User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Very nice book
Was this review helpful to you?
or
'এয়া' কাব্যগ্রন্থ ও মনস্তাত্ত্বিক দিক "আমার ব্যর্থতাগুলো গভীরভাবে সফল। আতঙ্কের চাষাবাদে ভরপুর। জাগিয়ে তুলছে নদীর বুকভরা হাহাকার। খেলার মাঠ থেকে শিশুদের তাড়িয়েছে মহানন্দে। মায়া হরিণকে উলঙ্গ করছে বীভৎস নির্মমতায়। আমার ব্যর্থতাগুলো এক একটি উদ্ভট রঙ প্রসব করে। আমি নিতে চাই না। ফেলানী, তনু, সাত খুন, বিশ্বজিৎ, সাগর-রুনী, হজরত আলী, আয়েশা, হলি আর্টিজানকেও আমি মানি না। আমার ব্যর্থতাগুলো সীমানায় আতঙ্ক এঁকে দেয়। এবং সেটা শুধুমাত্র সে আমাকেই দেখায়। আমাকে কাঁটাতারের সত্যতা শেখায়। আমি কোনভাবেই দায়ী নই বনে আগুন দেয়ার জন্য এবং মৃত্যুর বীজ রোপণের জন্য। অথচ আমার ব্যর্থতা আমাকে সফলতার মতো মৃত্যুর গতিতে ছুড়ে ফেলছে। আমি বুঝে ওঠার আগেই প্রতিযোগিতা আমার আকাশকে পাখিহীন করছে। আমার সারল্যের বৃষ্টি শরণার্থীর ভয়ার্ত চোখে। আমি বিশ্বাসকে ভয় পাই শেকলের চেয়েও বেশি। কিন্তু মানুষকে দখলে নিয়েছে বিশ্বাস। আমি সন্ত্রাসে বিশ্বাসী নই, যেমনটি নই ক্রসফায়ারেও। আমি কোনো মানুষ দেখি না যাদের হাতে চোখে রক্ত নেই। অথচ আমি হাসির মত জীবন ভালোবাসি। অশ্রুর মত জীবনের অর্থ ভালোবাসি।" (আমার ব্যর্থতাগুলো গভীরভাবে সফল,প্রথমাংশ) তিনি কবি জুননু রাইন। হৃদয়ে দাগ কাটা উপরের কথামালাগুলো তারই নিপুণ হাতের অনবদ্য কালজয়ী সৃষ্টি 'এয়া' কাব্যগ্রন্থের অংশবিশেষ। জুননু রাইন সমকালীন তরুণ কবিদের মধ্যে অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল একজন শক্তিমান মেধাবী কবি। 'এয়া' কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে যিনি ইতোমধ্যে আমাদের সাহিত্যাঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তার কবিতা বাংলা সাহিত্যে সংযোজন করেছে ভিন্ন মাত্রা ও ভিন্ন রূপ। মানুষের অন্তরের চিন্তা-চেতনা যখন ভাবানুভূতির বর্ণবৈচিত্র্যে যথোপযুক্ত শব্দবিন্যাসে সুবিন্যস্ত চিত্রে ও ছন্দিত বিন্যাসে উপস্থাপিত হয় তখনই সে হ’য়ে ওঠে কবিতা। কিংবা আরেকটু ঘুরিয়ে বললে, মানুষের ভাবাবেগের প্রকাশ যেমন কবিতা, তেমনই ভাবাবেগের সমব্যাথিও কবিতা। যেটা আমরা কবি জুননু রাইনের কবিতাগুলোতেও বেশ ভালোভাবে দেখতে পাই। শুধু মানসিক নয়, সামাজিক বিপর্যয়েও যুগ যুগান্ত ধরে রসদ যুগিয়েছে কবিতা। তাঁর কবিতা কখনো দুর্বোধ্য কখনো সহজবোধ্যভাবে পাঠকের নিকট ধরা দেয়। কখনো ব্যক্তিগত ক্ষোভ, কখনো রাষ্ট্রিক ভাবনা, কখনো বৈশ্বিক চেতনায় জ্বলে ওঠে