User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
রম্য রচনা, রম্য গল্প পাঠের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু রম্য উপন্যাস? বলতে দ্বিধা নেই রম্য উপন্যাস পাঠের অভিজ্ঞতা ছিল না। বলছি অমর একুশে বই মেলায় প্রকাশিত মহিউদ্দীন আহ্মেদের লেখা ‘বিল্লাল হুসেন ওরফে বিল্যাই মিঞা’র কথা। কে এই বিল্যাই মিঞা? বিল্যাই মিঞা আহামরি কেউ না কিন্তু যে মানুষ নিজেকে দাবি করছে একজন ভালো মানুষ হিসেবে। এটা কি নেহায়েৎ ছেলে মানুষি? নাকি তার ভেতরেই লুকিয়ে আছে তৃতীয় বিশ্বের মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন সংগ্রাম, বাঁচার আকুতি, আনন্দ-বেদনা? মাত্র একদিন আগে পরিচিত হওয়া বিল্যাই মিঞাকে উপন্যাসের লেখক যতোই এভোয়েড করার চেষ্টা করছেন ততোই সে ঢুকে পড়ছে চিন্তার জগতে। ঠিক এমন দশাই হয় পাঠকেরও। এখানেই ঔপন্যাসিকের কারিশমা। যার কথা স্মরণে এলে ঘুম পর্যন্ত হারাম হয়ে যাচ্ছে! উপন্যাসের প্রথম বাক্যে ঘুমাসনের কথা বলা আছে। যোগ ব্যায়াম, ধ্যানে নানা ধরনের আসনের কথা জানা হলেও ঘুমাসনের পদ্ধতি জানতাম কী! ‘ঘরের আলো নিভিয়ে মশারির নিচে প্রবেশ করুন। নামাজ পড়ার ভঙ্গিতে বসুন। সামনে পিছে ডানে-বামে চারটি বালিশ রাখুন। কারণ ঘুম যেকোন দিক থেকেই আসতে পারে। আগে যেদিক থেকে আসবে সেদিকে শুয়ে পড়ার জন্যই চারটি বালিশ রাখতে হয়। যাইহোক, চোখ বন্ধ করে সেজদা দেওয়ার ভঙ্গিতে নিচু হয়ে থাকুন আর মনে মনে বলুন: 'আজ জোসনা রাতে সবাই গেছে বনে। আমি যাব না (দুই বার) (কারণ) আমি ঘুমাব আমি ঘুমাব।। (বহুবার)' -হাস্যরসের মিশেলে জীবনের গভীর অন্তর্গত সংকটের কথা বলার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করি উপন্যাসটিতে। বিল্লাল হোসেন ওরফে বিল্যাই মিঞাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে উপন্যাসের কাহিনী। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র লেখক, অনিতা, দারোয়ান আজগর আলী, পর্বত আলী প্রমুখ। বিল্যাই মিঞার ছেলে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক! ব্যাপারটা একেবারে মন্দ নয়। একটি অখ্যাত ছেলের সাথে মিশে থাকবে খ্যাতিমান কোন মানুষের নাম। ছেলেটি বড় হয়ে যখন জানবে তার নামের ইতিহাস, তখন তার মধ্যে এক ধরনের দায়বদ্ধতা কাজ করতে পারে! বিল্যাই মিঞা যখন বলে ছেলেকে বাংলাদেশের পলেটিকসে ঢুকাত, তাকে দিয়ে এদেশের পলেটিকসের চেহারা পাল্টিয়ে দিত তখনি বোঝা যায় উপন্যাসের চরিত্রেরা যথেষ্ট রাজনীতি সচেতন। আবার এসব বাক্যে রাজনীতি সচেতনতার স্পষ্টতা মিলে, ‘ডলারের দাম বাড়লে পিঁয়াজের ঝাঁঝ বাড়ে।’ (পৃষ্ঠা-৫৭) ‘তোমার সামনে তিনটি জিনিস আছে। একটি গেন্দা ফুল। একটি ফাইনাল টেন্ডার এবং একটি একশত টাকার নোট। তুমি কোনটি নেবে?’ (পৃষ্ঠা-৬৮) চরিত্রগুলো যখন বলে ওঠে -‘ দিনের পর দিন হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, পিকেটিং...এই পরিস্থিতিতে কি ব্যবসা করা যায় বলেন?’ তখন তাদের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক সচেতনতা সম্পর্কে আমাদের আর কোন সন্দেহ থাকে না। ‘পত্রিকায় নাকি আজব জিনিসের অনেক চাহিদা থাকে। যদি বাংলার বাঘ আর বাংলার বিল্যাই মরে যায়, তাহলে কি সাংবাদিকদেরকে দাওয়াত দিয়ে আনতে হবে?’--উপন্যাসের ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে আছে সূক্ষ শ্লেষ, তীর্যক প্রশ্ন। যখন বলা হয়, প্রত্যকটা চিল পাখির একটা করে রাডার থাকে; রাডারে ফুটে ওঠে শিকারের ছবি। ছবি ফুটে ওঠামাত্র সে ওড়াওড়ি থামিয়ে শিকারের উদ্দেশ্যে নিরিখ বান্ধে। তখন ভাবতে বাধ্য করে সেই চিল আর কোন সাধারণ চিল নয়। ‘চিলের হাত থেকে লাদেন বাঁচতে পারে নাই, সাদ্দাম বাঁচতে পারে নাই,গাদ্দাফি বাঁচতে পারে নাই, আমি বাঁচিয়া গেছি।’ (পৃষ্ঠা-৬৫) ইরাক, মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা, সাদ্দাম, ক্লিনটন, ট্রাম্প--তখন মনে পড়ে আমাদের যাপিত দুঃসময়ের কথা! ঔপন্যাসিকের ঝর ঝরে লেখা পাঠককে টেনে নিয়ে যায় একের পর এক সামনের পৃষ্ঠার দিকে সম্মোহিতের মতো। ৬১ পৃষ্ঠায় পৌঁছার আগ পর্যন্ত জানা যায় না মূল চরিত্র বিল্যাই মিঞার পরিচয়। যেমন ৭৩ থেকে শুরু করে ৮০ পৃষ্ঠায় পৌঁছার আগ পর্যন্ত বোঝা যায় না ঘটনাগুলো ছিল ঘুমের ভিতর নিছক এক স্বপ্ন! এখানেই ঔপন্যাসিকের সার্থকতা। মহিউদ্দীন আহ্মেদের প্রত্যেকটি চরিত্রই নিজের খুব ভিতরে ঢুকে যায়, পাঠক বাধ্য হয় তার পিছু নিতে। নানা চিত্রকল্প রয়েছে মুগ্ধ করার মতো--যেমন, মাঝ নদীতে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌকার মতো ভাসছি বা ঠিক বারটার সময় মা আমাকে গোসল করাতো, গোসলের পর আমাকে সাজাতো, সাজাতো মানে কপালে একটা কালো টিপ দিত। কলাপাতায় সরিষা তেল মাখিয়ে কুপি বাতির শিষের উপর ধরলে যে কালি পড়ে সেই কালির টিপ (পৃষ্ঠা-৬৩)। মুগ্ধ করে পাঠককে। আমাদের পরিচিত নানা শব্দের ব্যবহার পাঠককে খুব কাছাকাছি টেনে রাখতে সাহায্য করে। যেমন ত্যান্দর, অগা, নিকনিকানি স্বভাব, ন্যালন্যালা জিব্বা, কুকুরের ছোঁছামি, ফাও প্যাঁচাল, আজিব, ছাও, ধানমন্ডি লেক, বনানী, মিরপুর, গাবতলীর গরুর হাট, মালিবাগের জ্যাম, মহাখালীর কলেরা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল, চোষ্য পোলো, রক গান, কউন বনেগা ক্রোড়পতি, বরিশাল নোয়াখালির লোক, স্কয়ার কোম্পানির এডোভাস, প্রভৃতি পরিচিত অনুষঙ্গ। তবে রম্য উপন্যাসের চরিত্র হিসেবে কিছু নাম অদ্ভূত- আমড়াঅলা, ব্যাটারি চাচা, পর্বত আলী। ‘কেউ একজন কিছু বলতে চায়। কিন্তু আমি তার কণ্ঠরোধ করে দিয়েছি। কাজটা কি ঠিক হয়েছে?’