User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
আপনারা কখনো মানতা সম্প্রদায়ের নাম শুনেছেন? তাদের জীবনযাত্রা সস্পর্কে জানেন? আসুন পরিচয় করিয়ে দেই,মুসলিম ধর্মাবলম্বী এই সম্প্রদায়ের সাথে। পরিচিতো হোন তাদেরই গোত্রের মেয়ে বন্যার সাথে,যে সব নিয়মনীতি ভেঙে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখে। আমাদের দেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে। তাদের জীবনযাত্রায় আছে ভিন্নতা। এমনই এক ভিন্ন সম্প্রদায় হচ্ছে 'মানতা'। নৌকায় যাযাবরের জীবন তাদের। মাছ ধরেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে। ডাঙ্গার সাথে তাদের সম্পর্ক বহু দূরের। নৌকা তাদের সব কিছু,পুরো জীবন এখানেই কেটে যায়। ডাঙ্গার জীবন তাদের কাছে স্বপ্নের মতো,যা কখনো পূরণ হওয়ার না। এখানে জীবন ভাগ্য নির্ভর। ভালো মাছ পেলে পেট ভরে খেতে পারে,না হলে কপালে ভাতও জোটে না। আমাদের দেশের নাগরিক হয়েও ভূমিহীন হওয়ার কারনে,নগর রাষ্ট্রে তাদের কোনো অধিকার নেই। কেও মারা গেলেও তাকে কবর দেওয়ার অধিকারটুকু পেতেও করতে হয় কঠিন লড়াই। কুদ্দুস সর্দারের একমাত্র মেয়ে বন্যা। পনেরো বছরের কিশোরি মেয়েটি বহরের অন্য সব মেয়ের চেয়ে একটু বেশিই সুন্দরী। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে আজকাল চিন্তা বেড়েছে আমেনা বিবির। মেয়েটার নজর সবসময় ডাঙ্গার দিকে থাকে। পানির মানুষের ডাঙ্গার নেশা ভালো না। মেয়ের এই উচটান ভাব আমেনার মোটেও ভালো লাগে না। বড় ভয় হয়। অজানা শঙ্কায় বুক কেঁপে ওঠে। ডাঙ্গার মানুষ তাদের মন বোঝে না,বোঝে শুধু শরীর। বহরের একমাত্র জ্ঞানী লোক মালেক মাস্টার। পঁয়ষট্টি বছর বয়সেও তিনি ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েদের পড়ান। নিজের চেষ্টায় পড়ালেখা শিখেছিলেন তিনি,এখন সেইসব জ্ঞান বহরের বাচ্চা গুলোর মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের জন্য তো আর স্কুল নেই, পড়াশোনা শেখার অধিকারও তাদের নেই। বহরের যে কোনো সমস্যায় সবাই তাকে ডাকে,শলা পরামর্শ করে। বই পাগল এই মানুষটি বন্যাকে খুব স্নেহ করে। ভাবে তার মৃত্যুর পর বন্যা তার জায়গা নিবে। বড় ব্যবসায়ি সারোয়ার মাতুব্বর। পাঁচ সন্তানের মধ্যে মিরাজ সবার ছোটো। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এই ছেলেটি সবার থেকে আলাদা। অন্যের বিপদে সবর্দা ঝাপিয়ে পড়ে। দু হাতে টাকা পয়সা ঢালে গরিব দুঃখির কল্যানে। ছেলেকে নিয়ে অনেক বড় আশা হাসিনা বেগমের। একশো ভরি গহনা দিয়ে ছোটো ছেলের বউ ঘরে আনবেন। অথচ ছেলের মন আজকাল অন্যদিকে। বন্যাকে খুব পছন্দ মিরাজের । বার বার নদীর ঘাটে ছুটে যায় মেয়েটিকে দেখতে। অন্যদিকে বন্যাও অপেক্ষায় থাকে তার জন্য। টুকটাক কথাবার্তা চলতে থাকে দুজনের। ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ে একসময়। কিন্তু এতোবড় ঘরের ছেলে,বন্যার মতো মেয়েকে কি বউ করে ঘরে তুলবে? মানতা সম্প্রদায়ের মধ্যেও তো ডাঙ্গার মানুষের সাথে বিয়ের নিয়ম নেই। অথচ মিরাজকে ছাড়া আজকাল কিছুই ভাবতে পারে না বন্যা। মিরাজও না দেখে থাকতে পারে না। চাপা থাকে না তাদের ভালোবাসা, সবার নজরে পড়তে থাকে। সম্মান বাঁচাতে মিরাজের বাবা বহরের সর্দারকে ঘাট ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। বিপদ বুঝে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দুজনে। কথা মতো মিরাজের অপেক্ষায় রাতভর ডাঙ্গায় নেমে অপেক্ষায় থাকে বন্যা। অন্যদিকে মিরাজ আটকা পড়ে পরিবারের কাছে,বাধ্য হয়ে দুজন বন্ধুকে পাঠায় বন্যাকে নিতে। তারপর ঘটে যায় এক অঘটন। উলটপালট হয়ে যায় বন্যা মিরাজের জীবন। বন্যার স্থান হয় পতিতালয়ে। মিরাজ হয় ভবঘুরে, দারে দারে খুঁজতে থাকে বন্যাকে। শেষপর্যন্ত বন্যাকে কি খুঁজে পাবে মিরাজ? কেনোই বা বন্যা বেছে নিলো এমন জীবন? মিরাজ কি বের করে নিতে পারবে বন্যাকে এই জীবন থেকে? কি হবে দুজনের সাথে?
