User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_পাঠক_সমাগম_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_৩ মাসঃআগষ্ট পর্বঃ০৩ সপ্তাহঃতৃয় বইয়ের নামঃ" দত্তা" লেখকের নামঃশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ধরণঃ আবেগপ্রবণ উপন্যাস প্রকাশকঃ আব্দুল আজিজ রিয়া প্রকাশনী প্রথম প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর,১৯১৮ প্রচ্ছদঃ মশিউর রহমান পৃষ্ঠাঃ 126 মুদ্রিত মূল্যঃ 150টাকা(বইয়ের পাতায়) ISBN: 978-984-9008-51-4 #লেখক পরিচিতিঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ( Sharat Chandra Chattopadhyay)হলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি বিভাগের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। পাঁচ ভাই- বোনের মধ্যে শরৎচন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর ছদ্মনাম অনিলাদেবী। শরৎচন্দ্রের ডাকনাম ছিল ন্যাঁড়া।তিনি সাহিত্যিকতথা তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক সহায়তায় ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিভাগে এনট্রান্স পরীক্ষা পাস করেন এবং এ কলেজেই ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু দারিদ্রের কারণে পরীক্ষা দিতে পারেনি।কলেজ ত্যাগ করার পর শরৎচন্দ্র ভাগলপুর শহরের আদমপুর ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে খেলাধুলো ওঅভিনয় করে সময় কাটাতে শুরু করেন। এই সময় প্রতিবেশী বিভূতিভূষণ ভট্টের বাড়িতে একটি সাহিত্য সভার আয়োজন করেছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি বড়দিদি , 'দেবদাস' , চন্দ্রনাথ , শুভদা ইত্যাদি উপন্যাসএবং 'অনুপমার প্রেম' ,আলো ও ছায়া , 'বোঝা' , হরিচরণ' ইত্যাদি গল্প রচনা করেন।এরপর তিনি অনেক গল্প, উপন্যাস, নাটক,প্রবন্ধ রচনা করে আমাদের সাহিত্য ভান্ডার পূর্ণ করেছেন। তার সাহিত্যকর্মের জন্যে পাঠকের কাছে তিনি 'অপরাজেয় কথাশিল্পী' নামে কথিত হন। সাহিত্যকর্মে অসাধারণ অবদানের জন্য শরৎচন্দ্র কুন্তলীন পুরস্কার (১৯০৩), জগত্তারিণী স্বর্ণপদক (১৯২৩), বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্যপদ (১৯৩৪) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট উপাধি (১৯৩৬) লাভ করেন। ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। "দত্তা "শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৯১৮ সালে রচনা করেন।১৯৩৪ সালে প্রকাশিত হয় দত্তার নাট্যরূপ "বিজয়া" নামে। #নামকরণ : উপন্যাসটি দত্তা নামকে কেন্দ্র করে একটা একাকী সংগ্রামী মেয়ের জীবনের ধারা, পিতৃভক্তি,তৎকালের সমাজ ব্যবস্থার নিয়ম,নীতি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রুপ দান করে কাহিনী ফুটে উঠেছে।