User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জানুয়ারি বইঃ একচক্ষু হরিণীরা লেখকঃ রাসেল রায়হান(Rassel Raihan) প্রকাশনীঃ দাঁড়িকমা প্রকাশনী প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ ধরণঃ মনস্তাত্ত্বিক পৃষ্ঠাঃ ১১২ মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০টাকা "বাঁপাশে সমুদ্র আর ডানপাশে মরুভূমি, হায়! একচক্ষু হরিণীরা তবু কেন মরে পিপাসায়?" জীবন একটা বিচিত্র সমগ্র। এই জীবনে ঘটে কতশত রকমের ঘটনা। একেকজনের জীবন একেক রকম।।ঘটে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা। আবার অনেকসময় দেখা যায় কেউ কেউ একই সূত্রে গাঁথা, কখনো কখনো এক জনের সাথে অপরজনের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। এই জীবন সমগ্রের কতটুকুই বুঝতে পারি আমরা? কতটুকুই এর রহস্য ধরতে পারি? পৃথিবীতে আমাদের সবচেয়ে আপনজন বাবা মা। বাবা মা আমাদের বহু কষ্টে, যত্নে, নানান ত্যাগস্বীকার করে আমাদের বড় করেন, মানুষ করে তোলেন। কিন্তু বিনিময়ে আমাদের কাছে কিছু প্রত্যাশা করেন না। বাবা মায়ের কোন স্বার্থ থাকে না। উনারা শুধু প্রত্যাশা করেন যাতে আমরা ভালো থাকি, মানুষ হই। কিন্তু যদি এমন হয়, যদি কখনো জানতে পারেন যে আপনার মা আপনাকে সারাজীবন এত কষ্ট করে বড় করে তুলছে আসলে আপনার শরীরের একটা মূল্যবান অঙ্গ নেবার জন্য, তখন? কি চমকে উঠেছেন? একচক্ষু হরিণীরা বইটা এমনই চমকময় ঘটনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। লেখক পরিচিতিঃ সাধারণত খুব বেশি জনপ্রিয় লেখকদের ক্ষেত্রে পরিচিতির লেখক পরিচিতি দেওয়ার খুব একটা দরকার পরে না। যেমনঃ হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল। এনাদের মোটামুটি সবাই চিনেন। কিন্তু তরুণ লেখকদের হয়ত অনেকেই চেনে না। যারফলে তারা ভালো লিখলেও মানুষ চক্ষু এড়িয়ে যায় সেগুলো। রাসেল রায়হান। জন্ম ০৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৮। পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। কবিতার বই তিনটি। বিব্রত ময়ূর পাণ্ডুলিপির জন্য মার্কিন গবেষক অধ্যাপক ক্লিন্টন বি সিলি ও প্রথমা প্রকাশনের যৌথ উদ্যোগে প্রবর্তিত 'জীবনানন্দ দাশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০১৫' অর্জন করেন। কাহিনী সংক্ষেপঃ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের বাউণ্ডুলে যুবক মুকুল। সে বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ঢাকায় থাকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। তার বাবার সমস্যার কারণে মুকুলের মা তাকে বহু কষ্টে বড় করে তোলে। মুকুলের যত্নের যেন কোন ভাটা না পরে সেজন্য আর কোন সন্তানও নেননি তার মা। পরিবারের শোচনীয় অবস্থার কারণে মুকুল পড়াশুনার পাশাপাশি হন্যে হয়ে চাকুরী খোঁজে। এছাড়া মুকুলের আরো একটা পরিচয় আছে, সে