User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটি বই। এই উপন্যাসে উঠে এসেছে বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস। সেই স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু পরিবারের ত্যাগ। ধন্যবাদ লেখককে। এমন ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখার জন্য।
Was this review helpful to you?
or
পঁচিশ বছর আগে শ্রাবণের টিপ টিপ বৃষ্টি ঝরা এক সকালে পাগল হয়ে যায় সেকান্দার। সেদিন থেকে গােসল করে না সে। বলে। কোথাও পানি নাই। সব দেখি রক্ত। রক্ত দিয়ে গােসল করতে পারব না আমি। সেকান্দারের সাথে থাকে একটা পুঁটলি। সেই পটুলির মধ্যে। থাকে একটা ছবি। ছবিটা লুকিয়ে লুকিয়ে। দেখে। ছবিটা দেখলে তার কান্না আসে। হাউমাউ করে কাঁদে। তবুও দেখে। কাউকে দেখতে দেয় না ছবিটা। ভয় হয়, যদি কেউ নিয়ে যায়। রুহুল আমিন ভুসির স্বপ্ন একবার ঢাকায়। আসবেন। যাবেন ৩২ নম্বন সড়কে। তার মুজিব। ভাইয়ের বাড়িটা দেখবেন। কাজল ঢাকায় নিয়ে। আসে তাকে। ৩২ নম্বর সড়কে এসে তিনি দেখা পান সেকান্দারের। এই সময় একদল পুলিশ। এসে সেকান্দারকে ৬৭৭ নম্বর বাড়ির সামনে থেকে তুলে দিতে চায়। বলে এখানে পাগল। বসতে পারবে না। সেকান্দার বলে এই বাড়িতে। আমার ভাগ আছে। আমি এখানে বসব। বাড়ি ভাগ করব। আমিন আনতে যায় সেকান্দার। রুহুল আমিন তাকিয়ে থাকেন সেকান্দারের। দিকে। তিনি খোঁজেন এই রকম পাগল।। কোথাও পাগল খুঁজে পান না। এই সময় তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায় মুহিতুল। বলে আপনি এখানে! আমি এসেছি এই বাড়িটা দেখতে। বাড়ি দেখতে এসেছেন! তা এই বাড়ির ইতিহাস জানেন আপনি? অবাক হন রুহুল আমিন। এই বাড়ির আবার ইতিহাস কিসের। এটা তার মুজিব ভাইয়ের বাড়ি। এই বাড়ির ইতিহাস আছে। এটা ইতিহাসের একটা সমুদ্র। রুহুল আমিন শুনতে চান সেই ইতিহাস। এভাবেই ইতিহাসের হাত ধরে কল্পনার পথে হেঁটে গেছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর উপন্যাসটি।
Was this review helpful to you?
or
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর।শুধুই কি একটি বাড়ি? নাকি এর সাথে মিশে আসে বাঙালির রক্তের একটি দাবি।একটি স্বপ্ন।একটি সংগ্রাম স্বাধীনতা অর্জনের? ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের কথা উঠলেই এই প্রজন্মের চোখে কতগুলো সাদা-কালো ফ্রেমে বাধা ইতিহাস আর কালের সাক্ষী হয়ে থাকা নিদারুন কষ্টের কিছু চিত্র ভেসে ওঠে।কিন্তু এই স্মৃতিবিজড়িত সড়কের ৬৭৭ নম্বর একটি নির্দিষ্ট বাড়ির ঠিকানা।যে বাড়িটি আর পাঁচটা বাড়ির মতো নয়।কিন্তু এই বাড়িটিই যাকে কেন্দ্র করেই বাঙালি জাতির পুনরুত্থানের ইতিহাসের মূলশক্তি বা চালিকাশক্তি প্রাণ পেয়েছিলো।যে বাড়িটিই বাংলার মানুষকে রংয়ের স্বপ্ন দেখার মনোবল জুগিয়েছিল একটি স্বাধীনতার ডাকে।এতক্ষন যে বাড়িটি নিয়ে এতো আবেগ, যে বাড়িটিকে ঘিরে এতো আয়োজন তা ছিল সারানোর মাঝেও অসাধারণ,এতো শ্রদ্ধা বিজড়িত সম্মান মাখা কথা হচ্ছিলো যাকে নিয়ে সেটিই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি। আর এই বাড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ইতিহাস কেন্দ্রিক মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনৈতিক গল্পের এক বিস্তৃত উপন্যাস ''ধানমন্ডি ৩২ নম্বর''।নিঃসন্দেহে লেখক শামস সাইদ এই নতুন প্রজন্মকে উপহার দিতে চলেছেন যা আমাদের কাছে থেকে গিয়েছিলো সম্পূর্ণই অজানা।খুব পরিচিত আবেগে মোড়ানো এক মুক্তিযুদ্ধের আখ্যান।সময়ের পরিক্রমায় যা অতীত তাই ইতিহাস।তবে ইতিহাসের আড়ালে কিছু গল্প থেকে যায়, যা ঠাঁই পেয়েছে কোনো না কোনো অন্তর আত্মায়। বাঙালির সেই গল্প শোনার তীব্র আকুতির কাছে এই বই যেন হবে দীর্ঘ প্রহর পরে বাঙালি জাতির ভালোবাসার মর্যাদায় সিক্ত কোনো রচনা।দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্র এবং বাংলাদেশ ও বাঙালি কর্তৃক নির্মম হত্যাকাণ্ডের কলঙ্কচিহ্ন সাথে বত্রিশ নম্বর সড়কের বাড়িটির প্রতিটি ইটে গাঁথা রয়েছে বাঙালি জাতির গৌরব গাঁথা, শৌর্যের কথা। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ও অর্জনের ইতিহাস; বিশ্বমানচিত্রে একটি নতুন দেশের রক্তসিন্ধু অভ্যুদয়ের কথা যেন বলতে চায়।এই বত্রিশ নম্বরই স্বাধীনতার পবিত্র সনদ আর অঙ্গীকারনামা। এমন একটি শক্ত গাঁথুনির মজবুত উপন্যাসের জন্য লেখককে অনেক ধন্যবাদ।কারণ ইতিহাসের সত্যতা থেকে প্রজন্মকে উপহার দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু কিংবা তার সময়কার খুঁটিনাটি জানবার কোনো নির্ভরযোগ্য দলিল খুঁজে বের কথা বেশ কঠিন।কিন্তু সেই কঠিন কাজের সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য সাধুবাদ জানাচ্ছি।
Was this review helpful to you?
