User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ পার্শ্বচরিত্র লেখকঃ জীগল মণ্ডল প্রকাশকঃ চয়ন প্রকাশন প্রচ্ছদঃ রাহাত রোনেল (হাসান কবির জোসেফের চিত্রকর্ম অবলম্বনে) প্রথম প্রকাশঃ অমর একুশে বইমেলা, ২০১৮ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৬৪ মুদ্রিত মূল্যঃ ১৩৫ টাকা (২৫% ছাড়ে ৬৪৮ নং স্টলে ১০০ টাকাতে পাওয়া যাবে বইমেলাতে।) মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক যখন অবিকল অবস্থায় ভাষার গাঁথুনীতে কাগজের পাতায় উঠে আসে, তখন তার নাম হয়ে যায় গল্প। এতে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সীমা বা কালের গণ্ডি থাকে না। দেশ-কাল-পাত্রের গণ্ডি পেরিয়ে গল্প হয়ে ওঠে সার্বজনীন। বিভিন্ন রকম গল্পের মধ্যে ছোট গল্পের মূল বৈশিষ্ট্য হলো--- এর সমাপ্তিতে অপূর্ণতা রয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে “বর্ষা যাপন” শীর্ষক কবিতায় কবিগুরু রবি ঠাকুরের মুখনিঃসৃত কাব্যিক বাণী প্রাতঃস্মরণীয়ঃ “ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা ছোট ছোট দুঃখ কথা নিতান্তই সহজ সরল, সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি তারই দুচারটি অশ্রুজল| নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা নাহি তত্ব নাহি উপদেশ, অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়েও হইলো না শেষ|” এ থেকেই বোঝা যায় যে, ছোট গল্প হচ্ছে মানুষের জীবনের দর্পণস্বরূপ। জীবনের নানা দিক যখন সাহিত্যিকের লিখনীতে স্বল্পাকারে তাৎপর্য কোনো রকম হ্রাস না করেই উঠে আসে, তখন তা গল্প হিসেবে সমাদৃতি লাভ করে পাঠক সমাজে। জীবনের নানা দিকের এমন গল্পসংকলন নিয়ে পাঠক সমাজে হাজির হয়েছেন তরুণ কথাসাহিত্যিক জীগল মণ্ডল। চরিত্র-নির্ভর ১৫টি গল্পের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে পুরো গল্প সংকলনটি। গল্পগুলো জীবনের বিভিন্ন ধাপের ধারাক্রম অনুযায়ী সাজানো বলে মনে হয়েছে আমার। মোট ৫টি বিভিন্ন ধাপের গল্প উঠে এসেছে তার লিখনীতে। এসব ধাপের প্রত্যেকটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে মহীয়ান, নিজ আলোয় আলোকিত। শৈশবকাল থেকে জীবন সায়াহ্ন----কোনো ধাপ-ই বাদ পড়েনি তার লিখনী থেকে। এ যেন এক পূর্ণাঙ্গ জীবনচক্র (Life-Cycle)! এছাড়া যাপিত কালের হালচাল থেকে শুরু করে সমসাময়িক কালের হালচাল----এসব কিছুও ঠাঁই পেয়েছে এ সংকলনে। গ্রামের নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়ানো, সাইকেল চালিয়ে ভ্রমণ থেকে শুরু করে হাল ফ্যাশনের ফেসবুকের ফুড ব্লগার গ্রুপের গল্প প্রমাণ করে দেয় যে, এ সংকলনে শুধু গ্রাম বা শহর, অতীত বা বর্তমানের কথা এককভাবে বলা হয়নি। বরং সেগুলোর মধ্যে এক আশ্চর্যরকম মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন এ তরুণ গল্পকার। মুক্ত ক্যানভাসে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলা জীবনের চিত্র এঁকেছেন সুনিপুণ হাতে। দেখিয়েছেন, কী করে সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় জীবন; বদলে যায় মানুষের অর্থনৈতিক বাস্তবতা---সাথে বদলায় মানুষের চাল-চরিত্র। এ কাজে তিনি বেশ মুন্সিয়ানার পরিচয়-ও দিয়েছেন বটে! অর্থের টানাপোড়েনে প্রথম গল্পের পাঞ্জাবী কিনতে না পারা কিশোরটি এক সময়ে বড় হয়ে ওঠে। কালের পরিক্রমায় প্রকৃতির নিয়মে তার জীবনেও পরিণয় জন্ম নেয়। আসে প্রেম, আসে দ্রোহ। তার জীবনেও থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ও চাকরির গল্প। সবশেষে থাকে বৃদ্ধ চিত্রশিল্পী হয়ে ওঠার গল্প। নিজের শৈশবে যে পাঞ্জাবীর জন্য মরতে চেয়েছিলেন বৃদ্ধ লোকটি, নবীন প্রজন্মের এক প্রতিনিধিকে তিনি সে পাঞ্জাবী-ই উপহার দিলেন। এ থেকে এ সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, গল্পের ছলে গল্পকার আসলে একজন মানুষের জীবনের নানা ধাপ তুলে ধরেছেন।গল্পগুলোর চরিত্রগুলো আলাদা একে অপরের থেকে।কিন্তু আদতে গল্পকার একজন মানুষের জীবনের গল্প তুলে এনেছেন। নানা নামে, নানা প্রসঙ্গে, নানা ভঙ্গিমায়। এককথায়, উপন্যাস যেভাবে জীবনের নানা গল্প ধারাক্রমানুযায়ী তুলে ধরে, এখানেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি কোনো রকম। সে বিবেচনায় এটিকে ঠিক গল্প সংকলন না বলে স্বল্পাকৃতির উপন্যাস বলে দাবি করলে তাতেও বোধহয় খুব একটা অত্যুক্তি হবে না বলে আমার ধারণা। বইয়ের ভেতরের কথা তো অনেক বলা হলো। এবার আসা যাক, ভাষার গাঁথুনীর আলোচনাতে। পুরো বইয়ের ভাষার ক্ষেত্রেই বেশ সাবলীলতার পরিচয় পেয়েছি আমি। বেশ সহজ ভঙ্গিমায় গল্পগুলো বলে গেছেন লেখক মশাই। এতে কখনো কখনো আমার মনে হয়েছে, আমি যেন কোনো গল্প-কথকের সামনে বসে তার মুখে বলা গল্প মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় শুনছি! এতে কোনো বিরক্তি বা ক্লান্তি নেই। বরং আছে মুগ্ধ হবার মত একরাশ ভালো লাগা। গল্পগুলোতে সুকৌশলে এমনভাবে ক্লাইমেক্স সৃষ্টি করা হয়েছে যে গল্গগুলো এক নিঃশ্বাসে শেষ না করে বই ছেড়ে ওঠা যায় না। এ ক্ষেত্রে এ কথা অনস্বীকার্য যে, বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার লাভের মধ্য দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণকারী এ লেখক কোনো রকম গৎবাধা ঘরানার গল্প লিখতে বসেননি। বরং তাতে যোগ করেছেন এক নতুন মাত্রা। আশা করি, এ ব্যাপারটি বেশ ভালোই লাগবে সকলের। তবে কিছু ব্যাপারে এক প্রকার মনোক্ষুণ্ন হতে হয়েছে সচেতন পাঠক হিসেবে। বিশেষত বিভিন্ন স্থানে বানানে বেশ কিছু ত্রুটি দৃষ্টি এড়ায়নি। হতে পারে এটি প্রিন্ট সংক্রান্ত ত্রুটি। তবুও এ দিকটি দৃষ্টিকটু লেগেছে আমার কাছে। আশা করি, এ ব্যাপারে প্রিন্টের কাজের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুদৃষ্টি জ্ঞাপন করবেন। সবশেষে, নবীন এ লেখকের জন্যে রইলো অশেষ শুভকামনা। ছবির মত সুন্দর হোক অনাগত দিনগুলি!