একজন কবি। বিভিন্ন পত্রিকায় টুকটাক লেখালেখিও করে। একদিন বাড়িতে গেলে মুকুলের বাবা তাকে পালিয়ে যেতে বলে, বাড়িতে যেতে নিষেধ করে, এমনকি তাদের সাথে কোন যোগাযোগও যেন না রাখে। মুকুল জানতে পারে এক নির্মম সত্য! যেটা তার এতবছরের বিশ্বাস, ভরসাকে নাড়িয়ে দেয়। তারপর থেকে শুরু হয় মুকুলের পালিয়ে বেড়ানো জীবন। মুকুল কি মুখোমুখি হতে পারবে সেই ভয়ঙ্কর সত্যের? আর কখনো ফিরে যাবে তার বাবা মায়ের কাছে? খুব ছোটবেলায় পারুলকে তার শ্বশুর কুড়িয়ে পেয়েছিলো, কোথা থেকে এসেছে সে, তার বাবা মা কোথায় কিছুই বলতে পারলো না পারুল। বুক দিয়ে আগলে পারুলকে মানুষ করেছে তার শ্বশুর। বড় হলে বিয়ে দিয়েছে নিজের অন্ধ ছেলের সাথে। বাসর রাতে অন্ধ মাহমুদ আলী হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলো, যদি আমি দেখতে পেতাম, তোমার এই কলঙ্কটুকুকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম। সেই মুহূর্তেই পারুল মাহমুদ আলীর প্রেমে পরে যায়। আর প্রতিজ্ঞা করে তার সন্তান হলে সেই সম্তানের একটা চোখ সে মাহমুদ আলীকে দেবে। যে চোখ দিয়ে মাহমুদ আলী পারুলকে দেখতে পাবে। শুধুমাত্র স্বামীর কাছে নিজেকে উপস্থাপন করার জন্যই পারুল এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো? কোন মাকে কি পারে নিজের ছেলের চোখ তুলে নিতে? নাকি এর পিছনে আছে আরো অনেক কারণ, রহস্য?! শহরের পরিচিত এককোণে চলতে থাকে মুকুলের পলাতক জীবন। সে জীবনে হঠাৎ আবির্ভাব ঘটে আহির নামের এক সাদামাটা মেয়ের। এলোমেলো-রুক্ষ জীবনে আহির তার কাছে আসে এক কুয়ো জলের মতো। যে জলের ঝাপটার কারণে অন্য এক রহস্যময়ী কন্যা মুনিয়ার ডাক উপেক্ষা করতে চায় মুকুল। সত্যি কি তাই? নাকি আহিরের মধ্যে লুকিয়ে থাকে মুনিয়ার প্রতিচ্ছবি? সেই অবগাহন আর উপেক্ষার মাঝখানে শহরের এক পার্কে মুকুলের সাথে হঠাৎ দেখা যায় নূরীর। যে সাক্ষাত মোটেও কাঙ্ক্ষিত ছিলো না কারোর জন্যই। কিন্তু কেন? এসব নানান প্রশ্ন, ঘটনা জটিলতার ভীড়ে অতীত-বর্তমান নিয়ে সমান্তরালতাভাবে এগিয়ে গিয়েছে এই কাহিনী। পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ এই বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র মুকুল হলেও প্রকৃতপক্ষে মুখ্য চরিত্র হলো পারুল, আহির, নূরী ও মুনিয়া নামের নম্র হরিণীরা। একচক্ষু হরিণীরা তাদেরও গল্প। কেন্দ্রীয় চরিত্রের ক্ষেত্রে পুরুষ দেখা গেলেও মূলত নারী চরিত্ররা এই বইয়ে প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। সহজসরল ভাষায়, ছোট পরিসরে এগিয়ে গিয়েছে এই বইয়ের পুরো কাহিনী। গল্পের প্রয়োজনে কখনো বর্তমান কখনো অতীত উঠে এসেছে। এই বইয়ে অতীত বর্তমান কোনটার চেয়ে কোনটার তাৎপর্য, ঘটনা কম ছিল না। পুরো বইয়ে যতটা জুড়ে বর্তমান কাহিনী ছিল, অতীতও ঠিক ততটা জুড়েই ছিলো। একইসাথে পাশাপাশি বর্তমান ও অতীত