or
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ১৮ মার্চ ২০১৮, ১১:৪২ | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৮, ১৩:৩৩ মিল্টন বিশ্বাস ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বুলেটবিক্ষত বাসগৃহ আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্মারকচিহ্ন। ৬৭৭ নম্বর বাড়ি নিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কবিতা রচিত হলেও এই প্রথম আমরা শামস সাইদের ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’ শিরোনামে ৬৪০ পৃষ্ঠার একটি উপন্যাস পাঠ করলাম। ৩২ নম্বর সড়ক ছিল সংগ্রামের সদর দপ্তর। যা একটি জাতির ঠিকানায় পরিণত হয়েছিল। বাকিংহাম প্যালেস, হোয়াইট হাউজ, ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট, রাইসিনা হিল কিংবা ক্রেমলিনের মতো সরকারি বাসভবন ছিল না বাড়িটি। বাঙালি জাতির ভালোবাসার মর্যাদায় সিক্ত ছিল এটি। ৭১-এর স্বাধীনতার আগে পরে আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সভা হয়েছে এই বাড়িতে। বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাস খুঁজতে হলে যেতে হবে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর সড়কে। বাংলাদেশ ও বাঙালির গৌরবগাঁথা দেখতে হলে যেতে হবে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে। বাঙালি ও বাংলাদেশের স্থাপত্য ইতিহাস জানতে হলে পাতা উল্টে দেখতে হবে বত্রিশ নম্বর সড়কের। দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্র এবং বাংলাদেশ ও বাঙালি কর্তৃক নির্মম হত্যাকাণ্ডের কলঙ্কচিহ্ন দেখতেও যেতে হবে সেখানেই। বত্রিশ নম্বর সড়কের বাড়িটির প্রতিটি ইটে গাঁথা রয়েছে বাঙালি জাতির গৌরব গাঁথা, শৌর্যের কথা। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ও অর্জনের ইতিহাস; বিশ্বমানচিত্রে একটি নতুন দেশের রক্তসিন্ধু অভ্যুদয়ের কথা। বত্রিশ নম্বরই স্বাধীনতার পবিত্র সনদ আর অঙ্গীকারনামা। কেবল বাড়িটি নয় মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সাফল্য আর ব্যক্তিগত হৃদয়ের মাহাত্ম্য নিয়ে নিটোল আবেগ আর যুক্তিনির্ভরতার মিশেলে একেবারে তরতাজা আখ্যান সৃষ্টি করেছেন শামস সাইদ। তিনি তাঁর ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’ উপন্যাসে বাঙালির গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলেছেন। অধিকার সচেতন মানুষের ঘুম ভাঙানি গান শুনিয়েছেন। সাবলীল গদ্যে বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যের শাশ্বত পটভূমিতে মুজিবকে স্থাপন করেছেন। শামস সাইদ তাঁর আখ্যানে বঙ্গবন্ধুকে দুর্গম পথের অভিযাত্রী হিসেবে চিত্রিত করেছেন। শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘদেহী মানুষ ছিলেন তিনি। দিশাহারা মানুষের বাতিস্তম্ভও। পতাকায় তিনি আছেন, বাঙালির হৃৎপিণ্ডেও। বাঙালির প্রতিটি নিঃশ্বাসে ফোটে একটি অবিনশ্বর রক্তকমল। তিনি অবিনশ্বর, চিরঞ্জীব। তিনি আমাদের পুণ্যশ্লোক পিতৃপুরুষ। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ঘটনাধারায় এসে লেখক থেমেছেন এই উপন্যাসে। এজন্য রক্তাক্ত বত্রিশ নম্বরের কোনো ঘটনা নেই এখানে যদিও মোশতাক চরিত্রের উপস্থিতি আছে আখ্যানে। তবে ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের উদ্বোধন হয় সেই প্রসঙ্গ আছে প্রাথমিক প্রতিপাদ্যে। মুনতাসীর মামুন লিখেছেন, ‘... বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এক সময় আর দল বা পরিবারের ছিলেন না, হয়ে গিয়েছিলেন বাঙালির, বাংলাদেশের। একথা মনে রেখেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ট্রাস্টিরা এ বাড়িটিকে দান করেছেন বাঙালির জন্য। এজন্য আমরা তাঁদের কাছে বিশেষ করে ট্রাস্টের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের জাতীয় বীরদের স্মৃতি সংরক্ষণ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করা জরুরি। তাহলে তাঁদের অবমাননার বিরুদ্ধে লড়াইটা জোরদার হয়। মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের মিথ্যা প্রচার রোখা যায়। আসুন নিরস্ত্র মানুষের বিজয়ের প্রতীক এ জাদুঘরটি দল-মত-নির্বিশেষে গড়ে তুলি।’