্ধ ভৌতিক উপন্যাস আমি খুব কমিই পড়েছি। কাহিনিটুকু কি শুধুই নসিবের? নসিবের অধরা ভালবাসার? নীল চাষী বা নীল বিদ্রোহের? নীল কর এন্ডারসনের? নটি বাড়ির আদিম কামনার কাছে সব কিছু বিকিয়ে দেয়া কোন হতভাগা সুন্দরীর? নাকি অযুত নিযুত সহস্র বছর কিংবা তারো বেশি, হয়তো যে কিনা নক্ষত্র বছর প্রত্যক্ষ করেছিল, এমন কোন পূর্ণযৌবনা দেবীর গল্প ছিল এটা? নাকি সাহেব আলী বাউল নামে কোন এক বাউলের জীবন কথন ছিল এটা, যেখানে বাকি সবাই ছিল শুধু পার্শ্বচরিত্র মাত্র। যারা সময়ের প্রয়োজনে এসেছিল, সময়ের প্রয়োজনে আবার হারিয়ে গেছে। সেই বাউলের গল্প, যার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন আর উদ্দেশ্য, সবিই ছিল একমাত্র তার কণ্ঠস্বর....... সেই কণ্ঠস্বর যা কিনা, চৈত্রের প্রবলব দাবদাহ উপেক্ষা করেও ঘন বর্ষা বইয়ে আনতো তার শ্রোতার মনে.....। জানা নেই, কিচ্ছুই আসলে জানা নেই! শুধু এটুক জানি, প্রচণ্ড এক হাহাকার কিংবা বিষন্নতা আর অদ্ভূত অনাদি ভৌতিক অনুভূতি নিয়ে শেষ করেছি এই উপন্যাসটা। এ মাস্টারপিস ইন্ডেড! অসাধারন কিছু ভৌতিক অনুভূতি লুকিয়ে আছে উপন্যাসটার মাঝে, যা উপন্যাসের বিষন্নতা বা হাহাকারকে আরো গাড় করেছে, আরো গভীর করেছে। লেখকের কাছে অনুরোধ রইলো সেকেন্ড চ্যাপ্টার যাতে বের হয়। এবং তা যাতে শিঘ্রিই হয়। ভালবাসা রইলো রাফি ভাই।
Was this review helpful to you?
or
তিনি সুপ্ত আছেন সহস্র বছর ধরে। জেগে উঠতে চাচ্ছেন নতুন অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরে। কিন্তু অবলম্বন কাছে এসেও যেন আবার হারিয়ে গেল। নীল বিদ্রোহের পরবর্তী সময়ের ভারতবর্ষের একটা গ্রাম মাধবগঞ্জ। হঠাৎ করেই অদ্ভুত কান্ড ঘটতে থাকে এই গ্রামে। কারো ছাগল, কারো গরু, অথবা রাস্তায় কুকুর পাওয়া যাচ্ছে মৃত। একপাশ থেকে মাংস খুবলে খাওয়া। অশুভ কিছুর আলামত? বাবার মৃত্যুর পর নিজের বাবার গ্রামে ফিরেছে নসীব। অথচ ছোটবেলার পর থেকে ওর বাবাই কখনো আর গ্রামে আসেনি। মৃত্যুর সময় ওর বাবার পকেটে একটা রহস্যময় চিঠি, যেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন গ্রামে যাওয়ার জন্য। গ্রামে যাওয়ার জন্য নসীবের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বাউল সাহেব আলীর গান এবং তার জীবনের উপর আর্টিকেল লেখা। আসলেই কি তাই? নাকি এর থেকেও বড় কোনো উদ্দেশ্য আছে? পুরো গল্পটার প্রেক্ষাপট বলতে গেলে ১৮ শতকের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে ১৯ শতকের শুরু পর্যন্ত। সেই সময়ের একটা গল্পে সময়ের ক্রম মেইনটেইন করা খুবই টাফ একটা ব্যাপার। তারমধ্যে লেখক বেশ কয়েকটা টাইম লেয়ার একসাথে লিখেছেন। এবং ব্যাপারটা বেশ ভালোভাবেই মেইনটেইন করতে পেরেছেন, সাধুবাদ জানাই তাকে। মৌলিক বই হিসেবে এটাই তার প্রথম বই, প্রথম বইয়েই যে নিজের জাত চেনাবেন এই সম্পর্কে পূর্ব ধারণা ছিল আমার। এটা একটা গথিক হরর গল্প। গল্প বলে আজকাল মানুষকে ভয় দেখানো খুবই কঠিন কাজ, সেই কাজটাকে সহজভাবে করতে সফল হয়েছেন লেখক। ভাষা এবং উপমার ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মত। শুরুর দিকে অথবা বলতে পারেন গল্পের পূর্বাভাষ পড়ে কিছুই বুঝবেন না, এলোমেলো কিছু অর্থহীন কথাবার্তা মনে হতে পারে। কিন্তু যখন আস্তে আস্তে গল্পে ঢুকে যাবেন তখন বুঝতে পারবেন ঐ অর্থহীন প্রলাপের মানে কী ছিল। এবার আসি সমালোচনায়। অন্যান্য লেখকের বই পড়ার সময় এই অংশুটুকুতে আমি একটু ভয়ে থাকি। লেখক ব্যাপারটা কিভাবে নিবেন এমন একটা ব্যাপার মাথার ভেতর খোঁচাতে থাকে। কিন্তু রাফি ভাইয়ের ক্ষেত্রে এই ভয়টা কাজ করছেনা। গল্পের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত খুব সূক্ষ্মভাবে হুমায়ূন আহমেদের মধ্যাহ্ন বইয়ের উপস্থিতি পেয়েছি আমি। মধ্যাহ্ন আমার অনেক প্রিয় বই বলেও হতে পারে। গল্প বলার ঢংটা একই রকম লেগেছে। একদম যে সেম টু সেম, এরকম কিছু না। টাইমের লেয়ারগুলো, প্রাত্যহিক জীবন, হিন্দু মুসলিমের একই পরিবেশে বাস, এবং একজন বাউল। এই ব্যাপারগুল্প মধ্যাহ্ন বইয়েও আছে। হতে পারে সম্পূর্ণ কাকতালীয়, হতে পারে লেখক একই স্টাইল ফলো করেছেন। বানান ভুলের আধিক্য বরাবরই বিরক্তির কারণ। এই বইয়েও একাধিক বানান ভুল আছে, তবে গল্পে ঢুকে গেলে পাঠক হয়তো ভুলগুলো ধরতেই পারবে না, একজন লেখক বা অনুবাদকের চোখ দিয়ে পড়তে গিয়ে ব্যাপারগুলো আমার চোখে পড়েছে । গল্পটা খুবই সুন্দর, চমৎকার একটা প্লট। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে গল্পটা আরো শক্তিশালী হতে পারতো, উপস্থাপন আরো সুন্দর হতে পারতো। পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলব, হরর বই পড়তে হয় পরিবেশ তৈরী করে এবং অনুভব করে। আপনি দুপুরের কাঠফাটা রোদের সময় এই বই পড়লে যেমন মজা পাবেন না তেমনি রাত তিনটায় এক পাল বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় বসে পড়েও পাবেন না। প্রকৃত মজা নিতে হলে মাঝরাতে একা বসে পড়বেন, চরিত্রগুলো এবং গল্পের স্থানগুলো মন দিয়ে অনুভব করবেন, তবেই না পাবেন মজা। ও হ্যাঁ, প্রচ্ছদটা সুন্দর।
Was this review helpful to you?
or
প্রত্যেক অঞ্চলেরই কিছু কাহিনী থাকে।রহস্যের লতাপাতা দিয়ে আবদ্ধ থাকে কিছু জায়গা।তেমনই গ্রাম মাধবগঞ্জ।গল্পটা মাধবগঞ্জের,কিংবা মাধবগঞ্জের প্রতিটি অধিবাসীর অথবা মাধবগঞ্জের অতীতের।বাবার বন্ধুর বাড়িতে এসে হাজির হয় নসিব উদ্দেশ্য মাধবগঞ্জের বাউল সাহেব আলীর রহস্যময় বাউলে জীবন এবং কর্ম সম্পর্কে জানা।অন্ধ বাউল সাহেব আলী যে এক চাঞ্চল্যকর ইতিহাসের দ্রষ্টা তা কি কেও জানে? মাধবগঞ্জের মানুষের গরু, ছাগল মৃত পাওয়া যেতে লাগল,সুবোধ ঘোষের করুণায় তার চায়ের দোকানে চাকরি পাওয়া এক অল্পবয়সী ছেলে কানাইও একসময় হারিয়ে গেল, সবাই ভাবল সুবোধ ঘোষের রাগে অভিমান করেছে বোধহয়,হঠাৎ করেই যেমন কানাই উদয় হয়েছিল তেমন হঠাৎ করেই চলে গেল যেন,কে এই কানাই?একদিন রাতে সুবোধ ঘোষ ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে উঠে দেখেন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কানাই...পরেরদিন লাশ পাওয়া গেল সুবোধ ঘোষের তার বাড়িতেই..