User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
"ইশ্বর তোমার কাছে এই একটা অনুরোধ করি, এরপর পৃথিবীতে যদি সবকিছু দাও, মানুষ দিও না, আর যদিও-বা মানুষ দাও, কোনো ধর্ম দিও না"। কবিতা হচ্ছে ছন্দ, দোলা এবং স্পন্দন নিয়ে রচিত একগুচ্ছ শব্দমালা। অথবা, কবিতা বা পদ্য শব্দের ছন্দোময় বিন্যাস যা একজন কবির আবেগ, অনুভূতি, উপলব্ধি চিন্তাকে সংক্ষেপে এবং উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্পের সাহায্যে উদ্ভাসিত করে আর তা শব্দের ছন্দায়িত ব্যবহারে সুমধুর শ্রুতিযোগ্যতা যুক্ত করে। "একটা পাগল ছিলো যে কবিতা আর গান গিলতো। হ্যা সত্যিই তাকে খাবারের কথা বলার বদলে কবিতা আর গান এর কথা বললেই বরংচ বেশী খুশী হতো। চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে জ্বলন্ত সিগারেট দুই আঙ্গুলের ভাজে রেখে একনাগাড়ে কবিতা আবৃত্তি করাটা যেন তার নিত্যপ্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা ছিলো। একদিন তার গান এলো। মানুষের মনে কবিতা আর গানগুলো দাগ কেটে নিলো। তারও অনেকদিন পরে পাগলটা একদিন রাগে অভিমানে চলে গেলো দূরদেশ। রেখে গেলো স্মৃতি আর মায়া। সেই মায়াই ফিরে এলো 'মোহ নয় মুগ্ধতা আছে' হয়ে"। কবিতা। তিনটি অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ অথচ এর বিশালতা আর গভীরতা অকল্পনীয়। হ্যা সত্যিকার অর্থেই অকল্পনীয়। জন্ম দিয়ে একজন মানুষের জীবন শুরু হয়। শৈশব কাটিয়ে কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য আর সবশেষে মৃত্যু। এর মাঝে জীবনে হাসি, কান্না, সুখ, দুঃখ, আবেগ, ভালোবাসা, অভিমান, ব্যর্থতা, সফলতা আসে। এতকিছুর পর মৃত্যু দিয়ে থেমে যায় জীবন রয়ে যায় কিছু স্মৃতি, কিছু কথা আর ভালোবাসাটা। এই জীবনের প্রত্যেকটি উপাদান আর উপাত্ত নিয়েই কবিতা। একটি জীবনের আলোকে সামগ্রিক জীবন নিয়ে লেখা হয় কবিতা। একটি মানুষের আবেগ ফুটিয়ে সামগ্রিক আবেগের মূল্য বোঝায় কবিতা। কবিতা হাসায়, কবিতা কাদায়। কবিতা আনন্দ দেয়, কবিতা বেদনা শেখায়। তাই একজন কবির কাছে তার কবিতা নিজের সন্তানের মতো, নিজের সহধর্মিণীর মতো যে তাকে ভালোবেসে পাশে থাকে দুঃখের সময়েও। "সবার ভেতরেই এক টুকরো সবুজ থাকা দরকার"। 'মোহ নয় মুগ্ধতা আছে'। গালিব আজিম এর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। মোট ৪৮ টি কাব্য নিয়ে এই কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত যার মধ্যে ২টি গান আর ২ টি সিরিজ আছে। উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলোর মধ্যে - ফেলানি, অন্ধ তীরন্দাজ, খুলে দ্যাখো নেকড়ের বুক, এক টুকরো সবুজ, মায়া সিরিজ, গান : দেয়ালিকা আর বিদায় ব্যালেরিনা, ব্যালেরিনা সিরিজ, আমিই বাংলাদেশী, জয় গোস্বামী পড়ছিলাম, লাভ অফ মাই লাইফ, ইশ্বরের কাছে, বিপ্লবের মুখোমুখি, বৃষ্টির