(মুনতাসীর মামুন, ১৯৯৯, বাংলাদেশে ফেরা, মজিবরের বাড়ি, ১৯৯৪, পৃ ১৫৯-৬০) ২. সূচনাংশে উল্লেখ করেছি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাংলা এবং বিভিন্ন ভাষায় একাধিক উপন্যাস রচিত হলেও বত্রিশ নম্বর সড়কের বাড়িটি নিয়ে বাস্তব ও কল্পনার রসায়নে সৃষ্টিকর্ম এটিই প্রথম। সাহিত্যিকের লেখায় শেখ মুজিবের কথা ১৯৫৩ সালে প্রথম বিবৃত হয়। তবে তাঁকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সৃজনশীল কাজের প্রসার ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর। তখন থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে কবি-শিল্পী-সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদরা সোচ্চার হন। সেসময় স্বৈরশাসকের দমন-নিপীড়নের কারণে রাজপথে মিছিল-মিটিং-এর পরিবর্তে প্রতিবাদের ভাষা মশাল হয়ে জ্বলেছে কবিতা-গল্প-উপন্যাস ও চিত্রকলায়। এসব সৃজনশীল কর্ম জনচিত্তে অভিঘাত সৃষ্টি করে। ১৫ আগস্ট পরিণত হয় প্রতিবাদী কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকদের প্রেরণা ও সৃষ্টিশীলতার অনুঘটকে। বেগবান হয়ে ওঠে পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলা সাহিত্য। ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাঙালি সাহিত্যিকদের কাছে সৃষ্টিশীলতার এক অফুরান উৎস। কেবল বাঙালি সাহিত্যিকই নন, অন্যভাষার লেখকরাও তাঁকে নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন, লিখেছেন সৃষ্টিশীল অনেক রচনা।’ অন্য ভাষার লেখক বলতে তিনি মার্কিন লেখক রবার্ট পেইন ও ব্রিটিশ লেখক মার্ক টালির গ্রন্থ এবং সালমান রুশদি ও এ্যানি লোপার উপন্যাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এছাড়াও ভারতের উর্দু কবি কাইফি আজমী, সিন্ধু কবি শেখ আরজ, বালুচ কবি আজমল ঘটক, পাঞ্জাবি কবি হাবীব জাহেল, জাপানি কবি মুটসুত্ত সসুয়া, ব্রিটিশ কবি লোরী এ্যান ওয়ালশ প্রমুখের উল্লেখযোগ্য কবিতা রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মলেন্দু গুণের প্রথম কবিতাটির নাম ছিল ‘প্রচ্ছদের জন্য’, তারপরে সেটা নাম পালটে রাখা হয়েছিল ‘স্বদেশের মুখ শেফালি পাতায়।’ তাঁর মতে, ‘আমার কাছে সমস্ত শক্তির উৎস শেখ মুজিব’। অবশ্য এদেশে তাঁকে কেন্দ্র করে যে ক’টি উপন্যাস রচিত হয়েছে তাতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু বাঙালির জাতীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বৃহত্তম ধারায় সম্পৃক্ত। তিনি আছেন আমাদের অনুভূতি-চেতনায় আর উপলব্ধিতে ভাস্বর। মুক্তিযুদ্ধের অনেক উপন্যাসেই প্রসঙ্গক্রমে বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপন করা হয়েছে চরিত্র হিসেবে নয় কিন্তু ইতিহাসের অনিবার্য উপকরণ রূপে। ইতিহাসের ঘটনার সত্যের ভিত্তিতে রচিত হয় উপন্যাস। আবার উপন্যাসে ইতিহাসের সত্যের বিকৃতিও ঘটে; কল্পিত ঐতিহাসিক সময়ের পটভূমিতে রোমান্স রচিত হয়। মহৎ লেখকরা তাঁদের রচনায় ইতিহাসকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করেন। মূলত ঐতিহাসিক সময়ের সাধারণ মানুষকে তাঁদের যুগোপযোগী চিন্তাচেতনায় অভিষিক্ত করে সৃষ্টি হয় ‘ঐতিহাসিক উপন্যাস’। ঐতিহাসিক সময়কালকে উপন্যাসের ঘটনার কাল হিসেবে বিবেচনা করে কাহিনী বুননে পরিশ্রম ও মেধার পরিচয় দেন কেউ কেউ। বঙ্গবন্ধুর মতো ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের ঘটনাক্রমকে অনুপুঙ্খ ধরেছেন আমাদের ঔপন্যাসিকরা। এসব ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক চরিত্রকে পূর্ণাঙ্গভাবে রূপায়ণের প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। সৈয়দ শামসুল হক, হুমায়ূন আহমেদ, সেলিনা হোসেন, আনিসুল হক, মহিবুল আলম প্রমুখ ইতিহাসের একটি সময়কালকে পটভূমি হিসেবে বেছে নিয়ে সেই সময়ের মানুষকে চিত্রিত করেছেন। অনেকে লেখকই ইতিহাসের