সমান্তরালভাবে বলা, সুন্দর-সহজাতভাবে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা মোটেও সহজ নয়। অনেকসময় তালগোল পাকিয়ে ফেলার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু লেখক এই বিষয়টি খুবই সুন্দরভাবে টেনে নিয়ে গিয়েছেন। কোথাও বুঝতে এতটুকু অসুবিধা হয়নি। এই বইয়ের মাধ্যমে যাপিত জীবনের নানান ঘাত, প্রতিঘাত, জীবন সংগ্রাম উঠে এসেছে। উঠে এসেছে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের নানান সংগ্রাম কাহিনী। সবকিছু পাওয়ার পরেও হারিয়ে আবার শূন্য থেকে লড়াই করার প্রত্যয়। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের টানাপোড়েন, ভালোবাসা, আকাঙ্ক্ষা, অপূর্ণতা-পূর্ণতার মনস্ত্বাত্তিক দ্বন্দ্ব সবকিছুই উপন্যাসটিতে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। লেখক সাধারণত কবিতা লিখেন। এটা খুব সম্ভবত উনার প্রথম উপন্যাস। সেক্ষেত্রে বলা যায় উনি অনেকটাই সফল। লেখকের লেখালেখির শুরুটা কবিতা দিয়ে হলেও উপন্যাসের লেখার ক্ষেত্রেও তিনি নিজের সবটুকু দিতে পেরেছেন। একটানা পড়ে শেষ করার মতন একটা বই। মাত্র ১১২পৃষ্ঠার বইয়ের পরতে পরতে নানান ঘটনার মাধ্যমে রয়েছে চমকের পর চমক। পড়তে পড়তে প্রতিটা চরিত্রের প্রতি একধরণের মায়া সৃষ্টি হয়ে যায়। ভালো না লাগাঃ বইটার সবকিছুই যে ভালো লেগেছে তা না। লেখক চেষ্টা করলে আরো ভালো করতে পারতো। বইয়ে খানিকটা এডাল্ট কনটেন্ট ছিল, সেটা না থাকলে আমার দুই বছরের ছোট বোনকে বইটা পড়তে দিতে পারতাম। এডাল্ট কনটেন্ট এর পক্ষে আমি না, যদিও কাহিনীর প্রয়োজনে চলে আসে। তবুও আরেকটু রাখঢাক হলে ভালো হত। কাহিনী আরেকটু বিস্তৃতি ও খোলাসা করার দরকার ছিলো। এসকল বিষয় ছাড়া বইটা মোটামুটি সুপাঠ্য। এইযে ভালো লাগা, না লাগা এগুলো সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত মতামত। অন্যদের ক্ষেত্রে এগুলো ভিন্নও হতে পারে। প্রচ্ছদ ও নামকরণে সার্থকতাঃ প্রচ্ছদ ভিতরের কাহিনীর খানিক আভাস, একটা বইয়ের সৌন্দর্য বহন করে। এক্ষেত্রে প্রচ্ছদ সাদৃশ্যপূর্ণ। আর ধ্রুব এষের প্রচ্ছদ নিয়ে তো কোন কথা নেই। প্রতিটি গল্প, উপন্যাস, কবিতায় নামকরণ অতি গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কোন উপন্যাস, গল্প, কবিতা না পড়লেও সেটির নামের মাধ্যমে বিষয়বস্তু সম্পর্কে আমরা একটু হলেও ধারণা করতে পারি। "একচক্ষু হরিণীরা" নামটি শুনে চট করে বই সম্পর্কে ধারণা না পেলেও, বইটি পড়ার পর আপনার মনে হবে কাহিনীর এই নামটির যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
