User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
খুবই ফালতু যত সব চটি গল্পে ভরা?
Was this review helpful to you?
or
আমার উপন্যাস পড়ে চিঠি লিখেছেন তুহিন। চিঠিটা তুলে দিলাম তার অনুমতি নিয়ে। .... ‘তোমারে চিনি না আমি’ আমার গল্প, আমাদের গল্প আপনি কি করে জানলেন? প্রিয় মাহবুব ভাই সেই কবেকার কথা। তা আঠেরো বছরতো হবেই। মফস্বল শহরের ক্ষয়ে যাওয়া লাল ইটের রাস্তা ছেড়ে আমি একটা ব্যাগ নিয়ে ঈগল নামে ঢাকার একটি পরিবহনে উঠে গেলাম। পস্ট মনে আছে। শীতকাল ছিলো। মাঠে হলুদ শর্ষেফুলের মাতাল করা গন্ধ ছুটছিলো। জানালার পাশে বসে আমার তখন কেবলই মনে হচ্ছিলো, নবগঙ্গার ক্ষীণ ধারায় জলের গভীরে ডুব দিয়ে আমি যে মাছের নড়াচড়া দেখতাম, রায়দের বাগানে অসময় বড় হওয়া কাঠাল চুরি করে খেয়ে সেই কাঠালের ভুতি আবার রায়েদের বাড়িতেই রেখে আসতাম কিম্বা কৃষক সংগঠনের জন্য মাইলের পর মাইল ছুটতাম তা আর হবে না। আমি পুরনো কোন ট্রাঙ্কে নেফথোলিন দিয়ে রাখা মখমলের মত নরম কোন পোশাক, আর যাচ্ছি কাট কয়লার শহরে পড়তে যাওয়ার নামে পুড়তে, অঙ্গার হতে। ঠিক জানালার পাশে বসে আমি এই সত্য জেনে গিয়েছিলাম। অথচ আমি বস্তুত কোনদিন জজ ব্যারিস্টার হতে চাইনি। হতে চাইনি ডিসি এসপি। প্রায়শ ভাবতাম, আমি লালন সাইয়ের কোন মাজারের ফকির হলে ভালো হতো। আসলে আমি কবি হতে চেয়েছিলাম। এরপর বহুদিন পরে যখন আমি জেনে গেলাম এই শহর, এই ঢাকা বিশ্রি শহরই নয় শুধু; একইসঙ্গে এটি সংঘবদ্ধ একটি ডাকাতদের আস্থানা। এখানে শুধু আ.লীগ বিএনপি জামাত জাতীয় পার্টি সিপিবি বাসদ ওয়ার্কার্স সার্কাসরাই ডাকাত নয়, এখানে ডিসি এসপি জজ ব্যারিস্টারদের বাইরেও ডাকাতদের সিন্ডিকেট আছে। কবি সাহ্যিতকেরাও এই শহরে এসে ডাকাত হয়ে যায়। ডাকাত রাজ্যের ডাকাত কবি। কিন্তু আমি এরকম হতে চাইনি। বিশ^বিদ্যালয় পড়তে পড়তে বামপন্থি রাজনীতির সাথে যুক্ত হইনি। এরও আগে যখন আমার ভেতর আরেকটি আমার অস্তিত্ব জন্ম নিচ্ছিলো তখন থেকেই আমি বিপ্লব করতে চেয়েছিলাম। জীবনে দুটি জিনিষই চেয়েছিলাম বিপ্লব ও কবিতা। এই মধ্যবেলায় এসে দেখলাম কোনটিই হয়নি। এ শহরে বিপ্লবতো হয়ই না, কবিতাও নয়। বিশ^বিদ্যালয়ে বামপন্থি আন্দোলনের কর্মী থেকে কখন নেতা হয়ে গেলাম জানি না। কিন্তু নেতা হওয়ারও বহু আগে একবার মন খারাপের দীর্ঘদিনে বাড়িতে গিয়ে বসেছিলাম। সেইসব সময় অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখতাম। দেখতাম, সারি সারি মানুষ আমাকে ডাকছে। তারা কোথায় যাচ্ছে কেউ জানে না। কিন্তু সেইসব অলিক মানুষের ডাকে আরো মানুষ তাদের পেছনে হাটছে। স্বপ্ন দেখে রাতে আর ঘুমাতে পারতাম না। আমাদের পুরানো ভাঙ্গা রাজবাড়ির সামনের মাঠে বাকি রাত হাটতাম। এরকমই একদিন