কবিতা। কবিতার এই চেতনা ছড়িয়ে পড়ে প্রাণে প্রাণে। এই কবিতা কখনো প্রেমিকাকে বানিয়েছে প্রেমময়ী,প্রেয়সী, লাবণ্য ও চিরায়ত সৌন্দর্যের আঁধার। আবার ছলনাময়ী হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে। এই কবিতা আবার হয়ে উঠেছে মমতাময়ী মায়ের শীতল কোলের স্নেহরসে সিক্ত পরশমাখা হিসেবে। এই কবিতা হয়ে উঠেছে কখনো অত্যাচারী শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দূর্বার রাজপথের মিছিলের অস্ত্র বা হাতিয়ার, আবার কখনো সাম্য-সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের মূলমন্ত্র বা জয়গাঁথা হিসেবে। বহুরূপী কবিতার রকমভেদে বাংলার ঋতুবৈচিত্র্যের মতোই জুননু রাইনের কবিতা কখনো বসন্ত, কখনো প্রশান্ত কখনো অশান্ত কখনো প্রণয় কখনোবা প্রলয়। এছাড়া কবিতা মানেই একটি জীবন। কবিতা একটি জাতি। কবিতা একটি দেশ। কবিতাই একটি পৃথিবী। যে জীবনে কবিতা নেই সে জীবন নিরানন্দ-বিতান। যে জাতির কবিতা নেই সে জাতি উন্নত জাতি নয়। যে দেশ কবিতাহীন সে দেশে ভালোবাসা থাকে না। যে পৃথিবী কবিতামুক্ত সে পৃথিবীতে মানুষ বসত করতে পারে না। কবিতাই সুন্দরের শ্রেষ্ঠ উপমা। কবিতার মত শোভনীয় সুন্দর আর কিছু হয় না। কবিতার জৌলুস যে রপ্ত করেছে সেই প্রকৃত মানুষ। তাই এই কবিতাকে একেকজন আবার একেকভাবে ফেঁদেছেন, তাদের স্বকীয়তা ও যোগ্যতার মাপকাঠিতে সুবিন্যস্ত করার মধ্য দিয়ে বিদগ্ধ পাঠক সমাজের নিকট উপস্থাপন করার চেষ্টা করে গেছেন, যাচ্ছেন। কিন্তু কবি জুননু রাইন যেন বিসমিল্লাহতেই পণ করে নেমেছেন কোনো গলদ-গলতি বা ভুলচুক নয়, বরং গতানুগতিক ধারার বাহিরে একটু ভিন্নপথে হাঁটার, নিজেকে পরিচালিত করার শপথ নিয়েছেন। একজন পাঠকের জায়গা থেকে আমি বলবো, এক্ষেত্রে তিনি অনেকাংশে সফল হয়েছেন। যদিও কবিতার অনেক সুদীর্ঘ পথ। আর কোনো পথই কুসুমাস্তীর্ণ নয়। অনেক খানাখন্দ, কন্টক বিস্তৃত পথে পা ফেলতে হয় অত্যন্ত সতর্কতার সাথে। আসলে প্রত্যেক কবির একটা জোরালো আইডেনটিটি বা নিজস্বতা থাকা বাঞ্ছনীয়। বাংলা সাহিত্যে এয়া'খ্যাত কবি হিসেবে জুননু রাইন ইতোমধ্যে নিজের একটা আলাদা পরিচয় বা জাত দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। সাধারণত মানুষ হিসেবে মানুষের মনস্তত্ত্ব বোঝার মতো সহানুভূতি আর উদারতা কোনটিই আমাদের মাঝে নেই। আমরা মানুষ হিসেবে খুবই স্বার্থপর ও প্রতিক্রিয়াশীল। মূলত আমরা বাইচান্স মানবিক। এটা ক্ষেত্রবিশেষে হঠাৎই জেগে উঠে। নচেৎ অসহিঞ্চুতার বিষবাষ্প আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সবসময় বসবাস