কে খুন করল সুবোধ ঘোষ কে?কানাই ত বাচ্চা ঢ্যাঙা একটা ছেলে তাছাড়া ওর জীবন যে বাঁচিয়েছে তাকেই বা কেন খুন করবে ছেলেটা? গ্রামে একটা বিশাল বাড়ি,নীল বিদ্রোহের সময় বিদ্রোহীদের হাত থেকে বেঁচে ফেরা জাদুকর অ্যান্ডারসনের বাড়ি।জাদুকর কেনই বা এই গ্রামে এসেছিল?আর এতবড় বাড়ি এখানে বানানোর কারণটাই বা কি?গ্রামের লোকেরা কেনই বা এই বাড়িকে এড়িয়ে চলে? একসময় নসিব যায় ওই বাড়িতে,কারণ নসিবকে দরকার বড়ই দরকার..নসিব জানেও না তার নসিবে কি লেখা আছে... আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় সব,অ্যান্ডারসন,সুবোধ ঘোষ,কানাই,নসিব সবাই হারিয়ে যায় আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে শুধু পরে থাকে মাধবগঞ্জ আর সে.. কে? আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে, ওয়াসি আহমেদ ওরফে আমাদের রাফি ভাইয়ার প্রথম মৌলিক বই।প্রথম মৌলিক বই তারপরে আবার হরর বই এতটা জম্পেশ আগে আমি দেখিনি।সত্যিই দারুণ লিখেছেন।সবদিকে কাহিনী বর্ণনা করে,বিস্তারিত লিখেও যেন কিছু লেখেননি!বইয়ের প্রথম থেকে কাহিনী শুরু হয়ে শেষ পর্যন্ত যেন মনে হয়েছে প্রতিটা দাড়ি,সেমিকোলন খুবই হিসেব করে এবং পারফেক্টভাবে ব্যবহার করা হয়েছে,যেন এতটুকুও বাড়তি কিছু নেই।মোটকথা,ভালোই উপভোগ করেছি। আর প্রচ্ছদটা অনেক সুন্দর।বাঁধাইও চমৎকার হয়েছে এবং বানানো বেশি ভুল নেই।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_পাঠক_সমাগম_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_৫ পর্বঃ ৫ বই : আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে লেখক : ওয়াসি আহমেদ প্রকাশক : বাতিঘর প্রকাশনী প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ঘরানা : গথিক হরর/মিস্ট্রি/থ্রিলার প্রচ্ছদ : জুলিয়ান পৃষ্ঠা : ১৪৪ মুদ্রিত মূল্য : ১৫০ টাকা ''তবুও তো পেঁচা জাগে; গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে আরেকটি প্রভাতের ইশারায়— অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে। টের পাই যূথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশে'' ----জীবনানন্দ দাশ #জনরা_বা_ঘরানা_পরিচিতি এটা খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যে, যেই বইটি পড়ছি তার ঘরানা পরিচিতি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া।এতে করে বইটি ঠিকঠাক বৈশিষ্ট্য মেনে লেখা হয়েছে নাকি লেখকের মনগড়া গল্প তা যাচাই করতে সুবিধা হয়।তাছাড়া সাহিত্য অঙ্গনে এই জনরা একটা আলাদা বিশেষত্ব বহন করে।চলুন তবে জেনে নেই গথিক হরর বিষয়টি কী। গথিক হরর শুনলেই মনে হতে পারে ভুতুড়ে কান্ড।ভুতুড়ে কান্ড তো থাকবেই।কিন্তু শিহরিত ও রোমাঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সেখানে অতীতের কাহিনীর সংযোগ, প্রেম, বিরহ, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ থাকবে।সেই সাথে পুরোনো ভৌতিক বাড়ির বর্ণনা থাকতে হবে।কিন্তু এতসবের পরেও নিছক ছেলেমানুষি কাহিনী নয়।হতে হবে শক্তপোক্ত প্লট।