সময় সাব্বির মামা এলেন। মামা এ কারণে আমার বন্ধু বাদলের মামা তিনি। পুরুষ মানুষ দেখতে এতো সুন্দর হয় সাব্বির মামাকে না দেখলে বিশ্বাস হোত না। সাব্বির মামা যেনো আমার এই একাকি জীবনে বৈশাখের ঝড় হয়ে এলেন। পেশায় তিনি ডাক্তার। কিন্তু ডাক্তারি করতে তার ভাল লাগে না। তার ভাল লাগে কবিতা নিয়ে আলাপ করতে। লালন নিয়ে কথা বলতে। ভক্তিবাদ আর বস্তুবাদ নিয়ে তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে কাটিয়ে দিচ্ছিলেন। মনে হলো সময়গুলো যেনো হাওয়াই মিঠাইয়ের মত চলে যাচ্ছিলো। আমাকে তিনি বলছিলেন, রাজনীতি আমার জায়গা না। যে ধারার রাজনীতি দেশে চলছে সেটি না করাই ভাল। বরং রাজনীতিতে আরো বেশি মানুষ আসতে পারে, মানুষ তার চিন্তা পদ্ধতিতে প্রশ্ন করা শিখতে পারে তা নিয়ে ভাবো। তুমি লেখো। বেশি বেশি করে লিখো। প্রেম অপ্রেম, যৌনতা, যা মনে আসে। মুক্ত মানুষের আকাঙ্খা যা হয় সেটিই প্রকাশ করো। বিশ^বিদ্যালয়ে ফিরে যাও। লিটল ম্যাগাজিন বের করো। অন্যদের পত্রিকায় লেখো। তুমি লিখে ভাসিয়ে দাও। তোমার লেখার মধ্যে একটা মায়া আছে, একটা যাদু আছে। আমি তখন সাব্বির মামাকে বিপ্লব না করার অজুহাত হিসেবে এইসব লেখালেখির উপদেশ দিচ্ছেন এটি বলেছিলাম। চারু মজুমদার আর সিরাজ সিকদার থেকে কোট করে বলেছিলাম, এগুলো পাতি বুর্জোয়া মনোভাব। লেখালেখির বদলে বরং আমি সাব্বির মামাকে বলেছিলাম, কিভাবে প্রকাশ্য গণআন্দোলনের সঙ্গে সশস্ত্র সংগ্রামের মেলবন্ধন ঘটাতে হবে। কিভাবে আরবান গেরিলা ওয়ারজোন গড়ে তোলা যাবে। কি ধরনের কর্মসূচী নিলে ছাত্ররা শ্রমিক-কৃষকের সাথে লড়বে। পার্টি বাহিনী ফ্রন্ট কিভাবে কাজ করবে। একদম ছক একে খাতায় চিত্রকর্ম দিয়ে এসব বুঝিয়েছিলাম। সম্ভবত এসব বিষয়ে আমি দুইরাত সাব্বির মামার সাথে আলাপ করেছিলাম। সেইসব আলাপ হয়েছিলো আমাদের নড়াইয়েলর লোহাগড়ার সেই পুরানো জমিদার বাড়িতে। আমার রুমের বাইরেই ছিলো বিশাল একটা শিউলি ফুল গাছ। মাঝরাতে সেখান থেকে গন্ধ ছুটতো। সাব্বির মামা চলে গেলেন। আমি ফের একা হয়ে পড়লাম। তার কিছুদিন পর ঢাকায় ফিরলাম। আবার আন্দোলন সংগ্রাম। কিন্তু এবার সত্যিই সত্যিই লিটল ম্যাগ বের করার চেষ্টা করেছিলাম। কাদামাটি নামে পত্রিকাটির একটি সংখ্যাও করেছিলাম। পত্রিকা বের হবার পর কোথা থেকে সাব্বির মামা এলেন মধুর ক্যান্টিনে। অনেক গল্প করলেন। বললেন, পত্রিকা করছি এটি ভাল খবর। অনেক উৎসাহ দিলেন। এ ঘটনার বহু পরে জেনেছি সাব্বির মামা হলেন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল লাল পতাকা) সাধারণ সম্পাদক ডা: মিজানুর রহমান টুটুল। র্যাব তাকে ঢাকা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে রাজশাহীতে ক্রসফায়ারে হত্যা করে। আর আমার বন্ধু বাদলেরও