Was this review helpful to you?
or
বইঃ জলবাতাসী লেখকঃ কাজী সাইফুল ইসলাম প্রকাশনীঃগদ্যপদ্য প্রকাশনী মুদ্রিত মূল্যঃ ২৫০ টাকা মাত্র পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১২০ প্রচ্ছদঃ মোস্তাফিজ কারিগর আপনারা কখনো মানতা সম্প্রদায়ের নাম শুনেছেন? তাদের জীবনযাত্রা সস্পর্কে জানেন? আসুন পরিচয় করিয়ে দেই,মুসলিম ধর্মাবলম্বী এই সম্প্রদায়ের সাথে। পরিচিতো হোন তাদেরই গোত্রের মেয়ে বন্যার সাথে,যে সব নিয়মনীতি ভেঙে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখে। আমাদের দেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে। তাদের জীবনযাত্রায় আছে ভিন্নতা। এমনই এক ভিন্ন সম্প্রদায় হচ্ছে 'মানতা'। নৌকায় যাযাবরের জীবন তাদের। মাছ ধরেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে। ডাঙ্গার সাথে তাদের সম্পর্ক বহু দূরের। নৌকা তাদের সব কিছু,পুরো জীবন এখানেই কেটে যায়। ডাঙ্গার জীবন তাদের কাছে স্বপ্নের মতো,যা কখনো পূরণ হওয়ার না। এখানে জীবন ভাগ্য নির্ভর। ভালো মাছ পেলে পেট ভরে খেতে পারে,না হলে কপালে ভাতও জোটে না। আমাদের দেশের নাগরিক হয়েও ভূমিহীন হওয়ার কারনে,নগর রাষ্ট্রে তাদের কোনো অধিকার নেই। কেও মারা গেলেও তাকে কবর দেওয়ার অধিকারটুকু পেতেও করতে হয় কঠিন লড়াই। কুদ্দুস সর্দারের একমাত্র মেয়ে বন্যা। পনেরো বছরের কিশোরি মেয়েটি বহরের অন্য সব মেয়ের চেয়ে একটু বেশিই সুন্দরী। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে আজকাল চিন্তা বেড়েছে আমেনা বিবির। মেয়েটার নজর সবসময় ডাঙ্গার দিকে থাকে। পানির মানুষের ডাঙ্গার নেশা ভালো না। মেয়ের এই উচটান ভাব আমেনার মোটেও ভালো লাগে না। বড় ভয় হয়। অজানা শঙ্কায় বুক কেঁপে ওঠে। ডাঙ্গার মানুষ তাদের মন বোঝে না,বোঝে শুধু শরীর। বহরের একমাত্র জ্ঞানী লোক মালেক মাস্টার। পঁয়ষট্টি বছর বয়সেও তিনি ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েদের পড়ান। নিজের চেষ্টায় পড়ালেখা শিখেছিলেন তিনি,এখন সেইসব জ্ঞান বহরের বাচ্চা গুলোর মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের জন্য তো আর স্কুল নেই, পড়াশোনা শেখার অধিকারও তাদের নেই। বহরের যে কোনো সমস্যায় সবাই তাকে ডাকে,শলা পরামর্শ করে। বই পাগল এই মানুষটি বন্যাকে খুব স্নেহ করে। ভাবে তার মৃত্যুর পর বন্যা তার জায়গা নিবে। বড় ব্যবসায়ি সারোয়ার মাতুব্বর। পাঁচ সন্তানের মধ্যে মিরাজ সবার ছোটো। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এই ছেলেটি সবার থেকে আলাদা। অন্যের বিপদে সবর্দা ঝাপিয়ে পড়ে। দু হাতে টাকা পয়সা ঢালে গরিব দুঃখির কল্যানে। ছেলেকে নিয়ে অনেক বড় আশা হাসিনা বেগমের। একশো ভরি গহনা দিয়ে ছোটো ছেলের বউ ঘরে আনবেন। অথচ ছেলের মন আজকাল অন্যদিকে। বন্যাকে খুব পছন্দ মিরাজের । বার বার নদীর ঘাটে ছুটে যায় মেয়েটিকে দেখতে। অন্যদিকে বন্যাও অপেক্ষায় থাকে তার জন্য। টুকটাক কথাবার্তা চলতে থাকে দুজনের। ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ে একসময়। কিন্তু এতোবড় ঘরের ছেলে,বন্যার মতো মেয়েকে কি বউ করে ঘরে তুলবে? মানতা সম্প্রদায়ের মধ্যেও তো ডাঙ্গার মানুষের সাথে বিয়ের নিয়ম নেই। অথচ মিরাজকে ছাড়া আজকাল কিছুই ভাবতে পারে না বন্যা। মিরাজও না দেখে থাকতে পারে না। চাপা থাকে না তাদের ভালোবাসা, সবার নজরে পড়তে থাকে। সম্মান বাঁচাতে মিরাজের বাবা বহরের সর্দারকে ঘাট ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। বিপদ বুঝে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দুজনে। কথা মতো মিরাজের অপেক্ষায় রাতভর ডাঙ্গায় নেমে অপেক্ষায় থাকে বন্যা। অন্যদিকে মিরাজ আটকা পড়ে পরিবারের কাছে,বাধ্য হয়ে দুজন বন্ধুকে পাঠায় বন্যাকে নিতে। তারপর ঘটে যায় এক অঘটন। উলটপালট হয়ে যায় বন্যা মিরাজের জীবন। বন্যার স্থান হয় পতিতালয়ে। মিরাজ হয় ভবঘুরে, দারে দারে খুঁজতে থাকে বন্যাকে। শেষপর্যন্ত বন্যাকে কি খুঁজে পাবে মিরাজ? কেনোই বা বন্যা বেছে নিলো এমন জীবন? মিরাজ কি বের করে নিতে পারবে বন্যাকে এই জীবন থেকে? কি হবে দুজনের সাথে? #পাঠ_প্রতিক্রিয়া : কথাসাহিত্যিক কাজী সাইফুল ইসলামের প্রধান কাজের ক্ষেত্র, গল্প উপন্যাস, কবিতা হলেও প্রবন্ধ এবং গবেষণাধর্মী কাজও করেছেন তিনি। গল্পের মধ্য দিয়ে নতুনদের কাছে বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস তুলে ধরেছেন। 'জল বাতাসী' বইটির মাধ্যমেও তিনি পরিচয় করিয়েছেন আমাদের দেশেরই একটি অবহেলিত সম্প্রদায়ের সাথে। যারা সবসময় নগর রাষ্ট্রের কাছে উপেক্ষিত হয়ে থাকে, সুযোগ পেলেই যাদেরকে শোষণ করা হয়। ১২০ পৃষ্ঠার ছোটো বইটিকে পুরোপুরি প্রেমের উপন্যাস বলা যাবে না। এখানে মানব মানবীর প্রেমের মাধ্যমে ইতিহাস উঠে এসেছে,তাদের সুখ দুঃখ,পাওয়া না পাওয়া তুলে ধরেছেন লেখক। আমাদের সমাজের তিন ধরনের মানুষ এবং তাদের জীবনযাত্রা দেখতে পেয়েছি এখানে। প্রথমেই আছে মানতা সম্প্রদায়,তারপর ডাঙ্গায় বাস করা মানুষ,সবশেষে লেখক দেখিয়েছেন আমাদের সমাজেরই অংশ কিন্তু সবার নজরে ঘৃণ্যিত এক জায়গা, পতিতালয়। লেখক বইটির মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করেছেন পতিতালয়ে যারা থাকে,তারাও মানুষ। তাদেরও নিজের একটা করে গল্প থাকে,সুন্দর কিছু স্বপ্ন থাকে। শখ করে তারা কেও পতিতা হতে আসে না। কেও বাধ্য হয়ে আসে, তো কেও পেটের দায়ে আসে। আমরা যারা তাদেরকে ঘৃণ্যা করি,না জেনেই করি। অন্যদিকে আমাদের দেশেরই নাগরিক মানতা সম্প্রদায়ের মানুষ,তবুও মাটিতে তাদের কোনো অধিকার নেই। জলের জীবনেই কষ্ট দুঃখে তাদের বাস। কেও একজন মারা গেলেও,কবর দেওয়ার মাটি টুকুর জন্য তাদের কতো আহাজারি। আরও একটি দিক উঠে এসেছে বইটিতে ,'বিশ্বাসঘাতকতা' । শুধুমাত্র বিশ্বাসঘাতকতার কারনে কতো কিছু হয়ে যেতে পারে,কতোজনের জীবন নষ্ট হয়ে যেতে পারে,সেটাও দেখতে পেয়েছি 'জল বাতাসি' পড়ে। ছোটো সাইজের বইটা হাতে নিয়ে প্রথমেই মুগ্ধ হতে হবে প্রচ্ছদটা দেখে। মোস্তাফিজ কারিগরের করা প্রচ্ছদটা একটু বেশিই ভালো লেগেছে। বইয়ের