পটভূমিতে নির্মিত গল্প-কাঠামোর মানুষের ভেতর দিয়ে বর্তমানের আকাঙ্ক্ষা ও মননকে চিত্রিত করেন। ঐতিহাসিক সময় ইতিহাসের পুঙ্খানুপুঙ্খতা ভেঙে বেড়িয়ে আসে। লিখিত ইতিহাসের অবিকৃত সময়কে নিয়েও উপন্যাস রচনার প্রচেষ্টা রয়েছে। আসলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিজনিত শূন্যতা কথাসাহিত্যিকদের অন্তর্মুখী করে তোলে। তাঁকে নিয়ে রচিত উপন্যাসে প্রথম দিকে মনোকথন ও অন্তর্সংলাপের প্রাধান্য দেখা যায়। বিশেষত সৈয়দ শামসুল হকের আখ্যানের ঘটনাংশ উল্লম্ফনধর্মী, ভঙ্গক্রমিক সময়-আশ্রিত। পক্ষান্তরে সেলিনা হোসেন, হুমায়ূন আহমেদ, আনিসুল হক বিষয়ের অনিবার্য টানে উপন্যাসের শিল্পরীতিতে ও কাহিনী বিন্যাসে অধিকতর মনোযোগী। ভাষা ব্যবহারে গদ্য-পদ্য মিলিয়ে কেউ, আবার কেউ-বা অন্তর্ময়, গীতময় ও চিত্রকল্প আশ্রয়ী করে গদ্যকে করে তুলেছেন অভিনব। মূলত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত উপন্যাসে ইতিহাসের কাহিনী ও চরিত্রকে অবলম্বন করা হয়েছে। এজন্য উপন্যাস নির্মাণের ক্ষেত্রে অতীতচারী কল্পনা অনিবার্য হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্তর্লোকে উঁকি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর যুগ বিশেষত দেশভাগের আগে থেকেই কিছু নির্বাচিত ঘটনার দিকে মনোযোগী হয়েছেন ঔপন্যাসিকদের কেউ কেউ। আবার বঙ্গবন্ধু ও তাঁকে কেন্দ্র করে অন্য ব্যক্তিত্বের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, আশা-নিরাশার প্রতিফলন ঘটেছে লেখকের নিজের অভিব্যক্তিতে। শামস সাইদের ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’-এর ক্ষেত্রে দেখা যায়, ইতিহাসের ঘটনা আশ্রয় করে উপন্যাস রচিত হওয়ায় একটি কালের সামগ্রিক পরিচয় এখানে রয়েছে। আবার সেখানে রাজনীতি সম্পৃক্ততায় জনগণ উপস্থাপিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিবিশেষ বলে নন মহাকালের অঙ্গস্বরূপ তাঁকে দেখতে হলে দূর থেকে দেখতে হবে। তিনি যে সুবৃহৎ পরিপ্রেক্ষিতের নায়কস্বরূপ ছিলেন সেটা সমেত তাঁকে এক করে দেখা দরকার। তাছাড়া ইতিহাসের সংস্রব উপন্যাসে একটা বিশেষ রস সঞ্চার করে, ইতিহাসের সেই রসটুকুর প্রতি ঔপন্যসিকের অনুরাগ থাকে, তার সত্যের প্রতি তাঁর কোনো খাতির নেই। কেউ যদি উপন্যাসের সেই বিশেষ গন্ধটুকু এবং স্বাদটুকুতে সন্তুষ্ট না হয়ে তা থেকে অখণ্ড ইতিহাস-উদ্ধারে প্রবৃত্ত হন তবে তিনি ব্যর্থ হতে পারেন। উপন্যাসের সেই বিশেষ গন্ধটুকুই নিঙড়ে নিয়েছেন শামস সাইদ। ৩. শেখ মুজিবুর রহমান নিজে লেখক ছিলেন না। তবে তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ প্রকাশিত হয়েছে। কারাগারে বসে লেখা ডায়েরির পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ অক্ষরগুলো এ দুটি গ্রন্থের অবয়ব সৃষ্টি করেছে। এই গ্রন্থ দুটি এবং তাঁর জীবনীর অনেক কিছুই এসেছে শামস সাইদের উপন্যাসে। স্বাধীন বাংলাদেশের বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত প্রথম বাংলা সাহিত্য সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শিল্প-সাহিত্যের বিষয়বস্তু সম্পর্কে চমৎকার কিছু কথা বলেছিলেন। তাঁর মতে, শিল্প-সাহিত্যে ফুটিয়ে তুলতে হবে এদেশের দুঃখী মানুষের আনন্দ-বেদনার কথা, সাহিত্য-শিল্পকে কাজে লাগাতে হবে তাদের কল্যাণে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্নীতি শাখা-প্রশাখায় বিস্তার করেছে, লেখনির মাধ্যমে তার মুখোশ খুলে দিতে হবে। তাঁর অভিমত ছিল জনগণই সব সাহিত্য ও শিল্পের উৎস। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনোদিন কোনো মহৎ সাহিত্য বা উন্নত শিল্পকর্ম সৃষ্টি হতে পারে না। তিনি নিজে সারাজীবন জনগণকে সঙ্গে নিয়েই সংগ্রাম করেছেন। এই জনগণ কেবল শহরে থাকে না, গ্রামে এক বিপুল জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের বিষয়েও তিনি মনোযোগ দিতে বলেন। বঙ্গবন্ধুর সেদিনকার ভাষণ সচেতন শিল্পী-সাহিত্যিককে উদ্বেলিত করেছিল। আর তিনি নিজে নিবিড় জনসংযোগের মধ্য দিয়ে ‘রাজনীতির কবি’ হয়েছিলেন বলেই তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে শামস সাইদও আলোড়িত হয়েছেন। ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’-এর আখ্যানে দেখা যায়, জীবদ্দশায় যেমন তেমনি পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনার পর বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষের কাছে লিজেন্ড। কারণ তিনি নিজেই সেই সাধারণ জনগণের প্রতিনিধি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শৈশব থেকেই নিজেকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন দেশের জন্য। দেশ ও মানুষের সেবক হতে চেয়েছেন নিঃস্বার্থভাবে। মানুষের দুঃখকষ্ট গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন। কাহিনীতে বর্ণিত তাঁর কথা ও কর্মের সূত্র থেকেই বলতে হয়, সাধারণ মানুষের পাশে থেকে দাবি আদায়ের লড়াই ছিল তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অংশ। এজন্য অতি অল্প সময়ে বাঙালির প্রিয় নেতায় পরিণত হন তিনি। বাংলার মানুষ তাঁর নেতৃত্বে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। সারা দেশের মানুষের সমর্থন ছিল বলেই পাকিস্তানি শাসকরা মুজিবকে ভয় পেতে শুরু করেছিল। রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা ও হয়রানি নিত্যসঙ্গী হয়েছিল তাঁর। ছয় দফা আন্দোলনের সময় ছাত্ররা যুক্ত হয়ে তাঁর নেতৃত্বকে আরো মজবুত করেছিল। স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকারকে উৎখাত করার জন্য আন্দোলন বেগবান করেন বঙ্গবন্ধু। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মুজিব জনগণের রায়ে বারবার নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব আর সাহসী পদক্ষেপ আমাদের মুক্তি এনে দিয়েছে। মানুষকে তিনি বড় বেশি বিশ্বাস করতেন, বড় বেশি সারল্যে মাখা ছিল তাঁর ব্যক্তিজীবন। একদিকে পাকিস্তানি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করা অন্যদিকে দেশের উন্নয়নে, মানুষের অগ্রগতির চিন্তায় উন্মুখ বঙ্গবন্ধুর ছিল প্রকৃতি, পশুপাখি ও শিশুদের প্রতি মমত্ববোধ। শামস সাইদের উপন্যাসে এসবই আমরা পাই ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটিকে কেন্দ্র করে। ৪. শিল্পরূপের দিক থেকে বিবেচনা করলে বলা যায়, ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’ ৩৯টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত একটি জটিল প্লটের উপন্যাস। সেখানে অনেকগুলো শাখা কাহিনী এসে যুক্ত হয়েছে। বর্ণনা এবং দৃষ্টিকোণের দিক থেকেও বৈচিত্র্য এসেছে। প্রথম দুটি অধ্যায় যথাক্রমে ‘একটি কবর ও পাগলা সেকান্দার’ এবং ‘রুহুল আমিন ভুসি’ আখ্যানের সূত্রপাত ঘটিয়েছে। এ অংশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তৃণমূল জনগোষ্ঠীর সম্পর্ক চিত্রিত হয়েছে। যেখানে নেতার সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিচয় গ্রামীণ মানুষের ভেতর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, গড়ে উঠেছে ভালোবাসার বন্ধন। একারণে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা সেই তৃণমূণ জনতাকে শোকে স্তব্ধ করে দেয়। জাগ্রত হয় প্রতিবাদ চেতনা। কিন্তু তৎকালীন মোশতাকি রাষ্ট্র সেই চেতনাকে দলন করে। তবে মানুষের ভালোবাসা বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে ওঠে। দূর-দূরান্ত থেকে তারা ছুটে আসে ঢাকা শহরে নেতার বাড়িটি দেখবে বলে। আর সেই বত্রিশ নম্বর সড়কের বাড়িটির ইতিহাস শুনে নিজের আত্মপরিচয় স্পষ্ট করে তারা। ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’ উপন্যাসের নাম-অধ্যায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর কাহিনীর কেন্দ্রে স্থাপিত। অবশ্য আমরা গোটা উপন্যাসে বঙ্গবন্ধুর বাড়িটিকে কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবেই উপস্থাপিত হতে দেখি। ‘রজনী বোস লেন’ থেকে শেখ মুজিবের জীবনের কাহিনীর সূচনা করেছেন লেখক। আর সেই বয়ানের যোগসূত্র তৈরি করে দিয়েছেন ‘রুহুল আমিন ভুসি’ অধ্যায়ের শেষে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর রিসিপসনিস্ট কাম রেসিডেন্ট পিএ মুহিতুল। তার জবানিতে পর্যায়ক্রমে ইতিহাসের সন-তারিখ উল্লেখ না করে লেখক এগিয়ে গেছেন শেখ মুজিবের রাজনৈতিক পরিচয়, পারিবারিক ও সাংসারিক জীবন ও দেশ-বিদেশের খবরাখবরের বিবরণ যুক্ত করে। পরিবারের কথা, জাতির কথা, দেশের কথা, একজন নেতার কথা, নতুন ইতিহাস সৃষ্টির কথা, জাতির স্বপ্ন আশা-আকাঙ্ক্ষার আর স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা একাকার হয়েছে কাহিনীতে। শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি ছিল সারা বাংলার রাজধানী। সাধারণ কুটিরের মতো সেই বাড়িটিকে ঘিরে সারা দেশ আবর্তিত হতো। কৃষক, শ্রমিক, মজুর সকলেই এই বাড়িকে নিজের বলে মনে করত। ‘এই বাড়ি’ আবহমান বাংলার ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত কণ্ঠস্বরে আবর্তিত আমাদের চেতনায় আজো। শামস সাইদ দেখিয়েছেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান; সময় ও রাজনীতির অনুধ্যান যেখানে চিরায়ত হয়ে আছে। যেখানে বাঙালির অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে আজোও। বত্রিশ নম্বর বাঙালির সংগ্রামী চেতনা ও স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতীক। এই বাড়িটি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আরো বেশি পুণ্যস্থানে পরিণত হবে। ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’ উপন্যাস পাঠ করে আমরা বুঝতে পারি, ইতিহাসের লক্ষ্য ঘটনার বস্তুনিষ্ঠতা বা তথ্যনিষ্ঠতা বজায় রাখা। ইতিহাস একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে ব্যক্ত করার জন্য সত্য তথ্য প্রকাশ করে। সাহিত্য ঠিক নির্দিষ্ট থেকে অনির্দিষ্ট, বিশেষ থেকে নির্বিশেষ সত্যের দিকে ধাবমান। সাহিত্যের সত্য লেখকের মনোলোকে নির্মিত হয়। এজন্যই ইতিহাসের নিছক তথ্যনির্ভর ঘটনা বিন্যাস ও চরিত্রের বিবরণ দিলেই উপন্যাস হবে না। বরং ইতিহাসের তথ্যসত্যকে স্বীকরণ করে সৃজনী কল্পনার প্রাণরসে আত্মপ্রকাশ ঘটাতে হবে। সত্যের জন্য ইতিহাস পাঠ অনিবার্য আর আনন্দের জন্য সাহিত্যপাঠ আবশ্যক। সাহিত্যের কল্পনার আতিশয্যে ইতিহাসের সত্য দিয়ে সংশোধন করে নেবার সুযোগ আছে। ঐতিহাসিক উপন্যাস প্রথমে উপন্যাস পরে ইতিহাস এটা মেনে নিয়েও আমরা বলতে বাধ্য যে, ভ্রান্ত বা বিকৃত ইতিহাসের তথ্য সত্য বলে পরিবেশন করা একান্ত বাঞ্চনীয় নয়। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে দেখা যায় শামস সাইদকে। এ উপন্যাসে দেখা যায় লেখক তাঁর নিজের কালের বাস্তবতার পরিবর্তে অতীতে বিচরণ করেছেন সর্বাংশে। দেশভাগের পর শেখ মুজিবের রাজনৈতিক কর্মকা- থেকে শুরু করে ১৯৬৬ সালের ছয় দফায় এসে থেমেছেন। সেখানে অতীতের ইতিহাসের সময়পর্বে দাঁড়িয়ে আরেকটি সমান্তরাল কাহিনী বর্ণনা করেছেন সেকান্দার ও রুহুল আমিন ভুসিকে নির্মাণ করে। আর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে বিস্ময় ও মর্মাহত হয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার রূপায়ণ করেছেন আখ্যানে। আলোচ্য উপন্যাসে ঘটনা-কাহিনী ঐতিহাসিক বলেই লেখক সমকালীন রীতিনীতি, আচার ব্যবহার সংস্কার, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি সকল বিষয়ে সচেতন ছিলেন। আবার ঐতিহাসিক বাস্তবতা প্রকাশে নির্লিপ্ত হতে হয়েছে তাঁকে। উপন্যাসে প্রধান চরিত্র বঙ্গবন্ধুসহ সকলে সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। বঙ্গবন্ধু বড় নেতা হিসেবে কীর্তিমান। আর খুনি পাকিস্তানিরা রাজনৈতিক অপকীর্তির দরুন নিন্দিত-ঘৃণিত। দুই ধরনের চরিত্র রূপায়ণে লেখককে ইতিহাসের প্রতি যথাসম্ভব বিশ্বস্ত থাকতে হয়েছে। লেখক বঙ্গবন্ধুর পাশে সোহরাওয়ার্দী, তাজউদ্দীন, ভাসানীসহ আরও অনেক চরিত্র ইতিহাসের উপকরণের জন্য সরাসরি গ্রহণ করেছেন। বাড়িটিকে কেন্দ্র করে বেগম মুজিবের সামাজিক ও রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব উন্মোচনে শামস সাইদ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। শেখ হাসিনাও গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র এ উপন্যাসে। উপন্যাসে ইতিহাস কাহিনীর পাশে কাল্পনিক অনেক ঘটনা সংযুক্ত হয়েছে। নেতা এবং সাধারণ মানুষ- উভয়ের ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঘটনা নির্মাণে লেখক কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন। সমান্তরাল কাহিনী কাল্পনিক হলেও ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিয়েছেন তিনি। কখনও স্মৃতি, ফ্ল্যাশব্যাক ও কাল্পনিক কাহিনীর বিস্তার ঘটিয়ে সময়কে বিস্তৃত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে অঢেল তথ্য গ্রহণ করে সর্বত্র সত্যের শৃঙ্খলে আবদ্ধ না থেকে ইচ্ছামত অভীষ্ট সিদ্ধ করেছেন কাল্পনিক উপস্থাপন সূত্রে। এভাবে ইতিহাসের কাহিনীর পাশে স্থান পেয়েছে অনৈতিহাসিক ঘটনাসমূহ। ইতিহাসাশ্রিত বত্রিশ নম্বর সড়কের বাড়ি, বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিব প্রভৃতি চরিত্রগুলোকে প্রাণবন্ত ও জীবন্ত করার জন্য উপন্যাসে একটি জীবনভাবনা বা বার্তা প্রদান করেছেন। জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তাঁর জনপ্রিয়তা কমেনি বরং দ্বিগুণ হয়েছে তাঁর প্রভাব; আর তাঁর জীবন ও রাজনীতি সত্যিই অসামান্য। বাড়িটিকে কেন্দ্র করে ইতিহাসের বিশাল পটভূমিতে আবর্তিত বঙ্গবন্ধুর জীবনের উত্থান ব্যক্ত করার জন্য সামাজিক-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, আবেগ-আলোড়ন তুলে ধরা হয়েছে। কাহিনী ও চরিত্রকে মানবিক করে তোলার জন্য যা অবশ্যস্বীকার্য একটি বিষয়। উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু ব্যক্তি চরিত্রের আবরণ খুলে মহাকালের অঙ্গীভূত হয়ে উঠেছেন। স্থান ও কালের সীমা অতিক্রম করে বিশ্বজনীন ব্যঞ্জনায় উপসংহার উপস্থাপিত। ভাষার ক্ষেত্রে ঔপন্যাসিক যথেষ্ট মনোযোগী। কাব্যিক, গম্ভীর, সবলীল গদ্যশৈলীর অনুসরণ রয়েছে উপন্যাসে। ভাষার মধ্য দিয়েই বিশেষ দেশকাল পরিপ্রেক্ষিত ছাড়িয়ে কল্পনার আবিশ্ব স্পন্দিত বিস্তার ঘটেছে বত্রিশ নম্বরের। ৫. ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’ উপন্যাস নতুন ইতিহাসের জন্ম দিবে বলে শামস সাইদের প্রত্যাশা। সেই ইতিহাস সামাজিক মানুষের ইতিহাসও বটে। সাত কোটি মানুষের ভালোবাসার শক্তিতে ধানমন্ডি ৩২ সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িটি বাংলার শাসন ক্ষমতার একমাত্র উৎস হয়ে উঠেছিল একদিন। সেই বাড়ির গল্প লিখেছেন তিনি, খণ্ড খণ্ড মুহূর্তগুলো তুলে ধরেছেন। তবে ৬ খণ্ডে ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’ লেখার পরিকল্পনা রয়েছে লেখকের। প্রথম খণ্ড পাঠ করে মনে হয়েছে শামস সাইদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে- দ্বিতীয় খণ্ডের প্রতীক্ষায় থাকলাম আমরা। (ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, শামস সাইদ, অন্বেষা প্রকাশন, ২০১৮, প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ, মূল্য : ৬০০ টাকা) প্রকাশ: ২০১৮-০২-১০ ৩:২৬:০৮ পিএম || আপডেট: ২০১৮-০২-১০ ৩:২৬:০৮ পিএম (গ্রন্থমেলা থেকে কেনা বইয়ের পাঠ-অনুভূতি) জব্বার আল নাঈম: বাঙালির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস এখনও কোথাও রচিত বা লিখিত হয়নি, হয়ে ওঠেনি। এই না-হওয়ার কারণ ব্যক্তি জীবনের অস্থিরতা, সামাজিক-মানসিক চাপ সহ্য করার অক্ষমতা কিংবা শাষকের রক্তচক্ষুর ভয়, পক্ষ-বিপক্ষের মন্তব্য। আমরা এখনও কঠিন ও বৈপরীত্যকে সহজভাবে নিতে শিখিনি। এই না-নেয়াটার কারণও অর্থনৈতিক দৈন্য, হীনমন্যতা, শিক্ষাগত অযোগ্যতা। প্রত্যেক জাতির সামনে প্রত্যেক সেক্টরে একজন আইডল থাকে। তাদের অতিক্রম করার অনুপ্রেরণা নিয়ে পরবর্তী প্রজন্ম সামনের দিকে চোখ রাখে। থাকে জাতীয় নেতা। যাঁরা জাতির ক্রান্তিকালে বুক চিতিয়ে দাঁড়ান সকল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে। অভয়ের