ছোট শব্দটিকে কেন্দ্র করে, লেখক উপন্যাসে এতো সুন্দর কাহিনী বর্ণনা করেছেন যা সত্যিই কল্পনার বাইরে।প্রতিটি চরিত্রে, এবং প্রধান চরিত্রের পরিনতি কাহিনী জুড়ে একরকম উত্তেজিত অাগ্রহ রেখেছে এবং উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত গিয়ে লেখক দত্তা নামের পূর্ণতা এনেছেন।তাই উপন্যাসের দত্তা নামকরণ যথার্থ। #উপন্যাসের চরিত্র: ★জগদীশ মুখুয্যে ★বনমালী ★রাসবিহারী ★বিজয়া - বনমালীর মেয়ে ★নরেন্দ্র মুখুয্যে - জগদীশের ছেলে ★বিলাসবিহারী - রাসবিহারীর ছেলে ★দয়ালচন্দ্র - বৃদ্ধ আচার্য ★দয়ালচন্দ্রের স্ত্রী ★নলিনী - দয়ালচন্দ্রের ভাগনী ★দারোয়ান কানাই সিং ★পরেশ - ভৃত্য ★পরেশের মা - ভৃত্য ★কালীপদ - ভৃত্য ★বৃদ্ধ নায়েব ★বৃদ্ধ গোমস্তা ★ভট্টাচার্য মশাই ★বিজয়ার পিসি #বুক_রিভিউ : "বিজয়া"প্রধান চরিত্র ,তাকে কেন্দ্র করে সব কাহিনী। বিজয়ার পিতা বনমালী বাবু বিজয়ার বিয়ের বাগ দান করেন তার বন্ধু জগদীশ মুখুয্যের ছেলে নরেন্দ্র মুখুয্যের সাথে।কিন্তু,সে কথা বিজয়া এবং নরেনকে না জানিয়েই তারা দুজনে মৃত্যু বরণ করেন।এই সত্য আরেকজন জানত তিনি হলেন রাসবিহারী। তিনি কি তাহলে জানিয়ে দেন নাকি লুকিয়ে রাখেন? জগদীশ মুখুয্যে, বনমালী আর রাসবিহারী তিন বন্ধুর অনেক ভাল সম্পর্ক,একই স্কুলে পড়াশুনা করেন,একসাথে যাতায়াত। এদের মধ্যে বনমালী বাবু সেকালের বড় জমিদারের ছেলে,রাসবিহারীর বাবার অবস্থা সচ্ছল ছিল তবুও তারা দরিদ্র ব্রাহ্মণের ছেলে জগদীশ মুখুয্যের সাথে পায়ে হেঁটে স্কুলে যেত,এখানে বুন্ধত্বের প্রতি গভীর ভালবাসা লেখক তুলে ধরেছেন। তারা শপথ করেন, কোনদিনও আলাদা হবে না , এমনকি বিয়েও করবে না !তারা উকিল হয়ে টাকা রোজগার করে একটা সিন্দুকে জমা করবে, এবং তা দিয়েই দেশের কাজ করবে। সে সত্য রক্ষা তাদের আর হয় না....! বাস্তবে অনেক ঘটনাই টিকে রাখা অনেক কঠিন,তারই ইঙ্গিত লেখক দিয়েছেন। তারা তিনজনেই বিয়ে করে! বনমালী আর রাসবিহারী ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহন করে।ফলে, সমাজে তাদের উপর অনেক অত্যাচার শুরু হয় তাই বনমালী কলকাতায় চলে আসে,রাসবিহারী সহ্য করে গ্রামেই থাকে। জগদীশ হিন্দুই থাকেন কিন্তু, এলাহাবাদে চলে আসে এবং উকিল হয়ে জীবন নির্বাহ করে। তারপরও, তাদের মিল থেকে যায়। বনমালীর মেয়ে হলে পুত্রবধূ করবে বলে প্রথমে চিঠি দেয় রাসবিহারী পরে জগদীশ। কিন্তু, বনমালী বাবু রাসবিহারীকে পছন্দ করতেন না,তিনি জগদীশকে পছন্দ করতেন। তাই বনমালী জগদীশকে কথা দেন, তার মেয়ে বিজয়াকে তার পুত্র নরেনের সাথে বিয়ে দিবেন। কিন্তু,কালের অচিরে সে কথা কি রক্ষা হয়? নাকি হারিয়ে যায়? কাহিনীর মধ্যে অনেক মোড় ঘুরিয়েছেন লেখক, এতে পাঠকের পড়ার উত্তেজিত আগ্রহের সৃষ্টি করেছেন,যা চমক সৃষ্টি করে! বনমালী বাবু দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে মারা যান বিজয়াকে রেখে তবে, রাসবিহারী তাদের খোঁজ রাখতো।