User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
All of the books in this list are very interesting.. you can bye it..
Was this review helpful to you?
or
বাংলার আকাশ সমুদ্রসীমা আজ সম্পূর্ণভাবে শত্রুমুক্ত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও যেন বাংলাদেশের মানুষ পরিপূর্ণভাবে বিজয়ের স্বাদ নিতে পারছে না। কি যেন নেই, যার দরুণ কেউই ঢেকুর তুলে বিজয়ের স্বাদ খুশি মনে নিতে পারছে না। কর্তা যদি বাড়ির বাহিরে থাকে, পোলাও মাংস যতই খাওয়া হোক না কেন, সেগুলো খেতে ভাল লাগবে না। দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু দেশের অভিভাবক পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। অভিভাবক ব্যতীত বাঙালি জাতি বিজয় উৎযাপন করে কিভাবে! সকলের প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা বলা হচ্ছে। অবশেষে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সব ধরণের জল্পনা-কল্পনা-চালাকির অবসান হয়ে বঙ্গবন্ধু মুক্ত হয়েছেন। আজ ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরছেন। লক্ষ লক্ষ বাঙালী সকলেই দলে দলে তেজগাঁও বিমান বন্দরের দিকে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানাতে। বড় রাস্তার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বঙ্গবন্ধুর হাস্ব্যেজ্জ্বল ছবি শোভা পাচ্ছে। দিল্লী থেকে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বৃটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর কমেট বিমানটি ঢাকার আকাশ সীমানায় দেখা দিতেই জনসমুদ্র উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। মাল্যভূষিত করার সাথে সাথেই বঙ্গবন্ধুর সংযমের সকল বাঁধ ভেঙ্গে যায়। তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বিমানের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু জনতার মহাসমুদ্রের উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। তার চোখ তখন স্বজন হারানোর বেদনা-ভারাক্রান্ত অশ্রুর নদী, আর জৌতির্ময় দ্র্যুতি ছড়ানো মুখাবয়ব জুড়ে বিজয়ী বীরের পরিতৃপ্তির হাসি। আয়েশা অভাবের তাড়নায় তিন বছরের শিশুপুত্র জামালসহ তিন সন্তানের জনক কদম আলীকে বিয়ে করে। শারীরিকভাবে অক্ষম সতীন নার্গিস প্রথমে আয়শাকে কোনো অবস্থাতেই মেনে নিতে চায়নি। পরবর্তীতে সংসারের যাবতীয় কাজের দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ায় শত ইচ্ছার বিরুদ্ধে থেকেও আয়শাকে নার্গিস নিজের সতীন হিসাবে মেনে নেয়। বিয়ের পর থেকে আয়শা কদম আলীর সংসারে দিন-রাত চাকরাণীর মতো খেটে যেতে থাকে। নার্গিসের বড় দুই ছেলে স্কুলে পড়তে দেখে জামালেরও স্কুলে পড়ার ইচ্ছা জাগে। আয়শা অনেক অনুনয়-বিনয় করে নার্গিসকে রাজি করিয়ে জামালকে স্কুলে ভর্তি করে। জামাল নিয়মিত স্কুলে যাওয়া-আসা করে এবং প্রতিবছর একটি একটি ক্লাস উর্ত্তীন হয়ে অষ্টম শ্রেণিতে উঠেছে। ইতিমধ্যে জামাল লেখা-লেখিতে মনোযোগী হয়েছে। বিখ্যাত লেখকদের বই পড়ার পাশাপাশি নিজেও কবিতা-গল্প লেখা শুরু করেছে। এস.এস.