করে। সংগত কারণে সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারটা ক্রমশ খুবই জটিল ও নাজুক। এর ভেতর-বাহির বহু আশ্চর্য ধরনের ফাঁকফোকর ও চোরাগুপ্ত দরজা কুটুরি রয়েছে। এসব কিছুর আসল দুর্বলতা ও কেন্দ্রীয় সমস্যাটা ধরতে পারা সহজ চাট্টেখানি কথা নয়, বরং তা খুব জটিলতর একটি কাজ। অথচ মানুষের সম্পর্কের মনোজাগতিক যে জটিল বিষয়গুলো আছে সেটাকে তিনি অনুপুঙ্খভাবে তুলে আনেন তাঁর চমৎকার গতিশীলতার পদ্যের ঝরঝরে লেখনির মাধ্যমে। কবি জুননু রাইন আপাদমস্তক একজন কবি। তিনি কবিতা খান, কবিতা পরেন, গল্প করেন কবিতা, স্বপ্ন দেখেন কবিতা-কবিতাতেই তার দিবারাত্রি বসবাস। আলহামদুলিল্লাহ কবি'র অনবদ্য সৃষ্টি 'এয়া' দেরীতে হলেও আমার হাতে এসে পৌঁছে। চমৎকার প্রচ্ছদ, বাঁধাই ও প্রিন্টিং এ মুগ্ধ হওয়ার মতো বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠা। 'এয়া' কাব্যগ্রন্থে ব্যবহৃত 'এয়া' শব্দটি নেয়া হয়েছে আদি মহাকাব্য ‘গিলগামেশ’ থেকে। প্রকারান্তরে ‘এয়া’ মূলত একজন শক্তিশালী দেবতার নাম। যিনি প্রতিনিধিত্ব করেন ন্যায়নিষ্ঠ, সত্য, সুন্দর আর যাবতীয় মঙ্গলের। মজার বিষয় হচ্ছে বইটিতে এয়া সিরিজের সাইত্রিশটি কবিতা রয়েছে, এছাড়াও স্থান পেয়েছে আরো সতেরোটি অনবদ্য স্বতন্ত্র কবিতা। মৌলিক বিষয়বস্তু বিবেচনায় প্রতিটি কবিতা পাঠককে ভাবুক হৃদয়কে নিঃসন্দেহে নাড়া দিবে। মোদ্দাকথা বাছাইকৃত জনপ্রিয় মোট চুয়ান্নটি কবিতার সংকলন ‘এয়া’। কবিতার বিষয়বস্তুতেও রয়েছে বৈচিত্র্যে ঠাসা। প্রতিটি কবিতায় বিভিন্নভাবে উঠে এসেছে মানবজীবনের সম্পর্কের রসায়ন, জটিলতা, প্রেম ও প্রকৃতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি ও সমসাময়িক প্যাট-প্যাটার্ন নির্ভর নানান ঘটনার ইতিবৃত্ত। 'এয়া' কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতাই উল্লেখ করার মতো। একটি কবিতায় কবি অমোঘ মৃত্যু নিয়ে লিখেছেন, মৃত্যুর হৃদয়ে সূর্যাস্তের লাল দাগ নেই/ নেই হারানোর চিৎকারে কম্পনও/ তবু তাকে মৃত্যু বলতে/ আমার অনীহাকে অদৃশ্য হুমকি আছে/আমি আজরাইল দেখিনি প্রভু,/ ক্রসফায়ার দেখেছি (জীবন)। ক্রসফায়ার নামক মৃত্যুর বিভীষিকাময় জীবনের ভয়াল নৃশংসতার চিত্র উঠে এসেছে কবির কবিতায়। প্রতিটি কথা হৃদয়ে দাগ কাটার মতো। যেমন একটি কবিতায় একজন উর্ত্তুঙ্গু আত্মবিশ্বাসী আশাবাদী কবিকে দেখতে পাই আমরা। যিনি স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে অবলীলায় আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারেন, স্বপ্ন