রাসবিহারীর একমাত্র ইচ্ছা, বিলাসের সাথে বিজয়ার বিবাহ দিয়ে বনমালীর সমস্ত সম্পদ নিজের করে ইচ্ছা পুরণ করা। রাসবিহারী এত বড় একটা সত্য লুকিয়ে রেখে নিজের ছেলের সাথে বিজয়ার বিয়ে দিয়ে নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে কি পারবেন? রাসবিহারীর ছেলে বিলাস বনমালী বাবুর বাড়িতে যাতায়াত করত।বিজয়াও বিলাসকে পছন্দ করতো।বনমালী বাবু মারা যাওয়ার পর বিলাস বিজয়ার দায়িত্ব নেয়। জগদীশ মুখুয্যে বনমালী বাবুর কাছে তার বাড়িটা বন্ধক রেখে অনেক টাকা ধার নেয়,কিন্তু সেই টাকা শোধ করতে পারে না,অনেক ঋণের দায়ে জুয়াড়ি হয়,মদ্য পান করে,নানা রকম অপবাদ নিয়েই তিনি মারা যায়। জগদীশের ছেলে নরেন সে বিলেতে ডাক্তারি পড়ে.........,এতো ঋণের মধ্যে জগদীশ কিভাবে তার ছেলেকে বিলেতে ডাক্তারি পড়াতে পারল?সেটা সম্ভব হলো কি করে? রাসবিহারী তার ছেলে বিলাস বিজয়াকে গ্রামে নিয়ে আসে,তাকে জমিদারী আসনে বসান। বিজয়ার স্বপ্ন ব্রাহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেশের হতভাগ্য মূর্খ লোকগুলোকে ধর্মশিক্ষা দেওয়া। বিলাস বিজয়াকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেন যার কারনে, বিলাসকে বিয়ে করতে বিজয়ার কোন আপত্তি নাই! তবে কেন বিজয়া আবার নরেনের প্রতি দূুর্বল হয়ে যান কি কারনে? রাসবিহারী সুযোগকে কাজে লাগায়, বিজয়ার নাম করে জগদীশের বাড়িটা ঋণের দায়ে দখলে ধরতে চান এবং সেখানে ব্রাহ্ম ধর্ম প্রতিষ্ঠা করার জন্য মন্দির তৈরী করতে চান। তবে,বিজয়া নরেনকে শেষ একটা সুযোগ দিতে চান তাহলে নরেন তার বাড়ি রক্ষা করতে পারে? নাকি পারে না? এখানে,নরেনকে নিয়ে লেখক অন্যরকম কাহিনী জুড়েছেন,যা পাঠক হিসাবে সকলকে রহস্যময় এবং আবেগময় করে তুলবেন! এখান থেকে শুরু হয় আবেগী প্রেমের কাহিনী।ভাল লাগা নাকি প্রেমের? নরেন ছিল হিন্দু এবং সে খুবই ধর্মপরায়ণ,উদাস মনের, ঘরবাড়ি হারা এক অসহায় শিক্ষিত ছেলে,মাত্র কয়েকদিন পর বিদেশে পাড়ি জমাবে। তবে কিভাবে নরেনকে ঘিরে বিজয়ার মনে আরেক জগত সৃষ্টি হয়? বিলাস, রাসবিহারী বিজয়ার ব্রাহ্ম সমাজ গঠন এবং সমাজের দরিদ্র্য মানুষের দুর্দশা নিবারণ স্বপ্ন পূরণ করার চেষ্টায় থাকে তারা কি সফল হতে পারে? বিলাস আর বিজয়া দুইজনে ব্রাহ্ম সমাজের এবং রাসবিহারীর ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের বিয়ের বন্দোবস্ত হয়, যথাসময়ে কার্ড ছাপানো হয়,ব্রাহ্ম নিয়মে বিবাহ রেজিস্টেশন কাগজে বিজয়া স্বাক্ষরও করে দেয়।