এইতো গেলো পরিচিতি। #লেখক_পরিচিতি: নিজেকে খানিকটা আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন লেখক ওয়াসি আহমেদ। জন্ম ও বেড়ে উঠা ঢাকায় হলেও পৈতৃক নিবাস বগুড়া। তিনি পেশায় চিকিৎসক। প্রচুর বই সংগ্রহে থাকা লেখক নেশায় মস্ত বড় মাপের পাঠক। তার ভালোবাসার জায়গায় ঠাঁই করে নিয়েছে ছবি তোলা, গান শোনা। গুনগুন করে গান করতেও ভালোবাসেন। আর গল্প শুনে যেমন আনন্দ পান, গল্প শুনতেও তার তেমনি ভালো লাগে। অনুবাদ কর্ম দিয়ে লেখালিখির কাজ শুরু হলেও, 'আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে' তার প্রথম মৌলিক উপন্যাস। এছাড়া অনুবাদের মধ্যে রয়েছে, দ্য স্পাই, দ্য ব্যাটল অফ কাদেশ, কোরালাইন, আফটার ডার্ক সহ আরো কিছু চমকপ্রদ বই। #কাহিনী_সংক্ষেপ: ঘটনা তো বহুকাল আগের। সেই ১৯১৮ সালের। অজানা রহস্যের জাল পেতে রাখা আছে মাধবগঞ্জের গ্রামটিকে ঘিরে। কিন্তু সেই রহস্য ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য উদ্ঘাটনে তৎপর নওয়াজেশ হায়দার চৌধুরী (নসিব) ছুটলেন গ্রামে। তার উদ্দেশ্য সাহেব আলী বাউলের জীবন ও কর্মের বিশ্লেষণ।নসিব সাহেবের বাবার হৃদয়ে গেঁথে রাখা পুরোনো দুঃখই তাকে এ পথের ঠিকানা করে দিয়েছে। মোস্তফা মাস্টারের পুরোনো নিরিবিলি স্কুলঘরটাই এখন নসীবের রিসার্চের ভালো অঞ্চল। চায়ের দোকানদার সুবোধের ঘটনাটি আরো পুরাতন।পেছনে ফিরে যাওয়া যাক। সাল ১৯০৩, যখন ভাইসরয় কার্জন দেশে চা নিয়ে এলেন। 'অসম চা' কোম্পানির আবির্ভাব থেকে দেশ জুড়ে গরম পানীয়ের দু'এক পদ্ধতি শিখে নিয়ে সাথে জমজমাট নাস্তা-মিষ্টি-সন্দেশ জুড়ে দিয়েই সে কি রমরমা ব্যবসা সুবোধের। তবে কোথা থেকে এক কুঁজো চক্র নিতাইকে নেহাত ময় করে টঙটায় তোলবার পর থেকেই ঘটতে থাকে অঘটন। এদিকে গ্রামের হরিনাথের জল-খাবারের দোকানটার সাথে অনন্য রন্ধনশৈলীর অধিকারী যতীনের সম্পর্ক বড্ডো পুরোনো।কিন্তু ভাগ্যের ফেরে যতীনের বর্তমান কাজ নসিব বাবুর সেবাআত্তি।কিন্তু কোথায় যেন একটা খটকা আছে।মিলেমিশে সব জটিলতার সরাসরি কুটুম্বিতা সেই অ্যান্ডারসন কটেজের সাথে। এখানে শেষ হলেও চলতো। কিন্তু কোথাকার অঘোরনাথ তান্ত্রিক, মোস্তফা মাস্টার, বিকলাঙ্গ বালক সবাই যেন একে অন্যের পরিপূরক। এক সুতোয় গাঁথা বহু পুরাতন মন্ত্রের কলকাঠি। কে এই রহস্যের খলনায়ক? শত বছরের পুরোনো চাপা দেওয়া বিসর্জনের ইতিহাস কার হাত ধরে উন্মোচিত হতে চায়? ভারতীয় উপমহাদেশে যে জাদুকরের হাত ধরে সার্কাসের আবির্ভাব, নীল বিদ্রোহের কড়াল গ্রাস থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত সে অ্যান্ডারসনের নিজস্ব কটেজের সাথে মিশে রয়েছে স্মৃতিবিজড়িত একদল ঠগীর মৃত্যু রহস্যকে কেন্দ্র করে কিছু আর্তনাদ। বিস্মৃত........বিবর্জিত......চিন্তাতীত.....ঐশ্বর্য সাগর পরিমান বিষাদ বুকে নিয়ে যে রহস্য ঘুমিয়ে পড়েছিল তার সাথে মাধবগঞ্জের সম্পর্ক খুঁজে পেতে সত্য-মিথ্যা, রহস্য-সমাধানে একে একে আপনাকেও বিলীন হতে হবে আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে। পথের কাটা সরাতে গতিপথ যখন যায় পাল্টে, তখন রহস্য রূপ নেয় ভয়ে।আপনি তৈরী তো? #পাঠ_প্রতিক্রিয়া উপন্যাসের প্রধান আকর্ষণ হলো এই যে, মাধবগঞ্জকে কেন্দ্র করে গল্পের গোড়াপত্তন ঘটলেও বাস্তব ইতিহাস বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। কখনো ১৯০৩, তো কখনো ১৯১৮ সাল।কিন্তু চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটেছে বর্তমান সময়ে। ভূত-প্রেত-আত্মার মিশেল থাকলেও টুইস্টের অভাববোধ করিনি। তাছাড়া থ্রিলারের স্বাদ একদম ঝাঁঝালো ও অটুট ছিল। কখনো নীল বিদ্রোহের সময়টাতে আপনাকে যেতে হচ্ছে, আবার কখনো ইংরেজদের এই উপমহাদেশে চায়ের বাণিজ্যে। মনে হবে যেন টাইম মেশিনে করে আপনি পুরো খন্ড খন্ড ফ্ল্যাশব্যাক উপভোগ করছেন। ষোড়শ শতকের পর্তুগিজ নাবিক গিরাল্ড-এর গল্পটিতে আপনি যখন খুব মন্ত্রমুগ্ধ, ঠিক তখনি অনিন্দ্য সুন্দরী অনিতাও আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে তার গল্পটি শোনানোর আকুতিতে।প্রত্যেকবারই আপনাকে নড়ে চড়ে বসতে হবে। আমাদের লোকচক্ষুর আড়ালে এমন সব পরাবাস্তব অলৌকিক কর্মকান্ড ঘটে লুকিয়ে থাকা নৈশব্দের জগতে যখন চেতনার স্পন্দন অনুভব করা যায়, তখন জন্ম নেয় অনেক অজানা প্রশ্নের।অজানা অচেনা প্রাচীন শক্তির কাছে চেনা পরিবেশটা যখন পরাস্ত, তখন শিহরিত হওয়ার মতোই বিষয়।আজ থেকে শত বছর পূর্বের ব্যাখ্যাতীত রহস্যের বুননে আপনিও আটকে পড়বেন।রোমাঞ্চের সিঁড়ি গুলোর রাস্তাটা আপনার জন্য না হয় খোলাই থাকলো। #ভালো_মন্দ অনেকদিন পর একটা গথিক হরর পড়ে যারপরনাই অভিভূত হয়েছি। প্রত্যেকটি চরিত্রই অসাধারণ বাস্তব আবেশে তৈরী এবং পাঠকের কল্পনা রাজ্যে চিত্রায়ন। বিশেষত্ব এটাই প্রত্যেকটি চরিত্র ভালো লাগার মতো প্লট টুইস্টে ভরপুর।দুই একটা প্রিন্টিং মিস্টেক ছাড়া তেমন কিছুই চোখে পড়েনি।খুব ভালোই ছিল প্রুফ রিডিং।তাছাড়া কোনভাবেই বোঝার উপায় নেই, উপন্যাসটি লেখকের আনকোরা হাতের প্রথম উপন্যাস।পুরো কাহিনিটিতে লেখকের অনেক রিসার্চ, তথ্য সংগ্রহের প্রমান বিদ্যমান। আর নজরকাড়া প্রচ্ছদ বইটিকে দিয়েছে আলাদা মাত্রা।যে কারো বইটিকে ভালো লাগবে। #পার্সোনাল_রেটিং: ৪.৭/৫.০ লিখেছেনঃ রুপন্তি শারমিন
Was this review helpful to you?
or
হরর উপন্যাস কিন্তু উপস্থাপনা একটু অন্যরকমের। লেখনী খুব সুন্দর। একটানে পড়েছি। প্রচুর উপমা ব্যবহার করেছে লেখক আর গানের কলি সাথে ভগমত গীতার শ্লোক। এগুলোই আমার কাছে গতানুগতিক হরর উপন্যাস থেকে ভিন্নতা এনে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত না পড়ে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এমনকি দেবীর নাম কি সেটাও বুঝতে সমস্যা হচ্ছিল। পরে বুঝলাম শালা এইটা অপদেবী...ধুর! আত্মা খেয়ে শক্তি বাড়ায়...সেই আত্মা যেটারই হোক না কেন। আসলে লেখনী ভালো হলে যা হয় আর কি! তবে নসিব, অনিতা, মৌল আর মোস্তফা মাস্টারের জন্য খারাপ লেগেছে। আরও বেশি বেশি মৌলিকের আশা করছি। আর হ্যাঁ...বইতে রেসিপি যেগুলো দেয়া আছে সেগুলো চেখে দেখতে চাই কিন্তু রাফি! আর যতিনের ভূমিকায় তুমিই থাকবে।