সি. পরীক্ষার পূর্বেই হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে অসুস্থ হয়ে আয়শা মৃত্যুবরণ করে। আয়শার বিবাহসূত্রে কদম আলীর বাড়িতে জামালের আশ্রয় মিলেছিল। আয়শার মৃত্যুর পরেরদিনই জামাল কদম আলীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় নেয় বিধবা বেদেনী পদ্মাবতীর ভাসমান নৌকাতে। পরবর্তীতে বেদে পল্লীর লোকদের মাধ্যমে জামাল ও পদ্মাবতীর নামে কুৎসা সারা গ্রামে রটে যাওয়ায় শাস্তিস্বরূপ দু’জনই গ্রাম ছাড়া হয়। জামাল জীবিকা নির্বাহের জন্য রংপুর শহরের এক হোটেলে ওয়েটারের কাজ নেয়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে জামালের সাহিত্যচর্চাও চলতে থাকে। এরপর বাসের হেলপার, প্রেসের হ্যান্ড কম্পোজের কাজ এবং সর্বোপরি ঢাকার কমলাপুরে কুলির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এত কিছুর পরেও জামাল লেখা-লেখি ছাড়েনি। রাস্তার ল্যাম্প-পোস্টের বাতির আলোতেও জামালকে লেখা-লেখি করতে দেখা গিয়েছে। অবশেষে “দেশ প্রেমিক” নামে একটি বড় আকারের উপন্যাস লিখে সমাপ্তি টেনেছে। জামালের “দেশ প্রেমিক” উপন্যাসটি কোন প্রকাশকই ছাপতে রাজি নয়, ছাপার খরচ উঠে আসবেনা এই সংশয়ে। অবশ্য কোন কোন প্রকাশক টাকার বিনিময়ে ছাপতে চেয়েছেন। গর্ভবতী মায়ের পেটে দশ মাস দশ দিন সন্তান লালন পালন হওয়ার পর ভূমিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত মা’র প্রসববেদনা শুরু হয়ে যায়, তেমনি অবস্থা হয়েছে জামালের বই প্রকাশ করতে না পেরে। জামাল ও হাবিবের অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর বাংলাবাজারের এক প্রকাশক “দেশ প্রেমিক” উপন্যাসটি প্রকাশ করতে রাজি হয়। জীবন চলার পথে প্রতিনিয়ত দেখা দেয়, অভিজ্ঞতার তারতম্যের ভিত্তিতে বুদ্ধির তীক্ষ্মতা; অপরের মনােজগৎকে জয় করার সক্ষমতা কিংবা অক্ষমতা; সহজাতভাবে এক নারী আরেক নারীর প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ কেন, সেই চিরায়ত সত্য; প্রেম-বিরহ, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, লােভ-নির্লোভ, শ্রেণি বৈষম্যবােধসহ ইত্যাকার অসংখ্য দিককে উপলব্ধির রংয়ে রাঙিয়ে দেওয়াই রমণীদ্বয় উপন্যাসের মূল উপজীব্য বিষয়। আবার প্রেম, বিয়ে, সংসার জীবন ও কর্ম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র যে স্বতন্ত্র, তাও দিক-নির্দেশ করা হয়েছে এখানে। একইসাথে এ উপন্যাসে আছে উপমা ও উৎপ্রেক্ষার লক্ষ্যভেদী দিকটিও। এছাড়া এটি রম্যরসে ভরপুর। কাজেই এ গ্রন্থটি পাঠ শেষে পাঠককুলের মনে সুদীর্ঘকাল দাগ কাটবেই, এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় দুটি চরিত্র- ইকবাল ও সালমা। দুজনেই দুই মেরুর হওয়া সত্ত্বেও উভয়েই প্রেম, বিয়ে ও সংসার জীবনে যারপরনাই সূখী হয়। কিন্তু সময়ের প্রয়ােজনে প্রতিটি মানুষ যেভাবে বিন্দু বিন্দু করে তার প্রকৃত সহজাত হিংস্র রূপ ধারণ করে, ঠিক তেমনিভাবে ইকবাল ও সালমার জীবনেও তা দেখা দেয়। আর এর পরিণতি হলাে, উভয়ের মধ্যে চিরতরে বিচ্ছিন্নতাবােধ । অতঃপর এ বিচ্ছিন্নতাবােধকে ব্ল্যাকমেইল করে স্বার্থ হাসিল করতে চায় ধুরন্ধর নারী কোহিনূর। কিন্তু বিধিবাম! ইকবালের কঠোর অবস্থানে তা ভেস্তে যায়। এখানেও আসে বিচ্ছিন্নতাবােধ। এভাবে উপন্যাসের কাহিনি এগােতে থাকে দুই নারীর হিংস্রতাকে অতিক্রম করে। অতঃপর ন্যায় ও সত্যের বিজয় নিশ্চিত করে ইকবাল নামের মূখ্য চরিত্রটি। এটাই হলাে প্রকৃতির প্রতিশােধ। এই অদৃশ্য দিকটিকে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় জীবন্ত করে তুলেছেন। লেখক। যা পাঠকের একমাত্র প্রাপ্তি।