দেখাতে পারেন। অথবা রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের মতো শত ঝড়ঝাপ্টায় ও রোদ বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেও আশার ফুলঝুরি ছুটাতে পারেন। তিনি লিখেছেন, 'একদিন বৃষ্টি হবে/ব্যথিতের রক্তক্ষরণের/ গুঁড়ো গুঁড়ো দারিদ্রের শব্দে/ সূর্যের লাল চোখরাঙানি ঝরিয়ে/ শতাব্দী থেকে শতাব্দী দীর্ঘ আর্তনাদে/ ... একদিন বৃষ্টি হবে’ (বৃষ্টি)। কতোটুকু আত্মবিশ্বাসের পারদ কবির হৃদয়ে প্রোথিত রয়েছে, সেটা বলার আর অপেক্ষা রাখেনা। আরেকটি কবিতা এক ভিন্ন কবিকে দেখতে পাই, ‘প্রথমেই বলেছিলাম আমি একা/ সেই চিৎকারে বারবার বলেছি মানুষ একা/ এরপরে খেলতে গিয়ে আমি যতবার জিতেছি হেরেছি/ বা খেলতে পারিনি, ততবার জেনেছি আমি একা’ (আবুল হাসানের একাকিত্বকে) যাপিত জীবনে মানুষের নিঃসঙ্গতা, মনের সাধারণ অসন্তোষ, অসুখী, বিষণ্নতা, উদ্বেগ, শূন্যতা ,এবং একঘেয়েমি অনুভূতিগুলো কতো সুন্দরভাবে চিত্রিত হয়েছে এসব কবিতায়। পাঠককূলকে নিশ্চিতভাবে দ্বিতীয়বার ভাবতে শেখাবে কবিতাগুলো। নিঃসঙ্গতার বাতাবরণে ঠাসা জন্মগতভাবে প্রতিটি মানুষই একা। পৃথিবীতে আসে একা, প্রস্থানও হয় একা। একাকীত্বে মনে হয় মানুষ না হয়ে ফুল হলে ভালো হতো। একটা দিন অপূর্ব সুবাস ছড়িয়ে মানুষকে মুগ্ধ করে দেওয়া যেতো। তারপর আরেকটা দিনের ভোরের আলো ফোঁটার আগেই হারিয়ে যাওয়া যেতো নীরবে। জীবনে লুকোচুরি খেলতে গিয়ে কতো সময় হারিয়ে যায়, কখনো খুঁজে না পাবার মতো করে। সেখানে কখনো চিৎকার করি কাঁদি, কখনো হেসে কুটিকুটি হই। খেলতে খেলতে কখনো হেরে যাই আবার কখনোবা জিতে যাই। সেখানে একাকীত্ব আর শূণ্যতা ভরপুর। মাঝে মাঝে মনে হয় এমন একটা জীবন হোক, যে জীবন সব পাওয়ার না হোক অন্তত কিছু না হারাবার হোক। জীবনে না পাওয়ার তালিকাটা যেন ক্রমশ দীর্ঘ থেকে আরও দীর্ঘতর হচ্ছে। প্রেমহীন রাতে ভালোবাসাহীন বিছানায় একাকীত্বের গন্ধে পড়ে থাকি অলসতায়। হঠাৎ মনটা আপনাআপনি খারাপ হয়ে যায়। একটা গান শুনতে শুনতে হঠাৎ করেই মনটা বিষণ্ণ হয়ে উঠে। কবি জুননু রাইনের কবিতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, পাঠককে চুম্বকের মতো ধরে রেখে তাদের ভেতরের সুন্দর কবিত্বকে টেনে বের করে নিয়ে আসতে পারা। যেখানে কবিতা ও কাহিনীর চিত্রকল্পগুলো একইসাথে জীবন্ত প্যারালাল দৃশ্যমান হয়ে উঠে। তার কবিতায় ত্রিকাল (অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ) ফুটে উঠে সহসায়। আমাদের বাংলা সাহিত্যে ব্যক্তিবিশেষের কবিতা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে কবিতার এই প্রয়োজনীয় গৌরচন্দ্রিকা বা ভূমিকা হচ্ছে, বহুউচ্চারিত একটি চিরন্তন সত্য, ‘পৃথিবীতে কবিতার মৃত্যু নেই’। কারণ পৃথিবীতে মানুষ যতদিন আছে, তাদের মন আছে, চিন্তাশীলতার জোয়ার-ভাটার খেলা আছে, প্রেম আছে, প্রকৃতি আছে, ততদিন কবিতাও আছে। অর্থাৎ কবিতার জন্মও এক অবিসংবাদী সত্য। তদ্রূপ এয়া'খ্যাত কবি জুননু রাইনের সৃষ্ট কবিতাও অনিবার্য সত্য ও রূঢ় বাস্তবতা। সতরাং একথা নিশ্চিত করে বলা যায়, বিদগ্ধ পাঠক সমাজকে একবার হলেও ভাবতে বাধ্য করবে 'এয়া' কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো। (দৈনিক জনকণ্ঠ ও নয়াদিগন্তে আলোচনাটি প্রকাশিত) মুহাম্মদ কামাল হোসেন গল্পকার ও ঔপন্যাসিক
Was this review helpful to you?
or
'কবিতার প্রাণ থাকে চিত্রকল্পে ও ধ্বনিতে। জুননু ছোট ছোট সব ছবি এঁকেছে, যেগুলো স্বাভাবিকভাবে এসেছে। কষ্টকল্পিত নয়, যান্ত্রিকও নয়, ছোট নদীর ঢেউয়ের মতো তারা আসে এবং স্পর্শ করে। তাদের ধ্বনিগুলো স্বাভাবিক ও সংযত। যেমন লিখেছে সে, ‘আলো ঘুমায়’, ‘বাতাসের পায়ে ফুটবল’, ‘দূর থেকে দূর হারিয়ে গেছে এখন আমাদের দূরত্ব ঠিকানাহীন’, ‘অভ্যাসের হাত পাখার বাতাস’, ‘নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে জীবনের অভিমান।’ ... এ বইয়ের কবিতাগুলো একবার নয়, একাধিকবার পড়ার মতো। যেমনটি আমি পড়েছি এবং আনন্দিত হয়েছি। সত্যিকারের কবিতার পরিচয় তো এটাই যে পড়লেও পড়াটা শেষ হয় না।' -সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দৈনিক কালের কন্ঠ ___________________________________________________________________________________________________ 'নিঃসঙ্গতা এবং সময়ের অস্থিরতা স্বত্বেও জুননু রাইনের কবিতা এক ধরনের নম্রতার আবরণে ঢাকা। কিন্ত তিনি হতাশ নন। তিনি আশা করেন যে, এই সময়ের অন্ধকার এবং ব্যর্থতাগুলো চূড়ান্ত নয়। যে কারণে তিনি লিখতে পারেন – ‘একদিন বৃষ্টি হবে/ব্যথিতের রক্তক্ষরণের/ গুঁড়ো গুঁড়ো দারিদ্রের শব্দে/ সূর্যের লাল চোখরাঙানি ঝরিয়ে/ শতাব্দী থেকে শতাব্দী দীর্ঘ আর্তনাদে/ ... একদিন বৃষ্টি হবে’ (বৃষ্টি)। জুননু’র এই আশাবাদের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে ‘এয়া’ শিরোনামের কবিতাগুলো।' -আলী রীয়াজ বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ___________________________________________________________________________________________________ 'বাস্তবের উদ্ভট আধিপত্যের বিপরীতে তিনি দাঁড় করাতে চেয়েছেন