এক বাউন্ডুলে যুবক মুকুলের গল্প, গর্ভে থাকতেই যার মা তার একটি চোখ নেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। আপাত-সামান্য লোভটুকুকে কেন্দ্র করে সন্তানকে বড় করতে থাকেন তিনি। বড় হয়ে একথা জানার পর মুকুল পালিয়ে যায়। শহরের পরিচিত এক কোণে চলতে থাকে তার পলাতক জীবন। সে জীবনে অকস্মাৎ পরিচয় ঘটে আহির নামে এক সাদামাটা নারীর সাথে। এলোমেলো-রুক্ষ জীবনে আহির তার কাছে আসে এক কুয়ো জলের মতো। এই জলের ঝাপটায় রহস্যময়ী মুনিয়ার ডাক উপেক্ষা করতে চায় মুকুল। এই অবগাহন আর উপেক্ষার মাঝখানে শহরের এক পার্কে তার সাথে আচমকা সাক্ষাৎ ঘটে নূরীর, যে সাক্ষাৎ মোটেও কাঙ্ক্ষিত ছিল না দুজনের কারুরই। মুকুল কি শেষ পর্যন্ত পারে মুনিয়ার ডাক উপেক্ষা করতে? আহিরের কোমল আশ্রয়ই তাকে কতটা লুকিয়ে রাখতে পারে হৃদয় আর বাইরের পৃথিবীর ঝাপটা থেকে? শেষ পর্যন্ত কি নিজের একটি চোখ দিতে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল মুকুল, পারুলের কাছে? তার পিতার কাছে? অতীত এবং বর্তমান সমান্তরালভাবে এগিয়ে যেতে থাকে একচক্ষু হরিণীরা উপন্যাসে। মুকুল এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেও মুখ্য চরিত্র প্রকৃতপক্ষে পারুল, আহির, মুনিয়া আর নূরী নামের নম্র হরিণীরা। একচক্ষু হরিণীরা তাদেরও গল্প।''
Was this review helpful to you?
or
বিশ্লেষণ:প্রসঙ্গ একচক্ষু হরিণীরা ধরণ:উপন্যাস (মনস্ত্বাত্তিক) লেখক:রাসেল রায়হান মুকুল নামের একজন বাউন্ডুলের গল্প।তাঁর পিছুটান বিহীন জীবনের গল্প।আহিরের প্রতি তাঁর না বলা ভালোবাসার গল্প।চম্পা থেকে পারুল হওয়া তাঁর মায়ের গল্প,অন্ধ বাবা মাহমুদ আলী,দাদা সুবিদ আলীর গল্প।নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের টানাপোড়েন,প্রেম-ভালোবাসা,আরেকটু ভালোথাকার উচ্চাকাঙ্ক্ষা(!),অপূর্ণতা-পূর্ণতার মনস্ত্বাত্তিক দ্বন্দ্ব সবকিছুই উপন্যাসটিতে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।পারুল তাঁর ছেলে মুকুলের একটি চোখ নিতে চায় তাঁর স্বামী অর্থাৎ মুকুলের বাবা মাহমুদ আলীকে দিবে বলে।এবং এ ঘটনাকে উপজীব্য করেই এগিয়ে যেতে থাকে উপন্যাসটি।মুকুল কি তাঁর চোখ তাঁর বাবাকে দান করবে?জানতে হলে তো অবশ্যই পড়তে হবে উপন্যাসটি। প্রতিক্রিয়া:খুব কাছের কারো লেখা পড়তে গেলে সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখোমুখি হই তা হলো,"এটা (চরিত্র) উনি নন তো,ওটা আমি নই তো!"আলহামদুলিল্লাহ,লেখক স্বার্থকতার সাথে সে ধাপ অতিক্রম করেছেন।উপন্যাসটি পড়তে পড়তে কখনো আপনি মুকুলকে বোধ করবেন,কখনো আহিরের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হবে,কখনো মাহমুদ আলীর প্রতি শ্রদ্ধা জাগবে,কখনো পারুলের প্রতি জাগবে করুণা।প্রতিটা মানুষের জীবন একেকটা গল্পের অনুলিপি।উপন্যাসটির সবচেয়ে বিশেষ যে দিকটি আমাকে আকৃষ্ট করেছে তা হলো প্রতিটি চরিত্রের নিখুঁত এবং পরিপূর্ন বিশ্লেষণ।উপন্যাসটির ভাষা সাধারণ,কখন যে এটি আপনার মনোজগতের একটি অংশ হয়ে যাবে বুঝতেই পারবেন না।আমি নিয়মিত পাঠক নই,কিন্তু এ বইটি হয়তো আমাকে নিয়মিত পাঠক হিসেবে তৈরি করে দিবে।তো আপনাকে কেন নয়!