প্লট নির্বাচনে লেখক যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন,একই বইতে আমাদের সমাজের তিনটি দিক তুলে ধরেছেন সুনিপুণ ভাবে। পরিবেশ চিত্রায়নে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছেন। প্লট অনুযায়ী উপযুক্ত পরিবেশ চিত্রায়নের প্রশংসা করতেই হয়। খুব বেশি চরিত্রের উপস্থিত ঘটিয়ে অযথা কাহিনি প্যাঁচানোর চেষ্টা করেন নি। সহজ সরল ভাষায় পুরো গল্পটি বর্ননা করেছেন। বর্ণনা শৈলী নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় ,কাওকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেননি। নিজস্ব ঢংয়ে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেছেন। এবার আসি কিছু অসঙ্গতির বিষয়ে। ৯ পেজের শেষ প্যারার প্রথম লাইনে লেখক লিখেছেন," সেদিনের পর থেকে বাতাসীর আয়নায় মুখ দেখা বেড়ে যায়। চোখে কাজল টানে।" এখানে বাতাসী বলতে লেখক কাকে বুঝিয়েছেন? লেখক যে মেয়ের বর্ণনা দিয়েছেন তখন পর্যন্ত তার নাম ছিলো বন্যা। তার অনেক পরে সে জল বাতাসী নাম ধারণ করে। তাহলে ওখানে কেনো বাতাসী নামের ব্যবহার করা হলো,এটা সত্যিই বুঝিনি। এই একটা বিষয়ই একটু খটকা লেগেছে পুরো বইটিতে। এছাড়া তেমন কোনো ভুল চোখে পড়েনি। বানানের দিকে প্রকাশক খুব বেশি মনোযোগী ছিলেন। তেমন বানান ভুল নেই বইটিতে। সব মিলিয়ে বইটি অনেক সুন্দর। ভালো লেগেছে অনেক। অজানা বেশ কিছু বিষয় জানতে পেরেছি। রেটিং : 4/5
Was this review helpful to you?
or
বইঃ জলবাতাসী লেখকঃ কাজী সাইফুল ইসলাম প্রকাশনীঃ গদ্যপদ্য প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১২০ মুদ্রিত মুল্যঃ ২৫০ টাকা জীবনে স্বপ্ন দেখা, মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিগুলোর মধ্যে একটি। তবে বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই সেই স্বপ্ন ঘুরতে থাকে একটি সীমানাকে ঘিরে। সেই সীমানার গন্ডি পার হয় না তাদের স্বপ্ন। কিন্তু কিছু মানুষ থাকে ব্যতিক্রম। তারা অতিক্রম করতে চায় সেই সীমানাকে। সীমানার বাধন ভেঙে এগিয়ে যেতে চায় স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। 'মানতা সম্প্রদায়', যাদের নেই কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা। নৌকাতেই যাদের বাড়িঘর, সংসার। মাছ ধরাই তাদের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম। অনেকগুলো নৌকা নিয়ে গঠিত বহর নিয়ে তারা থাকা শুরু করে কোনো অঞ্চলের ঘাটে। কিন্তু তা দুই-তিন মাসের বেশি স্থায়ী হয় না। নদীর টানে তাদের আবার ভেসে যেতে হয় নদীর বুকে, অন্য কোনো অঞ্চলে। এরকমই একটি বহর এসে ভেড়ে মাদারীপুরের টেকেরহাটের কাছে। সেই বহরের সর্দারের মেয়ে বন্যা। বহরের নদীর জীবনে তার মন বসে না। সে বারবার উঠে আসতে চায় ডাঙায়, দেখতে চায়, জানতে চায়, বুঝতে চায় নদীর বাইরের পৃথিবীটাকে। টেকরহাটের প্রভাবশালী ব্যক্তি সরোয়ার মাতুব্বরের ছেলে মিরাজ। ঢাকায় থেকে পড়াশুনা করে। ছুটিতে বাড়িতে বেড়াতে এসে নদীর পাড়ে ঘুরতে ঘুরতে একদিন লক্ষ্য