কোন খোজ নেই। ও হয়তো অনেক আগেই জমা খরচের খাতায় ওঠে গেছে। আমিও এখন স্বপ্ন দেখি, প্রায় দেখি। এটি নিয়ে আমি যে পত্রিকায় কাজ করি সেখানে লিখেছিও, দেখি আমাকে মারার জন্য দীর্ঘ এক আরব দৌড়াচ্ছে। তার হাতে রুপালী তলোয়ার চাদের আলোয় পড়ে চকচক করছে। আমি মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করি। কিন্তু মরি না। এর ব্যাখ্যা অনেকে করেছেন, যেহেতু আমি নাস্তিক ব্লগারের তালিকায় একদম প্রথম সারির, সে কারণেই ভাবি আমি নিহত হবো। কিন্তু আমিতো এভাবে ঘাতকের হাতে মরতে পারি না। এটা আমার কবিতার দিব্যি। বহুকাল আগে একবার আমি লিখেছিলাম, ‘আমার দেহ গিলে নিবে কোন ট্রেন অথবা তোমার দেহ’ হয় আত্মহত্যা করবো না হয় ভালোবেসে তীব্র যন্ত্রণায় মরতে চাই। ঘাতকের হাতেতো মরবো না আমি। আমি কেন এ স্বপ্ন দেখি? আর বিশ্বাসী আস্তিকেরা কেন আমায় মারবে? আমিতো কোনদিন আল্লাহ খোদা নবী রাসুল নিয়ে কোন কুটক্তীতো দুরে থাক কোন কথাই লিখিনি। তাহলে আমার নাম কেন এ তালিকায়? আমি নাস্তিক কিনা তা জানি না। কারণ নাস্তিক আস্তিকতার এসব বিষয়গুলো আমার কখনই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। নাস্তিকের তালিকায় নাম ওঠায় অনেকের জাত বেড়েছে। অনেকে আবার জীবনের ঝুকি নিয়ে দেশের বাইরে পাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু আমি ভাবতাম এখনো ভাবি, আমি এভাবে মারা যাবো না। আমিও বাইরে যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো? আমিও থাকি মিতালির রোডের মাথায়। ধানমন্ডি ১৫ নম্বর দিয়ে যেতে যেতে পেপার স্টান্ডগুলোতে আমিও চোখ বোলাই। এই গল্প কী তবে আমার? আমিতো লিখি না বহুদিন। শেষ যেবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। নানান ঘটনায় সেটি একটা বিমবিষার মত হয়ে দাড়ালো তখন একটা সুইসাইড নোট লিখেছিলাম। সেটি কবির মৃত্যু বিষয়ক ভাবনা হিসেবে আমার পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক মাসুদ ভাই ছেপে দিয়েছিলেন। এই শেষ লেখা। একটা গল্প, কয়েকটা কবিতা আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু লেখা কোথায় কোথায় ছাপা হইছে তার কোন কিছুই আমার কাছে নেই। আমি এসব সংগ্রহে রাখি না। সব মিলিয়ে উপন্যাসের ৪০ পাতা লিখে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আর বের হয়নি মাথা থেকে। মনে হোত ছাইপাস লিখে কি হবে? তাহলে এই যে উপন্যাস, তা কি আমাকে লক্ষ্য করে? নাকি আমার মত যাদের স্বপ্ন ছিলো কবি হওয়ার, বিপ্লবী হওয়ার বিপ্লব করার কিম্বা জীবনে কিছু একটা করার তাদের সবার গল্প? এইসব সিদ্ধান্ত না হয় অন্যকোন সময় নিবো। বা নেবারও যে খুব একটা দরকার আছে তা বলছি না। কিন্তু এই উপন্যাস, এই গল্প আমাকে মাতালের মত টেনে নিয়ে গেছে আমার ৩৭ বছরের জীবনে। অনেক কিছু হতে চেয়ে আমি এখন সাংবাদিকতা করি। ক্রমশ দীর্ঘদেহী সাহসী একটা মানুষ পরিণত হয়েছি আরশোলায়। আর কত আপোষ করবো? এই গল্প আসলে অনেকগুলো স্বপ্ন ক্রসফায়ার হওয়ার গল্প। সরদার মামার ক্রসফায়ারের মধ্য দিয়ে পাঠক সেই স্বপ্নগুলো নাই হয়ে যাওয়ার বিষয় ধরতে পারে। এই গল্পটি বলার জন্য আপনি পাঠককে বসিয়ে রেখেছেন। একটি ঘোর তৈরী করে, একটি চক্রব্যুহো তৈরী পাঠককে সেখানে ফেলে দিয়ে আপনি নিজেও কস্ট পাচ্ছেন। আমি এরকম সক্রিয় লেখক চাই। যিনি পাঠকের সাথেই কস্ট পান। এই গল্প আমার গল্প, আমাদের মত মানুষের গল্প। এই গল্প আমার চেনা জীবনের গল্প। যৌথখামারগুলো ক্রসফায়ারের গল্প। সারারাত ধরে গল্প পড়ে মাথা এলো মেলো হয়ে আছে। সে কারণে আপনাকে এই এলো মেলো চিঠি লিখলাম। বহুকাল চিঠি লিখি না। চিঠি লেখার মত কেউ আর বেচে নেই। যাদের লিখতাম তারা কেউ ক্রসফায়ারে না হয় নিজেই মরে গেছে। আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই, সে কারণেই আপনাকে মেইল দিলাম। ভাল থাকবেন। শুভেচ্ছাসহ আরিফুজ্জামান তুহিন
Was this review helpful to you?
or
মাহবুব মোর্শেদের প্রথম উপন্যাস 'ফেস বাই ফেস' চমকে দিয়েছিল পাঠককে। 'ব্যক্তিগত বসন্তদিন' ও 'দেহ'- গ্রন্থের গল্পগুলোর মতো 'ফেস বাই ফেস' ও 'অর্ধেক জাগ্রত রেখে' উপন্যাসে পাঠক খুঁজে পেয়েছেন অতিপরিচিত পরিপার্শ্বের অচেনা বিবরণ। পরিচিত ঘটনাবলী তার গল্পে আসে নতুন আবিষ্কার, চমক আর বুননে সজ্জিত হয়ে। স্বতঃস্ফূর্ত গল্পের জগত্ হয়ে ওঠে রহস্যময়। মাহবুবের গল্প সবসময়ই আকর্ষক, স্বাগত জানাবার জন্য প্রস্তুত। গদ্য সহজ, কিন্তু দ্ব্যর্থকতায় ভরপুর- ইশারা আর পরিহাসে ঠাসা। তোমারে চিনি না আমি এক অভিনব গল্প। পাশের মানুষ- এমনকি কাছের মানুষটিকে চিনতে পারছি না আমরা। শেষ পর্যন্ত চিনতে পারছি না নিজেকেও। কেউ কাউকে চিনতে দিচ্ছি না। সর্বত্র যেন অলঙ্ঘনীয় দেয়াল, অমোচনীয় নিষ্ক্রিয়তা। হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরছি প্রেম; সে প্রেম হয়তো ধরাছোঁয়ার মধ্যেই আছে- একটু মমতা দিয়ে বুঝে নিতে পারছি না। লিখতে চাইছি কবিতা- কিন্তু সেই প্রগাঢ় অভিবিবেশ নেই জীবনে। উপমা ও উত্প্রেক্ষার পেছনে একটা নিরব বিকেল খরচ করার সময়টুকুও নেই। বিপ্লব প্রয়োজন- কিন্তু নেই ঘুরে দাঁড়াবার স্পর্ধা ও সাহস। জীবনকে বিপন্ন করার দীক্ষা নেই, নেই বেরিয়ে পড়ার শক্ত প্ররোচনা। 'তোমারে চিনি না আমি' এক স্থবির সময়ের গল্প। আত্মআবিষ্কারের বেদনাদায়ক দলিল। উত্তর বাংলার এক বিশ্ববিদ্যালয় শহরে শুরু হয়ে এ উপন্যাস প্রদক্ষিণ করে এসেছে একটি প্রজন্মের মানসপট। একাধারে এ গল্প ব্যক্তি মানুষের এবং নৈর্ব্যক্তিক ইতিহাস।