মুখোমুখি, অভিমানে রক্তক্ষরণ, নষ্ট সময়ে ভেসে যাচ্ছে মানুষ, লোকাল প্রেম, অবাধ্য কিশোরী এবং আশীর্বাদ। "একজন্মে কতবার মরতে পারি বলো! কতবার মরলে পরে তারে ভুলে যাওয়া যায়"..? প্রেমের ভেতরে থাকে প্রেম। ভালোবাসার গভীরে ভালোবাসা। এদের মধ্যে শূন্য স্থানে থাকে মায়া, ছায়া, আবেগ, অনুভূতি যা ধীরেধীরে পূর্ণতা পায়। নতুন বোধ এর জন্ম হয়। পুরাতন চেতনা নতুনরূপে শাণিত হয়। এতকিছুর পরও কিছু কথা মনের গহীনে ক্ষতের সৃষ্টি করে। অভিমানে কান্নার প্রলাপ বকে। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত সুখের আশায় মেঘের উচ্চতায় ভেসে বেড়ানোর স্বপ্ন বোনে। এই না বলা মান-অভিমান,সুখ-দুঃখ তথাপি কথাগুলো সর্বদা কথার আড়ালে পড়ে থেকে ধুলোর আস্তরণে মাটির সাথে মিশে যায়। 'মোহ নয় মুগ্ধতা আছে' ঠিক এমন সব না বলা কথাগুলো দিয়েই সাজানো একটি কাব্যগ্রন্থ। কবি ফুটিয়ে তুলেছেন না বলা কথাগুলো যা সর্বদা মনের অন্তরালেই নিহিত থাকে। "পুরুষ হয়ে জন্মানোর মধ্যে এটা অভিশাপ আবার এটাই শক্তি যে তারা কাঁদার ক্ষমতা রাখে না! শিশুকালের পর না কাঁদতে পারার বন্ধ্যাত্ব সে কতটা ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক, যে পুরুষ কেবল সেই বোঝে"। শুরুটা খুব সূক্ষ্মভাবে আপনার মনে দাগ কেটে আপনাকে বিষাদগ্রস্ত করে তুলবে তা বুঝবেন আরো কিছুক্ষণ পরে। কেননা, ফেলানি নামের কবিতাতে উঠে এসেছে কবির ভেতরে থাকা নির্লজ্জ জনগণের মতো স্বাভাবিকতা নয় বরংচ হাহাকার আর এক অক্ষম বর্ধিত দীর্ঘশ্বাস। তারপরই পাবেন ছোট্টবেলায় কাটানো ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যাওয়া বৈশাখের বর্ণনা। আপনি যখন শৈশবের স্মৃতিতে রোমন্থিক হয়ে উঠবেন একটা বিষাদের ছায়া হয়ে নেমে আসবে আন্তরিক মধ্যরাত। ভগবান রাজ-আসামি আর খুলে দ্যাখো নেকড়ের বুক এই দুটো কবিতায় আক্ষেপ আর ক্ষোভের সাথে পাবেন জীবিত মানুষের মৃত সত্ত্বার চিৎকার। এরপর এক টুকরো সবুজে পাওয়া যাবে ভেতরের সবুজাভ। সবুজের প্রত্যয়ে ভেসে ভেসে মায়া সিরিজে এসে থামতে হবে। মায়া ২ এ এসে নিজের বুকের ক্ষতটার কথা পাবেন ঠিক এইভাবে কবির কথায়, "গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের দুইশ সাতাত্তর মাইলের শুকানো জলের পথ, আঠারশ' মিটার গভীর ঐ জায়ান্ট গিরিখাত আমাকে শুধু বারবার টেনেছে তার বুকের ক্ষত দেখাতে! আমি টের পেয়েছি আমার বুকে এর থেকে প্রশস্ত আর গভীর নিঃস্ব এক গিরিখাত রয়ে গেছে। যা দুই বিলিয়ন বছরের চেয়ে পুরাতন ঐ কোলারাডো নদীর অববাহিকার চেয়ে পুরাতন আর নিঃস্ব"। একটা ঘোরের মধ্যে মায়ার হাতে হাত রেখে চলতে থাকবেন মুগ্ধতায় কিন্তু এক প্রবল আর তীব্র বিষণ্ণতা আপনাকে ছুঁয়ে যাবে মায়ার মুখের একটিমাত্র পঙক্তিতে, "প্রিয় মৃত্যু, একটা হাগ দেবে আমায়..? ডিপ হাগ"..? মায়া ৯ এ এসে খুব বেশী বিষাদগ্রস্ততা আপনায় ঝাপটে ধরবে। মনের গহীনে কাঁদাতে বাধ্য করবে। মায়া শেষে পাবেন কবির নিজস্ব ব্যান্ড 'থিয়েট্রিক্যাল' এর 'দেয়ালিকা' এবং 'বিদায় ব্যালেরিনা' গান দুটি। এরপরই ব্যালেরিনা সিরিজ সহ অন্যান্য কবিতায় মুগ্ধ হয়ে এগিয়ে যাবেন শেষের দিকে। 