করে বন্যাকে। ভালো লাগে। কিন্তু প্রকশ করে না। বেশ কয়েকদিন এভাবে কেটে যায়। দুজন দুজনকে দেখে, কিন্তু কেউই কিছু বলে না। কিন্তু একদিন নিজেদের মধ্যকার অদৃশ্য দেয়াল ভেঙে যায়। কথা বলতে শুরু করে, পরস্পরকে জানতে শুরু করে। এই ভালো লাগা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয় ভালোবাসায়। কিন্তু কোনো পক্ষের পরিবারই রাজি হয় না তাদের বিয়ে দিতে। তাই তারা ঠিক করে পালিয়ে বিয়ে করার কথা। যথাসময়ে, যথাস্থানে অপেক্ষা করতে থাকে বন্যা। কিন্তু কই? মিরাজ আসছে না কেনো? এক অজানা আতঙ্ক ঘিরে ধরে বন্যাকে। মিরাজের জন্য অনিশ্চিত অপেক্ষায় কাটতে থাকে বন্যার প্রতিটি মুহূর্ত। মিরাজ কি এসেছিলো সেই রাতে? নাকি ধোঁকা দিয়েছিলো বন্যাকে? তারা কি শুরু করতে পেরেছিলো তাদের নতুন জীবন? নাকি ঘুরে গিয়েছিলো দুজনেরই জীবনের মোড়? উত্তর রয়েছে 'জলবাতাসী' বইতে। #পাঠ_প্রতিক্রিয়া_ও_ব্যক্তিগত_মতামতঃ কাজী সাইফুল ইসলামের এক ভিন্নধর্মী উপন্যাস 'জলবাতাসী'। যেখানে তিনি তুলে এনেছেন এক অবহেলিত সম্প্রদায়কে, যাদের দুঃখের অন্ত নেই। যাদের গোত্রের কেউ মারা গেলে একটু জায়গা মেলে না কবর দেয়ার। দিতে পারলেও আর কখনো সেই কবর দেখতে পারবে কিনা তা অনিশ্চিত। অনিশ্চিত জীবনযাপন করা এক সম্প্রদায়ের সুখ- দুঃখ, হাসি-কান্নার অনুভূতি সূক্ষভাবে ফুটে উঠেছে তার লেখনীতে। ডাঙার প্রতি 'মানতা সম্প্রদায়' এর মনোভাব এবং 'মানতা সম্প্রদায়' এর প্রতি ডাঙার মানুষের মনোভাবের একটি বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে বইটিতে। আর এই লেখনীর বিবরণ দিতে গিয়ে লেখক যেনো একেবারে মিশে গিয়েছিলো সেই সম্প্রদায়ের সাথে। খুবই বাস্তবিক ছিলো তার সংলাপ ও বর্ণনাগুলো। তবে এক্ষেত্রে বইটিতে কটু ভাষার ব্যবহার একটু বেশিই করা হয়েছে। একজন সর্বভুক পাঠক হিসেবে আমার তেমন অসুবিধা হয়নি। তবে অনেকেই এই শব্দগুলো পছন্দ করেন না। তাদের জন্য এটা একটু অস্বস্তিকর হতে পারে। কাজী সাইফুল ইসলাম এমন একজন লেখক যিনি বিশ্বাস করেন উপন্যাস শুধু বিনোদনের মাধ্যমই নয় বরং সমাজ গঠনেরও মাধ্যম। উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র আব্দুল মালেক মাসটারের মধ্য দিয়ে সেই কাজের অনেক অংশই তিনি করেছেন এই উপন্যাসে। কাহিনীর মাঝে মাঝে ছিলো ছোটো ছোটো অনেক শিক্ষণীয় গল্প যা ভালো লেগেছে। সব মিলিয়ে বেশ উপভোগ্য একটি বই 'জলবাতাসী'। #ভালো_লাগা_কিছু_লাইন 'কষ্টগুলো যখন লৌকপাটের মতো শক্ত হতে থাকে, তখন আর কষ্টকে কষ্ট মনে হয় না। মনে হয় - নির্মমতা।' 'মানুষ যখন কোনো নতুন সমস্যায় পড়ে, তখন পিছনের সমস্যাকে কোনো সমস্যাই মনে হয় না।' 'জগৎ সংসারে এমন অনেক কিছুই আছে যা বুঝিয়ে বলা যায় নামন দিয়ে বুঝে নিতে হয়।' 'সে-ই বিশ্বাসঘাতক হতে পারে, যে একদিন বিশ্বাস উৎপাদন করেছিল।' 'জীবনের শ্রেষ্ঠতম অনুভূতিগুলোই আমরা দেখতে পাই না। ওগুলো অনুভব করতে হয়। শ্রেষ্ঠ কথাগুলো সব সময় মুখে বলা যায় না, মনের দৃষ্টি দিয়ে বুঝে নিতে হয়।'
Was this review helpful to you?