প্রতিবাস্তবতা। তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন তাঁর অন্তর্লোক, যার অধিষ্ঠার্তী 'দেবী' এয়া; যদিও তিনি জানেন যে, মোসোপটেমীয় পুরাণের এয়া একজন দেবতা- বিশুদ্ধ জল আর জ্ঞানের দেবতা। জলের যে জীবনার্থ, প্রজ্ঞার যে প্রতিশ্রুতি, তা তিনি খুঁজে পেয়েছেন নিবৃত এক নারীর কাছ থেকে। এ সুবাধেই মর্ত্যমানবী এয়ার সঙ্গে পৌরাণিক এয়ার সমানতা। মহাপ্লাবনের পরিপ্রেক্ষিতে দেবতা এয়া বিশাল জলজান-প্রকল্পের মন্ত্রণা দিয়েছিলেন। আর, এ কালের এয়া সাদামাটা একজন তরুণের ঘুম কেড়ে নিয়ে তার ভেতরে একজন কবিকে জাগিয়ে তুলছেন। এয়া গড়ে তুলছেন একজন কবিকে, কবিও রচনা করে চলেছেন তাঁর দেবীকে। কখনো কখনো মনে হতে পারে, দু'জনে মিলে আসলে একজন; একই সত্তার দুই রকম অভিব্যক্তি মাত্র। 'তোমার আকাশ খুলে দাও, আমি একবার আমাকে ছুঁই।- এই কবি এয়াকে ছুঁতে পেরেছিলেন কিনা জানি না; তবে পাঠক হিসেবে আমার বিশ্বাস, এয়াকে ছুঁতে গিয়ে জুননু রাইন কবিতার ভাষাকে ছুঁয়ে ফেলেছেন, যা আরও বেশি দরকারি।' -ময়ুখ চৌধুরী সৃজন বিডি ডটকম ___________________________________________________________________________________________________ 'কবিতার ল্যান্ডস্কেপটি আদতে ঊষর, তবে এতে নিবিড় উপবনের মতো শ্যামল আভা ছড়াচ্ছে ‘এয়া’ শিরোনামের ছত্রিশটি কবিতা। পাঠ করতে গিয়ে কেমন যেন মন ছুঁয়ে যায়, সাথে সাথে পুরাণের সাথে পরিচিত পাঠকের মনে খ্রিস্টপূর্ব ২১০০ অব্দে মেসোপটোমিয়ায় সৃজিত গিলগামেসের মহাকাব্যের কিছু বয়ান খণ্ডিতভাবে উঁকি দেয়। এ কবিতাগুলো আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় রোমান্টিক। পড়তে পড়তে খুব হালকা তুলিতে আঁকা কিছু ছন্দময় চিত্রকল্প মনে ভাসে। তবে একটু গহন প্রেক্ষিতে তর্পণ করলে অনুধাবন করা যায়, বর্ণনা ও বাক্প্রতিমার অন্তরালে কবির পরিবেশ সংক্রান্ত সচেতনতা।' -মঈনুস সুলতান দৈনিক ইত্তেফাক ___________________________________________________________________________________________________ 'জুননু রাইনের কণ্ঠস্বর তার সমকালের অন্যদের চেয়ে আলাদা। খুব গভীর আর অন্তস্রোতের মতো মনোজগতে ধাক্কা দিতে থাকে। ‘এয়া’ এই নামটি তার সিরিজ কবিতার উপজীব্য। এই ‘এয়া’ কবির প্রিয়তমা। কিন্তু ‘এয়া’ বাংলা কবিতার সুনীলের নীরা, নেরুদার যোশি, দান্তের বিয়াত্রিস নয়। বরং এ এক রক্তমাংসের নারী- একই সঙ্গে ধরা ও অধরা। এই দ্বৈততা আমাদের নিয়ে যায় নিঃসঙ্গ উপত্যকায় যেখানে ‘মৃত্যু শান্ত পুকুরের আশ্চর্য ডুব’।' -রেজাউদ্দিন স্টালিন বাংলা ট্রিবিউন