--নানা দর্শনের মুখোমুখিও হতে হয় কখনো- ‘আমি কি তার বাক-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছি?’ মানুষের চেয়ে অনেক প্রাণিই বেশি সৌন্দর্য-সচেতন; যেমন বাবুই পাখি; সে যতো সুন্দর বাসা বানাতে পারে মানুষ তা পারে না বা রাখালের চেয়ে ভেড়াদের খাওয়ার সৌন্দর্যবোধ বেশি!’ গুরু ভক্ত আজগর আলী যখন মিথ্যা কথা বলতে একদম নারাজ, যে কি-না বিশ্বাস করে তার দায়িত্ব কাউকে গুনাগার হতে না দেয়া পরক্ষণেই যখন সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন তখন কেবল হাস্যরস না, ভাবনার খোরাকও জোগায়।-‘গুরু আমার সামনে নাই। তার অগোচরে আমি কী করতেছি তিনি তা জানতে পারবেন না।’ বেগম রোকেয়া ও সুফিয়া কামাল যার প্রিয় সে অনিতা কিনা মধ্য যুগের নারীর মতো বিশ্বাস করে স্বামী খেলেই স্ত্রীর খাওয়া হয়ে যায়। সমাজের কনট্রাডিকশনের উপস্থিতি। ‘মানুষকে কত সহজেই না বদলে দেওয়া যায় বিশেষত সে যদি হয় অধীনস্ত কেউ!’ ‘১ নং প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হল। বাকি রইল আরও দুটি প্রশ্ন। এখন চা পান বিরতি।’ এমন সব বাক্য যিনি উপহার দিয়েছেন, তার কাছে প্রত্যাশা করিনি ২৪ পৃষ্ঠার এই বাক্যটি- ‘অন্যায় করে ফেলেছি, কষে ঝাড়ি মারেন। আধা ঘণ্টা ধরে ঝাড়ি না মারলে আমার উচিত শিক্ষা হবেনা!’ পাঠক প্রিয় হোক বিল্লাল হুসেন ওরফে বিল্যাই মিঞা। সবশেষে উপন্যাসের এই বাক্যটি বলতে চাই -‘যৌক্তিক কথা বললে, আমি সঙ্গে সঙ্গে তার ভক্ত হয়ে যাই।’
Was this review helpful to you?
or
serious জটিল মাথাঝিমানো বিষয়-আসয় এর মধ্যে ডুবে আছে বর্তমান সময়। এর মধ্যে বই পড়ার সময় কোথায়? তার মধ্যে আপনে যদি পড়েন serious বিষয় নিয়ে লেখা বই তাহলে তো আপনে আরো serious হয়ে পড়বেন! এমন বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাইতে পড়তে পারেন- বিল্লাল হুসেন ওরফে বিল্যাই মিঞা বইটি। লিখেছেন মহিউদ্দীন আহ্মেদ। বইটা পড়লে জানতে পারবেন না বিল্যাই কেম্নে মিউ মিউ করে but. আজিব কিছু রহস্যময় ঘটনার সম্মুখীন হবেন। আর ভাববেন, কিন্তু কি ভাববেন? সেটা বইটা পড়লেই জানতে পারবেন। তাই এই বই কিনুন, পড়ুন আর মাথা ঝিমানি মুক্ত চিন্তায় ডুবে যান।
Was this review helpful to you?
or
এবারের বইমেলা থেকে সংগৃহীত এবং আমার পঠিত সেরা গ্রন্থ এটি। কখনো হাসতে হাসতে পেটে খিল লাগার দশা হয়েছে, আবার কখনো চোখে পানি চলে এসেছে। উপন্যাসটির বিভিন্ন চরিত্রের মুখ দিয়ে বর্তমান সময়ের বিভিন্ন অসংগতি গুলোর প্রকাশ স্টাইল অসাধারণ হয়েছে। প্রথম পাতা থেকে শেষ পাতা পর্যন্ত পাঠককে ধরে রাখার এক জাদুকরী দক্ষতা দেখিয়েছেন লেখক। ক্লাসে লেকচারের ফাকে প্রায়ই বইটির বিভিন্ন চরিত্র ও ডায়ালগ কোট করি। ছাত্ররা আনন্দ পায়। রকমারি তে বইটি দেখে ভাল লাগছে।।