or
গ্রন্থালোচনা- জলবাতাসী লেখক: কাজী সাইফুল ইসলাম প্রকাশক: গদ্যপদ্য। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০১৮। অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৮ তে প্রকাশনা সংস্থা 'গদ্যপদ্য' থেকে প্রকাশিত হয়েছে কথাশিল্পী কাজী সাইফুল ইসলামের উপন্যাস 'জলবাতাসী'। কাজী সাইফুল ইসলাম এই দশকের লিখিয়েদের মধ্যে অন্যতম। যদিও তার লেখালিখির শুরুটা হয়েছিলো বিগত দশকের শুরুর দিকেই, তবুও লেখক হিসেবে পরিচিতিটা এই দশকেই বেশি বিস্মৃত হয়েছে। মূলত ঔপন্যাসিক হলেও তার গল্প, কবিতা বা প্রবন্ধ লেখার হাতও নেহাত'ই মন্দ না। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকগুলোতে নিয়মিত তার লেখা প্রকাশ পাচ্ছে। 'জলবাতাসী' লেখকের ত্রয়োদশ উপন্যাস। এখানে তিনি ছিন্নমূল মানুষের গল্প বলতে চেয়েছেন। কোনো একটা উপন্যাস বা দীর্ঘ কলেবরের গল্প তখনই স্বার্থক হয়ে ওঠে যখন সেটাতে গোটা সম্প্রদায় বা কমিউনিটির পূর্ণাঙ্গ চিত্র উঠে আসে। 'জলবাতাসী' উপন্যাসে লেখক তেমন'ই একটি ছিন্নমূল সম্প্রদায়ের গল্প বলেছেন। মানতা সম্প্রদায়। যারা এদেশের জল-হাওয়ায় বেড়া ওঠা মানুষ। আর সবার মত তাদেরও স্বপ্ন থাকে সুন্দর আগামী বা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর। কিন্তু দুঃখের বিষয় এদেশের তথাকথিত সভ্য সমাজে এদের যায়গা হয় না। নিয়তির নির্মম পরিহাসের বোঝা মাথায় নিয়েই তাদের দীর্ঘ দিবশ- রজনী অতিক্রম করতে হয়। মানতা সমাজ পেশায় জেলে। মাছ শিকার তাদের আদি ও অকৃত্রিম পেশা। জল, নৌকা আর জাল'ই তাদের ভাগ্য বিধাতা। এই উপন্যাসে লেখক তাদের অনন্দ বেদনার কাব্যগুলো নিপুন দক্ষতায় একই সুতোয় গেঁথেছেন। গল্পের প্রয়োজনেই এখানে বিভিন্ন চরিত্র ও দৃশ্যপটের অবতারণা করতে হয়েছে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বন্যা ওরফে জলবাতাসী নামের এক ষোড়শী কিশোরী। সমাজের আর দশটি মেয়ের মতো তার চোখেও খেলা করে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন। গন্ধ ফড়িং এর ইচ্ছে ডানায় সে ভেসে বেড়ায় অবিরত। ঘটনার পরিক্রমায় তার সাথে পরিচয় হয় মিরাজ নামক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণের, যে কিনা উপন্যাসের আরেকটি প্রধান চরিত্র। সহজভাবে যাকে উপন্যাসের নায়ক বলা যায়। এই দুটি চরিত্র সাজাতে গিয়ে লেখক বাংলা সিনেমার মত চিরায়ত ধারায় হেঁটেছেন। নায়ক দুর্বল নাইকা সবল বা নাইকা সবল নায়ক দুর্বল - বাংলাদেশি প্রেমের এই ধারা থেকে লেখক বের হতে পারেননি। সম্পদশালী বাবার অতি আদরের পুত্র মিরাজ। সে স্বপ্ন দেখে বৈষম্যহীন সমাজের। নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টাই তার জীবনের ব্রত। অপরদিকে দুর্বল এর প্রতি সবলের যে অত্যাচার এই সমাজে প্রতিনিয়ত হয়ে থাকে বিশেষ করে নারীদের প্রতি, তার সবই মোকাবেলা করা ভীত শঙ্কিত বন্যা অপেক্ষা করে সেই সুপুরুষ এর আশায় যে একদিন তাকে নিয়ে পাড়ি দেবে বন্ধুর পথ, সেই মোক্ষম সময়েই দেখা হয়ে যায় দুজনের। এরপর প্রেম, সংসার গড়ার স্বপ্ন। মোটামুটিভাবে আদর্শিক জীবন যাপনের যে স্বপ্ন তার সব উপাদান'ই লেখক এই দুই চরিত্রের মধ্যে দিয়ে দেখিয়েছেন। উপন্যাসের আরেকটি চরিত্র থাকে মালেক মাষ্টার। তার জীবনের কোনো পিছুটান নেই। না আছে ঘর না আছে ঘরণী। জেলেদের নৌকা বহরের শিশুদের নিয়েই সময় কাটে তার। নিজ উদ্যোগে শিশুদের পড়ান, নিজে জ্ঞান সাধনা করেন। এসব চরিত্রদের দিয়ে লেখক উপন্যাসের দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত আধুনিকতার চর্চা করে গেছেন। কিন্তু গল্পের এক তৃতীয়াংশ পরেই বাধে বিপত্তি। মিরাজ এবং বন্যার প্রেম কাহিনী জানাজানি হয়ে যাওয়ার পরই বাধ সাধে সমাজ এবং পরিবার নামক আদিম প্রতিষ্ঠাগুলো। ধনী গরিবের মিলন না হওয়ার প্রথাগত ট্যাবু থেকেই উপন্যাসের ক্লাইমেক্স শুরু। তবে মিরাজ দমে যাওয়ার পাত্র নয়। সে ঠিক করে প্রেমের জন্য সে সব ছেড়েছুড়ে পাড়ি দেবে অনিশ্চিত পথ। কিন্তু এখানেও বাদ সাধে নিয়তি। বন্ধুদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থের কারনে বন্যাকে হারায় সে। বিশ্বাস করে যাদের পাঠায় বন্যাকে প্রতিকুল অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য, তারাই একা পেয়ে ধর্ষণ করে তাকে। যদিও বন্যা জানে না যে এগুলো কিছুই মিরাজের জ্ঞাতসারে হচ্ছে না। সে ভাবে মিরাজ ইচ্ছে করে তাকে এই পরিস্থিতির কবলে ফেলেছে। তার মনে পড়ে যায় তার'ই মায়ের বলা সেই অমোঘ কথাটা, 'নাঙ আর গাঙের কোনো ভরসা নাই'। জীবনের প্রতি, নিজের বিশ্বাসের প্রতি তীব্র ঘৃণা নিয়ে সে চলে যায় পতিতালয়ে। সেখানে নিজের রুপ-যৌবন দিয়ে অতি অল্প সময়েই নিজের অবিস্থান পাকা করে ফেলে। সেখানেই তার নতুন নাম হয় জলবাতাসী। এদিকে বন্যাকে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে মিরাজ। বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলে তারা অবলীলায় সে রাতের ঘটনা চেপে যেয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। তখন থেকেই শুরু হয় মিরাজের বন্যাকে খোঁজার পালা। সম্ভাব্য সব যায়গায় খুঁজতে যেয়ে একদিন পেয়ে যায় বন্যাদের নৌকার বহর। কিন্তু পায় না বন্যাকে। মালেক মাষ্টারের সাথে কথা হয় মিরাজের। জীবনবোধে অভিজ্ঞ মালেক মাষ্টার বুঝে ফেলে বন্যার বিপদের কথা। এভাবে চলতে থাকে গল্প। উদ্ভ্রান্ত মিরাজ সব কিছু ভুলে শুধুই বন্যায় লীন হয়ে যায়। তার পরিবার অনেক চেষ্টা করেও তাকে এসব থেকে নিবৃত করতে পারে না। ঘটনার পরিক্রমায় একদিন মিরাজের সাথে দেখা হয় বন্যা ওরফে জলবাতাসীর। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারে না সে। জলবাতাসীকে পেয়ে যেন প্রাণ ফিরে পায় সে। অনেক চেষ্টা করে জানতে যে আসলে কি হয়েছিলো সে রাতে। কিন্তু রাগী মিরাজের কথা ভেবে তার বন্ধুদের ঘটনা চেপে যায় জলবাতাসী। শুরু হয় মিরাজের নতুন জীবন। বেশিরভাগ সময়ই পতিতাপল্লীতে পড়ে থাকে সে। বন্যাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বন্যা অনড়। তার চারিত্রিক দৃততার সাথে পেরে ওঠে না মিরাজ। শুরুর দিকে বন্যা চরিত্রটা যেমন ছিলো, উপন্যাসের শেষের দিকে এসে সেই চরিত্রের যে বিপিরীত নির্মাণ তাতে কোনো কালিমা নেই আছে দৃঢ়তা। এসব নিয়েই অভিমান জমে জমে পর্বতসম হয় মিরাজের বুক। কিন্তু হঠাৎ একদিন সে হারিয়ে যায়। এক সময়ের প্রতিষ্ঠান বিরোধী মিজার হয়ে যায় তীব্র প্রাতিষ্ঠানিক। উপন্যাসের শেষের দিয়ে লেখক একধরনের ধোয়সা সৃষ্টি করেন। যা পাঠককে কৌতূহলী করে। এই উপন্যাসের কিছু অসাধারণ দিকের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, প্রায়ই খুবই হালকা সংলাপের মধ্যে দিয়ে লেখক সমাজের স্ট্যাবলিষ্টমেন্টকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। গল্প বলতে যেয়ে বিভিন্ন যায়গায় এমন কিছু সংলাপ ব্যবহার করেছেন যা আপাত দৃষ্টিতে হাস্যরসের যোগান দিলেও সামগ্রিকভাবে পাঠকে ভাবনায় ফেলে দেয়। নদী, জেলে জীবন নিয়ে বাংলা সাহিত্যে পূর্নাঙ্গ উপন্যাসের সংখ্যা খুবই কম। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সমরেশ বসুর পর সমসাময়িক কালে হরিশংকর জলদাস জেলে জীবন নিয়ে লিখেছেন। কাজী সাইফুল ইসলাম জেলে জীবনকে কেন্দ্র করেই জল আর স্থলের মধ্যে যে সম্মিলন ঘটিয়েছেন এর জন্য আলাদা করে সাধুবাদ তিনি পেতেই পারেন। তার সম্পূর্ণ গল্পের মধ্যে ছিলো একটা প্রজন্ম থেকে আর একটা প্রজম্নের চিন্তার পরিবর্তন, তথাকথিত সামাজিক নিয়মের অবজ্ঞা এবং নায়ক নাইকা উভয়ের ব্যক্তিগত ইচ্ছেকে মর্যাদা দেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। এই ঘটনাগুলোই উপন্যাসটিকে প্রাঞ্জল করে তুলেছে। কাজী সাইফুল ইসলাম এই উপন্যাসে জালালউদ্দীন রুমির সেই বিখ্যাত উক্তিটি'ই মনে করিয়ে দিয়েছেন- 'In every religion there is love, yet love has no religion.'