তাহলে কি রাসবিহারী তার ইচ্ছা পূরণে সফল হয়? তারপরও সামান্য কয়দিনে নরেন আর বিজয়া কখন যে দুইজন দুইজনের মন চুরি করেছেন সেটা শেষ সময়ে এসে দুজনে বুঝতে পারে,বিজয়া অাবেগে কান্নায় ভেঙ্গে পরে কিন্তু,সে বিলাসের সাথে ব্রাহ্ম বিবাহ রেজিস্টেশনে স্বাক্ষর দিয়ে দেয় তার কি হবে? ছেলে বেলার প্রতিজ্ঞার মত এই প্রতিজ্ঞাও জগদীশ মুখুয্যে ও বনমালী বাবুর কি অচিরে শেষ হয়ে যায়? নাকি রক্ষা হয়? এসব জানতে হলে বইটি অবশ্যই শেষ পযর্ন্ত পড়তে হবে,পড়লে অবশ্যই কারো খারাপ লাগবে না! #ব্যক্তিগত_মন্তব্য : বইটা অনেকদিন থেকেই আমার কাছে ছিল,পড়া হয়নি! কিন্তু,যখন পড়া শুরু করলাম বুঝতে পারলাম বইটা কতটা অসাধারন! সম্পূর্ণ কাহিনী, বর্ণনায় রসসমৃদ্ধ, প্রেম আলাপ,অাবেগী অনুভুতি,অন্যায়ের প্রতিবাদ সবই পরিপূর্ন। আসলে বইটা না পড়লে মর্ম বুঝাই সম্ভব না। বইটা পড়ার সময় কাহিনীর মাঝে ডুবে ছিলাম,প্রতিটি চরিত্রের সাথে বেদনার জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম,কল্পনায় অনুভব করেছিলাম অসাধারন লেগেছে বইটা আমার কাছে। এখানে লেখক তৎকালের সমাজ ব্যবস্থা,জীবনযাপন, কুসংস্কার, ব্রাহ্ম সমাজের অবস্থা,হিন্দু সমাজের অনেক কিছুর চিত্র সুন্দর বর্ণনা করেছে। সমাজে অনেক ধরনের মানুষ থাকে, কতকগুলো মানুষ মুখোশ পড়ে ভাল সেজে থাকে এবং মিষ্টি কথায় সমাজের ভাল অসহায় মানুষদের কতটা মানসিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ভাবে নিরবে অত্যাচার করতে পারে তার চিত্রও সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। মানুষের লোলুপ দৃষ্টি তাকে কতটা নিচে নামাতে পারে তার সুন্দর বর্ণনা করেছেন। সুন্দর মানুষ গঠনে উচ্চতর শিক্ষা,পিতৃধর্ম শিক্ষা দরকার হয়,সেটাও বর্ণনা করেছেন। শরৎচন্দ্রের বই মানেই রসসমৃদ্ধ রচনা সম্ভার! পল্লী সমাজের প্রক্ষাপট। দত্তা উপন্যাসও তার ব্যাতিক্রম নয় তার সবকিছু মিলে, আবেগময় প্রেমের গল্পের মধ্যে এটি একটি অন্যতম।সমস্ত উপন্যাসের কাহিনী এমনভাবে রচনা করেছেন,যা সম্পূর্ণ শেষ না করলে বুঝাই যায় না,কি হবে? বইটা যারা পড়েন নাই তাড়াতাড়ি পড়ে নিন! অবশ্যই খারাপ লাগবে না নিশ্চিত! #উপন্যাসটি_থেকে_প্রিয়_উদ্ধৃতি : ★ দ্বিধা,দুর্বলতা-- পাপ! শুধু পাপ নয়,মহাপাপ। ★ বিজয়া মনে মনে বুঝিল, ইহা সৌন্দর্যের পদমূলে অকপট ভক্তের স্বার্থগন্ধহীন নিষ্কলুষ স্তোত্র অজ্ঞাতসারে উচ্ছ্বসিত হইয়াছে; ★ প্রবল জ্বর উগ্র নেশার মত অনেক আশ্চর্য কথা মানুষের ভিতর হইতে টানিয়া আনে; কিন্তু সুস্থ অবস্থায় তাহার অস্তিত্ব, না মুখে না অন্তরে কোথাও হয়ত থাকে না। ★ একটা সকাম রুপ-তৃষ্ণা, যাকে ভালবাসা বলে মানুষ ভুল করে, সেই কি ব্রাহ্ম -কুমার-কুমারী বিবাহের চরম লক্ষ্য,তা কিছুতেই নয়,কিছুতেই হতে পারে না।এই বিরাট উদ্দেশ্য সত্য! মুক্তি! পরব্রহ্মপদে যুগ্ম আত্মার একান্ত আত্মসমর্পণ! #ব্যক্তিগত_রেটিং : ৪.৫/৫ রিভিউ লিখেছেন: দীপিকা রায়