'অভিমানে রক্তক্ষরণ' কিংবা 'নষ্ট সময়ে ভেসে যাচ্ছে মানুষ' আপনার মস্তিষ্কে ভাবনার খোরাক জোগাবে। কবির আশীর্বাদে বইয়ের পাতা শেষ হবে। কিন্তু, শেষ বলে কি আসলেই কিছু আছে..? সব শেষের পরেই আরেকটা শুরু আছে। "বেঁচে থাকো আমার কবিতা আর গানে বেঁচে থাকো আমার সবুজ শ্মশানে"। সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে রচিত 'মোহ নয় মুগ্ধতা আছে' কাব্যগ্রন্থ উঠে এসেছে কবি মনের ক্ষোভ, দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা, আক্ষেপ, প্রেম-ভালোবাসা ইত্যাদি। সব ফুটিয়ে তুলেছেন তার নিজস্ব ঢঙে আর নিজের লেখনশৈলীতে। শব্দচয়ন আর বাক্যগঠনে বেশ পরিপক্ব কবি তা কবিতার অন্তর্নিহিত ভাবে প্রস্ফুটিত। তবে একজন পাঠক হিসেবে বাংলা কবিতায় কিছু কিছু বাক্যে হঠাৎ হঠাৎ ইংরেজি শব্দের ব্যবহার কেমন চোখে লাগে। যদিওবা এটি কবির একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এছাড়া, আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে আর কোন ধরনের ভুলত্রুটি চোখে পড়ে নি ততটা যদিওবা কবিতা'র 'ক' বোঝার যোগ্যতা এখনো অর্জন করতে পারিনি । বইয়ের প্রচ্ছদ, বাইন্ডিং এবং বইয়ের পাতাগুলো দারুণ। একটা আভিজাতিক আরাম আরাম ভাব আসে বইটা হাতে নিলে। আর বইয়ের নামের সার্থকতা আছে। কেননা, এই কাব্যগ্রন্থটার কাব্যগুলো আপনার মাঝে কোন মোহ এর সৃষ্টি করবে না কিন্তু আপনার অজান্তেই এক ধরনের মুগ্ধতা তৈরী করে রাখবে। আছে না, অনেক বই পড়ার অনেকদিন পর পর্যন্ত ঐ বইটার রেশ থাকে এটা তেমন না বরংচ একটু আলাদা। এটা অনেকদিন পর আপনাকে আবার মনে করিয়ে দিবে মুগ্ধতার কথা মোহতার নয়। "আবার দেখা হবে কিনা জানি না পৃথিবী গোল সবাই বলে আমি মানি না"। গালিব আজিম এর জন্ম আর বেড়ে উঠা ঢাকায় তথাপি মিরপুরে। অতি শৈশবে বর্ণমালার সাথে পরিচিত হবার আগে কবিতা এবং গানের সাথে একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠে গালিব আজিমের। তারই ধারাবাহিকতায় কলেজ জীবনে হয়ে উঠেন লেখক এবং আবৃত্তিকার। সে সময় কয়েকজন মিলে গড়ে তোলেন 'শহরতলী' ব্যান্ড। 'শহরতলী' এর সফলতারও অনেক পরে অজানা এক অভিমানে ছেড়ে দেন নিজের গড়া ব্যান্ডকে। গড়ে তোলেন আরেক ব্যান্ড 'থিয়েট্রিকাল'। তার গাওয়া প্রতিটা গানেই গান এবং কবিতার সমন্বয় ঘটেছে। যেখানে, নাজিম হিকমত, শামসুর রাহমান, আসাদ চৌধুরী এর মতো গুণী কবি ছাড়াও নিজের লেখা কবিতাকে গানে রূপ দিয়েছেন। কবিতা না গান কোনটার প্রতি ভালোবাসা কবির বেশী তা বইটি পড়ে নিজেই অনুধাবন করতে পারবেন। "আয়নাতে অন্য ছবি ছবি তো নয় কাঁদছে কবি"।