Was this review helpful to you?
or
উপন্যাস টা আমার কাছে অসম্ভব রকমের ভালো লাগছে,,,,,অনেক অনেক ধন্যবাদ কাজী সাইফুল ইসলাম স্যারকে,,,,,
Was this review helpful to you?
or
যাযাবর! বা রিভার জিপসি আরকি। গল্পটা তাদেরই। একদম প্রান্তীয় মানুষগুলোর জীবনযাত্রার এক অনন্য স্বাদ লেখক এনে দিতে চেয়েছেন যান্ত্রিক শহুরে পাঠকের কাছে । কতটুকু সফল তাই পর্যালোচনা করা যাক। মানতা সম্প্রদায়। ধর্মে মুসলিম। অল্প বিস্তর ধর্মচারণও দেখা যায় তাদের মাঝে। জীবন তাদের নৌকা আর পানি। এই সম্প্রদায়ের সর্দার কুদ্দুস মিয়া। তার স্ত্রী আমেনা। তাদের একমাত্র মেয়ে বন্যা। তাদের কাছে পুরো পৃথিবী দুটি অংশ যেন। একটা জলের অংশে যেখানে তাদের বাস আরেকটা ডাঙার অংশ। কখনো কখনো জলের মানুষরা ডাঙায় উঠে যায়। আবার ফিরেও আসে অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হয়ে। যেন একটা কাচের দেয়ালের দুপাশে দুই অংশ। দেয়ালটা কেবল ভোগই অতিক্রম করতে পারে। একবার দুবার। দেয়ালটা ক্রমেই পুরো হয়। মালেক মাস্টার। স্বপ্নালু চোখে মানুষটা জাগরণের স্বপ্ন দেখে। দেখে তারাও শিক্ষিত হবে। জানবে বিশ্বকে। স্কুলের শখ তার বহুদিনের। তা হয়ত হয়নি। তাই বলে থেমে থাকেননি তিনি। কখনো বড় গাছের নিচে বসে গেছেন শিক্ষা দিতে। এই গল্পটা এই অমায়িক মানুষটার। বন্যা! মেয়েটা একদিন বড় ভুল করে ফেলে। ভালোবাসা যেন পাপ, প্রেম সেখানে মস্ত ভুলই। ডাঙার ছেলে মেরাজের প্রেমে পড়ে যায় সে। তথোকথিত ডাঙার মানুষ। যার প্রতি এক আক্রোশ তাদের। কিন্তু মেরাজ সে তো তেমন না। এই যুবকের মাঝে কিছু একটা যেন ভিন্ন। তারপর ঠিক কি যেন হয়ে গেল! জানাজানি হয়ে গেল সব। তারপর ঘটল এক অঘটন। কি হবে তাহলে? মুর্তিমান নিষ্ঠুর সময়। আর সময়ের বিপরীতে এতগুলো মানুষ। সময়ের শেষ পরিণতিটা কিই ছিল? #প্রতিক্রিয়া বর্তমান সমসাময়িক লেখকদের বইতে সর্বাগ্রে লেখার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ভাষার বুনন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সাইফুল সাহেব নির্দ্বিধায় এসব পার করে পাঠক মনে আনন্দ রসের সঞ্চার করতে সক্ষম। বইটা আমার বিশেষ ভালো লেগেছে। বিশেষ করে নামটা। নামটা জুরে দিয়েছে এক অসীম উপাখ্যান। গল্পের প্লটটা বেশ ইউনিক ছিল। এরকম লেখা খুব কম চোখে পড়ে। গল্পের প্রবাহ বেশ ভালো। একটু একটু করে ইমোশন জুরে দিয়েছেন। সেটা যেকোনো পাঠকের ভালো লাগতে বাধ্য। এবার আসা যাক, বইটার ভালো না লাগা কিছু জিনিস। বইটাতে কিছু জায়গা আরেকটু ভালো করা যেত। লেখক বাস্তবতা দেখাতে চেয়েছেন। সেই বাস্তবতার তাগিদেই হয়ত কিছুটা ওই ধরনের লাইন উল্লেখ করেছেন। পাঠক হিসেবে আমার মনে হয়েছে ওই বিশেষ লাইনগুলো আরেকটু রয়ে সয়ে লেখার প্রয়োজন ছিল। সে যাই হোক, বেশ কিছু ঘটনাকে জুরে দিয়ে তিনি গল্পটা দাঁড় করিয়েছেন। সেই প্রাঞ্জলতা প্রতি লাইনে লাইনে চোখে পড়বে। আর গল্পের ভেতর তিনি এক মেসেজ দিতে চেয়েছেন। "মানবতাই পরম ধর্ম!"