বাণী শোনান। আমরা যাঁর হাত ধরে পেয়েছি স্বাধীনতা, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি সাতান্ন হাজার বর্গমাইলের এই ভূ-খণ্ডে, পেয়েছি ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন দেশ, তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কালের এই মহানায়কের রাজনৈতিক জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। এই বাড়িতে বসে পরিকল্পনা হয়েছে দেশ রক্ষার। মানুষ রক্ষার। এই সময়ের কথাসাহিত্যিক শামস সাইদ। দীর্ঘ পরিসরের ব্যাটসম্যান। যে কোনো ইনিংসকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তিনি রাখেন। হাফ সেঞ্চুরি থেকে সেঞ্চুরি, তারপর সেটি এক সময় রূপ নেয় ডবল সেঞ্চুরিতে। তারপরও শামস সাইদ থেমে যান না। তারই প্রমাণ তিনি দিলেন ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি নিয়ে মহাকাব্যিক এক উপন্যাস লিখে। এই ঐতিহাসিক আখ্যান পাঠে বোঝা যায় বাংলাদেশের গোরাপত্তনের আসল চিত্র। কীভাবে ছোট একটি দেশ হামাগুঁড়ি দিয়ে ক্রমান্বয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছে। সেই হামাগুঁড়ির দিনগুলোতে প্রথম সারিতে ছিলেন শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ আরো অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। যাঁরা বাংলাদেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সহযোগী ও অনুজ অনেক নেতার জীবন চরিত্র ও রাজনৈতিক ইতিহাস শামস সাইদ তার এই উপন্যাসে দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের প্রসঙ্গ এলেই শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারিত হবে। এই নামের সঙ্গে আসবে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর। যেখানে অনেক অজানা অধ্যায় লিপিবদ্ধ আছে। একই শিরোনামে বইটির আরো ৫ খণ্ড ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হবে। আমি হলফ করে বলতে পারি, পরবর্তী প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, পূর্বমুক্তিযুদ্ধ, ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা কিংবা কোনো স্ক্রিপ্ট করতে চাইলে এই বইয়ের আশ্রয় নেবে। নিতে বাধ্য হবে। শামস সাইদ বাঙালি পাঠকদের উপন্যাস পড়াতে বাধ্য করবেন। রুচির পরিবর্তন করবেন। প্রবহমান স্রোতের মতো পাঠকদের স্টলের সামনে লাইনে দাঁড় করাবেন- এমন বিশ্বাস কখনও করি না। শামস সাইদ এমন লেখক যে, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখবেন ও দেখাবেন। তিনি সেটা করে দেখাতে পারবেন বলে আমার একান্ত বিশ্বাস। কারণ গত বইমেলায় অভিজিৎ ও দীপন হত্যা নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘ক্রশবিদ্ধ কলম’। সেটি প্রকাশ করেছে বেহুলা বাংলা। এ বছর বাবুই থেকে ছোটদের জন্য আসছে তারই আরেকটি বই ‘কানাই দ্য গ্রেট’। এই বইটিও আমার পড়া। শামস সাইদ আগামীদিনগুলোতে কথাসাহিত্য দিয়ে ভালো একটি অবস্থানে যাবেন, এটা ভ্রান্ত ধারণা নয়। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর দিয়েই তিনি তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। অবাধ তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এই তরুণ বয়সে ঢাউস আকারের বই লেখা সহজ কথা নয়। সাহিত্যের প্রতি, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর বাড়ি ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের প্রতি কতটা নিবেদন থাকলে এমন দুঃসাহসী কাজে হাত দেয়ার সাহস দেখাতে পারেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাহিত্যের প্রসঙ্গ এলে শামস প্রায়ই বলেন, আমি কাজ করেই দেখাব। জবাব দেব না। শামস সাইদ, আপনি কাজ করলেই জবাব পেয়ে যাই আমরা। পাঠকের উদ্দেশ্যে বলছি, এই বইটিতে উপন্যাস পড়ার আমেজ পাবেন। সঙ্গে জেনে যাবেন একটি বাড়িকে ঘিরে একটি জাতির পুনরুত্থানের ইতিহাস। যা কেবল শামস সাইদের পক্ষেই তুলে ধরা সম্ভব। বইটি প্রকাশ করেছে অন্বেষা প্রকাশন। প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ।